প্রেমপিপাসা শেষ পর্ব 

প্রেমপিপাসা শেষ পর্ব 
সুমাইয়া সুলতানা

আকস্মিক গরম বাক্যে চমকে উঠল অরু। হতবিহ্বল অক্ষিপট বড়ো বড়ো হয়। থমকে যায় দেহের সমগ্র রক্ত চলাচল। ফ্যালফ্যাল নিষ্প্রভ চাহনিতে অনিমেষ চেয়ে রইল। সে তাকাতেই অরু চোখ নামিয়ে নেয়। কথা গুলিয়ে ফেলল। অমন ছুরির ন্যায় চাউনি দেখলে শব্দ বের হয়? জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাল মেয়েটা। ছোট স্বরে কথা খুঁজল,
” দ্যাটস নট ট্রু। হিজ সাম-ওয়ান এলস। ”
” শাট আপ! ইভেন ইউ নো দ্যাট আ’ম টেলিং দ্য ট্রুথ। ”
অরু তবুও মানতে নারাজ,
” সত্যি মাই ফুট। আগে বলুন, ভালোবাসেন? ”
হ্যাভেনের গোলাকার নেত্র অরুর কৌতূহলী ক্রোধান্বিত মুখবিবরে আটকে। মেয়েটার গালে খরখরে রুক্ষ হাত রেখে বলল হাস্যহীন,

” আমার চোখের দিকে তাকাও। ”
” বুঝি না আপনার চোখের ভাষা! ”
সরল স্বীকারোক্তি রমণীর। ফোঁস করে নিরাশ দম ফেলল হ্যাভেন। কন্ঠে তার তীব্র দাপট,
” বুঝেও না বোঝার ভান করছো? ”
” কি বলতে চাইছেন? ”
” আমার ভালোবাসা কি কাজের মাধ্যমে তোমায় অনুভব করাতে সক্ষম হয়নি? ”
মেয়েটা গাল হতে হাত সরিয়ে দেয়। গলা ছেড়ে প্রচন্ড অনিহা নিয়ে চিৎকার ছুড়ল সজোরে,
” না! ”
ঠোঁট গোল করে হতাশার নিঃশ্বাস ছাড়ল হ্যাভেন। এই মেয়ে ভাঙবে তবুও মচকাবে না! সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে এবার,
” তুমি আমার আলমারি ঘাটাঘাটি করো ? ”
অরু ঠোঁট উল্টে বলল মিনসে কন্ঠে,
” আপনিই তো বলেছেন, আপনার সবকিছুতে আমার সমান অধিকার। এবং আপনার আলমারিতে আমার প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সে ভণিতা ছাড়া শুধাল সোজাসাপটা,
” আলমারি খুলেছো ভালো কথা। কিন্তু ফাইল, কাপড়চোপড় নাড়াচাড়া করেছো কেন? আমার প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করো কোন সাহসে, যা আমি এতদিন যাবত লুকিয়ে রেখেছিলাম! ”
ধারালো বাক্যবাণ বুঝে শুকনো ঢোক গিলল অরু। থমথমে ভাব আড়ালে লুকিয়ে টেনে টেনে বলল,
” কখন করলাম? ”
হ্যাভেন বক্ররেখার ন্যায় অসরল হাসল। হাসিটা প্রতাপ দেখাল রহস্য নিয়ে। সরে আসে। ড্রয়ার থেকে ল্যাপটপ এনে ড্রেসিং টেবিলে রাখল। একটা ভিডিও ওপেন করল। পরপর আদেশ ছুড়ল,
” লুক। ”

ভিডিওতে নজর পড়তেই অমনি চক্ষু বেরিয়ে এলো যেন। বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় অরু। ধরা পড়ে বিপদের আভাসে তুবড়ে গেল। বুক ধকধক করতে লাগলো। চকিতে ঘুরে চাইল, বাঁকা হাসি ঠোঁটের কোণে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হ্যাভেনের গুরুগম্ভীর আদলে। বড্ড অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল অরু। হ্যাভেন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফের ল্যাপটপ স্ক্রিনে রাখল। সেখানে হ্যাভেনের অ্যাক্সিডেন্টের দিনে অরু যে ফাইল খুলে কিছু কাগজপত্র, ছবি নাড়াচাড়া করছে সেটা ক্যামরা বন্দী হয়ে আছে। অর্থাৎ সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ চলছে ল্যাপটপে। পাশেই সেদিনের সময়, তারিখ ভেসে উঠেছে।
অরু আশ্চর্যের শেষ প্রান্তে। বিহ্বলিত নয়ন ঘুরিয়ে হ্যাভেনের পানে তাকাল। জিজ্ঞেস করল হতভম্ব হয়ে,

” আপনি আমায় নজরে রাখেন অল-টাইম? ”
” তা তো রাখিই। ”
” তাই বলে বেড রুমে ক্যামেরা? ছিঃ! ”
চোখা নেত্রে চেয়ে ভ্রু নাচাল হ্যাভেন,
” আর ইউ ক্রেজি? ডোন্ট ব্লেইম উইথাউট নোইং! ক্যামেরা ছাদে, বাইরে লাগানো। তুমি এ বাড়িতে আসার আগে থেকেই আমার বেডরুমে ক্যামেরা আছে, অন্য কারো রুমে নেই। তাও আমি বাড়িতে না থাকলে, ফিরে আসলে বন্ধ করে দিই। তুমি আসার পর সর্বদা বন্ধ থাকত। তোমার খবর জানতে আমার ক্যামেরার প্রয়োজন নেই। ”
মানল না অরু। তেতে উঠল মুহূর্তে। ইন-ডিরেক্টলি তাকে ইনসাল্ট করল। সাফাই দেবার ভঙ্গিতে চেঁচিয়ে উঠল আচমকা,

” অ্যাই শুনুন, আপনার পার্সোনাল জিনিস হাতানোর কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না। হসপিটাল যেতে হবে, ড্রেস নামাতে গিয়ে তাড়াহুড়ায় হাত লেগে আপনার শার্ট সহ কয়েকটা ফাইল পড়ে গিয়েছিল। সেগুলো গুছিয়ে আলমারিতে রাখার সময় আপনার ফাইলে আমার ছবি দেখে অবাক হয়ে ছিলাম। সাথে ছোট ছোট তিনটা চিরকুট ছিল। কার জন্য লিখেছেন, জানি না। তবে আমার ছবি দেখে কৌতূহলে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ”
মুখশ্রী বিকৃত করে অরুর কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে, হ্যাভেন ঠোঁট কামড়ে একপেশে হাসল। ঝুঁকল তৎক্ষনাৎ। দু’হাতে অরুর গলা জড়িয়ে ধরল। নাকে নাক ঘষে ফিচেল গলায় বলে উঠলো,
” ভাগ্যিস! সেদিন ভুল করে ক্যামেরা তাড়াহুড়ায় অন রেখেই চলে গিয়েছিলাম। ক্যামেরা অন না থাকলে তো জানতেই পারতাম না, অ্যাক্সিডেন্টের দিন যে আমার রক্ত দেখে বিচলিত হয়েছিল, কান্না করেছিল খুব। অথচ ভঙ্গুর শরীরে বাড়ি ফেরার পর, এতবার ডাকার পরেও সে এলো না। রুমে আসার পর সাহসী রাণী হয়ে গিয়েছিলে তুমি। তাই তো বলি, কথা নেই, বার্তা নেই, হুট করে ভালোবাসি কি-না কেন জানতে চাইবে! ”
থতমত খেয়ে এলেমেলো দৃষ্টি ফেলল অরু। ইতস্তত, বিক্ষিপ্ত মনগহীন। জিভে অধর ভেজাল। বলল কন্ঠ খাদে এনে,
” ওহ! সেজন্যই তখন থেকে বিভ্রান্ত করেছি বলে চলেছেন! ”
” ইয়েস, মাই ধানিলঙ্কা। ”

ফোঁস করে লম্বা শ্বাস টানল অরু। সচল মস্তিষ্কে ফের উঁকিঝুঁকি দিল অপার্থিব প্রশ্ন। তোতাপাখির ন্যায় ঠোঁট নাড়ল,
” আচ্ছা, সায়র আর আমাকে একসাথে কথা বলতে দেখলে রাগান্বিত চোখে তাকাতেন কেন? ডিনারে হুট করে বললেন, তো এই ব্যাপার! ব্রেকফাস্টে বললেন, সায়রের সঙ্গে আপনাকে নিয়ে কি ষড়যন্ত্র করছি! এসব বলেছেন কেন? আমার পছন্দের ছেলের কথা সেদিন রাতেই নাকি জানতে পেরেছেন, এটা কীভাবে পসিবল? ”
হ্যাভেন ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল। মানুষ এত বোকা হয়? বলল লঘু স্বরে,
” হোয়াই নট পসিবল? ডিলিট না করলে ফুটেজ যখন খুশি, তখন দেখা যায়৷ সায়র ডিনারে ডাকার পর তুমি বেরিয়ে যাও। আমি ল্যাপটপ অফ করার সময় হঠাৎ ভিডিও শো করে। ভাবলাম পূর্বের ফুটেজ। কিন্তু তোমায় দেখে আগ্রহী হয়ে পুরো ফুটেজ দেখলাম। তখনই তোমার আকস্মিক প্রশ্নের যথাযথ কারণ উপলব্ধি করতে পারলাম। তারপর তোমার ছবি নিয়ে বোধহয় সায়রের সঙ্গে কথা বলেছিলে, সেটা আলোচনা করেছিলে সেই মুহূর্তে। আমি অল্প কিছু কথা শুনেছিলাম। ভাবসাব দেখে পুরোটা বুঝতে পেরে বলেছি, এই ব্যাপার! কি ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছো! আর তোমাদের দেখলে রাগতাম না, শুধু রাগটা তোমার উপর একান্ত ছিল। টানা আট ঘন্টা কি ঘোলটাই না খাইয়ে ছিলে! ”
অরু মাথা নামিয়ে ঠোঁট টিপে হাসে। আবার ম্লান হয়ে এলো হাস্যোজ্জ্বল মুখখানা। উদাসীন ভাবে চড়া কন্ঠে তর্জন দিল,

” ভালোবাসার কথা জানতে চাইলে শুধু বলেন এর উত্তর আমি জানি। কীভাবে জানব? আমি কি মনোবিজ্ঞানী? ”
” ডোন্ট নো। ”
হ্যাভেন ছোর করে বলল। ক্ষুদ্র শ্বাস ঝাড়ল মেয়েটা। গাল ফুলিয়ে স্বগতোক্তিতে নিজের উপর বিরক্ত প্রকাশ করল তৎক্ষনাৎ,
” চালাক হয়েছি, বাটপারি শিখেছি, ভয়ানক কান্ড ঘটিয়েছি, এবার বুঝতে পারলাম কেন ওসব বলেছেন। এদিকে আমার পছন্দের ছেলে সায়র, এটা ভেবে আপনি সন্দেহ করেছেন, চিন্তা করে ডিপ্রেশনে ভোগা আমি! ছ্যাঃ! ”
হ্যাভেন খোঁচা মারল মুহূর্তে,
” দোষ তোমার৷ ছেলেটা কে, সেটা জিজ্ঞেস না করে, সায়র’কে নিয়ে কি সব আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছিলে! আমিও হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তখন আহ্লাদী হয়ে জানতে চাইল মুখ ফসকে বলে ফেলতাম। তোমার ঢঙ দেখলে তো মন গলে যায় আমার। ”
মনে মনে অপমানিতবোধ করল অরু। আড়ষ্টতায় নুইয়ে পড়ল। অচিরেই মুখশ্রী কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। সত্যিই তো! ও ভীতিগ্রস্ত হয়ে গভীর ভাবে চিন্তা না করেই বোকার মতো কি সব বলে বসেছিল!

মেয়েটার ভাবনার মধ্যিখানে কখন যে হ্যাভেন তার শাড়ির কুঁচিতে হাত নিয়ে এক টানে খুলে তা ফ্লোরে ফেলে রেখেছে টেরই পেলো না। ভারী ভেজা শাড়ির আস্তরণ না থাকার দরুন, গা হালকা অনুভব হতেই অরু নজর বোলালো সেথায়। একরাশ লজ্জা ভর করল সুশ্রী আদলে। দু’হাত বুকে আড়াআড়ি ভাবে রেখে বৃষ্টির পানিতে মাখামাখি মেঝেতে তার লাজুক দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখল।
হ্যাভেন ভেজা প্যান্টে, উন্মুক্ত শরীরে অরুর কাছাকাছি আসতেই মেয়েটার শরীরে চিরচেনা ভূমিকম্পের ন্যায় কম্পন নামল। লজ্জায় হাঁসফাঁস করে উঠল। শিরা-উপশিরায় রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হবার জোগাড়। ঘুরে সরে যেতে চাইলে বাঁধ সাধলো হ্যাভেন। হাত ধরে করপুটে অধর ছোঁয়ায় সে। মোহ-মায়ায় গ্রাস করল অরু’কে। আর দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা রইল না। উৎকন্ঠিত নাজুক মেয়েটি গতি হারিয়ে শরীর ছেড়ে দিল। হ্যাভেন আলগোছে তুরন্ত বক্ষঃস্থলে আগলে নিলো।
তৎক্ষনাৎ হ্যাভেনের কর্ণগহ্বরে বারি খেল মেয়েলি চিকণ জরানো স্বর,

” ভালোবাসি না আপনাকে। ”
সে গমগমে গলায় প্রতুত্তর করলো,
” বাসতে হবে না, আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট। ”
” বলেছেন আপনি? ”
মেয়েটা মুখ তুলে কাকুতি নিয়ে শুধায়। বিনিময়ে কাটকাট জবাব পেলো হ্যাভেনের,
” বলার প্রয়োজনবোধ করছি না। ”
নিজেকে সামলে ধাক্কা মেরে সরে যায় অরু। দাঁত পিষে বাজখাঁই গলায় স্বল্প রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল,
” ভালোবাসি স্বীকার না করলে ছুঁতে পারবেন না। ”
হ্যাভেনের গভীর লোচন সরু হয়েছে। ভরাট কন্ঠে ভ্রু কুঁচকাল,
” ভালোবাসি বললে ছুঁতে পারব? তার মানে তুমি আমার ছোঁয়া চাও? ”
মেয়েটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। চক্ষুগহ্বরে একরাশ হতবিহ্বল! বিভ্রান্তিতে লুটোপুটি খেয়ে, বিতৃষ্ণায় লালা দ্বারা গলবিল ভেজায়। আইঢাই ভাব বুকে চেপে উপর -নিচ মাথা নেড়ে করল নিষ্পাপ স্বীকারোক্তি।
হ্যাভেন সন্তোষ হাসল। উচ্ছ্বসিত কন্ঠে মুগ্ধতা ঢালল,

” সরাসরি বললেই হয়, তুমি আমার মুখ হতে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে চাও। ”
অরুর স্বর ব্যাকুল শোনালো,
” হ্যাঁ, চাই। একবার বলুন। ”
হ্যাভেন গ্রীবা বাঁকায়। কাছে আসে। প্রবল অধিকার সমেত নিটোল ওষ্ঠ নামিয়ে চুমু আঁকল অরুর ললাটে। পরমুহূর্তে ফট করে কোলে তুলে নিলো তাকে। বিছানায় অগ্রসর হতে হতে চার জোড়া অক্ষিপটের মিলন ঘটিয়ে আওড়াল,
❝ ভালোবাসা শোনার থেকে একবার আমার হয়ে দেখো,
বুকের ভেতর ঢেউ উঠবে আলোড়ন রেখে।
তোমার নামে ঝড় তুলব,
আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে দেবো,
প্রেমের নদী টলমলিয়ে ঢেউ তুলব।
তোমার স্পর্শে জেগে উঠবে ভোর,
তুমি রোদ হলে আমি হবো স্নিগ্ধ বাতাস,
তুমি চাঁদ হলে আমি জোছনার পরশ,
তোমার ছোঁয়ায় তোলপাড় হবে এই হৃদয়
সারা পৃথিবী জানবে, আমি কেবলই তোমার, আর তুমি শুধুই আমার। ❞

সন্তর্পণে ধনুকের ন্যায় বাঁকানো অরুর পাতলা শরীরটা বিছানায় রেখে, হ্যাভেন বেড ল্যাম্প ব্যতীত অন্য বাতি নিভিয়ে দিল। চটজলদি বউয়ের কাছে ফিরে এসে তাৎক্ষণিক আধশোয়া হলো তার উপর। মেয়েটা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে চোখ খিঁচে বুজে আছে। ঘনঘন শ্বাস টানার দরুন মেয়েলি নজরকাড়া দৃশ্যপট হ্যাভেনের নিকট সুস্পষ্ট। এ যাত্রায় হ্যাভেনের গলা শুকিয়ে এলো। নিজেই নার্ভাসনেসে জড়িয়ে গেল।
অরু বলতে নেয়, হ্যাভেন কথা সম্পূর্ন করতে দিল না। ওর গরম ওষ্ঠপুট কানের পাশে যেতেই আপনা-আপনি মুখ বন্ধ হয়ে গেল মেয়েটার। অতি নিকটে শুনতে পেলো একটি নেশাক্ত ফিসফিসে কণ্ঠ,
” তোমার রক্তিম উষ্ণ ঠোঁটের পরশে চুকে যাক আমার বিগত বৎসরের বিষণ্ণতা। ”
বলতে বলতে ভীষণ নিগূঢ় ভাবে অরুর অধরে হারালো সে। শিহরণে কম্পন সৃষ্টি হলো অরুর অঙ্গে। কম্পিত মেয়েটি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে, তার দুটো শীর্ণ হাত, আঁকড়ে ধরল হ্যাভেনের উন্মুক্ত, চওড়া, উজ্জ্বল ফর্সা পৃষ্ঠদেশ। তবুও যেন কম্পনে অবশ হয়ে যাচ্ছে ও। হ্যাভেনের স্পর্শে অসীম উন্মাদনা উপলব্ধি করছে। লোকটা ভেঙেচুরে আত্মসাৎ করছে তার সমস্ত কিছু। এমনটা সে আগে কখনো উপলব্ধি করেনি। হ্যাাভেন যেন আজ নিজের মাঝে নেই। অরুর চোখের জলে বালিশ ভিজে যাচ্ছে।
কিয়ৎক্ষণ পর অরুর ঠোঁটে বড়সড় একটা ক্ষত সৃষ্টি করে মাথা তোলে হ্যাভেন। মেয়েটার কর্ণগহ্বরে ফের শীতল আবেগময় হাস্কিস্বর তেড়ে এলো,

” এই দিনটার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। মনে মনে প্রমিস করেছিলাম বহুবার, তোমাকে নিজের করবো। আজকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! তোমার সমস্ত কাঁপা-কাঁপি আমার বুকের নিচেই হোক। সেদিন অল্প সামলেছিলে আজকে কষ্ট করে পুরোটা সামলাও। ”
হ্যাভেন পুনরায় ডুবল বউয়ের মোম নরম কোমল দেহভাগে। অরুর ঠোঁট চেপে কান্না সংবরণ করছে। এত যন্ত্রণা কেন দিচ্ছে লোকটা? চোখ বুজে নেয় ভয়, লজ্জায়, সংকোচে, জড়তায়।
অতশত খেয়াল নেই হ্যাভেনের। নিজের অস্থিরতার জানান দিতে মেয়েটাকে নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে নিলো৷ জানান দিতে থাকে নিজের এতদিনের বেসামাল অনুভূতির কথন! অরুর সর্বাঙ্গে হ্যাভেন তার অমায়িক ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত। আতঙ্কে দেহশ্রী বিধিবাম কম্পমান মেয়েটার। হ্যাভেনের তীব্র উন্মাদনায় ক্ষণে ক্ষণে ভৎস হচ্ছে সে। অরুর অস্পষ্ট স্বরের গোঙানো শোনা গেল নীরব রুমজুড়ে। স্বামীর সোহাগ তার ভয় দূর করতে ব্যর্থ। ভয়ংকর প্রেমিকের ভয়ংকর ভালোবাসা খুবই প্রখর, তা টের পাচ্ছে অরু। সহ্য করতে না পেরে শব্দ করে কেঁদে ফেলল নাজুক মেয়েটা। হ্যাভেন জোরে জোরে শ্বাস টেনে হাঁপানি রোগীর মতো মুখ তুলল। আহত চোখে তাকায়। কন্ঠে তার উদ্বেগ,

” কষ্ট হচ্ছে জান? ”
অরু মৃদুস্বরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। হ্যাভেনের কাঁধে মুখ ঘষল। সময় নিয়ে ধ্বনিত হলো ছোট্ট এক অস্ফুট শব্দ,
” হুঁ! ”
হ্যাভেন বিফল শ্বাস টানল। আলতো করে চুমু বসায় অরুর অশ্রুসিক্ত দুই নয়নে। গলায় ঠোঁট রেখে কাঁপন ধরানো ভয়ংকর আশ্বাস দিল,
” বেশি ব্যথা দেবো না। আজকে একটু সহ্য করো। এরপর অভ্যাস হয়ে যাবে। ”

বেসামাল প্রেমিকের ভয়াবহ কম্পিত নেশালো বাক্যে নাজুক মেয়েটির অন্তঃকরণ ছ্বলাত করে উঠল। চোখের কার্ণিশ বেয়ে বিরতিহীনভাবে জল গড়িয়ে পড়ছে। উদগ্রীব পুরুষালি হাতদুটো মশগুল হয়ে পড়ল অবিন্যস্ততায়। উন্মাদ পুরুষকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রমণী। হ্যাভেন বেসামাল উৎপীড়নে তাকে ঝলসে দিচ্ছে। হ্যাভেন এতটা মাতাল, বেলেল্লাপনা উন্মাদ হয়ে গিয়েছে, যেন বহুদিন প্রতিক্ষার পর অভুক্ত হিং’স্র জন্তু চোখের সামনে লোভাতুর খাবার পেয়েছে। প্রমত্ত চিত্তে আহরণ করে নিচ্ছে রমণীর শেষ সৌন্দর্যটুকু। অরুর স্বীয় পাতলা গড়নের লতানো শরীরের উপর, হ্যাভেনের ভারিক্কি শরীরটা মনে হচ্ছে, পাহাড় থেকে খসে পড়া বড়সড় কোনো পাথর খন্ড ওর উপর পড়েছে। অতিরিক্ত যন্ত্রণায় তটস্ত দেহশ্রী। লোকটার শক্তপোক্ত বক্ষঃতলে প্রেমময় যাঁতাকলে পিষে যাচ্ছে রমণী। ভয়কে দমন করার প্রবল অনির্বাণ উদ্যমে পুনরায় জোরে খামচে ধরল সুদর্শন পুরুষটির উন্মক্ত পৃষ্ঠদেশ। সঙ্গে সঙ্গে মাঝারি সাইজের ধারালো নখের আঁচড় পড়ল সুখকর উৎপীড়নে ডুবানো লোকটার ফর্সা পিঠে।

প্রেমপিপাসা পর্ব ৩২

এতে বউয়ের শরীরে আদর মাখতে মাতওয়ারা হ্যাভেনের কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো না। আজও তার পৃষ্ঠদেশে জ্বলন অনুভূতি হচ্ছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। সে তো নিজস্ব প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে পিপাসা মেটাতে মত্ত। প্রেয়সীর নরম জীর্ণ দেহশ্রীতে সুখ খুঁজতে উন্মাদ। তিমিরে আচ্ছাদন রজনীতে মিলেমিশে একাকার হচ্ছে দু’টো প্রাণ। প্রণয়ের জলোচ্ছ্বাসে ছন্নছাড়া হলো সমগ্র অস্তিত্ব। একটা সময় বাইরে ঝড়বৃষ্টি থামল। কিন্তু থামল না বদ্ধ কক্ষের ভেতর এক বেসামাল পুরুষের উন্মাদনা।

সমাপ্ত