প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১২

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১২
Drm Shohag

“শুদ্ধ?”
শুদ্ধ ইরফানের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল ভার্সিটি প্রাঙ্গণে। নিজের খালাতো বোনকে এই ভার্সিটিতে দেখে অবাক হয় শুদ্ধ। এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আরে আপু, তুমি এখানে?”
মিশকা মৃদু হেসে বলে,
“এইপথ দিয়েই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই।”
“সামনের ক্যাফেতে চলো। গিয়ে বসি?”
মিশকা হেসে বলল,
“আচ্ছা চলো।”
শুদ্ধ পিছু ফিরে বলে,
“ইরফান আয়।”
ইরফান অফিস রুমের দিকে যেতে যেতে বলে,
“তোরা যা।”

শুদ্ধ, মিশকা একটি ক্যাফেতে বসেছে। শুদ্ধ মিশকাকে অর্ডার করার কথা বললে মিশকা নিজেই দু’ কাপ কফি অর্ডার করে। মিশকা আশেপাশে তাকিয়ে নিজেকে সামলে ডাকে।
“শুদ্ধ?”
শুদ্ধ ফোন স্ক্রোল করছিল। খালাতো বোনের ডাকে চোখ তুলে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“জ্বি আপু।”
মিশকা দু’হাত জমা করে চোখ বুজে বলে,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি শুদ্ধ।”
শুদ্ধর মুখে হাসি লেপ্টে ছিল। কিন্তুু খালাতো বড় বোনের থেকে এমন কথা শুনে হাসি মিলিয়ে মুখ জুড়ে অবাকতা ভর করে। মিশকা শুদ্ধর দিকে তাকালে শুদ্ধ নিজেকে সামলে বলে,
“আপু আমি তোমার ছোট ভাই।”
মিশকা মৃদু হেসে বলে,
“ব্যাপার না। বয়স ফ্যাক্ট না। তুমি আমায় বিয়ে করবে শুদ্ধ?”
শুদ্ধ চোখ নামিয়ে নেয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“স্যরি আপু। আমার পছন্দের মানুষ আছে। আমি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না।”
“সেই মেয়েটা কি ফারাহ?”
শুদ্ধ মাথা তুলল না। ফারাহের মুখটা চোখের পর্দায় ভাসতেই ঠোঁটের কোণে এক কোমল, স্নিগ্ধ হাসি ফুটে ওঠে। মিশকার দিকে তাকিয়ে বলে,
“জ্বি আপু।
কথাটা বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এরপর বলে,
আজ আসি আপু। ভার্সিটিতে ক্লাস আছে।”
মিশকার চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। তবে নিজেকে সামলে দ্রুত শুদ্ধর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ভরা রেস্টুরেন্টের সামনে শুদ্ধকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। শুদ্ধ হতভম্ব হয়ে যায়। মিশকা শুদ্ধকে এভাবে ধরে রেখে সামনে দৃষ্টি রেখে শব্দ করে বলে,
“আই লাভ ইউ শুদ্ধ, আই লাভ ইউ ভেরি মাচ।”
শুদ্ধ দ্রুত ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে মিশকার থেকে। ছেলেটার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। মিশকার উদ্দেশ্যে কিছু বলার আগেই মিশকা আবারও শব্দ করে বলে,

“আমি জানি তোমার উত্তর হ্যাঁ। এখানে কিছু বলতে হবে না। তুমি সাবধানে বাড়ি যাও।”
শুদ্ধ অবাক হয় মিশকার ব্যবহারে। কিন্তুু সে কথা বাড়াতে চাইলো না। মিশকার প্রতি ভীষণ বিরক্ত সে। কিন্তুু বয়সে বড় হওয়ায় কিছু বলল না। দ্রুত বেরিয়ে যায় ক্যাফে থেকে।
মিশকা তার সামনে দৃষ্টি রেখে এগিয়ে যায়। ফারাহ মিশকার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে। শুদ্ধর খালাতো বোন মিশকাকে ফারাহ চিনে।
“কি বুঝলে ফারাহ?”
মিশকার কথায় ফারাহ রেগে বলে,
“তুমি গায়ে পড়া মেয়ে, সেটাই বুঝেছি।”
মিশকা রেগে যায় ফারাহের কথায়। তবে রাগ দমন করে নিয়ে ফারাহের গাল টেনে বলে,
“শুদ্ধর থেকে দূরে থাকবে। শুদ্ধ আমাকেই ভালোবাসে। বুঝেছ? বাচ্চা মেয়ে আমাদের মাঝে চলে এসেছ।”
ফারাহ রেগে মিশকার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“শুদ্ধ ভাই তোমাকে ভালোবাসে না। আমি তোমার কথা কখনোই বিশ্বাস করি না।”
মিশকা হাত মুঠো করল। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে গলা টিপে মে’রে ফেলতে। কিন্তুু রাগ গিলে নিল, এটা আপাতত প্রয়োজন। অতঃপর মৃদু হেসে বলে,

“একটু আগেই তো জড়িয়ে ধরলাম। ভালো না বাসলে সাথে সাথে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিত। কই দিয়েছে? সবচেয়ে বড় কথা তোমাকে কি কখনো ভালোবাসি বলেছে? জড়িয়ে ধরেছে? আমার সাথে সবই হয়েছে শুদ্ধর।”
ফারাহের মাথা নিচু। চোখের কোণে পানি। আসলেই তো শুদ্ধ তাকে ভালোবাসে বলেনি। জড়িয়ে ধরা তো দূর, হাতটাও ধরেনি। আর মিশকা মেয়েটা জড়িয়ে ধরলে সাথে সাথে ধাক্কা দিল না। মিশকা মনে মনে হেসে বলে,
“বোকা ফারাহ! আর কি শুনবে? সব মানে বোঝো? বিয়ের পর যা হয়, সেসবও হয়েছে প্রায়। বুঝেছ তো আমাদের কত গভীর প্রেম?”
ফারাহ আর নিতে পারল না। হনহন করে বেরিয়ে যায় ক্যাফে থেকে। পিছন থেকে ফারাহের ফ্রেণ্ডরা ডাকে তাকে। সে শোনেনা। চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে রাস্তা পার হতে যায়, এলোমেলোভাবে হাঁটছে মেয়েটা। রাস্তার মাঝে এক্সিডেন্ট করার আগেই শুদ্ধ দৌড়ে যায় ফারাহের দিকে। ফারাহকে জোরে টান দিয়ে নিয়ে আসে। ফারাহ শুদ্ধর গায়ে এসে পড়ে। শুদ্ধ ভীতস্বরে বলে,

“ফারাহ? ঠিক আছো?”
ফারাহ দ্রুত শুদ্ধর থেকে সরে আসে। শুদ্ধ এগিয়ে গিয়ে বলে,
“এভাবে হাঁটছিলে কেন? এক্সিডেন্ট হতে পারতো।”
ফারাহ বা হাতে চোখ মুছে বলে,
“হলে হতো। তোমার কি? যাও ভেতরে তোমার প্রাণের প্রেমিকা অপেক্ষা করছে। আমার কাছে কি?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“মানে? কে আমার প্রেমিকা?”
ফারাহ কিছু বলে না। উল্টো ঘুরে যেতে নিলে শুদ্ধ ফারাহের হাত টেনে ধরে।
“ফারাহ, তোমার কি হয়েছে? তুমি কাঁদছ কেন?” শুদ্ধর কণ্ঠে অসহায়ত্ব।
ফারাহ হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে চিৎকার করে বলে,
“একজনের সাথে শুয়ে আসবে, আরেকজনের নাম মুখে নিতে নিতে ফেনা তুলে ফেলবে, হাত ধরে টানাটানি করবে। এসব স্বভাব কোথা থেকে পেয়েছ শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ ফারাহের দিকে অবাক হয়ে তাকায়। আশেপাশে তাকালে দেখল অনেক মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শুদ্ধ খুবই অপমানিত বোধ করে। রেগে বলে,
“ফারাহ? তুমি কি বলছ, জানো?”
ফারাহ আবারও চেঁচিয়ে বলে,
“জানি জানি। যার সাথে শুয়েছ, তার কাছে…… ”

কথাটা শেষ করার আগেই শুদ্ধ ফারাহের গালে একটা থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয়। ফারাহ উল্টে পড়তে নিলে ফারাহের এক ফ্রেণ্ড এসে ফারাহকে আঁকড়ে ধরে। শুদ্ধ চোখমুখ শক্ত করে তাকায় ফারাহের দিকে।
ফারাহকে মূলত এক ছেলে ফ্রেণ্ড ধরেছে। শুদ্ধ রেগে ফারাহকে তার দিকে এনে ফারাহের ফ্রেণ্ডকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“তোর সাহস কি করে হয় ওকে টাচ করার?”
ফারাহ শুদ্ধ কে ধাক্কা দিয়ে তার ফ্রেণ্ড এর হাত ধরে বলে,
“তুমি আমাকে টাচ করার সাহস কিভাবে দেখাও শুদ্ধ ভাই? ও আমার বয়ফ্রেন্ড,, ভালোবাসি ওকে আমি।”
কথাটা বলে ফারাহ তার ফ্রেণ্ড এর একহাত জড়িয়ে ধরে। ডান হাতে চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলে,
“তুমি ভালোবাসো না মিশকা কে?”
শুদ্ধ ফারাহের ধরে রাখা সেই ছেলের হাতের দিকে চেয়ে আছে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে চিৎকার করে বলে,
“শুধু ভালোবাসি না। সামনের মাসে ওর আর আমার বিয়ে। যার সাথে শুয়েছি তাকে ভালোবাসবো না তো কাকে ভালোবাসবো?”
ফারাহের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। মাথা নিচু করে নেয়। তার ফ্রেণ্ডের ধরে রাখা হাত ছেড়ে দেয়। এতো ক’ষ্ট এই ইহজীবনে হয়নি বোধয়। ফারাহ আর কিচ্ছু বলে না। বোবা হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

দু’বছর আগের কথা ভেবে শুদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফারাহের জীবনে সেই ফ্রেণ্ডের অস্তিত্ব-ই নেই, শুদ্ধর জীবনে মিশকা নামের সেই মেয়েও নেই। তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মাঝখান থেকে শুদ্ধ আর ফারাহের মাঝে আকাশ সমান দূরত্ব তৈরী হলো। শুদ্ধ অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে ফারাহকে। সে জানে তার ভুল ছিল। তার বলা সেই কথাগুলো ভীষণ ভারি ছিল। শুদ্ধর মনে হয় রে’গে দু’টো থা’প্প’ড় দেয়া বেটার,, যেমনটা ইরফান করে। থা’প্প’ড় এর দাগ একদিন মুছে যায়। কিন্তুু কথার দাগ মুছে যায় না। সারাজীবন থেকে যায় সে ক্ষত।
ফারাহ সেদিনের পর থেকে শুদ্ধকে তুমি থেকে আপনিতে উঠে আসে। দেখা হলে এভাবেই এভোয়েড করে।
ফোনের রিংটোনে শুদ্ধর ধ্যান ভাঙে। ঝাপসা চোখ কয়েকবার পলক ঝাপটালো। যদি সব ঠিক থাকতো তাহলে হয়তো সে তার ফারাহকে দু’বছর আগেই পেয়ে যেত। কিন্তুু কিছুই ঠিক নেই। নিজেকে সামলে কল রিসিভ করল। ওপাশ থেকে ফাইজ বলে,

“ভেতরে আয়।”
শুদ্ধ মৃদুস্বরে বলে,
“তোর বোনকে দিবি?”
“নিতে পারলে নিয়ে যা।”
শুদ্ধ সিটে মাথা এলিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“আই সোয়ার ফাইজ,, তোর ঘাড়ত্যাড়া বোনকে আমি তোর বিয়ের আগেই বিয়ে করব। আমাকে দুই বছরের বিরহের আগুণে জ্বালিয়ে ছারখার করলো মেয়েটা। আর নিতে পারছি না। প্রয়োজন পড়লে ওকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করে ওর ত্যাড়ামি ছুটাবো আমি।”
কথাগুলো বলে কল কেটে ফোন ছুঁড়ে মারল পাশের সিটে। অ’সহ্য লাগে তার সবকিছু।

“ইরফানের ডিভোর্সের ব্যাপারে কিছু বললে না যে?”
তারেক নেওয়াজ স্ত্রীর কথায় তার দিকে তাকায়। মৃদু হেসে বলে,
“এটার প্রয়োজন হবে না। ইরফানকে একটু সময় দাও, ও মাইরাকেই মেনে নিবে ইনশাআল্লাহ।”
রুমা নেওয়াজ জাহারার কথা বলতে চাইলো। কিন্তুু তার মন সায় দেয় না এতে। জাহারা নিজের বোনের মেয়ে হলেও ইরফানের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সেই বিয়ে ভেঙে বোনের মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে ব্যাপারটা কেমন যেন। সবচেয়ে বড় কথা ইরফান নিজেই হয়তো এটা মানবে না। রুমা নেওয়াজ আর সাহস করলেন না এই ব্যাপারে এগোতে। বিয়ে ভাঙার ব্যাপারটা তার নিজের কাছেই ভীষণ দৃষ্টিকটু লাগে। তার বোন আর জাহারা চলে গিয়েছে। ভাবলেন বোনকে বুঝিয়ে বলবেন একবার।

“ফাইজ আর ওর ফ্যামিলি কিছুক্ষণের মাঝেই পৌঁছে যাবে। সব রেডি করেছ?”
রুমা নেওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“হুম। দেখছি।”
রুমা নেওয়াজ রান্নাঘরে গিয়ে মাইরাকে দেখে বলে,
“কি করছ এখানে?”
মাইরা মাথা নাড়ল। “কিছু না।”
রুমা নেওয়াজ মাইরার দিকে তাকালো। মেয়েটা একটা সুতি থ্রি-পিস পরে আছে। তিনি গম্ভীর গলায় বললেন,
“আমার ঘরে এসো।”
এই বলে তার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলে মাইরা তার শ্বাশুড়ির পিছু পিছু যায়। রুমা নেওয়াজ আলমারি থেকে একটা সুন্দর কালো রঙের সিল্কের কাতান শাড়ি বের করে মাইরার হাতে দেয়। মাইরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে শাড়ির দিকে। এটা দিয়ে তার কী কাজ?
তার ভাবনাকে স্থির করতে রুমা নেওয়াজ গম্ভীর গলায় বলে,
“বাসায় মানুষ আসবে। এই শাড়িটা এখন গিয়ে পরে নাও।”
মাইরার মনে পড়ে যায়, আজ তো ইনায়ার শ্বশুর বাড়ি থেকে লোক আসার কথা। তবে সে তো শাড়ি পড়তে জানেনা। শাড়িটা থেকে দৃষ্টি তুলে শ্বাশুড়ি মায়ের পানে চেয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,

“আণ্টি আমি তো শাড়ি পরতে পারি না।”
রুমা নেওয়াজ রেগে বলেন,
“আমি তোমার আন্টি?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“স্যরি স্যরি, মা।”
রুমা নেওয়াজ তার ঘরের দরজা চাপিয়ে দিলেন। এগিয়ে এসে মাইরার হাত থেকে শাড়ি নিজের হাতে নিলেন। এরপর শাড়ির ভাঁজ থেকে ব্লাউজ, পেটিকোট বের করে মাইরার হাতে দিয়ে বললেন,
“এই দু’টো পরে এসো, যাও।”
মাইরা বুঝল তার শ্বাশুড়ি তাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে। কথা না বাড়িয়ে ঝটপট ওয়াশরুম থেকে জামা পাল্টে আসে। রুমা নেওয়াজ খুব সুন্দর করে কুচি করে শাড়ি পরিয়ে দেয় মাইরাকে।
শাড়ি পরানো সম্পূর্ণ করে মাইরার পানে তাকায়।
ফর্সা উজ্জ্বল গায়ে কালো রঙের সিল্কের তৈরী কাতান শাড়িটা কেমন জ্বলজ্বল করছে। মাইরার সিল্কি চুলগুলো কোমড়ের নিচ অব্দি ঠাই পেয়েছে।
রুমা নেওয়াজ মনে মনে পড়লেন, “মাশাআল্লাহ।”

মাইরার শাড়ি পরে ভীষণ আনইজি লাগছে। আগে কখনো শাড়ি পরা হয়নি। এটাই প্রথম। যদিও শ্বাশুড়ি মা তাকে ভালোভাবে পিন আপ করে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। তবুও অস্বস্তি হচ্ছে।
মাইরা রুমা নেওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
“শ্বাশুড়ি মা আমাকে কি ভালো লাগছে?”
রুমা নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। শ্বাশুড়ি মা, এটা কেমন সম্মোধন! তিনি ছোট করে বললেন,
“ভালো লাগছে। তোমার ঘরে গিয়ে নিজেকে পরিপাটি কর। আমার কাজ আছে।”
কথাটা বলে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরা ধীরে ধীরে আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে দেখল। আসলেই সুন্দর লাগছে তো! আয়নার দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আয় হায়, শাড়ি পরলে এতো সুন্দর লাগে আমাকে?”
পিছন থেকে তারেক নেওয়াজ ঘরে আসতে আসতে বলে,
“আমার আম্মু কিন্তুু ভীষণ সুন্দর। আজ সেটা হাজারগুন বেড়ে গিয়েছে।”
শ্বশুরের গলা পেয়ে মাইরা কিছুটা লজ্জা পায়। আয়না থেকে দূরে সরে আসে। আমতা আমতা করে বলে,
“বাবা আমি যাই।”

এই বলে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ইনায়ার ঘরে গিয়ে দেখে ইনায়া একা একা শাড়ি পরছে। মাইরা দৌড়ে ইনায়ার দিকে যেতে গেলে শাড়ির কুচি প্রায় অর্ধেক খুলে যায়। মেয়েটার মনেই নেই সে শাড়ি পরেছে। মাঝপথেই দাঁড়িয়ে অসহায় চোখে আধখোলা শাড়ির দিকে তাকায়৷ ইনায়া হেসে বলে,
“মাইরা, তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।”
মাইরা ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে কুচিগুলো ধরে ইনায়ার দিকে ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“খুলে গেল তো আপু। তুমি শাড়ি পরতে পারো?”
ইনায়া হেসে বলে,
“পারবো না কেন? এটা কি এমন কঠিন কাজ?”
কথাটা বলে তার আঁচল ঠিক করে মাইরার কুচি ঠিক করে দেয়। আরও কয়েকটা পিন আপ করে দেয় ভালোভাবে। মাইরা একটু হেঁটে বলে,

“আপু, এবার মনে হচ্ছে খুলবে না।”
ইনায়া মৃদু হাসে। মাইরা ইনায়ার হাত ধরে বলে,
“আপু তোমার কি আজকেই বিয়ে হবে? বাড়ি সাজালো না যে?”
ইনায়া লাজুক চোখজোড়া নামিয়ে নেয়। আলতো হেসে বলে,
“বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে আসছে। আজ বিয়ে নয়।”
মাইরা ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কংগ্রাচুলেশনস আপু।”

ফাইজ, ফারাহ, শুদ্ধ, ইরফানসহ তারেক নেওয়াজ ও ফাইজ এর বাবা মা আর ফাইজের এক মামাতো ভাই সবাই ইরফানদের ড্রয়িং রুমে বসে আলোচনায় ব্যস্ত। তারেক নেওয়াজ ফাইজের বাবার উদ্দেশ্যে গলা ঝেড়ে বলেন,
“তবে সামনের মাসের শেষ শুক্রবার। এটাই ফাইনাল রইল।”
শুদ্ধ হঠাৎ-ই বলে ওঠে,
“মামা ফাইজ বিদেশ থেকে ফেরায় আমরা বন্ধুরা মিলে সেদিন সেলিব্রেশন রেখেছি।”
পাশ থেকে ফাইজ বাঁকা চোখে তাকায় শুদ্ধর পানে। দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলে,
“শালা বেয়া’দব, মিথ্যে বলতে একটুও বাঁধছে না?”
শুদ্ধও রেগে বলে,
“না বাঁধছে না। মীরজাফরের দল। বলেছি তো তোর আগে আমি বিয়ে করব। আগে তোর বোনকে আমায় দে। এরপর আমার বোনকে পাবি।”
ফাইজ রেগে যায়। অপর পাশে বসা ইরফানের উদ্দেশ্যে বলে,
“তোর ভাইকে কিছু বল। আমি আর ওয়েট করতে পারব না বলে দিচ্ছি না।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। ফাইজ অসহায় চোখে তারেক নেওয়াজ এর দিকে তাকায়। পাশ থেকে শুদ্ধ বলে,

“আর দু’টো মাস অপেক্ষা করুন মামা। ফাইজের কাজের খুব চাপ।”
ফাইজ রাগে হাতের আঙুল পাকায়। নিজেকে শান্ত করে গম্ভীর গলায় বলে,
“আমি একদম ফ্রি।”
“আরে তোর ম্যানেজারের থেকে আমি সব শুনেছি। তুই দু’মাসের আগে নিঃশ্বাস নিতে পারবি না। আমাদের বোন তো থাকছেই। ওকে অন্য কোথাও বিয়ে দিব না। নিশ্চিতে থাক।”
শুদ্ধর কথায় ফাইজ এর বাবা মা সহ তারেক নেওয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফাইজ বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। শুদ্ধ কে টেনে বাইরের দিকে যেতে যেতে বলে,
“এক্সকিউজ মি। আসছি।”
শুদ্ধ আড়চোখে ফারাহের দিকে তাকায়। ফারাহ শুদ্ধর দিকে চেয়ে ছিল। শুদ্ধ তাকালে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। শুদ্ধ ঠোঁট বাঁকিয়ে একটুখানি হেসে ফাইজের সাথে যায়।
বাইরে বেরিয়ে ফাইজ শুদ্ধর কলার ধরে বলে,
“তোকে ছাড়ব না আমি শুদ্ধ।”
শুদ্ধ রেগে ফাইজের হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। কি ভেবে যেন হেসে বলে,
“তোকে দু’মাস সময় দিলাম যা। তোর বোনকে মানা, এরপর একসাথেই বিয়ে করব দু’জন।”
ফাইজ শুদ্ধ কে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“তোকে আমার বোন দিবই না।”

শুদ্ধ শার্ট এর ফোল্ড করা হাতা কিছুটা তুলে ফাইজের দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“বিলিভ মি! আমি একটা ভদ্র ছেলে বলে তোর আর তোর বোনের ত্যাড়ামি সহ্য করেছি। দুনিয়ায় আর ভাই নেই? বোন ত্যাড়ামি করলে ভাই হয়ে কানের নিচে দু’টো লাগাতে পারিস না? ওকে আমিই সিধে করব। তোদের ননীর পুতুলকে আমি যাস্ট ছাড়ব না। দু’বছর হলো বসে বসে আঙুল চুষছি। আর এখন তুই এসেছিস আমার বোনকে বিয়ে করতে? যৌবন শেষ হোক, এরপর তোকে আমার বোন দিব, যাহ। নয়তো এভাবেই ইনায়ার জন্য ওয়েট করতে করতে আমার মতো বুড়ো হয়ে যাবি।”
ফাইজ রেগে বলে,
“আমি ইনায়াকে আজকেই বিয়ে করব, ওয়েট।”
শুদ্ধ শান্ত চোখে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ ফাইজের দিকে। উল্টোঘুরে কিছুটা এগিয়ে যায়। কিছুই বলে না। ফাইজ নিজেও দীর্ঘশ্বাস ফেলে। শুদ্ধর কাঁধে হাত রেখে বলে,
“আমি কি করব?”

শুদ্ধ রেগে ফাইজের হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে বলে,
“যা বিয়ে কর। ইচ্ছে তো করে তোর বোনকে নিজের হাতে খু’ন করে গঙ্গাতে ভাসিয়ে দিই। শা’লা এমন বোন আমার হলে ওকে চড়িয়েই সিধে করতাম।
একটু থেমে শান্ত গলায় বলে,
ভেতরে যা। মামারা ওয়েট করছে।”
ফাইজ চাপ দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলে,
“তুই আয়।”
“ভাল্লাগছে না, যা তুই। পরে আসছি।”
এই বলে একটা সিগারেট ধরায়।
ফাইজ কিছু বলল না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে যায়। আড়ালে দাঁড়িয়ে ফারাহ। শুদ্ধর পিছন পিঠে নিরবে চেয়ে থাকে। চোখজোড়ায় চিকচিক পানির কণা।

মাইরা ইনায়ার ঘর থেকে বেরিয়ে তার ঘরে আসে। ইনায়া আর ফাইজকে ছাদে পাঠিয়েছে সবাই। মাইরার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলছে। রিতাকে দিয়ে এক প্যাকেট পটকা আনিয়েছিল। সেটা নিতেই মূলত এসেছে। শাড়ির আঁচল বারবার মাথা থেকে পড়ে যাচ্ছে। মাইরা শাড়ির আঁচল দিয়ে ভালোভাবে মাথা ঢেকে পটকা নিয়ে তার ঘর থেকে বের হয়।
ড্রয়িং রুমে সবাই কথা বলায় ব্যস্ত। মাইরা চুপিচুপি সবার আড়ালে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। এক পর্যায়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দৌড় দেয়,, সেসময় ফাইজের মামাতো ভাইয়ের চোখ পড়ে সিড়ির দিকে। মাইরা দৌড় দেয়ায় মাথা থেকে শাড়ির আঁচল পড়ে গিয়ে সিল্কি চুলগুলো উম্মুক্ত হয়ে যায়।
ফাইজের মামাতো ভাই ইনায়ার সাথে পড়ে। খুব বেশি বড় নয়। পিছন থেকে মাইরাকে দেখে ছেলেটা হা করে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।

ইরফান বামপাশের একটা সোফায় বসা ছিল। ফোন থেকে চোখ তুলে সামনে তাকালে ফাইজের মামাতো ভাইয়ের দিকে চোখ পড়ে। ছেলেটার এমন দৃষ্টি দেখে ইরফান ভ্রু কুঁচকে নিল। তার দৃষ্টি অনুসরণ করে উপর দিকে তাকালে দেখল দোতলার বারান্দা দিয়ে শাড়ি পরিহিত খোলা চুলে এক মেয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। মাইরার বামপাশ দেখে ইরফানের চিনতে একটুও কষ্ট হয়না এটা মাইরা।
দৃষ্টি ঘুরিয়ে ছেলেটা পানে তাকালে দেখে সে এখনো মাইরার দিকে হা করে চেয়ে আছে। মুহূর্তেই ইরফানের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। এক হাঁটুর বয়সী মেয়ের জন্য আরেক হাঁটুর বয়সী ছেলেকে ভস্ম করে দেয়ার তীব্র ক্ষোভ জাগলো।
ইরফান দাঁড়িয়ে যায়। দ্রুতপায়ে এগিয়ে গিয়ে ফাইজের মামাতো ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে ছেলেটা থতমত খেয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান চোখমুখ শক্ত করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে তার বাবা মা ফাইজের বাবা মা কথা বলায় ব্যস্ত। ইরফান শক্ত কণ্ঠে বলে,
“আমার সাথে এসো।”

ছেলেটা তার ভাইয়ের বন্ধুর কথা অমান্য করল না। উঠে দাঁড়ালো। ইরফান বাইরের দিকে এগিয়ে যায়। ছেলেটাও পিছু পিছু যায়। ইরফান একদম বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমার জন্য দু’প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আসবে। গো।”
ইরফানের কথায় ছেলেটা অবাক হয়। সে তো মেহমান এই বাড়ির। যদি সে বাচ্চা হতো তাহলে এটা নরমাল ছিল, কিন্তুু সে তো বাচ্চা নয়।
পিছন থেকে শুদ্ধ বলে,
“আমার কাছে সিগারেট আছে। ওকে দিয়ে আনাচ্ছিস কেন?”
ইরফান পকেট থেকে ৫০০ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিয়ে বলে,
“দ্রত যাও।”
শুদ্ধ ইরফানের হাত থেকে টাকাটা কেড়ে নিয়ে বলে,
“কি করছিস ইরফান? ও আমাদের মেহমান।”

ইরফান শুদ্ধর দিকে রেগে তাকায়। এরপর ছেলেটার দিকে তাকালে দেখল সে বাড়ির ভেতর উঁকি দিচ্ছে। ইরফান খুব ভালো করে বুঝলো এই ছেলের মনোভাব। সে নিজের উপর বিরক্ত। এই বাচ্চা ছেলের প্রতি রাগের কারণে তার রাগ আরও দ্বিগুণ হচ্ছে। কিছু না বলেই হনহন করে ভেতরে চলে যায়। ছেলেটাসহ শুদ্ধ দু’জনেই বোকা বনে তাকায়।
শুদ্ধ ফাইজের মামাতো ভাইয়ের হাত ধরে। প্রসঙ্গ এড়াতে বলে,
“চলো তোমাকে এক জায়গায় ঘুরিয়ে আনি।”
ছেলেটা কিছু বললো না। ইরফানের কাজে কিছুটা বিব্রতবোধ করেছে। পিছন ফিরে আরেকবার তাকায়। মাইরার কথা ভাবে, মেয়েটা কে? দেখে তো বাচ্চা মনে হলো। ভাবলো এই লোকটার বোন হয়তো। লোকটা কেমন গম্ভীর টাইপ। এমন ভয়ংকর ভাইয়ের বোনেরাই কি ওমন ভয়ংকর সুন্দর হয় না-কি? কথাটা মনে মনে ভেবে ভীষণ আফসোস করল।

মাইরা চুপিচুপি ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা লাইটার, অপর হাতে পটকার প্যাকেট। তার উদ্দেশ্য ইনায়া আর তার বরকে একটু চমকে দেয়া এই পটকা ফুটিয়ে। গ্রামে এসব অনেক ফুটিয়েছে। অনেকদিন পর এমনটা আবারও করতে পেরে মেয়েটা ভীষণ খুশি। ইনায়ার কথা ভেবে বেশি হাসি পাচ্ছে।
ছাদের লাস্ট সিড়িতে দাঁড়িয়ে পটকা ছাদের মেঝেতে রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে লাইটারের সাহায্যে পটকায় আগুণ ধরিয়ে দূর সরে দাঁড়ায়।
পিছন থেকে গম্ভীর গলায় ইরফানের কণ্ঠ ভেসে আসে,
“এখানে কি করছ?”
মাইরা ভয়ে লাফিয়ে ওঠে। সেসময় পটকা ফুটে যায়, সেই শব্দ আর এমন অন্ধকারে ইরফানের গলা দু’টো মিলিয়ে ভয়ে চিৎকার দিতে গেলে ইরফান মাইরার মুখ চেপে ধরে। মাইরা ইরফানের বুকে হেলে যায়। অন্ধকারে ইরফানের জ্বলজ্বল করা রাগান্বিত চোখ দেখে ঢোক গিলে।
ওপাশ থেকে ইনায়ার চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে। ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“এখানে বাঁদরামি করতে এসেছ? স্টুপিট!”
মাইরা ঢোক গিলে দু’দিকে মাথা নাড়ায়। মুখ থেকে ইরফানের হাত সরাতে চায়, ইরফান নিজেই হাত সরিয়ে নেয়। মাইরা ভীত গলায় বলে,
“স্যরি স্যরি! কিছু বলবেন না প্লিজ!”
ইরফান বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে মাইরার হাত ধরে নিচে নামতে গেলে মাইরা শাড়ি পরা অবস্থায় নামতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যায়। ভীত স্বরে বলে,
“ছাড়ুন আমায়। পড়ে যাব আমি।”
কথা বলতে বলতে সত্যিই পড়ে যেতে নেয়। তার আগেই ইরফান দু’হাতে মাইরাকে আগলে নেয়। রেগে বলে,
“হাঁটতে পারো না? ইডিয়েট।”
মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,

“শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারছি না। ছাড়ুন। আমি ধীরে ধীরে নামছি।”
ইরফান বিরক্ত, চরম বিরক্ত মাইরার কাজে। খুব ভালো করেই বুঝেছে এই বাঁদর এখানে বাঁদরামি করতে এসেছে। একটু আগের শব্দটা এই বাঁদরের করা কাজসাজি সেটাও বুঝেছে।
ইরফান দ্রুত মাইরাকে কোলে তুলে ধুপধাপ পায়ে সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে। মাইরা হা করে চেয়ে আছে। মোচড়ামুচড়ি করে বলে,
“আরে আমায় নামান। উফ আল্লাহ! ছাড়ুন আমায়।”
ইরফান মাইরার কথা কানে নিল না। সিড়ি বেয়ে নেমে সোজা তার ঘরে গিয়ে মাইরাকে নামিয়ে ঠাস করে ঘরের দরজা লাগিয়ে দেয়। উল্টো ঘুরে মাইরার দিকে শক্ত চোখে তাকায়।
মাইরা বারবার ঢোক গিলছে। পটকা ফুটানোর আওয়াজ তো পেয়েছে এই লোক। এখন তাকে কি করবে? মাথা নিচু করে ডান হাতের দিকে চোখ পড়লে দ্রুত সে হাত পিছনে লুকিয়ে ফেলে। ইরফান এগিয়ে এসে বলে,
“কি লুকাচ্ছ? বের কর।”
মাইরা ঢোক গিলে মিনমিন করে বলে,
“না প্লিজ!”

ইরফান রেগে মাইরার পিছনে হাত দিলে মাইরা কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খায়। ইরফান রেগে যায়। এই বাঁদর বাঁদরামি করার জিনিস লুকাচ্ছে তার থেকে। আবার যেন এসব বাঁদরামি করতে পারে। ইরফান এগিয়ে গিয়ে জোর করে মাইরার পিছন থেকে জিনিসটা টেনে নিয়ে সামনে এনে তাকালে হতভম্ব হয়ে যায়।
সাথে সাথে ছুঁড়ে ফেলে অদ্ভুদভাবে বলে,
“হোয়াট রাবিশ!”
মাইরা গলার সাথে থুতনি ঠেকিয়ে চোখ খিঁচিয়ে নেয়। ছাদে পটকা জ্বালিয়ে তার পাশেই তার ই’নার পেয়েছিল। ছাদে কাপড় মেলে দিয়েছিল, বিকালে আনার সময় এটা কখন যে পড়ে গিয়েছিল বুঝতে পারেনি। তখন এটা পেয়ে হাতে তুলে নিয়েছিল। এই লোকটার সামনে আর কত ল’জ্জায় পড়তে হবে তাকে? হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
ইরফান মাইরার থেকে কয়েক পা পিছিয়ে চোখ বুজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। এরপর মাইরার দিকে তাকায়। কালো শাড়ির আবরণে লজ্জানত মেয়েটার দিকে বেশ কিছুক্ষণ গম্ভীর চোখে তাকিয়ে রইল। মাইরা সেই যে মাথা নিচু করে চোখ বুজে আছে৷ খোলা চুলগুলোর কিছু অংশ পিঠ ছড়িয়ে দু’কাঁধ ছাড়িয়ে সামনের দিকে এসেছে। মেয়েটা দু’হাত জমা করে সমানে কচলায়।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১১

ইরফানের মনে পড়ল সেই ছেলে মাইরাকে এভাবেই দেখেছে। এতো খোলামেলাভাবে দেখে নিয়েছে। মুহূর্তেই শান্ত চোখজোড়া শক্ত হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“শাড়ি পরেছ কেন?”
মাইরা মাথা নিচু করেই মিনমিন করে বলে,
“আপনার আম্মু পরিয়ে দিয়েছে।”
ইরফান আড়াআড়িভাবে দু’হাত বেঁধে গম্ভীর গলায় বলে,
“শাড়ি খোলো।”
মাইরা সাথে সাথে চোখজোড়া মেলে। তবে মাথা উঁচু করে না। মেঝের দিকে দৃষ্টি রেখেই ঢোক গিলে। ইরফান ধমকে বলে,
“বাংলা বোঝো না? স্টুপিট!”
মাইরা কেঁপে ওঠে। তার সত্যি সত্যিই ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৩