ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫১ (২)
মিথুবুড়ি
‘দুটি কোমল হাত পিছন থেকে এসে আলতোভাবে শরীর স্পর্শ করল। শক্ত ঢোক গিলল রিচার্ড। গলার গভীরে একদলা শুষ্কতা জমেছে। তার বুকের ভেতর তীব্র স্পন্দন অথচ বাইরের অবয়বে নিস্তব্ধতার মুখোশ। নিজেকে সামলিয়ে বুকের উপর রাখা হাতের দিকে হাত বাড়াতেই মুহূর্তের মধ্যে কোমল সেই হাত তার পকেট থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে সরে গেল। রিচার্ড নিজেও বিদ্যুতের মতো ঘুরে গিয়ে আরেকটি বন্দুক তুলে নিল হাতে। দু’জনেই মুখোমুখি, দু’জনের অস্ত্র পরস্পরের দিকে তাক করা।
‘এলিজাবেথের মুখ রক্তিম, দুঃখ আর ঘৃণায় কম্পমান। কণ্ঠ বাষ্পরুদ্ধ। তবু তীক্ষ্ণ শীতলতায় কাঁপতে কাঁপতে আওড়ালো,
“আপনি কি ভেবেছেন এসব কথায় আমি সব ভুলে যাব? ভুলে যাবো যে আমার সন্তান খুন হয়েছে? ভুলে যাবো যে আপনার অতীত আমার সব ছিনিয়ে নিয়েছে? আমি ঘৃণা করি সেই অতীতকে যে আমার বুকের ধন কেড়ে নিয়েছে!”
‘রিচার্ড বন্দুকের ট্রিগারে শক্ত করে চেপে ধরল। গুরুগম্ভীর কণ্ঠ বলল,”আমিও ঘৃণা করি।”
‘কান্না গুলো গলায় দলা পাকাচ্ছে। এলিজাবেথ ভারি নিঃশ্বাস ফেলে শক্ত গলায় বলল,”কেন সেদিন আসেননি?”
‘রিচার্ড নত দৃষ্টি নিবিষ্ট করে অনুশোচনা মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“অতিরিক্ত নেশা হয়ে গিয়েছিল তা,,,,
“আপনি খুনি। খুন করেছেন আমার সন্তানকে।”
“বাবারা কখনো সন্তানের খুনি হতে পারে না।”
‘এটুকু বলে রিচার্ড থমকে দাঁড়াল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল গভীরভাবে। হঠাৎ কণ্ঠে বেজে উঠল এক কঠোর নিষ্ঠুরতা,
“ও হয়তো আমাদের ছিল না। তাই আমাদের কাছে নেই।”
‘এলিজাবেথ গর্জে উঠল। চোখ দু’টোতে জ্বলজ্বল করছে অশ্রু আর ক্ষোভ,”ছিল! ও ছিল!”নিজের হাত তলপেটে রেখে ফিসফিস করল,”এখানেই ছিল। আপনার অতীত ওকে গিলে খেয়েছে।”শেষের কথাটা চেঁচিয়ে বলল।
‘রিচার্ডের ঠৌঁট টেনে উঠল তিক্ত হাসিতে,
“আমার না এলিজাবেথ। আমার অভিশপ্ত অতীত। যার কোনো ঠাঁই নেই আমার জীবনে।”
‘কান্নায় আটকে আসা গলায় এলিজাবেথ শুধালো,
“আমার সাথেই কেন বারবার এমন হয়?”
‘রিচার্ড ধীরে চোখ তুলল,”একই প্রশ্ন যদি আমি করি? আমার শৈশব কেন নষ্ট হল? কেন আমি ডাক্তার হতে চেয়েও পারলাম না, কেন খুনি হলাম?”
‘আকষ্মিকভাবে এলিজাবেথের কণ্ঠে দাবানলের মতো যন্ত্রণার ঝলক,”আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন।”
“হারিয়ে যাওয়া জিনিস যদি ফেরানো যেত তাহলে আমি সবার আগে আমার শৈশবের সেই সুখগুলো ফিরিয়ে আনতাম। যেখানে আমাকেও ঘিরে ছিল এক নিখুঁত পরিবার।”
“আমি তো দিয়েছিলাম সুযোগ। চেয়েছিলাম আপনাকে একটা পরিবার দিতে। তাহলে কি সেটাই আমার সবথেকে বড় ভুল ছিল?”
‘এক মুহুর্তের জন্য থামল এলিজাবেথ। এক ঝটকায় চোখে জ্বলে উঠল প্রতিশোধস্পহার দাবানল।
“তবে চিন্তা কোরো না। এবার নিশানা ভুল হবে না।”
‘রিচার্ড তাচ্ছিল্যের সুর ধরে হাসল মৃদু শব্দে, “জান চাই তোর, বউ? যা কুরবান। শালার জীবন কবেই বা সুখ দিয়েছিল! ফা’ক… ফা’ক… ফা’ক…” মটমট করছে তীক্ষ্ণ চোয়াল।
“আমার হাত কিন্তু একটুও কাঁপবে না রিচার্ড কায়নাত।”
‘অথচ এলিজাবেথের হাত কাঁপছে থরথর করে। ট্রিগার থেকে আঙুল সরে যাচ্ছে বার বার। রিচার্ড ফিচলে হাসল। হাতের বন্দুক নামিয়ে আনল। তারপর শার্টের বোতাম খুলে বুকের বাঁ পাশ উন্মুক্ত করল। এলিজাবেথের চোখে চোখ রেখে বক্ষপিঞ্জরের দিকে ইশারা করে শক্ত গলায় বলল,
“শুট মি রাইট দেয়ার।”
‘এলিজাবেথ স্তব্ধ। রিচার্ডের চোখে ভয় নেই। তবে আজ সেই চিরচেনা অগ্নিসংযোগও নিভে গেছে। শুধু আছে কিছু অনুচ্চারিত কষ্ট যা এলিজাবেথ বুঝতে পারে না। ওর ঠোঁট অনবরত কেঁপে উঠছে। এই নৈঃশব্দের ভার সহ্য করতে পারছে না।
“আপনি তো চান আমি খুনি হই, তাই না?”
‘রিচার্ড নিঃশব্দে ওর দিকে তাকায়। চোখে এক অদ্ভুত প্রশ্নের ঝলক তৈরি করল।
“ইতালিতে সেদিন ইচ্ছে করেই আমার বালিশের নিচে ছুরি রেখে এসেছিলেন তাই না? চেয়েছিলেন আমি নিজেকে বাঁচাতে খুন করি। আমার হাত দিয়ে রক্ত ঝরুক।”
‘রিচার্ড ধীর হাসে,”প্রশ্নের মধ্যে উত্তর রেখে কেন প্রশ্ন করছ, বোকা হরিণী আমার?”
“একদম আমাকে এসব নামে ডাকবেন না!” এলিজাবেথ আরো দৃঢ় কণ্ঠে বলে, “সত্যি করে বলুন, আমার হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার পিছনে আপনার কী উদ্দেশ্য? আপনি তো উদ্দেশ্য ছাড়া কিছুই করেন না।”
‘রিচার্ড সামান্য ঝুঁকে আসে। কণ্ঠ খাদযুক্ত হয়ে ওঠে,
“উদ্দেশ্য কিছুই না। শুধু চাই তুমি আত্মরক্ষা শিখো। রক্ষা আমিই করব।”
‘এলিজাবেথের দেহ থরথর করে কাঁপে। রিচার্ডের দৃষ্টি আজ অন্যরকম—গভীর, একগুঁয়ে, দুর্বোধ্য। বুকের ভেতর শীতল একটা শিহরণ বয়ে যায় ওর।
“খুব ভয় হয় এলি জান। আমি না থাকলে কে রক্ষা করবে তোকে? দুনিয়া যে খুব নিষ্ঠুর। আমার যত ভয়, সবই তোকে নিয়ে।”
‘পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে গেল এলিজাবেথ।
“আমার মম কোথায়?”
“আমি জানি না।”
“একদম মিথ্যা বলবেন না! আমি জানি আপনি জানেন। সত্যি করে বলুন আমার মম কোথায়?”
‘রিচার্ড নীরব। চোখে অদ্ভুত এক শূন্যতা, ঠোঁটে কোনো স্বান্ত্বনার ভাষা নেই।
“আমি কিন্তু গুলি চালিয়ে দেব!”এলিজাবেথ শক্ত করে ট্রিগার চেপে ধরে। রিচার্ড হাসে—একটা বাঁকা, গভীর হাসি।
“খুনির রক্ত বইছে তোর শরীরে। তুই পারবি। এটা অবাস্তব কিছুই না।”
‘পায়ের নিচের জমিন যেন কেঁপে ওঠে। এলিজাবেথ তেড়ে গিয়ে চেপে ধরে রিচার্ডের গলার কলার।ওর কণ্ঠে বিস্ফোরণ,”কি বললেন আপনি? খুনির রক্ত? কী বোঝাতে চাইছেন?”
‘রিচার্ড দু’হাতে ওর হাত চেপে ধরে। এলিজাবেথের নিঃশ্বাস ছটফট করছে শরীরের অসহনীয় উত্তেজনায়।
“কি হলো? কথা বলছেন না কেন?”
“তোমার ড্যাড কে তার পাপ তাকে গিলে খেয়েছে।”
‘এলিজাবেথের হাত ঢিলে হয়ে আসে। শরীর যেন ভেঙে পড়ে। পিছু হটতেই রিচার্ড ওর পিঠে হাত দিয়ে আগলে নেয়।
“আমার ড্যাডি… পাপী ছিলেন?”
‘রিচার্ড আচমকা ওকে ছেড়ে দেয়। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটে রাখে। মূহুর্তেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে ধোঁয়া ছড়িয়ে দেয় নীরব বদ্ধ ঘরে। তার নিরবতা বলছে খুব ভয়ংকর কিছু লুকাচ্ছে সে।
“আমার ড্যাড খারাপ ছিল?”
‘রিচার্ড এবারও নীরব। এলিজাবেথ সেখানেই স্থির হয়ে রইল।দৃষ্টি ঘোলাটে, নিঃশব্দে অশ্রু ঝরছে। ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখের পানি মুছে নিল সে। ঠোঁট কাঁপছে তবু কান্না দমিয়ে রেখে বলল,
“আমি মমের সাথে দেখা করতে চাই।”
‘রিচার্ড পিছন ফিরল।গভীর কণ্ঠে বলল, “পারবে, খুব শীঘ্রই পারবে। তবে তার আগে আমার কথা শুনতে হবে।”
“কি কথা?”
“একটু পর আমাদের বিয়ে হচ্ছে।”
‘এলিজাবেথের চোখ বিস্ফোরিত হলো,”দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ে করতে চাইছেন? আপনার মতো ধর্ষক আর খুনির কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশাও করিনি। রেপিস্ট একটা!”
‘চিবিয়ে চিবিয়ে শব্দগুলো ছুঁড়ে দিল সে, সাথে এক দলা থুতু মেঝেতে আছড়ে পড়ল। রিচার্ডের ইচ্ছে হল বলতে—আমার ছোঁয়ায় বিষ থাকলেও পাপ ছিল না, এক দেখাতেই তোকে মনে জায়গা দিয়েছিলাম, আমার শূন্য ঘরটা পূর্ণ করতে চেয়েছিলাম তোর অস্তিত্ব দিয়ে। কিন্তু তুই তো বোকা হরিণী। বোকারা কি বোঝে এই লুকোচুরির ভালোবাসা?
সে শান্ত গলায় বলল,
“যা-ই বল, আজ বিয়ে হচ্ছে। আর তাছাড়া তোমার কাছে আর কোনো অপশন নেই। আমার সাহায্য ছাড়া মিস এলিসা কখনই পাবে না তুমি৷”
‘এলিজাবেথ চোখে আগুন জ্বালিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল,”আপনি এমন একটা পাপ, যা কখনো জন্মানোর কথা ছিল না।”
“তো অভিশাপ দাও” রিচার্ড ম্লান হাসল, “দিতে দিতে শেষ করে দে। মুক্ত করে দাও আমাকে এই টানাপোড়েন থেকে।”
‘এলিজাবেথ দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ভারী, তীব্র এক শ্বাস।
“অভিশাপ দিতে হয় না…
কখনো কখনো কারও জন্য নিঃশ্বাসটুকুও বোঝা হয়ে ওঠে।”
‘রিচার্ড কোনো জবাব দিল না। দরজার পাশের ছোট টেবিল থেকে একটুকরো টুকটুকে লাল শাড়ি তুলে নিল, সাথে আরেকটি ব্যাগ। এলিজাবেথ ঠুকরে উঠল। সে আজও বন্দী, ঠিক আগের মতোই। এতদিন সে জানত সে এতিম। কিন্তু যখন জানতে পারল তার মা বেঁচে আছে, তখনই হৃদয়ের এক কোণে আশার আলো জ্বলে উঠল। যেভাবেই হোক, তাকে তার মাকে খুঁজে পেতেই হবে। কারণ মা-ই একমাত্র পথ, যে পথ ধরে পৌঁছে যাবে তার ড্যাডের সত্যের কাছে।যে সত্য এতদিন অন্ধকারে ঢাকা ছিল। চাপা কষ্টে রিচার্ডের দেওয়া শেষ সম্বলটা—গলার চেইন একটানে ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলল মেঝেতে। রিচার্ড তপ্ত শ্বাস ফেলল৷ ধীর পায়ে এগিয়ে এল তার দিকে। টাওয়ালের দিকে তার হাত বাড়তেই এলিজাবেথ সরে গেল।
“কি করছেন?”
‘রিচার্ড থামল না, একটানে গায়ের শেষ সম্বলটুকু খুলে নিল।
“আমার বউকে আমি নিজ হাতে সাজাবো।”
‘এলিজাবেথের শরীর শক্ত হয়ে এল অথচ বাঁধা দেওয়ার শক্তিটুকুও অবশিষ্ট রইল না। তার ভেতর ঝড় উঠেছে, মাথায় হাজারো প্রশ্নের আঘাত। রিচার্ড সুকৌশলে উন্মুক্ত শরীরে শাড়ি পরিয়ে দিতে লাগল। লাল টুকটুকে হাফ সিল্কের একটা শাড়ি, যার সবুজ পাড়জুড়ে ছোট ছোট স্টোন বসানো আর এমব্রয়ডারির কাজ। রিচার্ড কাঁধে আচল জড়িয়ে দিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসল নিচে কুচি ঠিক করে দিতে। এলিজাবেথ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে। হঠাৎই নিস্তেজ স্বরে বলল,
“ভাববেন না ছেড়ে দিচ্ছি। সুযোগ বুঝে সবকিছুর প্রতিশোধ নেব। সন্তান খুনের প্রতিশোধ থেকে শুরু করে সব কিছুর। স্বামী বলে আপনাকেও ছাড়ব না।”
‘রিচার্ড এক পলক মাথা তুলে তাকাল তার দিকে, তারপর নির্বিকার ভঙ্গিতে নিজের কাজে মন দিল।
“চিন্তা করো না। সকল প্রতিশোধ তুমি নিজেই নেবে।”
‘এলিজাবেথ চোখ কুঁচকে তাকাল। “আপনি কি আমাকে আপনার কোনো নৃশংস খেলার গুটি বানাচ্ছেন?”
‘রিচার্ডের সেদিনের এবারও বলতে ইচ্ছে হল—”তুমি খেলার গুটি নও, তুমি তার ভালোবাসা। বাইশ বছর পর তার জীবনে এসেছে শুদ্ধ প্রেম।” কিন্তু কিছুই বলল না। ভালোবাসা প্রকাশ করলেই কি তা সত্যি হয়? তার বাবাও তো ভালোবেসেছিল, জানপ্রাণ উজাড় করে দিয়েছিল, তবু দিনশেষে লজ্জিত হয়েছিল ভালোবাসা নামক শব্দটার কাছে। ভালোবাসা গোপনেই সুন্দর। ডাকঢোল পিটিয়ে ভালোবাসা হয় না।
‘কুচি ঠিক করে সে উঠে দাঁড়াল। তারপর নিচ থেকে সেই চেইনটা তুলে নিয়ে এগিয়ে এলিজাবেথের গলায় পরিয়ে দিল আবারও। এলিজাবেথ চোখ ভরা কান্নায় চাইল রিচার্ডের দিকে। রিচার্ড বুড়ো আঙুল দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে মৃদু হাসল।
“বিশ্বাস কর এলি জান, তুই আমার জন্য, আমি তোর জন্য বানানো।”
‘প্রত্যুত্তর এল না কোনো। রিচার্ড এলিজাবেথকে কোলে তুলে নিয়ে কাঠের টেবিলের ওপর বসিয়ে আবার নিজে মেঝেতে বসল। শাড়ির পাড়টা তুলে নিল ধীর হাতে ব্যাগ থেকে বের করল একটা ছোট্ট আলতার শিশি। নিখুঁত যত্নে, ধৈর্যের সাথে আলতা পরিয়ে দিল পায়ে। সাথে পরিয়ে দিল এক জোড়া পায়েল। সবশেষে গাঢ় করে চুমু খেল সেই রাঙানো পায়ে। শিউরে উঠল অভ্যন্তরীণ আড়ষ্ট মেয়েটি।রিচার্ড ধীরগতিতে উঠে দাঁড়াল৷ এলিজাবেথের চুলগুলো ছেড়ে দিল খোলা বাতাসে। এরপর ব্যাগ থেকে বের করল সোনালী পাড়ের লাল দুপাট্টা। আলতো করে জড়িয়ে দিল তার মাথায়। যত্ন নিয়ে, মনের স্বাদ অনুযায়ী সাজিয়ে নিল নিজের বউকে। তার বউ সুন্দর—এর বেশি কিছু দরকার নেই।
‘সে মন ভরে কিছুক্ষণ দেখল তার বউকে। হিংস্র চোখ দুটোতেই আজ কি নিদারুণ কোমলতা। হঠাৎ রিচার্ড দু’হাতে আজলায় চেপে ধরল ভেজা গাল। শব্দহীন এক চুম্বন রাখল কপালে। এক মুহূর্ত থেমে, নিজের কপাল চেপে ধরল এলিজাবেথের কপালের সাথে। এলিজাবেথ নিশ্চুপ, নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে।
“আমি খুবই স্বার্থপর রেড। আমার বুকের পাঁজরের ভেতর হৃদয় বলতে কিছু নেই। আমি চাই, কাঁদলে তুমি শুধু আমার কাছে কাঁদো, মরলেও আমার কাছেই মরো।যেন তোমার কাফনের কাপড় কেনার অধিকারও শুধু আমার থাকে।”
‘এতে যেন এলিজাবেথের কান্নার তোড় আরও বেড়ে গেল। কেন জানি এই মেয়েটার কান্না শক্ত হৃদয়ের গভীরে ধাক্কা দিচ্ছে। মেজাজ হারাতে থাকল রিচার্ড, ক্রোধ গ্রাস করল তার নীল চোখের সাদা অংশ। থমকে যাওয়া মস্তিষ্ক ফিরে গেল সেই চিরাচরিত পৈশাচিক আত্মায়। এক ঝটকায় চোয়াল চেপে ধরল এলিজাবেথের। আগুন ঝরল কথায়, চোখে জ্বলল প্রতিহিংসার অগ্নি।
“কাঁদবি না, একদম কাঁদবি না। বলছি না আমি সবকিছু ঠিক করে দিবো? বাপের খুনিকে ধরতে চাস? তোর পায়ের নিচে এনে ফেলবো। মাকে চাই,এনে দিবো। তোর চোখে পানি আসার সমস্ত কারণ আমি উপড়ে ফেলব! তুই কাঁদলে কাঁদবি শুধু আমার জন্য—আমার দেওয়া ভালোবাসার যন্ত্রণায় কাঁদবি, আমার সন্তান প্রসবের যন্ত্রণায় কাঁদবি, আর আমি মরে গেলে! এই তিনটা কারণ ছাড়া তুই আর কাঁদতে পারবি না!
‘সংযম হারাল এলিজাবেথ। এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিল নিজের চোয়াল। অনিয়ন্ত্রিত ক্রোধে একটানে ছিঁড়ে ফেলল রিচার্ডের শার্ট। অঝোরে আঘাত করতে লাগল তার বুকের ওপর। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকল। রিচার্ড শান্ত, বুক পেতে দিল মেয়েটাকে। হঠাৎ নরম হাতের থাবা পড়ল তার চোয়ালে।
“আপনি আমার সঙ্গে অনেক অন্যায় করেছেন। অনেক কষ্ট দিয়েছেন আমাকে। আপনাকে আমি মন থেকে কখনোই মাফ করতে পারব না।”
‘এক গালে চড় দেওয়ার পর, রিচার্ড ঘাড় ঘুরিয়ে অপর গালটা পেতে দিল। হতভম্ব হয়ে গেল এলিজাবেথ। কিন্তু থামল না। একটার পর একটা চড় বসাতে থাকল গালে। শেষে ক্লান্ত হয়ে মাথা গুঁজে দিল রিচার্ডের বুকে, আহাজারি করতে লাগল। রিচার্ড শক্ত করে চেপে ধরল ওর মাথা বুকের সাথে। মেয়েটা একটু শান্ত হতেই কোমরে চাপ প্রয়োগ করে শূন্যে তুলে জানালার কাছে নিয়ে গেল সে। শেষ বিকেল। দিনের আলো স্নান হয়ে এসেছে।
‘এটা নতুন ম্যানশন। এলিজাবেথ যখন এখানে এসেছিল, তখন সে ছিল অচেতন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পেল প্রাচীরের শেষ প্রান্তে বিশাল এক পুকুর। কিছুদিন আগেই তৈরি করা হয়েছে বোঝা যায়। পুরো পুকুরজুড়ে ফুটে আছে পুরুষ পদ্ম। ঘাটটাও সুন্দরভাবে গড়া। আশেপাশে কেউ নেই, যেন পৃথিবীর সব সম্পর্ক ছিন্ন করে তৈরি করা হয়েছে এই জায়গাটা নিঃসঙ্গ এক শান্তির আস্তানা। ভেজা চোখেও একরকম মুগ্ধতা কাজ করল তার ভেতর। বিস্মিত হয়ে তাকাল রিচার্ডের দিকে। রিচার্ড আগেই তাকিয়ে ছিল তার দিকে।
“মন খারাপের সব বোঝাপড়া করবে সেখানে৷ কান্না পেলে করবে ওখানে বসে, গালি দিতে ইচ্ছে হলে সেটাও দেবে। তবুও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা ভুলে যাও, ওয়াইফি।”
‘অতঃপর মেয়েটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিচার্ড কোলে তুলে নিল। রাগ, কষ্ট, বিস্ময়ের মিশেলে এলিজাবেথ আটকে গিয়েছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। স্টোর রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে এলেই চোখে পড়ল ম্যানশনের সাজ। এটা নতুন ম্যানশন। ম্যানশনটি গুমোট হলেও আলোতে আবৃত ছিল৷ দেখতে অবিকল ইতালির রাজকীয় ম্যানশনের মতো হলেও কিন্তু তেমন ভয়ংকর নয়। গুমোট পরিবেশের সাথে রাজকীয় সৌখিনতা মিশে আছে। এলিজাবেথ চোখে সবকিছু গিলছিল। সিঁড়ি থেকে নামতেই ন্যাসো মুখোমুখি হল রিচার্ডের। তার কোলে ইবরাত, লাল টুকটুকে শাড়ি পরা। দুই বোনের চোখাচোখি হতে দু’জনেই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিল স্বামীর বুকে। রিচার্ড অপ্রস্তত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ন্যাসো চোখ ছোট করে তাকিয়ে রিচার্ডের ছেঁড়া শার্টের দিকে।
রিচার্ড গলা খাসকি দিয়ে তড়িঘড়ি করে এলিজাবেথকে লিভিং এরিয়ায় কাজির পাশে সোফায় বসিয়ে উপরে চলে গেল। লুকাস কাজির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। রিচার্ডকে এভাবে ছুটে যেতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসল। তারা দুজনেই সুস্থভাবে ফিরে এসেছে।
‘লজ্জায় লাল হয়ে আছে ইবরাতের মুখ, সেই সঙ্গে অদ্ভুত এক সুখ অনুভূত হচ্ছে। এই মানুষটাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছে সে, যেটা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তাদের বিয়েটি হয়েছিল কোনও পূর্ব বার্তা ছাড়াই, হঠাৎ করেই। ন্যাসো যখন সবকিছু রিচার্ডের কাছে সবকিছু জানায়, রিচার্ড দেশে ফিরে দ্রুত তাদের জন্য সব ব্যবস্থা করে। গার্ডটা হঠাৎ করে ইবরাত কে মসজিদে নিয়ে গিয়েছিল।পরনের কাপড় পরেই ইবরাতকে কবুল বলতে হয়েছিল। প্রতিটা মেয়েরই শখ থাকে বউ সাজার, আর তেমনি ইবরাতেরও ছিল। তবে নানা ঝামেলার কারণে সেই লাল টুকটুকে বউ সাজা আর হয়নি। মনের ইচ্ছা ছিল কিন্তু কে জানত সেই ইচ্ছা এমন হঠাৎ পূর্ণ হবে? রিচার্ড আগেই ইবরাতকে ম্যানশনে আনিয়ে রেখেছিল বিয়ের প্রস্তুতির জন্য। তবে সে কি জানত, বোনের বিয়ের প্রস্তুতির দায়িত্ব নিতে গিয়ে তাকেও নতুন করে বিয়ের পীড়িতে বসতে হবে তা আবার বউ সেজে। হঠাৎ করেই ন্যাসো লাল বেনারসি নিয়ে হাজির হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সে নিজের হাতে সাজিয়েছে তার বউকে। ছোট্ট মনে এতো খুশি কীভাবে ধরে রাখা যায়? এই খুশি ইবরাতের গানের তালে তালে ভাগ করে দিতে ইচ্ছে হল, সুরে সুরে,
“ধুরু ধুরু বুক, কাঁপে কেন আজ?
ভয়ে লাজে মরি।
জাদুরে কাঠি, ছুঁইয়ে দিল যেন এক পরি।
নিজেরই কাছে, নিজেই আজ তাই,
অচেনা যে আমি।
যেন বদলে গেলাম আমি এক পলকে।”
‘ন্যাসো ইবরাতকে পাশের সোফায় বসিয়ে নিজেও জামাই সেজে বসে পড়ল। তার পরনে সাদা শার্ট, চোখেমুখে কোনও লজ্জার ছায়া নেই। থাকবেই বা কেন? এটা তো তার প্রথম বিয়ে নয়—লজ্জা তো প্রথম বিয়েতেই থাকে। দ্বিতীয় বিয়ে মানেই সবার সামনে সুযোগ বুঝে বউকে লুফে নেওয়া। তবে দুই বোনই বেশ লজ্জিত। কেউ কারোর দিকে তাকাতে পারছে না। হঠাৎ এলিজাবেথ অনুভব করল কেউ তার শাড়ি ধরে টানছে। পিছনে ফিরে সে দেখে মায়া তার শাড়ি ধরে টানছে। এলিজাবেথ চোখ কুঁচকে চমকে গেল, জ্বলজ্বল করে উঠল।ছোবল মেরে মায়াকে কোলে তুলে নিল। মায়া এখন বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। মায়াকে কোলে তুলে নিতেই কোথা থেকে গমগমে মিউ মিউ শব্দ আসতে থাকল।
চমকে গিয়ে এলিজাবেথ সামনে তাকিয়ে দেখল মাফি হিংস্রভাবে ছুটে আসছে। মাফি যেই না লাফিয়ে আক্রমণ করতে যাবে তার আগেই রিচার্ড এসে এলিজাবেথের সামনে দাঁড়িয়ে গেল ঢাল হয়ে। মাফি রিচার্ডের পিঠে বারি খেয়ে নিচে পড়ে যায়। আবারও লাফিয়ে ওঠে মায়াকে ছিনিয়ে নিল এলিজাবেথের কোল থেকে। এলিজাবেথ হতভম্ব হয়ে চোয়াল ফাঁক করে তাকিয়ে রইল ওদের দিকে। মায়া আর মাফি একে অপরের সঙ্গে মিশে গিয়েছে মুহূর্তেই। রিচার্ড নাক কুঁচকে মনে মনে মাফিকে কয়েক দফা গালি দিয়ে এলিজাবেথের পাশে বসে বলল,
“শালা, আমার খেয়ে, আমার বৌয়ের উপরেই লাফিয়ে পড়িস?”
‘এলিজাবেথ আমতা-আমতা করতে থাকে,”মা-ম-মায়ার পেট ফোলা কেন?”
‘কাজির পাশ থেকে লুকাস ঝাঁঝাল স্বরে বলে উঠল,”পেটে বাচ্চা তাই পেট ফোলা। একটা মেয়েমানুষকে কি এটাও বুঝিয়ে দিতে হয়?”
“লোকা।” গরম চোখে তাকিয়ে মৃদু স্বরে সতর্ক করল রিচার্ড। লুকাস মিইয়ে গেল। এলিজাবেথ আরেক দফা অবাক হল। পরপর কয়েকবার ঢোঁক গিলে বলল,
“ওদের এভাবে বর-বউয়ের বেশে সাজানোর মানে কী?”
‘মায়া আর মাফি—দুজনেই যেন আজ রাজকীয় কোনো বর-বউ। মায়ার গায়ে গাঢ় খয়েরি রঙের এক লম্বা ফ্রক, পিছনটা গড়িয়ে পড়েছে। মাথায় ছোট ছোট ফুলের ছোট্ট একটা মুকুট। আর মাফির আঁধার শরীরে সাদা পাঞ্জাবি উজ্জ্বলতার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিচার্ড ওদের দেওয়ান মঞ্জিল থেকে এনেছে ঠিক তখনই যখন এলিজাবেথ ছিল বান্দরবানে। তাকবীর কখনো ওদের খোঁজও নেয়নি। এতদিন তারা ছিল রিচার্ডের কাছেই। তার নির্দেশেই ইবরাত ওদের এমন সাজিয়েছে যাতে এলিজাবেথ খুশি হয়। অনেক দিন পর দেখার কারণে ওরা কেউই চিনতে পারছে না এলিজাবেথকে। তাই দৌঁড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে রিচার্ডের কোলে। রিচার্ড হাত বুলিয়ে দেয় ওদের মাথায়, অথচ চিবুক শক্ত। রিচার্ড পাশ থেকে একটা ছোট্ট সিলভার রঙের সানগ্লাস পরিয়ে দিল মাফিকে। মাফি সেটি পরতেই তার ভ্রু নাচানো ভাব। হুট করেই সে কেমন ভাব দেখানো শুরু করল।
‘পাশ থেকে ইবরাত ছোট করে বলল,”আজ ওদেরও বিয়ে?”
“কিহ! বিয়ে, ওদের?”
‘থমথমে গলায় লুকাস বলল,”একটা বিড়ালেরও পেটে বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও বিয়ে হয়, শুধু হয় না এই লুকাসের। আমার ছেলে-মেয়েরা কি স্কুল-কলেজে পড়বে না? পড়ালেখা দিন দিন যা কঠিন হচ্ছে, পরে তো উঠতে বসতে বাপকে ঝাড়বে।”
‘কেউ গায়ে মাখল না লুকাসের কথা। রিচার্ড কাজির থমথমে মুখের দিকে চাইল। ভদ্রলোকের মুখাবয়ব স্পষ্ট ভয়ভরা। বোঝা যাচ্ছে তাকে তুলে আনা হয়েছে।
“কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।”
‘রিচার্ডের কথায় এলিজাবেথ মায়া-মাফির থেকে মুখ ফিরিয়ে ওর দিকে চাইল। কী আশ্চর্য! এই লোকটা শুধুমাত্র টাইজার আর ট্যাংক টপ পরে বিয়ে করবে? বিয়ে করতে এসেছে না ম্যাসেলস দেখাতে এসেছে। এলিজাবেথ রিচার্ডের উদ্দেশে কিছু বলতে যাচ্ছিল তার আগেই রিচার্ড লুকাসের দিকে তাকিয়ে শাসালো ওকে,
“একদম অভিশাপ দেবে না।”
‘ভড়কে গেল লুকাস। কিভাবে বুঝল রিচার্ড? বুঝলে বুঝুক! একশোবার অভিশাপ দেবে! সে এখনো একবারও বিয়ে করেনি, আর এরা দুইবার করে ফেলেছে। এমন মানুষকে অভিশাপ দিতে না তো কি পাপ্পা দেবে? লুকাস এক মনে বিরবির করে বকতে থাকল,
“বললেই হলো? একশোবার দিব! বউ তোদের ঘর থেকে বের করে দেবে, শালারা!”
‘ঠোঁট কামড়ে হাসল ন্যাসো, “লোকা তুমি চাইলে আমি এখনই একটা মেয়ে তুলে এনে দিচ্ছি। তামিলনাড়ু থেকে তোমার সুইটি আসতে আসতে আমাদের বৌভাতও হয়ে যাবে।”
‘লুকাস কিছু বলার আগেই ন্যাসোর প্রাইভেট পার্টসে চিমটি কাটল ইবরাত। ব্যথায় চোখ-মুখ কুঁচকে গেল তার। যথারীতি বিয়ে শুরু হলো। প্রথমে ইবরাত আর ন্যাসোর। কাজি কবুল বলতে বললেই দুজনেই সেকেন্ডের মধ্যে কবুল বলে দিল। এবার পালা রিচার্ড আর এলিজাবেথের। কাজী নতজানু হয়ে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“দেনমোহর কতো বাঁধবো?”
‘রিচার্ড তখন এলিজাবেথের চোখে চোখ রাখতেই ব্যস্ত। এক মুহূর্তের জন্যও সে দৃষ্টি সরাল না, শুধু হাত বাড়িয়ে পকেট থেকে একটা দলিল বের করল।
“কাবিননামায় লিখে দিন, আমার কবরের পাশে ওর কবর। এই যে জায়গার দলিল।”
‘কাজী হতভম্ব হয়ে দলিল হাতে নিল। যে-ই গুরুস্থানে রিচার্ডের বাবা চিরঘুমে শায়িত সেই পুরো জায়গা রিচার্ড কিনে নিয়েছিল। তবে এখানে কেবলমাত্র রেয়ান সাহেবের কবরের পাশে দুটি কবরের সমপরিমাণ জায়গায় নিজের জন্য এবং এলিজাবেথের জন্য বর্ধিত করে করেছে রিচার্ড। আর সেই জায়গার দলিলই এখন কাজীর কাছে দিল। এলিজাবেথের সারা শরীর শীতল হয়ে এল। কানের কাছে বাজতে লাগল রিচার্ডের কথা। কাজী দ্রুত বাকি আনুষ্ঠানিকতা সেরে নিলেন। এবার কবুল বলার পালা।কাজী রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি কবুল বলুন।”
‘রিচার্ড এক মুহূর্তও দেরি করল না,
“কবুল।
কবুল।
আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।”
‘তারপরেই দৃষ্টি গেল এলিজাবেথের দিকে। সে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল তার বধুর চোখে—সেখানে বিস্ময়, সংশয়, হয়তোবা অভিমান। কিন্তু রিচার্ডের চোখে ছিল নিখাদ সমর্পণ। সে মনে মনে শব্দ নাড়ল,
“আমি ভালো হই, সেটাই তো চাও। নাও, তিন কবুলের মাধ্যমে পুরো আমিটাকে তোমার কাছে সঁপে দিলাম। এবার সাজিয়ে নাও আমাকে, নিজের মতো করে।”
‘রিচার্ডের পর এবার এলিজাবেথের পালা। কিন্তু সে নির্বাক। জলজমা কাঠের পুতুলের মতো বসে আছে, চোখেমুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই। রিচার্ড চাপা স্বরে ফিসফিসিয়ে বলল,
“ওয়াইফি, ডোন্ট টেক ইট টু লং।”
‘তবুও নিশ্চুপ এলিজাবেথ। যেন এই পৃথিবীতেও নেই সে। কাজি কাবিননামা এগিয়ে দিলেন তাও কোনো অনুভূতি ওকে ছুঁতে পারল না। রিচার্ড নিজের সংযম ধরে রাখতে চুল টেনে ধরে। ফোঁস ফোঁস নিশ্বাস ফেলে আলগোছে ওকে জরিয়ে ধরে নিদারুণ সুরে বলল,
“আমরা আবার চেষ্টা করব। ও আবারও আসবে আমাদের মাঝে। কবুল বল রেড।”
‘নিঃসাড় এলিজাবেথ। সকলে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এই নৈঃশব্দ্য ভয় জাগাচ্ছে কারণ তারা জানে রিচার্ডের রাগ কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এবং যা আশঙ্কা করেছিল, সেটাই ঘটল। কোমলতা মুহূর্তেই গড়িয়ে পড়ল হিংস্রতায়। বিদ্যুৎবেগে উঠে দাঁড়িয়ে রিচার্ড এক ঝটকায় ওর কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে বলল,
“আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না। আবারও বলছি, চেষ্টাও করো না।”
‘এবার এলিজাবেথ মাথা তুলে তাকাল ওর দিকে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রাখল। ধীরে ধীরে হাতে কলম তুলল। রিচার্ডের চোখে চোখ রেখেই অবিলম্বে আওড়ালো,
“কবুল।”
“কবুল।”
“আলহামদুলিল্লাহ, কবুল।”
‘তারপর নিঃশব্দে কাবিননামায় সাইন করে দিল। সেই সাথে মনে মনে অঙ্গিকার ব্যক্ত করল,
“এই তিনটে শব্দের মাধ্যমে বিলিয়ে দিলাম না নিজেকে। বরং ছিনিয়ে নিলাম আপনাকে। এবার হয় গড়ব, নয় ধ্বংস করে ফেলব। মি. কায়নাত, ভালোবাসা নামক সুখের নেশায় পুড়বেন আপনি আজ থেকে। কথা দিচ্ছি প্রতিনিয়ত পুড়বেন।”
‘সকলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। কাজি তো এক মুহূর্তও দেরি না করে প্রায় ছুটে পালালেন। রিচার্ড একটু অবাক হলো। সে ভেবেছিল এলিজাবেথ হয়তো কাঁদবে কিংবা তার দিকে ঘৃণিত চোখে তাকাবে। কিন্তু কিছুই হলো না। হঠাৎ এলিজাবেথ উঠে দাঁড়াল। মাথা থেকে দোপাট্টা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে রিচার্ডের চোখে চোখ রেখে দাঁতে দাঁত পিষে বলল
“ফাক ইউ।”
‘একটুও দেরি না করে রিচার্ডও পাল্টা বলল,”ফাক ইউ টু।”
“ওয়েলকাম টু দ্য হেল মি.কায়নাত।”
‘বক্র হাসি খেলে গেল তার অধর কোণে,”ওয়েলকাম টু মাই ডার্ক সাইড, মাই ফা’কিং ডার্ক রেড।”
‘বিষধর সাপের মতো রিচার্ডের দিকে চেয়ে আছে এলিজাবেথ।ঠোঁটে একটুখানি ব্যঙ্গের ছায়া। রিচার্ডের ফোনে আচমকা একটা এলার্ট ভেসে উঠল। সে ঠাণ্ডা ভঙ্গিতে ফোনটা হাতে নিল। এক ঝলকে দেখে বাঁকা হাসল, তারপর দ্রুত কিছু টাইপ করে ফোনটা আবারও পকেটে ঢুকিয়ে দিল।
ঠিক তখনই দরজায় এক হট্টগোল৷ লাড়া ছুটে আসে। হাঁপাতে হাঁপাতে চিৎকার করল,
“রিদ! রিদ!”
‘সবার দৃষ্টি ঘুরল দরজার দিকে। যথারীতি উঁচু হিল আর ছোট পোশাকে লাড়া। রিচার্ড চোখে ইশারা করতেই ভিতরের সকল গার্ডরা নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল। এলিজাবেথ ধীরগতিতে ঘুরল। চিবুক শক্ত হয়ে উঠল ওর, কিন্তু স্বর? বরফের মতো ঠান্ডা। লাড়ার পথ আগলে দাঁড়াল সে,
“কোথায় যাচ্ছো?”
‘লাড়া কাঁপছে ক্রোধে, অপমানে,”সরো! আমি রিচার্ডের কাছে যাবো!”
“বাইরের কোনো মেয়ে আমার স্বামীকে নাম ধরে ডাকবে, সেটা আমি একদমই পছন্দ করব না।”
“বাইরের মেয়ে? তুই কাকে বাইরের মেয়ে বলছিস?”
‘এলিজাবেথ এক পলকে ওকে মেপে নিল,”তোমাকে।”
“তোর মতো চরিত্রহীন মেয়ের সাহস হয় কী করে আমাকে বাইরের মেয়ে বলার? বিচ!”
‘এবার সত্যিকারের হাসল এলিজাবেথ। ধীরে ধীরে এক পা এগিয়ে এল। লাড়ার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করল,
“আর কী যেন বললে? দুসচরিত্রা?”
‘এক চুলও পিছু হটল না, বরং আরও গাঢ় স্বরে বলল,
“আমার স্বামী কে, সেটা নিশ্চয়ই খুব ভালো করে জানো। তার জীবনের প্রথম নারী আমি, যাকে সে স্পর্শ করেছে, যাকে সে গভীরভাবে কাছে টেনেছে। আর ভবিষ্যতেও সেটাই হবে, কারণ? সে আমার স্বামী। যদি আমি চরিত্রহীন হতাম, তাহলে সে এতোকিছুর পরেও আমায় নিজের ঘরে তুলত না পুরো দুনিয়ার সাথে লড়ে।”
‘অপমান, ঘৃণা, লজ্জায় লাড়ার চোখ জলে ভরে উঠল। সে এক পলক এলিজাবেথের দিকে তাকিয়ে থাকল কঠিন দৃষ্টিতে। পরপরই ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে পিছনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে কান্নামিশ্রিত স্বরে চেঁচিয়ে উঠল,
“রিচার্ড! তুমি এই মেয়ের রূপে পাগল হয়েছো? যদি রূপের কথা বল, তবে আমি কোন দিক দিয়ে কম?”
‘মুখের কথা কেড়ে নিল এলিজাবেথ,
“সুন্দর তো পল্লীপাড়ার মেয়েরাও হয়। তাদের ঘরে তোলে ক’জন? ঘরের সৌন্দর্য রূপে নয়, পবিত্রতায়।”
‘থেমে, এলিজাবেথ আবারও বলল,
“স্বামীর সামনে স্বতীত্ব নিয়ে দাঁড়াতে যোগ্যতা লাগে যেটা সবার মধ্যে থাকেনা।”
‘সারা ঘর স্তব্ধ। এলিজাবেথের কথায় সবাই হতভম্ব।চোয়াল ফাঁক হয়ে গেছে উপস্থিত প্রত্যেকের। শুধু একজন স্বাভাবিক,সে রিচার্ড। তার ঠোঁটের কোণে সেই চিরচেনা বাঁকা হাসি। যেন এই মুহূর্তটাই সে চেয়েছিল। প্রতিটি শব্দ সে চুপচাপ শুনছে।ঠোঁটের হাসি একচুলও কমছে না। তার চোখ বলে দিচ্ছে—সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। তার কঠোরতা ফল পেতে শুরু করেছে। এলিজাবেথ লাজুক হেসে তাকাল লাড়ার দিকে। হেসে হিসহিসিয়ে বলল,
“I see it
“I like it
“I want it
“I got it.
‘হঠাৎ করেই লাড়া হাসল। এলিজাবেথের কানের কাছে মুখ নিয়ে গভীর গলায় আওড়ালো,
“ভিলেন নায়ক, ভিলেন হিরো—এসব তো পুরনো কিসসা। আমি তো সোজা ভিলেন নায়িকা হয়ে এলাম, যে একটু ব্যতিক্রমী হতে জানে।”
“এই গল্পে ভিলেন নায়কের অস্তিত্ব থাকলেও পরনারীর কোনো অস্তিত্ব নেই।”
‘লাড়া নিয়ন্ত্রণ হারাল। হাত তুলল সরাসরি এলিজাবেথের দিকে। রিচার্ড ছুটে আসার আগেই এলিজাবেথ খপ করে ধরে ফেলল ওর হাত। একটানে ওর হাত মুচড়ে ধরল তারপর কোনো দ্বিধা ছাড়াই লাড়াকে ছিটকে ফেলে দিল মেঝেতে। রিচার্ড এবার সত্যিই অবাক হল। লাড়া ধপ করে পড়ল মেঝেতে। এলিজাবেথ ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে তার সামনে বসে পড়ল,
“তাকে নিতে পারলে নিয়ে যাও। তবে মনে রেখো—যদি আবার হাত বাড়াও, সেই হাত ভেঙে ফেলতে আমার এক মুহূর্তও লাগবে না।”
‘রিচার্ড এক ঝটকায় এলিজাবেথের হাত ধরে ওকে তুলে নিল। লাড়ার দিকে তাকাল কঠোর ভাবে বলল,
“আমার ওয়াইফের দিকে নেক্সট টাইম হাত বাড়ানোর চেষ্টা করলে পূর্বের কৃতজ্ঞতার বিষয়টা আমি ভুলে যাবো, লাড়া।”
‘কোনো বাড়তি শব্দ নেই, কোনো রাগের বিস্ফোরণ নয়।শুধু এই কথাগুলোই যথেষ্ট ছিল। রিচার্ড শিস বাজাতেই সঙ্গে সঙ্গে গার্ডরা এসে লাড়াকে তুলে নিয়ে গেল। এলিজাবেথ এক ঝাড়া মেরে রিচার্ডের হাত ছাড়িয়ে নিল। এক মুহূর্তও দাঁড়াল না, হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল। রিচার্ডও আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল, পিছু নিল লুকাস।শুধু রইল ইবরাত আর ন্যাসো। খালি ময়দান পেয়ে গেল ন্যাসো। কোনো সুযোগ না দিয়েই ধুম করে কোলে তুলে নিল ইবরাতকে। ইবরাত হচকিয়ে টেনে ধরল ওর কলার। ন্যাসো তড়িঘড়ি রুমের দিকে যেতে যেতে শুধু বলল,
“রাত চল, এখানে যতক্ষণ থাকব, ততক্ষণই
আমার জন্য লস হবে।”
‘তলপেটে মৌমাছির মতো এক ঝাঁক প্রতাপতি ছুটে গেল ইবরাতের। লজ্জায় মুখ লুকাল সেই শক্ত, পুরুষালী বুকে।
‘রিচার্ড বেশ কিছুক্ষণ পর রুমে প্রবেশ করল। রুমের অবস্থা দেখে তার চোখ মিটিমিটি জ্বলে উঠল। সবকিছু তছনছ।বাসর ঘর এখন এক যুদ্ধ ক্ষেত্র, আর ফুলের পাপড়িগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছে মৃত সৌন্দর্য বহন করে। ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে সে ভিতরে পা রাখল। এলিজাবেথ খাটের এক কোণায় বসে হাঁপাচ্ছে। মনে হয় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা তুলল এলিজাবেথ। রিচার্ডকে দেখামাত্র যেন আগুনের মতো গর্জে উঠল। মুহূর্তে টেবিল থেকে একটা সঁপিস হাতে নিয়ে তেড়ে গেল ড্রাগনের পেইন্টিংয়ের দিকে।
‘এখানেও রিচার্ডের রুম সাজানো তার পছন্দ অনুযায়ী, যেমনটা ছিল বাগান বাড়ি আর ইতালির ম্যানশনে। এলিজাবেথকে ড্রাগনের দিকে তেড়ে যেতে দেখে, রিচার্ড এক ছুটে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে সে বলল,
“খুব টায়ার্ড দেখাচ্ছে। এটা না হয় কাল।”
‘শরীরটা সত্যিই অবসন্ন হয়ে পড়েছে। রিচার্ডের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে এলিজাবেথ কেবিনেটের কাছে এগিয়ে গেল। কেবিনেট থেকে একটা শার্ট বের করে রিচার্ডের মুখের উপর ছুঁড়ে মারে। রিচার্ড অবাক হয়ে শার্টটা সরিয়ে ওর দিকে প্রশ্নবোধক চোখে তাকালে, এলিজাবেথ নির্লিপ্তভাবে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“ওজু করে আসুন। বিয়ের প্রথম রাতে একসাথে নামাজ পড়তে হয়।”
‘রিচার্ডের কোনো সাড়া নেই। মাথা তুলে এলিজাবেথ তার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,”কি, ওজু কিভাবে করতে হয় জানেন না? হেল্প লাগবে?”
‘রিচার্ড তুষ্ট হেসে বলল,”সাত বছর বয়সে যখন নামাজ আমার ওপর ফরজ হলো, তখন আমি ভালো মানুষই ছিলাম। আর রিচার্ড কায়নাত কিছুই ভুলে যায় না।”
‘এই কথা বলে রিচার্ড ওয়াশরুমে চলে গেল। কিছু সময় পর বের হয়ে এসে দেখল এক কোণায় ফুল পরিষ্কার করে এলিজাবেথ জায়নামাজ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিচার্ডও গিয়ে দাঁড়াল এলিজাবেথের সামনে, নীরবতা ভেঙে উঁকি দিয়ে।
‘এলিজাবেথ উঠে দাঁড়িয়ে ই রিচার্ডের সামনে এসে এক টুকরো সাদা কাগজ ধরিয়ে দিল। কাগজটি দেখলে মনে হতো এটি কোন অফিসিয়াল এগ্রিমেন্ট, কিন্তু তার প্রতিটি শব্দ রয়েছে কঠোর শর্তের বাঁধা। সেখানে লেখা ছিল, সে কিছু সত্ত্বেই এখানে সংসার করবে,নাহয় চলে যাবে।
১. তার অনুমতি ছাড়া তাকে স্পর্শ করা যাবে না।
২. গালি দেওয়া যাবে না।
৩. গায়ে হাত তোলা যাবে না।
৪. স্বাধীনতা দিতে হবে।
৫. রাগ দেখানো যাবে না।
৬.তার সকল কথা শুনতে হবে।
‘এছাড়াও আরও কিছু শর্ত ছিল সেখানে, যা চুপচাপ পড়ে রিচার্ড তপ্ত শ্বাস ফেলে এলিজাবেথের দিকে তাকাল। এলিজাবেথ এক হাতে কলম বাড়িয়ে দিল। রিচার্ড কোনো শব্দ না করে কলম হাতে নিয়ে এক কোণায় সাইন করে ফেলল। তারপর আর কোনো কথা না বলে হনহনিয়ে চলে গেল এলিজাবেথ।
‘রিচার্ড আজ খুব ক্লান্ত। শরীরের শিরা-উপশিরাগুলো একটানে টনটন করছিল। ভিতরের অস্থিরতা সামলাতে, তার কিছুটা ফ্রেশ ঘুমের প্রয়োজন।সে বেডে শুতেই যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় এলিজাবেথ হুড়মুড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে খেঁকিয়ে উঠল,
“আমি আপনার সাথে এক বিছানায় শুবো না। ভুলে যাবেন না প্রথম শর্তের কথা।”
‘রিচার্ড কপাল কুঁচকাল, “একসাথে শুলেই কি ছোঁয়া হয়ে যায়?”
‘এলিজাবেথ কাইঁকুইঁ করে রাশভারি আওয়াজে বলল,
“আমি খুব ভয় পায় আপনার হাতকে। এদুটোকে আমি একদমই বিশ্বাস করি না।”
‘রিচার্ড গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠল। বেরিয়ে যেতে অগ্রসর হলে এলিজাবেথ পিছন থেকে ছটফটিয়ে উঠে বলল,
“আমি স্বামী ছাড়া আলাদা ঘরেও থাকবো না।”
‘রিচার্ড পিছন ফিরে, বিরতির রেশ টেনে বলল,”তাহলে কোথায় শুবো আমি?”
‘এলিজাবেথ ফটাফট তর্জনী মেঝের দিকে দিয়ে দাঁত খিলিয়ে বলে, “নিচে?”
‘রিচার্ড কিরমিরিয়ে বলতে যাচ্ছিল, “শালি,” কিন্তু তার আগেই এলিজাবেথ কালবৈশাখীর পূর্ব সংকেত পেয়ে কাউচের দিকে ইশারা করে বলল,”ওকে, ওকে, কাউচে শুয়ে পড়েন তবে।”
‘রিচার্ড কথা বাড়াতে চাইল না। চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পরল। এলিজাবেথ শয়তানি হেসে নিজেও গিয়ে শুয়ে পড়ল।অনেক সময় অতিবাহিত হলেও রিচার্ড ঘুমায়নি। সে অপেক্ষা করছিল এলিজাবেথ কখন ঘুমাবে। যখন বুঝতে পারল এলিজাবেথ শান্তি নিয়ে ঘুমাচ্ছে, সে আলতো পা ফেলে উঠে গিয়ে এলিজাবেথের কাছে এসে দাঁড়াল। একপাশ হয়ে শুয়ে আছে এলিজাবেথ, যার ফলে অবয়ব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রিচার্ড বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল, মনোমুগ্ধকর ভাবে তার নতুন বউকে দেখছিল। লাল টুকটুকে বউকে। সে হাত বাড়িয়ে এলিজাবেথের লাল চুলগুলোতে স্পর্শ করল। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিরফিস করে বলল,
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৫১
“যেহেতু পাথরের বুকে ফুল ফুটাতে পেরেছো, তাহলে এই লাইনটা তোমার জন্যই উৎসর্গ করা হলো—থাকবে চিরদিন, এই ভালোবাসায়।”
‘বলে ললাটে এক গভীর ছোঁয়া রেখে বেরিয়ে গেল প্রশান্তির খোঁজে।