মন ফাগুন পর্ব ৪০
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া
ইয়াসিন সহ বাড়ির সবাই এইদিকে তাকিয়ে রয়েছে কি হচ্ছে তারা সেটা বুঝতে পারছে না। নিহান তাড়াতাড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে আর বলে –
“- আসলে মানে মিহি বলতে চাই মানে “।
নিহান কিছু বলতে যাবে এর আগে জামশেদ তালুকদার ওদের সামনে চলে আসে ওনার শরীরে এখন কতটা রাগ রয়েছে সেটা হয়তো ওনি নিজে ও জানে না।জামশেদ তালুকদার এসে মিহিকে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখতে বলে আর বলে –
“- মিহি তুমি একটু আগে ইয়াসিনকে কি বললে সেটা আবার বলো।মিহি কথা বলো নিহান তোমার কে হয়?
মিহি একবার নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে নিহান না করছে যাতে মিহি তাদের রিলেশনের বিষয়ে কিছু না বলে কিন্তু মিহি সেটা শুনে না। মিহি বলে –
‘- নিহান আমার স্বামী হয় ওকে আমি ভালোবাসি। দুইমাস আগে নিহানের সাথে আমার বিয়ে হয় আর এতোদিন আমরা একসাথে সংসার করেছি। আর আমি নিহানের স্ত্রী হয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না নিহানকে আমি অনেক ভালোবাসি আর ওর সাথে সারাজীবন থাকতে চাই.
মিহির কথাটা শুনে জামশেদ তালুকদারের রাগে শরীর জ্বলে যায় আর সেখানে থাকা সব মানুষ মিহিকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলছে। নিহান মিহির দিকে তাকিয়ে থাকে সে হয়তো ভাবতে পারে নাই মিহি এতোটা সাহস দেখাতে পারে। তবে মিহির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনে নিহানের মনের ভিতরে একটা আলাদা শান্তি ভয়ে যায়। জামশেদ তালুকদার মিহির কথাটা শেষ হওয়ার আগে ওকে থাপ্পড় মারতে চাই কিন্তু এর আগে নিহান ওর হাত ধরে ফেলে।
যখন জামশেদ তালুকদার মিহিকে থাপ্পড় মারতে হাত তুলে তখন মিহি চোখ বন্ধ করে নেয় একটু পর চোখ খুলে দেখে নিহান ওর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। নিহান বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- জামশেদ স্যার এখানে যা হয়েছে সেটার জন্য দায়ী আমি মিহির কোনো দোষ নাই তাই মিহিকে নিয়ে কোনো আজেবাজে কথা হবে না। আর স্যার মিহি আপনার মেয়ে তাই ওকে মারার অধিকার আপনার রয়েছে কিন্তু মিহি আমার বউ তাই ওকে সেইফ করার দায়িত্ব আমার “।
“- তোমার মধ্যে যদি এতো দায়িত্ববোধ থাকে তাহলে কি করে পরিবারকে না জানিয়ে একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে। আর এখন নিজের বউকে অন্য একজন পুরুষের সাথে বিয়ে দিতে পারলে এইটা তোমার দায়িত্ববোধ। তোমার মতো এইরকম একটা কাপুরুষকে আমার মেয়ের স্বামী হিসাবে আমি মানি না “।
জামশেদ তালুকদারের কথা শুনে নিহানের রাগ হয় কিন্তু তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে তাই নিহান শান্ত হয়ে যায়। নিহান বলে –
“- স্যার প্রথমত আমি কোনো কাপুরুষ নয় আর মিহি আর আমার বিয়েটা যেই পরিস্থিতিতে হয়েছে তখন কাউকে জানাতে পারি নাই। আর মিহির সাথে ইয়াসিনের বিয়েটা এইজন্য হতে দিচ্ছি কিন্তু এখনো বিয়েটা হয় নাই। আমি মনে করেছিলাম বিয়ের দিন সত্যিটা জানাবো কিন্তু এখন সবার সত্যি জানা দরকার। আর স্যার আমি যদি কাপুরুষ হয় তাহলে আপনার পছন্দের ইয়াসিন কেমন সেটা জানা দরকার আপনার স্যার “।
জামশেদ তালুকদার নিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে নিহান কিছু বলতে যাবে তার আগে ইয়াসিন বলে –
“- স্যার আপনি ওর কোনো কথা বিশ্বাস করবেন না নিজের বউকে অন্য কারো গলায় জুলিয়ে দিতে যে চাই তার মতো কাপুরুষের কোনো কথা বিশ্বাসযোগ্য না।আর যদি আপনার সমস্যা না হয় তাহলে আমি চাই নিহানের সাথে মিহির ডিভোর্স হয়ে ওর সাথে আমার বিয়ে হোক। মিহিকে আমি ভালোবাসি ওকে বিয়ে করতে চাই আমি “।
ইয়াসিন কথাটা বলে মিহির হাত ধরে ওর পকেট থেকে একটা আংটি নিয়ে এসে মিহির হাতে যখন পড়াতে যাবে তখন নিহান ওর হাত ধরে ফেলে। নিহান বলে –
“- ইয়াসিন এই ভুলটা কখনো করবে না বুঝতে পারলে মিহি শুধু আমার সো ওর থেকে দূরে থাকো। আর তুমি কতটা ভালো মানুষ সেটার প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে এখুনি দিচ্ছি। মনে করেছিলাম তোমার আসল চেহারা সবার প্রমাণ নিয়ে আসবো বিয়ের দিন কিন্তু এখনই মনে হয় সময় এসে গেছে “।
“- নিহান কি বলছো এইসব আমার আসল চেহারা মানে। কি প্রমাণ করবে তুমি?
ইয়াসিনের কথা শুনে নিহান একটা হাসি দেয় এরপর ফোন করে কাউকে আসতে বলে। ইয়াসিন বুঝতে পারে না নিহান কি করতে চলছে তাহলে কি নিহান সত্যি ঘটনা জেনে গেছে। নিহানের ফোন করার সাথে সাথে একটা মহিলা তাদের বাড়িতে ঢুকে ইয়াসিন সেই মহিলাকে দেখে কি বলবে সেটা বুঝতে পারে না। নিহান ইয়াসিনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে –
“- কি হলো ইয়াসিন তোমার মুখটা এইরকম হয়ে গেছে কোনো? কি মনে করেছিলে তুমি ইয়াসিন তোমার বিষয়ে কিছু জানি না আমি। তুমি একটা চরিএহীন ছেলে যে বিদেশে নিজের বউকে রেখ অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছে “।
জামশেদ তালুকদার সহ বাড়ির সবাই অবাক মিহি নিজে ও জানতো না ইয়াসিন বিবাহিত। নিহান সেই মহিলাকে ইশারা দেয় সব সত্যি বলতে। মহিলা বলে –
“- আমার নাম টিউলিপ। আমি আর ইয়াসিন বিদেশে একসাথে পড়াশোনা করেছি আমরা দুইবছর আগে বিয়ে করি। আমাদের সংসার ভালো চলছিলো কিন্তু একদিন হঠাৎ ইয়াসিন আমাকে রেখ দেশে যাওয়ার কথা বললো।কিন্তু দেশে গিয়ে ইয়াসিন দুইবছরের মধ্যে আমার সাথে আর যোগাযোগ করে নাই ওর কোনো খোঁজ ছিলো না আমার কাছে। দুইদিন আগে নিহান ভাই আমাকে বলে ইয়াসিন না কি অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছে যেটা শুনে আমি দৌড়ে দেশে আসি “।
ইয়াসিনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম রয়েছে সেটা সে হাত দিয়ে মুছে আর বলে –
“- এইসব মিথ্যা কথা এই মেয়েকে আমি চিনি না। সব নিহানের সাজানো নাটক সব মিথ্যা “।
“- ওহ তাই না কি ইয়াসিন সব আমার সাজানো নাটক। কিন্তু নিহান যদি কোনো নাটক সাজায় তার প্রমাণ নিহানের কাছে থাকে। টিউলিপ বোন আমার সব প্রমাণ দেখাও এক এক করে সবাইকে “।
টিউলিপ তাদের কাবিননামা সহ বিয়ের ছবি দেখায় সবাইকে ইয়াসিন বুঝতে পারে সে ফেঁসে গেছে। নিহান বলে –
“- ইয়াসিন কি হলো এখন কথা বলো। ও মা এখুনি তোমার মুখ দেখি বন্ধ হয়ে গেছে আরো অনেক প্রমাণ বাকি রয়েছে সেইসব ও ফাঁস হবে সবার জন্য। গেইম মাএ শুরু হয়েছে ইয়াসিন সোনা এতো তাড়াতাড়ি ভয় পাওয়া ঠিক না হুম “।
নিহান কথাটা বলে ডেভিল মার্কা একটা হাসি দেয় এরপর সে পাশে থাকা আরেকজনকে ফোন করে যে ছিলো এই বিয়ের ঘটক। নিহান বলে – ”
“- ইয়াসিন শুধু টিউলিপের সাথে না আরো অনেক মেয়ের সাথে অন্যায় করেছে ও এখনো অবধি অনেক বিয়ে করেছে তাদের সাথে কয়েকমাস সংসার করে তাদের রেখে চলে এসেছে। আর ওর মা বাবা এরা আসলে একজন নাটকের অভিনেতা যাদের ইয়াসিন মা বাবা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে। আর মিহির জন্য ইয়াসিনের বিয়ের প্রস্তাব যে ঘটক নিয়ে এসেছিলো তার মুখ থেকে সবটা শুনে নেন “।
ইয়াসিন কথাটা বলে ঘটকের কাছে যায় আর ওকে বলতে বলে –
“- আসলে ইয়াসিন আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে সেইজন্য এইসব কাজ করতে রাজি হয়েছি আমি। বিশ্বাস করুন এতে আমার কোনো দোষ নাই শুধু লোভে পড়ে ভুল হয়ে গেছে আমাকে দিয়ে “।
ইয়াসিন কোনো কথা বলতে যাবে তার আগে জামশেদ তালুকদার ওর গালে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড়টা এতো জোরে হয় যেনো ইয়াসিনের কানে কোনো শব্দ যাচ্ছে না কয়েক মূহুর্তের জন্য ইয়াসিন কি বলবে বুঝতে পারে না। জামশেদ তালুকদার রাগী স্বরে বলে –
“- তোর এতো বড়ো সাহস কি করে হয় হুম। জামশেদ তালুকদারের মেয়েকে বিয়ে করে কি মনে করছিলি সব সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবি। তোর বউ থাকতে আমার মেয়কে বিয়ে করবি তোকে আমি খুন করে ফেলবো। এই শিশু আমার বন্ধুক নিয়ে আয় এইটাকে আজকে মাটিতে পুঁতে ফেলবো “।
নিহান জানতো ইয়াসিনের আসল চোহারা সামনে আসলে তার শশুড় এইরকম কিছু করবে। তবে নিহান পুলিশকে ডেকে নিয়ে আসে আর ইয়াসিনকে এরেস্ট করিয়ে দেয়। ইয়াসিন বলে –
“- সরি জামশেদ স্যার আসলে মিহি আর আমার বিয়ের বিষয়ে আপনাকে আগে জানাতে পারি নাই তখন পরিস্থিতি এইরকম ছিলো। আর সেইদিন যখন আপনাদের বাড়িতে এসেছি তখন চাইলে সত্যিটা জানানো যেতো আপনাকে কিন্তু তখন আপনি এই বিয়ে মেনে নিতেন না। আর ইয়াসিন বিষয়ে আমি আগে থেকে সব জানতাম কিন্তু তখন আমার কাছে কোনো প্রমাণ ছিলো না তাই একটু সময়ের দরকার ছিলো আমার৷ তবে স্যার আমি মিহিকে অনেক ভালোবাসি ওকে ছাড়া বাচঁতে পারব না আমি “।
জামশেদ তালুকদার বলে –
“- নিহান তোমাকে ভীতু মনে করেছিলাম আমি কিন্তু তুমি সাহসী একদম একজন যোগ্য মন্ত্রীর মতো মাথা ঠান্ডা রেখে সবকিছু ঠিক করেছো।আর এই কয়েকদিনে তোমার কথা বার্তা চালচলন দেখে আমি মুগ্ধ তাই আমার কোনো অসুবিধা নাই এই বাড়ির জামাই হিসাবে তোমাকে মেনে নিতে “।
“- ওকে শশুড় মশাই তাহলে এখন থেকে জামাই আদর চাই আমার “।
বাড়ির সবাই ওদের কথায় হেসেঁ উঠে মিহি ও অনেক খুশি তবে তালুকদার বাড়িতে তারা বেশিদিন থাকতে পারলো না। কারণ সামনে নিহানের নিবার্চন আছে তাই নিহানকে শহরে ফিরে যেতে হবে তবে মিহি আর নিহানের আবার বিয়ে হবে নতুন করে। জামশেদ তালুকদার আর মুরাদ শিকদার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিহানের নিবার্চন শেষ হলে আবার ধুমধাম করে মিহি আর নিহানের বিয়ে হবে।
নিহান আর মিহি এখন গাড়িতে বসে রয়েছে সুন্দর রাত আসলে বাড়ি থেকে বের হতে রাত হয়ে গেছে। নিহান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মিহি বাহিরে তাকিয়ে রয়েছে। নিহান হঠাৎ করে বলে –
“- আচ্ছা মিহি আপনি আমাকে ভালোবাসি কথাটা কোনো বললেন না?
“- সবার সামনে সেইদিন যে বললাম আমি নিহানকে ভালোবাসি। সেটা কি শুনতে পান না আপনি “।
“- হুম সবার সামনে বলেছেন কিন্তু আমাকে একা করে বলেন নাই।এখন বলেন?
“- কি বলবো?
“- বলেন নিহান আমি আপনাকে ভালোবাসি বলেন “।
“- ওকে নিহান আমি আপনাকে “।
মন ফাগুন পর্ব ৩৯
মিহি মুখের ভালোবাসি কথাটা বলার আগে হঠাৎ করে পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে মিহিদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। হঠাৎ করে এমন হওয়ায় নিহান গাড়ি ঠিক রাখতে পারে নাই গাড়িটা উল্টো যায় তখন আবার পিছন থেকে সেই গাড়িটা জোরে মিহিদের গাড়িকে ধাক্কা দেয়। মিহি বলে –
“- নিহান “।
