মায়াকুমারী পর্ব ১২
মেহেরিন আনজারা
একটি স্যালুনের সামনে নামলো। ভিতরে ঢুকে নিশুর চুলগুলোকে একটা কাটিং দিয়ে ঠিক করে দিতে বললো। ভি কাটিং করে দিলো যদিও অনেক চুল নষ্ট হয়েছে। এরপর ফেসিয়াল করে দিতে বললো। বিল পে করে বেরিয়ে গেল। একটা রেস্তোরাঁ ঢুকল।
“কী খাবি বল?”
“আমি তো কিছুর নাম জানি না কী খাব!”
ধূসর নিজেই চিলি চিকেন মোমো,চিজ-এ-বার্গার,চাওমিন ও পাস্তা,কর্নডগ,র্যাপ জী,একটা মার্গারিটা পিৎজা আর সফট ড্রিংকস অর্ডার করলো। খেতে পারলো না নিশু নষ্ট করলো বাকিগুলো পার্সেল করে নিলো। রেস্তোরাঁ থেকে বের হতেই হঠাৎ ধূসরের ফোন বেজে উঠলো। পিক করে কথা বলতে লাগলো। পকেটে ফোন রেখে বাইকে উঠলো। দেখল নিশু নেই। ধক করে লাফিয়ে উঠলো বুকটা। এখানেই তো ছিল হঠাৎ কোথায় গেল? চারদিকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও পেলো না। মেইন রোড রেখে আনমনা হয়ে গলির ভিতর দিয়ে হাঁটতে লাগলো নিশু। ধূসর এদিকে খুঁজলে নিশু আরেক গলি দিয়ে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেল।
“এখন আমি কোথায় যাব?”
নিজেকে নিজে বলতে লাগলো। দিকবিদিকশুন্য হয়ে ধূসর তার কয়েকটা ফ্রেন্ডকে ফোন করলো। কেউ কার তো কেউ বাইক নিয়ে খুঁজতে লাগলো নিশুকে। এদিকে নিশু এলোমেলো হাঁটছে একেকবার একেক গলির ভিতর দিয়ে। আর বলছে,”আমি এখন কোথায় যাব?”
পেলো না নিশুকে। বাসায় ফোন করে মাকে এবং দ্যুতিকে জিজ্ঞেস করলো নিশু গিয়েছে কি-না! উনারা বললেন আসেনি। বিস্তারিত জানতে চাইলে জানালো। ভীষণ টেনশনে পড়ে গেলেন দিলরুবা খাতুন। নিশুর নিখোঁজের টেনশনে মাথায় যন্ত্রণা শুরু হলো দ্যুতির। হিজাব আর মাস্ক পড়ে পার্স নিয়ে বেরুলো। বার-বার ফোন করে আপডেট জানলো,পাওয়া গেল না। দ্যুতির হঠাৎ মনে হলো অনিককে একবার বললে কেমন হয়! অবশ্য অনিকের বাবার হাত লম্বা। মন্ত্রী মানুষ নিশ্চয়ই কিছু একটা করতে পারবে। রয়ে-সয়ে লাজলজ্জা দমন করে টেক্সট করলো-“অনলাইনে আছেন?”
দু-মিনিট পর রিপ্লাই এলো-“হ্যাঁ জান।”
বিব্রতবোধ করলেও নীরব রইলো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল।”
“চাঁদ কোনদিক থেইকা উঠলো আইজ! সে যাইহোক আমি জানি তুমি আমারে আইলাবিউ কইবা। কইয়া ফালাও অনুমতি লাগব না জরিনার মা।”
“ফাজলামো বন্ধ করুন। মুখে যা আসে সব বলে দেয়।”
“আচ্ছা বলো।”
“আপনার একটা হেল্প লাগবে।”
“ধূৎ দিলো ফিলিংসটা নষ্ট কইরা! শোনো এখন আমি বিজি আছি পরে বইলো!”
ভীষণ রাগ হয় দ্যুতির। মনে মনে বকাবকি করতে লাগলো। ঠিক এর মিনিট ত্রিশেক পর মেসেজ পাঠালো অনিক।
“তা কী বলবা বলো!”
রিপ্লাই দিলো না দ্যুতি।
“আরে বলো না!”
“এতক্ষণ কী করেছিলেন?”
“স্টোরি দিচি।”
“স্টোরি দিতে এতক্ষণ লাগে?”
“আরে না স্টোরির সাথে কী গান দিবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না,তাই একটু দেরি হয়ে গেল আরকি! আচ্ছা এখন বলো।”
“এইভাবে আপনি ত্রিশটা মিনিট শেষ করে ফেললেন!”
“হুম তো!”
“দুনিয়াতে এমন মানুষও আছে!”
“শুধু আমি আছি জান এখন আসল কথা বলো।”
“নিশুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
“মানে!”
“সত্যি শুনেছেন।”
“কী বললা নিতা আম্বানিকে খুঁজে পাচ্ছ না!”
অফলাইন হয়ে গেল দ্যুতি। বেকার সময় নষ্ট। দ্রুত রুম থেকে বেরুলো অনিক।
“বুশরা তাড়াতাড়ি বের হো!”
“কী হয়েছে?”
“আরেহ নিতা আম্বানিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”
“কে বললো?”
“ফিতা আম্বানি টেক্সট দিচে। আমি তো আরও ভাবলাম শালি আইলাবিউ বলবো কিন্তু ঘটনা ঘুরে গেল একটি পলকেই। স্যরি নিতা আম্বানির কারণে।”
ফোন করে ওর গ্যাংদের বলে দিলো নিশুকে খুঁজতে। ওর বন্ধুরা মাইক ভাড়া করে এনাউন্সমেন্ট করতে লাগলো। বাইক নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল অনিক। গলায় স্কার্ফ এবং কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল বুশরাও। একটা রিকশা নিয়ে সেও খুঁজতে লাগলো। সন্ধ্যা হয়ে গেল হাঁটতে হাঁটতে। নিশু ঠিক কোথায় যাচ্ছে জানে না। শুধু হাঁটতেই আছে হাঁটতেই আছে।
“এখন আমি কোথায় খুঁজব ওকে!”
অনেক খুঁজেও পেলো না,হতাশ হয়ে দু-হাতে মুখ ঢাকলো ধূসর। কোথায় গেল মেয়েটা এইটুকুন সময়ের মধ্যে! অস্থির অস্থির লাগছে ধূসরের। খারাপ কিছু হয়নি তো? অথবা খারাপ কারো খপ্পরে পড়েনি তো?এদিকে মেয়েটার টোটালি মেমোরি ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। শ্বাস আঁটকে রইলো ধূসর। কে জানতো এমনটা হবে আর এমনটা করবে?মেইন রোডে অনিকের গ্যাংরা খুঁজতে লাগলো কিন্তু পেলো না। অনিক তার বাবাকে ফোন করে বললো নিশুর কথা এবং পুলিশস্টেশনে ফোন করে সাহায্য করতে বললো। দোনোমোনো করে পুলিশস্টেশনে ফোন করলেন তিনি। উনার আদেশ পেতেই বেশ কয়েকজন পুলিশ টহল দিতে লাগলো। গলির ভিতর দিয়ে বাইক নিয়ে ছুটলো অনিক। লক্ষ্য করলো একটা বস্তির দিকে নিশুর মুখ চেপে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে বেশ কতগুলো মাস্তান টাইপ ছেলে। মুহূর্তেই রক্ত চড়ে বসলো মাথায়। দ্রুত স্পিড বাড়িয়ে ব্রেক কষলো সজোরে। আচমকা লা’থি মা’রলো ছেলেগুলোর গায়ে। সাংঘাতিক মা’রপিট হলো দু’দলের মধ্যে। বেল্ট খুলে ইচ্ছেমতো উত্তম-মধ্যম দিলো অনিক। ফোন করে বন্ধুদের নিয়ে এলো কিছু মুহূর্তের মধ্যেই। সবগুলো ছেলেকে ধরে পুলিশে ফোন করলো অনিক। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নিশু। কাঁপতে লাগলো সমানে। অনিকের ঠোঁট থেকে রক্ত পড়ছে।
“এখানে কীভাবে এলে তুমি?”
ভীত নজরে তাকায় নিশু। আচমকা দৌঁড়াতে লাগলো। বাইকে স্টার্ট দিয়ে খপ করে নিশুর হাত ধরলো।
“মাথা গরম আছে নিশু দ্রুত বাইকে উঠো।”
ধমকে উঠতেই কেঁপে উঠে বাইকের পিছনে বসতেই হঠাৎ পুলিশের গাড়ি এলো। তার পেছনে একটি বাইকে করে এলো একজন ইন্সপেক্টর এবং কনস্টেবল। ব্রেক কষলো ইন্সপেক্টর।
“আমি ইনস্পেক্টর আবির। আপনি আমাকে ফোন করেছিলেন তাই না?”
“হ্যাঁ।”
“উনিই কি সে-ই?”
“হ্যাঁ।”
নিশুর দিকে একপলক তাকালো। ভয়ার্ত মুখশ্রী আর অনিকের কাঁধে হাত রেখে বসেছে।
“থানায় যেতে হবে আপনাদেরকে।”
“কেন?”
“আপনার বাবা ফোন করেছিলেন। আর জিডি করা হয়েছিল তাই।”
“ঠিক আছে থানায় আসছি।”
নিশুকে নিয়ে থানায় গেল অনিক। ইনস্পেক্টর আবিরের সামনে বসলো দু’জন। কিছুক্ষণ পর ছুটে এলো ধূসর। অনিকের সঙ্গে নিশুকে দেখতেই মাথা গরম হয়ে গেল। আচমকা কলার চেপে ধরলো অনিকের।
“তার মানে নিশুকে তুই নিয়ে গেছিস?”
চোয়াল শক্ত করলো অনিক।
“কলার ছাড়!”
“আমাকে হয়রান করলি কেন বল?”
“এইসব কী হচ্ছে? আপনারা কি ভুলে গেছেন এটা থানা?”
দু’জন দু’জনকে কয়েক ঘা লাগালো। বাধ্য হয়ে দু’জনকে জেল বন্দী করলো ইনস্পেক্টর আবির। সেখানেও দু’জন মা’রামা’রি করতে লাগলো। এরপর আলাদা সেলে রাখল দু’জনকে। ধূসর না বুঝেই অনিকের উপর আক্রমণ করলো। মস্তিষ্ক টগবগ করছে অনিকের। উপকারের নাম যে অপকার আজ আবারও টের পেলো। নীরব হয়ে বসে রয়েছে নিশু। নিশুর দিকে তাকায় ইনস্পেক্টর আবির। কেন জানি চোখ সরাতে পারছে না। নিশুর রূপের বর্ণনা দিলে এইটুকুই বলা যায়,মেয়েটা দেখতে ভারী মিষ্টি! সবকিছুই দেখতে মিষ্টি! আর মেয়েটার মধ্যে ধারালো একটা সৌন্দর্য রয়েছে। যে সৌন্দর্য প্রথম দর্শনেই মন আলোড়িত করে।
কাশফুলের মত হাওয়ায় দোলায়। চোখের দিকে তাকায়। নিশুর চোখগুলো একটু বড় বড় আর টানা টানা। ম’রা চোখ না জীবন্ত! মনে হয় যে চোখগুলো কথা বলে। পোশাক-আশাকে,চুলের কাটিংয়ে সব মিলিয়ে অর্থাৎ গেটআপেই মনে হচ্ছে কোনো অভিজাত ফ্যামিলির সন্তান। চোখে-মুখে,আচরণে এবং ব্যক্তিত্বে আভিজাত্যের ছোঁয়া! চেহারায় কিছু একটা রয়েছে যার দরুন বার-বার আকর্ষণ করছে তাকে। ওই যে ধারালো সৌন্দর্যটা। প্রবলভাবে মেয়েটা তাকে টানছে! একটা কলম নিয়ে কীসব লিখছে নিশু। সেদিকে না তাকিয়ে নিশুর মুখের এক্সপেশন কখন কেমন হচ্ছে সেটাই দেখছে। যতটুকু জানতে পারলো নিশু ডিমেনশিয়ার পেশেন্ট অর্থাৎ মস্তিষ্কের একটি ক্ষয়জনিত রোগ। আর এই রোগে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি,স্মৃতিশক্তি এবং ব্যক্তিত্বের ধরন পরিবর্তন হয়ে যায়।
“নাম কী আপনার?”
চোখ তুলে তাকায় নিশু। কিছুক্ষণ ভাবলো।
“আমি জানি না। মনে করতে পারছি না।”
“কীসে পড়াশোনা করেন?”
“পড়াশোনা! পড়াশোনা কী? আমি কোনো পড়াশোনা করি না।”
গোপনে মৃদু হাসল আবির। কেন জানি নিশু তাকে ভীষণ টানছে! মনে হচ্ছে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। উশখুশ করলো আবির।
“কী খেয়েছেন আজ?”
“আমি আজ কিছু খাইনি কিন্তু তখন রেস্তোরাঁয় অনেক কিছু খেয়েছি।”
আবির কি হাসবে?
“আপনার বাবা-মা কোথায়?”
কেমন করে আতঙ্কিত চোখে তাকালো নিশু। সে ভয়ার্ত চোখে চোখ রাখলো আবির। বলতে ইচ্ছে করলো,”সাজ না থাক,কাজলই যথেষ্ট! কিন্তু আপনার চোখে কাজল নেই। হুমায়ুন আহমেদ বলতেন,কাজল ছাড়া মেয়ে জ্যোৎস্নাবিহীন চাঁদ।”
“ডি..ডিভোর্স!”
চমকে তাকায় আবির।
“ডিভোর্স হয়েছিল?”
নিশু একটু কেমন জানি করলো। তাকে কেমন যেমন আতঙ্কিত দেখাল। ঘাবড়ায় আবির।
“শান্ত হোন! পানি পান করুন।”
ঠেলে সরিয়ে দিলো।
“লাগবে না।”
উঠে চলে যেতে নিতেই আচমকা হাত ধরে ফেললো আবির।
“স্যরি বসুন। আপনার গার্ডিয়ান আসছে।”
“আমি একটু জেলখানাটা দেখি।”
আবির কিছু বললো না। নিশু ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। ধূসর আর অনিক পাশাপাশি সেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“এটা কী পাবনা?”
ভ্রু কুঁচকালো আবির।
“মানে?”
“এখানে কি পাগলদের বন্দী করা হয়?”
শব্দ করে হেসে উঠলো আবির। তার হাসির দিকে তাকায় নিশু। মনে হচ্ছে ধ্রুব হাসছে। অস্পষ্ট হয়ে ধ্রুবর মুখটা ভেসে উঠছে তার মস্তিষ্কে। নিভু নিভু ঝাপসা চোখে তাকালো নিশু।
“কী দেখেন?”
কিছু বললো না নিশু।
“এটা কি পাগলাগারদ?এরা কি পাগল?”
দাঁতে দাঁত চাপলো ধূসর।
“তোর জন্য হাজতে ঢুকলাম নিশু। আর বলছিস পাগল!”
“তুমি পাগল হয়েছ কবে?”
“তোর সাথে একসঙ্গে। তারছিঁড়া।”
“তোমার মাথার সব তার ছিঁড়ে গেছে?”
“সামনে থেকে দূর হ নিশু।”
“কীভাবে ছিঁড়লো?”
দাঁতে দাঁত চাপলো ধূসর।
“তখন না আমায় বলেছ পাবনায় নিয়ে যাবে?”
“সামনে থেকে যা।”
“এখন তুমি নিজেই থাকো পাগলাগারদে।”
“যাবি এখান থেকে!”
চোয়াল শক্ত করলো ধূসর। আবির জানতে পারলো নিশুর নাম।
“নিতা আম্বানি তোমার অনেক পাওয়ার! বিনা দোষে আমাকে জেল খাটাইতেছ!”
“মা’রামা’রি করলেন কেন?”
“ওই ছাগলটাই তো শুরু করলো আগে।”
“শালা মুখ বন্ধ কর।”
“তুই শালা চুপ থাক!”
গোমড়ামুখে চেয়ারে এসে বসলো নিশু।
“আপনার নাম নিশু?”
“না।”
“তাহলে?”
“বিষাক্ত একটা ফুলের নাম।”
“মানে?”
“কখনো মনে পড়লে আপনাকে বলবো।”
কাগজগুলোয় নিজের নাম লিখতে লাগলো নিশু। বেশ কিছুক্ষণ পর অনিকের বাবা এসে রেগেমেগে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন। পুলিশকেও একগাদা বকাঝকা করলেন। উনারা বের হতেই মুখোমুখি হলেন আসাদ সাহেবের। পাত্তা না দিয়ে হনহন করে যে যার যার মতো চলে গেল। ইনস্পেক্টরের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ধূসরকে ছাড়িয়ে নিশুকে নিয়ে বাসার পথে রওনা দিলেন। নিশু যেতেই আবিরের কেমন জানি লাগলো। কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! আশ্চর্য! এমন লাগছে কেন তার? কী আবেশ রেখে গেল মেয়েটা যে আবিরের মনের মধ্যে পুষ্প ফুটতে লাগলো! মিষ্টি একটা মেয়েলি ঘ্রাণ পাচ্ছে এখনও। নিশু যেখানে বসলো সেখানটায় বসলো আবির। লক্ষ্য করলো এক কনস্টেবল। আবিরকে দুষ্টুমি করে বললো,”স্যার পছন্দ হয়েছে নাকি?”
“ধূৎ!”
“বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিন। ওহ না স্যার মেয়েটার তো মাথায় সমস্যা।”
যুক্তরাষ্ট্রে সময় তখন বিকেল পাঁচটা। ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় এক ফরেনার মেয়ে বলে উঠলো-“হাই আমি অ্যানি! পরিচয় হতে পারি?”
সৌজন্য হাসল ধ্রুব।
“অবশ্যই! আমি ধ্রুব।”
“আমরা ক্লাসমেট।”
“খেয়াল করিনি।”
“বন্ধু হতে চাই!”
হাত বাড়ালো অ্যানি।
“নো ইন্টারেস্টেড।”
মুখটা মলিন হয়ে গেল অ্যানির। ফ্ল্যাটে ফিরে মাকে ফোন করলো ধ্রুব। তখন বাংলাদেশ সকাল সাতটা। ফোন করে মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে কেটে দিলো। বাবা,ভাইবোন কিংবা নিশু কারো কথা জিজ্ঞেস করলো না। বাসা থেকে বেরিয়ে রেস্তোরাঁয় গেল। খাবার অর্ডার করলো। হঠাৎ অ্যানিকে আবারও দেখল। মেয়েটা ভীষণ সুন্দর!
রাতে পর্যাপ্ত পড়াশোনা করে ঘুমাতে গেল ধ্রুব। আজ সারাদিন স্নোফল হয়েছিল। মাত্রাতিরিক্ত ঠাণ্ডা। হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে। ফায়ারপ্লেসে আগুন জ্বলছে। এই তাপ শীতকে কাবু করতে পারছে না। সিদ্ধান্ত নিলো কাল হিটার কিনে আনবে। ব্যাঙ্কেট মুড়ি দিয়ে চোখ বুজতেই আচমকা ঝুনঝুন শব্দ বেজে উঠলো শ্রবণেন্দ্রিয়তে। চট করে মাথা বের করলো ধ্রুব না কেউ নেই। আবারও মুড়ি দিয়ে চোখ বুজতেই ভেসে উঠলো হলুদ শাড়ি পরনে খোলা চুলে এক রমণী ঝুনঝুন করে হেঁটে বেড়াচ্ছে তাদের সেই বাড়িতে। স্পষ্ট দৃশ্যমান হলো নিশুর পিছনের অংশের প্রতিচ্ছবি। ভাবতে লাগলো নিশু এখন জানি দেখতে কেমন হয়েছে? কল্পনায় এলো একটা মুখচ্ছবি! শ্যামলা গায়ের বরণ,বড় বড় দুটো চোখ,কোমর অব্ধি লম্বা লম্বা চুল কিন্তু মুখে একটা মায়া। আশ্চর্য! সে-তো নিশুকে পছন্দ করে না তাহলে ও দেখতে কেমন হয়েছে এইসব কল্পনা করছে কেন? সারা রাত নিশুর কথা মনে পড়লো। অ্যানি আজ ফ্রেন্ড হতে চাইবে তো কাল গার্লফ্রেন্ড হওয়ার আবদার করবে। এইসব তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে এসেছে তার ক্যারিয়ার এবং ফিউচার ব্রাইট করতে প্রেম-ভালোবাসা,টাইমপাস এইসব করতে নয়। বেশ রাত হতেই চোখ লেগে এলো।
পরের দিন ভার্সিটি যেতেই আবারও এলো অ্যানি ও তার ফ্রেন্ডরা। অ্যানির চোখে স্পষ্ট প্রেম দেখলো ধ্রুব। কিন্তু অ্যানি ফ্রেন্ড হওয়ার আহ্বান করছে! হতে পারে পরবর্তীতে আবারও আহ্বান করবে বয়ফ্রেন্ড হওয়ার। এটা একটা ট্রাপে ফেলতে চাইছে বোধহয়। অ্যানির রিকুয়েষ্ট রিজেক্ট করতে পারলো না ধ্রুব। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে নিতেই চট করে ভেসে উঠলো শ্যামবর্ণের একটি মুখচ্ছবি! মুখচ্ছবিটি যেন চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”আপনি আমাকে ঠকাচ্ছেন!”
চট করে হাত সরিয়ে ফেললো ধ্রুব।
“ধ্রুব আর ইউ ওকে? কী হয়েছে তোমার?”
“কিছু না।”
ক্লাসের দিকে পা বাড়ালো ধ্রুব। সেদিকে তাকিয়ে রইলো অ্যানি ও তার ফ্রেন্ডরা। সোফিয়া বলল,”ছেলেটার অ্যাটিটিউড দেখেছিস?”
বাঁকা হাসলো অ্যানি।
সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে বসলো সবাই। যে যার যার মতো খেতে লাগলো।
“ওই ছেলেটাকে তুই ফোন করেছিস তাই না?”
চমকে তাকায় দ্যুতি।
“মানে!?”
“নিশু হারিয়ে গিয়েছে এটা ও কীভাবে জানলো?”
আমতা আমতা করলো দ্যুতি।
“বুশরাকে বলেছিলাম।”
“মিথ্যা কথা বলবি না আমার সাথে।”
“হারিয়ে ফেলেছ আবার এত কথা বলো কেন!”
আগুন চোখে তাকালো ধূসর। বিরক্ত হলেন আসাদ সাহেব।
“থাম তোরা! খাওয়ার সময় এত কথা কীসের!”
“আব্বা আপনার মেয়ে দিনকে দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।”
“কী করেছি আমি?”
“ওই ছেলের সঙ্গে তোর অ্যাফেয়ার চলে তাই না?”
“আন্দাজি কথা কম বলো।”
খাবার অসমাপ্ত করে উঠে গেল দ্যুতি।
“খাব না!”
নীরবে খেতে লাগলো নিশু। কোমল স্বরে আসাদ সাহেব বললেন,”নিশু কাল তুমি রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে কোথায় গিয়েছিলে?”
কালকের কথা নিশুর সব মনে আছে।
“আমি ইচ্ছে করে পালিয়ে গিয়েছি।”
“কেন?”
“ভাইয়া বলেছিল আমাকে পাবনায় দিয়ে আসবে। এরপর রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার পর ভাইয়াকে কে যেন ফোন করেছে এরপর ভাইয়া আবারও কাকে যেন ফোন করে বললো এম্বুল্যান্স পাঠাতে।”
হতভম্ব চোখে তাকায় ধূসর।
“এটার জন্য পালাতে হবে কেন?”
“নিশ্চয়ই তুমি এম্বুল্যান্স করে আমাকে পাবনায় পাঠাতে।”
ঠিক কী বলবে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো সবাই। আমতা আমতা করলো নিশু।
“ব্যপার কী ধূসর?”
“আব্বা কাল রেস্তোরাঁ থেকে বেরুতেই আমার বন্ধু ইনান কল দিয়ে জানালো ওর আব্বু নাকি হঠাৎ হার্ট-অ্যাটার্ক করেছে। ও আর ওর মা আপসেট হয়ে পড়েছিল তাই আমি নিজেই হসপিটালে ফোন করে এম্বুল্যান্স পাঠাতে বলি। কিন্তু ও সেটা না বুঝেই পালিয়ে গেল।”
মাথা নুয়ে বসে রইলো নিশু। এখানে তার দোষ কোথায়! ধূসর তো তাকে পাবনায় নেওয়ায় জন্য বাসা থেকে টেনে নিয়ে গেল।
মায়াকুমারী পর্ব ১১
“কী করা উচিত তোকে!”
ধমকায় ধূসর।
“আহ থাম কী শুরু করলি!”
“যত নষ্টের মূল ওরা দু’জনই। দুটোকেই ইচ্ছে করছে গলা টিপে মে’রে ফেলি!”
খাবার নাড়াচাড়া করতে লাগলো নিশু।
“কাল চুলগুলো কেটে সু’ইসাইড করতে নিয়েছিল।”
নিশুর দিকে তাকান আসাদ সাহেব।
“এই সব কী নিশু?”
আমতা আমতা করলো নিশু। আসলেই তখন তার মাথা ঠিক ছিল না।
“মা ওর ঔষধগুলো দাও।”