প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩২
Drm Shohag
মাইরা নিজেকে সামলে নিল। বা হাতে চোখজোড়া মুছে নিয়ে মাথা তুলে তাকায়। জাহারার পানে দৃষ্টি রেখে হেসে বলে,
“তুমি আসতে পারো আপু।”
জাহারা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তুমি ইরফান ভাইকে ডিভোর্স দিবে কবে?”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোমার ইরফান ভাই কি তোমাকে বলেছে আমাকে ডিভোর্স দেয়ার কথা?”
“এটা বলতে হবে কেন? বোঝাই তো যায় এটা। তোমাকে ইরফান ভাই মেনে নেয়নি।”
মাইরা শব্দ করে হেসে ফেলল। অতঃপর বলে,
“সেটা আমি বুঝে নিব। জানো তো হাসবেন্ড ওয়াইফ এর মাঝের প্রবলেম তাদেরকেই সমাধান করতে হয়, এখানে থার্ড পার্সনদের এলাউ করতে নেই।”
জাহারা রেগে যায়। এই এতোটুকু মেয়ের বড় বড় কথা তাকে চরম বিরক্তিতে ফেলল। মাইরার দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“তুমি ইরফান ভাইকে ডিভোর্স দিবে।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ডিভোর্স হোক এটা তোমার ভাইয়া চাইছে না-কি তুমি চাইছো জাহারা আপু?”
জাহারা রেগে বলে,
“আমি-ই চাইছি। তুমি দিবে।”
মাইরা হেসে বলে,
“তুমি কি তোমার ইরফান ভাইকে পছন্দ কর আপু?”
জাহারা রেগে বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ করি। তুমি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলে?”
“আমি কেন জুড়ে বসব? আমার মনে হয় তোমার ভাইয়া আমাকে আগে পছন্দ করে, বুঝেছ?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তবুও তুমি তোমার ইরফান ভাইকে বেশি ভালোবাসলে তার সাথে আলোচনা করে নিজেদের মাঝে ঠিক করে নাও। আমায় কেন এসব বলছো? যেকোনো সম্পর্কে থার্ড পার্সন কিছুই করতে পারেনা, যদি দু’জন শক্ত খুঁটির ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। তুমি আর তোমার ইরফান ভাই তেমন হলে আমি এমনিই ঝড়ে পড়ব। আর থার্ড পার্সন আমি না হয়ে তুমি হলে তুমিও যাই-ই কর না কেন, সময় মতো তুমি নিজেই ঝরে পড়বে।”
জাহারা প্রচন্ড রেগে যায়। তার সহ্য-ই হয় না এই মেয়েকে। রেগে বলে,
“ইরফান ভাই আমাকে পছন্দ করে। তোমাকে না। তুমি কি এতো বড়লোক বাড়ি, এতো সুন্দর ইরফান ভাই এসব দেখে লোভ সামলাতে পারছো না? তাই ইরফান ভাই তোমাকে অপমান করার পরও তুমি জোর গলায় বলছো ইরফান ভাই নাকি তোমাকে পছন্দ করে।”
জাহারার কথায় মাইরার ভীষণ রাগ হয়। শক্ত চোখে তাকায় জাহারার দিকে। দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
“আমি যথেষ্ট সভ্য বলে মনে করি নিজেকে। তাই এখনো চুপ আছি। যদি অ’সভ্য হতাম তবে তোমার মুখ ভেঙে দিতাম আমি। আমায় ছোট ভেবে ভুলেও ভুল করবে না। জানো তো, ছোট মরিচের ঝাল বেশি।”
জাহারা প্রচণ্ড রেগে বলে,
“তুমি বারাবাড়ি করছ বেয়া’দব মেয়ে। তুমি ইরফান ভাইকে অবশ্যই ডিভোর্স দিবে মিলিয়ে নিও।”
মাইরা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমি কখন বললাম দিব না? আমি বলেছি উনি নিজে এসে আমার কাছে সাইন চাইলে আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করব। আবারও বলছি, উনি নিজে এসে বললে তবেই এটা করবো। নয়তো নয়। থার্ড পার্সনের কথায় তো আরও নয়।”
“ইরফান ভাই আমাকে পছন্দ করে জানার পরও?”
মাইরা হেসে ফেলে। জাহারার হাত ধরে বলে,
“তোমার ইরফান ভাই তোমার জন্য কি কি করেছে আর আমার জন্য কি কি করেছে এসব পাশাপাশি রাখলে বুঝতে পারবে উনি তার বউ আই মিন আমাকে নিয়ে কতটা ভাবে আর তোমাকে নিয়ে কতটা ভাবে। তুমি কি শুনতে চাও, মাত্র এই দু’মাসে তোমার ইরফান ভাই আমার জন্য কি কি করেছে? আমি সিওর তুমি তার খালাতে বোন হওয়ার পরও এতো বছরেও এর দশ পার্সেন্টও তোমার জন্য করেনি।”
জাহারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মাইরার দিকে। ঢোক গিলে। অতঃপর রেগে বলে,
“এতো অহংকার করছ কি নিয়ে?”
মাইরা হেসে বলে,
“তোমার ইরফান ভাই কে নিয়ে। উনি ভীষণ ভালো মানুষ। তবে খুব চাপা। ভুলেও ভাববে না চাপা স্বভাবের বলে তোমাকে পছন্দ করে। তিনি এতোটাও চাপা নয় যে কোনো কাজ করার আগে ছদ্মবেশ ধারণ করে।”
“তোমার বয়স কত? এতো কথা কে শিখিয়ে দিয়েছে তোমাকে বেয়া’দব মেয়ে?”
মাইরা মাথা নিচু করে নেয়। মুখটা মলিন হয়। বিড়বিড় করে, ‘যাদের বাবা মা থাকে না, তার খুব অল্প বয়সেই বড় হয়ে যায়।’
অতঃপর জাহারার দিকে তাকিয়ে বলে,
“যতটা ছোট ভাবো আমায়, ততটা না। একটু একটু বড়ই আছি। শুধু সবসময় কাজে লাগে না। তুমি এবার আসতে পারো আপু।”
“তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ?”
“তাড়িয়ে দিব কেন আপু? তুমি এই টপিক ছাড়া কথা বললে বসতে পারো। কিন্তুু আমার মনে হচ্ছে তুমি এই টপিক ছাড়া আর কোনো কথা বলবে না। তাই যেতে বলছি।”
জাহারার আর স’হ্য হচ্ছে না এই মেয়েকে। চোখ বড় বড় করে রেগে বলে,
“তুই ইরফান ভাইকে ছেড়ে দিবি। ভালোবাসলাম আমি। তুই কোথা থেকে উড়ে আসলি রে?”
তুই বলায় মাইরা যেমন অবাক হলো, তেমনি অবাক হলো জাহারার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি দেখে। তার খা’রা’প লাগলো জাহারার জন্য। মেয়েটা হয়তো ইরফানকে খুব করে চায়, কিন্তুু এখানে তার কি করার আছে? মৃদু হেসে বলল,
“আপু তুমি তোমার ইরফান ভাইয়ের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা কর। আমি তো নিষেধ করছি না। তোমাদের মাঝে ঠিক থাকলে আমি চলে যাব।”
“আমি ডিভোর্স পেপার আনবো, তুই সাইন করে দিবি। ব্যাস।”
মাইরা বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“আমি তো বলেছি আমি থার্ড পার্সনের কথায় তাকে ডিভোর্স তো দূর, ছেড়ে দেয়ার কথা মুখেও আনবো না।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই জাহারা মাইরার ডান গালে সাপটে এক চড় মেরে দেয়। মাইরা বুঝতেই পারেনি এমন কিছু হবে, ফলস্বরূপ মাইরা একদম উল্টে পড়ে। মাইরার মনে হলো জাহারা বহুদিনের জমানো ঝাল তাকে মিটিয়ে দিতেই এতো জোরে মারলো। মাথা ভনভন করছে তার। মাথার পিছনে খাটের কোণা দিয়ে ধাক্কা খেয়ে, সামনে থাকা বেডসাইড টেবিলের কোণা দিয়ে কপালে ধাক্কা খায়। মাইরার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। তবুও নিজেকে সামলে শক্ত কিছু বলতে চায় জাহারাকে। তার আগেই জাহারা রেগে দাঁত খিঁচে বলে,
“আছিস তো এই বাড়ির আশ্রিতা হয়ে। তার এতো দেমাগ আসে কোথা থেকে? দেমাগ কমিয়ে দিতে জানি আমি। শুধু দেখ কি করি।”
কথাটা বলে জাহারা হনহন করে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। মাইরা স্তব্ধ চোখে জাহারার প্রস্থান দেখল। বিড়বিড় করল, ‘আশ্রিতা?’ এমন তিক্ত কথা এই জীবনে শুনেছে বলে তো তার মনে পড়ে না। ভীষণ কান্না পায় তার। শব্দহীন কান্না মেয়েটাকে ঘিরে ধরে।
দরজার আড়ালে রিতা দাঁড়িয়ে। পুরোটা দেখল, মাইরার জন্য ভীষণ খারাপ লাগলো। জাহারা যেতেই রিতা দৌড়ে ঘরের ভেতর আসে। মাইরাকে এখনো মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে হাঁটু মুড়ে বসে মাইরাকে ধরে বলে,
“মাইরা, এসো উঠো।”
রিতাকে দেখে মাইরা কান্না থামাতে চায়। তবে পারছে না। না চাইতেও চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গাল বেয়ে পড়ে। রিতা মাইরাকে ধরে ধরে উঠিয়ে বিছানায় বসায়। মাইরার কপালের ডান পাশে ফুলে গিয়েছে, ফর্সা গাল মুহূর্তেই কেমন লাল হয়ে গিয়েছে৷ মাইরা কান্নাগুলো গিলে নেয়। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে ঠোঁটের কোণে জোরপূর্বক একটা ছোট্ট হাসি টেনে রিতাকে বলে,
“কিছু বলবে আপু?”
রিতা অসহায় চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। কি বলবে বুঝলো না। মন খা’রা’প করে বলে,
“জাহারা আপা তোমায় মারলো, আমার খুব খা’রা’প লাগছে।”
মাইরা চোখের পানি মুছে বলে,
“প্রবলেম নেই। আমার চেয়ে তো বড়, বড় বোন হয়ে মেরেছে নাহয়। কাউকে বলো না কেমন?”
রিতা অবাক হয়ে বলে,
“তুমি নিষেধ করছ কেন মাইরা? তোমাকে কারণ ছাড়া কত কথা শোনালো, আবার মারলোও।”
মাইরার কানে বাজে আশ্রিতা শব্দটা। মাথা নিচু করে বলে,
“বাদ দাও এসব। ইনায়া আপুর বিয়ে আর একদিন পর। এসব বললে ঝামেলা হবে।”
রিতা কিছু বলল না। মাইরা বিছানার এক কোণায় গিয়ে বাম কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। মাইরা আর কিছু না বলায় রিতা চুপচাপ বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। মাইরা ফুঁপিয়ে কাঁদে। এভাবে তার সৎ বাবা তাকে কথা শোনাতো। তবে তার সৎ মা তাকে বাঁচিয়ে নিত। মায়ের কথা আবারও মনে পড়লো। বিড়বিড় করে ডাকে, ‘মা’
ইরফান, শুদ্ধ বেরিয়ে যাচ্ছিল। ইরফান মাইরার ঘর পাস করার সময় বা দিকে একবার ঘাড় ঘুরায়। মাইরাকে উল্টো হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে নেয়। শুদ্ধ সামনে এগিয়ে গিয়েছে। ইরফান মোড় ঘুরিয়ে মাইরার ঘরের দিকে যায়। শুদ্ধ পিছু ফিরে দেখল ইরফানের কাণ্ড। হেসে বলে,
“কি রে ভাই, শুধু বাচ্চা বউয়ের কথা ভাবলেই হবে? সিনিয়দের কথাও একটু ভাব। আফটার অল তোর আবার বাচ্চা বউ নয়, সিইইনিইইওর বউউউ পছন্দ।”
ইরফান বিরক্ত হলো শুদ্ধর কথায়৷ চুপচাপ মাইরার ঘরে গেল।
মাইরা কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। ইরফান ভ্রু কোঁচকালো। এই বাঁদর মেয়ে অসময়ে ঘুমাচ্ছে কেন? অপর পাশে গিয়ে মাইরার দিকে একটু ঝুঁকলো। সর্বপ্রথম মাইরার ডান গালটাই চোখে পড়ে। যে ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট। ইরফান ভ্রু কোঁচকালো। মনে করার চেষ্টা করল, সে কি মেরেছিল নাকি? নাহ, সে কেন মারবে একে? রেগেছিল, তবে মারেনি তো। তাহলে গালের এই দাগ কিসের? কপালের দিকে নজর পড়লে আরও অবাক হয়। কেমন ফুলে উঠে জায়গাটা উঁচু হয়ে আছে। ইরফান বেডের উপর বাম পা ভাঁজ করে মাইরার পাশে বসে। হাত বাড়িয়ে মাইরার গাল ছুঁইয়ে দেখে, কপালে হাত ছোঁয়ায়। চোখমুখ ভীষণ কাঠিন্য। মাইরার হালকা একটু চোখ লেগেছিল। ইরফানের এটুকু ছোঁয়াতেই মেয়েটার ঘুম ভেঙে যায়। পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে ইরফানকে দেখে অবাক হয়। অভিমানে মুহূর্তেই চোখজোড়ায় পানি জমে। উল্টো ঘুরতে নিলে ইরফান মাইরার বা হাতের বাহু ধরে আটকে দেয়। গলা নামিয়ে নরম গলায় বলে,
“এসব কিভাবে হয়েছে?”
মাইরা কথা বলে না। চোখ বুজে নিয়েছে। ইরফান মাইরার গালে হাত দিয়ে কিছুটা শক্ত কণ্ঠে বলে,
“কে মে’রেছে?”
কথাটা শুনেই মাইরা তড়াক করে চোখ মেলে তাকায়। কিভাবে বুঝলো মারার কথা। ডান গালে হাত দিল সাথে সাথে। ইরফান তার মুখ বরাবর। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। আমতা আমতা করে বলে,
“কেউ না। পড়ে গিয়ে ব্য’থা পেয়েছি।”
ইরফান মাইরার হাত মাইরার গাল থেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে গালের দিকে তাকায়। বোঝাই যাচ্ছে থা’প্প’ড়ের দাগ। মুহূর্তেই মুখাবয়বে ক্রোধ জমা হয়। শক্ত কণ্ঠে বলে,
“যা জিজ্ঞেস করেছি অ্যান্সার কর ভালোভাবে।”
মাইরা ভয় পায়। এই লোকটার যা রাগ কি করবে কে জানে। মাথা ডান দিকে কাত করে বলে,
“আপনি যান। আমি ঘুমাবো।”
ইরফান ঝট করে মাইরাকে টেনে শোয়া থেকে বসায়। রেগে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“একদম মিথ্যা বলবে না স্টুপিট। বলো কে মে’রে’ছে?”
মাইরা ঢোক গিলে। সে জীবনেও বলবে না। পা’গ’ল নাকি সে। জেনেশুনে সাপের লেজে কেউ পা দেয়? পুরো বাড়িতে ঝামেলা হবে তার জন্য। মাইরা ইরফানের হাত সরিয়ে বলে,
“আপনি যান তো। আমি ঘুমাবো।”
ইরফান আরও রেগে যায়। মাইরার গাল চেপে বলে,
“লাস্ট বার জিজ্ঞেস করছি, কে মেরেছে?”
মাইরা কথা বলে না। ইরফানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“স্টুপিট বল, কে হাত দিয়েছে তোর গায়ে? অ্যান্সার মি! ড্যাম ইট।”
মাইরা কেঁপে ওঠে। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,
“আমি পড়ে গিয়ে….”
ইরফান শেষ করতে দেয় না মাইরাকে। মাইরার মুখ বরাবর তার মুখ নিয়ে ক্রোধযুক্ত চোখে চেয়ে বলে,
“আর একটা মিথ্যা বলবি তো, আছাড় খাবি। কে মেরেছে বল?”
মাইরা মিনমিন করে বলে,
“কেউ না।”
ইরফান রেগে মাইরাকে ধাক্কা দেয়। মাইরা বিছানায় চিৎপটাং হয়ে পড়ে যায়। ইরফান এপাশ-ওপাশ পায়চারি করে। হঠাৎ-ই বেডের কোণায় একটা লাথি বসায়। চিৎকার করে বলে,
“ওকে ফাইন তোকে বলতে হবে না। আমি নিজেই খুঁজে নিচ্ছি।”
কথাটা বলেই ঘর থেকে বেরোলে দরজার কাছে রিতাকে পেয়ে যায়। ইরফান শক্ত কণ্ঠে বলে,
“রিতা ওর এ অবস্থা কে করেছে?”
রিতা ঢোক গিলে। মাইরা যে বলতে নিষেধ করল। মাইরা দ্রুত বিছানা থেকে নেমে এসে ইরফানের পিছন থেকে বলে,
“আপু তুমি যাও।”
ইরফান পিছু ফিরে মাইরার দিকে জ্বলন্ত চোখে তাকায়। মাইরা ঢোক গিলল ইরফানের দৃষ্টিতে। ইরফান রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“রিতা আমাকে সব বলবে, রাইট নাও। না বলে এক পা নড়বে না এখান থেকে।”
মাইরা ইরফানকে পাস করে ঠেলে রিতাকে সরিয়ে দিতে চায়, কান্নামাখা গলায় কিছু বলতে চায়। তার আগেই ইরফান মাইরাকে টেনে মাইরার পিঠ তার বুকে লাগিয়ে বা হাতে মাইরার মুখ চেপে ধরে। রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আমায় আর রা’গা’স না লিটল গার্ল। আমার একটুও ইচ্ছে করছে না তোর এই আ’হত গালে আমার শক্ত আঘাত পরুক। সো, যাস্ট সাট আপ।”
এরপর রিতার দিকে চেয়ে ধমকে বলে,
“স্পিক আপ।”
রিতা ইরফানের ধমক খেয়ে ভ’য়ে গরগর করে সব বলে দেয়। মাইরা ইরফানের থেকে ছাড়া পেতে ছটফটায়। তবে ইরফানের শক্তির সাথে পারে না।
রিতার বলা কথাগুলো শুনে ইরফানের চোখেমুখে অজস্র ক্রোধ হাজির হয়, কপালের রগ ফুলে ওঠে। ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। বলিষ্ঠ হাতের রগগুলো ফুলে ফেঁপে ওঠে। বা হাতে ধরে রাখা মাইরাকে ছেড়ে বড় বড় পা ফেলে ডাইনিং এর ফাঁকা স্পেসে গিয়ে দাঁড়ায়। মাইরা পিছু পিছু ইরফানের হাত টেনে বলতে থাকে,
“প্লিজ কিছু বলবেন না। ইনায়া আপুর পরশু বিয়ে। এমন করবেন না প্লিজ!”
ইরফান মাইরার কথা শুনলোই না। উল্টে সিংহের ন্যায় হংকার ছেড়ে ডাকে,
“জাহারাআ? জাহারাআআ? জাহারাআআ?”
ইরফানের চিৎকারে পুরো বাড়ির দেয়াল যেন কেঁপে উঠল। বারবার প্রতিধ্বনি হতে থাকে ইরফানের কণ্ঠ। মুহূর্তেই এই বাড়ির ঘরে যে যে ছিল সবাই বেরিয়ে এসেছে। মাইরা কেঁদে দিয়েছে ভ’য়ে। হায় আল্লাহ এখন কি হবে।
জাহারা তার মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। ইরফানকে দেখে ভয়ে কাঁপছে রীতিমতো। পাশেই মাইরাকে কাঁদতে দেখল। মাইরা কি সব বলে দিয়েছে? ইরফান আবারও চিৎকার করে, ‘জাহারা কোথায় তুই?’
সবাই অবাক নয়নে ইরফানকে দেখছে। রুমা নেওয়াজ এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,
“কি হয়েছে ইরফান? জাহারা কে এভাবে ডাকছ কেন?”
ইরফান মায়ের দিকে একবার তাকায়। এরপর চোখ সরিয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে জাহারাকে এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে গটগট পায়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। জাহারা ভ’য় পায়। খুব ভ’য় লাগছে ইরফানকে দেখে। প্রচণ্ড রে’গে আছে। ইরফান জাহারার সামনে দাঁড়িয়ে গলা চড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আমি তোকে লাইক করি?”
জাহারা মাথা নিচু করে আছে। ভ’য়ে কাঁপছে রীতিমতো মেয়েটি। ইরফান আগের চেয়েও চিৎকার করে বলে,
“আমি ওকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছি?”
জাহারা ভেজা চোখে মাথা তুলে কিছু বলতে চায়। তার আগেই ইরফান জাহারার ডান গালে ক’ষিয়ে একটা থা’প্প’ড় মেরে দেয়। জাহারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জাহারার মা হতভম্ব হয়ে যান। প্রত্যেকে বিস্ময় চোখে চেয়ে আছে।
শুদ্ধ বাইরে বেরিয়েছিল, ইরফানের চিৎকার শুনে ভেতরে এসে জাহারাকে এভাবে মারতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। ইরফান আবারও তেড়ে যেতে নেয়, মাইরা দৌড়ে ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে দু’হাতে ইরফানের পেট জড়িয়ে কেঁদে বলে,
“প্লিজ এমন করবেন না। থামুন।”
পিছন থেকে শুদ্ধ দৌড়ে এসে ইরফানকে পিছন থেকে টেনে ধরে। হাঁপানো কণ্ঠে বলে,
“ইরফান কি করছিস? দাঁড়া।”
ইরফান জ্বলন্ত চোখে জাহারার দিকে চেয়ে আছে। জাহারার মা, রুমা নেওয়াজ একপ্রকার দৌড়ে এসে জাহারাকে টেনে তোলায় ব্যস্ত হয়। ইনায়া অবাক হয়ে মাইরা, তার ভাই আর জাহারা কে দেখছে। দ্রুত পায়ে জাহারার কাছে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসল। জাহারার চোখের পানির বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। ইনায়ার সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। জাহারা, মাইরা এভাবে কাঁদছে, ইরফান এতো ভ’য়ং’করভাবে রে’গে আছে, সবমিলিয়ে তার নিজেকে কেমন যেন এলোমেলো লাগলো। জাহারার মাথায় হাত রাখে মেয়েটা।
শুদ্ধ ইরফানকে টেনে দূরে নিয়ে যায়। মাইরা ইরফানকে ছেড়ে দাঁড়ায়। চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছে মেয়েটার।
তারেক নেওয়াজ বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“ইরফান এসব কি ধরনের অ’স’ভ্য’তামি?”
ইরফান চিৎকার করে বলে,
“ওর সা’হ’স কি করে হয় আমার ওয়াইফ এর গায়ে হাত তোলার? ওর হাত ভে’ঙে গুড়িয়ে দেব আমি।”
কথাটা বলে ইরফান আবারও তেড়ে যেতে চায়, শুদ্ধ ইরফানকে টেনে ধরে। রেগে বলে,
“ইরফান দাঁড়া। ও তোর খালাতো বোন।”
ইরফান শুদ্ধ কে ধাক্কা দেয়। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপরে যুক্তহীন ভারি কাচ তুলে উল্টে ফেলে দেয়। এতো ভারি কাচ মেঝেতে পড়ে কয়েক টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। নিস্তব্ধ বাড়িময় কাচ ভাঙার ঝনঝন শব্দ বাজতে থাকে।
ইরফান আগুনের ফুলকির ন্যায় লালিত চোখজোড়ায় চেয়ে অগ্নি ঝরা কণ্ঠে চিৎকার করে বলে,
“আমার ওয়াইফের গায়ে কোন সা’হ’সে ও হাত তুলেছে? সি ইজ মাইন। ওকে মারব, কাটব যা ইচ্ছা করব, সব আমি। অন্য কেউ না। আই রিপিট, অন্য কেউ না।
কেউ ওর গায়ে ফুলের টোকা দিবে না। সেই রাইট আমি কাউকে দিইনি। আমার বাবা মাকেও না। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
ইরফানের তীব্র রাগে চিৎকার করে বলা কথায় সকলে কেঁপে ওঠে। নিস্তব্ধ হয়ে বিস্ময় চোখে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে। সকলের চোখমুখে অজানা কৌতুহল। জাহারা মাইরাকে মেরেছে? কেন? ইরফান মেঝেতে বসা ফোঁপানা জাহারার দিকে চেয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“ও কোন সা’হ’সে বলেছে আমি আমার ওয়াইফকে ডিভোর্স দিতে চাই!
দু’হাতে মাথার চুল টেনে চিৎকার করে বলে,
সে কোনো আশ্রিতা নয়, সি ইজ মাই ওয়াইফ। শুনেছ সবাই? আমার ওয়াইফ কে আমি এই বাড়ির স্টোর রুমে রাখব, নাকি গেস্ট রুমে রাখবো, নাকি আমার বেড রুমে রাখবো,, ইট’স মাই চয়েস। সেই কৈফিয়ত আমি কাউকে দিব না। কাউকে না।”
ইরফানের চিৎকার করে বলা কথাগুলো বদ্ধ দেয়ালে গিয়ে তীব্র বেগে ধাক্কা খায়। প্রত্যেকের চোখমুখ বিস্ময়ে ভরপুর।
ইরফান চোখ বুজে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে। একটু থেমে নিজেকে শান্ত করার বৃথা চেষ্টা করে। মাথা তুলে মাইরার পানে তাকায়।
চোখমুখ ফুলে, কেঁদেকেটে মুখের অবস্থা নাজেহাল মেয়েটার। ইরফান মাইরার কান্নামাখা লালিত মুখপানে চেয়ে ঠাণ্ডা গলায় দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
“সময় হলে সে তার গন্তব্যে ঠিক পৌঁছে যাবে। প্রয়োজনে গোটা পৃথিবী তার গন্তব্যস্থল চিনবে।”
মাইরা অবাক হয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। বুঝলো কি ইরফানের কথার অর্থ? ছোট মাথায় এতো কঠিন কথা ঢুকলো না বোধয়। তবে কোথাও একটা ভীষণরকম স্বস্তি পায়।
চোখ থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফানের চোখে চোখ পড়ে। মাইরা তাকিয়েই থাকে। তবে ইরফান সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নেয়।
তারেক নেওয়াজ বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“জাহারা মাইরাকে মে’রে’ছে?”
ইরফান তার বাবার কথার উত্তর করল না। জাহারার দিকে চেয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“ফার্দার যদি কেউ আমার ডিভোর্সের কথা ভুলেও উচ্চারণ করেছে, তবে তার জিভ কেটে হাতে ঝুলিয়ে দিতে একবারো ভাববো না। মাইন্ড ইট।”
রুমা নেওয়াজ জাহারাকে ছেড়ে ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“দু’দিনের বউ এর কথা শুনে আমার বোনের মেয়ের গায়ে হাত তুলতে তুমি একবারও ভাবলে না?”
মাইরা রুমা নেওয়াজ এর কথায় মাথা নিচু করে নেয়। চোখ বেয়ে জল গড়ায়। তার জন্য এই পুরো ফ্যামিলিটাতে অশান্তি হচ্ছে ভেবেই কেমন দমবন্ধ লাগলো তার।
ইরফান চোখ বুজে নেয়। মায়ের কথা ইরফানের পছন্দ হলো না। দু’দিনের বউ কথাটা মোটেও ভালো লাগলো না। আগুনে ঘি ঢালার ন্যায় কাজ করলো যেন। রাগ তড়তড় করে বেড়ে গেল। মাকে কোনো উত্তর তো দূর, তাকালো না পর্যন্ত। রুমা নেওয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“জাহারা তোমাকে পছন্দ করে ইরফান। তুমি….”
রুমা নেওয়াজ এর কথার মাঝেই ইরফান রাগে চেয়ারে একটা লাথি মেরে চিৎকার করে বলে,
“তো আমি বলেছি আমাকে লাইক করতে? প্লিজ আম্মু! কারো হয়ে সাফাই গেয়ে আমার রাগ আর বাড়িয়ো না।”
ইরফানের কাণ্ডে রুমা নেওয়াজ চুপ হয়ে গেলেন। তারেক নেওয়াজ এগিয়ে এসে আদেশ এর সুরে বলেন,
“শুদ্ধ ইরফানকে এখান থেকে নিয়ে যাও।”
শুদ্ধ তার মামার কথা মেনে ইরফানের হাত ধরে টানলে ইরফান শুদ্ধর হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দেয়। গটগট পায়ে এগিয়ে গিয়ে মাইরার হাত শক্তহাতে চেপে মাইরার ঘরের দিকে নিয়ে যায়। মাইরা অবাক হয়, তবে কিচ্ছু বলে না। ইরফানের পিছু হাঁটে মাথা নিচু করে। ইরফান মাইরাকে তার ঘরের ভেতর রেখে হিসহিসিয়ে বলে,
“এই ঘর থেকে বেরিয়েছিস তো, পা কেটে ঘরে বসিয়ে রাখব।”
মাইরা ছলছল চোখে শুধু ইরফানের পানে চেয়ে রইল। ইরফান চোখ বুজে শ্বাস ফেলে। এরপর আবারও মাইরার কান্নামাখা মুখটার দিকে চেয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“ডোন্ট ক্রাই।”
মাইরার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। ইরফান রে’গে যায়। দু’হাতে মাইরার কাঁধ চেপে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“স্টুপিট, স্টপ ক্রায়িং।”
মাইরা হঠাৎ-ই ইরফানের বুকে কপাল ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে। দু’হাতে ইরফানের বুকের কাছের শার্ট মুঠো করে আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদে।
ইরফান স্তম্ভিত হয়ে যায়। মাইরার কাঁধ থেকে ধীরে ধীরে হাত সরিয়ে নেয়। শুকনো ঢোক গিলে।
মাইরা ওভাবেই ফুঁপিয়ে কতক্ষণ যে কাঁদলো, কেন কাঁদলো জানে না। কেঁদেকেটে ইরফানের সাদা শার্ট পুরো ভিজিয়ে ফেলে।
ইরফান শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লম্বা শ্বাস টেনে
এক পর্যায়ে মাইরাকে টেনে তার থেকে সরিয়ে দেয় ইরফান। মাইরা চোখ বুজে আছে। কান্নার তোড়ে থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। ইরফান ডান হাতে মাইরার গালে গড়িয়ে পড়া পানি মুছে দেয়। নরম গলায় বলে,
“You know, I don’t like you because you’re a little girl.”
মাইরার রা’গ হয়। দু’হাতে ইরফানের পেটে ঠেলে ধাক্কা দেয় ফোঁপাতে ফোঁপাতে। ইরফানকে তো সরাতে পারলোই না। উল্টে মাইরা নিজেই দু’পা পিছিয়ে যায়। ইরফান মাইরার হাত দু’টোর দিকে চেয়ে আছে। দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার নত মুখপানে তাকায়। সামান্য ঠোঁট বাঁকায়। বিড়বিড় করে, ‘লিটল গার্ল।’
এরপর বা হাতে মাইরাকে টেনে তার সাথে চেপে ধরে। এরপর সেভাবেই এগিয়ে গিয়ে মাইরার ঘরের ফ্রিজ খুলে বরফ বের করে। এরপর বরফ মাইরার ডান গালে লাগালে মাইরা কেঁপে ওঠে। কিচ্ছু বলে না। ইরফানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়। পছন্দ করে না তাহলে এসব কি? মাইরার খুব রাগ হয় এই লোকটার উপর। পছন্দ করেনা বলবে কেন এতেই তার রাগ আকাশ ছুঁয়েছে।
ইরফান কিছু বললো না। মাইরাকে শক্ত করে ধরে বরফ লাগিয়ে দিল। মাইরা তাকায় না ইরফানের দিকে। ইরফান মাইরার গালে তাকিয়ে রইল। এই মেয়ের একটুতেই এমন জখম হয় কেন বুঝে পায় না। মোমের শরীর মনে হয়। কপালে বরফ ঠেকিয়ে রাখল। মাইরার চোখ থেকে পানি গড়ায়। সে যে কেন কাঁদছে নিজেই বুঝে পায় না। ইরফান বেশ কিছুক্ষণ মাইরার কপাল গালে বরফ দিয়ে দিল। এরপর মাইরাকে ছেড়ে মাইরার বাম গাল হাত দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“কাঁদতে নিষেধ করেছি। আপাতত কোথাও দাগ বসানোর মুড নেই। সো, স্টপ ক্রায়িং।”
মাইরা তার গাল থেকে ইরফানের হাত সরিয়ে ইরফানের থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়। মাথা নিচু করে দু’হাতে চোখমুখ মুছে নেয়। চোখ তুলে তাকায় না ইরফানের দিকে। তার এখন ল’জ্জা লাগছে। এর আগে যদিও ভান করে ইরফানের বুকে ছিল সেসব তো স্বাভাবিক-ই লাগতো। কিন্তুু এখন কেন যেন স্বাভাবিক লাগছে না।
ইরফান মাইরার দিকে ভ্রু কুঁচকে কিছু সময় চেয়ে থাকে। কিছু বলে না। বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। যাওয়ার আগে শব্দ করে দরজা আটকাতে ভোলেনি।
ড্রয়িং স্পেসে সবাই সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। ইরফান প্রায় মিনিট পাঁচেক সময় পর মাইরার ঘর থেকে বের হয়। ঘরের দরজা খোলাই ছিল, তবে তাদের দেখা যায়নি। সবাই সবার মতো যার যার জায়গায় নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এতোক্ষণ কি হয়ে গেল সেই ঘোর থেকেই বোধয় কেউ বের হতে পারেনি।
জাহারা তার মাকে জড়িয়ে নিঃশব্দে ফোঁপায়।
ইরফান মাইরার ঘর থেকে বেরিয়ে কোনোদিকে তাকায়নি। হনহন করে বাইরে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বলে,
“কেউ বাড়াবাড়ি করলে আমি সেপারেট হতে আর একবারও ভাববো না। কথাটা স্মরণ করিয়ে দিলাম যাস্ট।”
ইরফানের কথায় সবার ধ্যান ভাঙে। রুমা নেওয়াজ ছলছল চোখে চেয়ে রইল ছেলের প্রস্থানের দিকে। কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্যে করে বলা হয়েছে তিনি বুঝেছেন। মাইরাকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি তার, তিনি বুঝলেন। কিন্তুু জাহারা তো এমন মেয়ে নয়, মাইরাকে মারবে এখনো তার বিশ্বাস-ই হচ্ছে না। কিন্তুু মাত্রই মাইরার গালে খেয়াল করে বুঝেছে জাহারা সত্যিই মেরেছে মাইরাকে। ইরফান তো অকারণে এতো বেশি রাগবে না।
কিন্তুু তার ছেলে তার থেকে দূরে গেলে তিনি মা হিসেবে কি করে থাকবেন? এতোদিন চাকরির সূত্রে যেতে চেয়েছে, তাই তো রুমা নেওয়াজ যেতে দেয়নি। এখন ঝামেলা হয়ে চলে গেলে সে কিভাবে মেনে নিবেন?
ইরফান মেইন ডোরের সামনে গিয়ে পিছু ফিরে তাকায়। শক্ত গলায় বলে,
“জাহারাকে যেন আমার ওয়াইফের আশেপাশে না দেখি। কথার হে’র ফের হলে খুব খা’রা’প হবে।”
শুদ্ধ ইরফানের হাত ধরে বলে, “আরে আয়। আমাদের লেট হচ্ছে।”
কথাটা বলে টেনে বাইরে নিয়ে যায় ইরফানকে। ইরফান আর কিছু বলল না। শুদ্ধর হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে নিজেই বড় বড় পা ফেলে বাইরের দিকে যায়। শুদ্ধ ইরফানের পিছু পিছু যায় ইরফানের দিকে তাকিয়ে। ইনায়ার বিয়ের একদিন আগে এসব ঝামেলায় সত্যিই সে হ’তাশ। তবে এতো করুণ পরিস্থিতিতেও তার হাসি পাচ্ছে ইরফানের কাণ্ড দেখে। মাইরাকে নিয়ে কত পজেসিভ ভাবা যায়? বিড়বিড় করল, ‘হাসলে কি পাপ হবে?’
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩১
নিজের গালে নিজেরই আলতো একটা থা’প্প’ড় দিয়ে বলে,
‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ! শুদ্ধ ভালো হয়ে যা। ভালো হতে পয়সা লাগে না। তোকে এখন কাঁদতে হবে। নো লাফিং, এখন শুধু ক্রায়িং ক্রায়িং।’
অতঃপর একা একাই কান্নার ভান করল। পরে হাসা যাবে নাহয় সময় করে। এখন একটু নাহয় কাঁদার চেষ্টা করুক।
অতঃপর দ্রুত পা চালিয়ে ইরফানের পাশে দাঁড়িয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে ইরফানের দিকে তাকায়। সর্বপ্রথম বুকের কাছে ভেজা সাদা শার্টের দিকেই শুদ্ধর শকুনি নজর পড়ল। এবার আর হাসি টা আটকাতে পারবে বলে মনে হয় না। তবুও আটকালো বহুকষ্টে। মিটিমিটি হেসে বলে,
“মুক্তোর ন্যায় বউ এর চোখের জলে স্বামীর শার্ট ভিজল তবে।”
ইরফান শুদ্ধর দিকে রেগে তাকালে শুদ্ধ গা-ছাড়া ভাব নিয়ে সামনে তাকিয়ে দুটো পাখির দিকে চেয়ে আঙুল তাক করে মিটমিটি হেসে বলে,
“হাউ লুমান্টিক!”