প্রেমের সমর পর্ব ৩৪

প্রেমের সমর পর্ব ৩৪
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

আবিরের হাত থেকে তখনও টপাটপ রক্ত গড়াচ্ছে। গ্রামের মানুষের মাঝেও ততক্ষনে জানা হয়ে গেছে এই বাড়ির কাহিনী। কিছু মানুষ আবার উৎসাহ নিয়ে রুমে এসে ভীড়ও করেছে কাহিনী দেখার জন্য। ছুটি সেসবের তোয়াক্কা করল না। বরং বোকা ছুটি প্রিয় পুরুষের এহেন আঘাত সহ্য না করতে পেরেই ছটফট করল। চোখ গড়িয়ে পড়ল নোনা পানি। মেয়েটার ফর্সা মুখ ততক্ষনে রক্তাভ হয়ে উঠল। আহাজারির স্বরে এগিয়ে এসে আবিরের হাত ধরার প্রচেষ্টায় বলে উঠল,
“ এসব পাগলামি আপনাকে মানাচ্ছে না আবির ভাই। এসব করে লাভ হবে কিছু?বুঝুন একটু।”
আবির হাতটা ঝারা দিয়ে সরিয়ে নেয়। কঠিন স্বরে শুধায়,
“ বললাম না তোকে না ভাবতে? কথা কানে যায় নি? ”
ছুটি টলমল চোখে চেয়েই থাকে। নরম গলায় বলে,

” ব্যান্ডেজ করা উচিত হাতটা। ”
আবারও কঠিন স্বর আবিরের,
” সেটা আমি বুঝব। ”
ছুটির এই পর্যায়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। জিভ ভিজিয়ে সহজ করে উত্তর করে,
“ আবির ভাই। অযথাই জেদ করছেন। ”
আবির তিরিক্ষি মেজাজে শুধাল,
“ আমাকে ছোট বাচ্চা লাগছে? ”
ছুটি মায়াময় চাহনিতে তাকায়। কি ভীষন নরম গলায় ডাকে,
“ আবির ভাই, ”
অন্যদিন হলে হয়তো ডাকটা শুনে আবির খুশি হতো। তবে এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে ডাকটা আবিরের সহ্য হয় না। গা জ্বলে উঠে যেন এই ডাকটায়। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে উঠে,
“ ভুলাবি না আমায়। একদম ভুলাবি না। এতবছর যে বোকা বোকা চাহনি দিয়ে আমায় ভুলিয়ে এসেছিস তা মনে করছিস? আমি আর ভুলব না তোর মায়াময় চাহনিতে।”
এই পর্যায়ে এসে ছুটি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। আবির ভাই কখনো তার মায়াময় চাহনি মনোযোগ দিয়ে দেখেছিল? কখনও পাত্তা দিয়েছিল কি?কখনো কি ছুটির চাহনিকে এইটুকু গুরুত্ব দিয়েছিল? আজ হঠাৎ চাহনি দিয়ে ভুলানোর প্রশ্ন কেন? ছুটি তাচ্ছিল্য হাসে। উত্তর করে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আমার চাহনিতে আপনি কোনকালেই ভুলেন নি আবির ভাই।”
কথাটা বলার প্রায় সঙ্গেই সঙ্গেই রুমের দরজায় দাঁড়ানো গ্রামের মানুষ গুলোকে ঠেলে ডুকল এক রাগে জেদে ফেঁটে পড়া পুরুষ। সাথে তার ভদ্র ভোলা ছেলে। পরনের জামাকাপড় থেকে বুঝা যাচ্ছে ছেলেটার সাথে দস্তাদস্তি হয়েছে। শার্টে কোথাও ধুলো, কোথাও কাঁদা। আবার চোখের চশমটারও একটা গ্লাস ভাঙ্গা। ছুটি তাকায়।ছেলেটা সেই যার সাথে তার এইংগেইজমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। ছেলের এহের পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে গিয়েই ছেলের বাবা তেড়ে এলেন। ছুটির বাবাকে সাক্ষী করে বলে উঠলেন তেড়ি গলায়,
“ এসব কি তোফায়েল? মেয়ের যে ছেলেঘটিত এত সমস্যা আগে তো বলোনি। দেখে তো মনে হতো না তোমার মেয়ের তলে তলে এই!মাঝখান দিয়ে আমার ভোলাবালা ছেলেকে বলির পাঠা বানালে? বিয়ে যখন দিবেই না তখন নিজের ছেলেকে দিয়ে আমার ছেলেটাকে গোয়াল ঘরে আটকে রাখার মানে কি শুনি। ”
তোফায়েল সাহেব তাকালেন। ছেলেটার এহেন অবস্থা দেখে রেগে তাকালেন নিজের ছেলের দিকে। এই অবস্থা ছোটন করেছে? ছোটন? একে এত সমস্যা! তার উপর ছেলের এই কান্ডে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে তোফায়েল সাহেবের। পরমুহুর্তেই আবার রাগ হজম করে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাগান্বিতা মানুষটাকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে শান্ত স্বরে বললেন,

“তুমি ভুল ভাবছো মোতাহের। ছোটন এমন কিছু করবে না কখনো।”
ততক্ষনে আবির এগিয়ে এসেছেে।ছেলেটাকে আগাগোড়ক পর্যবেক্ষণ করতে করতে ব্যঙ্গ স্বরে তোফায়েল সাহেবকে শুধাল,
“ আঙ্কেল? এই নাকি আপনার মেয়ে জামাই? স্যরি! আপনার মেয়ের পছন্দ করা ছেলে। এই উন্নতমানের ছাগলটা? ”
ছেলের বাবা এই পর্যায়ে তেতে উঠলেন। চিৎকার করে বললেন,
“ তোফায়েল! তোমার মেয়ের প্রেমিক আছে এটুকুও নাহয় মেনে নিচ্ছি। একে তো অপমানিত করেছো তারপর আমার ছেলেকে অপমান করছে এই ছেলে?মেয়েকে বুঝি এসবেই উৎসাহিত করো? শাসনের দাঁড়কাছে তো আছে বলে মনে হয় না তোমার ছেলে মেয়ে দুটো। ”
আবির হাসে। ছেলেটার সামনে গিয়ে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“ আহ! আঙ্কেল রাগছেন কেন? আপনার ছেলেকে মোটেও অপমান করিনি আমি। আচ্ছা আঙ্কেল, আপনার ছেলের নাকটা বোচা কেন? আমার নাকটা দেখুন। সুন্দর না? আপনার ছেলে তো আমার চাইতে একটু খাটোও। এই ছুটি, তোর পছন্দের ছেলে এই? এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে কেন তোর মতো? ”
তোফায়েল সাহেব বরাবর রাগছেন। না পারছেন রাগটা প্রকাশ করতে না পারছের হজম করতে। গ্রামের এত গুলা মানুষের সামনে নিজের পরিবারের এহেন অবনতি দেখে তোফায়েল সাহেবের ইচ্ছে হলো রাগে সব শেষ করে দিতে। তবুও পারলেন না। শীতল অথচ ধমক স্বরে আবিরকে শুধাল,

“ আবির! ”
আবির এই শীতল ধমকের অর্থ না বুঝলেও ছুটি আর ছোটন বুঝে। ছোটন এগিয়েও গেল আবিরকে মানাতে। অথচ আবির পাত্তা দিলে তো। বরং বেশ আয়েস করে বলে উঠে,
“ উহ আঙ্কেল, আপনিই বলুন? আপনার মেয়ে জামাই হিসেবে কে পার্ফেক্ট বলুন তো? আমি? নাকি এই ছাগলটা? ”
ছেলের বাবা এবারেও রাগল। মুহুর্তেই হুংকার ছেড়ে বলল,
“ তোফায়েল! এই ছেলে কিন্তু আমার ছেলেকে বারবার ছাগল বলছে। ”
তোফায়েল সাহেবের কপালের রগটা ফুলে উঠেছে ইতোমধ্যেই। নাক হয়ে উঠেছে লাল। আবির তাতেও পাত্তা না দিয়ে ব্যঙ্গ করে ছেলের বাবাকে বলে,
“ তো আপনার ছেলের কি মুখ নেই আঙ্কেল? সে বলতে পারবে না এটা? আপনি কেন তার হয়ে কথা বলছেন বলুন তো?”
কথাটা বলেই আবার ছুটিকে উদ্দেশ্য করে শুধায়,

“ ছুটি? তোর পছন্দের ছেলে আবার বোবা টোবা নয় তো ? ”
ছুটি এতক্ষন বাবার রাগ পর্যবেক্ষন করছিল। ভেতরে ভেতরে যে রাগে মানুষটা ফেঁটে পড়ছে তা আর বুঝতে বাকি নেই তার। ছেলের বাবা আবারও বলে,
“ এসব শিখিয়েছো না ছেলেমেয়ে দুটোকে? এসব তোমার শিক্ষা?”
আবির ফের তর্ক জুড়ে,
“ আপনি কি শিক্ষা দিয়েছেন ছেলেকে? অন্যের পছন্দ করা মেয়েকে টুপ করে বিয়ে করে ফেলা? ”
কথাটা বলেই ছেলেটার চুলে হাত চালিয়ে সেট করতে করতে বলে উঠে,
“ এই যে ছাগল? একি! তোমায় শার্টে ময়লা, বর বর লাগছে না তো। রিংটা কি করলে? এইংগেইজমেন্টটা সারবে না? একি চশমার একটা গ্লাসও তো ভাঙ্গা। আমি পরে দেখি তো একটু কত পাওয়ারের চশমাট…”
এই পর্যায়ে তোফায়েল সাহেব আর সহ্য করতে পারলেন। চেঁচিয়ে আবিরকে বলে উঠলেন,
“ তামাশা হচ্ছে এখানে? আবির। প্রথম থেকে বলছি আমরা এসব নিয়ে পরে কথা বলব। বলছি কিনা? তারপরও আমাকে এভাবে সবার সামনে ছোট করছো কেন? আমি তো বলিনি ছুটিকে অন্য কারোর সাথে বিয়ে দিয়ে দিব। বলেছি? ”

আবির মানল না। বরং রেগে কাঁপতে থাকা তোফায়েল সাহেবের সামনেই বিরক্তস্বরে গলা উঁচিয়ে বলে উঠে,
“ উহ, আস্তে কথা বলতে পারেন তো আঙ্কেল। এমন চিৎকার করে বলছেন কেন। তাছাড়া আমি কি ছোট বাচ্চা?আপনাকে, আপনার মেয়েকে কাউকেই আর বিশ্বাস করব না৷ হয় মেয়ে দিবেন, বিয়ে করব।নয়তো আপনাকেও দেখে নিব৷ ”
কথাগুলো বলা শেষ হলো ঠিক তবে আবিরের গালে থাপ্পড় পড়তে দেরি হলো না। মেয়েলি হাতের একটা দৃঢ় চড় গালে পড়তেই আবির অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকায়। ছুটি তখন রাগে জেদে বলতে থাকে,
“ সমস্যা কি আপনার? প্রলাপ বকছেন কেন এমন?দোষটা আমার। আব্বুকে অসম্মান করছেন কোন সাহসে? আব্বুর সাথে গলা উুচিয়ে কথা বলছেন? এত সাহস! আবির ভাই, এতক্ষন যাবৎ অনেক ভালো ব্যবহার করেছি। আর নয়, এক্ষুনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি না। যেটুকু ছিল সেটুকু আবেগ। এখন বোধ হয়েছে যে আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। ”
আবির ফোঁসফোঁস করে রাগে। বিড়বিড় স্বরে বলে,

“ ছলনাময়ী! একটু আগে আমার হাত কাঁটা দেখে কি ছলনাই টা করলি এখন আবার নিজের ফর্মে ফিরে এলি? ভালো লেগেছে না? এই ছেলেকে খুব ভালো লেগেছে? ফাইন, এক্ষুনিই এই ছেলেকে বিয়ে করবি। ”
স্বচ্ছ এতক্ষন এদের কাহিনীতে কিছু বলা উচিত কিনা বুঝে উঠছিল না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাহিনভ দেখছিল। কিন্তু এই পর্যায়ে মনে হলো তার বন্ধু আসলেই জেদ ধরে বিয়েটা দিয়ে দিতে পারে। হায় ঝামেলা! দ্রুত তড়িঘড়ি করে আবিরের কাছে এসে শুধায়,
“আবির। শান্ত হো। চল অন্য রুমে চল। আমরা কথা বলছি বিষয়টা নিয়ে। ”
আবির রাগে ঝাড়া মেরে স্বচ্ছর হাত সরায়। বলে,
“ কি বলবি? কিছু বলার নেই।ওর যখন ঐ ছেলের সাথে এতই বিয়ের শখ ঐ ছেলের সাথেই বিয়ে হবে। আজই।”
স্বচ্ছ আর ছোটন বহু কষ্টে আবিরকে মানানোর চেষ্টা চালায়। এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে বলে,
“ আচ্ছা আজই হবে, আমরা ব্যবস্থা করছি। তুই শান্ত হ। চল। ”

একটা রুমে বসে আছেন তোফায়েল সাহেব এবং স্বচ্ছ। স্বচ্ছ তোফায়েল সাহেবের গম্ভীর মুখ দেখে বুঝে উঠল না কথাগুলো বলা উচিত কিনা। কিন্তু বলতে তো হবেই। অবশেষে গলা পরিষ্কার করে স্বচ্ছ শুধায়,
“আঙ্কেল? আবির যে ছুটিকে ভালোবাসে তা নিয়ে নিশ্চয় আপনি অনিশ্চিত নন এখন আর? যদি ভালো না বাসত ও খবর পেয়ে ছুটে আসত না আঙ্কেল। বুঝুন ব্যাপারটা। ”
তোফায়েল সাহেব এই পর্যায়ে ছোট শ্বাস ফেললেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে বললেন
“আমরা সবাই আবিরকে পছন্দ করি। আবিরদের থেকে যখন প্রস্তাব এল তখনও আমরা সবাই রাজি ছিলাম। কিন্তু ছুটি রাজি নয়। আমার মেয়ে ওকে বিয়ে করতে চায় না।”
স্বচ্ছ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শুধায়,
“ আপনি বোধহয় জানেন না আপনার মেয়ে আবিরের জন্য কতোটা পাগল। কতোটা ভালোবাসে। ”
“ জানতাম বিষয়টা। জানতাম ছুটি ওকে ভালোবাসে। তবে ছুটির বর্তমান কার্যকলাপ আমায় ভাবায় যে ও আর আবিরকে ভালোবাসে না। ”
স্বচ্ছ এবার ভুল ভাঙ্গিয়ে বলে,

“ ভুল আঙ্কেল। এটা একটা ভুল বুঝাবুঝি।ছুটি ভাবছে ওর অনুভূতিগুলোকে আবির ব্যবহার করেছে। বিষয়টা আসলে আমাদের বন্ধুদের একটা ফান ছিল। আমার বউয়ের পরিচয় জানার জন্যই সাদাফ এই প্রসঙ্গটা তুলেছিল। বলেছিল ছুটির অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সুহার পরিচয়টা জেনে নিতে। কিন্তু সত্যি এটা যে তার অনেক আগে থেকেই আপনার মেয়ের প্রতি আবিরের অনুভূতি ছিল আঙ্কেল। আর ছুটি কষ্ট পাবে বলে আবির এই কৌশলে প্রথমেই না বলেছিল। বিশ্বাস করুন, কথাটা সত্যিই বলছি। ”
তোফায়েল সাহেব ভ্রু কুঁচকালেন। শুরু থেকে সবটা ভাবেন। বলেন,
“তুমি বলতে চাইছো এই কারণে ছুটি আবিরকে বিয়ে করতে চাইছে না? ”
স্বচ্ছও শুধায়,
“ হ্যাঁ, এই কারণেই ভুল বুঝে, অভিমান করে আপনার মেয়ে অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে চাইছে।কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনার মেয়ে এখনও আবিরকে ভালোবাসে। তার প্রমাণ বোধহয় আপনি আজও পেয়েছেন যখন আবিরের হাত গড়িয়ে রক্ত পড়ছিল। তবুও আপনি যেহেতু ওর আব্বু হোন একটু ভাবুন। ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্তটা জানান আমাদের। জোর করছি না। ”

স্বচ্ছ ছুটির বাবাকে অনেকটা মানিয়েই রুম ছেড়ে বর হয়। বন্ধুর কাছে গিয়ে মুখ গোল করে শ্বাস ছাড়ে। আবিরের কাঁধে চাপট মেরে বলে উঠে,
“ শা’লা থাকতি এতকাল শান্ত, ভদ্র হয়ে। হুট করেই এখানে এসে দেখি তার’ছিড়া উম্মাদ হয়ে গেছিস। তোকে সামলাতেই তো আমার আর ছোটনের অবস্থা কাহিল। ”
আবির রেগে তাকায়। স্বচ্ছর হাতের ফোনে ভিডিও কলে আছে সাদাফও।দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ তোকে বলেছি সামলাতে? ”
স্বচ্ছ চাপা হাসে। এখন আর চিন্তা নেই। ছুটির আর আবিরের বিয়েটা যে হবেই তা নিয়ে আশি শতাংশ নিশ্চিত সে। তাই আরাম আয়েশ করে বসে। আবিরের গালে হাত বুলিয়ে হেসে বলে,
“ বেচারা! চড় কেমন লাগল? ”
আবির কপাল কুঁচকে বলে,
“তোর সুহাসিনীর হাতেও তুই মার খেয়েছিলি।ভুলে গিয়েছি ভাবছিস? ”
স্বচ্ছ ছোটনকে বলিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স আনায়। হাতে নিয়ে এগিয়ে এসে শুধায়,
“ ছাগল! আমি এমন পাগলামো করে রক্ত ঝরাইনি হাতের। তুই এখনও কন্টিনিউসলি হাত থেকে রক্ত ঝরাচ্ছিস। ”
আবির তাচ্ছিল্য নিয়ে বলে এবারে,

“ তবুও ভালো। হৃদয়ের কষ্ট কিছুটা হলেও রক্তের মাধ্যমে বের তো হয়ে যাচ্ছে। ”
স্বচ্ছ পাশে বসে। মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে,
“ ভন্ড! হাত দে, ব্যান্ডেজ করে দেই। ”
আবির দিল না। বরং ছোট বাচ্চার ন্যায় জেদ ধরে বলল,
“ করব না, ঐ ছুটির বাচ্চাকে যতক্ষন নিজের করতে পারছি হাত ব্যান্ডেজ করব না। ”
স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চাপে। আবিরের হাতটা জোর করে এগিয়ে নিয়ে কাঁচ আছে কিনা দেখতে থাকে। বলে,
“ নাটক কম কর শা’লা। মেরে এমনে মুখ ভেঙ্গে দিব। বিয়ে যে করবি সাইনটা করবি কিভাবে? এই রক্তে ভেজা হাত দিয়ে? ব্যান্ডেজ থাকলে তবুও একটু কষ্ট করে হলেও সাইনটা করতে পারবি। ”

প্রেমের সমর পর্ব ৩৩

গাড়িতে ছোটন, স্বচ্ছ, ছুটি আর আবির। দেখে মনে হচ্ছে না এই গাড়িতে নব বিবাহিতা এক দম্পতিও আছে।কারো চোখেমুখে সে উচ্ছাসটা ফুটেই উঠল না।বরং যে দম্পতির বর এবং বউ দুইজনেরই মুখেচোখে তখন বিপরীত অনুভূতি। স্বচ্ছ তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।ছুটির বাবার সিদ্ধান্তেই সন্ধ্যার আগে আগেই ছুটি আর আবিরের বিয়েটা সম্পন্ন হলো। আবির তখনো ত্যাড়া হয়েই থাকল। যেন সে নামমাত্র বিয়েটা করছে। মুখ চোখ টানটান করে জেদ ধরে বসে আছে। এমনকি ছুটির সাথে এই নিয়ে একটা শব্দ অব্ধি বলে নি সে। যেন ছুটির প্রতি তার কতকালের ক্ষোভ! কতকালের শত্রুতা। এমনভাবেই থাকল আবির। অপরদিকে ছুটি নিশ্চুপ হয়ে থম মেরে আছে। বাবার কথায় বিয়েটা করেছে সে, নাও করতে পারে নি। গ্রামের সবাই তখন আবিরের বিষয়ে জেনে গিয়েছিল। বিয়েটা না হলে হয়তো আরো রটনা রটত। ছুটি তাচ্ছিল্য নিয়ে তাকায় আবিরের দিকে। মনে মনে শুধায়,
“ এই নাটকের প্রয়োজন ছিল কি আবির ভাই?ভালোবাসলেন একজনকে,বিয়ে করার জন্য নাটক দেখালেন অন্যজনের জন্য। হাস্যকর ঠেকল না বিষয়টা? ”

প্রেমের সমর পর্ব ৩৫