প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪০

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪০
Drm Shohag

শুদ্ধ দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে ফারাহ’র হাত ধরে টেনে আবারও ঘরের ভেতর আনে। এরপর দরজা আটকে দেয়। ফারাহ চেঁচিয়ে উঠতে চাইলে শুদ্ধ ফারাহ’র মুখ চেপে বলে,
“ফারাহ বাচ্চামি করবে না। কেউ আসলে কি হবে? চুপ করে থাকো।”
কথাটা বলে শুদ্ধ ফারাহ’র মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। ফারাহ শব্দ করে চেঁচামেচি করল না। কিন্তুু রেগে বলল,
“আমাকে নিয়ে আসলে কেন?”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কান্নার কারণ না বললে যেতে পারবে না। ফাস্ট বলো।”

ফারাহ মাথা নিচু করে থাকে। চোখ ভেজা। তার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। হঠাৎ-ই শুদ্ধর সামনে কিভাবে কাঁদলো, আবার নিজে থেকে জড়িয়েও ধরেছে, ভাবতেই তীব্র অস্বস্তিরা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল তাকে। শুদ্ধ রেগে বলে,
“ফারাহ? আমি আর কত বলব? কান্নার কারণ টা বলো আমাকে। নয়তো মার খাইয়ে কাঁদাবো এবার।”
ফারাহ ঢোক গিলে মাথা তুলে তাকায়। চোখের কোণে পানি। চাইছে না আর কাঁদতে। তবে মন তো শুনছে না। নাক টেনে বলে,
“তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাও শুদ্ধ ভাই?”
ফারাহ’র কথা শুনে শুদ্ধ কেমন করে যেন তাকায়। ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেয়,
“আমি অন্যকে বিয়ে করতে চাই না ফারাহ। প্লিজ কান্না কর না। এভাবে কেউ কাঁদে?”
ফারাহ’র চোখ থেকে অবাধ্য নিরব অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কান্নামাখা গলায় বলে,
“তোমার তো এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে। তুমি তবুও বলছো তুমি অন্যকে বিয়ে করবে না। তুমি সবসময় শুধু মিথ্যা বলো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুদ্ধ অবাক হয়ে তাকায় ফারাহের দিকে। কার সাথে তার এনগেজমেন্ট হয়েছে? বিস্ময় কণ্ঠে বলে,
“এসব উল্টাপাল্টা কথা তোমায় কে বলেছে ফারাহ?”
ফারাহ নাক টেনে বলে,
“ওই সামিয়াকেই তো তুমি বিয়ে করবে। ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেলেই করবে। আংটিও দিয়েছ সেই মেয়েকে।”
শুদ্ধ অবাক হয়। আংটি দিয়েছে? সামিয়া নামটা পরিচিত ঠেকল। একটু ভাবলেই মনে পড়ল তার মা এই নামটি বলেছিল তাকে, সেই মেয়েটাকে তার জন্য পছন্দ করছে। কিন্তুু সে তো নিষেধ করে দিয়েছিল তার মাকে। অথচ তার মা তাকে একটাবার কিছু না বলে সেই মেয়েকে আংটি পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে? এতো রাগ হলো, ফারাহ’র কথায় ভাবনার রেখে ফারাহ’র দিকে তাকালো।

ফারাহ ভেজা গলায় শুদ্ধর বুকে দু’হাতে ধাক্কা দিয়ে বলে,
আমি কিন্তুু তোমায় অন্যকাউকে বিয়ে করতে দিব না শুদ্ধ ভাই।
এরপর শুদ্ধর বুকে কপাল ঠেকিয়ে কান্নামাখা গলায় বলে,
ওই মেয়েকে কিন্তুু আমি ছাড়বো না বলে দিচ্ছি। তুমি অন্যকাউকে বিয়ে করলে আমি মরে যাব।”
শুদ্ধ ফারাহের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজেকে সামলে দু’হাতে ফারাহের মুখ উঁচু করে ধরে। এরপর গাল মুছে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“এসব ফালতু কথা একদম বলবে না। আমার ফারাহ তুমি। আমার বুক খাঁচার বন্দিনী পাখি আমার ফারাহ। আমার ফারাহ পাখি ছাড়া আর কেউ আমার বউ হবে না, বুঝেছ তুমি?”
ফারাহ শুদ্ধর হাত আবারও ঝাড়া দিয়ে রেগে বলে,

“তুমি সব মেয়েদের পিছে পড়ে থাকো। সবাইকে সুন্দর বলো। সবার সাথে হেসে কথা বলো। শুধু আমার সাথে কথা বলো না ঠিক করে। শুধু কাঁদাও আমায়। আমায় সুন্দর বলো না।”
শুদ্ধর এতো রাগ, চিন্তার মাঝেও ফারাহ’র বাচ্চামি দেখে হাসি পায়। যেন কোনো বাচ্চাকে একটা চকলেট কম দিয়ে অন্য বাচ্চাকে একটা চকলেট বেশি দেয়ায় গাল ফুলিয়েছে এমন।
শুদ্ধ নিজেকে না দমিয়ে হঠাৎ-ই শব্দ করে হেসে ফেলে।
ফারাহ ভেজা চোখেই রেগে তাকায় শুদ্ধর দিকে। বাইরে বেরোনোর উদ্দেশ্যে পা বাড়ালে শুদ্ধ পিছন থেকে ফারাহকে জড়িয়ে নেয়। ফারাহ কেঁপে ওঠে। শুদ্ধ ফারাহের ডান গালের সাথে তার বাম গাল লাগিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলে,
“সবাই শুধু সুন্দরী। আর আমার ফারাহ পাখি আগুন সুন্দরী।”
ফারাহ থম মেরে যায়। শুদ্ধ আবারও বলে,

“তুমি জানো, আমি কত অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য। দুনিয়া উল্টে গেলেও আমার ফারাহ পাখি ছাড়া আর কেউ আমার বউ হবে না।”
ফারাহ নাক টেনে বলে,
“তুমি তো তোমার আম্মুর বাধ্য ছেলে। তোমার আম্মু ওই মেয়েকে পছন্দ করেছে। তুমি একটু পর আমায় আর মানবে না।”
শুদ্ধর রাগ হলো। ফারাহের আঙুলের ভাঁজে তার দু’হাতের আঙুল গলিয়ে দিয়ে শক্ত কণ্ঠে বলে,
“আমি যখন কাঁদাবো, তখন একটু একটু কাঁদবে। আর কখনো এভাবে এতো বেশি কাঁদবে না। বলেছি তো, আমার আগুন সুন্দরী ফারাহ পাখি ছাড়া আর কেউ আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে না। মাকে ভালোবাসি। কিন্তুু বউ কে বাদ দিয়ে ভালোবাসি না। বুঝেছ?”
ফারাহ ঢোক গিলে বলে, “ছাড়ো আমায়।”

শুদ্ধ মৃদুস্বরে বলে,
“ইচ্ছে করছে না।”
ফারাহ নড়েচড়ে ওঠে রেগে বলে,
“ছাড়বে আমায়? দরদ দেখাবে একজনকে নিয়ে। বিয়ে করবে মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে। ছেলে ছাড়া কেউ আংটি পরায় মেয়েকে? আমি তো বাচ্চা না। তুমি সব জানতে।”
কথাগুলো বলতে বলতে গলা ভেঙে আসে।
শুদ্ধ বিরক্ত হলো। ফারাহ’র গালের সাথে তার গাল ঘষে। ফারাহ কেঁপে ওঠে। শুদ্ধ ফারাহকে ছেড়ে ফারাহ’র সামনে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে বলে,
“আচ্ছা তাহলে সামিয়াকেই বিয়ে করব। কবে করব ডেটটা ফিক্সড করে দাও।”
ফারাহ শুদ্ধর বুকে ধাক্কা দিয়ে রেগে বলে,
“তুমি একটা অ’স’ভ্য ছেলে। আবার আমাকে কাঁদাচ্ছ।”
শুদ্ধ মৃদু হেসে ফারাহের দু’হাত তার দু’হাতে আঁকড়ে ধরে, দু’হাত জমা করে হাতে উল্টোপিঠে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে,
“ভালোবাসি ফারাহ পাখি।”

ফারাহ মাথা নিচু নেয়। শুদ্ধ মাথা নিচু করে রাখা ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি জানতাম না ফারাহ। আমি গ্রামের ছেলে, আমার মা গ্রামের। গ্রামে শহরের মতো কালচার না। মা শহুরে মানুষদের মতো এতোকিছু ভাবেনি। আমাকেও বলেনি। তুমি একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে আমাকে?”
ফারাহ উত্তর করে না। শুদ্ধ নিজেই প্রশ্ন করে,
“আমার ভালোবাসা তুমি কি কখনো অনুভব করতে পারো না ফারাহ?”
ফারাহ মাথা নিচু করেই উত্তর দেয়,
“কিভাবে করব? তুমি আমাকে কখনো বলেছ নাকি বুঝিয়েছ?”
শুদ্ধ ভাবলো, আসলেই তো। সে কি কখনো বলেছে না-কি বুঝিয়েছে? উল্টে যখন থেকে বুঝেছে ফারাহ তার প্রতি উইক তখন থেকে শুধু অন্যদের নিয়ে জ্বালায়। ভারি অন্যায় হয়ে গিয়েছে এটা। মৃদুস্বরে বলে,
“তুমিও তো আমাকে বলোনি, বোঝাওনি,, তাহলে আমি কিভাবে বুঝলাম আমার ফারাহ পাখি আমায় অনেক বেশি ভালোবাসে?”

ফারাহ ঢোক গিলে বলে,
“আমি ভালোবাসি না কাউকে।”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“ভালোবাসা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয় ফারাহ পাখি, বুঝেছ?”
ফারাহ নাক টেনে বলে,
“আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।”
শুদ্ধ হেসে ফেলে। অতঃপর বলে,
“তবে এতো কাঁদলে কেন? এতো ইনসিকউর ফিল কেন কর?”
ফরাহ শুদ্ধর দিকে চেয়ে বলে,
“যখন আমি কোনো ছেলের কোলে উঠে বসে তোমায় বলব, আমি তো তোমায় ভালোবাসি, তুমি এখন অনুভব কর। তখন বুঝবে আমি কেন কেঁদেছি। হাত ছাড়ো আমার।”
মুহূর্তেই শুদ্ধর চোখেমুখে রাগ ভর করে। অতঃপর বলে,

“তুমি কার কোলে উঠবে?”
ফারাহ মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“তোমাকে কেন বলব? তুমি কাউকে সুন্দরী বলার আগে আমার কাছে শুনতে আসো? কাকে সুন্দরী বলবে?”
শুদ্ধ চোখ ছোট ছোট করে তাকায় ফারাহ’র দিকে। শক্ত কণ্ঠে বলে,
“ভুলেও আমাকে জ্বালানোর জন্য ছেলে ঘটিত ব্যাপারে নিজেকে জড়িয়ো না। জান নিয়ে নিব একদম।”
ফারাহ কেঁপে ওঠে শুদ্ধর কথায়। শুদ্ধ ছেড়ে দিল ফারাহ’র হাত। চোখ বুজে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে ফারাহের দিকে চেয়ে বলে,
“তুমি চাইলে এখানে ঘুমাতে পারো। কেউ আসবে না। তবে দরজা আটকে ঘুমাও।”
ফারাহ নাক টেনে বলে,

“আমি ঘুমাবো না।”
“তাহলে রেস্ট নাও। যা চোখের পানি ন’ষ্ট করলে, আমি অবশ্য ভাগ্যবান। এভাবেই কাঁদবে আমার জন্য। তোমার মুখ থেকে তো মধু বের হয় না, নোনতা জল টুকুই নাহয় বের করো। কি আর করার! পোড়া কপাল আমার!”
ফারাহ রেগে বলে,
“তুমি আবার আমাকে উল্টাপাল্টা বলছো?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“কি বলো? আমার শব্দগুলো উল্টেপাল্টে গিয়েছে? কিন্তুু আমার কাছে তো প্রতিটা বাক্য গোছানোই লাগলো। আমার মনে হয়, আমার শোকে তোমার মাথার ছিটে কোনো দু’ষ্ট জ্বি’ন বসে পড়েছে। ওরা বসে বসে পজেটিভ আর নেগেটিভ তারগুলোর সংযোগ উল্টেপাল্টে দিয়েছে, তাই আমার সুন্দর সুগঠিত বাক্যগুলোকে তোমার উল্টাপাল্টা লাগছে। তোমার দু’ষ্টু জ্বি’ন তাড়ানোর একটা উপায় আছে আমার কাছে, উপায়টা হলো…
ফারাহ রেগে বলে,

“শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ হেসে বলে,
“আসলেই তোমার মাথার তার এলোমেলো হয়ে গিয়েছে ফারাহ, সিওর আমি। দেখ, যার বিয়ের খবর পেয়ে নাকের পানি চোখের পানি এক করলে, এখন তাকেই ভাই ভাই ডেকে চরম মূর্খতার পরিচয় দিচ্ছো।”
ফারাহ ভ্রু কুঁচকে শুদ্ধর দিকে চেয়ে বলে,
“তুমি যাবে?”
শুদ্ধ মন খা’রা’পের ভান করে বলে,
“জ্বি’ন তাড়ানোর উপায় শুনবেনা?”
“না শুনবো না। তুমি যাও।”
“ওকে, যেহেতু শুনবেনা, তাহলে বাস্তবায়ন করিয়ে দেখাচ্ছি।”

কথাটা বলেই শুদ্ধ হঠাৎ-ই কয়েক পা এগিয়ে এসে ফারাহকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ফারাহ বুঝতেই পারেনি। অনুভূতির তীব্র শক খায় মেয়েটা। শুদ্ধ মৃদুস্বরে বলে,
“স্যরি, বিয়ের আগে এভাবে জড়িয়ে ধরায়। তুমি সত্যি আগুন সুন্দরীর চেয়েও সুন্দর ফারাহ পাখি।”
ফারাহ ঢোক গিলে। শরীর শিরশির করে। শুদ্ধ ছেড়ে দেয় ফারাহকে। ফারাহ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“ফারাহ, আই রিকুয়েষ্ট ইউ, বিয়ের আগে এতো সেজে কখনো আসবে না আমার সামনে বুঝেছ? অ্যান্ড স্যরি!”
এরপর শুদ্ধ দ্রুত পায়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,
“দরজা আটকাও।”

মাইরা বেডের এক কোণায় বসে খাবার খাচ্ছে। তার একদম সামনে ইরফান বসে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে মাইরার পানে। মাইরা দু’পা ভাঁজ করে কোলের উপর প্লেট নিয়ে খাবার খায়, একটু পর পর মাথা তুলে ইরফানের দিকে তাকায়। এভাবে তাকিয়ে থাকলে খাওয়া যায়? তবুও খাচ্ছে মেয়েটা। খোলা চুলগুলো সামনের দিকে হেলে এসেছে। ইরফান আরেকটু মাইরার দিকে চেপে বসে, দু’হাতে মাইরার চুলগুলো পিছন দিকে দিয়ে দেয়। মাইরা মাথা তুলে পিটপিট করে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার চুলগুলো বারকয়েক পেঁচায়, যাতে বারবার সামনে না আসে। এরপর মাইরার দিকে তাকালে দেখল মাইরা কেমন করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরফান মৃদুস্বরে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা মুখের খাবার শেষ করে আবদার করে,

“আমি ইনায়া আপুর কাছে যেতে চাই। আপনার সব কথা শুনবো, যেতে দিন না!”
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। দু’চোখে কত আশা নিয়ে ইরফানের পানে চেয়ে আছে! ইরফান মাইরার বাম গালে হাত দিয়ে নরম গলায় বলে,
“ওকে ফাইন। নিয়ে যাব। সব খাবার শেষ কর। ফাস্ট।”
মাইরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। হেসে বলে,
“সত্যি যেতে দিবেন?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাইরার দিকে। ঠোঁট বাঁকায় সূক্ষ্ম। অতঃপর বলে,
“স্টুপিট। খাবার ফিনিশ কর। আদারওয়াইস, এগেইন ডোর লক করে চলে যাব।”
মাইরা দ্রুত খাবারে মনোযোগ দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই খাবার শেষ করে ইরফানের পায়ের উপর প্লেটটা রেখে বলে,
“শেষ।”

ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমাকে দিচ্ছ কেন?”
মাইরা জিহ্বায় কা’ম’ড় দিয়ে প্লেট টা আবার নিয়ে বেডসাইড টেবিলে রাখে। এরপর ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে একটা দৌড় দেয়। ইরফান বিরক্ত হয়। বিড়বিড় করে, ‘স্টুপিট বাঁদর।’
মাইরা ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে ফটাফট পানি খেয়ে নেয়। এরপর বেডের দিকে খেয়াল করলে দেখল সে যে লেহেঙ্গা পরে ছিল সেই লেহেঙ্গা। মাইরা অবাক হয়ে তাকায়। এই লেহেঙ্গা তো মাত্র ওয়াশরুমে ভেজা দেখে আসলো। এখন বেডের উপর শুকিয়ে গেল কিভাবে? ইরফানের দিকে তাকালে দেখল ফোনে কারও সাথে কথা বলছে। গায়ে শার্ট নেই। দেখেই শরীর কেমন শিউরে উঠল। ডান হাত উঠিয়ে গলায় হাত বুলায়। কিছুক্ষণ আগে এই লোক কতগুলো যে চুমু খেয়েছে গলায়, ভাবতেই কেমন হাসফাস লাগলো। চোখ নামিয়ে নিল। নিজেকে সামলে ইরফানের পিছনে দাঁড়িয়ে বলে,

“শুনুন?”
ইরফান মাইরার ডাকে পিছু ফিরে মাইরার দিকে তাকায়। এরপর ওপাশের ব্যক্তিকে বলে, ‘হোল্ড।’
মাইরার উদ্দেশ্যে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা মিনমিন করে বলে,
“ওই লেহেঙ্গা তো ভিজে গিয়েছে। আবার শুকিয়ে গেল কিভাবে?”
ইরফান বেডের উপর রাখা লেহেঙ্গার দিকে তাকায়। আবারও মাইরার দিকে চেয়ে বলে, “গাধা। এটা সেইম ডিজাইনের আরেকটি লেহেঙ্গা। ফাস্ট পরে নাও। গো।”
মাইরা অবাক হয়ে বলে, “এটা কোথায় পেলেন?”
মাইরা বোকা বোকা প্রশ্নে ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কুড়িয়ে পেয়েছি, স্টুপিট।”

মাইরা বোকা চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। মুখ বাঁকিয়ে উল্টো ঘুরে বেডের কাছে যায়। সে ভেবেছিল নরমাল একটা জামা পরেই তাকে যেতে হবে। খুশি হলো ভীষণ, আরেকটি এমন জামা পেয়ে। কিন্তুু পরবে কোথায়? ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনি যান।”
ইরফান কথা না বাড়িয়ে বেলকনিতে চলে গেল। মাইরা ফটাফট লেহেঙ্গা টা পরে নেয়। ইরফান গায়ে শার্ট জড়িয়ে দরজা খুললে একটি মেয়ে ভেতরে আসে। জিজ্ঞেস করে, “কতক্ষণ টাইম লাগবে?”
মেয়েটি আন্দাজ করে সময় বলে দিলে ইরফান চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরা বোকা চোখে চেয়ে দেখল ইরফানের প্রস্থান। মেয়েটা তো তাদের বাসায় ভাড়া করে আনা সেই আর্টিস্টদের মাঝের একজন। মাইরা বুঝল ইরফান এই মেয়েকে তাকে সাজানোর জন্য ডেকেছে। মেয়েটার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
মাইরাকে মেয়েটি প্রায় ৩০ মিনিট এর মতো সময়ে পুরোপুরি রেডি করিয়ে দিল। এর মাঝেই ইরফান ঘরে প্রবেশ করে। মাইরা ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, ইরফানকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। ইরফান শান্ত চোখে মাইরার পানে চেয়ে আছে। মেকাপ আর্টিস্ট মেয়েটি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইরফান এগিয়ে গিয়ে ডোর লক করে দেয়। এরপর মাইরার সামনে দাঁড়িয়ে মাইরার ঠোঁটজোড়ায় আঙুল চালিয়ে বলে,

“আবার এটা লাগিয়েছ?”
মাইরা মিনমিন করে বলে,
“লিপস্টিক না লাগালে ভালো লাগবে না তো।”
ইরফান মাইরার আড়ালে সূক্ষ্ম হাসে। মাইরার দিকে এগিয়ে গেলে মাইরা দ্রুত তার দু’হাতে ইরফানের ঠোঁট চেপে মিনমিন করে বলে,
“আবার কি করবেন?”
ইরফান চোখ বুজে ভারি শ্বাস ফেলে। মাইরার হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
“কিছু করবো না। ইউ নো, আই ডোন্ট লাইক ইউ স্টুপিট লিটল গার্ল।”
কথাটা বলে মাইরার ঠোঁটজোড়ায় শব্দ করে একটা শুকনো চুমু আঁকে।
মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়। ইরফান আর কিছু করল না। মাইরার ডান হাত তার বা হাতের মুঠোয় নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরার ইচ্ছে করল এই লেকটার মাথার চুলগুলো কামিয়ে টাক বানিয়ে দিতে। বলবে কেন, তাকে পছন্দ করে না। এটা শুনলেই মাইরার এত্তো রাগ হয়! কিন্তুু তাকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছে তাই এসব বাদ দিল।
ইরফান ইনায়ার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

“বাইরে বের হবে না।”
মাইরা মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়। ইরফানের ফোনে আবারও কল আসলে সে মাইরার হাত ছেড়ে বলে,
“গো।”
মাইরা ছাড়া পেয়ে দ্রুত ইনায়ার ঘরের ভেতর চলে যায়। ইরফান তার কাজে যায়।
মাইরার ইনায়ার ঘরে খুশিমনে ঢুকলেও ইনায়ার পাশে একজনকে দেখে হাসি মিলিয়ে যায়।
ইনায়া মাইরাকে দেখে বলে,
“মাইরা এতোক্ষণ কই ছিলে? দেখ কে এসেছে।”
মাইরা জোরপূর্বক হেসে মাথা নাড়ায়। চোখের কোণে পানি। ইনায়ার উদ্দেশ্যে বলল,
“আপু আমি আসছি, একটু দাঁড়াও।”
কথাটা বলেই দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। পাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠ পায়,
“কেমন আছিস মা?”
মাইরা নিজেকে সামলে নিল। ঘাড় বাঁকিয়ে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে,

“আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি সৎ মা। তুমি কেমন আছো?”
মাইরার মা মাইরার সম্মোধনে অবাক হয়। কখনো তো এভাবে ডাকেনি মাইরা তাকে। তার কোলে চার বছরের একটা বাচ্চা। বাচ্চা ছেলেটি মাইরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“আপুই কুলে নাউ, কুলে নাউ।”
মাইরা হেসে তার ছোট ভাইটাকে কোলে নেয়। শক্ত করে তার সাথে জড়িয়ে ধরে। গালে অসংখ্য চুমু খেয়ে বলে,
“আমার ভাইয়া কেমন আছে?”
বাচ্চা ছেলে লাবিব বোনের গলায় জড়িয়ে ধরে আদো আদো স্বরে বলে,
“বালু আতি আপুই। টুমি?”
মাইরা লাবিবের গালে দু’টো চুমু খেয়ে হেসে লাবিবের মতো করেই বলে,
“আমিও বালু আতি বাইয়া।”
লাবিব খিলখিল করে হেসে ওঠে। মাইরা তার মায়ের দিকে চেয়ে বলে,
“বললে না যে কেমন আছো।”
ভদ্রমহিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“তুই কি আমার উপর রাগ করেছিস মা? তুই তো জানিস লাবিবের বাবা কেমন। আমি চাইলেও তোর খোঁজ নিতে পারিনা। এখানেও…”
মাইরা তার মায়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,
“এসব বাদ দাও। লাবিব আমার কাছেই থাকুক। যাওয়ার আগে ওকে আমার থেকে নিয়ে যেও।
একটু থেমে বলে, “লাবিবের আব্বা আসছে?”
মাইরার মা ছোট করে বলে,
“হুম। তুই সত্যিই ভালো আছিস তো মা?”
মাইরা উল্টো ঘুরে যেতে যেতে বলে,
“ভালো থাকার জন্যই তো পরের মেয়েকে তাড়িয়ে দিয়েছ। ভালো না থেকে উপায় কি!”

মাইরার মা ছলছল চোখে চেয়ে রইল। ইরফানের ফুপি এসে মাইরার মায়ের সাথে টুকটাক কথা বললে তিনি নিজেকে সামলে ইরফানের ফুপির সাথে কথা বলায় সামিল হয়।
মাইরা লাবিব কে নিয়ে ইরফানের ঘরে গেল। দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে বেডের উপর বসে লাবিবকে কোলে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল। দু’হাতে লাবিবের গাল ধরে ছোট ছোট অসংখ্য চুমু দেয়। লাবিব পিটপিট করে তার বোনকে দেখে। একপর্যায়ে বলে,
“আপুই টুমি কাঁদো কিনু?”
মাইরা লাবিবের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলো। তার এই ছোট ভাইটাকে কতদিন পর দেখল। মায়ের উপর রাগ করে ওই বাড়িতে আর যায়নি। সে লাবিবকে দেখতে যেতে চাইতো। কিন্তুু তার মা আর লাবিব এর বাবার কথা ভাবলে নিজেকে দমিয়ে রাখতো। একটু পর নিজেকে সামলে লাবিবকে জিজ্ঞেস করে,
“আপুইকে মিস করেছিলি ভাইয়া?”

লাবিব মাইরার বুকে মাথা ঠেকিয়ে মন খা’রা’প করে বলে,
“আপুই টুমি চল। টুমাকে আমি মিত কুরি। আমাকি আর কেউ চলকেট দেয় না।”
মাইরা লাবিবের গালে আবারও চুমু খেয়ে বলে,
“আপুই আজ অনেকগুলো চলকেট দিব তোকে।”
লাবিব খুশি হয়। মাইরা তার ছোট্ট ভাইটাকে কোলের মধ্যে গুটিশুটি মেরে বসিয়ে রাখে। যদিও এর সাথে তার রক্তের সম্পর্ক নেই। সম্পর্কে সৎ ভাই। তবে এই ভাইটাই কেবল তাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে। সেও বাসে।
ইরফান একটা কাজে তার ঘরে এসেছে। মাইরার কোলে একটা বাচ্চা ছেলেকে দেখে অবাক হয়ে তাকায়। এগিয়ে এসে কিছু না বলেই মাইরার কোল থেকে বাচ্চাটাকে দু’হাতে নিয়ে বেডের উপর বসিয়ে দেয়। মাইরা চেঁচিয়ে ওঠে,
“আরে কি করছেন?”
ইরফান রেগে বলে,

“স্টুপিট, তোমাকে ইনায়ার ঘরে রেখে এসেছি। আর তুমি ছেলেদের কোলে তুলে বসে আছো?”
মাইরা অদ্ভুদচোখে ইরফানের দিলে তাকায়। এই লোকের সবকিছুতেই প্রবলেম। সে তার ভাইকে কোলে নিবে, এই লোকের কি? অ’স’হ্য একটা। লাবিব পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এরপর হামাগুড়ি দিয়ে মাইরার দিকে এগোলে ইরফান লাবিবের দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে,
“স্টপ।”
লাবিব কেঁপে ওঠে। ইরফানের ওমন শক্ত মুখে ধমক খেয়ে লাবিব কেঁদে দেয়। মাইরা দ্রুত লাবিবকে কোলে নিয়ে ইরফানকে কিছু বলার আগেই ইরফান রেগে বলে,
“ওকে আবার কোলে নিয়েছ? নামাও বলছি।”
মাইরা তীব্র বিরক্তিতে চেঁচিয়ে বলে,

“আপনার প্রবলেম কি? অ’স’হ্য লোক একটা। আমি আপনার জন্য এখন আমার ভাইটাকে কোলে নিতে পারবো না?”
ইরফান আবারও কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। লাবিব ছেলেটার দিকে তাকালে দেখল ছেলেটা ভীত চোখে তার দিকে চেয়ে আছে। ভাই কথাটা শুনে বোধয় শান্ত হলো। অতঃপর ইরফান শান্ত স্বরে বলে,
“ওহ! ওকে।”
কথাটা বলে তার ড্রয়ারে কিছু খোঁজে। মাইরা মুখ বাঁকায়। তার ভাইটাকেও কাঁদাতে ছাড়লো না। খ’বি’শ লোক। লাবিবের গাল মুছে দিয়ে গালে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“এটা তোর খ’বি’শ দুলাভাই, বুঝলি?”
লাবিব পিটপিট করে তার বোনের দিকে চেয়ে মাইরার মতো করেই ফিসফিসিয়ে বলে,
“খুছিব ডুলাবাই।”
মাইরা শব্দ করে হেসে দেয় লাবিবের কথা শুনে। লাবিবও মাইরার গলা জড়িয়ে হেসে ফেলে।

দিনের আলো ফুরিয়ে প্রকৃতিতে রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। বিয়ে বাড়ির সকলের হৈ-হুল্লোড়ে নেওয়াজ বাড়ি ভরপুর। পুরো বাড়িতে বিভিন্ন কালারের আলো জ্বলছে-নিভছে।
ফাইজের বিয়ে পড়ানো মাত্র শেষ হলো। শুদ্ধ অসহায় চোখে চেয়ে ফাইজের কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আমি আমার বোনকে দিয়ে দিলাম। এবার তোর বোনকে আমাকে দেবার পালা।”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,
“সারাদিন বিয়ে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিস না?”
শুদ্ধ আকাশ থেকে পড়ার ভান করে বলে,
“ও মা গো, কবুল বলে মুখের বুলি ফুটেছে। তাও যে সে বুলি নয়, এক্কেবারে ভূতের মুখে রাম রাম বুলি। বলছি তুমি আমার বোনকে বিয়ে করার জন্য কি কি করেছ সব ভুলে গিয়েছ? বেয়া’দব শা’লা।”
ফাইজ বিরক্ত হয়ে বলে,

“এখন আমি তোর আর ইরফানের বোন জামাই। সম্মান দিয়ে কথা বলবি।”
শুদ্ধ পাত্তা দিল না।
মাইরা লাবিবকে কোলে নিয়ে স্টেজ এর পাশে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করতে এসেছে সে। আড়াল থেকে দেখল সবাই সবার মতো কথা বলতে, আড্ডা দিতে ব্যস্ত। মাইরা লাবিবকে কোল থেকে নামিয়ে লাবিবের কানে কানে কিছু একটা শিখিয়ে দেয়। লাবিব বোনের কথা মেনে গুটিগুটি পায়ে স্টেজ-এ যায়। বাচ্চা ছেলে। সেভাবে কেউ খেয়াল করল না। লাবিব স্টেজের নিচ থেকে ঝটপট দু’হাতে দু’টো জুতো নিয়ে মাইরার কাছে দৌড়ে আসে।
মাইরা লাবিবকে জড়িয়ে ধরে গালে টপাটপ তিনটে চুমু খেয়ে বলে,
“আমার সোনা ভাইয়া।”
লাবিব হাতে জু’তো ফেলে মাইরার গালেও গুণে গুনে তিনটে চুমু খেয়ে বলে,
“আমার শুনা আপুই।”

মাইরা ফাইজের জুতো দু’টো স্টেজের পিছনের খুব ভালো করে লুকিয়ে রাখলো। কেউ পাবে না এইবার এই জুতো। এরপর লাবিবকে কোলে নিয়ে তার আগের ঘরে যায়। সেখান থেকে বেশ অনেকগুলো চিপস আর চকলেট নিয়ে নেয়, এরপর ইনায়ার ঘরে গিয়ে ইনায়ার পাশে লাবিব কে বসিয়ে লাবিব এর সামনে চিপস চকলেট দেয়। লাবিব খুশি হয়। তার আপুই আগে নিয়মিত চকলেট দিত। এখন দেয় না, আদরও করে না। করবে কি করে! থাকেই তো না। বাচ্চাটি চকলেট রেখে মাইরার দিকে তাকায়। মাইরা হেসে ইনায়াকে দেখিয়ে বলে,
“এইটা তোর আরেকটা আপুই। এখানে বসে এগুলো খাবি। আমি একটা কাজে যাই আচ্ছা ভাইয়া?”
লাবিব ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়। মাইরা লাবিবের গালে হাত দিয়ে বলে,
“কি হয়েছে ভাইয়া? চকলেট কম হয়েছে? আরও দিব তো।”
লাবিব মাইরার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

“টুমি আমার সাতে চলো আপুই। আমাকে কেউ চলকেট দেয় না। তুমু দেয় না।”
মাইরা লাবিব এর পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। ঘরের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইনায়া অবাক হয়ে বলে,
“তোমার ভাই তো তোমায় খুব মিস করে মাইরা।”
মাইরা ঝাপসা চোখেই হেসে ফেলে। লাবিবকে ছাড়িয়ে চুমু খেয়ে বলে,
“এখন থেকে চলকেট দিব, তুমুও দিব। কাঁদলে কিছুই দিব না।”
লাবিব তার ছোট ছোট হাতে চোখ মুছে নেয়। ইনোসেন্ট মুখ করে বলে,
“কাঁদবু না আর।”
বলে চকলেট খাওয়ায় মন দেয়। মাইরা লাবিব এর চকলেট থেকে একটা কা’ম’ড় দিলে লাবিব চেঁচিয়ে বলে,
“টুমি খাও কিনু আমার চলকেট?”
মাইরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
“তুমু দিব না কিন্তুু।”
লাবিব আর কিছু বলল না। তার আপুই এর চুমু লাগবে তার। চকলেট এর সাথে সেক্রিফাইস করাই যাবে।
মাইরা আর কিছু না বলে ইনায়ার সব কাজিনদের নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

“কেমন আছো বাবা?”
ইরফান মাইরার মাকে সেভাবে চেনে না। তবে বিয়ের দিন একবার এই মহিলাকে দেখেছিল। এটা যে মাইরার মা সেটা সে জানে না। মাইরার কেউ একজন হবে, এই ভেবেই উত্তর দেয়, “জ্বি ভালো।”
মাইরার মা মৃদু হেসে বলে,
“মাইরা তোমার চেয়ে অনেক ছোট। ও একটু চঞ্চল। বেশি কথা বলে। মানিয়ে নিও বাবা কেমন?
ইরফান জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছে না।
মাইরার মা আবারও বলে,
তুমি মনে হয় কথা কম বলো। কিন্তুু মাইরা তো খুব গোপারু। একটু আধটু দুষ্টুমিও করে। তবে ওর মন কিন্তুু খুব ভালো। বুঝেছ?”
ইরফান চুপচাপ শুনলো ভদ্রমহিলার কথা।
মাইরার মা এবার ইরফানের গালে হাত দিয়ে বলে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৩৯

“আমার মেয়েটাকে দেখে রেখ বাবা।”
ইরফান এবার বুঝল এটা মাইরার মা। কিন্তুু যে কথাটা বলছে সে অ্যান্সার দিতে খুবই বিব্রতবোধ করছে। সাথে গালে হাত দেয়ায় একটু অস্বস্তি হলো। এসব ব্যবহারে সে অভ্যস্ত নয়।

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪০ (২)