প্রেমের সমর পর্ব ৪০
অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সুহার আর স্বচ্ছর বিয়েটা এগিয়ে আনা হলো।একদিনের মধ্যে তড়িঘড়ি করে করা হলো সমস্ত শপিংয়ের কেনাকাঁটা। সব কাজকর্ম গোছানো হয়ে গেলেও ঘাড়ত্যাড়া স্বচ্ছ সুহাকে ঠিক বিয়ের একদিন আগেই ছাড়বে বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে। এর আগে না। সুহা এই নিয়ে কেনাকাটা করে এসে একটা ছোটখাট ঝগড়াও করে নিয়েছে। অভিযোগ শুধু একটাই যে নিজের বিয়েতেই নিজে একদিনের জন্য অতিথি হয়ে উপস্থিত থাকবে?স্বচ্ছ অবশ্য নিজের জায়গা থেকে নড়চড় করেনি। যা বলেছে তাই! কাল দুপুরেই দিয়ে আসবে সুহাকে৷ সুহা এই দুঃখে সন্ধ্যা থেকেই থমথমে রূপ ধারণ করল। অবশেষে যখন দেখল পরিবেশ শীতল, বৃষ্টি আসার আগ মুহুর্তটা অনুভব করতে দৌড়ে এল ছাদে। এসেই ভাবতে লাগল স্বচ্ছর পাগলামো গুলো। এই যে তাকে যেতে দিচ্ছে না এটাও স্বচ্ছর৷ একটা পাগলামো বই কিছুই না। সুহা একদিক দিয়ে রাগ করলেও অন্যদিকে হাসে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে ছোটশ্বাস ফেলে এসব ভেবে। পরমুহুর্তেই জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আপনমনেই হেসে বলে উঠে,
“ আপনি একটা পাগল স্বচ্ছ! আপনার মতো একটা পাগল কপালে জুটিয়ে দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ বিধাতাকে। ”
স্বচ্ছ তখন মাত্রই ছাদে এসেছিল সুহাকে খুঁজতে খুঁজতে। বউ যে রাগ করেছে তা সে জানে। কিন্তু রাগ করে কোথায় উধাও হয়ে গেল তা নিয়েই চিন্তা। তাই তো খুঁজতে খুঁজতে এই অব্দি এল।অথচ আশপাশে অল্প ঝড়ো হাওয়ার আভাস তখন। আকাশে কালো মেঘে উপস্থিতির দরুন চাঁদের দেখা তো দূর একটক তারারও দেখা মিলল না বাতাসে তখন অদ্ভুব কর্দমক্ত বৃষ্টি বৃষ্টি ঘ্রাণ। সব মিলিয়ে মুহুর্তটা বৃষ্টির অগ্রিম বার্তার। প্রকৃতি তখন বর্ষণকে বরণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে রমরমা হয়ে। এই এত সুন্দর শীতল পরিবেশটাতে স্বচ্ছর মনটা আরেকটু ভালো হয়ে গেল যখন সে তারই বউয়ের মুখে এমন বিড়বিড় স্বরে কথাটা শুনতে পেল। স্বচ্ছ হাসে। একদম স্বাভাবিক ভাবেই ছাদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে বুকে হাত রাখল গম্ভীর মানবের রূপ নিয়ে। শুধায়,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ হে বিধাতা? আমার কপালে আস্ত এক প্রেমময় সুহাসিনীকে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।”
সুহা খেয়াল করে উঠেনি তখনও স্বচ্ছকে। প্রকৃতিতে ডুবে ছিল সে। কিন্তু এখন স্বচ্ছর কন্ঠে কথাগুলো শুনে চমকাল সে৷ সময়টা সন্ধ্যার একটু পরের মুহুর্ত। যার দরুণ ছাদের মৃদু আলোতে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। সুহা প্রথমে ভয় পেয়ে উঠলেও ঘাড় বাঁকা করে তাকায়। তাকিয়ে স্বচ্ছকে চাপা হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় সে। বলে,
“ ওভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসার মানে কি? ”
স্বচ্ছ বুকে হাত দিয়ে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে। শুধায়,
“ এই যে আমি একটা পাগল তাও একটা মেয়ের কারণে এই পরিণতি! ”
সুহা মুহুর্তেই ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠে,
“ কোন মেয়ে? ”
স্বচ্ছ হাসির স্বরে উত্তর করে,
“ জানো তুমি। ”
সুহা এগিয়ে দাঁড়ায়। বলে,
“ আমার ধারণা আপনি জম্মগতই পাগল স্বচ্ছ। আমার কারণে এই পরিণতি নয় বুঝলেন? ”
“তোমার কারণে বললাম কখন সুহাসিনী? ”
সুহা ভ্রু বাঁকায়। প্রশ্ন ছুড়ে,
“ অন্য কেউ? ”
স্বচ্ছ এবারে হাসে। একইভাবে তাকিয়ে বলে,
“ কষ্ট পাবে নাকি অন্য কেউ হলে? ”
সুহার টানটান গলার স্বর,
“ অতোটা ইমম্যাচিউরড নই আমি স্বচ্ছ! ”
“ ইমম্যাচিউরড নও বলেই বাবার বাড়ি যেতে দিচ্ছি না বলে মন খারাপ করে ছাদে চলে এসেছো।”
সুহা মুখ ফুলায়। ফের রাগ হয়। বলে,
“ অতিথিদের ও বিয়েতে দশদিন আগে আসতে বলা হয় স্বচ্ছ। আর আমি আমার বিয়েতে এটেন্ড করব কেবল মাত্র একটা দিন আগে। হাও নাইস! ”
“অতিথিরা ও তাদের বউ নিয়ে আনন্দে সময় কাঁটাবে সুহাসিনী, অযথা আমি কেন বউহীনা দুঃখে মরে যাব বিয়ের আগ দিয়ে বলো?”
“দুঃখে মরে যাবেন? বউহীনা কেউ দুঃখে মরে যায় শুনেছেন স্বচ্ছ? ”
স্বচ্ছ গর্বের সহিত উত্তর করল,
“কারণ এর আগে কেউ আমার মতো বউকে ভালোবাসে নি। ”
আচমকা স্বচ্ছর উত্তরটা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধরণীতে নেমে ঝুম বৃষ্টির বিচরণ। ভারী বর্ষণে মুহুর্তেই ভিজে কাক হওয়ার জোগাড় যেন। স্বচ্ছ সুহার হাত টেনে ধরে।বলে,
“নিচে চলো, বৃষ্টি পড়ছে। অসুখ বাঁধলে আবার আমার বিয়ে পিছাবে। ”
সুহার হঠাৎ কি হলো কি জানি। চোখ বুঝে নিল আপন মনে। ছাদের মৃদু আলোয় মেয়েটার ভেজা মুখে চোখ বুঝে থাকার দৃশ্যটা স্বচ্ছর কাছে নিদারুণ লাগল। হাত বাড়িয়ে সুহার গালে হাত রাখতেই সুহা নরম স্বরে বলল,
“ ভিজব স্বচ্ছ। ”
স্বচ্ছ মানল না। আঙ্গুল দিয়ে সুহার মুখে আঙ্গুল বুলিয়ে বলে,
“ ভিজবে না।অসুখ বাঁধবে সুহাসিনী। ”
সুহা মুখ ফুলায়। চোখ খুলে বলে,
“ আপনি চলে যান। ”
” না গেলে? ”
“ বাঁধা দিবেন না বৃষ্টিতে ভিজতে। ”
স্বচ্ছও আচমকা বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে যাওয়া রমণীটির দিকে তাকিয়ে মত পাল্টে ফেলল। স্নিগ্ধ মুখটায় চেয়ে হালকা ঝুঁকে চুমু আঁকল সুহার কপালে। মৃদু হেসে জবাবে বলল,
“ দিলাম না বাঁধা। ”
সুহা হাসে অল্প। চোখজোড়া বুঝে রাখা। মনোযোগ কখন বৃষ্টিতে ভেজায়। অথচ একটিবার যদি চোখ মেলে সে সামনের পুরুষটির চোখে তাকাত তাহলে বুঝতে পারল সে দৃষ্টিকে কতোটা প্রেম,কতোটা আগ্রহ, কতোটা মুগ্ধতা!সুহা তাকায় আরো সময় পরে। বৃষ্টিতে ভিজে চুপসে গিয়ে চোখ মেলে। সামনের পুরুষটির দৃষ্টি তখন তার মস্তিষ্ককে ভাবায়নি। নিজ মনে হাত বাড়িয়ে পুরুষটির ভেজা চুল ঝেড়ে দিয়ে বলে,
“ অসুখ বাঁধবে না এখন?ভিজছেন কেন? ”
স্বচ্ছ তখন অন্য মুগ্ধকায় ভেসে বেড়াচ্ছেে।যেন অন্য জগৎ এ। দৃষ্টি তার নিবদ্ধ একজনেতেই। সে একজনেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে স্বচ্ছ গাঢ় স্বরে বলে,
“ কারণ সুহাসিনীও বৃষ্টিতে মেতেছে। ”
সুহা হাসে মৃদু। কিছুটা এগিয়ে স্বচ্ছর সামনে পা উঁচিয়ে দাঁড়ায় নে।ছাদের মৃদু আলোতে নজর দেয় স্বচ্ছে গলার অ্যাডামস অ্যাপলে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে বলে উঠে,
“ দুইজনেই অসুখ বাঁধিয়ে বিয়ে করব অস্বচ্ছ সাহেব?”
স্বচ্ছ হাসে সুহার পাগলামো দেখে। অথচ মেয়েটা নিজেও জানে না নিজের কপালটা সে নিজের হাতেই খুঁড়ছে। এই যে সামনের পুরুষটির চোখে এতোটা মুগ্ধতা তারপরও এই পাগলামে দিয়ে পুরুষটিকে বোসামাল করার চেষ্টা করাটা কি ঠিক? স্বচ্ছ নির্নিমেষ চেয়ে থাকে। বৃষ্টিরা ছুুয়ে যাচ্ছে তার সুহাসিনীর শরীর। লেপ্টে গিয়েছে পোশাক। বর্ষণের শীতলতায় পাতলা মিহি ঠোঁট কেঁপে উঠছে একটু পরপরই৷ সাথে বৃষ্টির প্রবাহ বইছে মুখের সাথে সাথে অধরের উপর দিয়েও। স্বচ্ছ তা চেয়ে দেখে। এই মুহুর্তে এসে আপসোস হয় তার। একটাই বউ তার! ছুঁয়ে দেখার সাহস করে না সে।অথচ বৃষ্টিরা কি নিদারুন ভাবে অনুমতিবিহীন ছুঁয়ে দিচ্ছে তার প্রিয়তমাকে।স্বচ্ছ ইর্ষান্বিত হয়ে শুধায়,
“হিংসে হচ্ছে সুহাসিনী। বৃষ্টিকেও তুমি কত করে চাও, ছুঁয়ে যায় তোমার সমস্ত কায়া!অথচ কেবল আমারই অনুমতি জুটে নি তোমাকে ছোঁয়ার। ”
সুহা বোধহয় হাসে। শুধায়,
“ স্বামী হোন স্বচ্ছ। অনুমতি ছাড়াই আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে ছোঁয়ার। ”
স্বচ্ছ ঝুঁকে। সুহার কপাল কপাল ঠেকিয়ে বলে,
“ তুমি চাইছো আমি ছুঁয়ে দিই? ”
সুহা তখন পা উঁচু করে দাঁড়ায়। স্বচ্ছকে জ্বালাতে ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠে,
“ আমিই ছুঁই?আপনার গলাটা নামাবেন স্বচ্ছ? ”
স্বচ্ছর গলাটা ঝুঁকিয়ে রাখাই ছিল। যার দরুণ কষ্ট হলো না। সুহা নিজেই গলা আঁকড়ে জড়িয়ে ধরে মুখ উঁচু করে চুমু দিল স্বচ্ছর গলায়। একটা নয়! পরপর তিন চারটে। অন্যদিকে স্বচ্ছর তখন বেহাল দশা। গলা শুকিয়ে আসছেে। নারী অধরের ছোঁয়া পেয়ে অবাধ্য ইচ্ছেরা উঁকি দিচ্ছে মনের ভেতর। ঠোঁট কামড়ে ধরে স্বচ্ছ নিজেকে সামলানোর উদ্দেশ্যে। অথচ ধূর্ত সুহা স্বচ্ছকে জ্বালানোর উদ্দেশ্যে ঠোঁটজোড়া ধীরে ধীরে স্বচ্ছর ঠোঁটের দিকে আনল। স্বচ্ছ তখন সুহার কোমড় জড়িয়ে ধরে।রোধ হওয়া স্বনে বলে,
“দুটোদিন মাত্র। দুটোদিন আমায় কন্ট্রোলে থাকতে দিন জনাবা। এমন হলে তো পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে এখনই আপনাকে কাছে টানতে হবে আমার।”
আচমকা কথাটায় সুহা থেমে গেল রোবটের ন্যায়। এক মুহুর্তেই কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলে,
“ ওকে, দূরত্ব টানলাম। দুটোদিন আশপাশও ঘেষবেন না। ”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই প্রশ্ন ছুড়ে,
” ঘেষব না? ”
“ মুখও দেখবেন না। ”
“ দেখব না? ”
“ না।”
স্বচ্ছ হাসে এবারে ঠোঁট কামড়ে। বলে,
“ এত রাগ? ভালোবাসার বিনিময়ে মোঁছা যাবে জনাবা? ”
“ উত্তর? ”
সুহা চলে যেতে যেতে শুধাতে চায়,
“ রাগ নেই৷ ”
অথচ স্বচ্ছ যেতে দিল না। শক্ত করে সুহার কোমড় চেপে ধরে বলে,
“ রাগ না থাকলেও আমি এই মুহুর্তে আপনার রাগ মেটাতে চাইছি জনাবা। অর্ধেক উম্মাদ করে দিয়ে এখন পালাবেন না নিশ্চয়?”
কথাটা বলেই সুহার কম্পমান পাতলা মিহি ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্ত্বে নিল সর্বপ্রথম। পরমুহুর্তেই নিজের উম্মাদনা সামলাতে ব্যর্থ হয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিল সে। চলতে চলতে বাঁকা হাসে সে। মনে তখন অন্য চিন্তা। ভিন্ন চিন্তা! সুহা হালকা রাগে শুধায়,
“ এসব কি? ”
স্বচ্ছ যেতে যেতে উত্তর করে,
“ অপরিকল্পিত কাছে টানা। বহু কষ্টে নিজেকে এতগুলো দিন সামলে এসেছিলাম সুহাসিনী!প্ল্যান ছিল ভিন্ন, কিন্তু বাস্তবতাও আমায় ভিন্ন কিছুতে এনে ফেলেছে।স্যরি সুহাসিনী! মানিয়ে নাও বরং আজ। বহু তো মানিয়ে নিয়েছি আমি বলো?”
সুহার গলা শুকিয়ে আসে এবারে আসন্ন বিষয়টা বুঝতে পেরে। স্বচ্ছর দিকে তাকায় সে৷ কি বলবে বুঝে উঠে না। বাঁধা দিবে? না করবে?সুহা বারবার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজায়। কি বলবে কি বলবে ভাবতে ভাতেই স্বচ্ছ সুহাকে নিয়ে বাসায় এল। তারপর রুমে। মাঝে অবশ্য সিয়া দেখেছে তাদের এই অবস্থায় তবে স্বচ্ছ পাত্তা দেয়নি। রুমে এসেই বিছানায় ভেজা শরীরেই সুহাকে রাখতে সুহা সাহস করল কিছু বলার। কাঁপা স্বরে শুধায়,
“ দুটোদি…”
স্বচ্ছ বাঁকা হাসে। সুহার অযুহাত দেখে ঝুঁকে গিয়ে বলে,
“ বলেছিলাম প্রথমে। ভাবোনি তখন তা। এখন আর অযুহাত দিয়ে লাভ হবে না জনাবা।ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে।”
সুহা ফের বলতে লাগে,
“ আমি ভাবিনি আপনি এমনকিছুর কথা…”
সুহাকে বাকিটা বলতে দেওয়া হলো না৷ স্বচ্ছ তার আগেই ঠোঁটে আঙ্গুল রাখেে।হিসহিস স্বরে কেমন জড়ানো গলায় শুধায়,
” ভাবোনি যখন এখনও ভাবতে হবে না সুহাসিনী। নাও প্লিজ ফোকাস অন দি ক্রেজিন্যাস অফ ইউর পার্সোনাল ম্যাডম্যান’স মিসেস সুহাসিনী!”
কথাটা বলার সাথেই সাথেই স্বচ্ছ ঠোঁট ছোঁয়ায় সুহার জলসিক্ত মুখে, গালে, ঠোঁটে! আর্দ্র নরম ত্বকে একবার নয়,বারকয়েক চুমু এঁকে মুখ নামায় মেয়েটার গলার দিকে। উম্মাদনা ক্রমশ প্রবলতর হয়ে উঠে যেন। সুহা চোখ বুঝে নেয় লজ্জায়, সংকোচে, জড়তায়।স্বচ্ছ তখন হাসে। নিজের অস্থিরতার জানান দিতে মেয়েটাকে নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে নেয়৷ জানান দিতে থাকে নিজের এতদিনের বেসামাল অনুভূতির কথন!
ওপাশে ভিডিও কলে সাদাফের দাঁত কেলানো হাসির প্রতিচ্ছবি। এপাশে আবির গম্ভীর মুখ করে বসে আছে। যেন খুব সিরিয়াস সে। পাশে অবশ্য ছুটিও বসা। ছটি কিছুই বুঝে উঠে না। একবার ফোনের স্ক্রিন তো একবার সাদাফের দিকে তাকায় সে৷ আবির সে কৌতুহল বুঝে উঠেই বলে,
“ সাদাফের বাচ্চা সাদাফ! তোর জন্য বিয়ে করেও সংসার করতে পারছি না আমি। সন্ন্যাস জীবন কাঁটানো লাগতেছে। তুই এক্ষুনি সবটা খুলে বলে সব ঠিক করবি আর নয়তো ফিউচারে তোর আর নিধির বিয়েতে একমাত্র বিলেইন আমি থাকব। ”
সাদাফ এবারেও হাসে। তবুও বন্ধুর সংসারের প্রতি মায়া দেখিয়ে সবটুকু ঘটনার বিশ্লেষণ করে ছুটির কাছে। তার অনুভূতি ব্যবহার করার কথাটা যে পুরোপুরি সত্য নয় তাও বুঝায় এবং এটা যে সাদাফেরই প্ল্যান ছিল তাও!অথচ তবুও ছুটির মুখে দেখা গেল এক তাচ্ছিল্যময় হাসি। আবির তা খেয়াল করে। সাদাফ ফোর রেখে দিলেও শুধায়,
“ বিশ্বাস হয়নি সাদাফের কথা? তবুও তোর মনে হচ্ছে আমি তোর অনুভূতি ব্যবহার করেছি?”
ছুটি হেসে বলে,
“ করেননি বলছেন?”
আবিরের রাগ হয়। এত চেষ্টা করছে মেয়েটার ভুল ভাঙ্গাতে। অথচ ফলাফল শূণ্য! ছুটি তো সরাসরি তাকে কিছু বলবেও না। ঘাড়ত্যাড়া।আবির রাগে দাঁতে দাঁত চাপে।বলে,
” করলে আমি প্রথমেই করতাম। ”
” হয়তো তখন প্রয়োজন পড়েনি। ”
আবির এই পর্যায়ে নিজের স্বীকারোক্তি রাগ নিয়েই জানাল,
“ তোর প্রতি অনুভূতি আমার অনেক আগ থেকেই ছিল ছুটি। কাজেই যার প্রতি অনুভূতি আছে তার অনুভূতি নিয়ে স্বার্থ পূরণ করব এতোটা নিচে নামতে পারিনি এখনও।”
ছুটি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসে৷ বলে,
“অনুভূতি ছিল?অনেক আগ থেকেই?হাস্যকর শোনাল আবির ভাই।”
আবিরের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। দাঁতে দাঁত চাপে সে৷ শান্ত হয়ে চেয়ে থাকেে।একটা মেয়েকে আর কিভাবে সে মানাবে? এর চাইতে সরল বোধহয় আবিরের দ্বারা হওয়া সম্ভব নয়। তার শান্ত চাহনি দেখেই ছুটি ফের বলল,
“ অন্য একটা মেয়েকে গুরুত্ব দিলেন, অন্য একটা মেয়ের প্রতি অনুভূতি রাখলেন, এতো প্রায়োরিটি দিলেন, লুকিয়ে চুরিয়ে মেয়েটাকে কল করে, ম্যাসেজ করে ভালবাসা প্রকাশ করলেন!তার সামনে আমার প্রতি আপনার সবসময়ই বিরক্তি, অবহেলা ছাড়া কিছুই দেখিনি। যেন তাকে পেলে আপনার কিচ্ছু লাগে না। অথচ এখন বলছেন আমার প্রতি আপনার অনুভূতি অনেক আগ থেকে?হাস্যকর নয় আবির ভাই?”
আবির ভ্রু কুঁচকায়।কোন মেয়ে? কিসের কথা? কার সাথে সন্দেহ করে বসে আছে এই মেয়ে? আবির ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠে,
প্রেমের সমর পর্ব ৩৯
“ সন্দেহ করছিস? ”
ছুটি ফের হেসে বলে,
“ নিজের চোখেই তো দেখেছিলাম আপনি কল করেছিলেন মেয়েটাকে আবির ভাই! ভালোবাসার কথাও পাঠিয়েছিলেন। ”
আবির এই পর্যায়ে চোখ লাল করে তাকায়। ছুটির বাহু আঁকড়ে ধরে রাগত স্বরে বলে,
“ আমি? কাকে? কোন সে মেয়ে?”