প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৮
Drm Shohag
ইরফানের নরম কণ্ঠ, “বলো? তুমি কেমন ছেলে লাইক কর?”
মাইরা অবাকের উপর অবাক হয়। মাথা তুলে পিটপিট করে চোখ মেলে ইরফানকে দেখে। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“আপনার কি জ্বর এসেছে?”
ইরফান মাইরার দিকে দু’কদম এগিয়ে আসে। মাথা নিচু করে মাইরার মুখ বরাবর তার মুখ রেখে বলে,
“চেক কর।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এক পা পিছিয়ে যায়। ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“এতো রাতে কেন এসেছেন?”
ইরফান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“তোমার দু’গালের মানচিত্র পাল্টে দিতে।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান মাইরার দিকে আরেকটু চেপে দাঁড়ায়। আবারও গম্ভীর গলা বলে,
“আমি তোমার গালের মানচিত্র পাল্টে দিতে ধেয়ে আসি?”
মাইরা দ্রুত দু’দিকে মাথা নাড়ায় ঘনঘন। শুদ্ধকে বলা কথাগুলো বলে দিয়েছে ভেবেই মাইরার কান্না পায়। ইরফান আবারও একই স্বরে বলে,
“আমি গণ্ডার?”
মাইরা এবার মাথা নিচু করে নেয়। ইরফান মাইরার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। ইরফানের বুকে মাইরার কপাল ঠেকে। মাইরা ঢোক গিলে। ইরফান আবারও বলে,
“আমি মেন্টাল?”
মাইরা জোরে জোরে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সব বলে দিয়েছে শুদ্ধ ভাইয়া। মাথা তুলে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“স্যরি! আর বলব না।”
ইরফান তীক্ষ্ণ গলায় বলে,
“বাট আমি তোমার গালের মানচিত্র পাল্টাবো।”
মাইরা দ্রুত তার দু’হাতে দু’গাল ঢেকে নেয়। ইরফান রেগে বলে,
“বাইরে বেরিয়েছিলে কেন?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“বেরোই নি তো!”
ইরফান মাইরার দু’গাল থেকে মাইরার হাত দু’টো নামিয়ে দেয়। মাইরা ঢোক গিলে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কেমন ছেলে লাইক কর তুমি? এইবার অ্যান্সার না দিলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব স্টুপিট।”
মাইরা কেঁপে ওঠে ধমক খেয়ে। বিরক্ত হয়। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“আপনার মতো থা’প্প’ড় মারার যন্ত্র আর খ’বিশ লোক ছাড়া সব ছেলেদের পছন্দ আমার।”
ইরফান রেগে যায়। দু’হাতে মাইরাকে তার সাথে চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“স্টুপিট, তুমি ভালো হবা না?”
মাইরাও কিছুটা রেগে বলে,
“আপনি গত সপ্তাহেও মেরেছেন আমাকে।”
ইরফান শান্ত চোখে তাকায় মাইরার দিকে। ডান হাতের বুড়ো আঙুল দ্বারা মাইরার গাল স্লাইড করতে করতে মৃদুস্বরে বলে,
“কথা না শুনলে আরও মার খাবে।”
মাইরা ঘনঘন চোখের পাতা ফেলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে। আজকাল ইরফানের দৃষ্টি তাকে তৃষ্ণার্ত কাকের ন্যায় বানিয়ে দেয়।
মাইরা কিছু বোঝার আগেই ইরফান মুখ নামিয়ে মাইরার বাম গাল কা’ম’ড়ে ধরে। মাইরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। ইরফান ছাড়ে না। বরং আরেকটু শক্তি প্রয়োগ করে দাঁত বসায়। মাইরা চোখমুখ কুঁচকে নেয় ব্য’থায়। তবে শান্ত হয়ে যায়। পুরো শরীর কেমন শিরশির করছে। মেঝেতে থাকা পায়ের আঙুল গুলো গুটিয়ে নেয়। ঢোক গিলে।
ইরফান মাইরার গাল ছাড়ে না। দাঁত বসিয়ে চোখ বুজে আছে, যেন খুব ইম্পর্ট্যান্ট কাজে ব্যস্ত সে।
প্রায় তিন মিনিটের মাথায়, ইরফান বুঝল মাইরা শান্ত হয়ে আছে, ধীরে ধীরে কা’ম’ড়ে ধরা গাল ছেড়ে দেয়। জায়গাটা জখম হয়ে গিয়েছে। মাইরা ছাড়া পেয়ে ইরফানের বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে ইরফান বিরক্ত হয়। রেগে বলে,
“রাগিয়ো না আমায়।”
মাইরা চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান তাকায় মাইরার চোখের পানে। মেয়েটার চোখে পানি টইটুম্বুর। ইরফান ডান হাতের আঙুল মাইরার কা’ম’ড় দেয়া স্থানে চেপে ধরে। মাইরা ব্য’থায় কেঁপে ওঠে। ইরফান দেখল মাইরার অবস্থা। মাইরা আঁখি টইটুম্বুর পানি নিয়ে ভেজা গলায় বলে,
“আপনার প্রবলেম কি? এমন রা’ক্ষ’সের মুডে এসেছেন কেন?”
ইরফান মাইরার গালের জখম হওয়া স্থানে আলতো করে হাত বুলিয়ে মাইরার চোখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“তুমি থা’প্প’ড় লাইক করছ না, তাই।”
মাইরা হা করে তাকায়। এই লোক কি পরিমাণ খ’বিশ ভাবা যায়? থা’প্প’ড় এর বদলে কা’মড় দিচ্ছে।
ইরফান দু’হাতে মাইরার ঝাপসা চোখ মুছে দেয়। নমনীয় সুরে শুধায়,
“Do you know the name of this bite?”
মাইরা চোখের পাতা ফেলে বোকা চোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইরফান ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। হেসেছে বোধয়, তবে মাইরা বুঝলো না। তার কাছে ইরফানকে স্বাভাবিক গাম্ভীর্য লাগে। ইরফান তার বা হাত মাইরার কানের লতি ছুুঁইয়ে ঘাড়ে রাখে। আঙুলগুলো চুলের ভাঁজে রাখে। মাইরা ঢোক গিলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান তার মাথা বা দিকে বাঁকিয়ে চোখের পলকে মাইরার ডান গালে দাঁত বসায়। মাইরা দাঁতে দাঁত চেপে রইল। এইবার একটা টুঁ-শব্দটিও করল না। মিনিট দুই পর মাইরার গাল আলগা করে দেয় ইরফান। মাথা তুলে মাইরার দিকে তাকালে দেখল মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে।
ইরফান বা হাতে মাইরার কা’ম’ড় দেয়া স্থানে আঙুল চালিয়ে বলে,
“ইট’স বদনজর টিকা অর বদনজর বাইট অ্যান্ড….”
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে থেমে যায়। দু’তিনটে চুল কপাল জুড়ে স্থান নিয়েছে মাইরার। ইরফান ডান হাতে তা মাইরার কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বিড়বিড় করে,
“লিটল গার্ল।
মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকািয়ে আছে ইরফানের দিকে। বদনজর টিকা তো ওই যে ছোটবেলায় কপালে কালো টিপ দেয়, না ওটা কে তো বদনজর ফোঁটা বলে তাদের গ্রামে। যদিও সেটা মানুষের মুখে প্রচলিত। আদতে এটা একদমই ঠিক নয়। কিন্তুু এই লোক কোন আক্কেলে কা’ম’ড়ে বলছে এটা নাকি টিকা। ইরফানকে থেমে যেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আর কি? থেমে গেলেন কেন? আর অদ্ভুদ নাম মনে পড়ছে না?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে ধমকে বলে,
“স্টুপিট গার্ল। বড় হবে কবে?”
মাইরা তার দু’গালে হাত রেখে রেগে বলে,
“হব না বড়। হয়েছে? সারাদিন এক কথা বলে বলে কান পঁচে গেল। ইশ! আমার গাল!”
ইরফান বিরক্তির শ্বাস ফেলে। এই গাধাকে শুধু থাপড়াতেই ইচ্ছে করে তার। হঠাৎ-ই শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“বাইরে বেরিয়েছিলে কেন?”
মাইরা ইরফানের দিকে তাকায়। মুহূর্তেই এমন রেগে গেল কেন? চোখ নামিয়ে ঢোক গিলে বলে,
“বের হইনি।”
ইরফান রেগে বলে,
“মিথ্যা বললে বেহিসাব বাইটে এই গাল দু’টো অস্তিত্ব হারাবে।
একটু থেমে বলে, নাছিমের সাথে কথা বলেছ কেন? ইউ নো, হি লাইকস্ ইউ।”
মাইরা বুঝল বাইরের সেই ছেলের নাম নাছিম। অতঃপর বলে,
“হ্যাঁ জানি। সে আমাকে পছন্দ করে। আমিও….”
ইরফান মাইরার ঠোঁটের উপর বুড়ো আঙুল চেপে ধরে। দৃষ্টি সেথায় নিবদ্ধ রেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“এটা খাওয়াতে না চাইলে বাজে বকা অফ কর স্টুপিট গার্ল।”
ইরফানের কথার মর্মার্থ বুঝতে পেরে মাইরা গুটিয়ে যায়। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। হাত ঘড়িতে একবার সময় দেখে। এরপর মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“এক মগ কফি, আর তোমার ফিজিক্স বই নিয়ে আমার রুমে আসবে। টাইম ফাইভ মিনিট’স।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইরফানের দিকে। তার সামনে দিন ফিজিক্স এক্সাম। এই লোক জানলো কীভাবে? অতঃপর বলে,
“আপনি জানলেন কি করে সামনে দিন আমার ফিজিক্স এক্সাম?”
ইরফান দরজা খুলে বাইরে যেতে যেতে বলে,
“Because I am not a donkey like you.”
মাইরা চোখমুখ কুঁচকে তাকালো। এই লোক ভালোভাবে কথাই বলতে পারে না। সে গাধা হলে এই লোক যে গন্ডার, সেটা স্বীকার করবে না। খ’বিশ লোক। ইরফান পিছু ফিরে বলে,
“কাম ফাস্ট স্টুপিট।”
মাইরা যেভাবে ছিল ওভাবেই ধুপধাপ পা ফেলে ইরফানের পাশ কাটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নেয়, ইরফান মাইরার হাত টেনে ধরে। তার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। শক্ত চোখে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা অবাক হয়। কি জ্বালা! এই লোকের সেকেন্ডে সেকেন্ডে এমন মুড চেঞ্জ হয় কেন? কিছু বলতে চায় তার আগেই ইরফান মাইরার ওড়না হাতায়, আগামাথা খুঁজে না পেয়ে বিরক্ত হয়। মাইরা ইরফানের হাত ধরে বলে,
“কি করতে চাইছেন আপনি?”
ইরফান কিছু বলল না। ওড়না টেনে মাইরার মাথা ঢেকে দেয়। মাইরা অবাক হয় ইরফানের কান্ডে। ইরফান পাশ ফিরে খোলা দরজার দিকে তাকায়। নাছিম আর শুদ্ধর গলায় আওয়াজ পায়। কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে ওঠে। মাইরার হাত ধরে নিজেই রান্নাঘরের দিকে যায়। মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“আরে আপনি কেন যাচ্ছেন? আমি আপনার কফিতে বি’ষ মেশাবো না। নিশ্চিতে থাকুন।”
ইরফান ধমকে বলে,
“সাট আপ।”
মাইরা মুখ ফুলিয়ে ইরফানের পিছু পিছু যায়।
মাইরা চুলায় গরম পানি বসিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, একটু পর পর ইরফানের দিকে তাকায়। যে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ফোন গুতাচ্ছে। মাইরা ভাবে এই লোকের প্রবলেম টা কি। গাল দু’টোয় হাত বুলায়। ইশ! কি জোরে কা’ম’ড় টাই না দিল! বিড়বিড় করল, “রা’ক্ষ’স একটা।’
ইরফান মাইরার পিঠ ঘেঁষে পিছনে দাঁড়িয়ে লো ভয়েসে বলে,
“আচ্ছা?”
মাইরা ভয় পেয়ে যায়। ইনি তো দরজায় ছিল, এখানে কখন আসলো? দ্রুত পিছু ফিরতে চায়। একদম চুলার সামনেই দাঁড়িয়েছিল। বেখেয়ালে বা হাত টগবগে ফুটে ওঠা গরম পানির ভেতর পড়ে। মাইরা আর্তনাদ করে ওঠে। ইরফান হতভম্ব। তার হাতে থাকা ফোন ছুঁড়ে ফেলে দ্রুত মাইরার হাত টেনে তোলে। বা হাত উল্টেপাল্টে দেখে বিচলিত কণ্ঠে বলতে থাকে,
“স্যরি লিটল গার্ল। অ্যা’ম স্যরি।”
এরপর দ্রুত রান্নাঘরের সিঙ্কের উপর ট্যাপের নিচে মাইরার হাতটা ধরে।
মাইরার হাত ভীষণ জ্বলছে। ইরফানের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে চায়। ইরফান ছাড়ে না। তার কপালে ভয়া’নক চিন্তার ভাঁজ। তার কাছে তো মেডিসিন নেই। এখন কি হবে? মাইরা জড়ানো কণ্ঠে বলে,
“হাত ছাড়ুন।”
ইরফান মাইরার দিকে তাকায়। ব্যাকুল কণ্ঠে বলে,
“অ্যা’ম স্যরি! ফাস্টএইড বক্স আনা উচিৎ ছিল আমার।”
শেষ কথাটায় নিজের প্রতি বিরক্তি ঝরে পড়ে।
ইরফান চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“তোমাকে যে মলম, ব্যান্ডেজ কিনে দিয়েছিলাম, ওসব কি করেছ?”
মাইরা ব্য’থাতুর গলায় বলে,
“ফেলে দিয়েছি।”
ইরফান রেগে তাকায় মাইরার দিকে। ট্যাপ বন্ধ করে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে,
“আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? হাত পুড়েছে আমার, পা নয়। নামান আমায়।”
ইরফান বিরক্ত হলো। তবে কিছু বললো না। তার ঘরে গিয়ে মাইরাকে বেডে বসিয়ে দেয়। মাইরা নামতে গেলে ইরফান ধমকে বলে,
“স্টুপিট গার্ল আমায় রাগিয়ো না।”
মাইরা হা করে চেয়ে আছে। তার হাত পুড়েছে, জ্বলছে প্রচুর। আর এই লোক কি করছে এসব? অ’সহ্য জ্বলুনিতে না চাইতেও মেয়েটার চোখের কোণে ব্য’থাতুর পানির কণা জমে। ইরফানের দিকে তাকিয়ে ভেজা গলায় জানায়,
“অনেক জ্বলছে।”
ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“এক্ষুনি আসছি। বসো।”
এরপর ইরফান শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
একটি পাত্রে পানি নিয়েছে, এর মধ্যে বেশ অনেকগুলো বরফের খন্ড। ইরফান দ্রুত পায়ে মাইরার সামনে বিছানায় বসে। এরপর মাইরার হাত টেনে বরফ মেশানো পানিতে ডুবিয়ে দেয়। মাইরা এবার একটু স্বস্তি পায়। ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার দিকে কেমন অশান্ত চোখে চেয়ে আছে। মাইরা কেঁদেছে এটুকু সময়ে। চোখমুখে হালকা লাল আভা।
হঠাৎ-ই ইরফান মাইরার হাত ছেড়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য এগোলে মাইরা বলে ওঠে,
“কোথায় যাচ্ছেন?”
ইরফান দ্রুত মাইরার কাছে এগিয়ে এসে খানিক ঝুঁকে মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বলে,
“ডোন্ট ক্রাই। পাঁচ মিনিট টাইম দাও আমায়। হাত উঠাবে না এর ভেতর থেকে। ওকে?”
মাইরা পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে ইরফানের দিকে। ইরফান দ্রুত বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। মেইন গেট থেকে বাইরে বেরিয়ে দ্রুত তার গাড়ির দিকে যায়। শুদ্ধ অবাক হয় ইরফানকে যেতে দেখে। নাছিম মাত্র-ই ওর বাসার দিকে গিয়েছে। পিছন থেকে শুদ্ধ ইরফানকে ডাকে,
“এ্যাই ইরফান, রাতে যাচ্ছিস কেন? কাল সকালে যাস।”
ইরফান কিছু একটা ভেবে দ্রুত শুদ্ধর সামনে এসে বিচলিত কণ্ঠে বলে,
“তোর কাছে ফাস্টএইড বক্স আছে?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“না। নাপা আছে শুধু। ওসব আমার লাগে না।”
ইরফান বিরক্ত হয়ে, ড্যাম ইট’ বলে আবারও এগিয়ে যায় গাড়ির দিকে। শুদ্ধ হা করে চেয়ে আছে। কি হয়েছে এর? পিছন থেকে বলে,
“বাড়ি চলে যাচ্ছিস?”
ইরফান গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে বলে,
“নো।”
শুদ্ধ বুঝলো না, বাড়ি না গেলে এই রাতে যাচ্ছে কোথায়? সে ভেতরে গেল না। সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।
ইরফানের মুখাবয়বে অসহায়ত্বের ছাপ। শহর হলে তো সারারাতেও প্রবলেম ছিল না। বাট গ্রাম হওয়ায় প্রায় সব দোকান-ই বন্ধ। হাই স্পিডে ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালায়, বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি চালালে পাকা রাস্তায় এক কোণায় একটা দোকান খোলা দেখতে পেয়ে সেখানে গাড়ি সাইড করে। দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে দেখল এটা ওষুধের দোকান। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এগিয়ে গিয়ে বলে,
“ব্যান্ডেজ, মলম দাও,, ফাস্ট।”
ইরফানের চেয়ে ২-৪ বছরের কম বয়সী দোকানদার ছেলেটির প্রশ্ন,
“কোন মলম?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হাত পুড়ে যায় বলে যত মলম তৈরী করা হয়েছে সব।”
ছেলেটি একটু অবাক হয়। তবে তার দোকানে যা যা মলম ছিল মোটামুটি সবই বের করে আনে। ব্যান্ডেজও এনে রাখে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আর নেই?”
“জ্বি আছে।”
“সব দিতে বলেছি।” ইরফানের কণ্ঠ শক্ত। কিছু ব্য’থার ওষুধও দিতে বলে।
ছেলেটি আর কি করবে। তার দোকানে যত মলম আর ব্যান্ডেজ ছিল সবই বের করে, সাথে কিছু ব্য’থার ওষুধ। এরপর সব বড় বড় প্যাকেটে ভরে সবগুলো প্যাকেট একটি বড় ব্যাগে ভরে দেয়। ইরফান তার ওয়ালেট ডেস্কে রেখে ব্যাগ নিয়ে তার গাড়ির দিকে এগোলে ছেলেটি বলে,
“ভাই আপনার মানি ব্যাগ?”
ইরফান হাতের ব্যাগ গাড়িতে রেখে এসে তার ওয়ালেট এর ভেতর থেকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বের করে নেয়। এরপর ওয়ালেট ডেস্কে রেখে দেয়। ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হিসাব করে টাকা দিন। মানি ব্যাগ দিয়ে যাচ্ছেন কেন? টাকা আছে তো আদোও?”
ইরফান রেগে তাকায় ছেলেটার দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এই ওয়ালেটে দশ হাজারের কম নেই। কম পড়লে নেক্সট ডে দিয়ে যাব। এখন আমার টাইম ওয়েস্ট করলে তোকে কেটে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে আসব, বাস্টার্ড।”
ছেলেটি চোখ বড় বড় করে তাকায়। ওরে আল্লাহ, এতো রাতে কোন গুণ্ডা তার দোকানে এসেছে। এজন্যই তার মা রাতে দোকান খুলে রাখতে নিষেধ করে। এরপর থেকে রাত ১২ টা বাজলেই দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি চলে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ডেস্কের উপর থাকা ওয়ালেট উল্টেপাল্টে দেখে অবাক হলো।
গ্রে (ধূসর) কালার ওয়ালেট এর উপর গাঢ় সিলভার কালারে gucci লেখা। ভেতরে চেক করলে নতুন টাকা চোখে পড়ে। টাকাগুলো বের করে গুণে দেখল সবগুলো পাঁচশ, একহাজার টাকার নোট, পুরো ১৩ হাজার টাকা।
ছেলেটা অবাক হলো সাথে খুশিও। এই ওয়ালেট গুচ্চি ব্রান্ডের। আর তাকে পাওনার চেয়েও তিনগুণ টাকা ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছে।
ইরফান গাড়ি থেকে নেমে হাতঘড়িতে একবার টাইম দেখে। বেশি সময় যায়নি। মিনিট দশেক আগে বেরিয়েছিল। শুদ্ধ ইরফানকে দেখে বলে,
“গিয়েছিলি কোথায়? আবার চলেও এলি?”
ইরফান দ্রুত বাড়ির ভেতরে যেতে যেতে বলে,
“কাজ ছিল।”
শুদ্ধ ভোতা মুখে ইরফানকে দেখল। হাতে ওটা কিসের ব্যাগ? এই ইরফান টা পা’গল তো হয়েছেই সাথে তার নিজেকেও পা’গল লাগে মাঝে মাঝে ইরফানকে চিনতে না পারার শোকে।
ইরফান ঘরে গিয়ে বেডে তাকলে দেখল মাইরা ঘুমিয়ে আছে। এগিয়ে গিয়ে একটা প্যাকেট থেকে মলম, ব্যান্ডেজ বের করে দ্রুত মাইরার পাশে বসলে জায়গাটা ভেজা মনে হয়। বসা থেকে উঠে দেখল পাত্রের পানি সব উল্টে পড়েছে। মাইরার হাত ভেজা জায়গায়। ইরফান বিরক্ত হলো। বিড়বিড় করল, ‘স্টুপিট।’
মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসে মাইরার হাত চেক করল। অনেক লাল হয়ে গিয়েছে, মনে হচ্ছে চামড়া উঠে গিয়েছে। ইরফানের মুখে ব্য’থাতুর ছাপ। আলতো হাতে মলম লাগিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল হাতটা। এরপর মাইরাকে দু’হাতে ধরে আরেকটু সরিয়ে শুইয়ে দেয়। এপাশ পুরোটা পানিতে ভিজে গিয়েছে। মাইরার মুখের দিকে তাকালে দেখল চোখের আশেপাশে পানির ছিঁটেফোঁটা। হাত বাড়িয়ে মুখ মুছে দেয়। গালে কা’ম’ড়ের দাগ স্পষ্ট ফুটে আছে। কি যেন ভেবে ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে।
ব্যান্ডেজ করা হাতটার দিকে তাকালে মুহূর্তেই মুখজুড়ে অসহায়ত্ব ভিড় করে। তার মনে হলো সে মাইরার পিছনে গিয়ে দাঁড়ানোয় মাইরা এখন ক’ষ্ট পাচ্ছে। অনুতপ্ত স্বরে বলে,
“স্যরি লিটল গার্ল।”
এরপর গালে আলতো থা’প্প’ড় দিয়ে ডাকে,
“হেই গার্ল, ওঠো।”
ঘুমন্ত মাইরার কপালে বিরক্তির ভাঁজ। ইরফান আবারও একইভাবে ডাকলে মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তার উপর ইরফানকে দেখে অবাক হয়। ইরফান মাইরাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“রাতে খেয়েছ?”
মাইরা ঘুমে তাকাতেই পারছে না। আবারও চোখ বুজে নেয়। ডান হাতে ইরফানকে ঠেলে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলে,
“খ’বিশ লোক ঘুমিয়েও শান্তি দেয় না।”
মাইরার কথা শুনে ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকায় মাইরার দিকে। এইবার আগের চেয়ে আরেকটু জোরে গালে থা’প্প’ড় দিয়ে ধমকে বলে,
“স্টুপিট গার্ল ওঠো বলছি। নয়তো থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব।”
এইবার মাইরার ঘুম পুরোপুরি ছুটে যায়। চোখ মেলে বড় বড় চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। সে তো ভাবল ঘুমের ঘোরে ভুলভাল দেখেছে। আমতা আমতা করে বলে,
“এটা সত্যি আপনি?”
ইরফান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রেগে বলে,
“নো। আমার ভূত। ইডিয়ট।”
মাইরা শোয়া থেকে উঠে বসে। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝল এটা ইরফানের রুম। ইরফান তাকে রেখে কই যেন গিয়েছিল। হাতের জ্বলুনিতে সে শুয়ে ছিল, কখন যে ঘুমিয়েছে বুঝতে পারেনি। হাতের কথা মনে পড়লে অবাক হয়, এখন জ্বলছে না কেন? হাত বাড়িয়ে সামনে আনলে দেখল ব্যান্ডেজ করা। এটা কে করল?
ইরফান ভ্রু কুঁচকে আবারও জিজ্ঞেস করে,
“রাতে খেয়েছ?
মাইরা চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। বোকার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে ইরফান ধমকে বলে,
“স্টুপিট তোমার কি মূখ্য কাজ আমাকে রাগানো? অ্যান্সার করছ না কেন?”
ধমক খেয়ে মাইরার ধ্যান ভাঙে। মিনমিন করে বলে,
“খেয়েছি।”
ইরফান এগিয়ে গিয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে একটা ওষুধ ছিঁড়ে বের করে, সাথে এক গ্লাস পানি নিয়ে মাইরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এটা খাও, ফাস্ট।”
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“কিসের ওষুধ খাওয়াচ্ছেন আমায়? আগে বলুন। নয়তো খাবো না।”
ইরফানের মেজাজ খারাপ হয়। এই বাচ্চা শুধু পারে তার ঠাণ্ডা মেজাজ গরম করতে।
হাতের গ্লাস ঠাস করে রেখে মাইরাকে জোর করে হা করিয়ে দিয়ে ওষুধ ঠুসে দেয় মুখে। মাইরা চোখ বড় বড় তাকায়। ইরফান ডান হাতে গ্লাস নিয়ে মাইরার মুখের দিকে এগোলে মাইরা বলে ওঠে,
“দিন দিন আমি খাচ্ছি, আমি খাচ্ছি।”
বলে ইরফানের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে দ্রুত ওষুধ খেয়ে নেয়। যে গতিতে গ্লাস এগিয়ে আনছিল, তার মুখ কেটে যেত। তাকে তো মারবে না এই লোক সে জানে। তাই সব ভাবনা বাদ দিয়ে আগে ওষুধ টা খেয়ে নিল। সব পানি খেয়ে ফাঁকা গ্লাস বেড সাইড টেবিলের উপর রাখে। এরপর বেড থেকে নেমে দাঁড়ায়। ইরফান পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মাইরা ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“এ্যাই ব্যান্ডেজ আপনি করে দিয়েছেন?”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৭
“নো।”
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান কিছুটা বিব্রতবোধ করে। অতঃপর রেগে বলে,
“Go to sleep. Don’t disturb me.”
মাইরা মুখ বাঁকায়। ধীর পায়ে ইরফানের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে ইরফান পিছন থেকে বলে,
“রাত জাগবে না।”
মাইরা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পিছু ফিরে ইরফানের দিকে তাকায়। অতঃপর মিটিমিটি হেসে বলে,
“জাগবো।”
ইরফান এগিয়ে আসতে নিলে মাইরা হেসে দৌড় দেয় তার ঘরের দিকে। ইরফান বিড়বিড় করে,
“স্টুপিট বাঁদর।”