ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৪

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৪
মিথুবুড়ি

~প্রিন্সেস এলিজাবেথ ~
‘ অতঃপর প্রোফাইল পিকচারে ছবিটি বসিয়ে দিল। ব্যস হয়ে গেল এলিজাবেথের জীবনের সর্ব প্রথম খোলা ফেসবুক একাউন্ট। লম্বা করে শ্বাস ফেলে নিল এলিজাবেথ। হঠাৎ করেই টিং টিং শব্দ হতেই থাকল অনবরত। এলিজাবেথ কৌতুহলবসত ফোন হাতে নিল। নোটিফিকেশন চেক করতেই চোখ কপালে উঠে যায়। মুহূর্তের মধ্যে এতো এতো ফেন্ড রিকুয়েষ্ট। এলিজাবেথের কাছে এই সকল কিছুই নতুন। তাই ছোটখাটো সাধারণ জিনিসগুলোও খুবই বিচলিত করছে ওকে।
‘দুপুরে ঘুমিয়ে ছিল এলিজাবেথ। ঘুম থেকে উঠার পরপরই মাথায় ভূত চেপে বসে আইডি খুলবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ইউটিউব ঘেঁটে ঘুঁটে খুলে নিল। তাকবীর হসপিটালে গিয়েছে। আসতে খুব রাত হবে। এলিজাবেথ অনেকবার প্রশ্ন করলেও কোনো উত্তর দেয়নি। জানিয়েছে রাতে এসে জানাবে। যাওয়ার আগে বারবার বলে গিয়েছে তাকবীর এলিজাবেথ কে যেন কোনো দরকার ছাড়া রুম থেকে বের না হয়। আর কোনো সমস্যা হলে যেন তৎক্ষনাৎ রেয়ান কে জানায়।

‘ নতুনের প্রতি আমাদের স্বাভাবিক কৌতূহল চিরকালীন। মানুষের মন নতুন কিছু দেখার, জানার, আর ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষায় সবসময়ই তীব্র। এলিজাবেথ এশার সালাত আদায় করে ফোন নিয়ে আড়ম্বরে শুয়ে পড়ল। ঘাঁটতে থাকে ফেসবুক। অতিরিক্ত মেসেজ আসার কারণে সেই কখনও মেসেঞ্জার কেটে দেয়। এই জিনিসগুলোতে এখনও সহজ নয় এলিজাবেথ। স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ একটা অপ্রত্যাশিত জিনিস নজরে আঁটকায় এলিজাবেথের। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ফোনে। উঠে বসে বার বার ছবিটা জুম করে দেখতে থাকে।
‘ ছবিটা গ্যাংস্টার বস রিচার্ড কায়নাতের। আরো দুইবছর আগে সোশাল প্ল্যাটফর্মে মারাত্মক ভাবে ভাইরাল হয়েছিল ছবিটি। কাতার এয়ারপোর্টে তুলা এটি। সম্ভবত কেউ দূর থেকে তুলেছিল ছবিটি। সচারাচর সৌখিন স্বভাবের মানুষরা বা বিশেষ করে রিচার্ডের মতো পোস যারা তারা ইন্টারন্যাশনালি যাত্রার ক্ষেত্রে, তাদের ফর্মাল ড্রেসআপে দেখা যায় অহরহ। তবে রিচার্ডের সকল কিছুতেই বৈচিত্র্যতা। রিচার্ডের পরণে ছিল অতি ছোট একটা কালো সর্টস আর ফুলহাতার ওভারসাইজ কালো সোয়েটার। কালো পোশাকে পরিশীলিত এবং রহস্যময় চেহারাকে আক্রমণাত্মক একটা লুক দিতে সক্ষম হয়েছিল। সেই সাথে ব্ল্যাক সানগ্লাস। জোরে জোরে হাঁটার কারণে সিল্কি লম্বা চুলগুলো ঢেউ খেলাতে থাকে। একই সাথে সুগঠম দেহভঙ্গি থেকে মেজাজপূর্ণ এক “ম্যাজেস্টিক” আভা প্রকাশিত হচ্ছিল রিচার্ডের কায়াতে। ধারালো চিবুকে ছিল না কোনো হাসির ছাপ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ কমেন্ট বক্স চেক করে এলিজাবেথের গাল গরম হয়ে যায়। একজন গ্যাংস্টারেরও এতো এতো ফ্যান ফলোয়ারস অবিশ্বাস্য। আরো কৌতুহল জাগল এলিজাবেথের। সার্চ অপশনে গিয়ে রির্চাড লিখে সার্চ দিল। তবে রিচার্ডের কোনো নিজস্ব একাউন্টই নেই। তবে যত ফ্যানপেইজ আছে এগুলো আজকে গুনেও শেষ করা যাবে না। ক্যাপশন কমেন্ট দেখে কান দিয়ে ক্রমশ ধোঁয়ার উত্তাপ বাড়তে থাকে এলিজাবেথের। কপালে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে। তড়িঘড়ি করে রিচার্ডের নাম কেটে দিয়ে ফোন বিছানায় ছুঁড়ে মারে। দু’হাতে গাল চেপে ধরে বসে থাকে। চুপসানো মুখে বিরবির কর,
” গ্যাংস্টার, মাফিয়াদের উপর ক্রাশ খাওয়ার যুগে আমি এখনো হিরো আলমে মজে আছি।”

‘ নাইট ক্লাব যেন পাপের এক নিখুঁত অন্দরমহল। এটি শুধু টাকার উড়ানোর জন্য নয়, নৈতিকতার পতনেরও এক চতুর ফাঁদ। সেখানে অর্ধনগ্ন শরীরের দেহ নাচে লালসার তালে, গা ঘেঁষা নৃত্যের ছলনায়। চারপাশে মদের ঢল, ধোঁয়া-ঢাকা বাতাসে ঢেকে যায় বাস্তবতা। বড় বড় ব্যবসায়ী, গ্যাংস্টার, মাফিয়াদের জন্য এটি এক স্বর্গরাজ্য, যেখানে শয়তানির মুখোশ পরে চলে রিফ্রেশমেন্টের অভিনব আয়োজন। এটি শুধু বিনোদনের নয়, অন্ধকার জগতের এক অভিজাত মিলনমেলা। ইতালির সবথেকে নামকরা নাইট ক্লাব হলো রিজিওন। লেজার লাইট আর স্ট্রোব আলোয় ঝলকাচ্ছে চারিপাশ। মদের কদর্য গন্ধে মাতোয়ারা চতুর্থপাশ। মধ্যমঞ্চ উন্মাদনায় ঢলাঢলি করে নৃত্য করছে নারীপুরুষ সংমিশ্রিত ভাবে। ডিজে স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে মিউজিশিয়ান নিযন্ত্রণ করছে পুরো পরিবেশ। হাত উঁচু করে উৎসাহ দিয়ে নাচতে নাচতে নাচাচ্ছে সকলকে।

‘বার কাউন্টারের উপর মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে এক অর্ধনগ্ন রমণী। তার শরীরে যা আছে, তা পোশাকের নামমাত্র—ভাঁজগুলো যেন ইচ্ছাকৃতভাবে উন্মোচিত। দূর থেকে চেয়ে থাকে অনেক চোখ, লালসায় ভরা। কিন্তু সাহস নেই কারও কাছে যাওয়ার বা পাশে বসার। আশেপাশে রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তার জন্য থাকা বিশেষ প্রটোকল—একটি অদৃশ্য দেয়ালের মতো, যা শুধু দূরত্ব বাড়ায়। মেয়েটি একটু পরপর মাথা তুলতে চায়, কিন্তু নেশার ভারে পারেনা। চোখ বুজে ঢুলছে শুধু। চারপাশে আলো আর মদের গন্ধে আচ্ছন্ন এক দমবন্ধ পরিবেশ।
‘ হঠাৎ সাউন্ড সিস্টেমের তীক্ষ্ণ গান থেমে গেল। উন্মাদ নাচ থেমে গিয়ে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে উপস্থিতদের চোখে-মুখে। কয়েকজন রাগে ফেটে চিৎকার করে ম্যানেজারকে গালি দিতে থাকে অকথ্য ভাষায়।
ঠিক সেই সময়, কারো পায়ের ভারি শব্দে থমথমে হয়ে উঠল পরিবেশ। ঝাপসা চোখে সবাই পিছনে ফিরে তাকায়। মূহুর্তেই স্তব্ধতা নেমে এলো সকালের মাঝে। একজন মধ্যবয়সী লোক, লম্বা পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে কাউন্টারের দিকে। দৈনিক গঠনে মনে হচ্ছে সে এই বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক । তার পিছু পিছু চলছে একদল সশস্ত্র সৈন্য, প্রত্যেকের কড়া দৃষ্টি, হাতে অস্ত্রের ঝলকানি। একে একে ক্লাব থেকে বেরিয়ে যেতে লাগল সবাই। বাতাসে ভয়ের গন্ধ, আলো-আঁধারির এই রঙ্গমঞ্চে থমকে গেছে রাতের উন্মাদনা। লোকটি গিয়ে থামল মেয়েটির সামনে।

” লাড়া গেট আপ প্রিন্সেস।”
‘ লাড়া মাথা তুলল। ঝাপসা চোখে অবলোকন হয় জেমসের সুগভীর চোখ। যেখানে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট । গাল ছড়িয়ে হাসল লাড়া। মাতাল স্বরে বলল,
” ড্যাড তুমি? ”
‘ জেমস মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকে। কর্ম জীবনের কঠোর বৈশিষ্ট্য থেকে বেরিয়ে একজন আদর্শ বাবার রূপে রুপান্তরিত হয়। হালকা হেসে মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিদারুণ কোমল স্বরে বলল,
” এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। তুমি ম্যানশনে না গিয়ে বারে আসলে কেন? আই ওয়াজ ওয়েইটিং ফর ইউ।”
‘ অযথা হাসতে থাকে লাড়া। বলল,” মর্জিতে ।”
‘ তপ্ত শ্বাস ফেলে জেমস। আদরের একমাত্র মা মরা মেয়েকে কর্ম জীবনের ব্যস্ততায় পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি কখনোই। ফলস্বরূপ আজ আয়ত্তের বাইরে। জেমস লাড়া কে ধরে তুলতে থাকে। লাড়া ঢলতে থাকে। নিজ পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা অব্ধি নেই তবুও বাঁধা দিল।

” আই ক্যান ম্যানেজ। ”
” লাড়া তুমি ডাঙ্ক।”
‘ আবারো হাসতে থাকে লাড়া। হাসতে হাসতে গম্ভীর হয় কণ্ঠস্বর, ” নেশাগ্রস্ত অবস্থায়ও চারপাঁচ কে খালাস করার ক্ষমতা আমি রাখি ড্যাড।”
‘ মেয়ের কথায় শব্দ করে হাসল জেমস। গার্ডরা তেরছা তাকিয়ে আছে লাড়ার দিকে নোংরা দৃষ্টিতে। আকষ্মিক কেঁপে উঠল সমস্ত ক্লাব বিকট শব্দে। একজন গার্ড ধাতব মেঝেতে পড়ে ছটফট করতে থাকে গোপনাঙ্গ ধরে। একটা সময় নিষ্পত্তি ঘটে সকল যন্ত্রণার আরেকটি গুলিতে। মগজে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে প্রাণপাখি উড়াল দেয় দূর আকাশে। সকল গার্ডরা ভয়ে দু’কদম পিছিয়ে গেল। ঘটনাটি নিমিষের মধ্যেই ঘটে যায়। জেমস হতভম্ব হয়ে তাকায় কোমরে হ্যান্ডগান ক্যারিতে। তবে ক্যারি ফাঁকা। লাড়া রিভ/লবার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ঠৌঁটের কোণায় লেপ্টে আছে শয়তানি হাসি।
‘এক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হলো আরেক বিপত্তি। হঠাৎ করেই প্রাইভেট লাউঞ্জ থেকে হুরহুর করে বেরিয়ে এলো অর্ধ সংখ্যক অস্ত্রধারী লোক। মুহূর্তেই জেমসের গার্ডরা অস্ত্র তাক করে প্রস্তুত হয়ে গেল। পক্ষ-বিপক্ষ দল মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, কেউ কারও দিকে চোখ সরাচ্ছে না। উত্তেজনায় থমথমে পরিবেশ। এমন সময় সরে গেল লাউঞ্জের ভারী পর্দা। ভেতরে দেখা গেল রিচার্ডকে—কাউচে হেলান দিয়ে বসে, হাতে মদের বোতল। চারপাশে কী ঘটছে, সেদিকে তার কোনো হুশ নেই। পাশে দাঁড়িয়ে ছিল লুকাস। জেমস কে দেখা মাত্র চিবুক শক্ত হয়ে গেল৷। লুকাস গান বের করে গান পয়েন্টে নিয়ে নিল জেমস কে। জেমসও প্রতিক্রিয়ায় একইভাবে গান পয়েন্টে নিয়ে নিল লুকাস কে। চারপাশের উত্তেজনা যেন কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটাতে প্রস্তুত।

‘ এমন টানটান উত্তেজনায় লাড়ার চোখে অন্যকিছু। অনড়ভাবে চেয়ে আছে রিচার্ডের দিকে। রিচার্ড তখনও শুধু মদ খেয়েই যাচ্ছে। ঘাড় এপিঠ-ওপিঠ করে দেখতে থাকল। লাড়ার ঘোলা চোখ দুটি রিচার্ডের পা থেকে মাথা পর্যন্ত শিকারীর মতো জরিয়ে রেখেছে। এ-যেন অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। উপস্থিতি ছিল ভিলেনের মতো—শীতল, নির্লিপ্ত এবং ভয়ঙ্কর। তবে ভিতরে ভিতরে খুবই ক্ষুদ্ধ হচ্ছে রিচার্ড কেন একবারও তাকাচ্ছে তার দিকে। যেখানে সকলের সেন্টার অফ অ্যাটেনশন সে সর্বদা।
‘ জেমসের চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে। দৃষ্টি রিচার্ডের দিকে। লুকাস ট্রিগারে আঙুল চেপে রেখে বলল,” বস আজই খেলা শেষ করে দিই কোবরা গ্রুপের?”
‘ এখনোও পর্যন্ত মাথা তুলেনি রিচার্ড। বিরক্তে চ’ উচ্চারণ করে ক্ষীণ আওয়াজে বলল,” উহু !! মুড নেই আজ। ”
‘ লুকাস কিছু বলতে যাবে তখনই আচানক লাড়া ঢলতে ঢলতে গিয়ে পড়ল রিচার্ডের পাশে। রিচার্ডের হাত ছিল কাইচের উপরে ছড়ানো। লাড়া পাশে এসে পড়ার আগেই হাত সরিয়ে নিল রিচার্ড। লাড়া কুঁচকানো ভ্রু-জোড়া সহিত বাঁকা হাসল। ঠৌঁটের এক কোণ এলিয়ে গ্রীবা বাঁকিয়ে মনেমনে আওড়ায়,
” গ্যাংস্টার ইন গ্রীট, জেন্টলম্যান ইন গ্রেস। ”
‘ জেমস ঝড়ের বেগে ছুটে গিয়ে মেয়েকে বুকে তুলে নিল রিচার্ড কে গান পয়েন্টে নিয়ে। ক্রোধ মিশ্রিত কণ্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
” আমার মেয়ের সামনে কোনো ঝামেলা চাইনা। যুদ্ধের সৌন্দর্য মাঠেই।”
‘ লুকাস শুধু রিচার্ডের আদেশের অপেক্ষায় আছে। তবে রিচার্ড নিজের কাজে অটল। হঠাৎ করে রিচার্ডের ফোনে টিং শব্দ হয়। ফোন হাতে নিতেই রক্ত মাথায় উঠে যায় রিচার্ডের। কোনো দিকে না তাকিয়ে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেল । লুকাস আশ্চর্য হয়ে গেল রিচার্ডের কাজে। পরপর সেও বেরিয়ে গেল জেমসের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে। লাড়া তখনও অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল রিচার্ডের যাওয়ার পানে।

‘ সারাদিন রুমেই ছিল এলিজাবেথ। একগুয়েমি কাজ করতে শুরু হয় হঠাৎ করেই। তাই একটু রুফটপে হাঁটতে বের হয় এলিজাবেথ প্রকৃতির শীতল বাতাস নেওয়ার জন্য। আকাশে আজ অসংখ্য তাঁরা। সম্ভবত পূর্ণিমা আজকে। চাঁদের জ্যোতি খুবই পখর। প্রকৃতির সতেজ বাতাস এলিজাবেথের শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত হতে থাকে। হঠাৎ দরজার লাগানো বিকট শব্দে কেঁপে উঠল এলিজাবেথ। চকিতে পিছন ফিরে। ঘুরতেই শিউরে উঠে শরীর। তাৎক্ষণিক বেড়ে যায় হার্টবিট। এক পা এক পা করে পিছাতে থাকে। এগোতে থাকে রিচার্ড। এলিজাবেথের চোখে আতঙ্ক স্পষ্ট। রিচার্ডের প্রতিটি কদমে হৃদয়স্পন্দন তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে। রির্চাডের মাস্কের অন্তরালে চেহারা ঢাকা থাকলেও, ক্রোধের আগুন চোখে স্পষ্ট। প্রতিটি দৃষ্টি যেন এক অপ্রতিরোধ্য রাগের প্রকাশ, যা মুহূর্তের মধ্যে বিস্ফোরিত হতে পারে।

‘ পিছাতে পিছাতে এলিজাবেথের কোমর গিয়ে ঠেকে রেলিংয়ের সাথে। কাঁপল অভ্যন্তর। রিচার্ড শক্ত চিবুকে এসে দাঁড়াল এলিজাবেথের অতি নিকটে। এলিজাবেথের শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে। রিচার্ডের কাছ থেকে ভেসে আসা মদের গন্ধে ভিতর থেকে উল্টে আসে সব। যথাসম্ভব নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করল। রিচার্ড একটানে মুখ থেকে মাস্ক ফুলে ফেলল। উদীয়মান হয় ক্রোধে মটমট করতে থাকা ধারালো চোয়াল। ইস্পাতের মতো ধারালো গালের কাটা দাগ।
” শরীর খুব সস্তা হয়ে গিয়েছে নাহ,,?
‘ গলা দিয়ে কথা বের হয় না এলিজাবেথের। বহু কসরতে আওতায়, ” মা_মানে?”
‘ রিচার্ডের নিরেট ঠান্ডা স্বর, ” আইডি ওকে,, নিজের ছবি কেন ?”
‘ ভয়ের মধ্যেও ললাটে ভাঁজ সংকুচিত হয়। বুঝতে পারল না এটা রিচার্ড জানল কি করে, তাও এতো অল্প সময়ের মধ্যে। ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ রিচার্ড দু’হাতে চেপে ধরল এলিজাবেথের কোমর। শরীর জুড়ে যেন বৈদ্যুতিক স্রোত বয়ে গেল এলিজাবেথের। কিন্তু রিচার্ডের পরবর্তী কাজে বুকের ভিতর ধাপ করে উঠল। রিচার্ড এলিজাবেথ কে রেলিংয়ের বসিয়ে দিল। নিচের দিকে তাকাতেই শিউরে উঠে সমস্ত শরীর। এলিজাবেথ জীবন বাঁচানোর তাগিদে খামচে ধরে রিচার্ডের কোট। জবুথবু ভাবে কাঁপতে থাকে গড়ন।

” নিজের এই অপরূপ সৌন্দর্য কাকে দেখাতে চাচ্ছো ? ”
‘এলিজাবেথ নিশ্চুপ। রিচার্ডের ঠান্ডা স্বর ভয়কে আরও ঘনীভূত করে তোলে। অভ্যন্তরে শুরু হয় এক অদৃশ্য সংঘর্ষ। ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে রিচার্ডের দৃষ্টিভঙ্গি। কণ্ঠস্বরও হয়ে ওঠে আরও গাঢ়, রহস্যময়। মস্তিষ্ক ফিরে পায় তার চিরাচরিত পৈশাচিক প্রবৃত্তি। অধরের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে রিচার্ড তার ড্রাগনের ট্যাটু খচিত হাতটি রাখে এলিজাবেথের উরুর উপর। থেমে যায় এলিজাবেথের হৃদস্পন্দন। নারীবাদী আত্মা শিহরিত হয়, কাঁটায় কাঁটায় যেন বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে।
” অনেকক্ষণ ভালোভাবে বলেছি। বুঝনি। এখন দুষ্টু কথা বলব। ”
‘ দুইটা বাক্য ঠান্ডা গলায় উচ্চারণ মানের গ্যাংস্টার বসের ভালো কথা এবং অনেক্ক্ষণ ধরে বুঝানো। গ্যাংস্টার বসের মতো, তার কথা এবং মনোভাব অনেকক্ষণ ভাবা, যা রিচার্ডের বৈশিষ্ট্যের সাথে এসব একদম যায় না। উরুর উপরের কাপড়ের অংশে খামচে ধরে রিচার্ড। ব্যাথায় চোখমুখ কুঁচকে রিচার্ডের হাত চেপে ধরে এলিজাবেথ। রিচার্ডের দৃষ্টিতে ভঙ্গি বাজে কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে । একটু একটু করে উরুর অংশের কাপড় উপর তুলতে থাকল রিচার্ড । এক অদ্ভুত স্বরে আওড়ায়,
” মাই লাভ ল্যাঙ্গুয়েজ ইজ ফিজিক্যাল টাচ।”
‘ ক্রমশ হাতের গতি বাড়তে থাকে। কেঁদে দেয় এলিজাবেথ। রিচার্ড কিছু বলতে যাবে তখনই ফোন বেজে উঠে। চোখ বন্ধ করে তপ্ত শ্বাস ফেলে রিচার্ড। পরপর এলিজাবেথ কে চোখ রাঙানি দিয়ে ওকে নামিয়ে হনহনিয়ে চলে যায়। জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে এলিজাবেথ। আর এক মুহুর্তও দাঁড়ায় না। রুমে গিয়ে দরজা আঁটকে দেয়। আর একটু হলেই দম আঁটকে মারা যেত।

‘ গাড়ি চলছে কোবরা ম্যানশনের উদ্দেশ্য। লাড়া সেই কখন থেকে একা একাই হাসছে ঠৌঁট কামড়ে। জেমস খেয়াল করল মেয়ের অদ্ভুত আচরণ। তার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক খুবই সহজেই হাসির অজানা কারণ-টা ধরে ফেলে।
” সব সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের অধিকারী হয় না। কিছু কিছু সৌন্দর্যের আড়ালে খুবই বিভর্স রূপ থাকে। যা কেবল ধ্বংস করতেই জানে। ”
‘ লাড়া হাসতে হাসতে উত্তর দিল জড়তা বিহীন গলায়,
” লাভ ইজ ব্লাইন্ড ড্যাড। ”
‘ বিরক্ত হয়ে মৃদু চেঁচাল জেমস, “হি ইজ এ রেগ ফ্লাগ। ”
‘ লাড়ার একই স্বরে জবাব, ” বাট আই আ্যাম কালার ব্লাইন্ড।
‘ সংযম হারাতে থাকে জেমস। উগ্রতা ভেঙে, হিংস্র পশুর মতো গর্জন তোলে।
” কি জানো ওর সম্পর্কে? “হি ইজ এ মার্ডারার, আ সাইকোপ্যাথ… এভরিওয়ান নোজ হিম অ্যাজ আ কিলিং মেশিন।”
‘ঠৌঁট কামড়ে হাসল লাড়া, হাসতে হাসতে বলল,” “বাট হি ইজ ড্যাম হ্যান্ডসাম ড্যাড।”
‘ বিরক্তে মেয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় জেমস। আর যাই হোক কখনো পারবে নিজের জাত শত্রুর কাছে মেয়েকে তুলে দিতে। মনে মনে ছক কষতে থাকে এক ধ্বংসযজ্ঞের।

” হ্যালো ভালো মানুষ। ”
” হুম এলোকেশী। ”
” কখন আসবেন আপনি? ”
” একটু দেরি হবে। তুমি খেয়ে শুয়ে পড়। ”
” খাব না, খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ”
” কেন মন খারাপ?”
” না তেমন কিছু না। আচ্ছা রাখলাম। ”
‘ ফোন কেটে দিল এলিজাবেথ। শেষ বারের মতো নিজের আইডিতে ঢুকতে চাইলো। বরাবরের মতো এবারও ফলাফল শূন্যের কোঠায়। রাগে ফোন বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
‘ কান থেকে ফোন নামিয়ে বিয়ানের নাম্বারের কল দিল তাকবীর। সাথে সাথে রিসিভ হয় ওপাশ থেকে। শোনা গেল তাকবীরের গুরুগম্ভীর গলা,

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৩

” ওয়েল ডান। এই ফোন দিয়ে যেন আর কোনো একাউন্ট খুলা না যায়। ”
‘ ঐ-পাশ থেকে কি উত্তর আসল তা অজানা। কল কেটে দিল তাকবীর। পরপর হাতের ক্যানোলার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসল। রহস্যময় হাসি দিয়ে অস্পষ্ট ভাবে আওতালো,
” আমার নামে লিখিত সৌন্দর্য শুধু আমিই দেখি। ”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৫