ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩০ (২)

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩০ (২)
মিথুবুড়ি

‘একটি পরিবারের প্রধান হলেন পুরুষ, যিনি সেই পরিবারের স্তম্ভ। যখন এই স্তম্ভ দুর্বল বা অচল হয়ে যায়, তখন পরিবারের উপর নেমে আসে চরম বিপর্যয়। ঠিক তেমনই রিচার্ডের ছোট পরিবারের স্তম্ভ ছিল তার বাবা। খুব সচ্ছল না হলেও তাদের পরিবার ছিল এক সুখী ও পরিপূর্ণ জীবনযাপনের প্রতীক। রিচার্ডের বাবা একটি ঔষধ কোম্পানিতে কর্মচারীর পদে চাকরি করতেন, আর মা ছিল একজন গৃহিণী।
‘কাকতালীয়ভাবে, রিচার্ডের মা-বাবা দুজনেই এতিম ছিলেন। ফলে আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যা ছিল একেবারেই সীমিত। রিচার্ড তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল না। তার আগেও তাদের পরিবারের এক নতুন সদস্য এসেছিল, কিন্তু জন্মের পরপরই সে মারা যায়। সেই শোকের কয়েক বছর পর রিচার্ডের জন্ম হয়, এবং তার আগমনে পরিবারটি আবার হাসিখুশি হয়ে ওঠে। তাদের জীবনের প্রতিদিন ছিল সুন্দর, সরল আর আনন্দময়।

‘তবে একটা কথা চিরন্তন সত্য সুখ ক্ষণস্থায়ী। তেমনি রিচার্ডের পরিবারের সেই সুখও বেশিদিন টিকল না। হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে গেল তাদের সাজানো সংসার। গতকাল রিচার্ড যে কামরুলকে খুন করেছে, আর যেই কাদেরকে তন্নতন্ন করে খুঁজছে, সেই কাদেরই ছিল রিচার্ডের বাবার বস। কাদের ছিল একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ও লোভী মানুষ। আর রিচার্ডের বাবা সাধারণ কর্মী হলেও, ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক। কোম্পানির ম্যানেজার কামরুলের সঙ্গে রিচার্ডের বাবার ছিল খুব ভালো সম্পর্ক।
‘ হঠাৎই দেখা যায় ছোট ছোট শিশু অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। সারাদেশে এ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এই রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব নিজ হাতে নিলেন রিচার্ডের বাবা। একদিন তিনি আবিষ্কার করলেন ভয়ঙ্কর এক সত্য। তাদের কোম্পানির ঔষধ তৈরির উপকরণে মেশানো হচ্ছে বেজাল, যা শিশুদের জন্য বিষের মতো কাজ করছে। এই তথ্য জানার পর থেকে রিচার্ডের বাবার জীবনে নেমে এল অন্ধকার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘রিচার্ডের বাবা সরল মনে সেই ভয়ঙ্কর সত্যটি কামরুলকে জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তিনি পুলিশের কাছে সবকিছু প্রকাশ করবেন। কিন্তু কামরুল, যিনি কাদেরের সঙ্গী ছিলেন, সেই খবর দ্রুত কাদেরের কানে পৌঁছে দেয়। ওই রাতেই কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাক চাপা দিয়ে রিচার্ডের বাবাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সেদিন মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে গেলেও রিচার্ডের বাবা সারাজীবনের জন্য শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। প্যারালাইজড হয়ে যান, এবং চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন তার আর কখনো সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শারীরিক অক্ষমতার কারণে কাদের তাকে সরাসরি খুন করার ইচ্ছা পরিত্যাগ করে।
‘ তবে সেই দিন থেকে রিচার্ডের পরিবারের উপর নেমে আসে এক দীর্ঘ অন্ধকার। রিচার্ড ছোট থেকেই বাবার নেওটা ছিল। মায়ের স্নেহ যতই গভীর হোক, বাবার প্রতি তার ভালোবাসা ছিল এক অন্যরকম। রিচার্ডের বাবা নিজেও ছেলের জন্য ছিলেন পাগল। কিন্তু যখন পরিবারের প্রধান স্তম্ভ অচল হয়ে যায়।তখন সমাজের অন্ধকার চেহারা একে একে প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই অন্ধকার থেকেই শুরু হয় রিচার্ডের পরিবারের পতন। সেখানেই জন্ম নেয় রিচার্ডের বেদনাময় গল্প একজন নিরীহ রেদোয়ান থেকে ভয়ঙ্কর গ্যাংস্টার রিচার্ড কায়নাত হয়ে ওঠার করুণ ইতিহাস।

‘রিচার্ড যখন বারো বছর পর গ্যাংস্টার রিচার্ড কায়নাত হিসেবে বাংলাদেশে ফিরে আসে, তখনই উদঘাটন করে তার বাবার এক্সিডেন্ট কোনো সাধারণ এক্সিডেন্ট ছিল না। সত্য উদ্ঘাটন করা রিচার্ডের জন্য কঠিন ছিল না, তবে রিচার্ড ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রতিশোধ নিতে এত দীর্ঘ সময় নেয়। রিচার্ডের বাবার সেই পরিকল্পিত দুর্ঘটনার পিছনে হাত ছিল কাদের, কামরুল, বাসেদ,আর শামসুলের। তাদের মধ্যে একজনকে রিচার্ড কিছুদিন আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় তাদের কোম্পানির মেয়াদোত্তীর্ণ বিষাক্ত ওষুধ খাইয়ে হত্যা করে।
‘প্রথমেই রিচার্ড কৌশলে তাদের দেশ ছাড়া করে দেয়। এরপর সেই কোম্পানিটিকে সরকারের হাতে তুলে দেয়, যেন বিষাক্ত ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু প্রতিশোধ এখানেই শেষ হয়নি। রিচার্ড আট বছর ধরে তাদের এক দেশ থেকে আরেক দেশে তাড়া করে বেড়ায়, শুধু মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে। রিচার্ড চাইলে এক মুহূর্তেই তাদের শেষ করে দিতে পারত, কিন্তু তা করেনি।

‘রিচার্ড জানত প্রতিশোধ মানে শুধু মৃত্যু নয়, বরং ধীরে ধীরে ভয়, হতাশা, এবং অন্ধকারের মধ্যে ফেলে তাদের মনোবল ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু এখন, এতদিনের খেলায় ইতি টানানোর সময় এসে গেছে। রিচার্ড আর অপেক্ষা করতে চাইছে না, তার বাবার সকল যন্ত্রণা এখন চূড়ান্ত প্রতিশোধের মাধ্যমে শেষ হবে।
‘বিটিআর বারটি সন্ত্রাসের এক কেন্দ্রবিন্দু। দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসী, ড্রাগ ডিলার, আর মাফিয়াদের প্রধান আস্তানা এটি। স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তার স্তর অত্যন্ত কড়া। রিচার্ড চাইলে সরাসরি আক্রমণ করতে পারে, কিন্তু এখনো নিশ্চিত হয়নি কাদের এখানে আছে কি না। বারের পেছনে রিচার্ডের কালো মার্সিডিস দাঁড়িয়ে আছে । ইতিমধ্যে রিচার্ডের গার্ডরা ছদ্মবেশে ভেতরে প্রবেশ করেছে। প্রতিটি কোণায় কৌশলে হিডেন ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। রিচার্ড গাড়িতে বসে মনোযোগ সহকারে প্রতিটি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছে। পাশে বসে লুকাস চুপচাপ থাকতে পারছিল না। অধৈর্য হয়ে আসফাঁস করছিল।

“বস।”
“হুম।”
“বলছিলাম, এভাবে বসে থাকার কী দরকার? আমরা কি কাউকে ভয় পাই নাকি? সরাসরি ভিতরে গিয়ে আক্রমণ করলেই তো হয়।”
‘রিচার্ড চোখ সরাল না স্ক্রিন থেকে। লুকাসের দিকে একপলক চোখ গরম করে তাকিয়ে জবাব দিল,
“ভেতরে গিয়ে অর্ধনগ্ন মেয়েদের ধাক্কা খেতে চাচ্ছো?”
‘লুকাস তৎক্ষণাৎ সোজা হয়ে বসে বলল, “না না না। আমি সুইটির ব্যাপারে খুবই লয়াল।”
‘রিচার্ডের ঠোঁটের কোণে হালকা একচিলতে হাসি ফুটল। বলল, “তাহলে চুপ করে বসে থাকো। সময় হলে জানতে পারবে। আমিও আমার বৌয়ের ক্ষেত্রে খুবই লয়াল। আই লস্ট মাই ভার্জিনিটি ফর হার।”
‘লুকাস ভ্রু কুঁচকে তেরছা চোখে তাকাল রিচার্ডের। পরপর ভেংচি কেটে মুখের ভেতর কিছু বিরবির করল, যেগুলো মুখ ফুটে বলার সাহস লুকাসের ছিল না। রিচার্ড তা লক্ষ্য করেও পাত্তা দিল না। হঠাৎ রিচার্ডের চোখ আটকে গেল স্ক্রিনে। বারের বেজমেন্টের ভেতরের ফুটেজে, যেখানে একটি ছোট খেলনা গাড়িতে করে পাঠানো হিডেন ক্যামেরা ধীরে ধীরে মেঝে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এক মুহূর্তের জন্য স্ক্রিনে কিছু অস্পষ্ট, রহস্যময় কিছু ধরা পড়ল। রিচার্ড মনোযোগ বাড়িয়ে স্ক্রিনে তাকাল। “লুকাস, দেখো এই ফুটেজ,” বলে আঙুল দিয়ে স্ক্রিনের কোণার দিকে নির্দেশ করল রিচার্ড।

‘লুকাস বিরবির বন্ধ করে দ্রুত ঝুঁকে পড়ল স্ক্রিনের দিকে। “এটা তো একটা মেয়ে… কিন্তু এখানে এই অবস্থায়?”
‘রিচার্ড কোনো প্রত্যুত্তর করল না। ঠোঁটের কোণে জমে থাকা রহস্য আরও ঘনীভূত হলো। রিচার্ড হঠাৎই গাড়ি স্টার্ট দিল। লুকাস হতবাক হয়ে বলল, “আরে বস! কোথায় যাচ্ছেন? কাদের ভেতরে আছে, এইমাত্র মেসেজ এলো!”
‘রিচার্ড গাড়ি থামাল না। দক্ষ হাতে স্টিয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে ঠাণ্ডা গলায় বলল, “অন্য আরেকদিন ধরব এটাকে। আজ উৎসব করা যাক।”
“মানে! কিসের উৎসব বস?” লুকাস কপাল কুঁচকালো।”
‘রিচার্ডের ঠোঁটের কোণে হালকা এক চিলতে হাসি ফুটল। “না চাইতেও অনেক বড় কিছু পেয়ে গেছি।”
“ম… মানে?” লুকাস দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে জানতে চাইল।”
‘প্রসঙ্গ পাল্টে দিল রিচার্ড,বলল ” ন্যাসোকে যে ইনফরমেশনগুলো কালেক্ট করতে বলেছিলাম, তার কাজ শেষ হয়েছে?”

“হ্যাঁ বস, সব রেডি।”
“সব ইনফরমেশন পেনড্রাইভে নেওয়া হয়েছে?”
‘লুকাস দ্রুত পকেট থেকে পেনড্রাইভ বের করে বলল,
“হ্যাঁ বস, এই যে।”
‘রিচার্ড এক হাতে পেনড্রাইভ নিয়ে স্টিয়ারিংয়ের দিকে চোখ রেখে বলল, “ভালো। এবার দেখো কীভাবে আমরা আমাদের উৎসব শুরু করি।”
‘লুকাস কিছুই বুঝতে পারছে না রিচার্ডের কথার মানে। লুকাসের ফেস রিয়াকশন দেখে ঠৌঁট কামড়ে হেসে গাড়ির স্পিড বাড়ালো রিচার্ড। হাইওয়ে ধরে ধুলো উড়িয়ে তুমুল বেগে ছুটে যাচ্ছে গাড়িটি।
“এবার আমি খেলোয়াড় না, কোচ হিসেবে নামব মাঠে।”
‘লুকাস ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল, “কাদের খেলাবেন, বস?”
‘রিচার্ড এক মুহূর্তের জন্য থেমে কড়া গলায় বলল,
“তোমাদের বেয়াইকে।”

‘লুকাস রিচার্ডের কথার মানে বুঝতে পারল না। তবুও উচ্চস্বরে হেসে উঠল রিচার্ডের সাথে। কিছুক্ষণের মধ্যে হাসি থেমে গেল লুকাসের। সরু গলায় বলল, “বস, আজ ন্যাসোকে সাথে আনলেন না কেন?”
‘রিচার্ড থেমে বলল,”ইবরাত অসুস্থ। এই মুহূর্তে ন্যাসোর ওর ওয়াইফের সাথে থাকা দরকার।”
‘লুকাস অবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর, পরপর হাসতে হাসতে বলল, “বস, আপনি খুবই দায়িত্ববান স্বামী হবেন।”
‘রিচার্ড ঠাণ্ডা গলায় বলল, “অলরেডি আই’ম.” অতঃপর হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষে দিল। চোখের ইশারায় লুকাসকে গাড়ি থেকে নামতে বলল। লুকাস হতভম্ব হয়ে নেমে গাড়ির উইন্ডো মিররের উপর ঝুঁকে বলল,
“বস, কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
“দায়িত্ব পালন করতে।” — বলে রিচার্ডের গাড়িটি টায়ারের কর্কশ শব্দ তুলে স্থান ত্যাগ করল তৎক্ষনাৎ। লুকাসের চোয়াল ফাঁক হয়ে গেল, অবাক চোখে গাড়িটিকে ঝড়ের বেগে চলে যেতে দেখল।

‘সকালের সেই ঘটনা অবলোকন হওয়ার পর গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে এলিজাবেথের। সেই সময়, তাকবীর এলিজাবেথের চিৎকারের শব্দে ছাদে গিয়ে এলিজাবেথকে এক কোণে বসে কাঁপতে দেখে তৎক্ষণাৎ ওকে রুমে নিয়ে আসে। তারপর থেকেই এলিজাবেথের জ্বর বাড়তে থাকে। তাকবীর সারা বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ চেক করলেও কিছু পায়নি। আশ্চর্যজনকভাবে, সেই সময়ের সকল ফুটেজ ডিলেট করা। আর সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণে থাকা গার্ডরাও সকাল থেকে নিখোঁজ।
‘জ্বরের কারণে এলিজাবেথের বারবার খুসখুসে কাশিতে ঘুম ভেঙে যায়। রাত তখন তিনটা। হঠাৎ কাশতে কাশতে ঘুম ভেঙে যায় এলিজাবেথের। উঠে পানি খেতে পাশে তাকাতেই একদম ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে এলিজাবেথ । পরপর কয়েকবার চোখ কচলিয়ে দেখেও নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না এলিজাবেথ। সামনে তাকাতেই আবারও একটা ধাক্কা খেল। গলায় পেচ ভেজে আসছিল। পরপর শুষ্ক কয়েকবার ঢোক গিলে এলিজাবেথ বলল, “ভালো মানুষ এসব কি?”

‘তাকবীর দরজার পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল গম্ভীর ভঙ্গিতে। চোয়াল ইস্পাতের মতো ধারালো ছিল ক্রোধে। এলিজাবেথ কিছু বুঝতে পারছিল না। ভয়ে শরীর থেকে ঘাম ঝরতে লাগল।
“ভালো মানুষ, কিছু বলছেন না কেন? কি হচ্ছে এসব? আর আমাকে ডাকেননি কেন?”
“আমি বারণ করেছি।”
‘রিচার্ডের ভারিক্কি স্বরে আবারও কেঁপে উঠল এলিজাবেথ। রিচার্ড এলিজাবেথের প্রকম্পিত চোখের পাপড়ির জোয়ায় চেয়ে অধর এলিয়ে হেসে বলল,
“কারণ তুমি ঘুমাচ্ছিলে।”
‘রিচার্ড এলিজাবেথের রুমের সোফায় বসে ছিল, খুবই আয়েশী ভঙ্গিতে, যেন এটাই ওর সাম্রাজ্য। এলিজাবেথের ঠোঁট ভাঙতে থাকে, অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় তাকবীরের দিকে। তাকবীর মাথা নুইয়ে রেখেছে, পরাজিত সৈনিকের মতো। রিচার্ড তার গায়ে চাপানো কালো কোট ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর তাকবীরের দিকে চেয়ে গুরুগম্ভীর গলায় বলল, “আউট।”

‘তাকবীর দাঁত চেপে, রিচার্ডের সামনে গিয়ে চোখ রাঙিয়ে ওর সময় সীমা বুঝিয়ে বেরিয়ে গেল। রিচার্ড সঙ্গে সঙ্গে দরজা লাগিয়ে দিল। এলিজাবেথের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। রিচার্ড দরজা লাগিয়ে ঠোঁটের কোণে বিদঘুটে হাসি ঝুলিয়ে পিছন ঘুরল। এলিজাবেথের অভ্যন্তর শিউরে উঠল। এক পা এক পা করে এগোতে থাকে রিচার্ড। এলিজাবেথ খামচে ধরে বিছানার চাদর। রিচার্ড একদম বিছানার কাছে চলে এলো। এলিজাবেথ এবার কেঁদেই দিবে, কিন্তু হঠাৎ রিচার্ড ঝুঁকে নিচ থেকে একটা ঝুড়ি তুলল। এলিজাবেথের অধর ফাঁক হয়ে যায়। এক মুহূর্তের জন্য ভিতরের ভয় কোথায় হারিয়ে গেল। ঝুড়ির দিকে তাকিয়ে এলিজাবেথ বিস্মিত স্বরে বলল,
“এটা?”
“মাফি! মায়ার হাসবেন্ড।”

‘এলিজাবেথ রিচার্ডের ক্রোধবিহীন স্বরে ভরকে গেল। একবার ঝুড়ির বিড়ালটার দিকে তাকাচ্ছিল, তো আরেকবার বালিশের পাশে ঘুমন্ত মায়ার দিকে। পরপর ঢোক গিলে বলল,”মায়ার হাসবেন্ড মানে?”
‘রিচার্ড হাই তুলতে তুলতে বিছানায় বসল। এলিজাবেথ সঙ্গে সঙ্গে এক লাফে পিছন সরে গেল। রিচার্ড এলিজাবেথের দিকে লক্ষ্য করে কপাল কুঁচকাল, পরপর নিরুদ্বেগভাবে, নিয়ে বলল,
“ভাবছি একটা মাফিয়া গ্যাং বানাবো। তাই মায়ার জন্য ওকে নিয়ে আসলাম। ওদের যথেষ্ট প্রাইভেসি দিবে ওকে?”
‘এলিজাবেথ এক মুহূর্তে হতভম্ব হয়ে গেল, অবাক চোখে রিচার্ডকে দেখল। হঠাৎ রিচার্ড ঝুঁকল বেডসাইড টেবিলের দিকে। এলিজাবেথের ভিতর এক শিহরণ ছড়িয়ে পড়ল, ভয়ে চোখমুখ কুঁচকে গেল। রিচার্ড টেবিলের উপর থেকে ঔষুধের পাতা হাতে নিয়ে দমাক স্বরে বলল, “এই মেয়ে, রাতে ঔষুধ খাওয়ানি কেন?”

‘দ্বিতীয় দফায় বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল এলিজাবেথ। হৃদস্পন্দন থেমে গেল, খৈ হারিয়ে তাড়াহুড়ো করে কোণায় কোণায় তাকাতে থাকে। অকুতোভয়ী হৃদিন্ড হৃদয়ে চেপে ধরল সংকীর্ণতায়।
“আপনি জানলেন কীভাবে? আপনি কি কোথাও ক্যামেরা লাগিয়েছেন? সত্যি করে বলুন।”
‘রিচার্ড মুখে কোনো উত্তর দেয় না। আকস্মিকভাবে এলিজাবেথকে একটানে নিজের কাছে এনে কোলে বসিয়ে দিল। এলিজাবেথের ছোট শরীরটা নিজের উরুর উপর শক্ত করে বসিয়ে কোমর পেঁচিয়ে ধরে। এলিজাবেথের পাতলা তনু জবুথবু করে কাঁপতে থাকে। রিচার্ড অপর হাতে এলিজাবেথের চিবুক শক্ত করে চেপে ধরে মুখ উপরে তুলল। খুব অধিকারবোধ দেখিয়ে বলল,

“ওপেন ইউর মাউথ।”
‘এলিজাবেথ খুলে না। নিশপিশ করতে থাকে ওর শরীর। রিচার্ড দ্বিতীয় বাক্য উচ্চারণ করল না। কৌশল কাজে লাগালো। কাপড়ের ফাঁক গলিতে ভিতরে হাত প্রবেশ করাতেই জমে যেতে থাকে এলিজাবেথ। রিচার্ড জোরে খামচি দিয়ে ধরল এলিজাবেথের উন্মুক্ত কোমরের পাতলা চামড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে ব্যথায় আঁতকে উঠে ঠোঁট মেলে দেয় এলিজাবেথ। এই সুযোগ রিচার্ড এলিজাবেথের চিবুক ছেড়ে ঔষধ নিজের মুখে ঢুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মিশিয়ে দিল নিজের ওষ্ঠদ্বয়, এলিজাবেথের ওষ্ঠের ভাঁজে। শরীর জুড়ে তরঙ্গ খেলে গেল এলিজাবেথের। রিচার্ড জানতো এলিজাবেথ ঔষুধ খেতে চাই না। যেমন আজও ঔষধ না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিল।
‘দীর্ঘ সময় পর রিচার্ড অবশেষে এলিজাবেথকে ছেড়ে দিল। ঘরের চারপাশ ভারি হয়ে উঠেছে দুজনের দ্রুত শ্বাসে। এলিজাবেথ ক্লান্ত, নিস্তেজ হয়ে রিচার্ডের বুকের ওপর ঠেস দিয়ে পড়ে রইল। গ্যাংস্টার বস রিচার্ডও হাঁপাচ্ছে, যেন নিজেকেও সামলে রাখা কঠিন।
‘এলিজাবেথের কণ্ঠে তিরস্কারের সুর, “আপনি আমার সঙ্গে এমন কেন করছেন?”
‘রিচার্ড গভীর শ্বাস নিল, চোখে আগুনের ঝলক। রুষ্ট গলায় বলল,“কজ ইউ আর মাইন, অ্যান্ড আই টেক হোয়াট’স মাইন।”

‘এলিজাবেথ ধাক্কা মেরে সরে গেল রিচার্ডের বুক থেকে। দমল না আজ। কান্না মিশ্রিত স্বরে চেঁচিয়ে উঠল,
“কোন অধিকারে আপনি আমাকে নিজের বলছেন? দুনিয়ায় মানুষ কী বলবে?”
‘রিচার্ডের সমুদ্র নীল চোখ দু’টো যেন আগ্নেয়গিরির লাভা হয়ে জ্বলতে শুরু করল। এক ঝটকায় থাবা মেরে ধরল এলিজাবেথের চুল। মুঠি পাকিয়ে নিজের মুখের কাছে এনে দাঁতে দাঁত পিষে গর্জে উঠল,
“জাহান্নামে যাক দুনিয়া, তার মানুষ, তার প্যাঁচানো নিয়ম। নিষ্ঠুরতার সমস্ত বাঁধন আমি ছিঁড়ে ফেলব। তুই শুধু আমার হবি, শুধু আমার, আর কিছু নয়। রিচার্ড কায়নাতের তুই, শুধুই তুই।”
‘এলিজাবেথের ভিতরটা বিষণ্নতায় ভরে গেল। অসহায় হয়ে রিচার্ডের বুকে আঘাত করতে থাকে, শব্দে ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে গেল মায়ার, বালিশের কোণে ভয়ে গুটিয়ে থাকে মায়া। ঝুড়ির ভেতর চুপটি করে পড়ে থাকে মাফি। এলিজাবেথ আবারও কাঁদতে কাঁদতে রিচার্ডের বুকে ঠেসে পড়ল। চোখের জলে ভিজে গেল দু’জনের মধ্যেকার অদৃশ্য দেয়াল। দ্বিধা-দোটানার স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রইল এলিজাবেথের লাস্যময়ী হৃদয়। কিন্তু আজ রিচার্ড সরালো না এলিজাবেথকে নিজের বুক থেকে। তেমনি করে আগলেও ধরল না। ভেতরে পৈশাচিক তীব্র ক্রোধ আর হিংস্রতা যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। বৃক্ষপটে বাতাসের মন্থর ছন্দের মতো শিথিলতা গ্রাস করছে রিচার্ডকে। চুপ করে রইল রিচার্ড, শব্দহীন।

“এলি জান।”
‘এলিজাবেথ কোনও উত্তর দিল না। শরীর ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে আসছে। জ্বর সৈন্যদল নিয়ে আবার আক্রমণ করেছে এলিজাবেথের ওপর। উত্তর না পেয়ে রিচার্ডের চিবুক শক্ত হয়ে গেল। পকেট থেকে পিস্তল বের করে চেপে ধরল এলিজাবেথের কোমরে। গম্ভীর কণ্ঠে ডাকল—
“এলি জান।”
“হুমম_’এলিজাবেথ ভয় পেয়ে মৃদু সুরে বলল। ওর গলা কাঁপছে, চোখে আতঙ্ক। রিচার্ড বাঁকা হাসল, সেই চিরচেনা নিঃশব্দ হাসি, যা রিচার্ডের ঠোঁটে থেমে যায়, দাঁত কখনও দেখা দেয় না।
“আমার পাপের রাজ্যে তোমার আগমন ছিল অপ্রত্যাশিত, রেড। তবে যেহেতু এসে গেছো, একটু পুড়ো আমার তপ্ত সরোবরে। এটাই এখানের নিয়ম।”
“আমি থাকতে চাই না আপনার পাপের রাজ্যে। আমি আমার মতো করে বাঁচতে চাই—আগের মতো প্রাণখোলা জীবনে।”
‘এলিজাবেথ নিভু স্বরে বলল, বিপরীতে রিচার্ড ঠোঁটের এক কোণে বাঁকা হাসি নিয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসে বলে উঠল,
“এভরি পার্ট অফ ইউ ইজ মাইন, মাই ফা°কিং ডার্ক রেড। অ্যান্ড ইউ উইল নেভার ফিল ইউরসেলফ এগেইন উইদাউট মি বাই ইয়োর সাইড।”

‘রিচার্ডের কণ্ঠে ছিল দাবির ঝাঁঝ, আর চোখে অন্ধকার কোনো তৃপ্তির ছায়া। মনের গভীর ব্যথায় চোখ বুঁজে ফেলল এলিজাবেথ। ওর ক্ষীণ প্রতিরোধ রিচার্ডের কাছে অর্থহীন। হঠাৎ করেই ঝুঁকে এলো রিচার্ড, শক্ত হাতে এলিজাবেথকে বালিশের উপর শুইয়ে দিল। তিরতির করে কেঁপে উঠল এলিজাবেথ, উঠে বসার চেষ্টা করতেই রিচার্ড পকেট থেকে গান বের করে এলিজাবেথের মাথার সাথে চেপে ধরল।
“নো মোর ওয়ার্ডস। জাস্ট স্লিপ। নাহলে গানের সবকটা বুলেট তোর মোটা মাথার ভেতর যাবে এখনই।”

‘শব্দগুলো এলিজাবেথের বুকে তীরের মতো বিঁধল। অপমান লাগলেও কোনো নড়াচড়া করল না। জোর করে চোখ চেপে ধরে রইল। রিচার্ড গান হাতে এলিজাবেথের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে রইল, যতক্ষণ না এলিজাবেথ ঘুমিয়ে পড়ল। জ্বরের কারণে ক্লান্ত শরীর এলিজাবেথকে অল্প সময়েই গভীর ঘুমে টেনে নিল। এলিজাবেথ ঘুমিয়ে যেতেই রিচার্ড ধীরে ধীরে পর পাশে বসল। ঝুঁকল এলিজাবেথের মুখের উপর। নিস্প্রভ, দ্বিধাহীন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দীর্ঘক্ষণ। সেই চাহনিতে মুগ্ধতা ছাড়া আর কিছু ছিল না। হঠাৎ রিচার্ড নিজের কঠিন সত্তার কাছে পরাজয় স্বীকার করে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল এলিজাবেথের কপালে। এতটাই হালকা যে এলিজাবেথ কিছুই টের পেল না। অতঃপর উঠে দাঁড়াল রিচার্ড। মায়া ততক্ষণে আবার ঘুমিয়ে গিয়েছিল। নিজের নতুন স্বামীকে দেখলোও না। বিছানার পাশে থাকা মাফিকে দেখে মৃদু হাসল। বলল, “টেক কেয়ার অফ মাম্মা, মাফি। ড্যাড ওয়েল কাম সুন।” এ কথা বলে নিজের ভেতরকার তোলপাড় চাপা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রিচার্ড, আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে।

“ইতিহাস বলে, ভিলেনের ভাগ্যে নায়িকা থাকে না। এলিজাবেথ আমার ছিল, আমারই থাকবে। এলিজাবেথের জীবনে একমাত্র আমি-ই হিরো, সেখানে ভিলেনের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।”
‘রিচার্ড সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল। হঠাৎ তাকবীরের কথায় থেমে ঘাড় বাকিয়ে পেছনে ফিরে তাকাল। ঠোঁটে ঝুলছিল সেই চিরচেনা আত্মবিশ্বাসী হাসি, যা চোখের সঙ্গে কথা বলে।
“আমি স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে রিচার্ড কায়নাত বরাবরই সাহসী। এবার ইতিহাস বদলাবে। এলিজাবেথের ডেসটিনিতে এই ভিলেনের নামই লেখা থাকবে। গল্পের শেষটা আমার ইচ্ছায় লেখা হবে, আর সেই ইতিহাস চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।”
‘তাকবীর তেড়ে এসে রিচার্ডের শার্টের কলার চেপে ধরল। চোখে আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলছিল ক্ষোভ। চাপা গলায় বলল,
“পেনড্রাইভটা কোথায়?”
‘রিচার্ড হেসে উঠল, ঠোঁটে সেই চিরচেনা হাসি, বলল,

“শা°লা, একটা পেনড্রাইভের জন্য নিজের বউকে অন্য কারোর সাথে দেখা করতে দিলি?”
‘তাকবীরের চোখে আগুন আরও বেড়ে গেল।
“কথার প্রসঙ্গ পাল্টাবি না, শা°লা। তুই নিজে পেনড্রাইভের কথা বলছিস। নেহাৎ বিড়ালের অজুহাত দেখিয়েছিস,আর তাছাড়া রাত করে কোনো অশান্তি চাই না আমি। নাহয় তোর মতো একশো রিচার্ড আমার বা°লও ছিঁড়তে পারত না এই পেনড্রাইভ দিয়ে।”
‘রিচার্ড তাকবীরের চোখে চোখ রেখে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“এবার আমি মাঠে, খেলোয়াড় না, কোচ হিসেবে আছি। খেলব না, খেলাব। দক্ষ হাতে গড়ে তুলব তোর মৃত্যুর হাতিয়ার, যা তোর শেষ সময়ের শুরু হবে।”
“তুই যেই মাঠে খেলানোর কথা বলছিস, সেই মাঠে ইতিমধ্যে কাঁপিয়ে সরে এসেছি আমি। আমি এখন শাসন করছি, আর তুই শুধু দেখে যাবি।”
‘রিচার্ড ঝাড়া মেরে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিয়ে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দিল তাকবীরকে। এক মুহূর্তের জন্য থমকে যাওয়া মস্তিষ্কটা ফিরে গেলো তার চিরাচরিত পৈশাচিক আত্মায়, যেখানে কোনো দয়া কিংবা অনুশোচনা ছিল না। চোখে জ্বলছিল এক অমিত শক্তির লেলিহান আগুন। যা সবকিছু পুড়িয়ে ফেলতে প্রস্তুত ছিল। রুক্ষ কর্কশ গলায় অর্নথক হাসি হেসে চাপা স্বরে বলল,

“ইউ ব্লাডি মনস্টার, আমার জিনিসের ভিআইপি গার্ড হিসেবে রেখেছি তোকে। আর শালা তুই কিনা মালি হয়ে ফুলের দিকে নজর দিস! উপরওয়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় কর, কারণ তুই এখনও মাটির উপর নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছিস।”
‘তাকবীর রিচার্ডের শক্তিশালী হাতের ধাক্কায় পিছনে সরে আসে কয়েক কদম। তবুও তেজ একটুও কমে না। ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে অদ্ভুত হাসি। ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলল,
“পাপড়ি ছিঁড়লাম না, তাতেই এভাবে জ্বলছিস? ছিঁড়লে তো খুঁজে পাওয়াই যেত না তোকে। শোন শা°লা মাদারবোর্ড ফুলকে কিন্তু মালিই কোলেপিঠে করে বড় করে তোলে। কথাটা ওটা ছিল না, যেটা বললাম। তাই বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। নইলে জায়গা মতো টাইট করে দিব!”
‘ক্রোধে মটমট করে উঠল রিচার্ডের ধারালো চোয়াল। হাত শক্ত হয়ে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠল। তবে হঠাৎই রিচার্ড ঠোঁটের কোণে বিদঘুটে হাসি ঝুলিয়ে ভিভ গালের ভেতর ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
“পাগলের সুখ মনে! শালা তোর তো শুধু মুখেই বড় বড় কথা। অলরেডি আই গিভ হার মাই ফ্রেশ ডিএনএ। তুই একটা লস প্রজেক্ট ছাড়া কিছুই না।”
‘রিচার্ডের কথার ভার আর বিদ্রূপ তাকবীরের বুকের ভেতর ছুরি চালিয়ে দিল। রিচার্ডের দিকে চেয়ে থুতু ফেলল তাকবীর। পরপর অবজ্ঞা করে বলল,

“পল্লি পাড়ায় জন্ম নেওয়া মানুষের মুখের ভাষা এমনই হয়।”
‘রিচার্ডের মস্তিষ্ক, নিউরন, শ্রবণ ইন্দ্রিয় সব কিছুই ঝাঁঝরা করে দিচ্ছিল তাকবীরের তীক্ষ্ণ কথাগুলো। তবুও, নিজেকে সংযত রাখল রিচার্ড। এই মুহূর্তে নিজেকে হারালে তাকবীর তার উদ্দেশ্য সফল হয়ে যাবে। তাকবীর ইচ্ছাকৃতভাবে রিচার্ডকে উসকাচ্ছে, রিচার্ডের ধৈর্য ভাঙার খেলায় মেতেছে।নরিচার্ড ঠাণ্ডা, দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকাল তাকবীরের দিকে। তারপর গভীর, ধীর কণ্ঠে বলল,
“তুই আমাকে ভাঙতে চাইছিস, তাই না? কিন্তু শালা, আমি পাহাড়। যত খুঁচাবি, তত তোর হাত কেটে যাবে। এখনো সময় আছে, তোর পায়ের নিচে জমি আছে দেখে শুকরিয়া আদায় কর।”
‘হাসল তাকবীর,হেসে বলল,”শালা তুই কে রে?”
‘রিচার্ড ক্রমাগত নিজের নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। দাঁত পিষে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“পূর্ণজন্ম হবে না জানিস তো? তবে এটা নিশ্চিত থাক, তোর এক জন্মেও তুই সুখ পাবি না। আমি তোর অস্তিত্বকে এমনভাবে মুছে দেব, যে দুঃখকেও তুই আপন বলতে পারবি না।”

_থেমে,
“কথায় না পেরে তুই আমার জন্মতে নামলি? এই তো আসল চুতি°য়ার পরিচয় দিলি! আমি এখন শুধু এটুকু ভাবছি, তোকে কীভাবে মারব। কিন্তু একটা কথা শিওর তুই মরবি আমার হাতে। আর তোর মৃত্যু এমনভাবে হবে, লোকে তোর নাম শুনলেই থুতু দেবে। খুবই বাজেভাবে মরবি, মনে রাখিস!”
‘তাকবীরের চোখেমুখে একটুও ভয়ের ছাপ ফুটল না। বরং দৃঢ় মনোবলে, নিজের মধ্যে অদম্য শক্তি অনুভব করে দু’কদম এগিয়ে এলো রিচার্ডের দিকে। রিচার্ডের উপর ঝুঁকে, ঠাণ্ডা কণ্ঠে হিসহিসিয়ে বলল,
“তার আগে, তুই নিজে তো বেঁচে থাক। একটু একটু করে তোর গোড়া কাটব আমি, আর তুই চেয়ে দেখবি, তোর শেষের শুরু আমি নতুন খেলোয়াড়।”
‘ফিচলে হাসল হাসল রিচার্ড। পরপর পকেট থেকে পেনড্রাইভটি বের করে তাকবীরের মুখের উপর ছুঁড়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩০

“তার আগে একটু ভালোভাবে দেখে নিস তো রেজিস্ট্রি পেপারের নামের বানান ঠিকঠাক ভাবে লিখেছিস কিনা।”
‘বলেই শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেল রিচার্ড। তাকবীরের কপালে গভীর ভাঁজ পড়ল, চোখের কোণে শঙ্কা জমলো। নিচ থেকে পেনড্রাইভ না তুলেই দ্রুত নিজের কক্ষে ছুটে গেল তাকবীর। আলমারি খুলে সেদিনের ফাইলটি বের করল, যেখানে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার রাখা ছিল। ব্যস্ততায় এতোদিন ধরা হয়নি। কিন্তু ফাইলে কোনো রেজিস্ট্রি পেপার নেই, বদলে ছিল একটি জাল জমির দলিল। তাকবীর সারা আলমারি খুঁজে ফেলল, কিন্তু কোথাও রেজিস্ট্রি পেপার মিললো না। শরীরের প্রতিটি অংশে ঘাম ঝরতে থাকে তাকবীরের মনে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক তখনই দারোয়ান ছুটে এসে একটি রেজিস্ট্রি পেপার তাকবীরের হাতে তুলে দিল। পেপারটির দিকে তাকাতেই চোখে অন্ধকার নেমে আসে। পায়ের নিচে শক্তি থাকে না, মাথায় রক্ত উঠে যায়। গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠল তাকবীর,
“বিয়ানননননন……..”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩১