মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৪

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৪
মুসতারিন মুসাররাত

নীরব শাওয়ার নিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই হঠাৎ মোবাইলটা বাজতে শুরু করল। স্ক্রিনে নিভানের নামটা ভেসে উঠল। একহাতে তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে কলটা রিসিভ করল। ওপাশ থেকে চিরচেনা নিভানের চনমনে কণ্ঠস্বর আসলো,
-” হ্যালো, নীরব কই তুই?”
নীরবের সংক্ষিপ্ত গম্ভীর জবাব,
-” বাসায়।”
কণ্ঠে এক চিমটি অবাকতা মিশিয়ে নিভান বলল,
-” এখনো তুই বাসায়! আজ নীলাদের বাড়িতে লাঞ্চের দাওয়াত, ভুলে গেছিস নাকি তুই?”
-” না।”
-” তাহলে এখনো যে বাসাতেই। কখন আসছিস?”
-” তোমার শ্বশুর বাড়ির দাওয়াত রক্ষার্থে তুমি যাও। আমি….”
কথার মাঝেই নিভান থামিয়ে দিল,
-” তোরও তো শ্বশুর বাড়ি।”
নীরব ভনিতা ছাড়াই সোজাসাপ্টা বলল,

-” আমার কাজ আছে। আমি যেতে পারব না। সমস্যা নেই ভাইয়া তুমি যাও। সবাইকেই যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমার আংকেলের সাথে কথা হয়েছে। ব্যাপার না।”
নীরবটা হয়েছে একগুঁয়ে, আনসোশ্যাল–এইভেবে ঠোঁট গলে দীর্ঘশ্বাস বেরোয় নিভানের। পরপর কিছু ভেবে কৌশলে বলল,
-” আরে এদিকে তো প্রব্লেম হয়ে গিয়েছে রে। তুই আসবি ভেবে আমি খালি হাতে এসে পড়েছি। একটাও মিষ্টির বাক্স আনিনি। ধূর! এখন তুই না আসলে।”
একটু দম নিয়ে আবার যোগ করল,
-” এইটা শুধু দাওয়াত না, সম্মান রক্ষার লড়াই। মিষ্টি না আনলে আমার সম্মান তলাই। আর তুই না আসলে, সেই মিষ্টিও তো পৌঁছাবে না ভাই! নতুন আত্বীয়.. বুঝতেই পারছিস!”
নীরবের রাগ হলো। বলল,
-” আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি যাচ্ছি? না জেনেশুনে তুমি… উফ্! ডিজগাসটিং।”
-” আচ্ছা তোকে আসতে হবে না। তুই শুধু মিষ্টি গুলো পৌঁছে দিয়ে যা। মিষ্টি পৌঁছানোর জন্য হলেও এক ঝলক তোর আসা জরুরী।”
নীরব আর একটাও শব্দ না খরচ করে খট করে কলটা কে’টে দিল। নিভান মৃদু হেসে ফেলল। তার আনসোশ্যাল ছোট ভাইকে যদি একটু কৌশলে সোশ্যাল করা যায়–এটাই তার ইচ্ছা। তবে ফোনের পর নিভান হতাশ। নীরবের আসা হবে কিনা, সন্দেহই রয়ে গেল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কাবার্ড খুলে সাদা শার্ট আর নীল জিন্স টেনে বের করল নীরব। পরিপাটি হয়ে জামাকাপড় পরে নিল, পকেটে ওয়ালেট গুঁজে, হাতে ফোনটা তুলল। ড্রয়িংরুম পেরিয়ে মূল দরজার কাছে পৌঁছাতেই পিছন থেকে মায়ের গলা শুনতে পেল,
-” নীরব?”
পা থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল সে,
-” হ্যাঁ, মা?”
নীহারিকা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
-” এই ভরদুপুরে কোথায় চললি বাবা? মাত্রই বাসায় এলি। আবার এক্ষুনি না খেয়েদেয়ে।”
নীরব মৃদু গলায় বলল,
-” ভাবীদের বাসায় যাচ্ছি। আংকেল ফোন করে ইনভাইট করেছিলেন…তো…”

মায়ের মুখ মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে গেল। চোখেমুখে অসন্তুষ্টি। ধীরে ধীরে ভেতরে ক্ষো’ভ জমে উঠল–সব ছেলেই এখন শ্বশুরবাড়ি মুখো হয়ে যাচ্ছে। বড় ছেলে তাও যাবার আগে একবার জানায়। ছোট ছেলেটাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল, সে অন্তত এদিকটায় একটু আলাদা হবে। যখন-তখন ফোন পেলেই ছুটে যাবে না। অথচ সে-ও কি না এখন…. এইসব ভাবতে ভাবতে নীহারিকার বুকের ভেতর শুরু হয় কেমন চিনচিনে ব্যথা। মনেমনে স্বামীর প্রতিও তীব্র রা’গ, বি’রক্তি জন্মাল—এই জন্যই তো এক বাড়ি থেকে দুটো মেয়ে নিতে চাননি তিনি। পইপই করে নিষেধ করলেন। কিন্তু লোকটা শুনল না। তাদের ঘরে ছেলে নেই, এখন কে জানে ওরা আবার কী যাদু করে ছেলেদের পুরোপুরি নিজের করে নেয়! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। গলাটা ম্লান হয়ে এলো,
-” এদিকে বাবা… আমি তো তোর পছন্দের খাবার রান্না করলাম। না খেয়েই যাবি!”
নীরব হেসে বলল,
-” ফ্রিজে রেখে দিও মা। রাতে খেয়ে নেবো, সমস্যা নেই।”
নীহারিকার মুখটা আরও কালো হয়ে গেল, কিন্তু আর কিছু বললেন না।
-” আসি” বলেই দরজা খুলে বেরিয়ে গেল নীরব।

সোফায় বসে ইচ্ছে। হাতে মায়ের ফোন নিয়ে গেম খেলছে। পাশে বসে মনা চামচে করে খাবার তুলে মুখের সামনে ধরে বারবার “এইসেই…” বলে আদর করে খাওয়াচ্ছে। খাওয়ানো প্রায় শেষ পর্যায়ে। হঠাৎ গেম থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে বেরিয়ে গেলে ফোনের গ্যালারির ছবি স্ক্রিনে ঝলকে ওঠে। ইচ্ছে কৌতূহলী চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকায়। ছোট ছোট আঙুলে একে একে ছবি স্ক্রল করতে থাকে। পাশে বসে থাকা মনা স্ক্রিনে চোখ রেখে বলে উঠল,
-” ওমা! এগুলো তো ইচ্ছে সোনার একদম ছোটবেলার ছবি দেখছি!”
মনার কথায় ইচ্ছের চোখে খুশির ঝিলিক ফুটে ওঠে। সে একটা ছবি মনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
-” মনা দ্যাকো… আমার পাপা! দ্যাকো দ্যাকো… পাপার সাথে আমি গাড়িতে।”
মনা হেসে বলে,

-” ছবিটা চমৎকার। আর ইচ্ছে সোনাকেও দারুণ কিউট লাগছে।”
ইচ্ছে আরো উচ্ছ্বসিত হয়ে ছবিগুলো একে একে দেখাতে থাকে। কখনো বাবার সাথে, কখনো মায়ের কোলে; একের পর এক সুখস্মৃতির মুহূর্ত উঠে আসে স্ক্রিনে। ধীরেধীরে ইচ্ছের বাবা আর প্রীতির ক্লোজ ছবি আসতে থাকে— কাঁধে মাথা রাখা, হাতে হাত ধরা, এক ছবিতে প্রীতির বেবি বাম্পের ওপর মাথা রেখে যেন কিছু শোনার চেষ্টা করছে ইচ্ছের বাবা। ইচ্ছে হঠাৎ গম্ভীর স্বরে বলল,
-” পাপা আর মাম্মা। এখানে আমি নেই!”
ছবিগুলো দেখতে দেখতে আকস্মিক মনার মনে প্রশ্ন জাগল–দেখে তো মনে হচ্ছে স্যার আর ম্যাডামের লাভ ম্যারেজ হবে হয়ত। তবে আমি যতদিন এখানে আসছি- ম্যাডামের সাথে স্যারের হাসিমুখে কথা বলা দেখিনি। স্যার যতক্ষণ থাকেন, শুধু ইচ্ছের সাথেই সময় কা’টান, ম্যাডামের দিকে ফিরেও তাকান না। আর কেনোই বা থাকেন না?
মনা ঠোঁট উল্টে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবল,—বরলোকদের সম্পর্কের হিসাব বুঝে ওঠা ভার। এই তো, সিনেমার পরীমণি আর তার স্বামী….. কী প্রেম, কী আবেগ! ক্যামেরার সামনে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে সে কী কান্নাকাটি! অথচ কিছুদিনের মধ্যেই ছাড়াছাড়ি! হয়তো স্যার-ম্যাডামের মাঝেও এমন কিছু ঘটেছে। শুধু মেয়েকে দেখতেই আসে। যাজ্ঞে, যা হয় হোক গে, এসব নিয়ে ভাবার দরকার নেই। মালকিনদের নিয়ে বেশি মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। মাস গেলে ভালো বেতন পাচ্ছি, এই ঢের।
এরমধ্যে প্রীতি সিঁড়ি ভেঙে নিচে নেমে এগিয়ে আসলো। আদেশের সুরে বলল,
-” মনা, খাওয়ানো শেষ হলে ইচ্ছেকে ঘুম পাড়িয়ে দাও।”
-” আচ্ছা, ম্যাডাম। আচ্ছা।”

প্রীতি ডাইনিং টেবিলে বসতেই সার্থক পাশের চেয়ারটা টেনে বসল। বোনের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” মা খেয়েছে?”
প্রীতি একচিলতে হাসি দিয়ে বলল,
-” মায়ের খাবার রুমে পৌঁছে দিয়েছি।”
সার্থক আবার প্লেটে মন দিল। প্রীতি খাবার মুখে তুলেই যেন জিহ্বার ডগায় অপেক্ষা করে রাখা কথাটা ছুঁ’ড়ে দিল,
-” ভাইয়া, জানো মা তোমার বিয়ের জন্য সিরিয়াসলি পাত্রী খুঁজছে। একগাদা মেয়ের ছবি এনে আমার সামনে দিয়ে বলেছে, ‘তুই পছন্দ করে দে’। তো আমি ভাবছি, চির ব্যাচেলর থাকার যে গোঁ ধরেছো সেটা এবার ছেড়ে দাও, একটা বিয়ে করেই ফেলো!”
বিয়ের কথা শুনে সার্থকের চোখের সামনে হঠাৎ ভেসে উঠল সেই মুখ–উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, রাগী চোখ, ঠাসঠাসে কথাবার্তা, আর অদ্ভুত এক আকর্ষণ। বুকের ভেতর যেন কেমন এক হাওয়া খেলে গেল। বরাবরের মতো ‘না’ বলার বদলে এবার একটু আলাদা সুরে বলল,
-” হ্যাঁ… ভেবেছি এবার বিয়েটা করেই ফেলব।”
প্রীতির মুখে আনন্দের ঝলক। বিস্ময় আর উচ্ছ্বাস একসাথে মিশে গলাটা চড়ে গেল,

-” রিয়েলি!”
সার্থক হালকা মাথা নাড়ল,
-” ইয়াহ!”
-” গুড! লাঞ্চ শেষ হলে ছবি দেখাবো তোমায়। ডোন্ট ইউ ডেয়ার ব্যাকআউট এবার!”
সার্থক একটু দ্বিধাভরা কণ্ঠে বলল,
-” আসলে… রিসেন্টলি একটা মেয়েকে আমার বেশ ভালো লেগেছে।”
প্রীতি উত্তেজিত হয়ে বলল,
-” ও মাই গড! ব্রো ফাস্ট তাহলে ছবি দেখাও! বাসা কোথায়? কালকেই প্রস্তাব নিয়ে যাবো!”
-” আরে রিল্যাক্স! রিল্যাক্স সিস! দেখা হয়েছে রাস্তায়, কোনো ছবি নেই, ঠিকানাও জানি না… তবে চিন্তা নেই, আমি ঠিক বের করে ফেলব। সার্থকের কাছে ঠিকানা বের করা তুড়ি বাজানোর মতো।
প্রীতির মুখে হালকা সন্দেহের রেখা,
-” মানে? কিছুই জানো না? কে জানে কেমন পরিবার, কেমন ব্যাকগ্রাউন্ড?”
সার্থক স্থির চাহনিতে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-” ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এসব নিয়ে আমি ভাবি না। আমি শুধু জানি, ওকে আমার ভালো লেগেছে। ব্যস! ওকেই চাই। এটাই শেষ কথা।”
প্রীতি মুচকি হেসে বলল,
-” আমার ব্রোর যখন কাউকে চায়, তখন সেটা মিস হতেই পারে না। ট্রাই টু মাই বেস্ট, যেভাবেই হোক না কেন তাকে তোমার জীবনে আনতেই হবে। আর এটাই হবে তোমার জন্য আমার বেস্ট গিফট। হ্যাপি?”
-” থ্যাংকস ইন অ্যাডভান্স।”

-” প্রত্যাশা যা গিয়ে গোসল করে নে। বাকিটা আমি করে নেবো।”
অধরা চুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশাকে সরিয়ে নিজে খুন্তি হাতে নিলেন। নীলা ফ্রিজ খুলে লেবু বের করে জিজ্ঞেস করল,
-” আম্মু ছু/রি কই?”
অধরা কিছু বলার আগেই প্রত্যাশা দেখিয়ে বলল,
-” এইযে।”
নীলা মুখ বেঁকিয়ে বলল,
-” দে।”
প্রত্যাশা ছু/রি হাতে নিয়ে বলল,
-” দাও আমি কে’টে দিচ্ছি। তোমার তো আবার নুনের শরী…”
নীলার কটমট দৃষ্টি দেখেই প্রত্যাশা থেমে যায়। হেসে বলল,
-” অপসসস স্যরি! মিস্টেক হয়েছে। তোমার তো আবার ননীর শরীর একটু কাজ করতে গেলেই হাঁপিয়ে উঠো… যাইহোক দাও আমি ঘ্যাচঘ্যাচ কে’টে দিচ্ছি। দেখা গেল সেদিনের শশা কা’টার মতোন আজ আবার লেবু কা’টতে গিয়ে আঙুল না কে’টেকুটে বসে থাকো।”
নীলা রাগে ফুঁসে উঠল। কিছু বলার আগেই অধরা প্রত্যাশাকে রাগ করলেন। তাই নীলা আর কিছু বলল না। মুখ ভেংচি কে’টে দুইহাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে রইল। লেবু কা’ট’তে কাটতে প্রত্যাশা বলে উঠল,

-” ইয়া আল্লাহ! ছু/রিতে তো একটুও ধার নেই দেখছি। এই দিয়ে চো’রে’র নাকও তো কা’টা যাবে না।”
-” তোর নাক কা’টা গেলেই হলো।”
নীলার কথাটা বলার সাথে সাথে প্রত্যাশা নীলার মুখের সামনে ছু’রিটা ধরে বলে,
-” আসো তো তোমাকে দিয়ে ট্রাই করে দেখি। ননীর তৈরি শরীর কে’টে দেখি লোহার টা যাবে কী? যাবে না!”
নীলা চেঁচিয়ে উঠল,
-” আম্মু ওকে থামতে বলবে। আমি কিছু বললেই তো আবার তুমি আর আব্বু আমাকেই কথা শোনাবে।”

সদ্য শাওয়ার নিয়ে বেরুতেই কলিং বেলের শব্দ কানে এলো প্রত্যাশার। আম্মু রান্নাঘরে, আপু জিজুর সাথে রুমে গল্পে ব্যস্ত। এটা ভেবে, ভেজা চুলগুলো সাদা তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে মাথার উপর দিয়ে পিঠের ওপর নামিয়ে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগোল প্রত্যাশা।
দরজা খুলতেই চোখের পাতা থমকে গেল, শ্বাসটা যেন মুহূর্তে আটকে এলো। দাঁড়িয়ে আছে নীরব; চেনা সেই গাম্ভীর্য মাখা মুখ, এক হাতে কয়েকটা প্যাকেট। প্রত্যাশার কপালে ভাঁজ পড়ে–উনি তো বলেছিলেন, আসবেন না। তাহলে এখন, হঠাৎ?
নীরবের দৃষ্টিজোড়া–ভেজা ভোরের মতো স্নিগ্ধ সদ্য গোসল নেওয়া প্রত্যাশার মুখশ্রীতে। কপালের উপর থাকা ছোট ছোট চুলের আগা বেয়ে টপটপ পানি ঝরছে। পরপর নীরব চোখের পলক ফেলল। গরম লাগছে, আঁটসাঁট সাদা শার্টটা ঘেমে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। একহাতে কলার ফাঁকা করে নীরব। দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যাশার কারণে এগোনো যাচ্ছে না। মেয়েটি যেন জমে আছে কোনো ভাবনায়। সৌজন্যমূলক ‘ভেতরে আসুন’ বলতেও যেন ভুলে গেছে! নীরব হালকা কাশল। প্রত্যাশা সম্বিৎ ফিরে পেয়ে নড়েচড়ে দাঁড়ায়। কয়েকবার পলক ঝাপটে ভাবল– বাব্বাহ! পথ ভুলে এলেন না তো!

হঠাৎ, প্রত্যাশার মাথায় দুষ্টুমির ভূ’ত চাপল। এই মানুষটির সঙ্গে দেখা হওয়া, আঙুলে গোনা যায়। আপুর বিয়ে হয়েছে আজ চার মাস, এই সময়ে তিন-চারবার দেখা হয়েছে নীরবের সঙ্গে। তবে না হয়েছে কোনো কথা, আর না তো কোনো সম্বোধন। এখন তো আবার সম্পর্ক বদলেছে। আচ্ছা প্রত্যাশা যে ওনার বউ, এটা মিস্টার নীরবের মনেটনে আছে কী না একবার যাচাই করা যাক! একটু ফা’জ’লামি করা যাক। দেখাই যাক না উনি কী রিয়েকশন দেয়! এইভেবে বাঁকা হেসে প্রত্যাশা দুই হাত সামনে এনে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে হালকা দুলতে দুলতে, গলা টেনে চওড়া একটা হাসি চাপা দিয়ে বলল,
-” আসসালামুয়ালাইকুম, বেয়াই সাহেব!”

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৩

বউয়ের মুখ থেকে এমন অদ্ভুত সম্বোধনে নীরবের মুখভঙ্গি, তারপর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, তা নিয়ে মনেমনে রীতিমতো উ’ত্তেজনা ছড়াল প্রত্যাশার। মৃদু নার্ভাস হয়ে ও তাকাল নীরবের মুখের দিকে–ভ্রু কুঁচকেছে? চোখ ছোট হয়ে এসেছে? না কী রে’গে গিয়ে এখনই ক’ষি’য়ে রাম ধ’ম’ক দিবে?
এইসব ভাবতেই, অজান্তেই ভ’য়ে প্রত্যাশার হাত-পা হালকা কাঁপতে লাগল এবার।

মধ্য রাতের চাঁদ পর্ব ৫