প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ২
আদ্রিতা নিশি
রাত আটটা পনেরো। ঘড়ির কাঁটায় সময়টা একেবারে স্পষ্ট। কালো রঙের দুটো বিলাসবহুল গাড়ি এসে থামল দোতলা বিশিষ্ট বাসার সামনে। গাড়িগুলোর আকৃতি, গ্লাসের টিন্ট, আর আভিজাত্য দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, এগুলো সাধারণ গাড়ি নয়। কোনো ভিআইপি মানুষের আগমনেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে এই দৃশ্য। প্রথম গাড়ির দরজা খুলতেই নামল দুজন উচ্চতা ও গড়নগত দিক থেকে শক্তপোক্ত দেহরক্ষী। তাদের সতর্ক চোখ চারপাশে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করল। এর পরই দ্বিতীয় গাড়ির দরজা খুলে নামল সারহান এবং তার সাথে অরিত্রিকা। দুজনেই ক্লান্ত মনে হলেও চেহারায় চাপা গম্ভীর ভাব স্পষ্ট। মূলত, তারা দুজনেই দীর্ঘ সময় হাসপাতালে কাটিয়ে ফিরেছে এবং এই সফরের ক্লান্তি তাদের আচরণে ফুটে উঠছে। দেহরক্ষীরা বাসার সামনের দিকে অবস্থান নেয়।
অরিত্রিকার হাতে কনুইয়ের উপরিভাগ দিয়ে গুলি ছুঁয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই শরীর যেন ভেঙে পড়েছে। ডাক্তারের ড্রেসিং আর ব্যান্ডেজ আপাতত ক্ষতস্থানে চাপ কমালেও ভেতরের ব্যথা আর দুর্বলতা তাকে কাবু করে ফেলেছে। মেডিসিনগুলো নেয়া শুরু করলেও শরীর এখনও সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তবে সপ্তাহখানেক পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। কিন্তু র*ক্তক্ষরণের ফলে অরিত্রিকার শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। মাথাটা ক্রমাগত ঝিমঝিম করছে আর তার চারপাশের সবকিছু ধীরে ধীরে আবছা হয়ে আসছে।
“ শরীর খারাপ লাগছে? ”
সারহানের কন্ঠ অতি শান্ত। অরিত্রিকা নড়েচড়ে উঠল। অন্যত্র মুখ ঘুরিয়ে বলল;
“ আমার শরীর কেমন লাগছে আপনার না জানলেও চলবে। ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারহান গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার ভঙ্গিমায় ছিল শীতল কিন্তু ভীষণ প্রভাবশালী গাম্ভীর্য। বক্ষে দু’হাত গুঁজে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে রইল।তার চোখের চাহনি ভেদ করে দিতে চাইছিল অরিত্রিকার সমস্ত প্রতিরোধ। গম্ভীর কন্ঠে বলল;
“ এতো বড় একটা ইন্সিডেন্ট ঘটে গেল অথচ তোর ঘাড়ত্যাড়ামি কমল না। ”
অরিত্রিকা রাগে চোখ গরম করে সরাসরি সারহানের দিকে তাকাল। তার দৃষ্টিতে চরম বিরক্তি আর তীব্র ক্ষোভ। সারহান সেই দৃশ্য দেখে ঠোঁট বাঁকিয়ে ঠান্ডা বিদ্রুপাত্মক হাসি দিল।সেই হাসি অরিত্রিকার র*ক্তে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তার ধৈর্যের বাঁধ একেবারে ভেঙে গেল। গমগমে কণ্ঠে উচ্চস্বরে বলে উঠল,
“আপনি আসলেই একটা অসহ্যকর মানুষ, সারহান ভাই! সকালে একটা কালো বিড়ালের মুখ দেখে উঠেছিলাম তাই হয়ত আজকে আপনার মতো বদমেজাজি মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেল!”
তার কথার প্রতিটি শব্দ ঝাঁঝাল আগুনের মতো ছিটকে পড়ল। কিন্তু সারহান বিন্দুমাত্র বিচলিত হলো না। বরং তার ঠোঁটের কোণে সেই বাঁকা হাসিটা আরও চওড়া হয়ে উঠল। শান্ত গলায় বলল,
“কালো বিড়াল? আমার ধারণা তুই আয়নায় নিজেকেই দেখেছিলি, ফাইরুজ। কারণ যতটা বদমেজাজি তুই, সেটা ওই বিড়ালকেও হার মানাবে।”
সারহানের এই কথায় অরিত্রিকার মুখ রাগে লাল হয়ে উঠল। সে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু সারহানের ঠাণ্ডা চাহনি তাকে থামিয়ে দিল।
সারহানের আচমকা তীব্র প্রতিক্রিয়ায় অরিত্রিকার ব্যান্ডেজ করা বাহু ধরে শক্তভাবে গাড়ির সাথে চেপে ধরল। অরিত্রিকার মুখ থেকে চাপা আর্তনাদ বেরিয়ে এল। ভয় আর ব্যথার মিশ্রণে তার মুখ বিকৃত হয়ে গেল।তার মনে হলো এই মানুষটা কোনো দানব হয়ে গেছে। কেন যে সে সারহানকে রাগিয়ে দিল এখন নিজের বোকামিটাই বারবার মনে হচ্ছে। যতই সাহস করে কথা বলুক, ভেতরে ভেতরে সারহানের রাগের সামনে সে ভয় পায়। আজ হয়তো তার ধৈর্যের শেষ সীমা অতিক্রম হয়েছে।সারহান ভ্রু কুঁচকে রক্তাভ চোখে তাকিয়ে রইল অরিত্রিকার দিকে। তার মুখাবয়বে ফুটে উঠেছে ভয়ানক কঠোরতা। পুরুষালী অমসৃণ হাতের মুঠোবন্দী অরিত্রিকার মোলায়েম হাতের বাঁধন শক্ত হয়ে উঠল। অরিত্রিকা তীব্র ব্যথায় কেঁপে উঠল।সারহান ধীরে ধীরে অরিত্রিকার মুখের কাছে ঝুঁকে এসেছে। এই বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে অরিত্রিকা নিজেকে বাঁচাতে গাড়ির সাথে মিশে গেল। তার পুরো শরীর কাঁপছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।অরিত্রিকা আশেপাশে আতঙ্কিত ভঙ্গিতে চোখ বুলিয়ে দেখল। চারপাশে মানুষজন নিজেদের কাজে এতটাই ব্যস্ত যে কেউ তার দিকে একবারও তাকাচ্ছে না। দেহরক্ষী দুজন অন্যত্র চোখ ঘুরিয়ে আছে যেন তারা এই ঘটনাটি দেখেও দেখছে না।
অরিত্রিকা নিজেকে মুক্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা করছে কিন্তু সারহানের দৃঢ় মুঠো থেকে বেরোনো অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তার অতিরিক্ত টেনশন আর ভয়ে শীতের রাতেও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের উপস্থিতি। হাত ছাড়ানোর চেষ্টায় তার শক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে।
অরিত্রিকার চোখ ভরে উঠল অশ্রুতে। হেরে যাওয়া এক সৈনিকের মতো কণ্ঠে তীব্র কাতরতা মিশিয়ে বলল,
“আমায় ছেড়ে দিন, সারহান ভাই। আশেপাশের মানুষ কিংবা আব্বু আম্মু দেখলে তুলকালাম বেঁধে যাবে।”
সারহানের কোনো দোলাচল দেখা গেল না। তার কঠোর দৃষ্টির আড়ালে শীতল স্থিরতা বিদ্যমান। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সে অরিত্রিকার কপালে এলোমেলোভাবে পড়ে থাকা চুলগুলো ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিল।তার ঠোঁটে বিদ্রুপাত্মক বাঁকা হাসি খেলে গেল। গভীর নিমগ্ন কণ্ঠে বলল,
“বাঘিনী হঠাৎ বিড়াল হয়ে গেল, বাহ! তুই কেন বারবার আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস, বল তো? তুই জানিসই না, আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে আমি কী কী করতে পারি। সেটা তোর কল্পনারও বাইরে!”
অরিত্রিকার হৃদস্পন্দন মুহূর্তেই দ্বিগুণ বেড়ে গেল। তার গলা শুকিয়ে গেল। ভয়ে হাত-পা জমে গেছে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার ভয়কে গোপন করার সামর্থ্য ছিল না। চুপচাপ সে সারহানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে রইল।
“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন?”
“এতো সহজে কিভাবে ছাড়ি বল?আজ কাল বড্ড বেশী জ্বালাতন করছিস আমায় এর শাস্তি কি দেওয়া যায় তুই নিজে ডিসাইড কর। ”
“আমার হাতে ব্যথা লাগছে সারহান ভাই। দয়া করে হাত ছাড়ুন।”
“ যদি হাত না ছাড়ি কি করবি?”
“ আপনি নিষ্ঠুর সারহান ভাই। এই রাজনীতি আপনাকে হার্টলেস বানিয়ে দিয়েছে। আপনি পশুর মতো আচরণ করছেন। হাত ছাড়ুন নয়ত আমি চিৎকার করব। ”
“ আই নো আমি হার্টলেস। এই যে আকুতি মিনতি করছিস তবুও একটুও দয়া হচ্ছে না জানিস। কেন যেন তোর ভয়ার্ত চেহারা অন্যরকম প্রশান্তি দিচ্ছে। চিৎকার করতে চাইলে করতেই পারিস কিন্তু এতে তোর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। ”
সারহানের নির্লিপ্ত ভাবভঙ্গি দেখে অরিত্রিকার মন বিষিয়ে উঠল। অরিত্রিকা অশ্রুভেজা চোখে অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে রইল সারহানের গম্ভীর কঠোর মুখের দিকে। তার হৃদয় চাপা বেদনায় মোচড় দিয়ে উঠল। ভাবতেই অবাক লাগছিল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই মানুষটি কি সেই সারহান ভাই যাকে একসময় সে চিনত?
আজকের সারহান ভাই অন্য কেউ। তার চোখে আর কোনো কোমলতা নেই। তার কথায় আর কোনো উষ্ণতা নেই। যেন দুই বছর আগে কোনো এক ঘটনায় তার ভেতরের সমস্ত মানবিকতা চূর্ণ হয়ে গেছে।অরিত্রিকার মনে প্রশ্ন জাগল কেন এমন হলো?“এই দু’বছরে মানুষটা এতটা বদলে গেল? শুধু তার প্রতি ক্ষোভ আর ঘৃণা কি এই পরিবর্তনের মূল কারণ? নাকি এর পেছনে আরও কিছু লুকিয়ে আছে?”তার চোখে জল জমে উঠল, কিন্তু সে জেদ চেপে জল গড়িয়ে পড়তে দিল না। সারহানের বদলে যাওয়া সত্তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকার সাহস সঞ্চয় করল। কিন্তু তার মনের গভীরে একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে“সারহান ভাই, আপনি এমনটা কেন? এমন নিষ্ঠুর হতে পারলেন কীভাবে?”
অরিত্রিকা মলিন মুখে অস্ফুটস্বরে বলে উঠে;
“ দুইবছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য শাস্তি দিচ্ছেন সারহান ভাই?”
সারহান ধীরে ধীরে অরিত্রিকার হাত ছেড়ে দিল। তার দৃষ্টি তখনো অরিত্রিকার দিকে স্থির, তবে এবার সেটাতে বিদ্রুপ মেশানো।একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে সহালকা হেসে বলল,
“তুই বড্ড বোকা, ফাইরুজ। সবাই শুধু আমার নিকৃষ্ট সত্তাকে দেখলি, আর সেইটুকুতেই বিচার করে নিলি। অথচ আমার এই সত্তার আড়ালে থাকা মানুষটা কেমন তা জানার চেষ্টা কেউই করল না। কেউ না।”
অরিত্রিকা বিভ্রান্ত হয়ে তাকিয়ে রইল। এই কথাগুলোর গভীরতা তাকে ভাবিয়ে তুলল। সারহানের সেই রাগ আর কঠোরতার আড়ালে কি সত্যিই লুকিয়ে আছে এক নিঃসঙ্গ মানুষ যাকে কেউ বুঝতে চায়নি?অরিত্রিকা ব্যান্ডেজকৃত হাত অন্য হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। ব্যথায় চিনচিন করছে পুরো হাত। মেজাজ বিগড়ে গেলে ও এখন শান্ত সে। ভয়, আতংকে সে জর্জরিত। ব্যথা গিলে নিয়ে ভেজা নেত্রপল্লবে সারহান নামক মানুষটার দিকে তাকায়।সেই দৃঢ় শান্ত চাহনি শ্যাম মানবটির মাঝে কিছু একটা খুঁজতে তৎপর হয়ে উঠল। মানুষটা কি নিজেকে নতুন করে খোলসে আবৃত করেছে? হয়ত। তার দুই চোখ জুড়ে দ্বিধাদ্বন্দের দেয়াল।
“ পুরনো আমাকে খুঁজছিস? লাভ নেই বুঝলি। কারণ এই দুই বছরে পুরনো সারহান হারিয়ে গেছে।”
সারহান হেঁয়ালি করে বলল কথাটি। কিন্তু অরিত্রিকা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল;
“ শুধু আপনি নন সবাই বদলে গেছে।”
একটু থেমে শান্ত কন্ঠে বলল;
“ আমাদের বাসায় চলুন আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করে তারপর যাবেন। ”
“ যাকে ঘৃণা করিস তাকে বাড়িতে ডাকছিস?”
“আপনাকে আমি ঘৃণা করি না সারহান ভাই। ”
অরিত্রিকা নিজেকে সামলে নিল। আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে নিল।রাস্তার ওপাশ হতে মানুষজন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বিব্রতবোধ করল। দৃষ্টি ফিরিয়ে পা বাড়াল বাসার দিকে।
“ এক সপ্তাহ ভার্সিটি যাওয়া অফ। টাইম মতো মেডিসিন নিবি আর আগামীকাল বিকেলে ড্রেসিং করিয়ে নিবি। এগুলোর একটারও যদি নড়চড় হয় তাহলে তোর খবর আছে। ”
সারহানের শান্ত কন্ঠের হুমকিতে অরিত্রিকার চঞ্চল পা জোড়া থেমে যায়। তড়িৎ বেগে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় পেছনে। সারহান চশমা পড়ে গাড়িতে বসে পড়েছে। দুজন দেহরক্ষীর একজন দ্রুততার সহিত সামনের গাড়িতে বসে পড়ল অপর জন সারহানের গাড়ির সামনের সিটে বসল। সেই গাড়ির গ্লাস নামানো তাই অরিত্রিকার দৃষ্টি সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত কাঠখোট্টা শ্যাম মানবের ওপরে পড়ল। গাড়ি স্টার্ট দিল, গন্তব্য তাদের রাজশাহী উপশহরের দিকে। গাড়ি ছাড়ার কিছু সময় পর সারহান হঠাৎ বাহিরে তাকাল। সরাসরি চোখাচোখি হলো অরিত্রিকার সাথে। অরিত্রিকা তীক্ষ্ণ চাহনিতে কেঁপে উঠে অন্যত্র চোখ সরিয়ে নিলো।
সারহান চোখ ফিরিয়ে নেয়। পকেট থেকে ফোন বের করবে এমন সময় সামনে বসে থাকা একজন দেহরক্ষী বলে উঠল ;
“ স্যার আপনার চিরকুট। ”
সারহানের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল ;
“ কি লিখা আছে পড়ো।”
“স্যার আপনাকে কেউ বিয়ে করতে চায় রাজি আছেন নাকি জানতে চাইছে। যদি রাজি থাকেন ০১*** নম্বরে কল করতে বলেছে। ”
সারহান বিরক্ত হলো। মন মেজাজ বিগড়ে গেল তার। কে এই মেয়ে যে তাকে এমন করে ডিস্টার্ব করছে?
“রাজশাহী ১ আসনের নবনির্বাচিত এমপিকে হ*ত্যা চেষ্টা” এই হেডলাইনটি প্রতিটি নিউজ চ্যানেলের শীর্ষে উঠে এসেছে আর সন্ধ্যার পর থেকেই দেশের প্রতিটি প্রান্তে এটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক মহলে, সাধারণ মানুষের মধ্যে, সব জায়গাতেই এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। কলগুলো একে একে চৌধুরী বাড়িতে আসছে। আরশাদ সাহেব ক্লান্ত হয়ে উঠেছেন প্রতিটি কল রিসিভ করতে গিয়ে।
লিভিং রুমে বসে আছেন আরশাদ সাহেব, তার স্ত্রী তানিয়া বেগম এবং ছোট ছেলে সাদাত। তিনজনের মুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট। আবির কল করে জানিয়েছে যে সারহান পুরোপুরি ঠিক আছে। তবে বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে বিশেষ করে গার্ডসদের সংখ্যা।
সদর দরজা খুলে প্রবেশ করল সারহান। ভীষণ ক্লান্ত শরীর। লিভিং রুমে চোখ পড়তেই সচল হলো মস্তিষ্ক। ক্লান্ত ভাব আড়াল করে এগিয়ে গেল তিনজনের দিকে। তানিয়া বেগম মাথা উঁচিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখল সারহান দাঁড়িয়ে আছে। পরনের সাদা পাঞ্জাবিতে র*ক্ত দেখে আঁতকে উঠলেন। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে সারহানের দুহাত উদভ্রান্তের মতো দেখতে দেখতে বললেন ;
“ আব্বা কোথায় লেগেছে তোর। পাঞ্জাবিতে এতো রক্ত কেনো?”
সারহান মাকে জড়িয়ে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল ;
“ মা আমি একদম ঠিক আছি। ”
তানিয়া বেগম কন্দনরত কন্ঠে বলল ;
“ তোকে কতবার বলেছি এই রাজনীতিতে জড়াস না কিন্তু আমার বারণ করার সত্বেও সেটাই করলি। তোর যদি কিছু হয়ে যায় আব্বা আমরা কি নিয়ে বাঁচবো। ”
সারহান আশ্বস্ত করে বলল;
“ তোমাদের দোয়া আমার সাথে থাকছে কিছু হবে না। এবার কান্না বন্ধ করো।”
সারহান তানিয়া বেগমকে ছেড়ে দিল। সাদাত আর আরশাদ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলল ;
“ আমি একদম ঠিক আছি। টেনশনের কিছু হয়নি। ”
আরশাদ সাহেব বলল;
“ শুনলাম ভার্সিটির কোনো মেয়ে তোমাকে বাঁচিয়েছে। মেয়েটার নাকি গুলি লেগেছে। এখন কি অবস্থা? ”
“গুলি হাত ছুঁয়ে বেড়িয়ে গেছে। ক্ষত তেমন গুরুতর নয়। মেয়েটিকে ডক্টর দেখিয়ে নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিয়েছি বাসায়।”
তানিয়া বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললেন ;
“ মেয়েটি ছিল দেখে তুই আমার কাছে সহিসালামতে ফিরে এসেছিস। আব্বা মেয়েটিকে আগামীকাল দেখতে যাব। মেয়েটার বাসার ঠিকানা দিস। ”
সারহান পা বাড়াল রুমের দিকে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে প্রতিত্তোর করল ;
“ মেয়েটির নাম অরিত্রিকা ফাইরুজ চৌধুরী। তুমি বাবা আর সাদাত গিয়ে দেখে এসো। ”
প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ১
সারহান দরজা খুলে নিজ রুমে প্রবেশ করল।বিক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে দরজা আঁটকে পাঞ্জাবি বোতাম খুলতে শুরু করল। পকেট হতে ফোন বের করে ছুঁড়ে ফেললো বিছানায়। পাঞ্জাবি খুলে অবহেলায় ডিভানে ছুঁড়ে ফেললো। ধপ করে বসে পড়লো বিছানা। ক্রোধে জর্জরিত চোখ দুটো সাদা পাঞ্জাবিতে লেগে থাকা শুকিয়ে যাওয়া র*ক্তের দিকে। সারহান দুহাতে খামচে ধরলো চুল। মাথা নিচু করে বিরবির করে আওড়ালো ;
“ নয়ন তালুকদার কাজটা তুই ঠিক করলি না। ”