আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩২

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩২
তানহা ইসলাম বৈশাখী

“-ও কি তোকে পছন্দ করে প্রিয়া?
শিফার প্রশ্নটা বোধহয় প্রিয়ার কান অব্দি গেলো না। সেই যে হা করে তাকিয়ে আছে এখনো সেভাবেই দাঁড়িয়ে। মনে মনে কোন আকাশ পাতাল ভাবছে কে জানে। শিফা ওর গায়ে হালকা ধাক্কা মেরে বললো।
“-কি রে? বল।
অন্যমনস্ক প্রিয়ার এবার ধ্যানচুত হলো। কথাগুলো না শুনে বললো
“-হু? কি বলবো?
“-অন্ত ভাই তোকে পছন্দ করে?
প্রিয়া স্বাভাবিক গলায় বললো।
“-নাহ।
“-তাহলে ওগুলো বললো কেন?
“-আমাকে ভালোবাসে।
শিফার মুখটা হা হয়ে যায়। মুখে হাত দিয়ে মারবেল চোখে তাকিয়ে বলে।
“-কি বলিস রে? সত্যিই? তুই জানতি আগে থেকেই?
“-হু।
“-আচ্ছা। কিন্তু তুই সিওর ও তোকে শুধু পছন্দ করে না ভালোবাসেও?
“-হুম।
“-সিওর হলি কি করে?

“-যে ছেলে দুবছর ধরে শুধু আমাকে নিয়েই ভাবে সে অবশ্যই ভালোবাসে। তুই জানিস ওর সাথে আমি কত বাঁদরামি করেছি মেরেছি পর্যন্ত তবুও টু শব্দ করেনি। উল্টো সবার বকা খাওয়া থেকে সবসময় বাচিয়েছে। আমার কিছু হলে অস্থির হয়ে যায়। বলে,” প্রিয়া তোর কি হয়েছে? কি লাগবে? আমাকে বল আমি করে দিবো, আমি এনে দিবো।” আমার এত এত খারাপ ব্যাবহারের পরেও আমাকে কখনো বিপদে ফেলেনি। যখন প্রয়োজন পরেছে দৌড়ে এসেছে। ইভেন ও যখন বলে না ও আমাকে ভালোবাসে তখন না ওর চোখে সত্যিই ভালোবাসা দেখা যায়। মাঝে মাঝে চোখদুটো ওর টলটল করে উঠে। এতকিছু একটা ছেলেমানুষ কখন করে বল?
প্রিয়ার কথায় শিফা যেন কথা বলাই ভুলে গেলো। গোল চোখে চেয়ে থেকে শুধু শুনে গেলো সব। অবাকের সুর কাটিয়ে উঠতে না পেরে বিড়বিড় করে শুধু বললো।
“-এতকিছু?
“-হুম আরো অনেক কিছু।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শিফার অবাক ভাব ছুটলো। রাগে প্রিয়ার বাহুতে থাপ্পড় মেরে বললো।
“-তাহলে আমাকে আগে বলিস নি কেন জোচ্চর মেয়ে।
প্রিয়া চোখ মুখ কুচকে বললো।
“-আরে আমি জানি আমার রিজেকশনের জন্য বোধহয় আমাকে ভুলে যাচ্ছে কিন্তু এখনো যে এগুলোই করবে কে জানে।
শিফার মন খারাপ হলো ভীষন। হতাশ শ্বাস ফেলে বললো।
“-তাহলে তুই রিজেক্ট কেন করছিস? ছেলেটা তোকে এত ভালোবাসে। আমি হলে সেই কবেই এক্সেপ্ট করে নিতাম।
“-ভালো লাগে না আমার ওকে। একজন ভালোবাসলেই তো হলো না। আমার মনেও তো কিছু ফিলিংস থাকা প্রয়োজন। ওর জন্য আমার তেমন কোন ফিলিংস নেই। দেখলেই শুধু মারামারি করতে ইচ্ছে করে। ওরকম ছেলের সাথ ঝগড়ার সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোন সম্পর্ক করা যায় না।
“-তার মানে তুই কি কখনো রাজি হবি না?
প্রিয়া কনফিডেন্সের সাথে বললো।

“-কখনোই না।
শিফার চোখমুখ চকচক করে উঠে প্রিয়ার কথায়। গলায় উৎফুল্লতা এনে বলে।
“-তাহলে আমার জন্য পটিয়ে দে না। তুই তো কখনো রাজি হবি না। বেচারা তো কষ্ট পাবে। আমার জন্য রাজি করিয়ে দে দেখবি দুদিনেই সব ভুলিয়ে দিবো। তোর কথা আর মনেই আনবেনা।
প্রিয়ার বুকে আচানক মোচড় দিয়ে উঠে। অন্তর মনে প্রিয়ার নাম থাকবেনা ভাবলেই কেমন লাগছে। সেই ভাবনাকে এড়িয়ে সে এলো শিফার কথায়। এ কেমন মেয়ে? দেখছে অন্ত প্রিয়াতে আসক্ত তবুও কেন ছ্যাচড়াদের মতো এগুলো বলছে?
সে চোখে মুখে বিরক্ত প্রকাশ করে বললো।
“-তুই পাগল? দেখলিনা কি বলে গেলো? তোর মনেহয় ও আমাকে ছাড়া অন্যকাউকে নিয়ে ভাববে এখন?ছ্যাচড়ামি ছাড় বেয়াদব। তোকে অন্য কাউকে ধরিয়ে দেবো। ওকে ছাড়। ও পটবে না।
শিফা সরু চোখে তাকিয়ে বললো।

“-কেন পটবে না? তুই তো আর মানবি না ওকে। ও তোকে ছাড়া কাউকে ভাববে না। তাহলে সমীকরণ টা কোথায় এসে দাড়ালো? এখন আমরা নাহয় ছোট। কিন্তু বড় তো হবো। বিয়ে তো হবে আমাদের। তুই কি ওকে বিয়ে করবি? করবি না। তুই অন্যকাউকে বিয়ে করে সুখে থাকবি। আর অন্ত ভাই কি করবে? তাকেও তো তখন তোকে ভুলে অন্যকাউকে বিয়ে করতে হবে। তখনও কি তুই তার মনে থাকবি?
কথাগুলো সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত মনে হলো প্রিয়ার কাছে। সত্যিই তো! এভাবে তো জীবন চলবে না। একদিন প্রিয়ার জিবনেও কেউ আসবে অন্তর জীবনেও কোন নতুন অন্তঃপ্রিয়ার আগমন ঘটবে। তখন তো আর প্রিয়া থাকতে পারবে না অন্তর হৃদয় জুরে। তবে এখন সেথায় থেকে কি লাভ?
উফফ! এসব ভাবতেও তার এখন অস্থির লাগছে। গলা শুকিয়ে আসছে। অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।
সে প্রসঙ্গ বদলাতে শিফাকে বললো।

“-ওগুলো নিয়ে পরে ভাবা যাবে। এখন চল ওয়াসরুমে। কুচিটা আগে ঠিক করি।
শিফা খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থেকে বললো।
“-ওয়াসরুমে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আপনার রোমিও হিরোর মতো এসে আপনার শাড়ীর কুচি ঠিক করে দিয়ে গেছে। দেখুন ভালো করে। এবার এটাকে শুধু ভালো করে গুঁজলেই হয়ে যাবে।
প্রিয়া কুচিটার দিকে তাকালো। দেখেই অবাক হলো। সত্যই একেবারে সুন্দর ভাবে সমান করে গুছিয়ে দিয়ে গেছে কুঁচি গুলো।
সেটাকে আরেকটু ঠিকঠাক করে গুজে নিলো ভেতরে। আবার ছাদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো দুজন। প্রিয়া মনে মনে ভাবলো-” ব্যাটা এত সুন্দর করে কি করে ঠিক করলো? মেয়েরাই তো ঠিকঠাক ধরতে পারে না। সেখানে ও ছেলে হয়ে কি করে পারলো? নিশ্চয়ই কোন মেয়েকে আগে শাড়ী পড়িয়ে দিয়েছে। শা*লা লুচ্চা। মেয়েদের দিকে ঠিকই নজর দেয়। মেয়েদের সাথে চলাফেরাও করে। শুধু মুখে মুখেই প্রিয়ার কথা বলে। খচ্চর কেথাকার!

বিয়ে বাড়ি, মানুষ কম হলেও গুনে দেখলে অনেক মানুষই হয়। গায়ে হলুদের সন্ধ্যায় ছাদে অনেক আত্মীয় স্বজনদের সমাগম। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, নাচানাচি করছে সকলে। সন্ধ্যার মৃদুমন্দ বাতাসে হলুদের অনুষ্ঠান আরো জমে উঠেছে। অর্নব স্নেহাকে বসানো হয়েছে স্টেজে। সকলে তাদের হলুদ ছোয়াচ্ছে। সেখানেই বসেছে পুষ্প। কার্তিক-সুস্মিতা স্নেহা-অর্নবকে হলুদ ছুয়িয়ে যাওয়ার পর এবার পুষ্প এলো হলুদ দিতে। বাটি থেকে হলুদ হাতে নিতেই কেউ তার হাতের উপর হাত রাখলো। মসৃন পিঠ ঠেকে গেলো কারো শক্ত পোক্ত বুকের সাথে। চট করে পেছনে ঘুরতেই দেখলো প্রার্থ দাঁড়িয়ে। একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে। পুষ্পর শ্বেতবর্নের হাতের উপর প্রার্থর তামাটে পেলব হাতটা রাখা। পুষ্প তাকিয়ে আছে বলে প্রার্থ চোখ দিয়ে ইশারা করলো হলুদ ছোঁয়াতে। পুষ্প তুষ্ট হেসে হাত বাড়ালো। তার হাতের হলুদ বাটা লাগিয়ে দিলো স্নেহার সুন্দর গাল দুটোই। ততক্ষণ প্রার্থর হাত পুষ্পর হাতের পিঠেই আলতো করে ছোয়া ছিলো।

অর্নব দেখলো তাদের সুখটুকু। ভালো লাগলো খুব। আলতো করে হাসলোও।
এবার অর্নবের পালা। তবে পুষ্পর বাটিতে হাত দেওয়ার আগে তাতে হাত দিলো প্রার্থ। নিজের হাতে হলুদ উঠিয়ে এবার পুষ্পর হাতটা তার তামাটে হাতের উপর রাখলো। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো।
“-এবার আমি লাগাবো তুই আমার উপর হাত রাখ।
পুষ্প তাই রাখলো। প্রার্থ হাত বাড়িয়ে অর্নবের গাল ছুতে যায়। অর্নব পিছিয়ে যায়। দুষ্টুমিভরা স্বরে বলে।
“-উহুম! দুজন আলাদা দে। বন্ধুর হাত থেকে একবার মাখবো বন্ধুর বউয়ের থেকে একবার মাখবো।
প্রার্থর ঠোঁট কোনাভাবে প্রসারিত হলো। বললো।
“-যেটুকু দিচ্ছি সেটুকুই নে। এর বেশি আশা করলে এটুকুও পাবিনা শালা।
অর্নবও হেসে বললো।
“-শালা বলেছিস এবার দুলাভাইয়ের দায়িত্ব পালন কর। তোর বোনকে দিয়ে দে আমাকে।
প্রার্থ এগিয়ে গিয়ে মুখে হলুদ লাগিয়ে বললো।

“-শালা তোর বউ বসা পাশে।
অর্নব চোখ টিপে বললো।
“-হবু বউ।
“-ভালো হ।
“-আমি আগে থেকেই ভালো।
পুষ্প হাসছে দুই বন্ধুর খুনসুটি দেখে। পাশে বসা স্নেহাকে উদ্দেশ্য করে বললো
“-হবু বরকে দেখে রেখো। মতলব কিন্তু ভালো না। বউয়ের সামনে অন্য মেয়েকে চাইছে দেখলে তো। বিয়ের পর একদম আচঁলে বেধে রাখবে।
স্নেহা নত মুখে একটু মুচকি হাসলো। ঘুরে তাকালো অর্নবের দিকে অর্নবও ঠিক তখনই তাকালো। দুজনের চোখাচোখিতে চোখ নামিয়ে ফেললো দুজনেই।
প্রার্থ তখন পুষ্পকে নিয়ে চলে গেলো অন্য দিকে। আরো অনেকেই হলুদ ছোঁয়াবে এখন। তাই জায়গা ফাঁকা করে দেওয়াই ভালো।
প্রার্থ পুষ্পর হাত ধরে নিয়ে ছাদের অন্যপাশে গিয়ে দুটো চেয়ারে বসলো। চিলেকোঠার পাশের জায়গা। একটু অন্ধকারও এখানে। মানুষজন সব ছাদের মাঝে দিয়ে ঘুরাঘুরি করছে। আপাতত এখানে কারো ধ্যান নেই।
পুষ্প সেখানে থাকা চেয়ারে বসে বললো।

“-এখানে কেন এলাম? সবাই তো এদিকে।
প্রার্থ স্বাভাবিক গলায় বললো
“-এখানেই বসে থাক আমার চোখের সামনে।
“-ওখানে থাকলে কি চোখের সামনে থাকবো না?
প্রার্থ শক্ত চোখে তাকালো। ভারী স্বরে বললো
“-আমি এখানে থাকতে বলেছি।
পুষ্প মুখে ‘চ’ সূচক শব্দ করে বললো।
“-আপনাকে বুঝিনা। কখন কি মুডে থাকেন কে জানে। ওখানে সবাই মজা করবে আমরা এখানে বসে থাকবো?
প্রার্থও পুষ্পর মতো বিরক্ত সূচক শব্দ করে বললো
“-মজা আর রোমান্সের মধ্যে পার্থক্য বুঝিস না? এখানে বসে আমরা রোমান্স করবো। ওদেরকে মজা করতে দে আমরা আমাদের মতো থাকি। আমার ভালো লাগছে না।
প্রার্থ মুখ শুকনো লাগছে। চিন্তিত ঠেকছে বড্ড। পুষ্প এবার সোজা হয়ে বসলো। প্রার্থর হাটুতে হাত রেখে বললো।
“-কিছু হয়েছে? আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?

প্রার্থ প্রশ্নের জবাব দিলো না উল্টো পুষ্পর হাত ধরে টান দিয়ে উঠিয়ে তাকে কোলের উপর বসিয়ে দিলো। দুহাতে কোমড় জরিয়ে ধরলো। চুপচাপ মুখ গুজলো পুষ্পর কাধে। পুষ্প বুঝলো প্রার্থর কিছু হয়েছে। কিন্তু কি হয়েছে বুঝতে পারছে না। একটু আগেও তো অর্নব ভাইয়ের সাথে মজা করে এলো এখন হলো টা কি?
পুষ্প এক হাত বের করে প্রার্থ কাধ পেরিয়ে তার মাথায় হাত রাখলো। হাত বুলিয়ে বললো।
“-কি হয়েছে আপনার? আমাকে বলুন। খারাপ লাগছে?
প্রার্থ দু পাশে মাথা নাড়ে। পুষ্প আবার বলে।
“-তাহলে কি হয়েছে? এমন লাগছে কেন আপনাকে?

“-ভালো লাগছে না ফুল। কখনো ছেড়ে যাস না আমায়। বাঁচতে পারবো না তোকে ছাড়া। তুই আমার অভ্যেসে বদলে গেছিস। দুনিয়ার সব সইতে পারলেও তোর তৃষ্ণা কখনো সইবে না।
পুষ্পর বক্ষপট কেঁপে উঠে প্রার্থর মলিন কন্ঠ শুনে। এ আবার কেমন কথা? পুষ্প কেন ছেড়ে যাবে তাকে? এত কষ্ট এত ধৈর্যের ফল প্রার্থ। তাকে ছেড়ে যাওয়া কি মুখের কথা?
পুষ্প দু হাতে প্রার্থর মুখটা ধরে তুললো। চোখে চোখ রেখে বললো।
“-আপনার মনেহয় আমি আপনাকে ছেড়ে যাবো কখনো? আপনি আমার আকাশ ভাঙা ধৈর্যের ফল। আপনি আমার হৃদয় জুরে বসন্তের কারন। আমার ভালোবাসা। আপনাকে ছাড়ার কথা আমি ভাবতেও পারিনা। সেখানে আপনি কি করে ভাবছেন এগুলো?
পুষ্প দেখলো প্রার্থর চোখ কেমন লালচে রংয়ের দেখাচ্ছে। যেন কান্না আসতে চাচ্ছে। সে প্রানপনে আটকাচ্ছে তা।
প্রার্থ কোনোমতে বললো।

“-ভয় হচ্ছে ফুল।
পুষ্প উদ্‌বিগন্ন হলো। দুহাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে প্রার্থর মুখে স্লাইড করে আশ্বসস দিয়ে বললো।
“-কেন? কেন ভয় হচ্ছে? আমি বললাম তো আমি কখনো ছাড়বো না আপনাকে। এসব অযাচিত ভাবনা মনে কেন আনছেন? আমি তো আপনারই। আমি কেন আপনাকে ছেড়ে যাবো। আমার হৃৎপিন্ড এখানে রেখে আমি কোথাও যেতে পারি?
প্রার্থ তার পুরু ঠোঁট জোড়া এগিয়ে নিয়ে পুষ্পর পাতলা অধরে ছোট্ট চুম্বন একে দিলো। এরপর আবার জরিয়ে ধরলো তাকে। পুষ্পর বুকে মাথা রাখলো। দুহাতের শক্ত বাঁধনে নিজের সাথে একদম মিশিয়ে রাখলো তাকে। অস্পষ্ট স্বরে ছোট করে আওড়ালো।
“-ভালেবাসি ফুল।
প্রার্থর ছোট কথাটাও পুষ্পর কানে গেলো। প্রার্থর মাথায় আলতো করে ঠোঁট বসিয়ে বললো।
“-আমিও।

প্রার্থদের ঠিক অপজিট পাশে ছাদের রেলিং ধরে।দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়া। দৃষ্টি সোজা নিচে রাস্তায়। ঝাড়বাতির আলোতে আবছা পরিষ্কার চারপাশ। হঠাৎ প্রিয়া টের পেলো তার ঠিক পাশে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে। চোখ তুলে পাশে তাকাতে দেখলো অন্ত দাড়িয়ে। দৃষ্টি তার দূরের রাস্তায় আটকে আছে। প্রিয়া কিছু বললো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
পাশ থেকে হঠাৎ অন্ত বলে উঠলো।
“-ওই মেয়েটা কে ছিলো?
প্রিয়া ভ্রু কুচকে বললো।
“-কোন মেয়ে?
“-ওইযে তখন বললি আমার সাথে নাকি কথা বলতে চাইছে।
প্রিয়া চোখা চোখে তাকালো অন্তর দিকে। মুখ বাকিয়ে বললো।
“-ওকে দিয়ে কি করবে?
অন্ত রাস্তায় তাকিয়ে বললো।
“-পটাবো।
প্রিয়া তড়িৎ গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে অন্তর দিকে তাকালো। অন্তর কোন হেলদোল নেই। প্রিয়া নাক সিকোয় তুলে বললো।

“-লজ্জা করে না আমার সামনে এগুলো বলতে?
“-কেন? তোর সামনে বলতে কিসের লজ্জা? তুই উল্টো আমাকে ওকে পটিয়ে দিতে সাহায্য করবি।
প্রিয়ার রাগ হলো ভীষন। একটু আগে যে এত প্রেমিক প্রেমিক ডায়লগ দিলো সেগুলো কি ছিলো তাহলে? আসলে ছেলেদের বিশ্বাসই করতে নেই। এদের মন কখনো এক নারীতে আসক্ত থাকে না। কি সহজে বলে দিলো ওকে পটাবে। তাহলে প্রিয়া কে? প্রিয়াকে কেন এত এত ইমোশনাল কথা বলে আঘাত করে? সব নাটক। ছেলেদের দেহের প্রতিটা রগে রগে নাটকের প্রতিভা ছোটে।
মনে মনে বকাঝকা দিতে দিতে রাগের পরিমান যেন বাড়লো। চলে যেতে পা বাড়াতে বাড়াতে বললো।
“-ও তোমার জন্য এমনিতেও পাগল হয়ে আছে যাও নিজে গিয়ে পটিয়ে নাও।
তখনই অন্ত খপ করে প্রিয়ার কব্জি ধরে ফেলে। এক টানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। প্রিয়া হাত ছাড়াবার চেষ্টা করলেও কাজ হয় না। অন্ত শক্ত করে ধরে আছে তার হাত। সে দুষ্টু স্বরে বললো।

“-কোথাও কিছু জ্বলার গন্ধ পাচ্ছিস?
প্রিয়া সে প্রশ্নে গেলো না। হাত ছাড়াতে চেয়ে বললো।
“-সাহস বেড়ে গেছে?
অন্ত সাবলীল গলায় বললো।
“-হুম অনেক বেড়েছে।
“-ছাড়ো আমাকে।
“-না ছাড়লে কি করবি?
“-তুমি এমন কেন করছো? এত সাহস এলো কোথা থেকে তোমার?
অন্ত প্রিয়ার হাত মুড়িয়ে পেছনে নিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় বন্দী করে রাখলো। ঘুচিয়ে নিলো নিজেদের মাঝের দুরুত্বটুকু। হাতটা এমনভবে ধরলো যাতে ব্যাথা না পায়। অন্তর তপ্ত শ্বাস তখন প্রিয়ার মুখে আছড়ে পড়ছে। এতক্ষনের শক্ত আবরন থেকে আবার নিজের ক্যারেক্টারে ফিরে এলো অন্ত। বললো মলিন স্বরে।

“-তোর জন্য দিনদিন সাহস বেড়ে যাচ্ছে। কি থেকে কি করছি নিজেও জানিনা। আমার ভেতরের অন্তটাকে মেরে ফেলছিস তুই। কেন স্বীকার করছিস না আমাকে? আমার ভালোবাসা কম হয়ে গেছে? হয়নি তো। আমি তো আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসি তোকে তাহলে কমতি কোথায়? তুই জানিস তুই নিজেও আমার প্রতি দুর্বল হচ্ছিস। অন্য মেয়ের কথা বললে তোর এত গায়ে লাগছে কেন? আমি তো তোর খুব অপছন্দের তাহলে আমি কাকে পটাবো কোন মেয়ের সাথে প্রেম করবো সেটা নিয়ে তোর জলছে কেন বল?
উত্তর নেই তো? উত্তর খুজতেও হবে না। যেদিন তোর চোখের সামনে দিয়ে অন্য কারো হয়ে যাবো না তখন বুঝবি কি হারিয়েছিস। একটা মানুষ তোকে ঠিক কতটা ভালবেসেছিলো সেটা সেই মানুষটাকে হারানোর পর বুঝবি।
প্রথমে অন্ত কন্ঠ মলিন শোনালেও পরে এসে তা কঠিন রুপ ধারন করে। এতগুলো কথা শেষ করেই সে প্রিয়াকে ছেড়ে চলে যায় সেখান থেকে। প্রিয়া চোখে তখন উপচে পরা জল। অন্তর প্রতিটা কথা কেন যেন নিজের মাঝে বিধছে খুব। অন্তঃপটের অজানা ব্যাথায় চোখ ভরে উঠেছে। আসলেই কি সে ভালোবাসা পেয়েও পায়ে পিষে মারছে? এরকম করে কি কেউ কখনো তাকে ভালোবাসবে?

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩১

মনে মনে তৈরী হচ্ছে হাজারটা প্রশ্নের। মস্তিষ্ক বলছে এক কথা মন বলছে আরেক কথা। মস্তিকে ঘুরেবেড়াচ্ছে একটাই কথা, অন্তর সাথে কখনো এমন সম্পর্ক হতে পারে না তোর। অথচ মন বলছে এই ছেলেটাকে হারালে ভালোবাসা নামক শব্দটাই হারিয়ে ফেলবি জীবন থেকে।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩৩