প্রেম ও অসুখ পর্ব ৮
নবনীতা শেখ
শ্বশুরবাড়িতে পা ফেলামাত্র সাঁঝের বুকের ভেতরটা ধক করে উঠল। পরনে মেরুন জামদানি, মাথায় একটা সোনালি জরিসুতোর দোপাট্টা। মুখের অর্ধেকটা ঢাকা তার।
সাঁঝ আড়চোখে এদিক-ওদিক সবদিকে তাকালেও, ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বামী মহাশয়ের দিকে নজর ফেলতে পারল না। কারণ? লজ্জা, জড়তা, অস্বস্তি, ভয়, অশান্তি, জীবনের অকস্মাৎ ঢেউ…
বাড়ির মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই একটা উঠান পাওয়া গেল। উঠানের মাঝে একটা শিউলিফুল গাছ। আর চারপাশে বেশ অনেকগুলো ঘর। দোতলা বাড়ি এটা। এত অদ্ভুত সুন্দর! এত নান্দনিক!
তারপর আচমকা সাঁঝকে উঠানের একপাশে সাজানো জায়গাটাতে বসানো হলো। সে একাই বসল এবার। এই দীর্ঘক্ষণ ধরে যেই খাম্বার মতো লোকটা তার সাথে ছায়ার মতো চিপকে ছিল, লোকটা এখানে নেই। আছে টুকটাক কিছু নিয়মাবলি!
কিছুক্ষণ পর ঊর্মি নামের এক মেয়ে উত্তরের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। তার পরনে এক মলিন পোশাক। রক্তলাল চোখদুটোয় উপচে পড়ছে ক্ষোভ। সে এগিয়ে এসে বলল,
-“বউ দেখব, সরো।”
দু-হাতে মানুষ সরিয়ে ঊর্মি এসে সাঁঝের সামনে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নতমুখী সাঁঝের দিকে। ওদিকে তার বাকি কাজিনেরা বাসর সাজাতে ব্যস্ত। ঊর্মির হাসি পেল খুব। সে এক চেয়ার টেনে ঠিক সামনে বসে পড়ল। চিবুকে হাত রেখে সাঁঝের মুখ উঁচুতে তুলে ফিসফিসিয়ে বলল,
-“মাশাআল্লাহ! আমার হৃদের বউ!”
এরপর আরও যত মানুষই বউ দেখতে আসুক না কেন, ঊর্মি সামনে থেকে সরল না। ধীরে ধীরে মানুষ বাড়তে লাগল। হাঁসফাঁস লাগছে সাঁঝের। তার অস্বস্তি আফিয়া বেগম বুঝতে পারলেন। ঊর্মিকে বললেন,
-“আম্মু, ওকে একটু তোর রুমে নিয়ে যা! আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি, খাইয়ে দিস। বেচারির সারাদিন ধকল গেছে খুব।”
ঊর্মি অস্বাভাবিকভাবে হাসে, মাথা নাড়ে। সাঁঝের একহাতে নরমভাবে ধরে তাকে উঠিয়ে নেয়। এগিয়ে যেতে লাগে নিজের রুমে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাঁঝকে নিয়ে সে দোতলার এক রুমে প্রবেশ করল। সাঁঝ পুরো রুমটায় নজর বুলিয়ে নিল। সবকিছু এলোমেলো.. খাটের ওপর ছড়িয়েছিটিয়ে আছে বইপত্র, ডায়ারি। ড্রেসিং মিররটার ওপর একটা কাপড় টেনে দেওয়া, আড়ালে তার কাঁচ ভাঙা। কাপড়চোপড় সব অগোছালো। মেঝেতে পড়ে আছে আরও কত কী!
ঊর্মি এক জোড়া জুতা এগিয়ে দিলো সাঁঝের দিকে। মিহি হেসে বলল,
-“তোমার তো বিয়ে ছিল। খেয়াল করোনি। সন্ধ্যে-বিকেলে ঝড় হয়েছে..”
সাঁঝ বিশ্বাস করতে চায় না,
-“আমাদের ওদিকে ঝড় হয়নি।”
-“তাহলে শুধু আমাদের এদিকে হয়েছিল হয়তো। তারপর বাসর সাজানো হলো..এই চক্করে আর রুম গোছানো হয়নি। তুমি জুতা পরে নাও। ভাঙা কাঁচ আছে।”
সাঁঝ পরে নিয়ে বলল,
-“আপনারও তো পায়ে বিঁধতে পারে..”
-“ন..না! আমাদের মতো মানুষদের পায়ে কাঁচ বিঁধে না। বাস্তবতা বিঁধে..বিষ হয়ে।”
শেষোক্ত বাক্যটা অস্পষ্টভাবে বলল ঊর্মি। সাঁঝ শুনতে পারল না। তাকিয়ে রইল ঊর্মির দিকে। পোশাক কোঁচকানো, এলোমেলো চুল, ঘর্মাক্ত মুখ! যেন সারাদিন বেশ পরিশ্রম গেছে তার। হুট করেই বিয়ে বলে.. সাঁঝ বিশেষ কিছু ভাবল না। ঊর্মি বিছানার সবকিছু ফ্লোরের একপাশে ফেলে রাখল। তারপর সাঁঝকে সেখানে বসাল। ফিক করে হেসে বলল,
-“তোমার আবার ওসিডি নেই তো? যেভাবে তাকিয়ে আছো!”
সাঁঝ মাথা নাড়ল,
-“নেই।”
-“আচ্ছা, একটু সহ্য করে নাও.. তারপর ওই যে দেখো, এই রুম বরাবর সোজা দক্ষিণে যেই রুমটা আছে.. ওটা তোমার।”
সাঁঝ এ-বার খানিকটা লজ্জাই পেল। কিছুক্ষণ পর খাবার এলে, ঊর্মি তাকে বলল,
-“আমি খাইয়ে দিই?”
-“আচ্ছা, আপু!”
সে সাঁঝকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগল। তারপর বলল,
-“তোমার বরকে দেখেছো? আমার ভাই লাগে। মামাতো ভাই। দেখেছ?”
সাঁঝ মাথা নাড়ল,
-“জি না, আপু।”
-“দেখোনি!”
-“নাহ।”
-“তুমি কিন্তু দেখতেও পিচ্চি একটা মেয়ে! বয়স কত তোমার?”
-“আঠারো।”
-“আসলেই তো পিচ্চি।”
ঊর্মি শব্দ করে হাসতে লাগল। সাঁঝও কিছুক্ষণের মধ্যে তার সাথে সহজ হয়ে এলো। খাওয়া-দাওয়ার পর তারা বেশ গল্প করল। এই গল্পের মধ্যে সাঁঝ জানিয়ে দিলো, তার যে আজ বিয়ে সেটা সে সকালেও জানত না। ঊর্মিও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে লাগল।
কিছুক্ষণের মধ্যে বরের বাকি কাজিনরা রুমে চলে এলো, এখন বউকে বাসরে নিতে হবে। বাক্যটা শুনতেই সাঁঝের সমগ্র শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। মন-প্রাণ জুড়ে কেমন জ্বালা করতে লাগল! একই অবস্থা ঊর্মিরও। ঊর্মির সাথে সাঁঝকে দেখে কাজিনদের মধ্যে দুয়েকজন ভীষণ চিন্তিত। কিন্তু সাঁঝকে স্বাভাবিক দেখে তারা আর আমলে নিল না।
এরমধ্যে যা হওয়ার ছিল না, তাই হয়ে গেল। ঊর্মির মন বদলে গেল। সাঁঝ যখনই ওদের সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছিল প্রায়, ঊর্মি ফট করে বলে বসল,
-“ওর একটু কাজ আছে রে। দুই মিনিট পর আয়। বের হ এখন।”
সাঁঝের হাত টেনে তাকে রুমের ভেতর রেখে ঊর্মি দরজা আটকে দিলো। সাঁঝ হতবিহ্বল হয়ে তাকাল,
-“কী হয়েছে, আপু?”
ঊর্মি সাঁঝকে নিয়ে রুমের অন্য কোণায় চলে গেল। সাঁঝের হৃদস্পন্দন সর্বোচ্চ গতিবেগে ছুটছে। শ্বাস প্রশ্বাস বেড়েই চলেছে। চাহনিতে অস্থিরতা। ঊর্মির মতিগতি তার কাছে ভালো ঠেকছে না। বুকের ভেতরের উথাল-পাতাল শব্দ যেন ঊর্মি শুনতে পেল। আর তারপর সব শান্ত করতে বলে উঠল,
-“তোমাকে চিট করা হয়েছে। তোমার হাজব্যান্ড তোমার চেয়ে একুশ বছরের বড়ো। তার বউ-বাচ্চাও আছে। তুমি তার দ্বিতীয় বউ। এখানে থেকো না.. পালিয়ে যাও। আমি সবার ভালো চাই।”
শেষ শেষ শেষ! যত স্বপ্ন-আশা এই বিগত কিছু ঘন্টায় সাজিয়ে ছিল সাঁঝ, সব যেন ধূলিসাৎ! সে কথা বলতে পারছে না। গলা ধরে আসছে। প্রচণ্ড চমকের দরুণ বিড়বিড় করে উঠল,
-“সংসারের গুষ্টির তুষ্টি!”
ঊর্মি যেন যা চেয়েছিল, তাই পেল। সাঁঝের কাঁধে হাত রেখে বলল,
-“রুমের বেড সাইডবক্সের ফার্স্ট ড্রয়ারে একটা মেডিসিন বক্স পাবে। ঘুমের ওষুধ আছে। পানির সাথে মিশিয়ে দিয়ো। এরপর বারান্দায় দেখবে করিডোর আছে। সেটা দিয়ে সোজা হাতের বাঁয়ে চলে যাবে। রাত এগারোটা-বারোটার মধ্যে কাজ সেড়ে ফেলো। বারোটার পর কলি.. মানে ছোটমামার মেয়ে বারান্দায় বসে বই পড়ে। বেরোতে পারবে না। আমি তোমার ভালো চাই।”
ঊর্মি আলমারি থেকে একটা কালো বোরকা ও হাবিজাবি কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসসহ সামান্য টাকা একটা ছোট্ট শপিং ব্যাগে দিয়ে সাঁঝকে ধরিয়ে দিলো। সাঁঝ বিশ্বাস করল ঊর্মিকে। ওই এক মুহূর্তের মধ্যে বাবা-মা, ভাই, স্বামী, শ্বশুরবাড়ির সব লোকসহ পুরো দুনিয়ার মানুষকে তার মিথ্যে মনে হলো। শুধু বিশ্বাস করল ঊর্মিকে। আর বিশ্বাস করেই তো বাঁশ খেলো!
শ্বশুরবাড়িতে প্রবেশ করামাত্র ঊর্মিকে দেখে সাঁঝ শীতল এক হাসি দিলো। উঠানের শিউলি ফুল গাছটাকে ভালোমতো দেখল। শীতের দিন যে কবে আসবে! এই ভাবনা নিয়ে মুচকি হাসল। তন্মধ্যে আফিয়া বেগমও সেখানে চলে এসেছেন। সাঁঝকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন। কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
-“মা! কেমন আছিস?”
সাঁঝ তাকে চেনে। উনি তার শাশুড়ি। সাঁঝও তাকে জড়িয়ে ধরল,
-“ভালো আছি, মা। তুমি ভালো?”
-“আমার মেয়ে আসছে। ভালো থাকব না?”
আফিয়া বেগমের চোখে পানি। ধীরে ধীরে উঠানে বাড়ির মধ্যে উপস্থিত থাকা বাকি সবাই এসে হাজির, একজন বাদে। সাঁঝের দাদাশ্বশুর! যৌথ পরিবার এটা। আবু বকর সাহেবের তিনছেলে, এক মেয়ে। বড়ো ছেলে রওশন আহমেদের দুই ছেলে অনয়, উদয়। মেজ ছেলে রমিজ আহমেদের এক ছেলে ও এক মেয়ে, অনিক ও আনিকা। ছোট ছেলে রাফিজের দুই মেয়ে কলি-কাকলি। ও মেয়ে মর্জিনার একটাই মেয়ে, ঊর্মি। ছোট বেলায় গাড়ি এক্সিডেন্টে স্বামী মারা যায় তার। তিন ভাইয়ের বড়ো আদরের বোন তাই তখন থেকেই এ বাড়িতে থাকেন।
সাঁঝের সামনে ইতোমধ্যে বাড়ির সব মেয়েরা হাজির। পুরুষেরা বাড়িতে নেই। বকর সাহেব বাড়িতে আছেন, তবে এখানে আসেননি। সম্ভবত রেগে আছেন।
সাঁঝ সবার সাথে টুকিটাকি কুশলাদি শেষে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল। সেদিন বাড়ি থেকে পালানোর পর আজ আবার এখানে ফিরে আসার কারণে তো বাড়িতে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধার কথা। অথচ কেউ একটা প্রশ্নও করল না। স্বাভাবিকভাবে নিল সব। যেন গতরাতেই সে নাইয়র গেছিল, আজ সকালে ফিরে এসেছে!
গুটিগুটি পায়ে সাঁঝ রুমের ভেতরে প্রবেশ করল। ভীষণ নিজের নিজের ঘ্রাণটা বুক ভরে টেনে নিল। কে যেন বলেছিল, এই বাড়িতে আর জীবনেও সে প্রবেশ করবে না! ভাবনাটা মাথায় আসতেই হেসে ফেলল সে। রুমের প্রতিটা কোণা ছুঁয়ে দিতে লাগল। জানালাগুলো খুলে দিলো। কল এলো সাঁঝের ফোনে। সাঁঝ জানে, এই মুহূর্তে কে কল দিতে পারে! ফোনে তুলে যখন দেখতে পেল, সেই ব্যক্তিরই কল, সাঁঝের হাসি বিস্তৃত হলো। কল রিসিভ করল সময় নিয়ে। ফোন কানে তুলতেই ও-ধার থেকে গম্ভীর আওয়াজ এলো,
-“পৌঁছেছো?”
সাঁঝের কপাল কুঁচকে গেল, ঠোঁটের আশেপাশে হাসির রেখা,
-“কীভাবে জানলেন?”
-“বলো।”
-“হ্যাঁ, আধ-ঘন্টা হয়েছে।”
-“তোমার রুমে আছো?”
-“বুঝলেন কী করে?”
-“হঠাৎ এলে যে? কী উপলক্ষে?”
হৃদ একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিচ্ছে না। প্রশ্ন এড়িয়ে পালটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে। সাঁঝ হাসল, নাটকীয়তার সাথে বলল,
-“কী করব সাহেব, এত স্বাধীনতা আর ভালো লাগে না। বিবাহিত মেয়ে মানুষ আমি। স্বামী ছাড়া রাতে ঘুম হয় নাকি?”
কী নির্লজ্জ কথাবার্তা! হৃদ নিজেই যেন বিস্মিত হলো। প্রশ্ন করে উঠল অবিলম্বে,
-“তবে টাঙ্গাইলে কেন? তোমার স্বামী তো ঢাকায়। আসো। ঘুম পাড়িয়ে দেই!”
আহ-হা! সে একটু লজ্জা-টজ্জা ছেড়েছে কি ছাড়েনি, স্বামী লোকটা যেন দ্বিগুণ নির্লজ্জতা দেখাতে তৎপর! এমতাবস্থায় সাঁঝ নিজ নাটকে স্থির রইলো,
-“আপনি আসুন, টাঙ্গাইলে! বাসরটা যেখানে সাজানো হয়েছিল। সেখানেই না-হয় সম্পন্ন হোক!”
হৃদ থেমে থেমে প্রশ্ন করল,
-“আর ইউ শিওর?”
সাঁঝ কোনো কথা বলল না, কল কেটে দিলো। দু-কান গরম হয়ে গেছে লজ্জায়। ধাপ বেরোচ্ছে। উফফ! কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে ঊর্মি এলো। অস্থিরভাবে হাঁটছে সে। রুমের ভেতরে প্রবেশ করার আগেই সাঁঝ বেড়িয়ে এলো দরজার সম্মুখে। চোখ স্থির, মেরুদণ্ড সোজা, বুকে প্রচুর সাহস আর গলায় তেজ,
-“কী হয়েছে, ঊর্মি?”
-“তুমি এখানে এসেছো কেন?”
-“বা-রে! আমার বাড়ি। আসব না?”
-“তোমার বাড়ি নয়, তুমি চলে গেছিলে..”
-“পুরোনো কাসুন্দি ঘাটতে যেয়ো না। তুমিই ফাঁসবে।”
ভয় পেল ঊর্মি। সেই ভয়ের ঊর্ধ্বে তার কষ্ট। সে বলল,
-“তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি।”
-“আমাকে ঠিক-ভুল বোঝানোর মতো তুমি কেউ নও, ঊর্মি।”
মুহূর্তেই ক্ষেপে উঠল ঊর্মি,
-“নাম ধরে ডাকছো কেন, মেয়ে? তোমার চেয়ে চার বছরের বড়ো আমি।”
-“তো?”
-“তো মানে? ভদ্রতা-জ্ঞান নেই নাকি?”
-“সেটা তো তোমার নেই।”
চোখ গরম করে তাকাল ঊর্মি,
-“এই মেয়ে! কী বলছ!”
-“ভাবি বলতে শেখো। তোমার আট বছরের বড়ো ভাইয়ের বউ আমি। সম্পর্কের দিক থেকে আমি তোমার বড়ো। সম্মান করো।”
ঊর্মি রাগে-দুঃখে সেখান থেকে চলে গেল। মেয়েটা এমন করছে কেন তার সাথে? এত কষ্ট কেন পাচ্ছে সে?
উদয় সাঁঝের এক বছরের ছোট দেবর। বিকেলে কলি-কাকলির রুমের পেছনের করিডোরে ঝোলানো বারান্দায় বসে দোল খাচ্ছিল সাঁঝ। আফিয়া বেগম আচার হাতে উদয়কে পাঠিয়েছে। ছেলেটা গতবার ভাবিকে ঠিকমতো দেখতে পায়নি বলে আফসোসে তিনদিন খেতে পারেনি। সেই দুঃখ আজও ভুলতে পারে না। কলেজ থেকে ফিরে এখন যখন জানতে পারল, সাঁঝ এসেছে! উদয় সব ছেড়ে-ছুড়ে সোজা এখানে হাজির।
সাদা কলেজ ইউনিফর্ম, কাঁধে ব্যাগ, কোলে আচারের কৌটা। সব নিয়ে সে সাঁঝের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসতে লাগল। সাঁঝ কপাল উঁচিয়ে বলল,
-“কীও বান্দা? কে লাগো?”
-“দেওর লাগি।”
-“ওহ হো! আসলটা? নাকি কাজিনটা?”
উদয়ের খুব মন খারাপ লাগল,
প্রেম ও অসুখ পর্ব ৭
-“আসলটা, ভাবি। লোকে বলে আমি নাকি তোমার জামাইয়ের কার্বন কপি। আর তুমি আমাকেই চিনলে না?”
সে একটা মোড়া টেনে সাঁঝের পাশে বসল। সাঁঝ তার মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
-“আহারে, বাচ্চাটা! থাক, কাঁদে না। তোমার চেহারার মিল আমি পেয়েছি। পুরো নাম কী যেন তোমার?”
-“উদয় আহমেদ রোদ।”
সাঁঝ মুচকি হাসল,
-“বাহ! অনয় আহমেদ হৃদ আর উদয় আহমেদ রোদ! দুই ভাই! ভালোই তো!”
আচ্ছা.. সাঁঝ ঠিক কবে চিনল তার স্বামীকে?