পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৫০
সাদিয়া আক্তার
— এখানে জোহরা তাবাচ্ছুম কে??
প্রানী বিদ্যা বিভাগে পিয়ন এসেছে। ক্লাস নেই বিধায় সবাই আড্ডায় মশগুল কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকজন টিচার আসবে তাই কেউ বের হয়নি। পিয়নের কথায় পুনম পুরো ক্লাসে চোখ বুলায় দেখে আর কেউ দাড়ায় নাকি। নাহ আর কেউ দাড়ায়নি তাই পুনম দাড়িয়ে বলল — আমি কাকা কোনো প্রয়োজন,,
— হ্যা আপনাকে নাওয়াজ শেখ স্যার ডেকে পাঠিয়েছেন,,,
— আচ্ছা
পুনম বলেই পিয়ন নিজ গন্তব্যস্থল চলে গেলো পুনম ক্লাস থেকে বের হয়ে নাওয়াজ শেখের কেবিনের উদ্দেশ্যে যায়।
নক করতেই ভিতর থেকে অনুমতি আস — কাম ” নাওয়াজ শেখ পেপারে নজর রেখেই বলল।
— আসসালামু আলাইকুম স্যার,,
— হু ওয়ালাইকুম আসসালাম। মিস জোহরা তাবাচ্ছুম পুনম ডটার অব পারভেজ আহমেদ। আপনার কি কোনো ফুপু আছে??
হঠাৎই তার ফুপির জিজ্ঞাসা করায় ভরকে যায়। তবে হাসি মুখে বলে — হ্যা স্যার আছে আমার দুইটা ফুপি বিবাহিত,,,
পুনমকে আর বলতে না দিয়ে নাওয়াজ শেখ বললেন — স্টপ আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানা আমার কোনো ইন্টারেষ্ট নেই। আপনার এমাসের এবসেন্ডটা একটু বেশী হোয়াই??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— আসলে স্যার নতুন বিয়ে হয়েছে তো,,,
— বিয়ে হয়েছে তো দুনিয়ার সকল কার্যক্রম আপনার জন্য বন্ধ হ্যা
তাদের কথা বলার মধ্যে কেউ প্রবেশ করে
— আসব স্যার,,,
হুম এসো চন্দ্র স্যারের কথা শুনে পুনম পিছন ফিরে তাকায় চন্দ্রকে দেখে ঠোট ফুলায় চন্দ্র সেদিকে তাকায় না। নাওয়াজ শেখের দিকে তাকিয়ে বলল — আমাকে ডেকেছিলেন স্যার,,,
— হ্যা চন্দ্র তোমার বোন লাষ্ট কয়েকদিন বেশ গ্যাপ দিয়েছে লিভ অ্যাপলিকেশন দেয়ার কথা বললেও সেটা দেয়নি যাই হোক আমি ওর ফর্মে লাষ্ট গার্ডিয়ান হিসেবে তোমার নাম দেখেছি তাই আগে তোমাকেই জানালাম তুমি ভার্সিটি টপার আর তোমার বোন,,,
— স্যার ও আমার বোন না ওয়াইফ
চন্দ্রের কথায় থেমে গেলো নাওয়াজ শেখ। অবাক দৃষ্টিতে একবার চন্দ্র তো একবার মাথা নিচু করে থাকা পুনমের দিকে তাকায়
— সত্যি
— জ্বী স্যার আর ওর গ্যাপ গুলা আমাদের বিয়ের জন্যই হয়েছে আর আমার জানা মতে ভার্সিটি স্টুডেন্টস”রা গ্যাপ দেক বা না দেক এতে টিচারদের কোনো সমস্যা থাকার কথা না,।।
চন্দ্রর কথায় এদিক ওদিক তাকায় নাওয়াজ শেখ সে তো পুনমকে ডেকেছিল অন্য একটা কারণে পারভেজ নামটা তার অতি পরিচিত তার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্যই ডেকেছে তবে পুনম মুখে বিবাহিত ফুপি শুনেই তার মেজাজ খিচে গেছে। তাই তাকে কথা শুনানোর জন্য আর কিছু না পেয়ে এই পন্থা।
— আর কোনো কিছু বলবেন স্যার,,,
— হূ না বোথ অফ ইয়্যু গো নাউ,,
পুনমকে সাথে করে নিয়ে চন্দ্র বের হয়। পুনম মাথা নিচু করেই কিছু ভাবছে
— কিছু খাবে??
চন্দ্রের প্রশ্নে ধ্যান ভাঙ্গে পুনমের সে মাথা নাড়িয়ে বলে — হু আইসক্রিম,,
আইসক্রিম পাগলীর কাছ থেকে এটাই আশা করা যায় চন্দ্র আর কিছু না বলে ক্যানটিনে গিয়ে দুইটা স্যান্ডউইচ অর্ডার করে সাথে চা পরটা,,
চায়ে ডুবিয়ে পরটা পুনমের মুখে দিতে দিতে বলল
— একটা স্যান্ডউইচ মিহিকে দিবি আরেকটা ক্লাসের একফাকে খেয়ে নিবি আজ বেশ লম্বা ক্লাস চলবে,, আর একা একা বের হবি না
সুবোধ বালিকার মতো মাথা নাড়ে পুনম। চন্দ্র মুচকি হেসে বলে — লক্ষী জোহরা বিবি,,
তখনই পিছন থেকে ঝনঝন আওয়াজ হয় — চন্দ্র ভাই আপনি,,, ববিয়ে করেছেন,, এই মেয়েটা আপনার বোন না??
এলিনার কথায় খুব একটা ভাবান্তর হয়না চন্দ্রর সে পুনমকে খায়িয়ে নিজে খেয়ে উঠে দাড়ায়। পুনমের মুখ টিস্যু দিয়ে মুছে তাকে ক্লাসে যেতে ইশারা করে।।
পুনম চলে যেতেই চন্দ্র এলিনার দিকে তাকায় অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে চন্দ্র কিছু না বলে চলে যেতে নিলে এলিনা পথ আটকায় — আমার সাথে এমনটা কেনো করলেন??
বলেই চন্দ্রের হাত ধরতে নিলে চন্দ্র তৎক্ষণাৎ সরে গেলো। এলিনা বাড়ানো হাত গুটিয়ে নিল একটু আগেও তো ঐ পুনমকে দিব্বি খাইয়ে দিলো হাতে হাত রেখে কই তখন তো এরকম করল না।
— আমি তোমাকে আগেই ক্লিয়ার করেছিলাম রাইট যে আমি বিবাহিত,,
মাথা নিচু করে এলিনা। চন্দ্র কপাল কুচকে চলে গেলো তাকে দেখে মনে হলো সে বেজায় বিরক্ত তবে যাওয়ার থেমে এলিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— সো কল্ড ছ্যাকাখোরদের মতো আমার বউয়ের উপর আঘাত এনো না তাহলে চন্দ্রর ভয়ংকর রুপ দেখবে,,
চন্দ্রর কন্ঠের তীক্ষ্মতায় ভয় পেতে বাধ্য এলিনা। কিছু বললনা।
প্রহরের মধ্যম ভাগ আড়াইটার দিকে ক্লাস শেষ করে বের হয় পুনম মিহি। ভার্সিটির গেটের সামনে চন্দ্র শিহাবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেদিকে যায়। পুনমকে বিদায় দিয়ে মিহি চলে যায় হোষ্টেলে।
— কেমন আছো ভাইয়া??
— ভালা নাইরে পূর্ণ তোর বর আমগো আগে বিয়া কইরা বউ লইয়া ঘুরে আর আমি বর্তমানে চাকরির পিছনে ঘুরি,,,
চন্দ্র শিহাবের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
— তো ভার্সিটি কতৃপক্ষ থেকে অফার কি আমার একারই এসেছে নাকি,,
— হে হে ভাই বতর্মানে তো আমি বেকার।।
চন্দ্র শিহাবকে কিছু না বলে পুনমকে নিয়ে বাইকে বসে । — বাসায় এসো ভাইয়া,,
— তুমি না বললেও ঐ বেহায়া হাজির হবে,,
— দেখ চাদঁ মামা ইনসাল্ট করবি না,,
— হু তোর আবার ইনসাল্ট
মুখ বাকিয়ে বলে চন্দ্র বাইক স্টার্ট দেয়। — শা*লা ধান্দাবাজ নিজের যখন দরকার পরে তখনই ডাক পরে হুহ।।
বিড়বিড় করে বলে নিজের বাইক স্টার্ট দেয়।।
পুনম বাসায় এসেই আগে যায় ঢুকে ওয়াশরুমে বিছানায় পড়ে থাকা চন্দ্রর শার্ট প্যান্ট নিয়ে। চন্দ্রর কাপড় এখন বেশীর ভাগ পুনমই ধোয় মাঝে মাঝে চন্দ্র ধোয় রেনু মিনু বা ওয়াশিং মেশিনের কাপড় ধোয়া চন্দ্র পছন্দ করে না। আগে নিজে ধুইলেও এখন পুনম ধোয়।
চন্দ্রের কাপড় ধুয়ে একেবার গোসল সেরে বের হয় পুনম বালতি কোনো রকম বারান্দায় রেখে নামাজে দাড়ায়। পুনমকে নামাজে দাড়াতে দেখে চন্দ্র কিছু না বলে নিজেও গোসলে যায়।
নামাজ শেষে পুনম ছাদে যায়। কাপড় মেলে দিয়ে আসতে নিলে পিছন থেকে কেউ ডাক দেয়,,
— জ্বি কাকে ডাকছেন??
— আপনাকেই ডাকছি আপনি এখন ছাদে আসেন না কেনো??
— কেনো আপু আমাকে দিয়ে কি প্রয়োজন,,
— না আরকি জিজ্ঞাসা করতাম আপনি বাসায় কখন থাকেন,,??
মহিলার কথায় পুনম ভ্রু কুচকে তাকায়। পুনমকে তাকাতে দেখে মহিলা হেসে বলল — আসলে আপনাকে আমার ভাইয়ের জন্য বেশ পছন্দ,,,
— ও ম্যারেড
কারো গম্ভীর স্বরে সেদিকে তাকায় দুইজনেই। মহিলা হায়হায় করে বলল — সেকি এতো ছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে??
— আপনার ভাইয়ের জন্য যখন পছন্দ হয়েছিল তখন ছোট মেয়ে মনে ছিলো না,,
মহিলা আর কিছু বলার সুযোগ না পেয়ে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। মহিলাটি চলে যেতেই চন্দ্র পুনমের দিকে রাগী চোখে তাকায় তা দেখে পুনম ফিক করে হেসে দেয়।
— মাইষ্যের শুধু আমার বউয়ের উপরই নজর পরে আরে নাকে নাকফুল হাতে চুড়ি নজরে পরে না।। নাহ চন্দ্র দ্রুত এই বউকে নিজর বাচ্চাগাচ্চার মা বানিয়ে ফেল কোলে ট্যা টু নিয়ে ঘুরলে কেউ ফিরেও তাকাবে না।।
— ওহে শের “এ আলী সাহেব কি ভাবছেন,,??
চন্দ্র আনমনে বলে ফেলল — বউকে কিভাবে মানুষের নজর থেকে প্রটেকশন দেয়া যায়।।
— হয়েছে এখন চলেন খিদে পেয়েছে,,,
চন্দ্র পুনম নিচে চলে যায়। তারা যখন নামে তখন সবাই যে যার মতো খেয়ে দেয় নিজের ঘরে। পুনম চন্দ্র একসাথে খেয়ে নেয়।।
— আমি আসছি গেট লাগাও আর এখন ঘুমাবে ওকে মাই জোহরা,,
— আচ্ছা সাবধানে
চন্দ্র পুনমের কপালে চুমু দিয়ে চলে যায় কোচিং এর উদ্দেশ্যে। কয়েকদিন পর তার কোচিং এর আই এল টি এস স্টুডেন্টস “দের এক্সাম তাই তাদের প্রতি একটু বেশী মনোযোগী হওয়া দরকার তাই কয়কেদিন চন্দ্রের একটু বেশী চাপ যাচ্ছে দুপুরে খাওয়ার পরপরই বের হয় আসে সেই রাত দশটার পর।।
চন্দ্রর কাবার্ডে এলোমেলো কাপড় গোছগাছ করছে পুনম কালকের ধোয়া কাপড় গুলো ভাজ করে রাখছে হঠাৎই উপরের দিকে নজর গেলো তার নাগাল না পেয়ে সেমি উচু টুল নিয়ে এসে সেটাতে দাড়িয়ে দেখল একটা লকার সিস্টেমের তাক।
পুনম শাড়ির আচল থেকে চাবি নিল যেটা চন্দ্র বিয়ের পরদিনই বেধে দিয়েছে । চাবির গোছা থেকে সব চাবি ট্রাই করেও খুলল না লকারটা পুনম ভাবল চন্দ্র আসলে বলবে ঐটাতে কি আছে যেটার চাবি এখানে নেই।।
এগারোটা বাজে চন্দ্র আজ এখনো আসে নাই। পুনম একবার বারান্দায় তো একবার ঘরে পায়চারি করছে,,
একটু পরপর ফোনও করছে ধরছেও না কল। সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়ির সবাই সাড়ে দশটার মধ্যেই শুয়ে পড়ে।।
ঘড়ির কাটা বারোটার দিকে পৌছাতেই পুনম চন্দ্রর বাইকের শব্দ পায় পুনম দৌড়ে নিচে আসে। এসে দেখে চাদনী বেগম বসে আছে
— মা তুমি ঘুমাও নি
— নাড়ে মা ছেলেটা এখনো আসল না বাসায়,,
চিন্তিত স্বর চাদনী বেগমের। — এসেছে বাইক পার্কিং করে আসছে তুমি ঘুমাতে যাও,,
— আসুক দেখেই যাই ছেলেটাকে। সারাদিন দেখিনি
মুচকি হাসে পুনম তাদের কথোপকথনের মাঝে প্রবেশ করে চন্দ্র — আম্মু এখনো ঘুমাও নি
মায়ের ললাটে সযত্নে চুমু দিয়ে জিজ্ঞাসা করে চন্দ্র। — ছেলে এতোরাত পযর্ন্ত বাইরে থাকলে মায়ের কি ঘুম আসে,,
— সরি ঐ স্টুডেন্টসদের পরীক্ষা তাই সব গুছিয়ে আসতে একটু দেরী হয়ে গেলো,, রাতে খেয়েছ
— হু শুধু তুই আর পূর্ণ বাকি,,
চন্দ্র পুনমের দিকে তাকায় অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে।
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৪৯
— আচ্ছা তুমি ঘুমাতে যাও আমরা খেয়ে নিব,,
চাদনী বেগম চলে যেতেই চন্দ্র পুনমের দিকে তাকায়। গাল ফুলানো পুনমকে দেখে ঠোট বাকিয়ে হাসে চন্দ্র। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ফিসফিস করে বলে — ঝলসে দিবি নাকি,, হায় চলো একসাথে ফ্রেশ হই,,
— হু সেগুরে বালি
বলেই পুনম রান্নাঘরে দৌড় দেয়। চন্দ্র ঠোট কামড়ে হেসে নিজের ঘরে প্রস্থান করে ঘুমাতে যাওয়ার সময় নাহয় অভিমানির অভিমান ভাঙ্গাবে।।