পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৬

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৬
সাদিয়া আক্তার

চন্দ্র পুনমের ছোট ফুপি বেলা সবার ছোট সে ভাইবোনদের মধ‍্যে। তার সাথে চন্দ্র বাদে কারো খুব একটা সখ‍্যতা নেই আজ সেই ছোট ফুপির বাসায় যাচ্ছে চন্দ্র পুনমকে নিয়ে। বেলা আক্তার গাউছিয়া থাকে সেখানেই একটা সরকারি স্কুলের টিচার। ভাইঝি ভাইপোর বিয়েতে তিনি যাননি। তার এই ভীরবাট্টা ভালো লাগে না তিনি একা থাকতে পছন্দ করে। বলতে গেলে তিনি পরিবারের সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। তিন ভাই ও তার সাথে কথা বলে না তার একটা ভুলের কারণে।।
বাস থেকে নেমে রিক্সায় উঠে চন্দ্র পাশে বসা পুনমের দিকে চায়। ঘেমে নেয়ে একাকার মেয়েটা বহুদিন পর এমন বাস জার্নি করায় বমিও করেছে।
মেরুন কালারের শাড়ি সাথে কালো কালারের হিজাব। হিজাবের পাশ দিয়ে ঘামের বিন্দু কণা উকি দিচ্ছে
অটোর প‍্যাপু শব্দে সেদিকে তাকায় চন্দ্র দেখে ফুপির বাসায় সামনেই এসে গেছে।

— এখানেই থামান ঐ দোকানের সামনে,,,,
দুইজন নামে চন্দ্র দোকানের সামনে গিয়ে কিছু চিপস আইসক্রিম নিয়ে নেয়।
— এগুলো নিচ্ছেন ক‍্যানো ফুপির বাসায় তো ফুপি ছাড়া আর কেউ নেই,,
— ফুপির ভাইঝির মতো ফুপিরও এই খাবার গুলো পছন্দ
পুনম মুখ মুচড়ে চন্দ্রের সাথে যায়। এই তিনদিনে পুনম বেশ অবাক হয়েছে এককালে যেই চন্দ্রের সাথে তার কথা বলতেও অস্বস্তি হতো আজ তার সাথে কতটা ফ্রি সে।।
নিচ তলায় দুইটা ফ্ল‍্যাট একটা ওয়ান বেডের সিঙ্গেল ফ্ল‍্যাট আরেকটা ডাবল বেডের ফ্ল‍্যাট। বেলা আক্তার ওয়ান বেডের ফ্ল‍্যাটেই থাকে চন্দ্র কলিং বেল বাজায়
বেল বাজানোর সেকেন্ডের মাথায় দরজা খুলে বেলা মনে হচ্ছে সে এতোক্ষণ দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিলো।
— আব্বা আমার,,,
বলেই চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে। বলিষ্ট দেহের চন্দ্র ফুপিকে আগলে নেয় বেলা ঝরঝরিয়ে কেদেঁ দেয়। পুনম অবাক চোখে ফুপির কান্না দেখছে। তাদের সব বোনদের ভাব শিলা ফুপির সাথে থাকলেও এই ফুপি চন্দ্র ছাড়া কারো সাথেই খুব একটা কথা বলতো না।
কান্নার মাঝেই বেলার চোখ যায়। অবাক চোখে তাকিয়ে থাকা পুনমের দিকে পুনম চুপচাপ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা তাদের ঘরে নিয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন

— এই চন্দ্র এতো দেখী তোদের জুটিটা একদম আমার আব্বা আম্মার মতো লাগছে
চন্দ্রের হাতে শরবতের গ্লাস ধরিয়ে পুনমকে দিতে দিতে বলল। পুনম এবার বেশ লজ্জা পায়। চন্দ্র পুনমের দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে ফুপীর দিকে তাকায়।
— তাহলে ধরো তোমার আব্বা আম্মা তোমার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছে মেয়ে হিসেবে সেটা পূরণ করা তোমার গুরু দায়িত্ব।
— জ্বী আব্বাজান তবে আগে খেয়ে দেয়ে নিজের পেট ও মন দুটোই ঠাণ্ডা করেন। আর আম্মাজান ফুপির সাথে এতো জড়তা করতে হবে না হিজাব খুলে ফ্রেশ হোও।। বলে নিজের একে একে হিজাবের পিন সরাতে থাকে। পুনম ফুপির আদরে মিষ্টি করে হাসে
বেলা রান্নাঘরে যেতেই পুনম চন্দ্রের দিকে প্রশ্নাত্বক চোখে তাকায়। চন্দ্র ভ্রু নাচায় এগিয়ে আসতে গেলেই পুনম বেলার কাছে দৌড়ে যায়।
— এই বউটা এতো পালায় কেনো বিয়ে করেছি কি তার ম‍্যারাথন দেখার জন‍্য?? বিড়বিড় করে বলেই ওয়াশরুমে চলে যায়।
ইলিশ মাছটা এখন ভাজতেছে যাতে গরম গরম খেতে পারে। পুনম ফুপীর পিছে দাড়ায়

— ফুপী
বেলা পিছনে পুনমকে দেখে তড়িঘড়ি করে বলল
— আম্মা এখানে খুব গরম ঘরে যা
— তোমার কাছে থাকি ফুপি,,
বেলা পুনমের আবদার ফেরাতে পারে না। অনেক দিন পর কেউ এমন আবদার করল।
— একটা কথা জিজ্ঞাসা করি ফুপি
— হু
রান্না করতে করতে জবাব দিলো বেলা।
— তুমি এমন আলাদা থাকো ক‍েনো?? আর থাকোই যখন বাড়িতে গেলেও কারো সাথে কথা বলো না চন্দ্র ভাই ছাড়া কেনো আমরা কেউ কি তোমার প্রিয় না। শুধু চন্দ্র ভাই তোমার প্রিয়
— স্বামীকে বুঝি ভাই ডাকিস। চাচাতো ভাই স্বামী হলেও তাকে ভাই ডাকা যাবে না

— কথা ঘুড়াচ্ছো ফুপি আচ্ছা ডাকব না উনাকে ভাই তবুও বলো কেনো এতোদিন আমাদের এরকম আদর করোনি কেন দুইটা ফুপি থেকেও একটা ফুপির আদরে বড় হয়েছি কেনো আমার বড় ফুপি তোমার জন‍্য কাদে।
পুনমের কথা শুনে বেলার হাত থেমে যায়। উদাসী চোখে কড়াই নামাতে নামতে বলে — নিজের ভুলের কারণে
বলেই আবার কেদেঁ ওঠে পুনম আগলে নেয় ফুপিকে। চন্দ্র এতোক্ষণ সব শুনলেও যায়না সেখানে মনে মনে পুনমকে বাহবা দেয় এতোদিন অনেক চেষ্টা করেও চন্দ্র কারো থেকে বেলা ফুপির নিঃসঙ্গতার কথা জানতে পারেনি শুধু এটুকুই জানতো সে বাবা চাচাদের মান ডুবিয়েছিল।
— কোনো এক পুরুষের প্রেমে নিজেকে ডুবিয়ে। তার জন‍্য মাতোয়ারা হয়ে ঘর ছেড়ে ছিলাম যখন ঘর ছেড়ে ছিলাম তখন আমি আঠারোর রমণী চারিদিকে জমকালো আয়োজন বাড়িতে সানাইয়ের সুর ।। সেই সবকিছু উপেক্ষা করে গভীর রাতে পাড়ি দিয়েছিলাম কারো জন‍্য তবে সেই লোকটা এলো না ঘন্টার পর ঘন্টা তার অপেক্ষায় ছিলাম তবুও সে আসল না। ধোকা দিল আমাকে পরের দিন সকালে সেই হলুদের সাজেই বাসায় এসে উপস্থিত হলাম তবে ততোক্ষণে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে গিয়েছে কামরুল ও পারভেজের ছোট বোন রাতের আধারে পালিয়ে গেছে কোনো এক নাগরের হাত ধরে।।

বলতে বলতে বেলার কান্নার আওয়াজ বাড়ল। পুনম হাত বাড়িয়ে একগ্লাস পানি দেয় পানিটুকু খেয়ে বেলা আবার বলল — ভাইদের মান সম্মান ডুবানোর অপরাধে ভাইরা কথা বলা বন্ধ করে দিলো আমিও অপরাধবোধ থেকে কথা বলতে পারিনি সেই থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি একা করে দিয়েছি,,,
— কেনো বলনি দরকার পড়লে পায়ে ধরে মাফ চাইতে তখন তাহলে আজ আমাদের একটা ফুপির আদর বিনে থাকা লাগত না। আজ তুমি আমাদের সাথে যাচ্ছো।
— নারে মা তা হয়না
— কেনো হয়না যদি না হয় তাহলে আজ এই মূহুর্ত্তে আমি তোমার বাসা থেকে চলে যাব।
বলেই বেলার হাত নিজের থেকে ছাড়ায় বেলা আবার হাত ধরে — এমন করে না আম্মা,,
— উহু তুমি বলো যাবে কিনা না গেলে এই মুহূর্তে আমরা বেড়িয়ে যাব
অগত‍্যা রাজী হয় বেলা। দুপুরে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বের যেতে যেতে তাদের রাত নয়টা বাজে। বাসায় সবাই ছিলো মুক্তি গেট খুলে ফুপি দেখে অবাক হয়।
বেলাকে টেনে ঘরে ঢুকায় পুনম। সবাই বেলার দিকে তাকায় বেলা ধীর পায়ে ভাইদের সামনে দাড়ায় বড় ভাইয়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।
আকস্মিক ঘটনায় হতবাক কামরুল সাহেব পারভেজ সাহেবও। তবে দুই ভাবীর চোখে জল

— আমাকে মাফ করে দাও ভাইজান আমি অনেক বড় ভুল করেছি তোমরা আমাকে মাফ করে দাও।
কামরুল সাহেব বোনের মাথায় হাত রেখে কেদেঁ দেয়। এরপর বেলা পারভেজ সাহেবের কাছে গিয়েও একি কথা বলে। ভাবীদের কাছেও মাফ চায় এই ভাবীগুলো তাকে বেশ আদর করতো।
রাতে খাবারের সাথে ঘটে পারিবারিক মিলন। খাওয়া শেষে যে যার মতো ঘরে চলে যায় মুক্তি বেলাকে নিজের সাথে নিয়ে যায় আজ সে ফুপির সাথে ঘুমাবে। পুনম যেতে নিলেও তাকে থামিয়ে দিয়ে মুক্তি বলল — হ‍্যা তোরে নেই আর তোর ঐ খ‍্যাপা জামাই আমার ভাই এসে আমাদের ঘুম নষ্ট করুক।
বলেই মুখ মুচড়ে বেলা নিয়ে ঘরের দরজা আটকে দিলো আর পুনম হা করে সেই বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৫

— পুনম
চন্দ্রের ডাকে পুনমের ধ‍্যান ভাঙ্গে বিড়বিড় করে বলে — ঐ শের তার গর্জন শুরু করেছে ঘরে না যাওয়া অবদি থামবে না,,
পুনম ঘরে ঢুকে সোজা চলে যায় ওয়াশরুমে শাড়ি পাল্টে কামিজ পড়ে। ওড়না জড়াতে জড়াতে বের হয় চন্দ্র তা দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। চন্দ্রকে এভাবে তাকাতে দেখে পুনম ভরকে গিয়ে বলল
— কি!! শাড়ি পরে ঘুমাতে কষ্ট হয় তাই
চন্দ্র কিছু না বলে ওড়না নিয়ে হাতে পেচায়।
— ওড়না নিলেন ক‍্যান দেন ওড়না দেন
চন্দ্র ফাজিল হাসল পুনমকে পাজা কোলে নিয়েই বিছানায় শুয়ে দিলো গলায় মুখ ডুবিয়ে বিড়বিড় করে বলল — ঘুমাব জোহরা বিবি ঘুমাতে দে,,,,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৭