তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৭
তানিশা সুলতানা
আদ্রিতার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। সিয়াম ভাইয়ের সামনেই চুমু খেয়ে বসবে না কি?
যে নির্লজ্জ মানুষ করতেও পারে। তাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। ভাবনা খানা মাথায় চাপতেই দুই হাতে ঠোঁট চেপে ধরে। ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেলেও হাত সরাবে না। এ্যানি আবরারের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েই মাথা তুলেছে। মিউ মিউ আওয়াজ তুলে কাছে ডাকছে। এখন সে কোলে উঠবে, আবরারের বুকে নাক ঘসবে। এই তো তার কাজ৷
আবরার ভ্রু কুচকে তাকায় আদ্রিতার মুখ পানে। পরপরই ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে
“সিয়াম তোর মাকে বলে দে
কিস করার মুড নেই এখন। ইন্টিমেট হতে পারবো না।
আদ্রিতা চমকায়৷ সিয়ামও ছোট ছোট নয়নে তাকায় আবরারের মুখ পানে৷ ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলতে “ভাই তোর বউ আমার মা হয়। তার সামনে লাগামহীন কথা বললে আমি লজ্জা পাই। প্লিজ মুখে ফুলস্টপ টান”
কিন্তু বলতে পারে না। আদ্রিতা সামনে রয়েছে কি না?
“তু….তুই থাক।
আমি গেলাম
বলেই সিয়াম বেরিয়ে যায়। যেতে যেতে কবিতা আবৃত্তি করতে ভুলে না
” হাই রে কপাল ফাঁটা
আবরার তাসনিন নোবেল প্রাপ্ত নির্লজ্জ বেডা
এর সাথে আমি আর থাকবো না
ইশারাকে নিয়ে যাবো ভেগে
যদি সে না দেয় পাত্তা
তবে আমি করে ফেলবো আত্নহত্যা
সিয়াম বেরিয়ে যেতেই আদ্রিতা উঠে বসে। করুণ নয়নে আবরারের পানে তাকিয়ে বলে
“আমি আপনাকে ছেড়ে যেতে চাই না। প্লিজজ আমার ব্যাপারে একটু সিরিয়াস হন।
আবরার এ্যানিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে
“কোথায় যাবে? পৃথিবীর বাইরে চলে গেলেও আমি খুঁজে বের করবো।
আহহা হৃদয় খানা পুলকিত হয়ে ওঠে আদ্রিতার। আবরার তাসনিন তাকে কখনোই ছাড়বে না। সারাজীবন রেখে দিবে। কথা খানা জানে সে তবুও আবরারের মুখ থেকে শুনতে ইচ্ছে হয়। তাই বড়ই আহ্লাদী স্বরে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” কেনো খুঁজে বের করবেন?
“কজ ইউ আর ভেরি হট এন্ড সে***ক্সি।
এতোক্ষণ আসমানে উড়তে থাকা রঙিন প্রজাপতি গুলো ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দেয়। আদ্রিতার হাসিমাখা মুখ খানায় ভর করে এক রাশ হতাশা এবং রাগ।
নাকের পাটাতন ফুলিয়ে বলে
” আমি হট এবং সে****ক্সি বলে খুঁজে বের করবেন?
এ্যানির মাথায় চুমু দিয়ে আবরার জবাব দেয়
“ইয়েসসস। আর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।
ফোঁস করে শ্বাস টানে আদ্রিতা। ঝাঁঝালো স্বরে বলে
” একদিন হারিয়ে ফেলবেন আমায়। তখন আফসোসে আফসোসে পাগল হয়ে যাবেন। হট ফট এর কথা মাথায় আসবে না।
কথা গুলোতে কি ছিলো? আবরার তাসনিন এর হৃদয়ে আঘাত হানে। কপালে ভাজ পড়ে। ছোট ছোট বিলাই চোখ মেলে তাকায় আদ্রিতার মুখ পানে। আদ্রিতা তাকিয়েই ছিলো বিধায় চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনার।
নীলাভ ওই চোখের ভাষা পড়তে পড়তে আবরার জবাব দেয়
“আমি বেঁচে থাকতে তুমি হারাবে না। ইটস নট পসিবল
একটু থেমে আবার বলে
“পাখি তুমি ভীষণ বাজে ভাবে ফেঁসে গিয়েছো আবরার তাসনিন এর জালে। মৃত্যু ছাড়া আমাদের বিচ্ছেদ অসম্ভব।
কথা শেষ করার আগেই আবরার এর কল বেজে ওঠে। স্কিনে অহনা নামটা ভেসে উঠেছে। অহনা হ্যাভেন কখনোই তাকে কল করে না।
চিন্তিত দেখায় আবরারের মুখ খানা। চটজলদি কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে ভেসে আসে অহনার কান্না জড়িত কন্ঠস্বর
” ভাইয়া আমার বাচ্চা রেসপন্স করছে না। প্লিজ ডু সামথিং
বোন, বোনের বাচ্চা ওদের প্রতি যত্নশীল নয় আবরার। কখনোই বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে নি। ভালো করে দুটো কথাও বলে নি।
কোনো আবদার মেটায় নি। বোনের সন্তানের পানেও ভালো করে তাকানো হয় নি। আবরারকে যদি প্রশ্ন করা হয় “অহনার কি ছেলে সন্তান হয়েছে না কি মেয়ে?”
জবাব দিতে পারবে না সে।
তবে আজকে অহনার কান্না ভেজা কন্ঠস্বর হৃদয় নারিয়ে দেয়। বুকের ভেতরটা অসহ্য যন্ত্রণায় কাঁপতে থাকে।
শুকনো ঢোক গিলে বলে
“আমি আসছি।
ব্যাসস কোল থেকে এ্যানিকে নামিয়ে বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় আদ্রিতার কেবিন থেকে। একবার পেছন ফিরে তাকালে হয়ত দেখতে পেতো একটা চিন্তিত মুখশ্রী। কান্না ভেজা আঁখি পল্লব। হারিয়ে ফেলার ভয়ে জর্জরিত ছোট্ট দেহখানা।
আবরার বেরিয়ে যেতেই আদ্রিতার কাছে আতিয়ার কল আসে। হাসপাতালের একজন নার্স ফোন ধরিয়ে দেয় আদ্রিতার কানে। কথা হয় দীর্ঘক্ষণ। তারই মাঝে অনুভব করে ঘাড়ে কিছু ঢুকছে। তারপর আর কিছু মনে নেই। প্রচন্ড ঘুম পেলো। আতিয়া বেগম এতো এতো কথা বলছে সেসব ঢুকলো না তার কানে। হাত ফঁসকে ফোন খানা পড়ে গেলো ফ্লোরে।
টনি এবং আরিফ ঢুকে পড়ে কেবিনে। নার্সের হাতে দুই বান্ডিল টাকা ধরিয়ে হুকুম করে আদ্রিতাকে হাসপাতাল থেকে বের করার। টাকা লোভী নার্স খুশি হয়ে মেনে নেয়। বলে পাঁচ মিনিটে
হাসপাতালের সামনে পেয়ে যাবেন।
তারপর নার্স একজন ওয়ার্ডবয়কে ডাকে। সে ঘুমন্ত আদ্রিতাকে কোলে তুলে নেয় এবং হাসাপাতালের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
এ্যানিও পেছন পেছন চলে যায়। সিয়াম সবেই হাসাপাতালে আসলো। সে গিয়েছিলো কফিশপে একটু গলা ভেজাতে।
এ্যানিকে পেছনের দরজার পানে ছুটতে দেখে সেও সেইদিকে যায়। গিয়ে দেখে আদ্রিতাকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে।
সিয়াম কোনো কিছু না ভেবেই দৌড় দেয় উদ্দেশ্য গাড়ি ধরতে হবে। যে করেই হোক। হাতে থাকা খাবারের প্যাকেট পড়ে থাকে সেখানেই। যেটা আদ্রিতার জন্য এনেছিলো।
এ্যানি গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছে৷
দীর্ঘ এক কিলো দৌড়ানোর পরে রেড সিগনালে আটকে পড়ে গাড়ি। সেই সুযোগে সিয়াম এবং এ্যানি পৌঁছে যায়। গাড়ির জানালা বরাবর ঘুষি মেরে দেয়। মুহুর্তেই সব কাচ ভেঙে গুড়িয়ে যায়৷
সিয়াম আরিফ এর সামনে দুই হাত জোর করে বলে
“আংকেল প্লিজজ আদ্রিতাকে নিয়ে যাবেন না। আমার আবরার মরে যাবে। আপনার মেয়েকে ছাড়া সে দুই মিনিটও থাকতে পারে না।
আরিফ মাথা নিচু করে ফেলে। যেনো তার কিছু বলার নেই। গাড়ির সামনে বসেছে টনি৷ সে কুটিল হেসে বলে
” তোর আবরারকে মারতেই তো চাচ্ছি৷ দেখে যা শুধু
তোরা আমাকে যেভাবে নাচিয়েছিস এবার তোদেরও ঠিক সেভাবে নাচাবো আমি।
সিয়াম এতোক্ষণে খেয়াল করলো টনিকে। মুহুর্তেই রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে। রেড সিগনাল চলে যায়। গাড়ি স্ট্রাট দেয়। সিয়াম শক্ত করে গাড়ির জানালা চেপে ধরে। এবং সমান তালে দৌড়াতে থাকে। জুতো জোড়া বহুক্ষণ আগেই খুলে গিয়েছে। পিচ ঢালা রাস্তার ঘর্ষণে চামড়া উঠে যাচ্ছে। তবুও সেসবকে পাত্তা দিচ্ছে না। মরে গেলেও আদ্রিতাকে একা ছাড়বে না। কোথাও যেতে দিবে না।
আরিফ বলে
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪৬
“ছেড়ে দাও গাড়ি। এক্সিডেন্ট করবে তুমি।
সিয়াম ব্যাথাতুল স্বরে বলে
“আমি মরে গেলেও ছাড়বো না। আদ্রিতাকে নিয়েই ফির
বাকিটা শেষ করার আগেই নজর পড়ে রাস্তার পানে৷ এ্যানি দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির নিচে পড়লো। ভাগ্য সহায় ছিলো বোধহয় তাই কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু পেছনে আরও গাড়ি রয়েছে। সিয়াম এর হাত কেঁপে ওঠে। ছেড়ে দেয় গাড়ির জানালা। পড়ে যায় পিচ ঢালা রাস্তায়। কিন্তু থেমে থাকে না। পূণরায় উঠে দৌড়ায় এ্যানিকে বাঁচাতে। মাঝ রাস্তায় হামাগুড়ি গিয়ে বসে কোলে তুলে নিয়ে যায় ছোট্ট প্রাণীটিকে। তখনই একটা ব্যস্ত গাড়ি এসে ধাক্কা মারে সিয়ামকে। ছিটকে পড়ে সে। এ্যানি পড়ে রয় রাস্তায়। তারর দেহখানার ওপর দিয়ে বয়ে যায় গাড়ির চাকা। মৃদু স্বরে মিউ মিউ আওয়াজ তুলতে তুলতেই ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায় তার শরীর।