আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩৩
তানহা ইসলাম বৈশাখী
গায়ে হলুদের ফাংশন জমজমাট হয়ে উঠেছে। ছাদের মাঝখানের।স্টেজে সবাই নাচ গান করছে। বর বউয়ের গায়ে হলুদ ছোয়ানো শেষ। তারা আপাতত বাকি দর্শকদের সাথে বসে আছে সবার অনুষ্ঠানের পারফরম্যান্স দেখার জন্য। রকি, হৃদয়, কার্তিকরা আজ আলাদা আলাদা ভাবে গান গেয়েছে নিজেদের মতো। ওদের সবার শেষে পালা এলো প্রার্থর।
মাঝে রাখা একটা টুলের উপর বসে গিটার তুলে নিলো হাতে। সেটাকে গলায় ঝুলিয়ে স্ট্যান্ডমাইকটা নিজের বরাবর সেট করে নিলো। প্রথমে টুংটাং করে দুটো শব্দ তুললো তরঙ্গে। পেছনে রকি, হৃদয় কার্তিক বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসে। আজ আর তাদের সাথে অর্নব নেই। সে বর মানুষ তাকে এখন গানে নেওয়া যাবে না। হবু বউয়ের পাশে বসিয়ে রেখেছে তাকে।
সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে প্রার্থর দিকে। কখন গান শুরু করবে? এর মাঝেই প্রার্থ পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
“-দিস সং(song) ইজ ডেডিকেটেড টু ইউ, মাই ফ্লাউয়ার।
সবার ওওও ধ্বনিতে মুখরিত হলো চারপাশ। হুট করে অর্নব চেচিয়ে বলে উঠলো।
“-শালা বিয়েটা কি তোর না আমার? বউ নিয়ে রোমান্টিক ভাইব তো তুই দিচ্ছিস।
মুহুর্তেই আবার হাসির রোল পরে গেলো সেখানে। প্রার্থ তাতে পাত্তা দিলো না। গিটারে হাত লাগিয়ে বাজানো শুরু করে দিলো। তার হাত আটকে গিটারের তারে এবং মুগ্ধ নয়ন জোড়া আটকে আছে পুষ্পর লজ্জায় রক্তিম হওয়া মুখাবয়বে। ধ্যান জ্ঞান সব পুষ্পর দিকে তাক করেই গাইলো।
কারণে-অকারণে,নিষেধে বা বারণে
তোমার নামেই যত জোছনা নিলাম
ভেতরে-বাহিরে, দহনে বা ধারণে
আমায় নিখোঁজ ভাবো বাঁ পাশেই ছিলাম।।
চোখে জল নোনা কি?
নিয়ে গেল জোনাকি কেন
আমি পথে একা দাঁড়িয়ে?
আলোদের পিয়নে,
সোডিয়াম নিয়নে যেন
সবই কোথায় হারিয়ে…
আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি
তোমার দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই….
আমি তোমার স্বপ্নে বাঁচি
তোমার স্বপ্নে পুড়ে যাই
এমন সাধের পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই
পুরোটাই..
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পুষ্পর দিকে মোহাবিষ্টের ন্যায় তাকিয়ে থেকেই গাইলো পুরো গানটা। এ যেন নতুন করে প্রেমে পরা। নতুন করে ভালোবাসা। ওই স্নিগ্ধ শুদ্ধ মুখখানার দিকে তাকালে দুনিয়ার আর কেন কিছুতে খেয়াল থাকে না প্রার্থর। আচ্ছা, ভালোবাসা এত সুন্দর কেন? এই মেয়েটাকে আগে তো প্রার্থর কাছে এমন লাগতো না। এভাবে চেয়ে থেকেও দেখেনি কখনো। কখনো এভাবে তাকানোর প্রয়োজনও মনে করেনি। অথচ এখন দেখো। ভালোবেসে পুরো অনুভুতিটাকেই বদলে ফেলেছে। কারনে অকারনে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে তার ভীষন ভালো লাগে।
সে গিটারটা রেখে উঠে গেলো। সবার করতালিও শেষ হলো। প্রার্থ গিয়ে পুষ্পর পাশের জায়গাটা দখল করে নেয়। তখন পুষ্প আঙ্গুলের ডগায় অশ্রু মুছতে ব্যাস্ত। মির জাফরের মতো চোখ দুটো সুখেও ঝরে দুঃখেও ঝরে।
প্রার্থ এক হাত বাড়িয়ে পুষ্পর কাধে রাখে। কোমল মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চোখ মুছিয়ে দেয়। বলে মজার ছলে।
“-সবসময় ভ্যা ভ্যা না করে একটু হাসতেও তো পারিস। হাসলে তোকে গোটা একটা ফুলের রাজ্যের রানী লাগে।
পুষ্প হেসে দেয় শব্দ করে। প্রার্থর বুকে আলতো চাপড় মেরে বলে।
“-আপনিই তো কাঁদালেন।
“-এইটুকুতেই যে কাদে সে ছিচকাঁদুনে। তার মানে তুইও তাই।
পুষ্প ঘুরে তাকায় সামনে। মেকি রাগ দেখিয়ে বলে
“-আপনার জন্যই এমন হয়েছি।
পরপরই আবার অবাক হয়ে বলে।
“-এই ওটা অন্ত না?
প্রার্থ পুষ্পর চোখ ইশারা করে তাকায় সামনে। যেখানে এতক্ষণ প্রার্থ বসে গান গাইছিলো সেখানে অন্ত বসে আছে। হাতে গিটার।
পুষ্প ফের বললো।
“-অন্ত গান গাইবে? ও তো গান-টান গায় না।
প্রার্থ স্বাভাবিকভাবেই বললো।
“-আজ হয়তো গাবে। দেখতে থাক।
অন্ত তখন গিটারে টুংটাং শব্দ তুলছে। তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা যারা তাকে চেনে তারা সবাই অবাক। অন্ত প্রার্থর ভাই হলেও সে গানের প্রতি আসক্ত নয় বা গান গায় না খুব সহজে। আজ বিয়ে বাড়িতে এতগুলো মানুষের সামনে গান গাইবে ভেবেই অবাক সকলে।
প্রিয়া আর শিফা এক জায়গায় বসেছে। পুষ্পর দুটো চেয়ার পরেই ওদের চেয়ার। অন্তর স্টাইলটা ঠিক প্রার্থর মতোই। একইভাবে বসে একইভাবে তাকালো প্রিয়ার দিকে। বাড়তি কোনকিছু না বলেই গান ধরলো।
প্রথম যখন তোকে দেখেছি,
মনের মাঝে তোর হাসি টা বেঁধেছি।
ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছেদের আগমন,
রং মাখিয়ে দেহ জুড়ে শিহরণ।
তুই ছাড়া মন কাঁদে একেলা,
তুই হীনা কি করি বুঝিনা। (x2)
তুই চাইলে বল, সকাল সাজাই
বৃষ্টি নামাই, তোর ইশারায়।
মেঠো মেঠো পথে হেঁটে দুজন,
চল রাত নামাই কথায় কথায়।
আবার আসবে ভালবাসার নতুন এক প্রহর।
রেখ যতন করে আমায়, করো না গো পর।
আগলে রেখে, আগলে রেখে
আগলে রেখে, কাছে টেনে,
বাসব ভালো কতনা।
মন মাঝারে, তোর নাম লিখে
করব প্রার্থনা।
তুই ছাড়া মন কাঁদে একেলা,
তুই হীনা কি করি বুঝিনা।
পুরো গানটা গেয়ে থামলো অন্ত। সকলে আজ জানলো অন্তর গানের কন্ঠ এত সুন্দর। কখনো গান গায়নি সে। তাই জানার সুযোগও হয়নি। আজ তবে শুনলোই তার কন্ঠ।
সবাই যেখানে মুগ্ধ অন্ত গানে প্রিয়া সেখানে স্তব্ধ তার চাহনিতে। গানের প্রতিটি লাইন যেন তাকেই উৎসর্গ করা। গায়ের লোমগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষন না পারছিলো উঠতে না পারছিলো সহ্য করতে। অন্তর গভীর চোখদুটোর দৃষ্টিতে যেন বন্দী হয়ে ছিলো এতক্ষন। এবার আর বসে থাকা সম্ভবপর হলো না। উঠে চলে গেলো অন্য পাশে। বুকের গতি বেগতিক। বুঝতে পারছে না অন্তর জন্য তার এমন কেন হচ্ছে৷ কোন সময় বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে আবার কোনসময় বুক মুচড়ে উঠছে। অন্তর হৃদয় বিচ্ছিন্ন করা শব্দতরঙ্গ কানে বেজে যাচ্ছে বারংবার।
অন্ত একবার বলেছিলো- ভালোবাসলে নাকি তার জন্য বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা হয়। পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রনা হয়। যখন এগুলো কারো জন্য অনুভব করতে পারবি। তখন বুঝবি তুই ভালোবাসি।
এখন ব্যাথা যে অন্য কারো জন্য নয় অন্তর জন্যই হচ্ছে। এটাকে কি বলে আখ্যা দিবে সে? ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা?
গায়ে হলুদের ফাংশন শেষ হতে হতে গভীর রাত হলো। প্রার্থরা রওনা হয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্যে। অর্নব থাকতে বলেছিলো কিন্তু প্রার্থ থাকলো না। দু তিনদিন হলো নতুন গাড়ি কিনেছে সে। বাসাও খুব একটা দূরে নয়। কালো রংয়ের টয়োটা এক্সিও গাড়িটি ছুটিয়ে বাড়িতে পৌছাতে মাত্র পনেরো মিনিট লাগবে। তাই আর বিলম্ব না করে বাড়ির উদ্দেশ্যেই ছুটলো তারা।
হৃদয়ও মোহকে নিয়ে বেরিয়ে গেছে ঘন্টাখানেক আগে। এখানে শুধু রয়ে গেলো কার্তিক – সুস্মিতা এবং রকি।
গুনে গুনে ঠিক পনেরো মিনিটের মাথায় বাড়িতে এসো পোঁছালো প্রার্থরা। ক্লান্ত শরীরে ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো নিজেদের রুমে ফ্রেস হতে। সবার আগে চলে গেলো প্রিয়া। আজ প্রান্তকে ফাংশনে নেওয়া হয়নি। গাড়ির পেছনের সিটে অন্ত আর প্রিয়া একসাথে বসে ছিলো। যতক্ষন গাড়িতে ছিলো ততক্ষন যেন দম গলায় আটকে আছিলো। গাড়ি থেকে নেমেই হনহন পায়ে বাড়িতে ঢুকে গেছে সে। পুষ্পর কেমন লাগলো কিন্তু কিছু বললো না। ভাবলো অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়তো।
রাত তখন প্রায় ২ টা। পুষ্প ফ্রেশ হয়ে গা এলিয়ে দিয়েছে বিছানায়। এখন একটু ঘুমাবে আবার সকাল সকালেই উঠে পরতে হবে। বাড়ির সামান্য কাজ, অর্নবের বিয়ে নিয়ে আবার ব্যাস্ত দিন কাটবে তার। এত ব্যাস্ততা চলাফেরার মাঝেও প্রার্থ পুষ্পর প্রোপার প্রটেকশন করেছে। বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে পেটে আমাদের সন্তান সাবধানে চল। ওখানে যাবি না, এখানে থাক, আমার চোখের সামনে থাকবি সবসময়, এটা খাবি না ওটা খা, আরো নানান কথা। তার নির্দেশেই চলেছে সারাদিন। পুষ্প খুব উপভোগ করেছে এগুলো। নিজেকে তার ছোট বাচ্চা মনে হয়েছে। একটা মানুষকে কেউ এভাবে আগলে রাখতে পারে তা তার অজানা ছিলো। পুষ্পর বরং গর্ব হয় এমন একটা মানুষকে সে ভালোবেসেছে যে তাকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসে।
শুয়ে শুয়ে এসব ভেবে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো তার। লজ্জাও লাগলো কিছুটা।
কিছুক্ষণ পর প্রার্থ ফ্রেশ হয়ে বের হলো ওয়াসরুম থেকে। ডিরেক্ট গিয়ে বাতি নিভিয়ে দিলো। কেবল ডিম লাইটের স্বল্প আলোয় আলোকিত রইলো কক্ষ। সে এসেই হুরমুরিয়ে শুয়ে পরলো। পুষ্পকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো। কোন বাক্য ব্যায় বিহীন মুখ গুজলো পুষ্পর গ্রীবায়। এটা তার রোজকার অভ্যেস। এভাবে না ঘুমালে নাকি তার ঘুম হয় না।
পুষ্পও স্বাভাবিকের ন্যায় জরিয়ে রাখলো তাকে নিজের মাঝে। বেশ কিছুক্ষন মনে মনে কিছু কথা ভাবলো। একটু পর ভনিতা নিয়ে প্রার্থকে বলে উঠলো।
“-ঘুমিয়ে গেছেন?
বিপরীত মানুষটা থেকে শব্দ এলো স্বাভাবিক স্বরে।
“-উহুম।
পুষ্প জিভে ঠোঁট ডোবালো। সংশয় নিয়ে শুধালো।
“-একটা কথা বলবো?
ওপাশ থেকে আবারও ভারি কন্ঠ ভেসে এলো।
“-বল
পুষ্প দুটো ঢোক গিলে বললো।
“-রাগ করবেন না তো?
“-উহুম।
“-তাহলে বলবো?
“-হুম।
মনদ্বিধা নিয়ে পুষ্প বলতে শুরু করলো।
“-আজকে অর্নব ভাইয়াদের বাড়িতে ভাইয়ার মামির সাথে কথা হলো। তিনি বললেন তার নাকি প্রিয়ুকে খুব পছন্দ হয়েছে। তার ছেলে মানে অর্নব ভাইয়ার মামাতো ভাই আমেরিকায় থাকে। সেখানকার সিটিজেন। বিজনেস করছে সেখানে। তিনি বললেন তার ছেলের জন্য প্রিয়ুকে দিতে। মানে আমি বড় বোন হিসেবে আমাকে বললেন। আব্বু আম্মুর সাথেও কথা বলতে চাইছেন তিনি। ছেলের ছবিও দেখালো দেখতেও বেশ সুন্দর। বয়সও খুব একটা নয়। একদম ঠিকঠাক। ওর জন্য কি কথা বলবো?
“-প্রয়োজন নেই।
প্রার্থর ভারি স্বরে খানিকটা ঘাবড়ালো সে। পরপরই ভাবলো এটা তো জনাবের স্বভাব। একবার ঠোঁটকাটা হবে তো একবার গম্ভীর। কখন কোন মুডে থাকে কেউ বুঝতে পারবে না। সে সাহস করে আবার বললো।
“-কিন্তু কেন সম্মন্ধটা তো ভালো। তাছাড়া প্রিয়ুকে পড়াবেও।
“-আমি বারন করেছি।
আবারও সেই একই স্বর। পুষ্প রেগে গেলো এখন। বললো।
“- কিন্তু কেন? সমস্যা টা কোথায়?
“-প্রিয়ুর জন্য পাত্র ঠিক করা আছে।
পুষ্প অবাক হলো। ঘনপল্লব বিশিষ্ট নেত্র দ্বয় দুয়েকবার পলক ঝাপটে বললো।
“-কি বলছেন? কাকে ঠিক করে রেখেছেন?
প্রার্থ ভনিতা বিহীন জবাব দিলো।
“-অন্তকে।
পুষ্পর অবাকভাব আকাশ ছুলো। প্রার্থর মুখটা টেনে তুললো সম্মুখে। দুহাত তার গালে রেখে দুচোখ ভরে অবিশ্বাস নিয়ে শুধালো।
“-কোন অন্ত? কি বলছেন আপনি?
“-আমাদের অন্ত।
পুষ্পর বিশ্বাস হলো না। ভ্রুকুটি করে বললো।
“-আপনি পাগল? ওরা ভাই বোন সারাদিন ঝগড়া করে। আপনি প্রিয়ুর জন্য অন্তকে বেছে রেখেছেন কি মনে করে? মাথা খারাপ? অন্তর জীবন ত্যানা করে দিবে আপনার বোন।
প্রার্থ পুষ্পর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো।
“-ভাই বোন তো আমরাও ছিলাম।
পুষ্প মিয়িয়ে এলো। চোখ সরিয়ে বললো।
“-আমাদের ব্যাপার তো আলাদা। আমি তো আপনাকে ভালোবাসতাম। কিন্তু ওরা! ওদের কথা একবার ভাবুন। সারাদিন পারলে ঝগড়া করবে দুজন। ওরা একসাথে কি করে থাকবে? আর সবচেয়ে বড় কথা অন্ত তো কখনোই প্রিয়ুকে মানবে না।
“-তোমার ভাইই পছন্দ করে প্রিয়ুকে। শুধু পছন্দ নয় ভালোও বাসে। কুল হারা প্রেমিক হয়ে ছন্নছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছে সে।
পুষ্প আজ এ কি শুনলো? এটা কি পৃথিবীর অষ্টমতম আশ্চর্য নয়? পুষ্পর কাছে তো এই চিরন্তন সত্যকেই অষ্টম আশ্চর্য মনে হচ্ছে। এটা কি করে সম্ভব? অন্ত ভালোবাসে তাও প্রিয়ুকে। এটা কি বিশ্বাস করার মতো কথা? পুষ্প তখনো মার্বেল চোখে তাকিয়ে প্রার্থর দিকে। চোখদুটো আরেকটু বড় করলেই যেন কোটর ছাড়িয়ে বেড়িয়ে আসবে।
পুষ্পকে অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রার্থ ভ্রু কুচকে বললো।
“-এত অবাক হওয়ার কি আছে? সারাদিন ওদের সামনে থাকিস এটুকুও ধরতে পারিস না?
পুষ্প রোবটের ন্যায় শুধু আওড়ালো।
“-আপনি সত্যি বলছেন তো?
“-কেন? কোন সন্দেহ আছে?
“-আপনি কি করে জানলেন? অন্ত বলেছে আপনাকে?
“-না। আমিই বুঝে নিয়েছি।
“-তাহলে আমি কি করে বুঝলাম না?
“-তোর সেই ক্ষমতা আছে নাকি? অন্তকে গভীরভাবে খেয়াল করলেই বুঝতি। ওদের ঝগড়ার মাঝেও অন্তর গভীর প্রেম লুকিয়ে থাকে। আমার চোখ এড়ায়নি সে প্রেম। প্রিয়ুর জন্য অন্তর চোখের কাতরতা স্পষ্ট দেখেছি আমি।
“-প্রিয়ু জানে অন্তর অনুভুতি সম্পর্কে?
প্রার্থ ঠোঁট উল্টে বললো।
“-মেবি জানে।
পুষ্প মাথায় হাত দিয়ে বললো।
“-এ আপনি কি শুনালেন আমাকে? আমার মাথা ঘুরছে।
প্রার্থ উদ্বেগ হয়ে পরে। অলস শরীরটা চটপটে হয়ে
উঠে। উদ্বিগ্নতায় পুষ্পর মুখে হাত রেখে চিন্তিত স্বরে বলে।
“-কি হয়েছে ফুল? মাথা কেন ঘুরছে? খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো?
পুষ্প কথা বলা ভুলে গেলো। ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো উন্মাদ প্রার্থর দিকে। সে তো শুধু কথার কথা বলেছে মাথা ঘুরছে এতেই এত টেনশনে পরে গেলো?
প্রার্থর চোখেমুখে ভয়। পুষ্প প্রার্থর গালে হাত রেখে আস্বস্ত করলো তাকে।
“-কিছু হয়নি আমার। আমি ঠিক আছি। এত টেনশন করছেন কেন? আমি তো কথার কথা বললাম। আমার মাথা ঘুরছে না খারাপও লাগছে না। আমি একদম ঠিক আছি। আপনি শান্ত হোন। এত কেন চিন্তা করছেন?
প্রার্থ ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেললো যেন এ যাত্রায় বেচে গেলো সে। পুষ্পর কথা সে ওত শুনেনি। যখনই মাথা ঘুরার কথা কানে গেছে তখনই বুকে ধ্বক করে উঠেছে। সবসময় ভয়ে থাকার ফল এটা। একটু খারাপ কিছু শুনলেই যেন ভয়েরা সব জেঁকে ধরে তাকে।
এবার নিশ্চিন্ত শ্বাস ছেড়ে পুষ্পর হাতটা নিজের গালের উপর থেকে উঠালো প্রার্থ। হাতে আলতো চুমু খেয়ে মোহাবিষ্ট কন্ঠে বললো।
“-ঘুমা ফুল। আর জ্বালাস না। ওদের নিয়েও আর ভাবতে হবে না। আমি অন্তকে সময় দিয়েছি। ও যদি প্রিয়ুর মন জয় করে নিতে পারে তবে আমি নিজে ওদের বিয়ে দিবো ততদিন প্রিয়ুর বিয়ের কথা বাদ।
এবার তুই ঘুমা। আমাকেও ঘুমাতে দে।
পুষ্প বলতে চাইলো।
“-কিন্তু…
প্রার্থ তার ঠোঁটে তর্জনী রেখে বললো।
“-চুপ! মারতে চাস আমাকে? কত রাত ঘুমাতে পারিনা জানিস? এখানে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দে আমাকে। আমার শান্তি প্রয়োজন।
পুষ্পর আর জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না কেন সে রাতে ঘুমাতে পারে না। এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার আগে প্রয়োজন মনে করলো প্রার্থর ঘুম। সে দুহাত ছড়িয়ে দিলো তার মাঝে মাথা রাখার জন্য। প্রার্থ তার হাতের ফাক গলিয়ে আবার শুয়ে পরলো তার গ্রীবায়।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩২
নিমিষেই স্তব্ধ হয়ে গেলো কক্ষ। প্রার্থ আবেশে চোখ বুজে নিলো। শান্তিতে ঘুমাতে চাইলো একটু। কিন্তু পুষ্পর আর ঘুম এলো না। শুধু প্রিয়া আর অন্তকে নিয়েই ভাবতে লাগলো। তার সমীকরন সব উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে। অন্ত প্রিয়া কি করে এক হবে? ওদের মিল তো মনেহয় অসম্ভব। কিন্তু যদি তাদের মিল হয় তবে মন্দ হয় না। অন্ত নিতান্তই ভদ্র ছেলে। প্রিয়ার মতো চঞ্চল মেয়ের জন্য অন্তর মতো ছেলেই পারফেক্ট।