প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৬

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৬
Drm Shohag

ইরফান এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় বেডের পাশে। গম্ভীর চোখে বেশ কিছুক্ষণ মাইরাকে পর্যবেক্ষণ করল। উপুড় হয়ে শুয়ে মুখ এদিকে ফিরিয়ে রেখেছে মেয়েটা। পিঠে ছড়িয়ে পড়া চুল গুলোর কিছু অংশ হেলে মুখের উপর এসে মুখ ঢাকা পড়ে গিয়েছে। ইরফান মাইরার পিঠের দিকে নজর দেয়। চুলগুলো ভীষণ অগোছালো। জামা ঠিকঠাক-ই আছে। বাম পা ভাঁজ করে ডান পায়ের হাঁটুর নিচ বরাবর রেখেছে। ডান পায়ের প্লাজু অনেকটা উপরে উঠে গিয়েছে, তবে হাঁটুর উপরে ওঠে নি। ইরফান দু’হাত ভাঁজ করে সূক্ষ্ম চোখে মাইরাকে পরোখ করে।
মাইরা ঘুমের মাঝেই উল্টো ফিরে শোয়। চুলগুলো গলায় পেঁচিয়ে যায়। ওড়নার হদিস নেই। জামা সরে গিয়েছে পেটের উপর থেকে, তবে প্লাজুর কোমড়ের রাবার বেশ উপরে পরা, যার ফলে ফর্সা পেটের খুব সামান্যই দেখা গেল। ইরফান সটান হয়ে দাঁড়িয়ে মাইরাকে দেখল চুপচাপ। এরপর চোখ বুজে ডান হাতে দু’আঙুলের সাহায্যে গাল চুলকায়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ঘাড় ডলে ভারী নিঃশ্বাস ফেলে।
এরপর আবারও চোখ খুলে মাইরার মুখের দিকে তাকায়। ইরফানের মনে হলো মাইরা হাসছে। তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো, নাহ, হাসছে না,, তার মনে হলো হাসছে। মেয়েটা বিরক্তিতে কপাল কোঁচকায়। চুল গলার সাথে পেঁচিয়ে গিয়েছে, কিছু ছোট চুল মাইরার চোখেমুখে জ্বালায়।

ইরফান তার জায়গায় বসল। হাত বাড়িয়ে মাইরার গলার সাথে পেঁচিয়ে যাওয়া চুলগুলো সরিয়ে দিল বামদিকে। ফর্সা গলা উম্মুক্ত হয়, ইরফান ঢোক গিলে চোখের দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার মুখপানে তাকায়। দু’হাতে মাইরার কাঁধ ধরে বেডের অপর কোণায় শুইয়ে দেয়। এরপর চোখ বুজে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। খানিক বসে রইল সেভাবেই।
তারপর উঠে গিয়ে একটা বক্স থেকে দু’টো ঘুমের ওষুধ বের করে। গ্লাসে পানি ঢেলে ডানহাতে গ্লাস নিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে ওষুধ দু’টো খেয়ে নেয়। মেয়েটার মুখে দৃষ্টি স্থির রেখেই হাতের গ্লাস টেবিলের উপর রেখে দেয়। বা হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে নিচের কালচে ঠোঁটে দু’বার আঙুল ছোঁয়ায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এরপর এগিয়ে এসে মাইরার পাশে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে। ডান হাত চোখের উপর রেখে চোখ বুজে।
কিছুক্ষণ না যেতেই মাইরা গড়িয়ে এসে ইরফানের গায়ের সাথে লেগে যায়। বা হাত ইরফানের বুকের উপর ঠাস করে রাখে ঘুমের ঘোরে। ইরফান বিরক্ত, চরম বিরক্ত। কিন্তুু ছেলেটা নড়লো না, গাঁট হয়ে সেভাবেই থাকলো। এভাবে কিছুক্ষণ পেরোলে মাইরা আবারও নড়েচড়ে ইরফানের পেটের সাইডে মুখ ঠেকায়। সময়ের পাল্লা বাড়ে, মাইরার গরম নিঃশ্বাস ইরফানের পেটের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। ছেলেটার গায়ে এমনি-ই শার্ট নেই, আর নিতে পারল না। চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়। মাইরাকে তার জায়গায় রেখে সে নেমে যায় বেড থেকে।
ঘণ্টা দুই পেরিয়েছে। ইরফানের চোখে ঘুম নেই। দু’টো ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুম পালিয়েছে। চোখ দু’টোয় লালিত আভার প্রভাব ছড়িয়েছে। এ ঘরের সাথে বেলকনি নেই। তাই ইরফানকে ঘরেই থাকতে হয়েছে। জানালার সব পাল্লা খুলে দিয়েছে। সেই বরাবর দু’হাত আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। একটু পর পর পিছু ফিরে তাকায়, উদ্দেশ্য মাইরা।

গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছে, জানালা দিয়ে হুহু করে ঠাণ্ডা বাতাস ধেয়ে ইরফানের বুক ছাড়িয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তুু সে তবুও ঘামছে। সে বিরক্ত নিজের উপর। নিজেকেই কষিয়ে দু’টে থা’প্প’ড় দিতে ইচ্ছে করছে। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়তো আজ এখানে থেকে যাওয়া। কেন থেকেছে? উত্তরও খুঁজে পায় না। রেগে জানালার গ্রিলে একটা পাঞ্চ মারে। মৃদু শব্দ হয়। ইরফান চোখ বুজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে।
এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর থেকে সিগারেট এর প্যাকেট আর লাইটার এনে জানালার সামনে দাঁড়ায়। এরপর সিগারেট-এ আগুন ধরায়। অন্ধকারে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে সিগারেট ফুঁকতে থাকে। প্রায় অর্ধেক সিগারেট পুড়ে ছাই হয়েছে, সেসময় পিছন থেকে কেমন ফোঁসফোঁস শব্দ কানে লাগে। ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট রেখে-ই ভ্রু কুঁচকে পিছু ফিরে তাকায়।

মাইরা অস্বাভাবিকভাবে শ্বাস নেয়। হাঁপড়ের মতো করে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস। হাত-পা খিঁচিয়ে আসে। কেমন ছটফটায়।
ইরফান মাইরাকে এভাবে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে দ্রুত পায়ে মাইরার পাশে এসে বসে। কাছ থেকে মাইরাকে এভাবে দেখে চোখেমুখে ভীতি জড়ো হয়। গালে আলতো হাতে থা’প্প’ড় দিয়ে বলে,
“হেই, কি হয়েছে?”
মাইরা মুখ উঁচু করে শ্বাস নেয়। হাত-পা খিঁচিয়ে আসে। চোখগুলো কেমন উল্টে আসে। শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হয়। চোখের কোণ ঘেষে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফান দ্রুত মাইরার দু’গাল তার দু’হাতের আঁজলায় নিয়ে ভীতি স্বরে বলে,
“হেই গার্ল, টক টু মি। হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা কিছু বুঝলো না বোধয়, শুনলোও না। ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে বুঝল মেয়েটার শরীর অত্যন্ত ঠাণ্ডা। গাল থেকে হাত সরিয়ে মাইরার দু’হাত তার দু’হাতের মাঝে নেয়। একদম বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা হয়ে আছে। মাইরার যে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সে বুঝলো।

ইরফান ঘাড় বাঁকিয়ে জানালার দিকে তাকালো। দ্রুত পায়ে উঠে ঘরের সবগুলো জানালা ঠাস ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। ঘরের এসি অফ করে দেয়। এরপর মাইরার পাশে বসে মাইরার দু’হাত তার দু’হাতের মাঝে নিয়ে ঘষতে থাকে। বা হাতের মাঝে মাইরার দু’হাত আগলে রেখে ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার পা স্পর্শ করে বুঝল, পা আরও বেশি ঠাণ্ডা। ইরফান মাইরার হাত ছেড়ে দ্রুত মাইরার পায়ের কাছে বসে দু’হাতে একবার এই পা, আরেকবার ওই পা জোরে মালিশ করতে থাকে।
মাইরার মুখের দিকে তাকায়। মেয়েটা এখনোও অস্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিচ্ছে।
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়েই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। চোখেমুখে কেমন আতঙ্কের ছাপ।
পা ছেড়ে তার বালিশ নিয়ে মাইরার পায়ের উপর রাখে। এরপর মাইরার মাথার কাছে বসে গালে হাত রাখে। মৃদুস্বরে বলে,

“আর ইউ ওকে?”
মাইরা চোখ বুজেই ফুঁপিয়ে ওঠে। ইরফান বিচলিত হয়। শ্বাস-প্রশ্বাস এর গতি কমলো না মেয়েটার। ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে আওয়াজ করে বলে,
“হেই, কথা বলো। তোমার ইনহেলার কোথায়?”
মাইরা কিছুই বলল না। শুধু মুখ উঁচু করে কেমন হা করে নিঃশ্বাস নিতে চায়। ইরফান আশেপাশে তাকালো। দ্রুত বেড থেকে নেমে একটা ব্যাগের কাছে যায়। ব্যাগের উপর মাইরার ওড়না দেখে সে ওড়না হাতে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। ব্যাগ উপুড় করে ভেতরের সব ঢেলে ফেলে। কাপড় ছাড়া তেমন কিছুই পেল না। একটা শপিং ব্যাগ পেয়ে ভেতরে চেক করে স্যানিটারি ন্যা’পকি’ন দেখে বিরক্তিতে ছুঁড়ে ফেলে। কাপড় উল্টেপাল্টে দেখল, কিছুই পেল না। মেজাজ টা খারাপ হলো এবার। উঠে গিয়ে আবারও মাইরার পাশে বসে।
মাইরা শরীর ছেড়ে দিয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাস এর গতি কমে এসেছে, তবে শব্দ হয় মৃদু। ইরফান আবারও মাইরার দু’হাত তার দু’হাতের মাঝে নেয়। কিছুটা উষ্ণ লাগছে এখন। তবে পুরোপুরি নয়। ইরফান মাইরার দু’হাত তার বাম হাতের মুঠোয় রেখে ডান হাতে মাইরার গালে খুবই আলতো করে থা’প্প’ড় দিয়ে নরম গলায় বলে,

“স্টুপিট, ইনহেলার কোথায় রেখেছ বলো?”
মাইরা একদম শান্ত হয়ে যায়। ভারী নিঃশ্বাস পড়ে।
মাইরাকে শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যেতে দেখে ইরফান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বুক টিপটিপ করছে তার।
হাত ছেড়ে মাইরার থেকে দূরে সরে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসলো। ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার মুখের দিকে চায়। তার চোখে কেমন যেন অসহায়ত্বের ভিড়। মাইরার চোখের কোণ ঘেঁষে পানি গড়িয়ে পড়া পানি সেখানেই জমাট বেঁধে আছে। ইরফান চোখ সরিয়ে নেয়।
মেঝে থেকে মাইরার ওড়না তুলে ঘুমন্ত মাইরার পুরো শরীর ঢেকে দেয়।
ইরফান বেডের বক্সের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে স্থির হয়ে বসে। দু’হাত আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করা।
বাইরের আবহাওয়া কিছুটা শীতল হলেও, ঘরে ভ্যাপসা গরম। ঘেমে-নেয়ে একাকার ইরফান। বলিষ্ঠ দেহ চুইয়ে ঘাম বেয়ে পড়ে। কপালে, নাকে, ঠোঁটের উপরি ভাগে বিন্দু বিন্দু ঘাম এর ছড়াছড়ি। কিন্তুু সে নির্বিকার চিত্তে চুপ করে বসে রইল।

ইরফানের হঠাৎ মাথায় আসে, সিগারেট এর ধোঁয়ার শ্বাসকষ্টের রোগীদের প্রবলেম হয়।
চোখ মেলে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে জানালার সামনে এসে দাঁড়ায়। জানালার কাছে সিগারেট এর প্যাকেটের পাশেই লাইটার পেয়ে যায়। সিগারেটের প্যাকেট মেঝেতে ফেলে ডান হাতে লাইটার নেয়। এরপর হাঁটু মুড়ে বসে লাইটারের সাহায্যে সিগারেট এর প্যাকেট জ্বালিয়ে দেয়। প্যাকেটে সিগারেট ভর্তি, যাস্ট একটার অর্ধেক টেনে সেটাও ছুঁড়ে ফেলেছিল। আপাতত এটার উপর-ই তার রাগ।
ঘাড় বাঁকিয়ে মাইরার দিকে তাকায় একবার।
এরপর পুড়তে থাকা সিগারেটের প্যাকেট এর দিকে তাকালে ধোঁয়া উড়তে দেখে ‘ওহ শীট’ বলে বাম হাতে জ্বলন্ত আগুন চেপে নিভিয়ে দেয়। ধোঁয়া ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই সদ্য নেভানো আগুনের ন্যায় গরম আধপোড়া সিগারেটের প্যাকেট ডান হাতে তুলে দাঁড়ায়। বা হাতে জানালা খুলে সেই সিগারেটের প্যাকেট ছুঁড়ে ফেলল। ডান হাতটা একবার ঝাড়া দেয়। হাতে ছ্যাঁক লেগেছে হয়তো। কিন্তুু মুখায়বে কোনো ব্য’থার চিহ্ন নেই। সে একদম স্বাভাবিক।
জানালা লাগিয়ে দিয়ে আবারও বিছানায় এসে বসে। আরও ঘণ্টা খানেক পেরিয়ে যায়।

ইরফান চুপচাপ সেভাবেই বসে থাকে। কেউ দেখলে বলবে, সে হেলান দিয়ে ঘুমিয়েছে, অথচ সে সজাগ। হঠাৎ-ই চোখ মেলে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা এতোক্ষণে আর একবারও নড়াচড়া করেনি। ভ্রু কুঁচকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে মাইরার ডান হাত ধরে। গালে হাত দিলে মাইরা একটু নড়ে ওঠে। ইরফান মাইরার হাত ছেড়ে বেড থেকে নেমে যায়। ওয়াশরুমে গিয়ে লম্বা এক শাওয়ার নেয়। ফজরের আজান কানে ভেসে আসে। এরপর সে ওজু করে ফজর নামাজ পড়ে নেয়। তারপর আবারও বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে।
ঘনকালো আন্ধার নিভে সকালের মিটিমিটি আলোয় ধরনী আলোকিত হতে ব্যস্ত। পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যায়, থেকে থেকে মোরগ এর ডান কিছুটা উচ্চশব্দে ভেসে আসে।

মাইরা গড়িয়ে এসে ইরফানের বাম পায়ের উরুর সাথে ঠেকে। বা হাতে ইরফানের পা জড়িয়ে হাঁটুর উপরিভাগে মাথা রেখে ঘুমায়। ইরফান চোখ মেলে তাকায়। মাইরা তার মুখ ইরফানের উল্টো দিকে রেখেছে। ইরফান মাইরার ঘন কালো এলোমেলো চুলগুলো দেখল। কিছু বললো না। মাইরাকে সরিয়েও দিল না। ডান হাত বাড়িয়ে মাইরার গলা চেক করে। মেয়েটার শরীর হালকা ঠাণ্ডা। ঘামেনি বিন্দুমাত্র। ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। বেডসাইড টেবিল থেকে তোয়ালে দিয়ে নিজের ঘামযুক্ত মুখটা মুছে নেয়। এরপর আবারও চোখ বুজে ডান হাত চোখের উপর রাখে।
ফজরের আগে গোসল করলেও সকাল হতে হতে ইরফানের আবারও ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। পুরো শরীর চটচটে হয়ে আছে। দু’হাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম শিশিরের ন্যায় জমেছে। কপাল বেয়ে কখনো কখনো গড়িয়ে পড়ছে জমিয়ে যাওয়া ঘামের বিন্দু।

সকাল সকাল মাইরা পিটপিট করে চোখে মেলে তাকায়। মাথা তুলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সে কোথায়। মাথা ডান দিকে ঘোরালে ইরফানকে দেখলে মনে পড়ে সে আর ইরফান একসাথে আছে আজ। মাথা সোজা করে বোঝার চেষ্টা করছে সে আসলে কোথায় ঘুমিয়েছে। যখন বুঝল এটা ইরফানের পা, চোখ বড় বড় করে আরেকবার ইরফানের দিকে তাকায়। ধড়ফড় করে উঠে দূরে সরে বসে। এই লোক যদি দেখে সে তার গায়ের উপর ঘুমাচ্ছে, তাহলে নিশ্চিত তাকে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসবে। মাইরা গায়ে ওড়না জড়িয়ে দ্রুত বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়।
মাইরা ইরফানের দিকে তাকায় ভ্রু কুঁচকে। এই লোক বসে বসে ঘুমাচ্ছে কেন? সে এইসব ভাবনা রেখে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকালো। সকাল ৭:৩০। মাইরা অবাক হয়। আজ এতো ঘুমিয়েছে সে? তার তো ফজরে ওঠার অভ্যাস। আফসোসের সুর টানলো মেয়েটা। এগিয়ে গিয়ে ঘরের দু’টো জানালা খুলে দেয়। ঘর কেমন অন্ধকার হয়ে আছে। নিচে চোখ পড়লে দেখল তার কাপড়চোপড় সব ব্যাগ থেকে ফেলে রাখা। একদম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ব্যাগ কোনদিকে তার হদিস নেই। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এগুলো কে করেছে? বিড়াল? কিন্তুু কোনদিক দিয়ে আসলো সেই বিড়াল? রাতেই তো সব ঠিক ছিল। দরজাও লাগানো।
পিছন থেকে ইরফানের গম্ভীর স্বরে আসে,

“তোমার অ্যাজমার প্রবলেম আছে?”
মাইরা অবাক হয়ে সাথে সাথে পিছন ফিরে তাকায়। ইরফানকে যেভাবে চোখের উপর হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখেছে এখনো সেভাবেই আছে। তার মানে এই লোক ঘুমায়নি। সে তো লোকটার পায়ের উপর ঘুমিয়েছে, এখন তাকে কি করবে? কয়টা থা’প্প’ড় মারবে? ভাবতেই দু’হাত দু’গালে চলে গেল। ইরফানের ধমকের সুরে গমগমে স্বর ভেসে আসে,
“স্টুপিট, স্পিক আপ।”
মাইরা ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। ইরফানের প্রশ্নটা মগজে বাজতেই অবাক হয়ে বলে,
“আপনি কি করে জানলেন আমার অ্যাজমা?”
ইরফান চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা ইরফানের দিকেই চেয়ে ছিল। ইরফানের ওমন লাল চোখ থেকে তার চোখ কেমন ধাঁধিয়ে ওঠে। মাইরা ভীত চোখে তাকায়। সে লোকটার পায়ের উপর ঘুমিয়েছে বলে কি রেগে এমন হয়েছে? মাইরা অসহায় মুখ করে মিনমিন বলে,
“আমি ইচ্ছে করে আপনার পায়ের উপর ঘুমাইনি, বিশ্বাস করুন। স্যরি!”
ইরফান বিরক্ত চোখে চেয়ে বলে,

“হোয়াট?”
মাইরা চুপ করে থাকে। ইরফান রেগে বলে,
“আন্সার মি। তোমার ইনহেলার কোথায়?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“ইনহেলার তো সবসময় লাগে না। শীতে প্রয়োজন পড়ে বেশি। এখন তো গরম, এখন লাগে না। তাই নেই।”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে বলে,
“থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব, স্টুপিট। অ্যাজমা গীষ্ম, শীত দেখে চাপ দেয়? মাথায় ঘিলু নেই, না?”
মাইরা কেঁপে ওঠে। চোখ খিঁজে বন্ধ করে নেয়। এতো জোরে চিৎকার করার কি আছে, অদ্ভুদ। ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“আউট।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইরফানের দিকে। চোখদুটো অস্বাভাবিক লাল। সাহস করে বলে,
“আপনার কি জ্বরে এসেছে?”
ইরফান বিরক্ত হয়ে বলে,
“বের হও এই ঘর থেকে। এক্ষুনি।”

মাইরার রাগ লাগে। নিজের চোখের বারোটা বেজে আছে। সে তো ভালোর জন্যই জিজ্ঞেস করছে। আর এই লোক শুধু চিৎকার করছে। নিচু হয়ে তার সব কাপড় জমা করে পাশের একটা র‍্যাকে রেখে বলে,
“আমার কাপড়ের অবস্থা এমন কে করেছে? আপনি কি জানেন?”
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“যেতে বলেছি আমি।”
মাইরা বিরক্ত হয়। কিছুই বলে না এই লোক।
এগিয়ে যায় দরজার দিকে। একবার ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ইরফান ঘেমে প্রায় ভিজে গিয়েছে। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“ফ্যান, এসি, জানালা সব বন্ধ করে দিয়ে ঘেমে ঘেমে মাথা গরম করে ফেলেছেন, বুঝেছি। ফ্যান দিব?”
ইরফান চোখ মেলে তাকায়। মাইরার দিকে শান্ত চোখে চেয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“দরজা চাপিয়ে দিয়ে যাও, গো ফাস্ট।”
মাইরা ইরফানের দিকে অদ্ভুদভাবে তাকায়। এই লোকের হয়তো জ্বর এসেছে। কিন্তুু জ্বর আসলে তো মানুষের ঠাণ্ডা লাগে, আর ইনি ঘেমেছে।

ভাবনার মাঝেই ইরফানকে বেড থেকে নামতে দেখলে মাইরা দ্রুত বলে,
“যাচ্ছি যাচ্ছি, আপনাকে বের করে দিতে হবে না।”
কথাটা বলে এক দৌড়ে ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়।
ইরফান ওয়াশরুমে গিয়ে আরেকবার শাওয়ার নেয়। এরপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দরজা চাপিয়ে জানালা বন্ধ করে এসি ছেড়ে দেয়। এরপর একটা টাফলিন খেয়ে উল্টো হয়ে শুয়ে চোখ বুজে। ডান হাতের দু’আঙুলের সাহায্যে কয়েকবার কপাল ম্যাসাজ করে।

মাইরা শুদ্ধর মায়ের ঘরে এসে কাজা নামাজ পড়ে নেয়। কিছুক্ষণ পর শুদ্ধর মা তার ঘরে এসে মাইরার হাতে কফি দিয়ে বলে, ইরফানকে দিয়ে আসতে।” মাইরা মাথা নাড়িয়ে বলে,
“ফুপি তোমার ভাতিজা-ই আমাকে বের করে দিল। আর যাব না।”
শুদ্ধর মা শুনলেন না। জোর করে মাইরার হাতে কফির ধরিয়ে দিয়ে বলে,
“কফিটা শুধু দিয়ে আসবি, যা।”

মাইরা বুঝল তাকে যেতেই হবে। নয়তো ইনি ছাড়বে না তাকে। ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও কফির কাপ নিয়ে নিয়ে আবারও ইরফানের ঘরে যায়। দরজা ঠেলে দেখল, ভেতর থেকে লাগানো নয়। ভেতরে চোখ পড়লে দেখে পুরো ঘরময় অন্ধকার। মাইরা বিরক্ত হলো। এই লোকটা কেমন যেন। শুধু অন্ধকার করে রাখে ঘর। দরজা খুলে পা টিপে টিপে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। হাতের কাপ বেডসাইড টেবিলে রেখে ইরফানের দিকে তাকায়। মুখ উল্টোদিকে ঘোরানো। মাইরা বেডের এপাশ থেকে ওপাশে যায়। ভাবছে, লোকটা ঘুমিয়েছে না-কি তখনকার মতোই জেগে স্ট্যাচু হয়ে আছে। ডাকবে কি? নাহ থাক। আবার ধমক নয়তো থা’প্প’ড় খেতে হবে৷ যখন ইচ্ছে হবে তখন খেয়ে নিবে। এই ভেবে ঘর থেকে বেরতে গিয়েও কিছু একটা মাথায় আসে। আবারও পিছু ফিরে ইরফানের পাশে এসে দাঁড়ায়। একটু ঝুঁকে ইরফানের বড় চুলের মাঝে কয়েকটা চুল হাতে তুলল। এরপর ইরফানের দিকে তাকায়। সে বুঝতে চাইছে লোকটা ঘুমিয়ে না জেগে। কোনো সাড়া পেল না। ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ পায়। মাইরা বুঝল লোকটা ঘুমিয়েছে। হাতের চুলগুলো ছেড়ে উল্টো ঘুরে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বের হয়। এরপর দৌড়ে শুদ্ধর মায়ের ঘরে যায়।

“ফুপি তোমার কাছে কেচি আছে?”
“কি করবি?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“এমনি, তুমি দাও।”
শুদ্ধর মা খুঁজে দেখল এখানে-ওখানে। না পেয়ে বলল,
“পেলাম না তো। কোথায় যে আছে।”
মাইরার মন খারাপ হয়। মাথার আরেকটা উপায় আসতেই বলে,
“মোম আছে না?”
শুদ্ধর মা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“এই দিনের বেলায় মোম দিয়ে কি করবি?”
“দরকার আছে। একটু দাও না!”
শুদ্ধর মা টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা নতুন মোম বের করে মাইরার হাতে দেয়। এরপর রান্নাঘরের দিকে যায় রান্না বসাতে। এই মেয়ে কখন কি করে ও নিজেই জানে শুধু।
মাইরা মোম হাতে নিয়ে খুশি হয় ভীষণ। রান্নাঘরে গিয়ে মোম জ্বালিয়ে নিয়ে আসে। এরপর ধীরপায়ে ইরফানের ঘরের দিকে যায়। পিছন থেকে শুদ্ধর গলা পায়,
“এই দিনের বেলা মোম নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? আমাদের বাসায় কারেন্ট যায় না, সব ব্যবস্থা আছে।”
শুদ্ধর কথায় মাইরা পিছু ফিরে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,
“আপনাদের বিল বাঁচিয়ে দিচ্ছি ভাইয়া।”

শুদ্ধ হেসে ফেলল মাইরার কথায়। মেয়েটা আসলেই মজার। শুদ্ধর ফোনে কল আসলে সে কল রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যায়। শুদ্ধ বাইরে বেরিয়ে গেলে মাইরা দ্রুত ইরফানের ঘরে চলে যায়।
অন্ধকার ঘরে দিনের আলোর ছিটেফোঁটা ঘরময় ঝাপসা আলোকিত করে রেখেছে। মাইরা ধীরপায়ে আস্তে আস্তে পা ফেলে ইরফানের মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। কিছুটা ঝুঁকে ইরফানের মুখের সামনে মোম ধরে রাখে। মোমের দুলতে থাকা অগ্নিশিখার হলুদাভ আলো ইরফানের মুখে আঁচড়ে পড়েছে। ফর্সা মুখায়বে কেমন উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে। ইরফানের নিঃশব্দ শ্বাস-প্রশ্বাস মাইরা বুঝতে পারে না। তবে কি ভেবে যেন মুখে এক কোমল মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।
ভাবছে তার স্বামী এই দুনিয়ার সবচেয়ে ইনোসেন্ট একটা মানুষ, যারা এই লোককে চেনেনা, তারা তো মাইরার কথা বিশ্বাস-ই করবে না। এই লোক তাকে ঠাস ঠাস করে মেরে দেয়, এটা বিশ্বাসযোগ্য না, আপাতত তার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না। এতো ইনোসেন্ট মানুষ কিভাবে ওমন জ্বলন্ত চোখে তাকায়, আবার ঠাস ঠাস করে মেরে দেয়। ভেবে বা হাতে নিজের গাল বুলালো।

গল্প কবিতায় শুনেছিল, ঘুমোলে নাকি কিছু মানুষদের কাছে তাদের ব্যক্তিগত প্রিয় মানুষকে ভীষণ স্নিগ্ধ আর মায়াবি লাগে। আপাতত মাইরার কাছে ইরফানকে তেমনি এক স্নিগ্ধ পুরুষ লাগছে, নিষ্পাপও লাগলো। কিন্তুু মারের কথা মনে পড়লেই কেমন রেগে তাকালো ইরফানের দিকে। মনে মনে বিড়বিড় করল,
‘জীবনেও এই লোক ইনোসেন্ট নয়, ব’জ্জাত লোক এটা। তার খুব অপ্রিয় মানুষের লিস্টে এই লোকটা এক নম্বরে।’
কথাগুলো ভেবে নিজেই মুখ বাঁকালো। আবারও মুচকি হাসলো। তার জামাই অনেক কিউট, এখন সে চুল পুড়িয়ে দিয়ে চুল ছাটাবে এই লোককে,, তারপর তার বর টা কিউট ভিলন জামাই থেকে কিউট হিরো জামাই হয়ে যাবে।
কাঁপা দু’হাত এগিয়ে নিয়ে যায় ইরফানের দিকে। বা হাতে ইরফানের চুলগুলো ধরলো। ডান হাতের মোম এগিয়ে নিয়ে চুলগুলোয় ধরালে কেমন ছ্যানছ্যান শব্দ হয়। মাইরা নিজেই ভয় পেয়ে ছেড়ে দেয় চুল। ভীত হয়ে ইরফানের মুখের দিকে তাকালে দেখল ইরফান শান্ত, নীরব। একটুও নড়চড় নেই। বা হাত বুকে রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
এরপর আবারও এগিয়ে গিয়ে চুলগুলো মোমের সুতোয় জ্বলতে থাকা আগুনের সাহায্যে পোড়ায়, চোখ নামিয়ে বারবার ইরফানের দিকে তাকায়। ভীষণ ভয় পাচ্ছে মেয়েটা। কিন্তুু সে তো কাল রাতে প্রতিজ্ঞা করেছে এই লোককে এমন পা’গ’ল থেকে মানুষ বানিয়েই ছাড়বে।

সময় নিয়ে মাইরা তার কাজ শেষ করে। একটা সাইজে রেখেছে, যেন সেলুনে গেলেই খুব সুন্দরভাবে সাইজ করে আসতে পারে। পুড়িয়ে যাওয়া ছাই সব ইরফানের ঘাড়েই পড়েছে। মাইরা দুটো কারণে স্বস্তি পায়। একটা এই লোকের ঘুম গাঢ়, আরেকটা উল্টো হয়ে শোয়ায় সে কাজে সফল হয়েছে। এরপর সোজা হয়ে দাঁড়াতে নিলে ইরফান নড়েচড়ে ডান হাত টানা দিতে নিলে মাইরা ধাক্কা খেয়ে বিছানায় পাতাল হয়ে পড়ে যায়। ইরফান চোখমুখ কুঁচকে নেয়, তবে ঘুম ভাঙে না। মাইরার শরীরের কিছুটা তার গায়ের নিচে চাপা পড়ে।
মাইরা শুয়ে পড়েছে ঠিক আছে। কিন্তুু ব্যাপার টা হলো তার হাতে থাকা মোম তার গলার ভাঁজে পড়েছে, নিভে যায় নি এখনো। মোম এর গলে পড়া তরল তার গলায় টুপ করে পড়ে, জায়গাটা জ্বলে ওঠে, আগুন এর শিখা মাইরার চামড়া ঘেঁষে জ্বলতে থাকে। মাইরা নড়তে পারছে না। দু’হাত ইরফানের গায়ের নিচে পড়েছে। তার শরীরের উপর খানিকটা ইরফানের শরীরের ভর।

মেয়েটা নড়তেও পারছে না, কথাও বলতে পারছে না, দাঁতে দাঁত চেপে আগুনে পোড়া জায়গার জ্বলুনি সহ্য করছে। কথা বললে এই লোক যদি তাকে হাতের কাছে পায়, কাঁচাই খেয়ে নিবে। সে তো আকাম করেছে। যদিও তার মতে সে অনেক ভালো একটা কাজ করেছে।
নাকের কাছে কেমন মেয়েলি গন্ধ পেয়ে ইরফানের ঘুম হালকা হয়। ইরফান উল্টোপাশ থেকে সিধে হয়ে শোয়। মাইরা ছাড়া পেয়ে হতদন্ত হয়ে গলা থেকে মোম ছিঁটকে মেঝের দিকে ফেলে। তার গলা পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছে বোধয়। দ্রুত বেড থেকে নেমে দাঁড়ালে ইরফান আদোআদো চোখ খুলে মাইরার পৃষ্ঠদেশে ছড়িয়ে থাকা লম্বা চুলগুলোর দিকে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলে,

“এখানে কি করছ?”
মাইরার আত্মার পানি শুকিয়ে যায়। কোনো কথা না বলে ভো দৌড় দেয় ঘর থেকে। ইরফান বিরক্তি চোখে দেখল মাইরার দৌড়। বিড়বিড় করল,
“স্টুপিট বাঁদর।”
চোখ বুজে বা হাতে কপাল স্লাইড করে। কপালে অসংখ্য বিরক্তির ভাঁজ। পাশে তার ফোনে কল আসলে হাত বাড়িয়ে রিসিভ করে কানে দেয়।
“ইরফান?”
বাবার গলায় ইরফান গলা ঝেড়ে বলে,
“বলো।”
“তোমার সকালে এখানে এসে মিটিংয়ে অ্যাটেন্ড করার কথা ছিল। কোথায় তুমি?”
ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,
“তুমি ম্যানেজ করে নাও বাবা।”
“নিয়েছি। কিন্তুু তুমি কখন আসবে? বিকালের আগে আসার ট্রাই কর। আর্জেন্ট।”
“ওকে।”

বলেই কল কেটে দেয়। মেজাজ খা’রা’প লাগছে। সারারাত না ঘুমিয়ে এখন একটু ঘুমিয়েছিল, এই স্টুপিট এসে তাও ভেস্তে দিল। এই মেয়েকে যাস্ট নেয়া যায় না। কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করল, ঘুম নেই, আবারও পালিয়েছে।
বিরক্তির নিঃশাস ফেলে বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। ঘাড় বেয়ে ঝরঝর করে কেমন ধুলোর মতো কিছু পড়ছে মনে হলো। হাত বাড়িয়ে ঘাড় ঝেরে ফেলে। এগিয়ে গিয়ে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
আয়নায় সৃষ্ট নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ইরফান স্তব্ধ হয়ে যায়। স্থির চোখে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। চোখজোড়া থেকে যেন গরম লাভার ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখ বুজে দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি বাড়ছে। মনে পড়ল একটু আগে মাইরা তার ঘরে এসেছিল, খুব ভালো করে বুঝেছে এই কাজ কার। দু’পা পিছিয়ে আসে। রাগে আয়নার জোরে একটা লাথি বসায়। কাঁচ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ঝরে পড়ে। ইরফান পায়চারি করে এপাশ-ওপাশ। এগিয়ে গিয়ে বেডসাইডে টেবিল থেকে কফির মগ নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। আবারও খানিক পায়চারি করে। তীব্র রাগে শরীর কাঁপছে। চিৎকার করে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৫

“স্টুপিট গার্ল, আই সোয়ার, আই উইল যাস্ট কি’ল ইউ।”
এরপর গায়ে একটা শার্ট জড়িয়ে হনহন করে অত্যন্ত দৃঢ় পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। উদ্দেশ্য সেলুন, সাথে মাইরা।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ১৭