প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩০

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩০
Drm Shohag

“কি হলো? কথা কানে যায় না? থা’প্প’ড় খাবি?”
মাইরা কেঁপে ওঠে। আমতা আমতা করে বলে,
“এটা তো আপনার হাত।”
ইরফান রেগে বলে,
“সো হোয়াট? আগে মুখ ক্লিন করবি এরপর কথা। যা বলেছি কর, হারি আপ।”
মাইরা কি করবে ভেবে পায় না। ইরফানের আবারও ধমকে সত্যি সত্যিই ইরফানের হাতের উপর থুতু ফেলল। ইরফান শক্ত মুখাবয়বে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। মাইরা ঘাড় বাঁকিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলে,

“ফেলেছি।”
ইরফান তার হাতের দিকে তাকালো। চোখ ঘুরিয়ে মাইরার দিকে চেয়ে রেগে বলে, “এতোটুকু ফেললি কেন? সব ফেলতে বলেছি আমি। ফ্যাল স্টুপিট।”
মাইরা বোকাচোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার কান্না পাচ্ছে। সে এখন বসে বসে থুতু জমা করবে? ইরফানের ধমকে আরও খানিক থুতু ফেলল। এরপর ইরফানের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলে,
“আর নেই। সত্যি বলছি।”
ইরফান বোধয় কিছুটা শান্ত হলো। মাইরাকে ছেড়ে দিল। তার হাতে ফেলানো থুতুর দিকে কিছু সময় চেয়ে রইল। চকলেটের কিছু অংশ থুতুর সাথে মিশে আছে। ইরফান হাত ঝাড়া দিল একবার। এরপর মাইরার মুখ চেপে বলে,
“হা কর, আমায় চেক করতে দে।”
মাইরা কিছু বলতে নিলে ইরফান রেগে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“যাস্ট একটা কথা বলবি তো থা’প্প’ড় দিয়ে এক্ষুনি সব দাঁত ফেলব। এসব খাওয়ার সাধ মেটাবো আজ।”
মাইরা ঢোক গিলে সত্যিই সত্যিই হা করল। ইরফান খুব মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে মাইরার মুখের ভেতর। মাইরা আশেপাশে তাকালো। অনেকেই অদ্ভুদ চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। আপাতত তার নিজেকে একটা জোকার লাগছে। কোন দুঃখে যে এই লোকটার সাথে আসলো সেই আফসোস রাখার জায়গা পাচ্ছে না।
এদিকে মাইরার হা করে থাকতে থাকতে চাপা লেগে যায়। হা করা মুখ বন্ধ করে নেয়। ইরফান রেগে তাকালে মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“পানি কিনে আনুন। কুলি করে নিলেই তো হয়। এমন করছেন কেন?”
ইরফান কিছুটা শান্ত হলো। কিছু বললো না।পাশে দোকানের দিকে দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে একটা পানির বোতল কিনে এনে একবার ঘুরিয়েই বোতলের মুখ খুলে ছিঁটকে ফেলল। এরপর বোতলটি মাইরার দিকে এগিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,

“মুখ ধুইয়ে নাও ভালোভাবে।”
মাইরা অবাক হয়ে তাকায় ইরফানের দিকে। একটু আগের ভয়েস টোনে মাইরার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠেছিল, অথচ এখন একদম শান্ত? ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা কিছু বলে না। ইরফানের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে ইরফানের হাতের দিকে তাকায়। তার নিজেরই কেমন যেন লাগছে ইরফানের হাত দেখে, আর এই লোক তার চকলেট ওয়ালা মুখ ধোয়ার মিশনে নেমেছে। ইরফানের দিকে বোতলটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আগে আপনার হাত ধুয়ে নিন।”
ইরফান রেগে যায়। মাইরার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“যা বলেছি শুনবে নাকি অন্যকিছু করতে হবে?
মাইরা কথা না বাড়িয়ে কয়েকবার কুলি করে নিল। এরপর তার বা হাতে ইরফানের ডান হাত টেনে নেয়। ইরফান ভ্রু কোঁচকালো। তবে কিছু বললো না। মাইরা তার ডান হাতে বোতলের পানি ঢালে, বা হাতে ইরফানের হাত বুলিয়ে ভালোভাবে ধুইয়ে দেয়। এরপর ইরফান মাইরার হাত থেকে বোতল নিয়ে ফাঁকা স্থানে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তারপর মাইরার মাথা থেকে আরও নিচের দিকে আঁচল টেনে দেয়। মাইরা পিছন দিকে আঁচল টেনে বলে,
“আমি তো দেখতেই পাচ্ছি না। হাঁটবো কি করে?”
ইরফান রেগে বলে,

“আর একবার যদি দেখেছি শাড়ি পরে বাইরে বেরতে, ফাস্ট শাড়ি কাটবো, তারপর তোমাকে।”
মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। উফ! এই লোক সেকেন্ডে সেকেন্ডে পল্টিবাজ হয়ে যায়। ভাবনার মাঝেই ইরফান মাইরাকে কোলে নিতে নিলে মাইরা ইরফানকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। বিড়বিড় করে, ‘আল্লাহ এই লোকটাকে একটু বুদ্ধি দাও।’
রেগে বলে,
“কি করছেন?”
ইরফান মাইরাকে টেনে তার দিকে এনে শক্ত গলায় বলে,
“স্টুপিট গার্ল, আমায় রাগাচ্ছ কেন?”
মাইরা মিনমিন করে বলে,
“আমি হাঁটতে পারবো। চলুন।”
“একটু আগেই তো বললে দেখতে পাচ্ছো না!”
মাইরা বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমার মাথা ব্য’থা ধরে গেল আপনার জন্য। চলুন তো!”
কথাটা বলার সাথে সাথেই চোখের পলকে ইরফান মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। সে ভাবলো এটা বললে কথা না বাড়িয়ে দ্রুত যাবে, অথচ হলো তার উল্টো। মাইরা আশেপাশে আর তাকালো না। কত মানুষ যে চেয়ে আছে তার দিকে ভাবতেই ল’জ্জায় সিটিয়ে গেল। বিড়বিড় করল, ‘আর জীবনে যদি এই লোকের সাথে বেরিয়েছি!’

মাইরা চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে। ইরফানের ফুপির বাড়ি গিয়ে শুধু কোনোরকমে বলে এসেছে চলে যাচ্ছে, এরপর চলে আসলো। তার কোনো কথাই আর শুনলো না। শাড়িটাও পাল্টাতে দেয়নি। চকলেট আইসক্রিম গুলোও সব ফেলে দিয়েছে। মেলায় ঘুরতে তো পারলোই না, শুদ্ধ ভাইয়ের বউকেও দেখতে পারলো না। সবমিলিয়ে ভীষণ মন খা’রা’প করে বসে আছে ইরফানের পাশের সিটে চুপচাপ। আড়চোখে ইরফানের দিকে তাকায়। কেমন গম্ভীর হয়ে আছে। এটা তো নতুন নয়, লোকটা তো এমনই। চুপ না থাকতে পেরে বলল,
“চলুন না একবার শুদ্ধ ভাইয়ার বউকে দেখে আসি।”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“শুদ্ধর বউ এখানে নেই। যা জানো না সেটা বারবার কেন বলছো?”
মাইরা বোঝানোর স্বরে বলল,
“সত্যি বলছি, শুদ্ধ ভাইয়ার বউ এই গ্রামের একটা মেয়ে।”
ইরফান ধমকে বলে,

“সাট আপ। অল-টাইম বাজে না বকলে হয় না তোমার?”
মাইরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই লোক তাকে বিশ্বাস-ই করছে না। বিরক্ত লাগলো। সে মিথ্যা কেন বলবে। শুদ্ধর মা-ই তো তাকে বলল।
দু’পা সিটের উপর তুলে জানালার দিকে মুখ করে বসল। ইরফান আড়চোখে একবার তাকায়, এরপর আবারও গাড়ি চালানোয় মন দেয়।
মাইরার সেই চকলেট আর আইসক্রিম এর কথা মনে পড়লো। মাটিতে সব কিভাবে পড়ে ছিল। এখনো কি আছে? না-কি কেউ তুলে নিয়েছে? আবারও ইরফানের দিকে চেয়ে ভয়ে ভয়ে বলে,
“ওতোগুলো চকলেট আইসক্রিম ফেলে দিলেন কেন? ওগুলো নষ্ট হবে ওখানে।”
ইরফান সাথে সাথে গাড়ির ব্রেক কষে। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। ইরফান ডান হাত স্টিয়ারিং-এ রেখে মাইরার দিকে তাকায় শক্ত চোখে। মাইরা আমতা আমতা করে মিনমিনে গলায় বলে,
“আমার চকলেট আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।”

ইরফান মাইরার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে। বা হাত চোখের উপর রেখে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। কি হলো লোকটার? একটু এগিয়ে এসে বলে,
“আপনার কি মাথা ব্য’থা করছে?”
ইরফান ঝরের বেগে মাইরার দু’হাত সিটের সাথে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত গলায় বলে,
“আমার পুরো বডিতে পে’ইন হচ্ছে। যাস্ট ফো ইউ, স্টুপিট।”
মাইরা ভীত চোখে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। বারবার ঢোক গিলছে। শাড়ির যাচ্ছেতাই অবস্থা। ইরফান মাইরার ভীতি চোখজোড়ায় পানে দৃষ্টি রাখে।
ফোঁস করে শ্বাস ফেলে মাইরা গালে হাত দিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“ভ’য় পাচ্ছো কেন? খাচ্ছি তোমায়?”

মাইরা বারবার চোখের পাতা বন্ধ করে আর খোলে। ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে অদ্ভুদভাবে। মাইরার কেমন যেন নিজেকেই পা’গল পা’গল লাগে। এই লোক হঠাৎ-ই হাই লেভেলের রেগে যায়। আবার হঠাৎ-ই কেমন ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ইরফান মাইরাকে ছেড়ে তার সিটে ঠিক হয়ে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
“রাগিয়ো না আমায়। আর একটা কথা বললে স্কচটেপ লাগিয়ে রাখবো মুখে।”
মাইরা মুখ ফুলিয়ে নিল। এই লোক সত্যি সত্যিই স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়। তার প্রমাণ তো সে পেয়েছেই এর আগে কতশতবার। মন খা’রা’প করে জানালার দিকে মুখ করে বসল। চুপচাপ বাইরের দিকে দৃষ্টি দিল।
মাইরা এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে যায়। গাড়ির ধাক্কা খেয়ে বারবার জানালার সাথে কপাল ধাক্কা লাগে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। মেয়েটা শরীর ছেড়ে ঘুমিয়ে আছে, ধাক্কা খায় তবুও ঘুম ভাঙে না। ইরফান গাড়ি সাইড করল। এরপর এগিয়ে গিয়ে মাইরাকে টেনে তার দিকে ফেরায়। মাইরা হেলে পরে ইরফানের বুকে। ইরফান তাকায় মাইরার মুখপানে।

বাচ্চামির কমতি নেই মেয়েটার মাঝে, ঘুমিয়ে আরও বাচ্চা লাগলো ইরফানের কাছে, কপালে সূক্ষ্ম বিরক্তির ভাঁজ ফুটে ওঠে। তবে মাইরার স্নিগ্ধ,মায়াময়, তার অপছন্দের তালিকায় থাকা মেয়েটার মুখের আদলে তার মুখজুড়ে শীতলতায় ছেঁয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ গম্ভীর মুখাবয়বে তাকিয়ে থাকে মাইরার ফোলা ফোলা গাল, বন্ধ চোখের পাতা, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে সব।
এরপর মাইরাকে টেনে তার কোলে বসিয়ে নেয়। মাইরা ঘুমের ঘোরে উষ্ণতা পেয়ে দু’হাতে ইরফানকে আঁকড়ে ধরে। ইরফান ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। মাইরার হাত ঠাণ্ডা লাগলো তার কাছে, গলা চেক করল, ঠাণ্ডা। ভ্রু কোঁচকালো। এই মেয়ের শরীরে র’ক্ত নেই? গাড়ির এসি অফ করল। এরপর গাড়ি স্টার্ট দেয়।
কিছুক্ষণ পর মাইরা ঘুমের মাঝেই নড়েচড়ে ওঠে। ইরফান ঘেমে গিয়েছে, তবে এসি ছাড়েনি। মাইরাকে উশখুশ করতে দেখে চোখ নামিয়ে তাকায়,, বা হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরায় ডান হাতের উল্টোপিঠে মাইরার গলা চেক করে, ঘেমে গিয়েছে। এজন্যই ছটফট করছে। ইরফান গাড়ি থামালো। এই মেয়ে আসলে তার লাইফে এসেছেই তাকে জ্বালাতে, ব্যাস আর কিচ্ছু না। আবারও এসি ছাড়লো। কসরত করে গায়ের কোট খুলে মাইরাকে ডেকে দেয়। এরপর গাড়ি স্টার্ট দেয়।

মাইরা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। সে আসলে কোথায় এটাই বোঝার চেষ্টা করছে। ঘরময় অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে। নাকের কাছে ইরফানের গায়ে লেগে থাকা সেই স্মেল পায়। হাতের সাথে কিছু একটা বাঁধে। ভালোভাবে হাতিয়ে বুঝল এটা লোকটার কোট ফোট হবে।
কিন্তুু সে তো গাড়িতে ছিল। দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসে। এটা যে গাড়ি নয় খুব ভালোই বুঝল, ঘর-ই হবে। কিন্তুু এখানে আসলো কি করে?

এমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে মেয়েটার একটু ভয় ভয় লাগলো। হাতিয়ে হাতিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ঘরের লাইট জ্বালালো। ঘরের চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বুঝল এটা ইরফানের রুম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখল ইরফান নেই। উল্টো ঘুরে ঘর থেকে বেরোনোর জন্য দরজা টানলে খোলে না। অনেক চেষ্টা করল তবুও পারল না। মেজাজ খা’রা’প হলো। এই লোক তাকে এই ঘরে আটকে রেখে কোথায় গিয়েছে। উফ!
এগিয়ে গিয়ে বেডের উপর পা তুলে বসলো। এরপর চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। শুধু অন্ধকার করে রাখে ঘরটা, তাছাড়া মাইরার এই ঘর ভীষণ পছন্দের। অনেক সুন্দর গোছানো। আর কেমন সাদা কালো জিনিসে মোড়ানো সব। দেয়ালের এক কোণায় নজর পড়লে ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরা। বেড থেকে নেমে এগিয়ে গেল। সাদা দেয়ালের সঙ্গে একদম মিশে সাদা রঙের একটি ডোর। মাইরা অবাক হলো। ঘরের ভেতর ঘর। যেভাবে ডোর লাগানো, বোঝাই যায় না। মাইরার চোখে ডোরের সোনালি হাতল চোখে পড়ল বলে দেখতে পেল। বাইরে থেকে ডোরের হাতল ধরে টানে, তবে খোলে না। মাইরা অনেক চেষ্টা করে তবে ডোর খুলতে ব্যর্থ হয়।
পিছন থেকে গম্ভীর স্বরে ইরফানের কণ্ঠ ভেসে আসে,

“কি করছ?”
মাইরা দ্রুত পিছু ফিরে তাকায়। ঢোক গিলে। ইরফান এগিয়ে এসে বলে,
“হোয়াট? এখানে কি করছ?”
মাইরা আমতা আমতা করে বলে,
“আপনার গুপ্তঘর আছে জানতাম না তো! এর ভেতর কি আছে?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। ঘুমন্ত ফোলা ফোলা মাইরার মুখপানে কেমন করে তাকিয়ে থাকে। মাইরা ঢোক গিলে বলে,
“কি আছে এখানে?”
ইরফান হাত ঘড়ি খুলতে খুলতে মাইরার দিকে এগিয়ে আসে। মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে মাইরার ডান পাশের টেবিলে তার ঘড়ি রাখে মাইরার দিকে তাকিয়েই। মাইরা পিটপিট চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান মাইরা থেকে এক ইঞ্চি খানিক দূরত্ব রেখে দাঁড়ায়। ডান হাতের বুড়ো আঙুল প্যান্টের পকেটে রাখে। গম্ভীর গলায় বলে,
“আমার ফার্স্ট ওয়াইফ আছে এখানে। তুমি ভুলেও এর আশেপাশে আসবে না। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইরফানের দিকে। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“আপনি আগেও আরেকটা বিয়ে করেছিলেন? তাহলে আমায় বিয়ে করলেন কেন?”
ইরফান বিরক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। রেগে বলে,
“মাই উইস।”
মাইরা রেগে বলল,
“আপনার ইচ্ছা মানে? আপনি ঘরে বউ লুকিয়ে রেখে আমাকে বিয়ে করেছেন। আবার বলছেন আপনার ইচ্ছা।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে মাইরার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ঠোঁট বাঁকায় একটু। মুহূর্তেই স্বাভাবিক হয়ে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

“বের হও এখান থেকে, স্টুপিট।”
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ইরফানের দিকে। আরেকটা বউ আছে মানে কি? কত্তবড় ধান্দা’বাজ লোক একটা। কিছু বলতে নিলে ইরফান মাইরার হাত ধরে তার ঘর থেকে মাইরাকে বের করে দেয়। এরপর গম্ভীর স্বরে বলে,
“পাঁচ মিনিটে কফি চাই। গো।”
এরপর ঠাস করে দরজা আটকে দেয়। মাইরা কটমট দৃষ্টিতে ইরফানের বন্ধ দরজার দিকে চেয়ে থাকে। এরপর ধুপধাপ পা ফেলে তার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। বিড়বিড় করে, ‘অ’স’ভ্য লোক। তাকে মিথ্যা বলছে, আরেকটা বউ আছে,, দিবে না কফি। সারাদিন কফির শোকে মরে যাক, তবুও সে দিবে না কফি। বিড়বিড় করতে করতে নিজের ঘরে গেল। ঘরটা কেমন যেন অদ্ভুদ লাগলো তার কাছে। তার ঘর একদম ফাঁকা ছিল। ঘরের তুলনায় জিনিসপত্র কম-ই ছিল। কিন্তুু এখন কেমন যেন ভরা ভরা লাগছে।
এগিয়ে গিয়ে দেখল এক সাইডে অনেক বক্স সাজিয়ে রাখা। পুরো আলমারির সমান। ইট যেভাবে সাজিয়ে রাখে ওভাবে রাখা। আরেক পাশে একটা বিশাল আলমারির মতো দেখল। এগিয়ে গিয়ে ভালোভাবে দেখে মনে হলো এটা আলমারি-ই। দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগলো। সিলভার কালারের মসৃণ গা।

হাত বাড়িয়ে টেনে পাল্লা খুললে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে ধাক্কা লাগে মাইরার। মাইরা কেঁপে ওঠে।
ভয় পেয়ে দু’পা পিছিয়ে যায়। সে তো আলমারি ভেবেছিল। ভেতরে তাকিয়ে বুঝল এটা ফ্রিজ। অবাক হলো। তার ঘরে ফ্রিজ কেন? সবগুলো ড্রয়ার সিস্টেম। মাইরা তার কৌতুহল দমাতে মাঝামাঝি একটা ড্রয়ার খুললে অবাক হয়। এইখানে তো আইসক্রিম। একে একে সবগুলো ড্রয়ার খুলে দেখে, সব বক্সে আইসক্রিম ভর্তি। কত ধরনের যে আইসক্রিম আছে, মনে হয় না কোনো টা বাদ আছে। সে জীবনে দেখেনি সেসব আইসক্রিম ও আছে। মাইরা হা করে তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। মনে হচ্ছে এটা একটা দোকান। ব্যবসার জন্য সব তুলে এনেছে। ঘাড় বাঁকিয়ে সেই বক্স গুলোর দিকে এগিয়ে গেল। উপর থেকে একটা চারকোনা বক্স পারলো, এরপর হাত দিয়েই বেশ কসরত করে ফিতার গিট খুলে দেখল চকলেট ভর্তি। মাইরা হা করে চেয়ে আছে। এসব কি? তার মানে কি এইসবগুলো বক্সে চকলেট ভর্তি? মাইরা তব্দা খেয়ে মাটিতেই কতক্ষণ বসে থাকলো। ভাবছে এসব কে আনলো?
কিছু একটা মনে পড়তেই দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। পরনের এলোমেলো শাড়িটা বদলে গোল জামা পায়জামা আর ওড়না পড়লো। তিনটেই কালো রঙের।

মাইরার প্রায় ৯০% জামা-ই এমন ধরনের। গোল জামা, সাথে চুড়ি পায়জামা আর ওড়না। তিনটেই একই রঙের হয়। মাইরার ভালো লাগে এই ধরনের জামা। কামিজ খুব কম পরে। জামা পরে নিয়ে দ্রুত মাগরিবের কাজা নামাজসহ এশার নামাজ পরে নিল। অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছে। ৯ টা পেরিয়ে গিয়েছে। নামাজ শেষে ঘর থেকে বেরিয়ে ইনায়ার ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল।
ঘর থেকে বেরিয়ে রুমা নেওয়াজ এর সাথে দেখা হয়। মাইরা এগিয়ে গিয়ে বলে,
“কেমন আছেন মা?”
রুমা নেওয়াজ অবাক হলো। মাইরাকে মা ডাকতে বলেছিল ঠিকই, তবে মাইরা এর আগে হয়তো মা বলে ডাকেনি। তার মনে পড়ে না। মৃদুস্বরে বলল,
“ভালো। খেয়ে নাও।”
মাইরা হাসিমুখে বলে,
“আপনারা সবাই খেয়েছেন?”
“না।”
“আচ্ছা ইনায়া আপুকে ডেকে আনি। সবাই একসাথে খাবো।”
রুমা নেওয়াজ রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে বলেন,
“যাও।”

“আপু কি কর?”
ইনায়া এগিয়ে আসে মাইরাকে দেখে। হেসে বলে,
“অবশেষে উঠলে?”
মাইরা হেসে বলল,
“বুঝতে পারিনি। অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। তোমরা কেউ ডাকলে না কেন?”
ইনায়া হেসে ফেলল। মাইরার হাত ধরে বলল,
“আমি ডাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তুু ভাইয়া ধমকে আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বুঝলে?”
মাইরা রেগে বলল,
“হ্যাঁ তোমার ভাই একটা খ’বিশ। আমাকে আটকে রেখেছিল। তোমার ভাইয়ার ঘরে একটা গুপ্তঘর আছে। আমি খোঁজ পেয়েছি।”
মাইরার কথা শুনে ইনায়া অবাক হয়ে বলল,
“কিসের গুপ্তঘর?”
“ঘরের ভেতরে আরেকটা ঘর।”
ইনায়া মৃদু হেসে বলল,
“ওটা তো জানি আমরা। বাট ভাইয়া কাউকে যেতে দেয় না ওখানে। যতদূর জানি, অবসর সময় ওই ঘরেই কাটায়। তাছাড়া ভাইয়া….”
মাইরা ইনায়াকে থামিয়ে দিয়ে বলে,

“এসব বাদ দাও। শোনো আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা। আমার ঘরে আইসক্রিম এর ফ্রিজ, সাথে এতো এতো চকলেট এর বক্স রাখা। তোমরা কি নতুন ব্যবসা করবে না-কি?”
ইনায়া চিন্তিত হয়ে বলল,
“না তো। এইসব ব্যবসা কেন করবে আব্বু ভাইয়া। আমি ঠিক জানিনা এসব ভাইয়া কেন এনেছে।”
ইরফান এনেছে শুনে মাইরা অবাক হলো। ওমা তাকে তো খেতেই দিল না। এখন নিজেই তার শোয়ার ঘরকে দোকান ঘর বানিয়ে দিয়েছে। কিছু একটা ভেবে বলল,
“আমি বুঝেছি, তোমার তো আর দু’দিন পর বিয়ে। এজন্যই সবার জন্য এনেছে। বিয়ে বাড়িতে অনেক বাচ্চারা আসে তাই।”
ইনায়া হেসে বলল,
“আরে নাহ পা’গলি। ভাইয়ার খেয়েদেয়ে কাজ নেই এসব কাজ করবে। কেন এনেছে ভাইয়াই জানে। আমি অনেক আনকমন আইসক্রিম চকলেট খেয়েছি ওখান থেকে, বুঝলে মাইরা। অনেক মজা, আগে কখনো খাইনি। কোনোটা হয়তো রেখে আসেনি ভাইয়া। সব ধরনের চকলেট-আইসক্রিম-ই আছে বোধয় এখানে। কিছুই বাদ নেই।”
মাইরার ছোট মাথায় ঢুকলো না ইরফানের কাজ। তবে সে তার পছন্দের চকলেট আইসক্রিম খেতে পারবে ভেবে মারাত্মক খুশি লাগছে। তখনকার ফেলে দেয়া চকলেট আর আইসক্রিম এর জন্য খুব মন খা’রা’প হয়েছিল। এসব রেখে বলল,

“আপু তোমার অনুভূতি বলো। তোমার বিয়ের আর মাত্র দু’দিন আছে।”
ইনায়া খানিক ল’জ্জা পায়। মাইরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“তুমি কি ল’জ্জা পাচ্ছ আপু?”
ইনায়া মাইরার কান টেনে বলে,
“এ্যাই মাইরা আমাকে জ্বালাবে না কিন্তুু।”
মাইরা হেসে ফেলে। ইনায়া প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
“জাহারা আপু আসবে একটু পর। কালকে আমাদের সব কাজিন রা আসবে। তোমাকে দেখার জন্য সবাই মুখিয়ে আছে।”
মাইরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
“কেন?”
“কারণ তুমি আমাদের ইরফান ভাইয়ার একমাত্র বউ।”
মাইরা থতমত খেয়ে বলে, “বুঝেছি বুঝেছি।”
ইনায়া হেসে মাইরার হাত ধরে বাইরে যায়।
জাহারা আর তার মাকে জাহিদ ইরফানদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে। জাহারার মা জাহারা দু’জনেই এতো বললো, রুমা নেওয়াজ নিজেও বেরিয়ে এসেছিল জাহিদকে ভেতরে যাওয়ার জন্য, খাওয়াদাওয়া করে যেতে বলেছে তবুও জাহিদ কিছুতেই আসলো না। তার না-কি খুব মানে খুবই ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। জাহিদের সাথে না পেরে রুমা নেওয়াজ তার বোন আর ভাগ্নিকে নিয়েই ভেতরে আসলেন।
জাহারা, তার মা তাদের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। জাহারা ফ্রেশ হয়েই তার ঘর থেকে বেরিয়েছে। নিচের ঘরেই তার মা থাকলো। উপরে সিড়ি উঠতে না-কি ক’ষ্ট হয়। কোমড়ে ব্য’থা বাড়ে। জাহারাও আর কোনো উচ্চবাক্য করেনি, যদিও তার ইচ্ছে ছিল আগেরবারের মতোই ইরফানের পাশের ঘরে থাকার। তবে মায়ের অসুস্থতাও তো দেখতে হবে।

জাহারা ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং-এ ইনায়া আর মাইরাকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। তার গন্তব্য ছিল ইরফানের ঘর।
ইনায়া জাহারাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“অবশেষে আসলে আপু। এবার অনেকদিন থাকবে কিন্তুু।”
জাহারা হেসে বলে,
“তুই নিজেই তো থাকবি না। আমাকে থাকতে বলছিস যে!”
ইনায়া মন খা’রা’প করে বলে,
“ধ্যাত! তোমরা আমাকে এক্ষুনি বের করছ কেন? আমি আমার ইচ্ছা অনুযায়ী এখানে থাকবো। বিয়ে হলেও।”
মাইরা আর জাহারা দু’জনেই হাসে ইনায়ার কথায়। জাহারার মাইরার দিকে চোখ পড়লে হাসি থেমে যায়। মাইরা জাহারার দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে,

“আপু কেমন আছো?”
জাহারা জোরপূর্বক হেসে বলে,
“ভালো।”
মাইরা জাহারাকে জড়িয়ে ধরতে গেলে জাহারা মাইরাকে আটকে বলে,
“আমার কাজ আছে।”
মাইরার মুখ মলিন হয়ে যায়। এটা যে সম্পূর্ণ এভোয়েড মাইরার বুঝতে একটুও কষ্ট হলো না। গতবারও এই আপুটা তার সাথে ভালোভাবে কথা বলেনি। কাঁদতেও দেখেছিল সে। ভেবেছিল এইবার আসলে সে আচ্ছামতো ভাব জমাবে, মনও ভালো করে দিবে। এটা ভেবে আবারও বলে,
“আপু তোমার মন খা’রা’প হলে আমার সাথে এসো। আমি তোমায় চুটকি মেরে মন ভালো করে দিব।”
জাহারা বিরক্ত হলো। এই মেয়েটাকে দেখলে তার গায়ে আগুণ ধরে যায়। বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বলে,
“তোমাকে দেখলেই আমার মন খা’রা’প হয়। ভালো হয় না। বাঁচাল মেয়েদের আমার পছন্দ নয়। মাথা ধরিয়ে দাও তুমি।”

জাহারার কথা শুনে মাইরার মুখ অপমানে থমথমে হয়ে যায়। মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে যায়। মাথা নিচু করে নেয়। ইনায়া নিজেও অবাক হয় জাহারার ব্যবহারে। সে সত্যিই কারণ খুঁজে পায় না মাইরার সাথে জাহারার এমন ব্যবহারের। জাহারা খুবই ভালো মেয়ে। খুব মিশুকও। শুধু মাইরার ক্ষেত্রে এমন করে কেন।
দোতলা থেকে ইরফানের গম্ভীর গলায় শক্ত কণ্ঠ ভেসে আসে,
“কফি চেয়েছি আমি!”
মাইরা সহ জাহারা, ইনায়া সবাই মাথা উঁচু করে তাকালো। ইরফান মাইরার দিকে শক্ত চোখে চেয়ে আছে। মাইরা ঢোক গিলে। সে তো ভুলেই গিয়েছে কফির কথা। মনে থাকলেও দিতো না। খ’বিশ লোক। ঘরে নাকি বউ লুকিয়ে রেখেছে, তাকে মিথ্যা বলা। সেও দিবে না কফি বানিয়ে।
জাহারা হেসে বলে,
“দু’মিনিট ওয়েট কর ইরফান ভাই। আমি আনছি।”
ইরফান মাইরার থেকে চোখ সরিয়ে জাহারার দিকে তাকালো। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“জাহিদ কোথায়?”
জাহারা উত্তর দেয়,
“ভাইয়া একেবারে বিয়ের দিন আসবে। ভাইয়ার না-কি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে।”
ইরফান বিড়বিড় করে,

“গুড জব।”
মাইরার দিকে একবার তাকিয়ে তার ঘরে চলে যায়। জাহারা দ্রুত পায়ে রান্নাঘরে গিয়ে এক মগ কফি বানিয়ে দ্রুত পায়ে সিঁড়ি উঠতে থাকে। পিছন থেকে রুমা নেওয়াজ বলে,
“আরে তোকে যেতে হবে না। ওদের কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। মাত্র তো এলি।”
জাহারা যেতে যেতেই মৃদু হেসে বলে,
“আমি যাই খালাম্মা প্লিজ! কিছু হবে না।”
রুমা নেওয়াজ বোধয় বুঝলেন জাহারার মনোভাব। কিছু বললেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার ঘরের দিকে যায়।
মাইরা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে দেখল জাহারাকে। কেমন যেন লাগলো তার কাছে। সবার সাথে তো সুন্দর করেই কথা বলে। শুধু সে-ই প্রবলেম। ইরফানের ব্যাপারে বেশিই চিন্তা!
কথাটা ভেবে নিজেকেই দু’টো চড় মারতে ইচ্ছে করল। এরা তো ভাইবোন। স্বাভাবিক। তবে তার সাথে এমন করার কারণ কি? শান্ত চোখে জাহারার উৎফুল্ল মুখ দেখল। যে দ্রুত পায়ে ইরফানের ঘরের দিকে এগোচ্ছে।

রাত প্রায় ১ টার কাছাকাছি। মাইরার ঘুম আসছে না। বারবার এপাশ-ওপাশ করছে। সন্ধ্যায় ঘুমানোর কারণে এমন হচ্ছে। পড়া থাকলে বসে বসে বই পড়তো। তাও নেই। শোয়া থেকে উঠে ঘরের লাইট জ্বালালো। এরপর চকলেট এর একটা বক্স নিয়ে বিছানার উপর বসল। ঘুম না আসা পর্যন্ত এগুলোই খাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। যেই ভাব সেই কাজ। বক্স থেকে অনেকগুলো চকলেট বিছানায় ছড়িয়ে রাখলো। এরপর চকলেট ছিঁড়ে খাওয়া আরম্ভ করে। প্রায় অনেকগুলোই খেয়েছে এইটুকু সময়ে। আনকমন চকলেট অনেক।
“ঘুমাওনি কেন?”
ইরফানের গম্ভীর স্বর কানে ভেসে আসলে মাইরা অবাক হয়ে সামনে তাকায়। মুখভর্তি চকলেট। কোনোরকমে মুখের টুকু গিলে নেয়। আমতা আমতা করে বলে,
“ঘুম আসছিল না।”
ইরফান ঘরের ভেতরে এসে মাইরার দিকে তাকিয়েই ডান পা পিছন দিকে বাড়িয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে আটকে দেয়। মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। এমন শার্টলেস হয়ে তার ঘরে এসেছে কেন? ইরফানকে এগিয়ে আসতে দেখে বলে,

“আপনার জামা নেই?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“নো। এতোগুলো চকলেট নিয়ে বসেছ কেন? গরু থেকে মানুষ হবানা?”
মাইরা রেগে বলে,
“একদম আমাকে গরু বলবেন না। আমার ভালো লাগে তাই খাচ্ছি।”
কথাটা বলে মাথা নিচু করে হাতের প্যাকেটের চকলেটে আরেকটা কা’ম’ড় দিয়ে মাথা তুলে কিছু বলতে চায়, তার আগেই ইরফান মাইরাকে টান মেরে বিছানা থেকে নামিয়ে দেয়।
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট না করে দু’হাতের আঁজলায় মাইরার গাল ধরে মাথা ঝুঁকিয়ে মাইরার দাঁতের ফাঁকে ধরে রাখা চকলেট এর পুরো অংশ তার মুখে নিয়ে নেয়।
মাইরার হাত থেকে চকলেট পড়ে যায়। মেয়েটা প্রচণ্ড তৃষ্ণায় ভেতরে ভেতরে ছটফট করে। ইরফান কিছু করল না। শুধু চকলেট টুকুই মাইরার মুখ থেকে তার মুখে পুরোটা নিয়ে মাথা তুলে নেয়। খুবই আলতোভাবে মুখ নাড়ায় মাইরার পানে দৃষ্টি রেখে। মাইরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে।
ইরফান ডান হাতের বুড়ো আঙুলের দ্বারা মাইরার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা চকলেট মুছতে মুছতে শীতল গলায় বলে,

“ফার্স্ট টাইম চকলেট ট্রাই করলাম। ইট’স ভেরি টেস্টি।”
মাইরা কিছু বলে না। চোখ নামিয়ে ফ্রিজড্ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো শরীর কেমন ঠাণ্ডা হয়ে আছে।
ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
“ঘুমাও।”
মাইরাকে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“আরও চকলেট খাওয়াতে চাইছ? আই হ্যাভ নো প্রবলেম।”
মাইরা মাথা নিচু করে দু’হাতে ইরফানের পেটে ঠেলে কাঁপা গলায় বলে,
“আপনি যান।”
ইরফান ঠোঁট বাঁকায় একটু। হাসলো বোধয়। মৃদুস্বরে বলে,
“রাত জাগবে না।”
মাইরা মাথা নিচু করেই দ্রুত বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ২৯

“যান আপনি। আমি ঘুমাবো।”
ইরফান মাইরাকে তীক্ষ্ণ চোখে অবলোকন করে। মৃদুস্বরে বলে,
“আই ডোন্ট লাইক ইউ। বাট আই লাইক ইট।”
কথাটা বলে ঘর থেকে বেরতে বেরতে গম্ভীর গলায় বলে,
“এক্ষুনি না ঘুমালে আবার আসব চকলেট খেতে।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩১