ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩২
মিথুবুড়ি
‘দিয়া বাড়ির পাশের খোলা জায়গায় রাজনীতির এক বিশাল সভার আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের আমেজে সমাজকল্যাণ ক্লাব তাদের খেলা পরিবেশন করছে। সেই মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত মিনিস্টার তাকবীর দেওয়ান। যিনি স্টেজে বসে খেলা উপভোগ করছেন। ঠোঁটে অমায়িক হাসির এক চিলতে রেখা।
‘মাঠের খেলা জমে উঠেছে দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। চারপাশে পুলিশি নিরাপত্তা আর সাংবাদিকদের ভিড়। পেছনের বিশাল স্ক্রিনে খেলার প্রতিটি মুহূর্ত তুলে ধরা হচ্ছে।একদিকে মাঠের উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে তাকবীরের শান্ত দৃঢ় উপস্থিতি সব মিলে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তবে হঠাৎই ঘটে গেল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। মাঠের খেলা থেমে গেল মুহূর্তেই। খেলোয়াড়রা চোখ বড় বড় করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। দর্শকদের মাঝেও শোরগোল আর ফিসফাস শুরু হলো।
‘তাকবীর ভ্রু কুঁচকে পিছন ফিরে তাকাল। মুহূর্তেই মুখের অমায়িক হাসি মুছে গিয়ে বদলে গেল কঠিন এক অভিব্যক্তিতে। দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে রাগ আর উত্তেজনার ছাপ স্পষ্ট হলো। বিশাল স্ক্রিনটি হ্যাক করা হয়েছে। খেলার পরিবর্তে সেখানে দেখানো হচ্ছে একটি ডকুমেন্টারি। যা মাঠে উপস্থিত সবার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে কিছু চাঞ্চল্যকর ছবি আর তথ্য। যা দেখে তাকবীরের মুখ আরও কঠিন হয়ে উঠছে। সভার পরিবেশ বদলে যায় মুহুর্তেই। কেউ জানে না এই ডকুমেন্টারি কে বা কেন দেখাচ্ছে।
‘স্ক্রিনে ভেসে উঠল তাকবীরের একটি ছবি। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট,চোখে অদ্ভুত এক কঠোরতা। এরপরই শুরু হলো আরেকটি ভিডিও। তাতে দেখা গেল, তাকবীর একদল বিশালদেহী কালো বিদেশির সঙ্গে তর্কে লিপ্ত। কথায় উত্তেজনা তুঙ্গে উঠতেই তাকবীর পকেট থেকে রিভলভার বের করে ঠেকিয়ে দিল এক বিদেশির মাথায়। দর্শকেরা স্তব্ধ! মুহূর্তের মধ্যে তাকবীরের এসিস্ট্যান্ট রেয়ান সামনে এগিয়ে এসে তাকবীরকে পেছনে টেনে নেয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘এই ভিডিও শেষ হতে না হতেই শুরু হলো আরেকটি, যা পুরো সভায় বিস্ফোরণের মতো শোরগোল তুলল। স্ক্রিনে ভেসে উঠল তাকবীরের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব। তথ্য অনুযায়ী তাকবীর বর্তমানে ষোলশ মার্কিন মিলিয়ন ডলারের মালিক। এই সংখ্যা একজন বাংলাদেশি মন্ত্রীর জন্য এতটাই অসম্ভব যে জনতার মধ্যে ফিসফাস বাড়তে থাকে।তাকবীরের মুখে কঠিন চাপা উত্তেজনা। চোখে রাগ আর বিভ্রান্তির ছাপ। সভার পরিবেশ ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। মাঠের খেলা এখন অতীত। আর এই ডকুমেন্টারির প্রকাশনা এক অভূতপূর্ব রহস্যের দ্বার খুলে দিল সকলের মাঝে।
‘তাকবীর চারপাশের সন্দেহমিশ্রিত দৃষ্টিতে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রেয়ান দ্রুত গিয়ে ইলেকট্রনিক সিস্টেমটি বন্ধ করে দেয়।
সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিন অন্ধকারে ডুবে যায়। কিন্তু এই সাময়িক স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। তাকবীর মাথা তুলে সামনের রাস্তায় তাকাতেই চোখ পড়ল একটা কালো মার্সিডিসের ওপর। গাড়িটি স্থির দাঁড়িয়ে। যেন কারোর জন্য অপেক্ষা করছিল। তাকবীরের দৃষ্টি গাড়ির দিকে পড়তেই জানালার গ্লাস ধীরে ধীরে নামল। উদ্ভাসিত হলো রিচার্ডের বিদঘুটে, আত্মবিশ্বাসী হাসি। রিচার্ডের চোখে ছিল একরকমের ঠান্ডা তাচ্ছিল্য, যা মুহূর্তেই তাকবীরের রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সামলানোর চেষ্টা করল তাকবীর।
‘রিচার্ড দূর থেকে ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু হাসল। অতঃপর ঠোঁট নাড়িয়ে বিরবির করে বলল, “এখন তোর নামমাত্র বৌকে চুমু খেতে যাবো আমি।” কথাটা শুনতে পেল না কেউ, কিন্তু ঠোঁট নাড়ানো দেখে বুঝতে সময় লাগল না তাকবীরের। রাগে শরীর কাঁপছিল তাকবীরের। রিচার্ড ঠান্ডা মাথায় এক ঝলক তাকিয়ে ধুলো উড়িয়ে গাড়ি নিয়ে স্থান ত্যাগ করল তৎক্ষনাৎ তাকবীর মুষ্টিবদ্ধ হাত আরো শক্ত করে ধরে রাখল।
‘প্রকৃত খেলোয়াড়রা কখনো শূন্য হাতে মাঠে নামে না। তেমনি রিচার্ডও এবার মাঠে নেমেছে হাতে পর্যাপ্ত প্রমাণ নিয়ে। তবে সত্যের শীর্ষে পৌঁছানো এখনও বাকি। রিচার্ডের লক্ষ্য ছিল নিখুঁতভাবে আঘাত হানা। কিন্তু অপ্রত্যাশিত এক পরিস্থিতিতে রিচার্ড আর অপেক্ষা করল না। ওর ভিতরের ক্ষিপ্ততা আরো দ্বিগুণ হয়ে উঠে। আজকের প্রোগ্রামে স্ক্রিন হ্যাকের মূল কারিগর রিচার্ড নিজেই। এমনকি তাকবীরের গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোর খোঁজও রিচার্ড-ই বের করেছে। রিচার্ড এই কারণেই ন্যাসোকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকা অবস্থায়, এবং পরবর্তীতে লুকাসকে দিয়ে ফোনে যে অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠিয়েছিল ন্যাসোকে সেটাও তাকবীরেরই ছিল। এগুলো দিয়েই সেদিন রাতে রিচার্ড তাকবীর কে ব্ল্যাকমেইল করে এলিজাবেথের কাছে গিয়েছিল। তবে বোকা তাকবীর ভাবতেও পারেনি রিচার্ড তার কাছে এক্সট্রা কপি রেখে দিয়েছিল।
‘রিচার্ড অনেক কিছুই উদঘাটন করতে পারলেও অনেক কিছু রিচার্ডের কাছে এখনো অস্পষ্ট। কারণ তাকবীরের প্রতিটি চাল এতটাই সূক্ষ্ম আর কৌশলী। রিচার্ড জানে, এই লড়াইয়ের আসল খেলা এখনো শুরু হয়নি। তবুও এবারের খেলা জমজমাট হবে।
‘রিচার্ডের চেহারায় আজ একধরনের অদ্ভুত উজ্জ্বলতা। একমনে স্টিয়ারিং ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দেওয়ান মঞ্জিলের পথ ধরে। উইন্ডো মিরর খোলা থাকায় সিল্কি কালো চুলগুলো হাওয়ায় উড়ছে। আর খোঁচা খোঁচা চুল এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে রিচার্ডের সমুদ্র-নীল চোখজোড়া। ড্রাগনের ট্যাটু খচিত হাত দিয়ে স্টিয়ারিং দক্ষতার সঙ্গে চালাচ্ছে রিচার্ড। তবে হঠাৎ করেই পিছন থেকে ভেসে এলো টায়ারের কর্কশ শব্দ। রিয়ারভিউ মিররে তাকালে রিচার্ড দেখতে পায়, তাকবীর এক ব্লু বাইকে শিকারীর মতো ছুটে আসছে রিচার্ডের গাড়ির পিছু পিছু। মুহূর্তেই রিচার্ডের চিবুক শক্ত হয়ে যায় আর চোখে ঝিলিক দিয়ে উঠে ক্ষোভ আর প্রতিশোধ। গিয়ার বদলে স্পিড বাড়িয়ে রিচার্ড নিজেকে প্রস্তুত করল আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে।
‘ফাঁকা হাইওয়েতে শুরু হয় তুমুল রেস। কালো মার্সিডিস আর ব্লু বাইক। দুটোই শিকার আর শিকারীর খেলায় মত্ত। রাস্তার বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তেজনা। রিচার্ড আর তাকবীর দুজনেই এমন খেলোয়াড় যারা জিততে জন্মেছে, হারতে নয়। আজও কেউ পিছু হটতে রাজি নয়। তবু রেসের শেষদিকে তাকবীরই এগিয়ে যায়, রিচার্ডের মার্সিডিসকে পিছনে ফেলে অনেকটা দূরে। কিন্তু একেবারে চলে যায় না। কয়েক গজ গিয়ে রাস্তার মাঝখানে বাইক থামিয়ে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়ায়। চিবুকে তীক্ষ্ণ গাম্ভীর্যের ছাপ।
‘দূর থেকে রিচার্ড তাকিয়ে হেসে উঠল। স্পিডোমিটারের কাঁটা তখন শীর্ষ সীমায়। হাওয়ার মতো এগিয়ে আসতে থাকে কালো গাড়িটা। তবু তাকবীর টলল না। মাথা উঁচু করে ঠান্ডা চোখে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। দুটি শিকারীর চোখের দৃষ্টি ধাক্কা খাচ্ছে একে অপরের সঙ্গে। গাড়ি যখন একেবারে ধাক্কা লাগার মুহূর্তে, ঠিক তখনই রিচার্ড ব্রেক চাপে। গাড়ি থামতে থামতে এসে ঠেকে যায় তাকবীরের বাইকের একদম সামনে। তবু তাকবীরের মুখে নড়চড় নেই। ওর আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে যেন পুরো রাস্তা স্থির হয়ে রইল। তাকবীর ঠৌঁট কেলিয়ে হাসল রিচার্ডের দিকে চেয়ে। রিচার্ড গুরুগম্ভীর অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় ধারালো চিবুকে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।
“তুই যে স্কুলের ছাত্র, সেই স্কুলের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল আমি। তাই শাসন করতে জানি, আর সীমা দেখাতে ও পারি। বুঝতে পেরেছিস তো নিজের সীমা?”
‘তাকবীর বিদ্রূপের সুরে বলল রিচার্ডকে। তবে রিচার্ড তৎক্ষনাৎ কোনো প্রত্যুত্তর করল না। বরং ঠান্ডা ভঙ্গিতে গাড়ির হুডে কোমর হেলান দিয়ে দাঁড়াল। এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে রেখে, গালের ভেতর জিভ ঘুরিয়ে এক রকম তুষ্ট হাসি ছড়িয়ে দিল নিজের জুতোর দিকে তাকিয়ে।
“তাহলে মানছিস, তোর ভালো মানুষী মুখোশের আড়ালেও একটা কুৎসিত রূপ আছে।”
‘তাকবীর ঠোঁট কামড়ে হাসল রিচার্ডের কথায়। অতঃপর বাইকের সামনে ঝুঁকল খানিকটা। তাকবীরের হাসির মধ্যে এক ধরনের ঠান্ডা অহংকার। নিরেট ঠান্ডা গলায় বলল
“সবারই থাকে। তবে আড়াল করার দক্ষতা সবার থাকে না। আর সেই পার্থক্যটাই বিজয় নির্ধারণ করে।”
“বোকা, বোকা! এতো বোকা শালি!”
‘রিচার্ড ঠোঁট কামড়ে আফসোসে মাথা দু’পাশে ঘুরিয়ে বলতে লাগল। তাকবীর মানে বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকাল।
“মানে! কে?”
“এলিজাবেথ ইমরা এরিন।”
‘তাকবীরের চোখে মুহূর্তেই আগুন জ্বলে উঠল। বজ্রপাতের মতো কণ্ঠে ঝংকার তুলে বলল, “মুখ সামলে কথা বল কুত্তার বাচ্চা।”
‘রিচার্ড ঠাণ্ডা অথচ কটাক্ষের সুরে হেসে বলল,”আমার জিনিস, আমি যেভাবে ইচ্ছা বলব, আবার যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আদর করব। তার আগে দশটা জুতার বারি দিয়ে নেব, তোর মতো দুমুখো কে জীবনের সবথেকে বড় আস্থার জায়গায় বসানোর জন্য।”
‘তাকবীর সোজা হয়ে বলল, “সব জায়গায় তুই হয়তো রিচার্ড, কিন্তু সেই একটা জায়গায় আমি তাকবীর। আমি আস্থার স্থান অর্জন করেছি আমার কর্মে, আর তুই ঘৃণা কুড়িয়েছিস তোর ব্যবহার দিয়ে। আমার জীবনের সব যদি আমি ত্যাগ করতে পারি ওর জন্য, তাহলে সব ধ্বংসও করে দিতে পারব। সরে যা আমাদের মাঝখান থেকে।”
‘রিচার্ডের ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি খেলল। “চিন্তা করিস না, তোর দিনও আসছে সামনে। সেই দিন কীভাবে শেষ করব, তা কল্পনাও করতে পারবি না।”
‘থেমে,
“আর কি বসছিস সরে যাওয়ার কথা? হাউ ফানি।”
‘আরো গম্ভীর হলো তাকবীরের গলা। বলল,
“যেই চোখের আশায় চেয়ে থেকে লাভ নেই, যেই চোখের বিষ তুই।”
“যেই চোখে একবার নিজেকে আটকেছি, সেই চোখের বিষও আমার জন্য পানীয়। আমি বিষ খেয়ে বাঁচতে জানি আর তুই আগুনে পুড়তে পারিস কিনা, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।”
‘তাকবীর মলিন হেসে জবাব দিল,”যে চোখে নিজের ধ্বংস দেখতে পায়। তার কাছে এই বিষ কিংবা আগুন—সবই নস্যি।”
‘হঠাৎ করেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল রিচার্ড। হাসতে হাসতে শরীর কেঁপে উঠছে। তাকবীরের মস্তিষ্ক, নিউরন,শ্রবণ ইন্দ্রিয় ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে রিচার্ডের বিদঘুটে হাসির শব্দ। উগ্রতা ভেঙে হিংস্র প্রাণীর মতো গর্জে উঠল তাকবীর,
“হাসলেই কোনো কিছু বদলে যাবে না। এলোকেশী আমার ছিল, সবকিছুর পরেও আমারই হবে।”
‘হাসি থামল রিচার্ডের। তাকবীরের দিকে ভ্রু গুছিয়ে চেয়ে সরু গলায় বলল,
“যখন আমার বাচ্চার ‘মামা’ ডাক শুনবি, তখন তোর ‘বাবা’ ডাক শোনার শখ গুছে যাবে।
‘রিচার্ড বিদ্রূপের সুরে ছুড়ে দিল কথাটা। তাকবীরের ঠোঁটের কোণে তিক্ত হাসি খেলল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“বাবা ডাক শোনার শখ গুছাতে হয় না, রিচার্ড কায়নাত। সেটা অর্জন করতে হয়। আর তুই সেটা কোনোদিন পারবি না।”
“আই হ্যাভ অলরেডি ডান এভরিথিং।”
‘দাঁতে দাঁত পিষে ধরল তাকবীর। রিচার্ড ঠৌঁটের কোণে কটাক্ষের হাসি ঝুলিয়ে দেখছে তাকবীরের ক্ষিপ্ততা।
“লজ্জা করে না একটা মেয়েকে নিয়ে এভাবে কথা বলতে?”
‘চোখ বড় বড় হয়ে গেল রিচার্ডের। চমকানোর ভান ধরে গদগদ করে বলল,
“তওবা, তওবা। নিজের দাখিলকৃত জিনিস নিয়ে কথা বলাতে যদি, পাপ হয়। তবে এই পাপ আমি চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বিশ ঘন্টায় করি। সকালে শাওয়ার নিয়ে বেরোনোর পর থেকে শুরু করে আবার শাওয়ারে ঢুকা পর্যন্ত করি।
“এতো নোংরা মস্তিষ্ক নিয়ে রাতে ঘুমাস কি করে?”
‘রিচার্ড ঘাড় কাত করে ভ্রু উঁচিয়ে বিটলামি স্বরে বলল,”তোর বোনের পাশে ঘুমায়।”
“আমার বোন মানে ! কে?”
“এলিজাবেথ।”
‘চিবুক শক্ত হলেও রাগল না তাকবীর। বরং তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।
“নারী পাচারকারীদের কাছ থেকে এর থেকে ভালো আর কি’বা আশা করা যায়।”
‘মুহুর্তেই গম্ভীর হয়ে গেল রিচার্ডের চওড়া তামুক। শক্ত হয়ে এলো কণ্ঠস্বর।
“শালা আমি তো তাও টাকার বিনিময়ে মেয়েদের কিনে নিই। যারাই আমার লাইনে আছে, স্বেচ্ছায় আছে। কিন্তু তুই তো জান নিয়ে নিস ডিরেক্ট টাকার জন্য।”
“শুকনো মুখে চিঁড়ে ভিজে না। প্রমাণ দে।”
‘তাকবীর তুষ্ট হেসে বললেও রিচার্ড সাবলীল ভাবেই হাসল। ঠৌঁট কামড়ে চোখ বুজে অনর্থক মাথা নাড়ালো দু’পাশে। পরপর চোখের পাতা খুলল। ঠৌঁট গোল করে মুখ দিয়ে ‘চো ‘চো’ শব্দ করে বলল,
“হ্যাঁ এবার ভিজবে। ধরিত্রীর মাটি সিক্ত হবে তোর তাজা রক্তে। আর তোর রক্ত ঝড়বে, তোর পাপের কারণে।”
‘কণ্ঠনালী বেয়ে হাসির উদগীরণ ঘটলো ঠৌঁটে। তাকবীর বাচ্চাদের মতো ঠৌঁট উল্টে বলল,”নিজেকে কি নিষ্পাপ দাবি করছিস?”
‘আগুন বর্জন করল কথায়, চোখে জ্বলছে ক্রোধের অগ্নি,
“আমি নিজেকে এক রূপের দাবি করছি।”
“আমি সব জানি।”
“তুই আমার বা°ল জানিস।”
“কোনটা আমি না জানি বল,,?এই যেমন ধর আজকের লাল রঙটা।”
‘এ কথা বলে রিচার্ডের দিকে চোখ টিপল তাকবীর। পরপর রেয়ানের মেসেজ দেখে জবাবের অপেক্ষা না করেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করল তাকবীর। দুপুরের উষ্ণ হাওয়ার মধ্যে রিচার্ডের দাঁতে দাঁত পিষার শব্দ আরও স্পষ্ট শোনা গেল। ক্রোধে চোখের নীল মনির পাশের সাদা অংশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করল।
‘স্বভাবতই নারীদের মন কৌতূহলে ভরা। এলিজাবেথও এর ব্যতিক্রম নয়। “ঠিকানা” নামের ঘরটা এলিজাবেথের মনে রহস্যের জাল বুনেছে। ঘরের ভিতরে কী আছে, সেই চিন্তায় মন আনচান করছে। কিন্তু ঘরের দরজার সামনে দুটো বিশাল তালা। প্রবেশের উপায় নেই। তার উপর মেডরা সবসময় এলিজাবেথের উপর নজর রাখে। এই কারণেই ঘরের ভেতরে ঢোকার সাহস বা সুযোগ কোনোটাই পাচ্ছে না এলিজাবেথ। তবু কৌতূহলের জ্বালায় সকাল থেকে ঘুরঘুর করছে সে ঘরটার আশেপাশে। যেন একটু ফাঁক পেলেই ঢুকে পড়বে সেই রহস্যময় ঘরে।
‘হঠাৎ এলিজাবেথ ভারী পায়ের শব্দ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। পিছনে তাকাতেই সর্বাঙ্গ শিউরে উঠল। রিচার্ডের রক্তলাল চোখে আগুন হয়ে জ্বলছে। সেই দৃষ্টির ঝাঁঝে এক মুহূর্তেই এলিজাবেথের ভেতর শুকিয়ে এলো। রিচার্ডের মুখের অবস্থা এতটাই ভয়ংকর যে ওকে স্বাভাবিক মনে হয় অনুভূত হচ্ছে না। ভয়ে এলিজাবেথ দৌড়ে নিজের রুমের দিকে ছুটে। তবে দরজার সম্পূর্ণ বন্ধ করার আগেই রিচার্ড তার দু-হাত দিয়ে দরজার ফাঁকে ঢুকিয়ে দেয়। চোখের দৃষ্টি যেন এলিজাবেথকে মুহূর্তে ভস্ম করে দেবে। ভয়ে এলিজাবেথের ঠোঁট ভেঙে আসে, থরথর করে কাঁপতে থাকে গড়ন।
‘তবে রিচার্ড দরজা ধাক্কা দেয় না,আবার সরেও আসে না। শুধু রক্ত গরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এলিজাবেথের দিকে। এদিকে নিচ থেকে এই দৃশ্য দেখে মেডরার কেঁপে উঠে। একজন তাকবীরকে কল করতে চাইলে, আরেকজন দ্রুত তাকে আটকে দেয়।
“পাগল হয়েছিস? কাকে কল দিচ্ছিস তুই? ভুলে গেছিস আমাদের কত টাকা দিয়েছে উনি? যদি কল করিস তোদেরই কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবে!”
‘হ্যাঁ, এটাই রিচার্ড কায়নাত। তার মস্তিষ্ক সুক্ষ্ম বুদ্ধি আর কৌশলে ঠাসা। দেওয়ান মঞ্জিলের প্রতিটি কোণ, প্রতিটি মানুষ, এমনকি গার্ড থেকে শুরু করে মেড পর্যন্ত—সবই রিচার্ডের নিয়ন্ত্রণে। মোটা অংকের টাকায় সবাইকে কিনে নিয়েছে রিচার্ড। উদ্দেশ্য একটাই তাকবীর যেন কোনোভাবেই এলিজাবেথের সংস্পর্শে যেতে না পারে। একইসঙ্গে এলিজাবেথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই, যতবারই তাকবীর এলিজাবেথের কাছে যেতে চেয়েছে, ঠিক ততবারই কোনো না কোনো মেড এসে নানান অজুহাতে তাদের আলাদা করে দিয়েছে। এই নিয়ন্ত্রণের জালে আবদ্ধ হয়ে আছে পুরো দেওয়ান মঞ্জিল। তা তাকবীর জানে না এখনো পর্যন্ত ।
‘রিচার্ড আর অপেক্ষা করল না। শক্ত হাতে এক ধাক্কা দিতেই এলিজাবেথ ছিটকে গিয়ে মেঝেতে পড়লো। রিচার্ড ঘূর্ণির বেগে তেড়ে গিয়ে এলিজাবেথকে হেঁচকা টানে সোজা করে তুলল। অতঃপর কোনোরূপ বাক্য উচ্চারণ না করে দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরল এলিজাবেথের কোমর। ছোঁয়ায় ছিল হিংস্রতা। আতঙ্ক এলিজাবেথের চোখজোড়ায় ফেটে পড়লো। এলিজাবেথ কিছু বলতে যাবে, তার আগেই রিচার্ড ওকে শূন্যে তুলে পাশের ছোট কেবিনেটের উপর বসিয়ে দেয়। এতেই থেমে থাকল না রিচার্ডের হিংস্রতা। তীব্র রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে হাত নিয়ে গেল এলিজাবেথের কাঁধের দিকে। এলিজাবেথ সর্তক হয়ে চেপে ধরল কাঁধের পোশাক। অনবরত কাঁপছে ওর ওষ্ঠদ্বয়।
‘ধ্বংস আর নিয়ন্ত্রণের তৃষ্ণায় পুড়ছে রিচার্ডের আখিঁদ্বয়।হিংস্রতার প্রভাবে রিচার্ডের পৈশাচিক, সাইকো মস্তিষ্ক বিড়বিড়িয়ে ওঠে,”তুই খুলবি না, আমি খুলবো?”
‘কান্নার তোড় বাড়ল এলিজাবেথের। ভয়ে গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কোনোরকমে অস্পষ্ট স্বরে আওড়ালো,”আপনি এসব কি বলছেন?”
‘এলিজাবেথের কথা আদৌও রিচার্ডের কানে গেল কিনা তা বুঝা গেল না। রিচার্ড একই ভাবে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“উইল ইউ টেক ইট অফ,অর শুড আই?”
‘এলিজাবেথ তবুও হাত সরায় না। ভয়কাতুরে চোখে তাকিয়ে আছে রিচার্ডের দিকে। এবার সংযম হারালো রিচার্ড। ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিল এলিজাবেথের হাত কাঁধ থেকে। পরপর কাঁধের অংশের কাপড় খানিকটা সরাল। আশ্চর্যজনক ভাবে হাত কাঁপছিল গ্যাংস্টার বসের। কাঁধের উপরের অংশের কাপড় সরিয়ে ভিতরের ইনারওয়্যার উন্মোচন করে সাদা রঙ অবলোকন হতেই চকিয়ে সরে আছে রিচার্ড। একহাত কোমড়ে রেখে ঠৌঁট কামড়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। আঁটকে রাখা নিশ্বাস ঘনঘন শ্বাসে নির্গত করছে ভিতর থেকে।
‘ভরকে গেল এলিজাবেথ। বুঝল না রিচার্ডের এই আচরণের মানে। তবুও রিচার্ড সরে যেতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। সহসাই এক উজ্জ্বলিত শিখা প্রজ্জ্বলিত হলো ভিতরে। তবে তা স্থায়ী হলো না বেশিক্ষণ। অতর্কিত আক্রমণে হচকিয়ে গেল এলিজাবেথ। রিচার্ড আবারো তেড়ে এসে এলিজাবেথকে নিজের বাঁধনে নিয়ে নিল। রিচার্ডের চোখে এখন কোনো তেজ নেই। নিস্প্রভ দ্বিধাহীন ভাবে একগুঁয়ে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এলিজাবেথের রক্তাভ মুখশ্রীতে। এলিজাবেথ রিচার্ডের চোখে একপলক তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে নিল। আইঠাই করতে করতে বলল,
“এভাবে তাকাবেন না। এই চোখে কিছু একটা আছে।”
‘রিচার্ড অনড়ভাবে ঝুঁকে থেকে ঠৌঁট কামড়ে হাসল। পরপর পুরুষালি হাস্কি স্বরে হিসহিসিয়ে বলল,”আছে তো, তোমার সর্বনাশ।”
‘বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ধরল এলিজাবেথের। ভেঙে আসে কণ্ঠস্বর। সুগভীর, নিকষ কালো চোখ হতে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। ক্ষীণ আওয়াজে বলল,
“আপনি তো আমার সর্বনাশ সেই কবেই করে দিয়েছেন।”
‘রিচার্ড এলিজাবেথের চিবুকের নিচ ধরে ওকে নিজের দিকে ঘুরাল। এলিজাবেথ ভেজা চোখে তাকাল রিচার্ডের শান্ত চোখে। তবে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না। ভিতরে তোলপাড় শুরু হয় অজানা শিহরণে। দৃষ্টি সরিয়ে নেয় এলিজাবেথ। ঠৌঁটের কোণ কামড়ে হাসল রিচার্ড তা দেখে।
“সর্বনাশ করিনি। তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে আমার রাজস্ব বিস্তার করেছি।”
‘এলিজাবেথ কোনো প্রত্যুত্তর করল না। তবে করে বসল এক কান্ড। অবাকেরও অবাক পর্যায়ে গিয়ে। এলিজাবেথ সোজা হলো। ঘেঁষল রিচার্ডের অতি নিকটে। দু’পা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরল রিচার্ডের কোমর। ভ্রু কুঁচকালো রিচার্ড, তবে বাঁধা দিল না। স্থীর ভাবে দেখছিল এলিজাবেথ কি করছে। রিচার্ডের নিরবতার উত্তেজনায় ঘরের বাতাস আরো ভারি হয়ে উঠল।
এবার এলিজাবেথ সত্যিই বিস্ময়ের সীমা ছাড়াল। পেঁচিয়ে রাখা পায়ে হালকা টান প্রয়োগে রিচার্ডকে আরও কাছে টেনে আনল। দৃষ্টি গভীর, স্থির হয়ে আছে রিচার্ডের সমুদ্র-নীল চোখে। দুটো দৃষ্টি এখন এক বিন্দুতে মিশে গেছে একটিতে প্রশ্ন, অন্যটিতে উত্তর। সময়ও থমকে গেল তাদের চারপাশে। শুধু এই নীরব মুহূর্তটুকু চিরস্থায়ী হয়ে রইল। রিচার্ড যখনই রিচার্ডের কোমরের উদ্দেশ্য হাত বাড়াবে তখনই ভেসে এলো রিচার্ডের সরু স্বর,
“আমি নিরস্ত্র রেড। ইদুরের গর্তে কি কেউ অস্ত্র নিয়ে যায়? গর্ত তো এমনিতেই ছোট।”
‘ভরকে গেল এলিজাবেথ। ধরা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে পেঁচানো পা আলগা করে দূরে সরে আসলো রিচার্ডের কাছ থেকে। তুষ্ট হাসল রিচার্ড। আচানক এলিজাবেথকে টানে নিজের কাছে নিয়ে এসে শরীরের সাথে লেপ্টে শূন্য তুলে নিল। চমকে গেল এলিজাবেথ, ধরিয়ে ধরল রিচার্ডের গলা। রিচার্ড বেডের দিকে যেতে যেতে ভারি কণ্ঠে বলল,
“এখন আমার মুড এসে গিয়েছে। নিজের সর্বনাশ ডেকে আনলে বোকা পাখি।”
‘কেঁপে উঠল এলিজাবেথ। রিচার্ডের গলা ছেড়ে দিয়ে ওর কলার চেপে ধরে। তেজ দেখিয়ে বলতে লাগল,”ছেড়ে দিন বলছি। অসভ্য লোক একটা। আমি কিন্তু আমার শ্বশুরকে ডাকব।”
‘ছাড়ল না রিচার্ড বেডের নিকট না যাওয়া পর্যন্ত। হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেই ছুঁড়ে ফেলল এলিজাবেথকে বেডে। কনুই আঘাত পেল এলিজাবেথ হঠাৎ ফেলে দেওয়াতে। রিচার্ডও লাফিয়ে পড়লো এলিজাবেথের উপর, এলিজাবেথ কিছু বুঝে উঠার আগেই। ছেড়ে দিল শরীরের অর্ধেক ভর এলিজাবেথের উপর। কুটিল হাতে চেপে ধরল এলিজাবেথের দু’টি হাত। পরপর মাথার উপর নিয়ে বিছানার সাথে চেপে ধরল। কণ্ঠে ফিরে এলো সেই তেজ।
“মুখে খুব বুলি ফুটেছে, না? শ্বশুরবাড়ি মনে করিস এটা? তোর শ্বশুরবাড়িতেই আজ মধুচন্দ্রিমা পালন করব।”
‘রিচার্ডের চোখে অদ্ভুত এক মিশ্রণ, উত্তেজনা আর গভীর শাসনের। এলিজাবেথ তবুও নির্ভীক, যদিও ভেতরে কোথাও অশান্তির ঢেউ। আকষ্মিক রিচার্ড মুখ ডুবিয়ে দিল এলিজাবেথের কণ্ঠের নিম্নাংশে। কেঁপে উঠল এলিজাবেথের অভ্যন্তর। ঠেলেঠুলে রিচার্ডকে সরাতে চাইলেও এক ইঞ্চি সরাতেও সফল হয় না এলিজাবেথ। পাতলা চামড়ায় তীক্ষ্ণ দাঁতের কামড়ে ব্যাথায় কার্নিশ বেয়ে স্রোত বইল। রিচার্ডের আক্রমণ থামে না, থামল না হাতের অবাধ্য বিচরণ।
‘হঠাৎ রিচার্ড এলিজাবেথের পেটের পাতলা চামড়ায় শক্ত করে চেপে ধরল। ব্যথার তীব্রতায় এলিজাবেথ কুকড়ে উঠল। মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো অস্ফুট শব্দ। সেই শব্দে রিচার্ডের ঠোঁটে এক নির্দয় হাসি ফুটে উঠল।
“জাস্ট দ্য ওয়ে, বেবি।”
‘চাপা গলায় ফিসফিস করল রিচার্ড, ঘন নিশ্বাসের মাঝে গলদেশে উত্তাপ নিবারণে লিপ্ত থাকা অবস্থায়। এলিজাবেথ শত চেষ্টা করেও মুক্ত হতে পারল না। রির্চাডের বাঁধন এতটাই কঠিন। বিষণ্নতায় ডুবে গেল অন্তঃকরণ। গলদেশ পুড়ে যাচ্ছে। রিচার্ড সফল হয় ওর ছোঁয়ায় এলিজাবেথকে কাবু করতে। এলিজাবেথ স্থির হয়ে গেল। তবে যখনই এলিজাবেথ স্থির হলো, তখনই রিচার্ড মুখ তুলল। অতি ভারি শ্বাস ফেলতে লাগল।
“ইউ টেক মি সো গুড, রেড।”
‘চোখমুখ কুঁচকে মুখ ফিরিয়ে নিল এলিজাবেথ। আকষ্মিক রিচার্ড দন্ত বসিয়ে দিল এলিজাবেথের কলার বনে। এলিজাবেথ চেঁচিয়ে উঠার আগেই রিচার্ড হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল এলিজাবেথের। ঠুকরে কেঁদে উঠল এলিজাবেথ ব্যাথায়। রিচার্ড এলিজাবেথের নাকের ডগায় নাক ঘষতে ঘষতে নেশালো স্বরে শুধালো,
“তো এলি জান, দেখলাম গুগলে ‘ডার্ক রোমান্স’ লিখে অনেক সার্চ হচ্ছে। এবার এক ঝলক দেখানো যাক রিয়েল লাইফের ডার্ক রোমান্স কাকে বলে। এটা তো জাস্ট ডেমো ছিল, রেড। আসলটা এখনো বাকি।”
‘ব্যথা ভুলে চমকে উঠল এলিজাবেথ। সেই সঙ্গে অস্বস্তি আর লজ্জায় গাল লাল হয়ে উঠল। সত্যিই তো, গত রাতেই একটা রিলস দেখে কৌতূহলী হয়ে সার্চ করেছিল “ডার্ক রোমান্স”। কিন্তু রিচার্ড জানল কীভাবে? রিচার্ড ধীরে ধীরে এলিজাবেথের মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল। সুযোগ পেতেই এলিজাবেথ গম্ভীর গলায় বলল,
“আপনি কি করে জ…”
‘কথা শেষ হওয়ার আগেই রিচার্ডের তর্জনী এলিজাবেথের ঠোঁটে ঠেকল। এক নরম অথচ শাসনভরা স্বরে বলল,
“আমি সব জানি, রেড। তোমার সবকিছু, একদম সব।”
এলিজাবেথ থমকে গেল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শুষ্ক ঢোক গিলে বলল,
“আপনি কি আমাকে স্ট্রক করছেন?”
‘রিচার্ডের ঠোঁটে আবার সেই রহস্যময় হাসি। “যদি করি? আমার রেডের সব জানা তো আমার অধিকার, তাই না?”
‘হঠাৎ কি হলো কে জানে। এলিজাবেথ ফ্যাৎ করে কেঁদে উঠল। হুরহুর করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আর আমার অধিকার? কোথায় আমার অধিকার।”
‘এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল রিচার্ড। এলিজাবেথের কণ্ঠে ছিল তেজ, সঙ্গে এক অদ্ভুত অধিকারপ্রবণতা। রিচার্ড পুরোপুরি এড়িয়ে গেল এলিজাবেথের প্রশ্ন, কোনো উত্তর দিল না। উল্টে নরম হাতে এলিজাবেথের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“আমি বাচ্চা ছেলেদের মতো তোমার মাসকারা বা লিপস্টিক নষ্ট করব না। আমি তোমার সর্বাঙ্গে এলোমেলোভাবে ছোঁয়া এঁকে দেব, যেন আমার স্পর্শের সুখ তুমি সর্বত্র অনুভব করো।”
‘রিচার্ডের মুখে ছিল এক অদ্ভুত শান্তির ছাপ, তবে চোখে এক অদৃশ্য আগ্রাসন। রিচার্ডের পেঁচানো জবাবে এলিজাবেথের কান্নার তোড় আরো বাড়ল। ফ্যারফ্যার করে কেঁদে ঘৃণিত স্বরে বলল,
“শুধু এ-সব নোংরামি। ভালো কথা নেই মুখে?”
‘রিচার্ড ভ্রু নাচাতে নাচাতে বলল,”আমাকে ভালো ভেবে ভুল করছ কেন, বেবি? আমার ইমাজিনেশনে তোমাকে আরো গভীরভাবে কাছে নিই, ট্রাস্ট মি।”
‘বিষাদে মুখ ফিরিয়ে নেয় এলিজাবেথ। শীর্ণ স্বরে বলল,
“I hate you.”
“I ate you,,’ এলিজাবেথের কথার পারদে রিচার্ডের নিরুদ্বেগহীন জবাব। এলিজাবেথ ফিরে তাকাল রিচার্ডের উতপ্ত, খরখরে মরুভূমির পানে। কণ্ঠ বসে গিয়েছে কান্নায়, ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজে বলল,
“আপনি আমাকে বদনাম করে দিচ্ছেন।”
‘পৈশাচিক শক্তিতে তরতরিয়ে বেড়ে ওঠা তীব্র ক্রোধ আর হিংস্রতা, বৃক্ষপটের সাথে মিশে থাকা লাস্যময়ী নারীর সান্নিধ্যে বহমান মন্থর শিথিলতা তলিয়ে গেলেও, আবার ফিরে গেল তার পূর্ণ রূপে। রিচার্ড খপ করে এলিজাবেথের চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরল। কক্ষ কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,
“এই পৃথিবীতে এলিজাবেথ শুধু বদনাম হবে রিচার্ডের নামে। আমার ছোঁয়ার সাত রঙে রঙ্গিন হয়ে যাবে তুমি। তাও তোমার দিকে আঙুল তুলার সাহস কারোর থাকবে না। কারণ রিচার্ড কায়নাত সেই জায়গা রাখেনি।”
‘রিচার্ডের কণ্ঠে ছিল এক অদৃশ্য ভয়ংকর শক্তি আর অদম্য সত্য। প্রতিটি শব্দ এলিজাবেথের অস্তিত্বের মধ্যে এক গভীর মুঘলির মতো স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। অস্থির করে তুলল ভিতর। এলিজাবেথ রিচার্ডের দিকে চাতক পাখির দৃষ্টিতে চেয়ে ছটফট করে উঠল।
“কি জায়গা রাখেননি? বলুন সত্যটা। জানতে চাই আমি।”
‘রিচার্ড আবারো চেপে ধরল এলিজাবেথের কণ্ঠনালী। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,”জানতে পারবি। সব জানতে পারবি। তবে এতো সহজে নই। তোকে এখনো আমার অনেক যন্ত্রণা দেওয়া বাকি।”
“একেবারে মেরে ফেললেই তো পারেন। এতোকিছু করেও যখন সাধ মিটল না।”
‘আজ এলিজাবেথের উচ্চস্বরে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না রিচার্ড। এলিজাবেথের উপর থেকে সরে আসল। বেডে বসে নিজের পায়ের উপর ঝুঁকল। এলিজাবেথ অনড়ভাবে কেঁদে যাচ্ছে। দমকা হাওয়ার মতো ভেসে আসল রিচার্ডের খাদযুক্ত কণ্ঠস্বর,
“সেটা পারলে তোর বলে দিতে হতো না, আর না আমাকে এতো পুড়তে হতো।”
‘এলিজাবেথ কিছু বলে উঠার আগেই রিচার্ড দাঁড়িয়ে ওর পায়ের ঘামে চ্যাটচ্যাটে বিশ্রি গন্ধযুক্ত মোজা এলিজাবেথের মুখের উপর ছুঁড়ে মারল। নাকে এসে পড়তেই এলিজাবেথের পেটের ভিতর নাড়া দিয়ে উঠল। মোজা মুখ থেকে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল এলিজাবেথ।
“এ্যা ছিঃ! এসবের মানে কি?”
“মানে তুই একটা মাথামোটা।”
‘তাজ্জব বনে গেল এলিজাবেথ। হঠাৎ রিচার্ড শার্টের বোতামে হাত রাখতেই এলিজাবেথ লাফ দিয়ে উঠে বিছানার এক কোণে গিয়ে চাদর দিয়ে ঢেকে ফেলল নিজেকে। রিচার্ড তেরছা নজরে চেয়ে নাক কুঁচকে গম্ভীর স্বরে বলল,
“আমি যদি এখন আমার শার্ট খুলি, তবে এই খাটের থেকেও বেশি কাঁপবে তোমার হৃদয়। এটা এখন শক্ত রাখতে হবে। ভাঙতে দেওয়া যাবে না। সামনে আমাদের জন্য অনেক কিছু অপেক্ষা করছে।”
‘এলিজাবেথ বিস্ময়ের চোখে চেয়ে অস্পষ্ট স্বরে আওড়ালো,
“আমাদের?”
‘এই মুহূর্তে এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করল না রিচার্ড। গায়ে চাপানো পোশাকের কুঁচকানো ভাব ঠিক করে পা বাড়ায় দরজার দিকে।
“ভালোবাসা কোনো সাজিয়ে রাখার প্রদর্শনী নয়। মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা ঢেলে দিতে হয়। ভালোবাসার প্রকৃত স্বাদ তখনই পাওয়া যায় যখন তাকে মুক্ত করা হয়। লুকানো অনুভূতির কোনো মূল্য নেই।”
‘থমকে গেল রিচার্ডের পা। তবে পিছন ঘুরল না। গুরুগম্ভীর গলায় জবাব দিল,
“কেমন লাগবে তখন, যখন মুখে শতবার ভালোবাসি বলেও অন্তরে ছলনা পুষবে? ভালোবাসা কেবল শব্দে নয়, ভালোবাসা তার প্রকৃত রূপ পায় আগলে রাখার নিঃশর্ত স্পর্শে।”
‘এলিজাবেথ অস্থির ভাবে বিছানা থেকে নেমে রিচার্ডের পিছন গিয়ে দাঁড়াল। তবুও ওদের মাঝে খুব দুরত্ব। রিচার্ডের পিছন ছায়ায় দৃষ্টি রেখে কান্নায় জর্জরিত ক্ষীণ স্বরে বলল,
“আগলে কী রেখেছেন? ছেড়ে দিয়েছেন তো অন্যের হাতে।”
‘এলিজাবেথের তীক্ষ্ণ প্রশ্নের জবাবে রিচার্ড এক মুহূর্ত থামল। ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠল, পরপর গভীর কণ্ঠে বলল,
“রিচার্ড কায়নাত কখনো নিজের জিনিস ছেড়ে দেয় না। দূরে রাখলেও সেটা তারই থাকে। আর যদি হয় শখের জিনিস? তবে আমি উন্মাদ সেখানেই।”
_থেমে,
“খোলা চুলে মেয়েদের সৌন্দর্য দশগুণ বৃদ্ধি পেলেও পরপুরুষের সামনে তা খোলা রাখা হারাম। তেমনি ভুল সময়ে ভালোবাসা প্রকাশ করাও শুধু অপূর্ণ নয়, সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”
‘বুকের ভেতর চাপা উত্তেজনা নিয়ে এলিজাবেথ এগিয়ে গেল দু’কদম। কিছু বলতে যাবে, তার আগেই শোনা গেল রিচার্ডের অবাক করা কোমল স্বর,
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩১
“এলি জান!”
‘থমকে দাঁড়াল এলিজাবেথ। বুকের ভেতরের চাপ দ্বিগুণ হয়ে উঠল। তবুও শান্ত গলায় বলল, “হুমম।”
‘এইটুকুই যথেষ্ট ছিল। রিচার্ড আর কোনো জবাবের অপেক্ষা না করে লম্বা লম্বা কদম ফেলে চলে গেল। এলিজাবেথ অপলক চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। রিচার্ড দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যেতেই হঠাৎ করে বাঁকা হাসল। পরপর সেই হাসি ক্ষণিকেই রুপান্তর হলো রহস্যময় হাসিতে। চোয়াল শক্ত করে দৃঢ় স্বরে বিরবির করল,
“আপনার যা করার ছিল, তা আপনি করেছেন। আমাকে যা করতে হবে, তা এখন আমি করব।”
