প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১০
Drm Shohag
“বউ বলে মানো না, তাহলে এসব কি?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কোনসব?”
তারেক নেওয়াজ ছেলের উপর চরম বিরক্ত। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
“তুমি মাইরাকে মেনে নিয়েছ?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বলে,
“আমি কোনো বাচ্চাকে আমার আশেপাশে দেখতে চাই না।”
তারেক নেওয়াজ রেগে যায় ইরফানের কথায়। কয়েক পা এপাশ-ওপাশ করে ইরফানের দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে ধমকে বলে,
“তোমাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম। তুমি এসব কি করছ? মেয়েটাকে ইউস করে দু’দিন পর ডিভোর্স দিয়ে দিবে?”
ইরফান রেগে বলে,
“এখানে ডিভোর্স এর কথা আসছে কোথা থেকে?”
“তো আসবে না? তুমি তো মানছো না তাকে। রাতভর বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে ইউস করতে একটুও বাঁধল না তোমার?”
ইরফান অদ্ভুদভাবে তার বাবার দিকে চেয়ে আছে। কীসের ইউস করার কথা বলছে? তাকে কি চরিত্রহীন ভাবছে কোনোভাবে? রেগে বলে,
“মাঝরাতে উঠে এসে ভুলভাল পদবি দিয়ে আমাকে রাগিয়ো না বাবা। ঘুমাতে যাও।”
তারেক নেওয়াজ ছেলের কথায় বিস্ময় নিয়ে তাকালো। এই ছেলে তলে তলে সব করে এমন ভান করছে যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা।
“আমি ভুলভাল পদবি দিচ্ছি? সব তো নিজের চোখেই দেখলাম।”
ইরফান কপালে দু’আঙুলের সাহায্যে কয়েকবার স্লাইড করে, এরপর চোখ তুলে বাবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কি দেখলে?”
তারেক নেওয়াজ ছেলের কথায় থতমত খেয়ে তাকায়। রেগে বলে,
“যা দেখালে তাই দেখলাম।”
ইরফান নিজের দিকে একবার তাকায়। উদাম শরীর। পরনে ট্রাউজার। বিরক্ত হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
“শার্ট লেস প্রথমবার দেখছ, এমন তো নয়।”
তারেক নেওয়াজ রেগে বলল,
“আমি মাইরার কথা বলছি।”
ইরফান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। বাবার দিকে তাকিয়ে রেগে বলল,
“ওই স্টুপিট এর নাম জপতে ইচ্ছে করলে, প্লিজ নিজের ঘরে গিয়ে জপো।”
তারেক নেওয়াজ দ্বিগুণ রেগে বলল,
“তোমাকে আমার ছেলে ভাবতেই অবাক লাগছে। ভুলেও ডিভোর্সের কথা ভেবো না। মাইরা যদি দিন দিন বড় না হয়ে আরও ছোট হয়ে যায়, তবুও ওর সাথেই তোমাকে থাকতে হবে, মাথায় রেখ।”
কথাটা বলে বিরক্ত হয়ে উল্টো ঘুরে চলে যায়। বিড়বিড় করে,
“অস’ভ্য ছেলে।”
ইরফান রেগে ঠাস করে তার ঘরের দরজা আটকে দেয়। রাগে শরীর রি রি করছে। কোমড়ে হাত দিয়ে বারবার এপাশ-ওপাশ করে হাঁটতে লাগলো। ইচ্ছে করছে মেয়েটার দু’গালে ঠাটিয়ে দু’টো থা’প্প’ড় মারতে।
ইরফান এর একঘর পর জাহারা আর তার মা থাকে। ইরফানের ঘরে এতো শব্দ, মাইরার চিৎকার শুনে জাহারা জাগা পেয়ে গিয়েছিল। জাহারার মা জাগা পায়নি। তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমান। কিন্তুু জাহারা জাগা পেয়ে ঘরের দরজা খুললে মাইরাকে ইরফানের ঘর থেকে বেরোতে দেখে।
বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রয় সেখানে। ইরফানের বাবা চলে যায়, ইরফান দরজা লাগিয়ে দেয়। জাহারা দরজার আড়ালে চুপ করে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। কখন যে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়েছে মেয়েটা বুঝতেই পারল না। ধীরে ধীরে ঘরের ভেতর গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। এরপর দরজা ঘেঁষে সেখানেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে। হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে।
তার মনে পড়ে, সে যখন ক্লাস টেন এর টেস্টে ফেইল করেছিল তখন তার মা, ভাই অনেক বকেছিল। তার খালা তাকে এই বাড়িতে এনে পরীক্ষার আগ পর্যন্ত এখানে রেখে দিয়েছিল, তাকে নিয়ম করে ইরফান ভাই পড়াতো। কি সুন্দর পড়ায় ইরফান ভাই। জাহারা ইরফানের পড়ানোয় মুগ্ধ হতো, ইরফান ভাই মাঝে মাঝে কাজের চাপে না পড়ালে জাহারার সেদিন ভালো যেত না। কি করে যাবে? জাহারা তো পুরো এক ঘণ্টার বেশি পড়ার পাশাপাশি ইরফান ভাইকে মুগ্ধ হয়ে দেখত, কাজ শেষে যখন ইরফান ভাই বলতো, তার ঘরে যেতে, পড়াবে বলে,, তখন জাহারা নাচতে নাচতে হাজির হয়ে যেত। ইরফান ভাই প্রায়ভেট পড়াতো না। খালার কথায় তাকে দেখিয়ে দিতে রাজি হয়েছিল। সেই যে জাহারার ছোট্ট দুনিয়ায় হঠাৎ ইরফান ভাই নামক এক বসন্ত এসে হাজির হলো।
এরপর জাহারা এসএসসি দেয়, এইচএসসি এর পর দিন রাত এক করে অ্যাডমিশনের জন্য পড়েছে ইরফান ভাইয়ের ভার্সিটিতে চান্স নেয়ার জন্য। গতবছর সেই ভার্সিটি চান্স পেয়েও যায়। কিন্তুু হঠাৎ-ই তার গড়ে তোলা সব অনুভূতিতে এক ছোট একটা মেয়ে এসে থাবা বসালো। ইরফান ভাইকে কেড়ে নিল তার থেকে।
জাহারার কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে। মেয়েটা সমানে ফোঁপায়। বসা থেকে উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। তার বড্ড ক’ষ্ট হয় ইরফান ভাইয়ের পাশে অন্য কাউকে দেখলে। তিন বছর আগে যাকে মন দিয়ে বসে আছে, আজ হঠাৎ সে বউ নিয়ে সংসার করছে, জাহারা কি করে মানবে? ওয়াশরুমে বসে অনেকক্ষণ কাঁদলো। এরপর চোখেমুখে পানি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। মায়ের পাশে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। চোখে ঘুম নেই। তার দমবন্ধ লাগছে। সারারাত এপাশ-ওপাশ করে কাটিয়ে দেয়। ফজরের আজান শুনে উঠে নামাজ পড়ে নেয়। এরপর আরও অনেকক্ষণ বসে বসে কাঁদে।
জাহারার মা নামাজ শেষে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে জাহারার দিকে তাকিয়ে আঁতকে ওঠেন। জাহারা বিছানার কোণায় চুপ করে বসে বসে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল। সে তো কাঁদতে চায় না। কিন্তুু কেন যে চোখ থেকে পানি গড়ায় এতো। বারবার মনে পড়ছে ইরফান ভাই আর মাইরা রাতে একঘরে ছিল। জাহারার মা এগিয়ে এসে মেয়ের পাশে বসেন। জাহারা মায়ের দিকে তাকায় না।
ভদ্রমহিলা জাহারার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“কাঁদছিস কেন মা?”
জাহারা ফুঁপিয়ে ওঠে। আবারও কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে যায়। অসহায় কণ্ঠে বলে,
“ইরফান ভাই কে এনে দাও না মা! তুমি আর খালামণি যে বললে ইরফান ভাই আমাকে ভালোবাসবে। তোমাদের কথা তো মিলল না মা।”
জাহারার মা কি বলবেন বুঝলেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“ইরফান তো বিয়েটা মেনে নেয়নি। একটু ধৈর্য ধর।”
জাহারা হঠাৎ-ই রাগে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলে,
“ওরা একসাথে থাকতে শুরু করেছে, আমাকে আর কত ধৈর্য ধরতে বলো? আমি কিন্তুু ইরফান ভাইয়ের পাশে কাউকে মানব না। ওই মেয়েকে ছাড়বো না আমি।”
জাহারার মা মেয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকালেন। মেয়েটা ইরফানকে পছন্দ করত, কিন্তুু এতোটা পসেসিভ তিনি বোঝেননি। জাহারাকে কিছু বলল না, চুপ করে পাশ থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রুমা নেওয়াজ এর ঘরে গিয়ে দেখেন তারেক নেওয়াজ আছে। তিনি তার বোন রুমা নেওয়াজ কে ডাকলে তিনি ভেতর থেকে আসছি বললে জাহারার মা আবারও তার ঘরে চলে আসে।
ওদিকে রুমা নেওয়াজ বোনের ডাকে উপরে আসেন।
“আপা তুমি যে আমার মেয়েটাকে তোমার ছেলের জন্য নিতে চেয়েছিলে, ভুলে গিয়েছ?”
রুমা নেওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
“তোর দুলাভাই তো শুনলো না আমার কথা, কি করব বল? বিয়ে যেহেতু হয়েই গিয়েছে এখন তো কিছু করার নেই। বিয়ে না হলে আমি জাহারাকে আমার ঘরের ছেলের বউ করে নিয়ে আসতাম।”
জাহারার মা মেয়ের দিকে তাকায় একবার। মেয়েটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। তিনি তার বোনের হাত দু’টো আগলে বলেন,
“আপা আমি জানি তুমি আমাকে সেভাবে কথা দাও নি। আমি-ই বেশি আশা করেছিলাম, কিন্তুু আমার মেয়েটার দিকে একবার দেখ।”
বোনের কথায় রুমা নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে জাহারার দিকে তাকায়। এগিয়ে এসে জাহারার পাশে বসে জাহারার মাথা টেনে তোলে। জাহারা খালাকে দেখে খালার বুকে পড়ে কাঁদতে লাগে। রুমা নেওয়াজ বোধয় অনেক কিছুই বুঝল। তিনি জাহারার ব্যাপার জানতেন না। তার বোন ইরফানকে মেয়ের জামাই হিসেবে চেয়েছিল, সে ইরফানের বাবার সাথে আলোচনা করতে চেয়েছিল এ নিয়ে,, কিন্তুু তার আগেই ইরফানের বিয়ে হয়ে যায়।
জাহারা খুব শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে। ইরফান যেমন চুপচাপ স্বভাবের। জাহারা তেমনি শান্তশিষ্ট, খুব ভদ্র একটা মেয়ে। রুমা নেওয়াজ এর জাহারাকে ভীষণ পছন্দ ছিল। অন্তত মাইরার চেয়ে তো হাজারগুণ ভালো মেয়ে জাহারা। কিন্তুু তার তো কিছু করার নেই।
জাহারার মা এগিয়ে এসে বলেন,
“আপা ইরফান তো বিয়েটা মানে না। ওদের ডিভোর্স করিয়ে আমার মেয়েটার সাথে ইরফানকে বেঁধে দিলে হয় না, আপা?”
রুমা নেওয়াজ জাহারার দিকে তাকালো। মেয়েটার মুখের অবস্থা করুণ। কাঁদতে কাঁদতে নাজেহাল অবস্থা করে ফেলেছে। হাত বাড়িয়ে জাহারার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেন,
“কান্না করিস না মা। আমি দেখছি। কান্না থামা।”
জাহারা তার খালামণিকে আঁকড়ে শুধু ফোঁপায়। কিচ্ছু বলেনা।
ইরফান সকাল সকাল ঘর থেকে বেরিয়ে তার দরজার সামনে জাহারাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। জাহারা হাতে এক মগ ব্ল্যাক কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দ্রুত ইরফান এর দিকে এগিয়ে দিলে ইরফান নিয়ে নেয়। সে এটা নিতেই বেরচ্ছিল। জাহারার থেকে কফির মগ নিয়ে উল্টো ঘুরেও আবার জাহারার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভার্সিটি যাস না কেন?
জাহারা মাথা নিচু করে আনমনে বলল,
“তুমি এটা খেয়াল করেছ ইরফান ভাই?”
ইরফান শুনতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট?”
জাহারা থতমত খেয়ে বলে,
“না, মানে, যাব।”
ইরফান আর কিছু না বলে ঘরের ভেতর চলে যায়।
“ইরফান, জাহারাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও। একই ভার্সিটি তো।”
ইরফান ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিল, মায়ের কথায় পা থেমে যায়। হাতঘড়িতে একবার সময় দেখে, এরপর গম্ভীর গলায় বলে,
“আমার কাজ আছে।”
জাহারা খাবার টেবিলে বসে ছিল। ইরফানের কথা শুনে চোখের কোণে পানি জমে। খাওয়া থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
ইরফান কথাটা বলে ডাইনিং টেবিলে নজর পড়লে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কপাল জুড়ে বিরক্তির আভা ফুটে ওঠে।
মাইরা নুডুলস্ কিছুটা বাচ্চাদের মতো করে মুখে নেয়। এরপর মুখের খাবার চিবোতে চিবোতে গালে হাত দিয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে মাইরা দ্রুত চোখ সরিয়ে খাবার প্লেটে দৃষ্টি ফিরিয়ে আনে। এদিক-ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে অসহায় মুখ করে থাকে। আবার কি তাকে থা’প্প’ড় দিবে না-কি? কথাটা ভাবতেই বাম হাত গালে চলে যায়। সে কিন্তুু আর মার খাবে না।
চোখ তুলে আড়চোখে আবার তাকালো ইরফানের দিকে। ইরফানের ওমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে চোখ নামিয়ে হাতের কাঁটা চামুচের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে,
‘ইচ্ছে তো করে, এই হুতুম পেঁচার চোখ কানা করে দিই।’
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়েই বিড়বিড় করে, ‘ইডিয়েট’
এরপর গটগট পায়ে চলে যায়।
ইরফান চেলে গেলে মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
তার উল্টোপাশে বসা জাহারার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
“আপু, তোমাকে নিয়ে যায়নি বলে মন খা’রা’প কর না। বাবাকে বললেই নিয়ে যাবে। জানোই তো এই লোকটা কেমন খা’টা’শ।”
পিছন থেকে রুমা নেওয়াজ গম্ভীর গলায় বলে,
“কে খা’টা’শ?”
মাইরা অসহায় মুখ করে তাকায়। তার শ্বাশুড়ি কোথা থেকে চলে আসে। নিজের ছেলের নামে সত্য কথা তো নিতে পারে না। আমতা আমতা করে বলে,
“আমি, আমি।”
রুমা নেওয়াজ মাইরার দিকে মনোযোগ দিল না। জাহারার পাশের চেয়ারে বসে বলে,
“নিজেকে একটু শক্ত কর মা।”
জাহারা মাথা নিচু করে থাকে। মাইরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে জাহারার দিকে। মেয়েটার মন খা’রা’প মনে হয়। কিন্তুু কেন? মাইরা মৃদু হেসে বলে,
“আপু আমি আজ ইনায়া আপুর কলেজে যাব। বাবা বলেছে নিয়ে যাবে। তুমিও যাবে? তাহলে দেখবে মন ভালো হয়ে যাবে।”
জাহারার চোখে পানি টইটুম্বুর। সেভাবেই চোখ তুলে শক্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। জাহারার দৃষ্টি দেখে মাইরা চুপসে যায়। ঢোক গিলে বলে,
“তুমি কি আমার উপর কোনো কারণে রে’গে আছো আপু? তাহলে স্যরি!”
জাহারা আধখাওয়া খাবার রেখে উঠে দাঁড়ায়। কোনোদিকে না তাকিয়ে তার ঘরের দিকে যেতে থাকে। রুমা নেওয়াজ পিছু ডাকে, খাবারটুকু শেষ করে যেতে বলে। জাহারা ঘরের দিকে যেতে যেতে ভাঙা গলায় বলে,
“খালামণি জোর কর না। প্লিজ! ভালো লাগছে না।”
রুমা নেওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মাইরা কিছুই বুঝল না। বোকা চোখে শুধু দেখল।
রুমা নেওয়াজ মাইরার দিকে বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। সবকিছু কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে তার। ভাবনার মাঝেই জাহারা রেডি হয়ে ব্যাগ হাতে নিচে নেমে আসে। রুমা নেওয়াজ জাহারাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে বলেন,
“জাহারা মা, এভাবে চলে যাচ্ছিস কেন?”
জাহিদ পিছনে দাঁড়িয়ে বলে,
“খালামণি দেখ তো এর কি হয়েছে। আমাকে টেনে আনলো। বলে, ওকে এক্ষুনি বাসায় রেখে আসতে হবে।”
রুমা নেওয়াজ জাহারার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“এমন করিস না মা। আর কয়েকটা দিন থেকে যা।”
জাহারা বা হাতে চোখ মুছে ভাইয়ের হাত ধরে বলে,
“আমি আর এখানে থাকতে পারব না খালামণি, জোর কর না।”
ইনায়া তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে জাহারাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
“আপু তোমরা যে এবার সাতদিন থাকবে বললে। প্লিজ আপু থেকে যাও!”
জাহারা বিরক্ত হয়ে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমাকে দিয়ে কি করবি? ভাবি তো পেয়ে গিয়েছিস। আমাকে দিয়ে কি এখন?”
ইনায়া অবাক হয়ে তাকালো জাহারার দিকে। জাহারা এভাবে কথা বলছে কেন। জাহিদ জাহারার মাথায় টোকা দিয়ে বলে,
“এভাবে কথা বলছিস কেন? ইনায়া তো ভালোবেসে বলছে।”
জাহারা কিছুই বলল না। একা একাই বেরিয়ে যেতে লাগলো। রুমা নেওয়াজ জোর করে জাহারার হাত থেকে ব্যাগ ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আমার কথা শুনবি না তুই? আমি তোর কেউ নই?”
জাহারা মাথা নিচু করে আছে। চোখের কোণে পানি। জাহিদ তার বোনের ব্যাপার বুঝল না। খালামণি যেহেতু একে আটকেছে আজ আর যেতে হবে না। রুমা নেওয়াজ জাহারাকে নিয়ে তার ঘরের দিকে যান।
জাহিদ পাশ কাটিয়ে মাইরার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসে বলে,
“হাই কিউটিপাই!”
মাইরা খাবার খাওয়া রেখে জাহারাদের কাহিনী দেখছিল। পাশ থেকে জাহিদের কথা শুনে মৃদু হেসে বলে,
“আমার নাম মাইরা।”
জাহিদ হেসে বলে,
“তুমি ভীষণ কিউট, তাই এই নাম দিয়েছি বুঝলে?”
মাইরা কিছু বলল না। জাহিদ আবারও বলে,
“নুডুলস্ তোমার এতো ফেভরিট? এতোগুলো খেতে পারবে?”
মাইরা হেসে বলল,
“আমার সব-ই ফেভরিট। শুধু করলা একটু বেশি।”
জাহিদ অবাক হয়ে বলল,
“সিরিয়াসলি? করলা? ইয়াক!”
জাহিদের নাট ছিটকানো মাইরার পছন্দ হলো না। তার এতো স্বাদের খাবারটায় সবাই এমন করে কেন, ভাল্লাগেনা।
দরজা থেকে ইরফানের গম্ভীর স্বরে শক্ত কণ্ঠ ভেসে আসে,
“জাহিদ?”
মাইরা, জাহিদ, ইনায়া তিনজনেই দরজার দিকে তাকায়। জাহিদ ঢোক গিলে। কাল সারাদিন কাপড় আয়রনের দোকানে কেটেছে। আজ আবার কী? মাইরা বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে ইরফানের দিকে। এই লোক তো চলে গেল। আবার কোথা থেকে উদয় হলো? জাহিদ হেসে বলে,
“হ্যাঁ, ইরফান ভাই বলো।”
“এসো।”
জাহিদ কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“কোথায়?”
ইরফান মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায়। মনে হচ্ছে আসবে আর টুপ করে মাইরাকে গিলে খাবে। মাইরা ভীত চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। সে কি করেছে? এই লোক এভাবে তাকিয়ে আছে কেন?
মাথা নিচু করে নিজের দিকে তাকালো। এক পা ভাঁজ করে চেয়ারের উপর উঠিয়ে, আরেক পা ঝুলিয়ে বসেছে। ইরফানের দিকে তাকিয়ে পা নামিয়ে সুন্দরমতো ভদ্রভাবে বসলো। ঠিকঠাক হয়ে বসার সময় জাহিদের গায়ের সাথে গা লাগে। মাইরা জাহিদের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
“স্যরি ভাইয়া।”
জাহিদ মৃদু হেসে বলে,
“ইট’স ওকে কিউটিপাই।”
মাইরা ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান ক্ষোভের দৃষ্টিতে তার দিকেই চেয়ে দ্রতপায়ে এদিকে আসছে। মাইরা ভয়ে দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। তার মনে হচ্ছে ইরফান তাকে তুলে আছাড় মারতেই এদিকে আসছে। গতি দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
মাইরা দৌড়ে জাহিদের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমাকে বাঁচাও কেউ।”
জাহিদ আর ইনায়া বুঝল না মাইরার কাণ্ড। তার ভাই-ই বা এভাবে আসছে কেন? ইরফান চোখের পলকে মাইরার কাছে আসে। মাইরা নিচু হয়ে টেবিলের নিচে ঢুকতে গেলে ইরফান মাইরার হাত শক্ত হাতে চেপে ধরে। মাইরা কাচুমাচু হয়ে অসহায় চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
“দেখুন, আমি তো বলেছি আপনার চুল আর কাটবো না। ছেড়ে দিন আমায়।”
ইরফান রেগে বলে,
“আচ্ছা?”
মাইরার মনে পড়ে, সে লাস্টে বলেছিলে কেটেই ছাড়বে। ভাবনার মাঝেই ইরফান মাইরাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে মাইরার ঘরের দিকে। মাইরা একপ্রকার দৌড়াচ্ছে, হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে আর বলতে থাকে,
“ছাড়ুন, আল্লাহ,, কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? লাস্ট কথা তুলে নিলাম। এখন ছাড়ুন আমায়।”
ইনায়া, জাহিদ কিছুই বুঝলো না। পিছন থেকে জাহিদ বলে,
“ইরফান ভাই কি করছ? ছাড়ো কিউটিপাইকে। ব্য’থা পাচ্ছে তো।”
ইরফান সাথে সাথে উল্টো ঘুরে জ্বলন্ত চোখে জাহিদের দিকে তাকায়। জাহিদ ইরফানের ওমন চাহনী দেখে আমতা আমতা করে বলে,
“না মানে, নিয়ে যাও। তোমার-ই তো বউ। নিয়ে যাও।”
ইরফান আগের চেয়েও শক্তহাতে মাইরার হাত চেপে মাইরার ঘরের দরজার সামনে থেকে মাইরাকে ভেতরে ধাক্কা দেয়। মাইরা কয়েক পা পিছিয়ে যায়। হাতটা উল্টেপাল্টে দেখে। লাল হয়ে গিয়েছে। অপর হাতে হাতটায় একটু বুলালো।
ইরফান ঘরের ভেতর এসে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে লক করে দেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। ভীত স্বরে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
“কি করেছি আমি? বললাম তো আপনার চুল কাটবো না।”
ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে আসলে মাইরা কাচুমাচু হয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়। ইরফান গম্ভীর গম্ভীর গলায় বলে,
“কিন্তুু আমি তোমার চুল কাটবো।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে বলে,
“না প্লিজ, আমি অনেক ক’ষ্ট করে চুল বড় করেছি। এগুলো আমার চুল। কাটবেন না একদম। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
ইরফান মাইরার দিকে আরও খানিকটা এগিয়ে আসলে মাইরা ভয়ে তার দু’গালে হাত দেয়। কান্নামাখা গলায় বলে,
“একদম মারবেন না বলে দিচ্ছি, আমার গাল সরকারি নয় বুঝেছেন?”
ইরফান হঠাৎ-ই মাইরার গলা থেকে ওড়না টান দিয়ে নিয়ে নেয়। মাইরা ল’জ্জায়, রাগে চেঁচিয়ে বলে,
“আরে আরে আমার ওড়না, আমার ওড়না দিন।”
ইরফান গম্ভীর মুখায়বে মাইরার ওড়না ডান হাতে পেঁচিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“যে ওড়না মাথায় থাকে না, সে ওড়না তোমার লাগবে না। এভাবেই থাকো।”
মাইরা কেঁদে দিয়েছে প্রায়। ‘এই লোকটা এমন কেন? তাকে বউ বলে মানে না। শুধু তার ই’জ্জ’তে হাত দিতে আসে। বেয়া’দব লোক।’ বিড়বিড় করে বলে মাইরা।
খোপা খুলে দিয়ে চুলগুলো সামনে নিয়ে আসে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। দমবন্ধ লাগছে তার। একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। মাইরা মাথা উঁচু করে রেগে বলে,
“সরবেন না-কি কোলে উঠবেন? অ’সহ্য লোক একটা।”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বা হাতে মাইরার মাথার পিছনের একগোছা চুল মুঠো করে ধরে। মাইরা মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে,
“আহ! ছাড়ুন, লাগছে আমার।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার মুখের দিকে চেয়ে থাকে, হাত কিছুটা শিথীল করে, তবে ছাড়ে না। দাঁতে দাঁত পিষে ধমকের স্বরে বলে,
“যদি এই ঘর থেকে বেরিয়েছো, আই সোয়ার, তোমার মাথার একটা চুলও থাকবে না।”
কথাটা বলে মৃদু ধাক্কা দেয়। মাইরা বিছানার উপর উপুড় হয়ে পড়ে যায়।
ইরফান হাতের ওড়না মাইরার দিকে ছুঁড়ে মেরে গটগট পায়ে এগিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
মাইরা কেঁপে ওঠে। নিজের উপর পড়ে থাকা ওড়না নিয়ে নিজেকে ঢেকে নেয়। খাওয়ার সময় হয়তো মাথা থেকে ওড়না পড়ে গিয়েছিল, বুঝতে পারেনি। আর এই লোক তাকে মানবে না, আবার স্বামী গিরি দেখাতে আসে।
ভাবনা রেখে ধীরপায়ে দরজা খুলতে গেল। ওই লোকের কথা শুনে সে ঘরবন্দী হয়ে বসে থাকবে? অস’হ্যকর লোক একটা।
কিন্তুু দরজা তো খোলে না। বুঝল লক হয়ে গিয়েছে। এবার ওপাশ থেকে চাবি দিয়ে খুলতে হবে।
রাগে দরজায় একটা লাথি দিলে নিজেই ব্য’থা পেয়ে পা ধরে বসে পড়ে। এতো রা’গ লাগছে। তার অর্ধেক নুডুলস্ ওখানে পড়ে আছে। পেট টাও ভরেনি। বিড়বিড় করে,
“এতো খবি’শ মানুষ জীবনে দেখিনি। চেয়েছিলাম চুল সাইজ করব, এখন মনে হচ্ছে একটা চুলও রাখবো না। আমাকে একটু শান্তি করে খেতেও দেয় না। খ’বি’শ লোক একটা। আবার তাকে ঘরবন্দী করার পায়তারা করছে,, এমনিতেই গ্রাম থেকে এসে এখানে বিরক্ত লাগে। এখন ঘর থেকেই বেরোতে দেবে না, শখ কত! সে বেরোবো। ১০০ বার বেরোবে।”
ইরফান ঘর থেকে বেরিয়ে জাহিদের কাছে দাঁড়িয়ে বলে,
“এসো।”
ইনায়া আর জাহিদ দু’জনেই হা করে চেয়ে ছিল মাইরার ঘরের দরজার দিকে। ইনায়া সবচেয়ে বেশি অবাক হলো। তার ভাই করছে টা কি? সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
জাহিদ এসব অবাকতা রেখে চেয়ারে বসে বলে,
“খেয়ে নিই?”
“ফাস্ট।”
জাহিদ ২ মিনিটে কিছুটা নুডুলস্ খেয়ে নেয়। সে পরিকল্পনা করছে এই কাজ করেই সে এই বাড়ি থেকে চলে যাবে। কি রে বাবা, বেড়াতে এসে শুধু কাজ করতে হচ্ছে। এর চেয়ে নিজের বাড়ি গিয়ে শুয়ে ঘুম পাড়ুক, সেটাই ভালো।
এরপর পানি খেয়ে ঘরের দিকে যেতে নিলে ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কোথায় যাচ্ছ?”
জাহিদ ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলল,
“চেঞ্জ করে আসি?”
“লাগবে না।”
জাহিদ নিজের দিকে তাকালো। ট্রাউজার পরে বাইরে যাবে? টি-শার্ট ও কেমন যেন। অতঃপর জিজ্ঞেস করে,
“আজ কি কাজ করতে হবে?”
“বাগান ক্লিন।”
জাহিদ চোখ বড় বড় করে বলে,
“কি? লেবার হবো আমি?”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“হুম। এসো। তোমাকে দেখিয়ে দিয়ে বের হবো। আমার লেট হচ্ছে।”
ইনায়া তার ভাইয়ের দিকে চেয়ে আছে। হয়েছে টা কী ইরফানের? ইনায়া বুঝল না। গতকাল না-কি সব প্যাণ্ট-শার্ট জাহিদ ভাই বেচারাকে দিয়ে আয়রন করিয়ে এনেছে। আজ সোজা লেবার? জাহিদের পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বড় ভাইয়ের মুখের উপর নাও করা যায় না। জাহিদ একটু ভেবে বলল,
“আমার হাতে লেবার আছে ইরফান ভাই, কল করলে দু’মিনিটে চলে আসবে। তুমি নিশ্চিতে যাও।”
ইরফান জাহিদের হাত টেনে বাইরে যেতে যেতে বলল,
“তোমার হাতেই বাগান ক্লিন করাতে ইচ্ছে করছে। ওরা কাজে ফাঁকি দেয়। তুমি দিবে না।”
জাহিদ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, এই বাগান ক্লিন করে সে আর এই বাড়িতেই ঢুকবে না। ওইদিক দিয়েই সোজা তার বাড়িতে চলে যাবে। এসব কি হচ্ছে তার সাথে? আমতা আমতা করে বলে,
“বলছি, ইরফান ভাই? রহমত চাচা তো কাজে ফাঁকি দেয় না, তাকে দিয়ে করালে হয় না?”
ইরফান জাহিদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“তোমার হাতের ছোঁয়া আমার বাগানে থাকুক, আমি সেটাই চাইছি। গো।”
জাহিদ এতো অদ্ভুদভাবে তাকালো ইরফানের দিকে, সে দৃষ্টির মানে এ দুনিয়ার কেউ বোধয় বুঝবে না। দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিজের হাত উঠিয়ে একবার দেখল, তার হাতে কি কোনোভাবে হীরা অথবা সোনা লেগে আছে?
ইরফান উল্টো ঘুরে তার গাড়ির দিকে যেতে যেতে আবারও গম্ভীর গলায় বলে,
“ভুলেও কাজে ফাঁকি দিয়ে বাড়ির ভেতর যাওয়ার ট্রাই কর না, সব খবর থাকবে আমার কাছে, আমার কথার এদিক-ওদিক হলে পানিশমেন্ট পাবে,, নিজের বাড়িতে গিয়ে লুকিয়ে থাকলেও।”
জাহিদ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে সে এই কাজ করে এভাবে ফকির, কামলা যা-ই লাগুক,, সেই বেশেই সোজা তার বাড়ি চলে যাবে। আর এখানে নয়। ইরফান ভাইয়ের কিছু হয়েছে যার স্বীকার সে হচ্ছে। আগে তো কখনো এমন করেনি। যাইহোক জাহিদ বিড়বিড় করল,
“কাজ শেষে আর এক মুহুর্ত এখানে নয়,
আমার বাড়ি আমারে সেথায় যাহিতে কয়,
যেখানে কাজ বিহীন শুধু আরাম-বিরাম রয়।”
কাজের বিরহে কবিতা বলার বৃথা চেষ্টা করল ছেলেটা।
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৯
ইনায়া হাতে একটা ছোট্ট চিরকুট নিয়ে থম মেরে বসে আছে। বারবার ঢোক গিলছে। সে জানে এটা কে দিয়েছে। এই লোক হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হলো? চিন্তায় তার মাথা ফেটে যাচ্ছে।
কলেজ থেকে ফেরার সময় তার সমান বা তার চেয়ে কিছুটা বড় এক মেয়ে তার হাতে একটা বক্স ধরিয়ে দেয়। ইনায়া তার রুমে এসে বক্স খুলে ভেতরে অনেকগুলো বিভিন্নরকমের চকলেট পায়, সাথে একটা চিরকুট,, যেখানে লেখা~
“ইউ আর মাই লিটেল কুইন। আ’ম ব্যাক।”