অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭
ইয়াসমিন খন্দকার
আরহাম নির্ঝর খানকে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই নির্ঝর খান হঠাৎ করে নিচে নেমে গেলেন। তিনি এসেই সবার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”আমার একটি জরুরি কথা বলার ছিল সবাইকে।”
আফিফা খান নিজের স্বামীর মুখে এহেন কথা শুনে কিছুটা অবাক স্বরে বলেন,”কি জরুরি কথা?”
আরহামও নিজের বাবার পিছু পিছু নিচে নেমে আসে। নির্ঝর খান বলে ওঠেন,”তুমি তো জানো আফিফা,আমি আরহাম এবং সায়রার বিয়ে দেওয়া নিয়ে ভাবছি৷ তো সায়ন সায়রার সাথে কথা বলেছে আর সায়রা বলেছে এই বিয়েতে ওর কোন আপত্তি নেই। আর আজ আমিও আরহামের সাথে কথা বললাম ওর কোন আপত্তি নেই।”
আফিফা খান আরহামের দিকে তাকিয়ে বললেন,”বাহ, তাহলে তো ভালোই।”
নির্ঝর খান এবার হাসিমুখে বলেন,”আজ তো আমাদের সকল আত্মীয়-স্বজন এখানে উপস্থিত তাই আমি চাইছি আজকে এখনই ওদের এনগেজমেন্টটা হয়ে যাক।”
আরহাম বুঝতে পারছিল না সে কি বলবে৷ আরিশা খন্দকারও হাসিমুখে বলেন,”বাহ, নির্ঝর ভাই, আপনি তো অনেক ভালো একটা খবর দিয়ে আমাদেরকে একদম সারপ্রাইজ দিয়ে দিলেন।”
জাঈদ শেখও বলেন,”ঠিক বলেছ তুমি আরিশা। আজ যে এভাবে এখানে এসে এত বড় একটা সারপ্রাইজ পাবো সেটা ভাবিই নি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিছুটা দূরেই সায়রা লজ্জায় কিছুটা মাথা নিচু করেছিল। যদিওবা তার আরহামের প্রতি কোন অনুভূতি কখনোই ছিল না এবং আরহামকে সে মামাতো ভাই হিসেবেই দেখেছে। তবে তার বাবা যখন সায়ন চৌধুরী যখন জানালেন যে, সায়রার নানাজান ভীষণ অসুস্থ আর তার ইচ্ছা সায়রা ও আরহামের বিয়ে হোক তখন সে রাজি হয়ে যায়। সায়রা একদম বৃষ্টির মতোই নরম মনের সহজ সরল একটা মেয়ে। তার মনে কোন প্যাঁচ নেই। লন্ডনে বড় হলেও তার যথেষ্ট সংস্কার রয়েছে, ভীষণ লাজুকও সে।
তত্মধ্যে আমান ও আরুশিও সেখানে চলে এলো। আমান এসেই বলে উঠল,”কোন সারপ্রাইজ নিয়ে কথা হচ্ছে?”
নির্ঝর খান এবার ডেস্কের উপর থেকে একটা মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে গিয়ে আমানের মুখের সামনে ধরে বলে,”এই নাও মিষ্টিমুখ করো আমান, তোমার ভাইয়ার আজ এনগেজমেন্ট।”
“ভাইয়ার এনগেজমেন্ট? কিন্তু কার সাথে?”
আফিফা খান বলে ওঠেন,”সায়রার সাথে। পারিবারিক ভাবেই ওদের বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল৷ এখন ওরাও এই বিয়েতে মত দিয়েছে৷ তাই তোমার ড্যাড ঠিক করেছেন আজই ওদের এনগেজমেন্ট হবে।”
কথাটা শোনামাত্রই আমান যেন বড় রকমের একটা ধাক্কা খায়৷ যাকে ঘিরে সে এতদিন ধরে এত স্বপ্ন সাজিয়েছে তার সাথে কিনা তারই আপন বড় ভাইয়ের এনগেজমেন্ট। আমান ব্যাপারটা যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। এরমধ্যে নির্ঝর খান আমানের মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিয়ে বলেন,”তুমিও নিশ্চয়ই বাকি সবার মতো সারপ্রাইজড হয়ে গেছ তাইনা?”
আমান কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। অধিক শোকে যেন একদম পাথর হয়ে গেছিল বেচারা ছেলেটা। আরুশি আমানের দিকে তাকায়। সে বুঝতে পারছিল না আমানকে হঠাৎ এমন লাগছে কেন। আমানকে দেখে কেন জানি মনে হচ্ছিল এটা শুনে সে একদম খুশি হয়নি।
এদিকে নির্ঝর খানের যেন আর তড় সইছে না। তিনি আফিফা খানকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,”আফিফা যাও, ড্যাড, মম আর চাচিকে ওনাদের রুম থেকে নিয়ে এসো। ড্যাড তো ঠিকমতো হাঁটতে পারে না, ড্যাডকে হুইল চেয়ারে নিয়ে আসতে হবে বোধহয়। আরিশা, জাঈদ তোমরা একটু আফিফাকে সাহায্য করো ওনাদের নিয়ে আসতে। আর সায়ন তুমি আমার সাথে এসো। খুব শীঘ্রই আমরা এক নতুন সম্পর্কে বাধা পড়তে চলেছি৷ এসো একটু কোলাকুলি করে নেই।”
বলেই সায়নকে বুকে টেনে নেন নির্ঝর খান৷ কিছু সময়ের মধ্যে বাড়ির সমস্ত প্রবীণ সদস্য এসে উপস্থিত হন সেখানে। আবরাজ খান হুইল চেয়ারে বসে আছেন। আজ তার একমাত্র নাতির এনগেজমেন্ট। ব্যাপারটা তার কাছে যেমন খুশির ঠিক তেমনি দুঃখের। কেননা, আজকের দিনে তার মেয়ে বৃষ্টির কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে। বৃষ্টির কথা ভেবেই তার চোখে জল চলে আসে। নিঝুম খান সেটা খেয়াল করে নিজের স্বামীর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলেন,”হুশ, কেঁদোনা, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, দেখো। আজ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নতুন গল্প শুরু হতে চলেছে। আমাদের তো এই বিশেষ মুহুর্তের সাক্ষী হতে হবে।”
সবাই উপস্থিত হবার পর নির্ঝর খান একটি এনগেজমেন্ট রিং এনে আরহামের হাতে দিয়ে বলেন,”নাও, এই রিংটা সায়রাকে পড়িয়ে দাও।”
সায়রা একটু দূরে লাজুক ভঙিতে একটি রিং হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। আরহাম কাপা কাপা হাতে রিংটা তুলে নিয়ে একবার আরুশির দিকে তাকায়। আরুশিকে কেন জানি ভীষণ অন্যমনস্ক লাগছিল। যেন সে খুশি নয় কোন একটা বিষয় নিয়ে। আরহামের মনে হঠাৎ একটা প্রশ্ন জেগে ওঠে, আরুশি কি তাহলে চায়না যে এই এনগেজমেন্টটা হোক? কিন্তু কেন?
এদিকে আমান শক্ত ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে ছিল৷ তার মুখে হাসির ছিটেফোঁটা নেই বরং দেখে মনে হচ্ছে যে অনেক কষ্টে সে নিজের চোখের জল লুকিয়ে রেখেছে। আরুশি আমানকে এভাবে থাকতে দেখে আমানের কাছে এসে তার কাধে হাত রেখে বলে,”কি হয়েছে আমান? তোমায় এমন লাগছে কেন?”
আমান বলে,”কিছু না আপাই। আমি তো ভীষণ সারপ্রাইজড হয়ে গেছি। ভাইয়ার সাথে কিনা শেষে সায়রার.. মানে সায়রা আপাইয়ের বিয়ে। ব্যাপারটা ভীষণ অদ্ভুত তাইনা? আমি এতদিন ধরে সায়রা আপাইদের বাড়িতে থাকি অথচ এই ব্যাপারে কিছু জানতেই পারি নি।”
“আচ্ছা, আমান তুমি কি কোন কিছু লুকাচ্ছ? তোমায় কেন জানি ভীষণ দুঃখী দুঃখী লাগছে। আমায় সবটা বলতে পারো।”
“তুমি ভুল ভাবছ আপাই। আমি দুঃখ পাব কেন? আজ আমার ভাইয়ার এনগেজমেন্ট আমি তো আজ ভীষণ খুশি৷ তুমি খুশি নও?”
এদিকে আরহাম আমানের সাথে আরুশিকে এভাবে কথা বলতে দেখে আবারো ভীষণ রেগে যায়। নিজের হাতে থাকা রিংটা আরো শক্তভাবে ধরে।
আফিফা খান বলে ওঠেন,”কি হলো আরহাম এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও সায়রাকে রিংটা পড়িয়ে দাও।”
আরিশাও বলেন,”হ্যাঁ, তাই তো।।মেয়েটাকে আর কত অপেক্ষা করাবে? তাড়াতাড়ি এনগেজমেন্টটা সেড়ে ফেল। ”
আরহাম এবার আরুশির থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে সায়রাকে রিং পড়িয়ে দেয়। অতঃপর সায়রাও আরহামকে রিং পড়ায়। তাদের এনগেজমেন্ট একদম সম্পন্ন হয়ে যায়।
সবাই ভীষণ আনন্দিত হয়। আমান আর এই দৃশ্য সহ্য করতে পারে না। নিজের চোখের জল আর বেশিক্ষণ লুকানো সম্ভব নয় তার পক্ষে। তাই আমান নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
এদিকে আরহাম তাকায় আরুশির দিকে৷ আরুশি এককোণে একদম নির্বিকার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেন এই এনগেজমেন্ট হওয়া না হওয়া নিয়ে তার কিছুই যায় আসে না। আরহাম এটা দেখে মনে মনে বলে,
“তোমার কিছু যায় আসে না তাইনা আমার এনগেজমেন্ট নিয়ে? বেশ, শুধু এনগেজমেন্ট না এবার আমি বিয়ের আসর পর্যন্ত যাব। সায়রাকেই বিয়ে করব।
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬
তুমি আমার চোখের সামনে ঐ রাজীব আর আমানের সাথে ঢলাঢলি করতে পারলে আমিও সায়রাকে বিয়ে করে দেখিয়ে দেব। তোমার প্রতি আমার কোন অনুভূতি নেই। যা আছে শুধু শত্রুতা..কিন্তু তাহলে কেন আমি বারবার চাইছিলাম যে তুমি এসে এনগেজমেন্টটা আটকাও? তাহলে কি আমার মনে তোমার জন্য..না এটা হতে পারে না। তুমি সবসময় আমার শত্রু ছিলে, শত্রু আছ আর শত্রুই থাকবে। আর আমার জীবনের একমাত্র উদ্দ্যেশ্য হবে তোমাকে কাঁদানো।”