প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৭

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৭
Drm Shohag

মাইরা ইনায়ার ফোন নিয়ে ফাইজের নাম্বারের ব্লক খুলল। এরপর ইনায়ার ফোনে ধার নিয়ে ফাইজের নাম্বারে কল দিয়ে ইনায়ার কানে দেয়। এরপর মাইরা তার ফোনে কিছু টাইপ করে ইনায়াকে দেখিয়ে বলে,
“এখানে যা যা লেখা আছে এগুলো বলো।”
ইনায়া মেনে নিল। ওপাশ থেকে একটু পরই কল রিসিভ হয়, ইনায়া কিছু বলার আগেই ফাইজ বলে ওঠে,
“লিটল কুইন স্যরি! প্লিজ আর ব্লক কর না। আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।”
ফাইজের কথা শুনে ইনায়ার খা’রা’প লাগলো। তবে কাজিনদের দিকে চেয়ে কান্নার ভান করে মাইরার ফোন দেখে বলে,

“আপনার এক্স আমায় ফোন করেছিল, আপনি কি করে এবার অস্বীকার করবেন? আপনি কিভাবে পারলেন আমার সাথে এমন করতে? খবরদার আর কল করবেন না আমাকে। গুড বাই।”
মাইরা সাথে সাথে ইনায়া ফোন কেড়ে নিয়ে কল কেটে ফাইজের নাম্বার ব্লক লিস্টে রেখে হেসে বলে,
“থ্যাঙ্কিউ ইনায়া আপু।”
ওপাশে ফাইজ তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। কোন মেয়ে তার বিয়ের আগে শত্রুতা করছে। হাতে কাছে পাইলে সাপটে এক থা’প্প’ড় দিত। উফ! আর স’হ্য হয় না। এসব কি অত্যা’চার? আর নেয়া যাচ্ছে না। মাইরার নাম্বারে কল ব্যাক করল। রিং হয় রিসিভ হয় না। রাগের সাথে সাথে এক বুক কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কে এই মেয়ে? তার না হওয়া বউটার কান ভাঙিয়েছে? খোঁজ পেয়েছে কোথায়? ঘরের ভেতর গিয়ে বলে,
“শুদ্ধ এটা কে, বের করে দে।”
শুদ্ধ হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক হলো। অতঃপর বলল,
“আরে আমি চিনি না তো। হবে তোর কোনো এক্স।”
ফাইজ রেগে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এক থাবড়া খাবি। ইরফানের বোনকে ভালোবেসেই কুল পাইনা। কোন জন্মে এক্স ছিল আমার?”
শুদ্ধ মুখ লুকিয়ে আরেকটু হেসে নিল। ইশ রে হাসি থামছে না। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে বলল,
“আমি এখন ঘুমাবো। ডিস্টার্ব করিস না তো! কালকে বরের সাথে যেতে হবে তো নাকি!”
বলে উপুর হয়ে শুয়ে বালিশে মুখ চেপে হাসতে লাগলো।
ভাবনার মাঝেই ফাইজের ফোন আবারও ফোন বেজে ওঠে। এই নাম্বার চেনে না সে। বিরক্ত হয়ে কেটে দিল। আবারও কল আসলে রিসিভ করে কানে দেয়। ওপাশ থেকে কেউ বলে,
“এই শা’লা কে বে তুই? আমার ইনায়া পাখির দিকে নজর দিয়ে বিয়ে করতে চলে আসছিস? ওর দিকে নজর দিলে চোখ তুলে নিব। আজ রাতেই আমি আমার ইনায়া পাখিকে বিয়ে করছি। তুই বসে আঙুল চুষে খা। এ্যাহ! আমার ইনায়া পাখিকে বিয়ে করার সাধ মেটাবো। বিয়ের আগে তোকে এই সুসংবাদ না দিয়ে থাকতে পারলাম না। যা দু’রাকাত নামাজ পরে নে আমার আর ইনায়া পাখির জন্য, যাতে আমাদের বিবাহিত জীবন সুখের….”

ফাইজ রাগে তার ফোন সর্বশক্তি দিয়ে আঁচড়ে ফেলল। শুদ্ধ ফাইজকে দেখার জন্য মাথা কাত করেছিল, ফোন ছুঁড়েতে দেখে দ্রুত শোয়া থেকে উঠে ফোন কেচ ধরে নিল। ইম্পর্ট্যান্ট ইনফরমেশন আছে এখানে। করছিল কি এই ফাইজ!
ফাইজকে কিছু বলার আগেই ফাইজ তেড়ে আসে শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধর কলার ধরে চিৎকার করে বলে,
“কোন শ’য়’তান আমার কুইনের পিছনে পড়ে আছে? এতোদিন বলিস নি কেন আমাকে বল? তোদের সবকটা ভাইকে জানে মেরে দিব। শা’লা তোদের মতো ভাইদের বেঁচে থাকার অধিকার-ই নাই।”
শুদ্ধ তব্দা খেয়ে চেয়ে আছে। অবাক হয়ে বলে,

“কি বলছিস? বিয়ের খুশিতে পা’গ’ল টা’গল হয়ে গেলি নাকি?”
ফাইজ কিছু বলল না। শুদ্ধ কে ছেড়ে সে দ্রুত কোনোরকমে একটা প্যান্ট আর টিশার্ট পরে একপ্রকার দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। শুদ্ধ বোকাচোখে ফাইজের কারবার দেখল। হলো টা কি এর?
ফাইজ ফোন কেটে দেয়ায় রাতুল ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
“কিউট ভাবি তোমার লেখা পুরোটা বলতে পারলাম না। কল কেটে দিয়েছে।”
মাইরা হেসে বলল,
“ওটুকুতেই কাজ হবে ভাইয়া। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”
ওদিকে মিশকা, তামান্না, রিয়া সাথে ইনায়া পেট চেপে হাসছে। রাতুল হেসে বলে,
“কিউট ভাবি তুমি একখান মেয়ে। বিয়ের আগেরদিন বেচারা বর বাবুকে কি ঘোলটাই না খাওয়াচ্ছো!”
মিশকা বলে ওঠে,

“আমাদের ভাবির মাথায় অনেক বুদ্ধি। সবার মতো কি আর গোবর ভরা থাকবে না-কি!”
রাতুল মিশকার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
“আরে কুশ্রী মিশকা!”
মিশকা রেগে বেডের ঝাড়ু ছুঁড়ে মারে রাতুলের দিকে। রাতুল লাফ দিয়ে দূরে সরে বলে,
“আহারে! ব্যবহার টাও কুশ্রী হয়ে যাচ্ছে। চালিয়ে যাও মিশকা। অল দ্য বেস্ট।”
মিশকা দাঁত কিড়মিড় করে তাকায়। মাইরা হেসে বলে,
“আরে আপু ভাইয়া তোমরা ঝগড়া করছ কেন? ফাইজ ভাইয়ার কথা ভেবে একটু হাসো। বেচারা বিয়ের আগেরদিন কতকিছুই না স’হ্য করছে।”
মাইরার কথায় সবাই হেসে ফেলল।

শুদ্ধ ঘর থেকে বের হলো। ফাইজ কোথায় গেল সেটাই দেখতে। বাইরে গিয়ে দেখল ফাইজ গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছে। ইনায়াকে নিয়ে প্রবলেম, ইনায়ার কাছেই যাবে নয়তো আর কোথায় যাবে? হাসিও লাগলো। এই মাইরাই কিছু করেছে, মেয়েটা তো আচ্ছা কাজের, ভেবেই আবারও হেসে ফেলল। পকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরায়। কয়েক টান দিলে বাইরে দাঁড়িয়েই খেয়াল করল ফারাহ ডাইনিং এ ফোনের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। শুদ্ধ ভ্রু কোঁচকালো। ভাবনার মাঝেই ফারাহ গেইটের সামনে এসে দেখল শুদ্ধ সিগারেট ফুঁকছে। ফারাহ কিছু না বলেই শুদ্ধর মুখের উপর দরজা লাগাতে নিলে শুদ্ধ দরজা আটকে দিয়ে বলে,
“এই মেয়ে, আমাকে তোমার দারোয়ান মনে হচ্ছে?”
ফারাহ রেগে বলে,

“এসব ছাইপাঁশ খেয়ে আমাদের বাড়িতে আসা যাবে না। রেরোও বলছি।”
শুদ্ধ ফারাহের দিকে একটু ঝুঁকে সিগারেটের ধোঁয়া ফারাহের একদম মুখের উপর ছাড়লো। ফারাহ খুকখুক করে কেশে ওঠে। শুদ্ধ মৃদু হাসে। ফারাহ রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ হেসে তার হাতের সিগারেট এগিয়ে দিয়ে হেসে বলে,
“ট্রাই করে দেখ। ভালো লাগবে।”
ফারাহ প্রচণ্ড রেগে যায়। শুদ্ধর হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে সত্যি সত্যি ঠোঁটের মাঝের রাখে। শুদ্ধ দ্রুত টান মেরে নিয়ে রেগে বলে,
“ফারাহ তুমি থা’প্প’ড় খাবে?”
ফারাহ রেগে শুদ্ধর হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে শুদ্ধর ঠোঁটে সিগারেটের জ্বলন্ত অংশ চেপে ধরে। শুদ্ধ ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। তবে নড়লো না। কেমন অদ্ভুদভাবে ফারাহের দিকে চেয়ে থাকে। ফারাহ একটু পরই সিগারেট ফেলে দেয়। রেগে বলে,

“আমার সাথে লাগতে আসলে এভাবেই পোড়াবো।”
কথাটা বলে উল্টো ঘুরে যেতে নিলে শুদ্ধ ফারাহের হাত টেনে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“আমি পুড়তে রাজি, তবে ক্ষ’ত টাও তোমাকেই সারিয়ে দিতে হবে।”
ফারাহ হাত মোচড়ায়। রেগে বলে,
“হাত ছাড়ো আমার।”
শুদ্ধ শব্দ করে হেসে ফেলে। মিটমিট হেসে বলে,
“চলো বিয়ে করি। ফাইজের আগে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে মন্দ হবে না।”
ফারাহ রেগে বলে,
“তুমি একটা অ’স’ভ্য। হাত ছাড়বে আমার?”
শুদ্ধ অপর হাতে সিগারেটে টান দিয়ে বলে,
“ইচ্ছে করছে না। এভাবেই থাকো। একা ভালো লাগে না।”
ফারাহ উল্টো ঘুরে শুদ্ধর সামনে দাঁড়ায়। শুদ্ধ হাসছে। গাল ভর্তি ধোঁয়া আবারও ফারাহের মুখে ছেড়ে দেয়। ফারাহ আবারও কেশে ওঠে। অপর হাতে শুদ্ধর বুকে হাত দিয়ে ঠেলে সরাতে চায়। তবে পারলো না। ফারাহ রেগে বলে,
“দেখছ তো সিগারেট এর ধোঁয়ায় আমি কাশছি। তবুও এটা ফেলছ না কেন?”

শুদ্ধ ফারাহের চোখের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বলে,
“বিলিভ মি, যদি তোমার চোখের কোণে পানি না জমতো তবে আমি এটা অনেক আগেই ফেলতাম।”
ফারাহ কি বলবে বুঝল না। মানে তাকে কাঁদানোর জন্য ঠিক কি কি করে এই অ’স’ভ্য ছেলেটা। শুদ্ধ বলে ওঠে,
“জ্বলছে.”
ফারাহ কথার পিঠে প্রশ্ন করে,
“কি?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“ঠোঁট। এতো তেজ পাও কই? ইরফানও সেইম কাজ করেছিল। কি জ্বালা! তোমাদের দু’জনের আমার এই সুন্দর ঠোঁটজোড়ার দিকে নজর কেন বুঝলাম না।”
ফারাহ মুখ বাঁকিয়ে বলে,

“সুন্দর না, ছাই!”
শুদ্ধ হঠাৎ-ই তার মুখ ফারাহের মুখের কাছে নিয়ে যায়। ফারাহ ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। শুদ্ধ হেসে বলে,
“ভয় পাচ্ছো কেন? স্বামী তো আমি-ই হব ফারাহ বেইবি।”
ফারাহ মুখ কোঁচকালো। বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমার হাত ছাড়ো।”
শুদ্ধ হাতের সিগারেট টা ফেলে দেয়। ফারাহের হাত থেকে ফোনটা নিলে ফারাহ চেঁচিয়ে ওঠে,
“আমার ফোন নিচ্ছ কেন? দাও।”
শুদ্ধ শান্ত গলায় বলে,

“মিটমিট করে হাসছিলে কেন? এসব প্রেমের লক্ষণ। আমাকে চেক করতে দাও।”
ফারাহ শুদ্ধর থেকে ফোন কেড়ে নিতে চায়। শুদ্ধ ফারাহের ফোন তার পকেটে রেখে হেসে বলে,
“হাগ করতে চাইছো? বিয়ের আগে চাইছিলাম না। ওকে, তুমি যখন চাইছো, আমার কোনো প্রবলেম নেই।”
কথাটা বলে ফারাহের দিকে এগিয়ে গেলে ফারাহ চেঁচিয়ে শুদ্ধর বুকে দু’হাতে ঠেলে বলে,
“শুদ্ধ ভাই আমি কিন্তুু তোমাকে থা’প্প’ড় মারতে পারবো।”
শুদ্ধ হেসে গাল এগিয়ে দিয়ে বলে,

“প্লিজ, অনেকদিনের শখ আমার। দ্রুত কর।”
ফারাহ ঢোক গিলে বলে,
“আমার ফোন দাও।”
“আগে থা’প্প’ড় দাও।”
ফারাহ বিরক্ত হয়ে বলে,
“উফ!
“উফ টু!”
শুদ্ধ হেসে ফেলে। ফারাহের হাত ছেড়ে গাল টেনে মৃদু হেসে বলে,
“ভালোবাসি ফারাহ।”
ফারাহ মাথা নিচু করে নেয়। কিছু বলে না। শুদ্ধ হাসলো। পকেট থেকে ফারাহের ফোন বের করে বলে,
“পাসওয়ার্ড কি?”
ফারাহ চুপ করে আছে। শুদ্ধ ফারাহের নাম ট্রাই করল, হয়না। আরও কিছু ট্রাই করে না পেরে বলল,
“খুলছে না, বলো।”
ফারাহ মাথা তুলে বলে,

“ভালোবাসো বললে যে, ভালোবাসলে মন পড়তে পারা যায়। তুমি না পারলে কেমন ভালোবাসলে?”
ফারাহের কথায় শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ফারাহের দিকে। হঠাৎ-ই শব্দ করে হেসে বলে,
“আমি বলেছি, ভালোবাসি না ফারাহ। তোমার কানের ডক্টর দেখানো উচিৎ।
এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতে তোমায় কেন ভালোবাসতে যাবো?
এক চোখ টিপ দিয়ে বলে,
আমার রুচি কিন্তুু অনেক উঁচুমানের।”
ফারাহ রেগে যায়। উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলে শুদ্ধ ফারাহের হাত টেনে ধরে। পকেট থেকে তার ফোন বের করে গ্যালারি থেকে একটা পিক বের করে ফারাহের সামনে ধরে। ফারাহ অবাক হয়ে তাকায়। শুদ্ধ হেসে বলে,
“তারিখ টা দেখ। গত সপ্তাহের। সুন্দর না মেয়েটা? তোমার থেকে কিন্তুু সুন্দর।”
ফারাহের চোখের কোণে পানি জমে। মেয়েটা আর শুদ্ধ সামনাসামনি বসে আছে। দু’জন দু’জনের দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে। মেয়েটা সত্যিই সুন্দর ফারাহের থেকে। ফারাহ কিছুই বললো না। চোখ থেকে টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধ পিকটা ফারাহের হোয়াটসঅ্যাপ সেন্ড করে হেসে বলে,

“ইচ্ছে হলেই যাতে দেখতে পারো, তাই তোমাকে পাঠিয়ে দিলাম।
এরপর ফারাহের ফোন ফারাহের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“ঘুমাও। কালকে ভাইয়ের বিয়ে। আজ রাত জাগছো কেন? এমনিতেই অসুন্দর। আরও জ’ঘ’ণ্য লাগবে।”
ফারাহের চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। শুদ্ধ হেসে আফসোসের সুরে বলে,
“আমি তোমাকে কাঁদাচ্ছি, অথচ তুমি আমার আড়ালে কাঁদছো? এসব কি? আমি যেহেতু তোমাকে কাঁদালাম, তোমার কান্না দেখার অধিকার আমার ১০০%, অথচ তুমি সেই অধিকারের ১০% ও পূরণ করছ না। এসব ঘোর অন্যায়।”
ফারাহ মাথা তুলে ভেজা চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। তার ফোন কেড়ে নিয়ে রেগে বলে,
“তুমি আসলেই একটা ফালতু, জ’ঘ’ণ্য, অ’স’ভ্য লোক।”
শুদ্ধ হেসে মাথা নেড়ে বলে,

“যথাআজ্ঞা ফারাহ বেইবি।”
ফারাহ ধুপধাপ পা ফেলে পিছু ফিরে যেতে নিলে শুদ্ধ মাথা চুলকে বলে,
“ফারাহ আর দুই মিনিট আমার সামনে কাঁদা যায় না?”
ফারাহ রেগে তার হাতের ফোন শুদ্ধর দিকে ছুঁড়ে মারে। শুদ্ধ কেচ ধরে ফেলে। ফারাহ রেগে বলে,
“তোমাকে তো আমি দেখে নিব শুদ্ধর বাচ্চা।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“এমা ছিঃ! ছিঃ! আমাদের তো বা’স’র ই হয়নি ফারাহ বেইবি। বাচ্চা কোথা থেকে আসবে?”
ফারাহ রেগেমেগে ধুপধাপ পা ফেলে তার ঘরে চলে যায়। বিড়বিড় করে,
“দাঁড়া, কালকে বিয়েতে যাই। তারপর মজা বোঝাবো, এই ফারাহ কি জিনিস।”

শুদ্ধ হাসলো। ভালোই লাগে। সবাইকে জ্বালাতে অনেক আয়োজন তার। বিশেষ করে ফারাহকে জ্বালাতে তার অনেক ক’ষ্ট করতে হয়। এই যে এই পিকটাই কত কসরত করে উঠিয়েছে। মুগ্ধতা আসছিল না। পরে মনে মনে ভাবলো ফারাহকে কাঁদাতে তাকে এমন করতেই হবে। এরপর মনে মনে ভাবলো তার সামনে ফারাহ বসে আছে। সত্যি সত্যিই যেন ফারাহকে দেখতে পেল। তারপর এরকম একটা পিক উঠাতে সক্ষম হলো। আহা! সে সফল।
ফাইজের ফোন নিয়ে ইরফানের নাম্বারে মাইরার কল রেকর্ড সেন্ড করে। তখন ফাইজের হাত থেকে ফোন নিয়ে রেকর্ডার অন করেছিল। এতো বড় সুযোগ কি আর মিস করা যায়?

শুদ্ধ দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ইরফানদের বাড়িতে আসে। সাহেলের নাম্বারে অনেকবার কল করেছে পায়নি তাকে। শিহাব কল করেছিল, সাহেলকে সন্ধ্যার পর থেকে পাচ্ছে না। কাউকে কিছু না বলে কোথায় যাবে? যদিও বাড়ির সবাই ভেবেছে শিহাব, রাতুলের সাথেই আছে। ওদিকে সাহেল তো নেই। শুদ্ধ কিছু একটা আন্দাজ করেই দ্রুত ইরফানদের বাসায় আসে। ইরফানের ঘরের দরজা ঠেলে ভেতরে এসে ঘরের লাইট জ্বালায়। ইরফানের ঘুমন্ত চোখে আলো এসে পড়লে ইরফান বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে নেয়। শুদ্ধ এগিয়ে এসে ইরফানকে দেখে অবাক হলো। এর এই অবস্থা হলো কি করে?
ইরফানের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,

“এই ইরফান তোর হাত পায়ের এই অবস্থা কেন?”
ইরফান চোখ খুলে শুদ্ধকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমার ঘরে এসেছিস কেন?”
কথাটা বলে আশেপাশে চোখ বুলায়। মাইরাকে না দেখতে পেয়ে বিরক্ত হয়।
শুদ্ধ পাত্তা দিল না ইরফানের কথা। পাল্টা প্রশ্ন করল,
“তোর এই এই অবস্থা কেন? সাহেল কোথায়?”

ইরফান শোয়া থেকে উঠে বেডের উপর হেলান দিয়ে বসল। পায়ের প্যান্ট হাঁটুর নিচ পর্যন্ত উঠানো দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল পায়ের দিকে। কিছু একটা বুঝতে পেরে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। শুদ্ধ বিরক্ত হয়ে বলল,
“তোকে কিছু আস্ক করলাম আমি। সাহেল কোথায়?”
ইরফান নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,
“হসপিটাল।”
শুদ্ধ তো ইরফানকে এভাবে দেখেই যা অবাক হওয়ায়র হয়েছে। এখন আর নতুন করে কি অবাক হবে? অতঃপর চিন্তিত কণ্ঠে বলে,
“মারামারি করেছিস নাকি?”
তখনই শুদ্ধর ফোনে সাহেলের নাম্বার থেকে কল আসে। শুদ্ধ দ্রুত কল রিসিভ করে কথা বলে অপরিচিত এক লোকের সাথে। দু’টো হাত, পা পুড়ো গুঁড়ো করে দিয়েছে। আঙুলগুলোর অবস্থাও খা’রা’প। বডির অসংখ্য জায়গায় কেটে ফেটে তো গিয়েছেই।
শুদ্ধ সব শুনে কল রাখলো। কথা বলার ভাষা হারিয়েছে।
শুদ্ধ অবাক হয়ে বলে,
“তুই করেছিস এসব?”
ইরফান দু’হাত বুকে আড়াআড়িভাবে গুঁজে চোখ বুজে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,

“রাইড-এ গিয়েছে, এক্সি’ডেন্ট করেছে। দ্যটস ইট।”
“সাথে তো তুইও ছিলি।”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ও রাইডে ভীষণ কাঁচা। The ride was very boring.”
ইরফানের দিকে চেয়ে রেগে বলল,
“এসব কি ধরনের ফাজলামি? কেন করেছিস ওর সাথে এমন? নিজেরও তো বারোটা বাজিয়েছিস।”
ইরফান রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। রাগান্বিত স্বরে বলে,
“ফাজলামো আমি না, ও করেছে। যেটা ওর প্রাপ্য, ও সেটাই পেয়েছে।”
শুদ্ধ নিজেকে দমালো। একটু থেমে বলে,
“ও তোর ফুফাতো ভাই, এটা মাথায় রাখতে পারতি? তোর ফুপি, আমার খালামণির অবস্থা টা কি হবে একবার ভেবে দেখ।”
ইরফান বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
“এজন্য তো বাঁচিয়ে রেখেছি। আর কি এক্সপেক্ট করছিস?”
শুদ্ধ চেয়ার টেনে বসে বলে,
“কাল ইনায়ার বিয়ে। আজ কি ঘটিয়ে এসেছিস ভাবতে পারছিস?”

ইরফান বেড থেকে নেমে দাঁড়ালো। বেডের উপর ডান পা তুলে গুটানো প্যান্ট টেনে নিচে নামিয়ে বলে,
“ও আমার বার্ডফ্লাওয়ার কে টাচ করার জন্য পা বাড়িয়েছিল, ভেঙে দিয়েছি, হাত বাড়িয়েছিল ভেঙে দিয়েছি। চোখ তুলে তাকিয়েছিল, কথা ছিল চোখ উপড়ে ফেলার। উচিৎ ছিল কবরে পাঠানোর।
ফুপির কথা ভেবে লাস্ট চান্স দিয়েছি।”
এরপর শুদ্ধর দিকে চেয়ে দু’হাত প্যান্টের পকেটে রেখে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,
“বেশি দয়া দেখানো হয়ে গেলে লাস্ট চান্স টা ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। ডিস্টার্ব করিস না।”
শুদ্ধ অবাক হয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। কি বলবে বুঝল না। বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“অন্তরার কান্নায় বরফের একটা টুকরো পর্যন্ত গলল না, মাইরার চঞ্চলতায় বরফ গলে ফ্রিজও গলে যাচ্ছে। হাউ?”
ইরফান বিরক্ত হয়। শুদ্ধ আবারও বলে ওঠে,
“সাহেল অন্যরকম তা জানি। তাই বলে ওকে পঙ্গু করে দিবি?”
ইরফান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,

“আই থিংক পঙ্গু হবে না। বাট লাস্ট চান্স মিস করলে পার্মানেন্টলি পঙ্গু বানাবো, নো টেনশন।”
টেনশনে শুদ্ধর মাথা ফেটে যাচ্ছে। কালকে বিয়ে, আর এ একটা কাণ্ড ঘটিয়ে এসেছে। তবুও হাসি লাগলো। মাইরাকে নিয়ে কি পরিমাণ পজেসিভ হলে এমন করে? শুদ্ধর দুঃখ লাগলো সাহেলের জন্য। তবে আহামরি না। অন্যের বউয়ের দিকে নজর দেয়ার শাস্তি প্রাপ্য ছিল ওর। তবে এতোটা আশা করেনি। যাক, যার জিনিসের দিকে হাত বাড়িয়েছে তার যা ইচ্ছা করেছে,, কিন্তুু প্রবলেম টা হলো আগামীকাল ইনায়ার বিয়ে। তার আগের দিন এসব! মাইরার কাণ্ড মনে পড়ায় হঠাৎ-ই শব্দ করে হেসে দেয়। ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,

“হোয়াট?”
শুদ্ধ বসা থেকে দাঁড়িয়ে হাসি আটকে বলে,
“যার জন্য সাহেল এর এই অবস্থা করলি তার খোঁজখবর রাখিস না?”
ইরফান শুদ্ধর কথা বোঝার চেষ্টা করছে। শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলল,
“ফোন চেক কর। স্পেশাল ভয়েস আছে।”
ইরফান বেডের উপর থেকে তার ফোন নিয়ে চেক করলে দেখল শুদ্ধর নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটা ভয়েস ম্যাসেজ। ক্লিক করে মাইরা আর ফাইজের কল রেকর্ড চালু হয়।
……………………হ্যালো জান, তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না জান। তোমার কণ্ঠ না শুনলে আমি কানে কম শুনি জান। তুমি অন্যকাউকে বিয়ে করছ ভেবে আমি খেতে পারছি না। হ্যালো প্রাণ!………………………..
ইরফান মাইরার কণ্ঠে এসব শুনে কেশে ওঠে। শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,
“কেমন লাগলো? ফাইজ মাইরার জান, প্রাণ,, আহা কী মধুর ডাক! ফাইজকে ছাড়া ঘুম আসছেনা তোর বউয়ের, খেতেও….”
ইরফান রেগে বলে,
“সাট আপ।”
শুদ্ধ হেসে ফেলে।
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে,
“স্টুপিট বাঁদর। তোমার বাঁদরামি আমি ছুটাচ্ছি, ওয়েট।”

মাইরা, ইরফানের সব কাজিনেরা মাইরার ঘরে বসে গল্প করছিল, আর মাইরার ঘরে থাকা আইসক্রিম, চকলেট আরামে সব খাচ্ছিল। মাইরা ঘর থেকে বেরিয়েছে সবার জন্য ঘরে পানি নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তখনই ফাইজ ভেতরে ঢোকে। শুদ্ধ তাড়াহুড়ো করে ভেতরে এসেছে, দরজা আটকায়নি। ফাইজ খোলা পেয়ে সরাসরি ঢুকেছে,, তার মাথা আপাতত ঠিক নেই। আগে ইনায়ার সাথে কথা বলবে এরপর সব ঠিক হবে।
ডাইনিং-এ আলো না জ্বালানোয় মাইরা অন্ধকারে কারো ছায়া দেখে চিৎকার করে ওঠে,
“চোর, চোর। সবাই এসো। চোর এসেছে।”

এক মুহূর্তের জন্য ফাইজের পা থেমে যায়। বিয়ের আগের রাতে হবু শ্বশুর বাড়িতে এসেছে জানলে সবাই তাকে কি ভাববে? যে চোর চোর বলে চিল্লাচিল্লি করছে, ইচ্ছে করল তাকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। মাইরা ভয় পায়, তাই সামনে না এগিয়ে পিছু ফিরে ইরফানের কাজিনদের ডাকে।
তখনই ফাইজ সামনের দিকে দ্রুত পা চালায়। সামনে এক ঘরে ইনায়াকে দেখে একপ্রকার দৌড়ে ইনায়ার ঘরে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। ইনায়া ফাইজের পিছন থেকে দেখেই চিৎকার দিতে নেয়, তার আগেই ফাইজ উল্টো ঘুরে ইনায়ার মুখ চেপে ধরে। ইনায়া চোখ বড় বড় করে তাকায়। ফাইজ শান্ত চোখে ইনায়ার দিকে চেয়ে আছে।
মাইরার চিৎকার শুনে মাইরার ঘর থেকে সব কাজিন বেরিয়ে আসে। রাতুল, শিহাবও তাদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।
নিচ থেকে মাইরার কণ্ঠে চোর চোর ডাক শুনে শুদ্ধ দ্রুত পায়ে ইরফানের ঘর থেকে বের হয়। ইরফান নিজেও বের হয়।
শুদ্ধ সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলে,

“কি হয়েছে মাইরা?”
মাইরা হাঁপানো কণ্ঠে বলে,
“ভাইয়া বাড়িতে চোর ঢুকেছে। কোথায় যেন গিয়েছে।”
শুদ্ধ ডাইনিং এর লাইট জ্বালায়। সবাই আশেপাশে খোঁজে। কেউ নেই তো। ইরফান বিরক্ত। শক্ত চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। দ্রুত পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে রেগে বলে,
“আবার বাঁদরামি স্টার্ট করেছ? থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব।”
মাইরা অসহায় কণ্ঠে বলে,
“বিশ্বাস করুন, আমি সত্যি বলছি।”
ইরফান ধমকে বলে, “সাট আপ।”
এরপর শুদ্ধর উদ্দেশ্যে বলে,
“রহমত কাকাকে জিজ্ঞেস কর, কেউ এসেছে নাকি!”
শুদ্ধ হাসছে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে ফাইজ এসেছে। ও তো বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। ইনায়া ছাড়া আর কার কাছে আসবে? তাছাড়া এখানে ইনায়া ছাড়া সবাই আছে। ইরফানের কথায় মাথা নেড়ে গান গাইতে গাইতে বের হয়।

“আমার এ মন সারাটি ক্ষণ
তোমায় শুধু চায়,
দূরে দূরে থাকো তুমি
বোঝো না তো হায়!
জানো না তুমি
তোমায় কত ভালোবাসি
তোমারই টানে
শুধু ফিরে ফিরে আসি”
শুদ্ধ যেতে যেতে শব্দ করে বলে,
“গাইস এটা আমার দুই বন্ধুর মনের কথা। আমি বলে দিলাম।”
ইরফানের কাজিনরা সবাই চিল্লিয়ে বলে,
“তোমার গানের গলা তো সেই শুদ্ধ ভাই, আরও শুনিয়ে যাও।”
শুদ্ধ বাইরে থেকেই বলে,
“আরেকদিন। আজ বাই বাই।”
ইরফান মাইরার হাত টেনে তার ঘরের দিকে নিয়ে যেতে নিলে মাইরা ইরফান ইরফানের হাত টেনে বলে,
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”

ইরফান কোনো কথা না বলে মাইরাকে কোলে তুলে নেয়। ইরফানের কাজিনরা সবাই চিল্লিয়ে ওঠে,
“হাউ রোমান্টিক!”
ইরফান পাত্তা দিল না। মাইরা লজ্জায় চোখমুখ খিঁচিয়ে নেয়। ইরফান বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উঠে তার রুমে গিয়ে মাইরাকে নামিয়ে দিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। মাইরা ভাবছে সে না বলে বেরিয়ে গিয়েছে বলে এখন তাকে কিছু বলবে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“ফাইজ তোমার জান?”
মাইরা কথাটা শুনেই তড়াক করে ইরফানের দিকে তাকায়। চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ইরফান মাইরার দিকে এগিয়ে আসে। মাইরা পিছিয়ে যায়। ইরফান আবারও বলে,
“ফাইজ তোমার প্রাণ?”
মাইরা ঢোক গিলে পিছিয়ে যায়। হায় হায়, এসব তো সে ফোনে বলেছিল। ইরফান শক্ত গলায় বলে,
“টেল মি স্টুপিট।”
মাইরা কেঁপে ওঠে। পিছিয়ে যেতে যেতে আমতা আমতা করে বলে,
“ন ন না।”

ইরফান মাইরার দিকে এগোতে এগোতে ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করে,
“ফাইজ তোমার কি?”
মাইরা ঢোক গিলে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,
“ভ ভাইয়া।”
ইরফানের আবারও ঠাণ্ডা স্বর,
“ফাইজের সাথে কথা না বললে তোমার ঘুম হয় না?”
মাইরা পেছাতে পেছাতে ঠাস করে বেডের উপর পরে যায়। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে আবারও ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“নো প্রবলেম, আমি ঘুম পাড়িয়ে দিব।”
মাইরা পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। বেডের উপর পা তুলে উঠে বসে। ইরফান মাইরার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আবারও বলে,
“ফাইজের সাথে কথা না বলে তুমি খেতে পারছো না?”
মাইরার কান্না পায়। হায় আল্লাহ এই লোক সব জেনে গিয়েছে। মিনমিন করে বলে,

“আ আমি মজা করেছি। স্যরি!”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“বাট আমি তো তোমাকে খাওয়াবো।”
মাইরা কাঁদোকাঁদো মুখ করে তাকায়। হঠাৎ-ই বসা থেকে উঠে বেডের অপর পাশে লাফ দিতে চায়, তার আগেই ইরফান মাইরার পা টেনে ঠাস করে ফেলে তাকে টেনে আনে তার দিকে। মাইরা মিনমিন করে বলে,
“স্যরি স্যরি! আর করবো না। ছেড়ে দিন প্লিজ!”
ইরফান বা হাতে মাইরাকে টেনে মেঝেতে দাঁড় করায়। তার সাথে শক্তহাতে চেপে শীতল গলায় বলে,
“খেতে পারছো না। খাওয়াতে হবে তোমাকে।”
মাইরা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,

“পারছি পারছি।”
ইরফান মাইরার হাত দু’টো তার বা হাতের মুঠোয় নিয়ে পিছনে চেপে ধরে, ডান হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে মাইরার ঠোঁটদুটো শক্তহাতে স্পর্শ করে। মাইরা একটু ব্য’থা পেল বোধায়। চোখ নামিয়ে রেখেছে। ইরফান সামান্য ঠোঁট বাঁকিয়ে শীতল গলায় বলে,
“আমি তবুও খাওয়াবো।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৬

মাইরা চোখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে। ঢোক গিলে কিছু বলতে চায়। তার আগেই ইরফান মাইরার ঠোঁট দুটো আঁকড়ে ধরে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফান ডান হাতে মাইরার চোখ বন্ধ করে দেয়।
মাইরা শরীর ছেড়ে দেয়। ইরফান বা হাতে মাইরাকে শক্ত করে তার সাথে আগলে নেয়।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৮