তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৪
তানিশা সুলতানা
সিঙ্গাপুরে আসিফ আদনানকে দেখে বেশ বড়সর একটা ধাক্কা খায় আদ্রিতা। তার থেকে বেশি অবাক হয় আসিফ আদনানের অবস্থা দেখে। বা হাতে ব্যান্ডেল ঝুলছে। কপালে বিশাল আকারে সেলাইয়ের দাগ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভীষণ বাজে ভাবে আহত হয়েছিলো সে।
তার মানে সুইজারল্যান্ড থেকে সত্যি সত্যিই এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আসিফের। আর এক্সিডেন্ট করিয়েছিলো আবরার তাসনিন।
মুহুর্তেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে আদ্রিতার৷ হাত পা মৃদু কাঁপতে শুরু করে। এখন এই মুহুর্তে আসিফকে এখানে দেখলে আবরার তাসনিন জানে মেরে দিবে। কাউকে পরোয়া করবে না৷
শুকনো ঢোক গিলে আদ্রিতা৷ কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে
“আ….আসিফ আপনি প্লিজজজ কক্ষ থেকে বের হবেন না। আবরার আপনাকে দেখলে মেরে ফেলবে।
প্লিজজজ চলে যান।
আদ্রিতার কন্ঠস্বরে অসহায়তা প্রকাশ পেয়েছে। ভীষণ ভয় পেয়ে গুটিয়ে যাচ্ছে দেখেই বুঝতে পারলো আসিফ। তাই তো দু পা এগিয়ে এসে বলে
” আদ্রিতা ভয় কেনো পাচ্ছো?
আমি আছি তো।
আদ্রিতার ইচ্ছে করে বলতে “ভয়টা আপনাকে নিয়ে পাচ্ছি। আমার মাথা গরম স্বামী এই মুহুর্তে আপনাকে এখানে দেখলে কেটে তিন টুকরো করে ফেলবে”
আসিফ পূণরায় বলে
“তুমি এখানে কি করে আসলে? আংকেলের সাথে?
আদ্রিতা জবাব দেয় না। মাথা নিচু করে ভাবতে থাকে আবরারের কথা। সে এখন কোথায়?
পরপরই এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে খুঁজতে থাকে। চলে আসলো কি না?
তারপর তাকায় আসিফের মুখ পানে। হাত বাড়িয়ে বা হাত খানা মুঠো করে ধরে। ইতোমধ্যেই আঁখি পল্লবে অশ্রু জমেছে। যখন তখন গড়িয়ে পড়বে দু গাল বেয়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আসিফ কথা শুনুন আমার। প্লিজজজ চলে য
বাকিটা শেষ করার আগেই মিউ মিউ আওয়াজ শুনতে পায়৷ অসহায় আদ্রিতা মুহুর্তেই আসিফের হাত ছেড়ে দেয়। কলিজা কেঁপে ওঠে ভুমিকম্পের ন্যায়। এই আওয়াজ পরিচিত। বড্ড পরিচিত। গত এক বছর যাবত শুনে আসছে।
এ্যানি এসেছে মানে আবরারও এসেছে৷ দেখে ফেলেছে আদ্রিতা আসিফ আদনানের হাত ধরেছিলো। কাঁপা কাঁপা হাত খানা সামনে তুলে আদ্রিতা। এবং দেখতে থাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। মনে পড়ে কিছু দিন আগের কাহিনি।
একটা লোকের হাত ধরেছিলো বলে আয়রন মেশিন দ্বারা তার হাত পুরিয়ে দিয়েছিলো আবরার। এখন কালো দাগ রয়েছে। ডাক্তার বলেছে এই দাগ সহজে যাবে না।
এই-বার কি করবে?
পূনরায় হাত পুরিয়ে দিবে? না কি জানে মেরে ফেলবে?
কান্না পায় আদ্রিতার। হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। সবেই প্রণয়নের আগমন ঘটেছে এখনই মনোমালিন্য শুরু হতে হলো?
জীবনটা এমন কেনো? দুটোদিনও শান্তি মেলে না।
আসিফ ভ্রু কুচকে আদ্রিতাকে দেখতে থাকে। দুই গাল ভেজা দেখে একটু বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে
“কি হলো আদ্রিতা? কাঁদছো কেনো?
আসিফ হাত বাড়ায় আদ্রিতার চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য। তখনই একটা শক্তপোক্ত হাত এসেছে আসিফের হাত ধরে ফেলে।
গম্ভীর স্বরে বলে
“ছুঁবে না তাকে।
আসিফ আবরারকে দেখেই চিনতে পারে। তবে এই মুহুর্তে এখানে একদমই আশা করে নি। বিরক্ত ফুটে ওঠে চোখেমুখে। এক পলক আদ্রিতার পানে তাকিয়ে বলে
“আপনি এখানেও? আদ্রিতার পেছন পেছন ঘুরছেন?
আবরার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। ছোট ছোট নয়নে আসিফের মুখখানা দেখতে থাকে। পরপরই আদ্রিতাকে দেখে। এবং কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আসিফের নাক বরাবর ঘুষি মেরে দেয়।
ছিটকে কয়েক হাত দূরে চলে যায় আসিফ। আদ্রিতা চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। আসিফের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দুই পাশে মাথা নারিয়ে না বোঝায়।
আবরারের রাগ তরতর করে বাড়তে থাকে। এই ছেলেটাকে প্রটেক্ট করছে আদ্রিতা? মানে এখনো ফিলিংস রয়েছে এই ছেলের জন্য?
আবরার তাসনিন এর বউয়ের মনে অন্য পুরুষ?
সিয়াম আহাদ আমান ইভান আদ্রিতার কন্ঠস্বর শুনেই দরজা খুলে।
আসিফ আবরার এবং আদ্রিতাকে এক সাথে দেখে সিয়াম হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। মুহুর্তেই এক খানা কবিতা ঠোঁটের আগায় চলে আসে
” আব্বা আমার রেগে গেছে
ঠিক ক্ষেপা ষাঁড় এর মতো
করবে এবার হম্বিতম্বি
ঠিক শাকিব খানের মতো
আমি বড়ই ভালো ছেলে নামটা আমার সিয়াম
আব্বার রাগ দেখতে দেখতে চুল গুলো পেকে হয়ে গেলো ডিয়াম।
সিয়ামের কবিতা শুনে বিরক্ত হয় আমান। কপাল কুঁচকে বলে
“শালা আসিফকে নিয়ে কবিতা বল।
আসিফ এখন মার খাবে সেটা উল্লেখ কর।
সিয়াম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে।
দুপা এগিয়ে উচ্চস্বরে বলে ওঠে
” ঘূর্ণিঝড় এসে গেছে সিঙ্গাপুর দেশে
আমার আব্বার এর রাগে সব যাবে ভেসে
আসিফ খাবে মার আর করুন সুরে কাঁদবে
এসব দেখে সিয়াম আমান হাত তালি দিবে
আসিফ তাকায় সিয়াম এর পানে। এই ছেলের কবিতার কথা সে ভোলে নি। ভুলভাল কবিতা বললেও কবিতার মাঝে সত্যি কথা বলে এটা ভালোই বুঝেছে।
আদ্রিতা হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে সিয়াম এর পানে এগিয়ে যায়।
“সিয়াম ভাইয়া ও….ওনাকে রুমে যেতে বলুন। উ…উনি রেগে আছে।
কথা বলতে বলতে আদ্রিতা কেঁদে ফেলে। সিয়াম নিজের কান্নার মতো মুখো ভঙ্গি করে। যেনো সেও কাঁদছে।
” আমি পারবো না মা। খাক শালা মার।
আসিফ নাক চেপে দু পা এগিয়ে আসে। আবরারের চোখে চোখ রেখে বলে
” কি প্রবলেম আপনার? মারছেন কেনো?
আবরার পূণরায় নারা উদ্দেশ্যে হাত উঠায় তখন আবারও আদ্রিতা সামনে আসে। এবার আর নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে না আবরার। বরং আদ্রিতাকে দেয়ালে ঠেকিয়ে গলা চেপে ধরে শক্ত হাতে।
আদ্রিতা ছটফট করে ওঠে। প্রচন্ড শক্ত করে ধরার ফলে নিঃশ্বাস আটকে আসছে। দুই হাত দ্বারা সরানোর চেষ্টা চালায় আবরারের হাত খানা।
আসিফ চমকায়। কিছু বলার প্রস্তুতি নিলে ইভান তাকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। সিয়াম আমান আহাদ আবরারের কাছে যায়। তাকে থামার অনুরোধ করতে থাকে কিন্তু কেউ ই আবরারের শরীরে হাত দেওয়ার সাহস পায় না।
“আবরার প্লিজজ ভাই ছেড়ে দে। ও ও মরে যাবে।
আবরার শোনে তবে ছাড়ে না। তাকায় আদ্রিতার মুখ পানে। ইতোমধ্যেই লাল হয়ে গিয়েছে মুখ খানা। চোখ উল্টে আসছে যেনো এখনই দম বেরিয়ে যাবে।।
সিয়াম সাহস করে আবরারের হাতের ওপর হাত রাখে। ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে
” আবরার তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস। ছাড় আদ্রিতাকে। মরে যাবে ও।
এবার আবরার ছেড়ে দেয়। আদ্রিতা লুকিয়ে পড়তে নেয় ফ্লোরে তবে ধরে ফেলে সিয়াম। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। থরথর করে কাঁপছে তার শরীর। আদ্রিতার কিছু হয়ে যাবে না তো?
আমান বলে
“সিয়াম ওকে হাসপাতালে নিতে হবে ভাই। চল জলদি
সিয়ামের টনক নরে। চট করে করে আদ্রিতাকে কোলে তুলে নেয় এবং পাগলের মতো দৌড়াতে থাকে।
আবরারের রাগ এখনো কমছে না। সে দেয়ালে ঘুষি দিতে শুরু করে। একটার পরে একটা পাঞ্চ মেরেই চলেছে। হাত থেতলে যাচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।
আহাদ রুমে গিয়েছিলো টাকা আর ফোন আনতে। আবরারকে পাগলামি করতে দেখে চট করেই হাত ধরে ফেলে। করুন স্বরে বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৩
” ভাই পাগলামি করছি কেনো?
যদি আদ্রিতার কিছু হয়ে যেতো।
“যেতো।
আই ডোন্ট কেয়ার।
আহাদ একটু হাসে। আবরারের পিঠ চাপকে বলে
” তুই তো দুই সেকেন্ডও থাকতে পারিস না ওকে ছাড়া।
“ও মরে গেলে দুশো বছরও থাকতে পারবো।
বাট বেঁচে থাকলে এক পারসেন্টও অন্য কাউকে দিবো না।
আদ্রিতা আমার বউ।
ওর হৃদয়ে শুধু আমি থাকবো। আবরার তাসনিন।