প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩১

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩১
Drm Shohag

ফজর নামাজ শেষে মাইরা ঘরময় বেশ কিছুক্ষণ পাইচারি করল। এরপর একটু বসলো। চকলেট খায়, আবার সকাল সকাল আইসক্রিম ও খায় দু’টো। কেশেও নিল একটু, তবে ইচ্ছেকে দমালো না। ঝটপট মন দিয়ে খায় সব।
রাতের আঁধার মিলিয়ে আলো ফুটতে শুরু করেছে। মাইরা বেলকনিতে গিয়ে বসে। সকালের এই আবহাওয়া ভীষণ পছন্দ মাইরার। অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলো। মায়ের কথা মনে পড়লো। তার ব্যথিত মনে প্রশ্ন উঁকি দেয়, ‘আচ্ছা সে যদি নিজের মা হতো, তবে কি মাইরার একটু খোঁজ নিত?’ নিতো হয়তো। তার বাবা থাকলেও হয়তো নিতো। নিজের মা না হলেও সেই মাকেই তো ছোট থেকে মা জেনে আসলো। কম হলেও আদর করতো। একটু বড় হতেই কাঁধ থেকে ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছে। মাইরা নামক ঝামেলা সরিয়ে দিয়ে তারা নিশ্চিতে আছে। একবার কি খোঁজ নেয়া যায় না? সে আর যাবে না ওখানে। তার সৎ মা তার বোঝা নামিয়ে যদি ভালো থাকে, তাহলে তার কি দরকার তার মাকে গিয়ে সে নামক বোঝা কে মনে করিয়ে দেয়ার?

কথাগুলো ভেবে চোখ থেকে টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। আকাশপানে চেয়ে থাকে। তার নিজের মাকে তো সে দেখতেই পারেনি। এখন সৎ মা পর হওয়ার পর নিজের অদেখা মাকে খুব করে দেখতে ইচ্ছে করে। ইশ! একবার যদি দেখতে পেত! আসল মায়ের কোলে যদি একবার মাথা রাখতে পারতো! কথাগুলো ভেবে মলিন হাসলো। বাবা মায়েরা কেন তার বাচ্চাদের রেখে চলে যায়? একটুখানি ভাবলে কি হয়, বাচ্চারা তার হারানো বাবা মা কে কতখানি মিস করে! গালে গড়িয়ে পড়া পানি দু’হাতে মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করল। অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে।
এরপর মাইরা ঘর থেকে বের হয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়। রুমা নেওয়াজ তাকে চা বানিয়ে দিত, সেই থেকে একটা বদঅভ্যাস হয়েছে, সকাল সকাল এক কাপ চা তার ভীষণ প্রয়োজন হয়। একা একাই চা বানিয়ে নিল বেশ অনেকটা। মোট চারটে কাপে ঢালে চা। এরপর একটা ট্রে তে দু’টো কাপ নিয়ে ইরফানের বাবার ঘরের দিকে যায়।
প্রথমে রুমা নেওয়াজ কে পেয়ে মাইরা এক কাপ তার দিকে বাড়িয়ে দেয়। ভদ্রমহিলা অবাক হয়। সে চা বসাতেই যাচ্ছিল। মাইরা হেসে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“নিন মা। খেয়ে বলুন তো কেমন হয়েছে।”
রুমা নেওয়াজ কিছু বলল না। নিরবে চায়ের কাপ নিল মাইরার থেকে। মাইরা মুখ ফুলিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে, ‘দুই মা ছেলে হয়তো জন্ম থেকে নিম খেতে খেতে এমন হয়ে গিয়েছে।’ যেদিন থেকে এসেছে, কোনোদিন ভুল করেও মা ছেলের কাউকে একটু হাসতে দেখল না।
মাইরা এগিয়ে গিয়ে তারেক নেওয়াজ কে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়। তারেক নেওয়াজ মাইরার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে ডান হাতে রাখে। বা হাতে মাইরার হাত ধরে তার পাশে বসিয়ে মৃদু হেসে বলে,
“আমার মেয়ে চা করল নাকি বউ মা?”
মাইরা ল’জ্জা পায়। সবাই শুধু ইরফানকে নিয়ে ল’জ্জা দেয়। আগে ল’জ্জা লাগতো না তবে এখন কেন যেন ভীষণ ল’জ্জা পায় মেয়েটা। তারেক নেওয়াজ চায়ের কাপে একবার চুমুক দেয়। এরপর মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আমার আম্মু বড় হচ্ছে মনে হয়?”
মাইরা হেসে বলে,

“বাবা আমি বড়োই। শুধু আপনারা কেউ বুঝতে পারেন না।”
তারেক নেওয়াজ হাসলেন। তিনি তার ছেলের মাইরার প্রতি এতো চিন্তা, মাইরার প্রতি সবসময় অদৃশ্য খেয়াল রাখা,, এসবে ভীষণ সন্তুষ্ট। এই যে এক্সাম শেষে মাইরাকে এখানে আনার কথা ইরফানকে বলতেই হয়নি। উল্টে সে ভেবেছিল মাইরার এক্সাম শেষ হলেও আরও কয়েকদিন গ্রামে থাকুক, ভালো লাগবে মেয়েটার। কিন্তুু ইরফান কোন ফাঁকে গিয়ে যেদিন এক্সাম শেষ হয়েছে সেদিন-ই মাইরাকে এনেছে। ভাবনা রেখে প্রশ্ন করলেন,
“এক্সাম কেমন হয়েছে আম্মু?”
মাইরা উৎফুল্ল মনে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে।”
“কোন কেলেজে ভর্তি হতে চাও?”
মাইরা মন খারাপ করে বলে,
“গ্রামের কলেজে ভর্তি হলে ভালো হতো। কিন্তুু তা তো হবে না।”
তারেক নেওয়াজ হাতের কাপ পাশের টেবিলে রেখে বলে,
“এখানে এতো ভালো কলেজ থাকতে গ্রামের কলেজে পড়তে চাও কেন আম্মু?”
মাইরা মৃদু হেসে বলে,

“এখানেই পড়তে চাই।”
রুমা নেওয়াজ মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“সবার জন্য চা করলে, নিজের স্বামীর জন্য কফি বানাতেই ভুলে গেলে?”
শ্বাশুড়ির কথায় মাইরা মাথা নিচু করল। রুমা নেওয়াজ এর কথার ধরনে মনে হচ্ছে তিনি মাইরাকে শাসন করছেন। তারেক নেওয়াজ পাশ থেকে বলে,
“তুমি চুপ কর। আমি বলছি আমার আম্মুকে।”
এরপর মাইরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আম্মু যাও ইরফানকে কফি দিয়ে এসো।”

মাইরা মাথা নেড়ে বিনা বাক্যে ঘর প্রস্থান করে। এরপর রান্নাঘরে গিয়ে তার রাখা চা খেতে খেতে ইরফানের জন্য কফি বানায়। গত প্রায় দু’মাসে হিসাব ছাড়া মাইরা ইরফানের জন্য কফি বানিয়েছে। আজ নতুন নয়। কফি বানানোর মাঝেই দু’কাপ চা শেষ করল। এরপর কফির মগ নিয়ে ইরফানের ঘরের দিকে যায়।
জাহারা কফির মগ নিয়ে ইরফানের ঘরে এসেছে। ইরফান সটান হয়ে ঘুমিয়ে। দু’হাত বুকে ভাঁজ করা। ডান পায়ের উপর বাম পা তুলে রেখেছে। নড়চড় বিহীন একদম সটান হয়ে শুয়েছে। জাহারা হাতে কফির মগ নিয়ে ধীরপায়ে ইরফানের মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
এই মানুষটা বিয়ে করেছে ভাবলেই তার দমবন্ধ লাগে। তবে একটা ব্যাপার তাকে ভীষণ স্বস্তি দেয়, সেটা হলো ইরফান এখনো মাইরাকে মেনে নেয়নি। ধীরে ধীরে ইরফানের ধারে বসল জাহারা। নিঁখুতভাবে ইরফানকে অবলোকন করে। চোখের কোণে পানি। খুব কি ক্ষতি হয় যদি এই মানুষটা তার হয়ে যায়? সে তার ইরফান ভাইয়ের পাশে মাইরাকে স’হ্য করতে পারেনা। ভীষণ ক’ষ্ট হয় তার। বা হাত বাড়িয়ে ইরফানের চুলের ভাঁজে হাত রাখে। অপলক ইরফানের পানে চেয়ে থাকে।

মাইরা ইরফানের চাপানো দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দেয়। ইরফানের মাথায় হাত দিয়ে জাহারাকে বসে থাকতে দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কি স’র্বনাশ! এই মেয়ে তার জামাইয়ের ঘুমের সুযোগ নিচ্ছে না-কি! কিন্তুু উনি তো ইরফানের খালাতো বোন। বোন হয়ে এমন করবে কেন? কিন্তুু করতে চাইছে টা কি?
জাহারা ধীরে ধীরে আরও এগিয়ে যায় ইরফানের দিকে। মাইরা শক্তহাতে কফির মগ ধরে আছে। আর স’হ্য হলো না। চিল্লিয়ে ওঠে,
“জাহারা আপুর ভাইয়ায়ায়ায়া!”
জাহারা ছিটকে বসা থেকে দাঁড়িয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। ফলস্বরূপ হাতের মগ থেকে কিছুটা গরম কফি তার পায়ের উপর পড়ে। মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে।
অবাক নয়নে মাইরার দিকে তাকায়।
ইরফানের ঘুম ভেঙে গিয়েছে, চোখেমুখে অজস্র বিরক্তি। একটুও নড়লো না। যেভাবে শুয়ে ছিল সেভাবেই শুয়ে আছে। ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ঘাড় বাঁকিয়ে দরজার দিকে তাকালে দেখল মাইরা কটমট দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে মাইরার ওমন দৃষ্টি দেখে কেমন যেন ভড়কে গেল। নিজেকে সামলে রেগে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? চিৎকার করছ কেন স্টুপিট?”

ইরফানের ধমক খেয়ে মাইরা একটু শান্ত হলো। এগিয়ে এসে ইরফানের পাশে বেডের উপর ঠাস করে কফির মগ রাখলো, যার ফলে কফির কিছু অংশ বেডের চাদরে পড়ে যায়। ইরফান বিরক্ত চোখে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। মাইরা কফির মগ রেখে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
“আপনার কফি দিতে এসেছি। নিন শুয়ে শুয়ে খান।”
ইরফান রেগে যাচ্ছে। এ্যাই স্টুপিট তার সাথে এভাবে কথা বলছে কেন? ইরফান শোয়া থেকে উঠে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে। মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
“কি প্রবলেম?”
মাইরার বিরক্ত লাগছে। নিচু হয়ে কফির মগ হাতে নিয়ে ইরফানের উরুর উপর রাখল। কফি গরম, ইরফানের পায়ে ছ্যাঁকা লাগলো বোধয়। তবে সে নির্বিকার। বিরক্ত চোখে চেয়ে আছে মাইরার দিকে। জাহারা বলে ওঠে,
“এ্যাই মেয়ে কফি গরম, ইরফান ভাইয়ের পায়ের উপর রেখেছ কেন?”
জাহারার কথা শুনে মাইরা অদ্ভুদভাবে তাকালো জাহারার পানে। এতো চিন্তা ভালো লাগলো না তার। সকাল সকাল তার জামাই এর ঘরে এসেছে কেন। আবার মাথায় হাত বুলাচ্ছিল। নিজের তো একটা ভাই আছে, ভাইকে এতো আদর করতে ইচ্ছে করলে তাকে করুক। খালাতো ভাইকে এতো দরদ কেন দেখাতে হবে। নিজের অগোচরেই মেয়েটা কি যে ভাবছে সেটা নিজেই বুঝতে পারছে না।
ইরফান মাইরার হাত শক্ত করে ধরে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে,

“স্টুপিট কি প্রবলেম তোমার? এমন জঙ্গলিদের মতো বিহেভ করছ কেন?”
মাইরা ইরফানের উরুর উপর থেকে কফির মগ সরিয়ে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে কান্নার ভান করল বলে,
“আপনি আমাকে জঙ্গলি বলতে পারলেন?”
মাইরা কথা বলার ধরনে ইরফান ভড়কে যায়। এই মেয়ের হয়েছে কি। থতমত খেয়ে মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,
“ডোন্ট ক্রাই।”
ইরফানের কাজে মাইরার ভালো লাগলো ভীষণ। একটু আগের বিরক্তির মাত্রা কমলো।
আড়চোখে জাহারার দিকে তাকালে দেখল জাহারা কটমট দৃষ্টিতে তার দিকেই চেয়ে আছে। মাইরা ভ্রু কোঁচকালো। এই মেয়েটার তাকে নিয়ে প্রবলেম এর ব্যাপার বোধয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো মাইরা।
জাহারা কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ইরফান ভাই তোমার কফি।”

ইরফান মাইরার গাল থেকে হাত সরিয়ে জাহারার থেকে কফি নিল। ওমনি মাইরার মুখ কালো হয়ে যায়। জাহারার দিকে তাকালে দেখল মেয়েটা মৃদু হাসছে। জাহারা গলা ঝেড়ে বলে,
“ইরফান ভাই তোমার কাছে মলম আছে?”
ইরফান বেড থেকে নেমে কফির মগ রাখলো বেডসাইড টেবিলের উপর। ভ্রু কুঁচকে বলে, “হোয়াই?”
জাহারা তার পা এগিয়ে দেখিয়ে বলে,
“গরম কফি পড়েছে একটু।”
ইরফান তাকালো না জাহারার পায়ের দিকে। বিরক্তি নিয়ে তার ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে বেডের উপর ছুঁড়ে দিয়ে বলে,

“দু’টোই বের হ ঘর থেকে। আউট।”
এরপর ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে চলে যায়। মাইরা নিরবে সবটা দেখল। ইরফানের লাস্ট কথায় তেমন প্রভাব পড়লো না মাইরার মনে। তার সাথেও তো এমনই করে লোকটা। কিন্তুু তার জন্য কেনা মলম জাহারাকে কেন দিল এতেই মাইরার অদৃশ্য কালো মুখ আরও কালো হয়ে গেল।
জাহারা খুশি হলো ইরফানের এটুকুতেই। ইরফান কেমন তো জানেই। তাকে মলম দিল এটাই ইরফান ভাইয়ের থেকে পাওয়া অনেক কিছু।
মাইরা রাগে তার হাতে থাকা কফি ইরফানের বেডের মাঝখানে ঢেলে ধুপধাপ পা ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বিড়বিড় করল,
‘আমার বানানো কফি খেতে হবে না। জীবনে যদি আমার কাছে কফি চেয়েছে না, কফির চৌদ্দ গুষ্টি খাইয়ে কফি খাওয়া ভুলিয়ে দিব। খ’বিশ লোক।’

জাহারা মাইরার কান্ডে বিরক্ত হলো। ইরফানের কথা ভেবে মৃদু হাসলো। তার মনে হলো ইরফান মাইরার কফি না নিয়ে তার কফি নিয়েছে, এতে তার মুখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। আবারও মলম দিল তাকে। মাইরাকে ইরফান ভাই মেনে নেয়নি, থাকেও আলাদা ঘরে। নামে নামে স্বামী-স্ত্রী হয়ে আছে সেটা জাহারা নিজেই সুন্দর করে সারিয়ে নিবে। পায়ের জ্বলুনি ফিল করতে পারলো না সেভাবে, উল্টে ইরফানের কথা ভেবে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। এখানে আসার আগেও ভীষণ ভয় পাচ্ছিল তবে এখন সেটা কেটে গিয়েছে অনেকটা। ভাবতে ভাবতেই ঘরে ঘেকে বেরিয়ে যায়।
মাইরা রান্নাঘরে গিয়ে একমুঠো মরিচ এর গুঁড়ো হাত ভর্তি করে এনেছে। জাহারাকে নিচে নামতে দেখে সে উঠে এসেছে। দ্রুত পায়ে ইরফানের ঘরে গিয়ে উঁকি দিল,, নাহ ইরফান নেই। এখনো হয়তো ওয়াশরুমেই আছে। মাইরা ধীরপায়ে ঘরে প্রবেশ করে। সময় নষ্ট না করে দ্রুত বেডসাইড টেবিলের উপর থেকে কফির মগ নিয়ে তার মুঠোয় থাকা মরিচ এর গুঁড়া মিশিয়ে দেয় কফির সাথে। বিড়বিড় করে,
‘এবার বুঝবে মজা। অন্যের কফি খাওয়ার সাধ মেটাচ্ছি। আমায় চেনে না, খ’বিশ লোক।’
হাত ঝাড়া দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে নিলে কি মনে করে উল্টো ঘুরে তাকায়। সেই গোপন ঘরের দরজা খোলা মনে হলো। মাইরার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। দৌড়ে ঘরটার সামনে গিয়ে দরজা ঠেলে,, একটু খুলেই আবারও সামনের দিকে এসে বন্ধ হয়ে যায়। মাইরা ভ্রু কুঁচকে তাকায়, কি হলো? দরজার হাতলে পুরুষালি হাত চোখে পড়লে মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান তো ওয়াশরুমে ছিল, বের হলো কখন? ইরফান ডোর লক করে দিয়ে মাইরার পিঠ ঘেঁষে দাঁড়ায়। গলায় নামিয়ে বলে,

“কি করছিলে এখানে?”
মাইরা আমতা আমতা করে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। কি আছে এই ঘরে? সে দেখলে কি হবে? মাইরা মিনমিন করে বলে, আ.আমি..
ইরফান মাইরার গলার সুর মিলিয়ে বলে, তুমি…
মাইরা ঢোক গিলে। ইরফান একদম তাকে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকায় মাইরার কেমন হাসফাস লাগে। গরম লাগছে তার। মিনমিন করে বলে,
“সরুন, আমার গরম লাগছে।”
ইরফান মাইরার কথাটা শুনে আরেকটু চেপে দাঁড়ায় মাইরার সাথে। মাইরা ছটফটিয়ে ওঠে। উল্টো ঘুরে কোনোরকমে ঠেলেঠুলে, এ তো আরেক জ্বালা! ইরফান আরও তার দিকে চেপে দাঁড়ায়। মাইরা ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়। আমতা আমতা করে বলে,
“সরুন তো!”
ইরফান মাইরার মুখপানে চেয়ে আছে। গম্ভীর গলায় বলে,
“নো।”
মাইরার অসহায় লাগে। ধ্যাত! এ কোথায় ফেঁ’সে গেল। কোন দুঃখে যে এই ঘরে আসতে গেল। যেহেতু যেতে দিচ্ছেই না, তবে প্রশ্নটা করুক। ঝট করে মাথা তুলে বলে,
“আপনার এই ঘরে কি আছে?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“মাই ফার্স্ট ওয়াইফ।”
মাইরা রেগে তাকায় ইরফানের দিকে। আবারও তাকে উল্টাপাল্টা বলছে। অ’স’হ্য লোক একটা। ইরফানের গম্ভীর মুখাবয়ব, শক্ত চোয়াল, সরু নাক বিশিষ্ট মুখপানে কেমন করে যেন চেয়ে থাকে মাইরা,,
মুখ জুড়ে পানির ছিঁটেফোঁটা। ফর্সা মুখে এমন বিন্দু বিন্দু পানির কণা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখে মাইরা ঢোক গিলল। চোখ নামিয়ে নেয়। বিড়বিড় করে, ‘ক্রাশ খাওয়া পাপ পাপ।’
এরপর ইরফানকে ঠেলে সরাতে চায়, সাথে বলে,
“আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না।”

ইরফান ডান হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে চাপ দাঁড়িতে ঘষে বারকয়েক। মাইরার নত মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“ইউর উইস।”
মাইরা আবারও মাথা তুলে রেগে বলে,
“আপনি মিথ্যুক।”
ইরফান ডান হাতে মাইরার ওড়না টেনে বিরক্তি কণ্ঠে বলে, ‘স্টুপিট।’ মাইরা চোখ বড় বড় বলে,
“কি করছেন? আমার ওড়না!”
ইরফান বিরক্তি চোখে মাইরার দিকে চেয়ে ওড়নার কোণা দিয়ে মুখ মুছল। মাইরা বোকা চোখে চেয়ে থাকে ইরফানের দিকে। হঠাৎ-ই ইরফানের হাত থেকে ওড়না টেনে নিয়ে বলে,
“আমার ওড়না আপনার তোয়ালে মনে হচ্ছে?”
ইরফান মহা বিরক্ত হয়। এই স্টুপিট থা’প্প’ড় ছাড়া আর কিছুরই যোগ্য না। রেগে মাইরার ওড়না টেনে পুরোটাই খুলে ফেলে। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে। ইরফানের দিকে নিজেই সিটিয়ে দাঁড়ায়। ভীষণ ল’জ্জা পায়। বিড়বিড় করে, ‘খ’বিশ লোক।’

ইরফান ডান হাতে মাইরার ওড়না পেঁচিয়ে নেয়। এরপর চোখ নামিয়ে তাকালো। মাইরা ইরফানের বুক সমান। মেয়েটা ইরফানের সাথেই লেগে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইরফান সামান্য ঠোঁট বাঁকায়। বিড়বিড় করে, ‘লিটল গার্ল।’
মাইরা মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার ওড়না দিন।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“আমায় ডিস্টার্ব করছিলে কেন?”
মাইরা বুঝলো না সে কখন ডিস্টার্ব করল? ডিস্টার্ব তো এই লোকটাই তাকে করছে। তার ওড়না নিয়ে টানাটানে করছে। এমনিতেই তার কফি না নিয়ে ওই মেয়ের কফি নেয়ায় মাইরার বিরক্ত লাগছে সবকিছু। তবুও নিজের ওড়না ফিরে পেতে মিনমিন করে বলে,
“আর করবো না।”
ইরফান মাইরার দিকে কিছু সময় চেয়ে থাকে। এরপর নিজেই মাইরার মাথাসহ ওড়না দিয়ে ঢেকে দেয় মাইরাকে। মাইরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ইরফান মাইরার থেকে সরে দাঁড়ায়। এগিয়ে গিয়ে কফির মগ হাতে তুলে নেয়।
মাইরা ছাড়া পেয়ে তার পিছনে থাকা দরজা আরেকবার ঠেলে। নাহ, খুলতে পারলো না। তার অসীম কৌতুহল, এই ঘরে কি আছে তাকে দেখতেই হবে। মেয়েটা ভুলেই গিয়েছে কফিতে মরিচ এর গুঁড়ো মিশিয়ে কেলেঙ্কারি করে রেখেছে এর জন্য আগে তার পালানো উচিৎ।

ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে কফির মগে এক চুমুক দেয়। কিন্তুু কফি আর গিলতে পারে না। মুখ থেকে কফি ছুঁড়ে ফেলে মাইরার দিকে দাঁতে দাঁত চেপে তাকায়। মাইরা দরজা খুলতে না পেরে পিছু ফিরে ইরফানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়, কি হলো এই লোকের? এইটুকু সময়ে চোখমুখ এমন লাল হয়ে গেল কেন? দৃষ্টি দেখেও অবাক হলো। হাতে কফির মগ দেখে মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইয়া আল্লাহ! সে তো ভুলেই গিয়েছিল মরিচ মেশানোর কথা। মাইরা ঢোক গিলে ইরফানের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে খোলা দরজার দিকে তাকালো। এক সেকেন্ডও সময় ন’ষ্ট না করে দৌড় লাগালো। কিন্তুু যেতে পারলো না বেশিদূর।
ইরফান বড় বড় পা ফেলে মাইরাকে টেনে তার সাথে চেপে ধরে। মাইরার কান্না পায়। এই লোক এখন তাকে কি করবে?
ইরফান দাঁতে দাঁতে পিষে বলে,
“কি মিশিয়েছো?”
মাইরা মোচড়ামুচড়ি করতে করতে বলে,

“আমি কেন মেশাবে। আমার কফি আপনি নিয়েছেন? এটা তো জাহারা আপু বানিয়েছে।”
ইরফান হাতের কফির মগ ঠাস করে পাশের টেবিলে রাখে। মাইরা চোখ খিঁচে নেয়। ইরফান দু’হাতে মাইরার পিঠ শক্ত করে ধরে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“বাঁদরামি টা তো তুমি করেছ।”
মাইরা মাথা তুলে রেগে বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তো আমি ছাড়া দুনিয়ার সবাই ভালো। শুধু আমিই বাঁদর, আমিই স্টুপিট,, আর সব মেয়েরা ফেরেস্তা।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“তুমি বাঁদরামি ছাড়বে না?”
মাইরা বিরক্ত হয়ে বলে,
“ছাড়বো না, হয়েছে? জাহারা আপুকে বলছি আপনাকে কফির ড্রামে করে কফি দিয়ে যাক, এরপর বসে বসে শুধু তার হাতের কফি-ই খেতে থাকেন।”
ইরফান ধমকে বলে,

“সাট আপ। বাজে বকলে থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব।”
মাইরা ধমক খেয়ে কেঁপে ওঠে। ইরফান এর জিহ্বা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন। এই স্টুপিট কি মিশিয়েছে কে জানে। সে তো ঝাল খেতে পারে না, স্বাভাবিক এর চেয়েও ঝাল কম খায়। দাঁতে দাঁত চেপে মাইরার দিকে চেয়ে ভাবছে একে কি করবে। মাথা টা পুরো ধরিয়ে দেয় এই বাচ্চা।
মাইরা ইরফানের কোনো সাড়া না পেয়ে মাথা তুলে তাকালে দেখল ইরফান শক্ত চোখে তার দিকেই চেয়ে আছে। চোখ দু’টোও লাল। বেশি মরিচ মিশিয়েছে না-কি? নিজে নিজেই ভাবে। আবার ভাবে ঠিক হয়েছে, তার কফি এভোয়েড করে অন্যের টা খেতে গেলে এমনি ঝাঁঝ লাগবে। নিজে নিজেই মুখ বাঁকায়।
ইরফান মাইরাকে ছেড়ে ডান দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে মুখ গোল করে ফোঁস করে শ্বাস ফেলল।
মাইরা ছাড়া আবারও দৌড় দিতে নেয়, তার আগেই ইরফান মাইরাকে টেনে তার সামনে নিয়ে আসে। মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে তাকায় ইরফানের দিকে। সে সবসময় শুধু ধরা পরে যায়। ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে বলে,
“ঝাল কমিয়ে দিয়ে যাও।”

মাইরা বোকা চোখে ইরফানের দিকে তাকালো। তার খা’রা’প লাগলো এখন। চোখগুলো কেমন লাল হয়ে আছে, ওই ঝালের কারণে এটাও বুঝলো। ভাবলো চিনি এনে দিবে। অতঃপর বলে,
“আপনি দুই মিনিট দাঁড়ান। আমি চিনি আনছি।”
কথাটা বলে মাইরা ঢ়েতে নিলে ইরফান বা হাতে মাইরাকে টেনে ধরে বলে,
“I want to eat chocolate.”
কথাটা শুনে মাইরা কাল রাতের কথা মনে পড়ে। ঢোক গিল। আমতা আমতা করে বলে,
“আমার কাছে চকলেট নেই।”
ইরফান মাইরার দিকে এক পা এগিয়ে বলে,
“আছে।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে তা দু’হাত তুলে ইরফানকে দেখিয়ে বলে,
“এই দেখুন নেই।”
ইরফান মাইরাকে বা হাতে আঁকড়ে ধরে। ডান হাতের বুড়ো আঙুল মাইরার ঠোঁটের উপর রেখে শীতল কণ্ঠে বলে,
“This is a very tasty chocolate.”

মাইরা ইরফানের কথার মর্মার্থ বুঝতে পেরে ভেতর সত্তা কেঁপে ওঠে। চোখ নামিয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে চায়, তার আগেই ইরফান মাইরার ঠোঁটজোড়ায় নিজের ঠোঁটজোড়া রাখে। মাইরা তার শিরশিরানি শরীর ছেড়ে দেয়, ইরফান আগলে নেয়।
তখনই শুদ্ধ গান গাইতে গাইতে ইরফানের ঘরের দিকে আসে, থেমে থেমে ডেকে ওঠে,
“এই ইরফান কই রে তুই?”
শুদ্ধর গলা পেয়ে মাইরা ইরফানকে দু’হাতে ধাক্কা দেয়। ইরফান চরম বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মুখটাও খুলতে পারেনি। ছেড়ে দেয় মাইরাকে। মাইরা ছাড়া পেয়ে ল’জ্জায় কোনোদিকে তাকাতে পারে না। কোনদিকে যাবে? দরজার দিকে দৌড়ে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে শুদ্ধর গলা আরও কাছ থেকে পেয়ে উল্টো ঘুরে দৌড়ে ইরফানের পিছে এসে লুকায়। ইরফানের পিঠের সাথে চেপে দাঁড়িয়ে দু’হাতে ইরফানের টি-শার্ট খামচে ধরল। তার হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ল’জ্জায়।

এদিকে মাইরা ইরফানের পিছে দাঁড়ানোর পরেই শুদ্ধ ইরফানের ঘরে ঢুকে পড়ে। ইরফান বিরক্ত চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে আছে। শুদ্ধ এগিয়ে এসে বলে,
“বিয়ে তোর বোনের। আর আসতে হলো আমাকে। এসব কি ভাই?”
ইরফান কিছু বলল না। শুদ্ধ ইরফানের বিছানায় গিয়ে হাত পা ছেড়ে শুয়ে বা দিকে ঘাড় কাত করে ইরফানের দিকে তাকালে ইরফানের পিছে এক মেয়েকে ইরফানের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চিংড়ি মাছের মতো লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ায়। চোখ বড় বড় করে বলে,
“এটা কে?
বুকে থুতু দিয়ে বলে,
“ওহে নারী তুমি কে গো! তুমি কি জানো না ইরফানের এক বাচ্চা বউ আছে।”
মাইরা কি করবে ভেবে পায় না। তাকে দেখে নিয়েছে ভাবতেই কেমন লাগছে। দ্রুত ইরফানের থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি-ই সে বুঝলেন?”
কথাটা বলেই লজ্জানত মাথা নিয়ে এক দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মাইরা। শুদ্ধ বোকা চোখে মাইরার প্রস্থান দেখল। কি হলো? ইরফানের পিছনে লুকিয়ে ছিল কেন? আর এখন এভাবে দৌড় টাই বা দিল কেন? ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,

“তোর বউ এভাবে দৌড়ে পালালো কেন?”
ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“I don’t know.”
শুদ্ধ ইরফানের দিকে শিকারী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“আমার মন বলছে তুই সব-ই জানিস।”
ইরফান কাভার্ড এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“বের হ এখান থেকে। আমি আসছি।”
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
“মনে হচ্ছে বাচ্চা বউ এর সাথে সামথিং সামথিং,, এদিকে আমি যে তোর জন্য সিনিয়র বউ ঠিক করলাম,, তার কি হবে?”
ইরফান রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ভয় পাওয়ার ভান করে বলে,
“আরে এক চিমটি মিথ্যা বলছি না। তার বয়স ৩০+
তোর তো বাচ্চা বউ পছন্দ নয়, তাই বড় দেখেই মেয়ে ঠিক করছি,, তা ৩০ এর ঘরে হবে নাকি ৪০ এর ঘরে দেখব?”

ইরফান রেগে টেবিল এর উপর থেকে পেপার ওয়েট নিয়ে ছুঁড়ে মারে শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ দৌড়ে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে মাথা উঁকি দিয়ে বলে,
“আচ্ছা যা সময় দিলাম। ৩০, ৪০ এর ঘর থেকে শুরু করে ১০০ বছর পর্যন্ত চেষ্টা চালাবো। জানিস এখনো অনেক ঘরেই ১২০ বছরের বুড়ি মা বেঁচে আছে। যাইহোক তোর লাগলে শুধু এক চাপবি। ব্যাস আমি তোর সিনিয়র বউ নিয়ে হাজির হয়ে যাব।”
ইরফান বিরক্ত চোখে চেয়ে চেয়ে আছে শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ইরফানকে চুপ দেখে পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল করে কানে নিয়ে বলে,
“হ্যালো অন্তরা ম্যাম, ইরফানের নাকি সিনিয়র মেয়ে পছন্দ। বলছি তুই একটা সিনিয়র মেয়ে দেখ বুঝলি?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ওকে কোথায় পেলি?”
শুদ্ধ অন্তরার সাথে টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে বলে,
“মাঝে মাঝে কথা হয়। গতবছর বিসিএস এ টিকেছে। কোন কলেজের যেন লেকচারার।
একটু থেমে বলে,
ও এখনো বিয়ে করেনি।”
ইরফান ছোট করে বলল,

“ওহ।”
শুদ্ধ হাসলো ইরফানের দিকে চেয়ে। ইরফান কাভার্ড থেকে তার প্যান্ট শার্ট বের করে। শুদ্ধ কি যেন ভেবে মৃদু হেসে বলে,
“তোর বাচ্চা বউ তোর এক নাম দিয়েছে বুঝলি? পা’ষা’ণ। কথাটা এক্কেবারে মানাসই।”
ইরফান ছোট করে বলে,
“I Know.”
শুদ্ধ ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু একটা ভেবে কেমন মন খা’রা’প’ হয় হঠাৎ-ই।

“তুমি ইরফান ভাইকে ছেড়ে দিচ্ছ না কেন?”
মাইরা ঘরে এসে তার হাতে অনেকক্ষণ পানি দিয়েছে। প্রচুর জ্বলছে ডান হাত। মরিচ এর গুঁড়ো ধরেছিল খালি হাতে। মাথায় আসেনি সেভাবে। এখন ভয়াবহ হাত জ্বলছে। হাত কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে। বেডে বসে ডান হাত ধরে দাঁতে দাঁত চেপে জ্বলুনি স’হ্য করতে চাইছিল। এর মাঝে জাহারার মুখে এমন কথা শুনে মাইরা অবাক হয়ে তাকায় জাহারার দিকে।
বেড থেকে নেমে বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“জ্বি আপু, বুঝলাম না।”
জাহারা রেগে বলে,
“তুমি তে ফিডার খাও না। আমি বাংলাতেই বলেছি। তুমি ইরফান ভাইকে ডিভোর্স দিচ্ছনা কেন? শুধু শুধু এই বাড়িতে কেন পড়ে আছো?”
জাহারার কথায় মাইরার চোখমুখে আরও বিস্ময় ভর করে। নিজেকে সামলে মৃদু হেসে বলে,

“আমি কেন ছাড়বো আপু? উনি আমায় ছেড়ে দিলে তখন আমি থাকতাম না। কিন্তুু উনি তো আমায় ছাড়েননি।”
“আরও কিভাবে ছাড়বে? দেখেছ কোথাও, বিয়ের পর স্বামী তার বউকে নিজের ঘরে নিয়ে থাকে না। ঢুকতে দেয় না। ইরফান ভাই তো তোমাকে তার ঘরে থাকতে দেয় না। মেনে নেয়নি। তুমি বোঝোনা?”
মাইরা ঢোক গিলল। হাতের তীব্র জ্বলুনির কথা কেন যেন আর ফিল করতে পারছে না। এই জবাবে সে কি বলবে বুঝল না। ভীষণ খা’রা’প লাগছে তার। জাহারা আবারও বলে,
“তুমি ইরফান ভাইকে ডিভোর্স দিবে।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩০

মাইরা পুরো শরীরে কেমন যেন এক চিনচিন ব্য’থা ছড়িয়ে পড়লো। বারবার ঢোক গিলছে। বহুকষ্টে মুখ থেকে বের করে,
“উনি ডিভোর্স চাইলে অবশ্যই দিয়ে দিব। উনি না চাইলে কখনো না।”
কথাটা বলে ঝাপসা চোখজোড়া নামিয়ে নেয় মেঝেতে। একা একাই বিড়বিড় করে, ‘উনি চায় না ডিভোর্স। আমি জানি।’
তবুও কেন যেন চোখ থেকে টুপ করে দু’ফোঁটা পানি গাড়িয়ে পড়ে।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩২