রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৬৭

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৬৭
রিক্তা ইসলাম মায়া

সকাল পেরিয়ে দুপুর হলো। দুপুর বারোটা পেরিয়ে একটার ঘর। তপ্ত রোদে খাঁ খাঁ করছে ধরণী। মায়া ওড়নার আঁচলে গলার ঘামটুকু মুছে নিয়ে আকাশের দিকে তাকাল। অতিষ্ঠ গরমে শরীর জ্বালা করছে। এই অসময়ে রিকশার আশায় এদিক সেদিক তাকাল মায়া। গায়ে সাদামাটা একটা থ্রি-পিস জড়ানো। মুখে ওয়ান-টাইম মাস্ক, হাতের পার্সে কিছু টাকা আর রিদের ফোন। মায়া লম্বা ঘোমটা টেনে যতটা নিজেকে আড়াল করা যায় ততটাই করল। এই অসময়ে রিদের অনুপস্থিতিতে মায়ার রাস্তায় বের হওয়ার কারণ দুটো।

প্রথমত মুরাদপুরে মায়াদের আগের বাসায় যাবে আরিফের সঙ্গে দেখা করতে, দ্বিতীয়ত রাফা মায়ার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে কোনো একটা কারণে। মায়া জানে কারণটা কী হতে পারে, সেজন্য মায়া নিজেও চাচ্ছে রাফার সঙ্গে কথা বলতে, মায়া রাফাকে আরিফের বাসায় আসতে বলে সে অনেকটা সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে রিকশার দেখা পেল। তপ্ত রোদে রিকশায় চড়ে বসতে মায়া আশেপাশে বেশ পরিচিত ছেলেপেলেদের দেখা পেল। এরা রিদের লোক সেটা মায়া জানে। মায়ার শ্বশুরের নির্বাচনের জন্য রাস্তায় ব্যানার পোস্টার লাগাচ্ছে ছেলেপেলে গুলো দলবদ্ধ হয়ে। সেজন্য মায়া রিকশার হুড তুলে নিজেকে আড়াল করল। গায়ের ওড়নাটা পেঁচিয়ে যতটুকু নিজেকে আড়াল করা যায় ততটুকুই করল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদের অনুপস্থিতিতে মায়া খান বাড়ি থেকে বেরিয়েছে, সেটা কেউ জানে না। জানলে অবশ্য মায়াকে বের হতে দিত না কেউ। কারণ রিদের কঠোর নিষেধ আছে মায়ার বাইরে বের হওয়া নিয়ে। কিন্তু মায়া নিজের ব্যক্তিগত কাজের জন্য কাউকে না জানিয়ে খান বাড়ি থেকে বের হতে বাধ্য হয়েছে। তবে খান বাড়ির সদস্যরা মায়াকে বের হতে না দেখলেও খান বাড়ির সার্ভেন্টরা ঠিকই দেখেছে মায়াকে বের হতে। তাছাড়া খান পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে কেউ উপস্থিতি ছিল না মায়ার বেড়িয়ে আসার সময়। রিদ বাদে বাড়ির সকল ছেলেরাই নিহাল খানের নির্বাচনের কাজে বাইরে ছিল। হেনা খান নিজের ঘরে ছিল বলে মায়া বাড়ি থেকে চুপিসারে বেরিয়ে এসেছে। মায়ার ধারণা বিকালের আগেই সে খান বাড়িতে ফিরে যাবে। যেহেতু রিদ বাসায় নেই, সেহেতু খান বাড়ির অন্য সদস্যরা মায়ার বাড়ি থেকে বের হওয়া নিয়ে ঝামেলা করবে না। মায়ার মনস্তাত্ত্বিক ভাবনার মাঝেই হঠাৎ মায়ার হাতব্যাগে থাকা রিদের ফোনটি বেজে উঠল। মায়া চমকে ওঠার মতো ব্যাগ হতে ফোনটি বের করতে স্ক্রিনে ভাসল রাফা নামটি। মায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রিদের কল ভেবে সে ভয় পেয়েছিল। মায়া কলটি রিসিভ করে কানে তুলতেই শোনা গেল রাফার স্বর…

‘ মায়া, কই তুই?
উত্তরে মায়া বলল…
‘ এই তো রিকশায় আছি। তুই কোথায়? কলেজে নাকি বাসায়?
‘ রাস্তায় আছি। কলেজ হতে বের হয়ে গেছি, ক্লাসে মন বসছে না তাই।
মায়া রাফাকে আশ্বস্ত করে বলল….
‘ আচ্ছা, ঠিক আছে। তুই আমাদের বাসায় আয়। তোর সাথে সেখানে দেখা হবে।
কথাটা বলে মায়া কল কাটতে চাইলে রাফা তৎক্ষনাৎ ডাকল মায়াকে বলল…
‘ মায়া, শোন।
‘ হুম, বল! শুনছি।
রাফা রিনরিনে গলায় বলল…
‘ তুই কলেজ গেটের সামনে আসতে পারবি? আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছি।

রাফার কথায় মায়া কপাল কুঁচকাল। কলেজ গেটের সামনে যাওয়া মানে মায়া রিদের লোকদের কাছে ধরা পড়ে যাওয়া। মায়া এমনই লুকিয়ে এসেছে ঐ বাড়ির মানুষ থেকে, এখন যদি কোনোভাবে মায়ার খবরটা রিদের কানে যায় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। মায়া রাফার কথায় তৎক্ষণাৎ নিষেধ করে বলল…
‘ আমি ঐখানে যেতে পারব না রাফা। সমস্যা হবে। তাছাড়া আমি আমার শ্বশুরবাড়িতে কাউকে বলে আসিনি। তোর সাথে দেখা করার জন্য লুকিয়ে এসেছি, এখন যদি কলেজের সামনে যাই তাহলে নিশ্চয়ই কারও না কারও চোখে পড়ে যাব। বিষয়টা ওনার(রিদ) কানে গেলে রেগে যাবেন উনি। তুই তো জানিস উনি কেমন মানুষ। আ…
মায়াকে শেষ করতে না দিয়ে রাফা অনুনয় সুরে আকুতি করে বলল…

‘ প্লিজ মায়া, না করিস না। আমার বিষয়টা বোঝার চেষ্টা কর। আমি খুব বিপদে পড়ে তোকে এখানে ডাকছি। নয়তো ডাকতাম না। আমার তোকে অনেক কিছু বলার আছে, যেটা খান বাড়িতে কিংবা তোদের বাড়িতে বলার মতোন পরিবেশ নেই। প্লিজ আয় না জানু। খুব আর্জেন্ট।
রাফার আকুতি স্বরে মায়া নিষেধ করতে পারল না। মায়ার বিপদে যখন কেউ ছিল না, তখন এই রাফা ছিল। আজ রাফার বিপদে মায়া না থাকলে বেশ স্বার্থপর দেখাবে মায়াকে। তাছাড়া মায়া কখনো নিজের আপনজনদের হাত ছেড়ে দেয় না, এবার যত বিপদই আসুক না কেন। মায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল…
‘ অপেক্ষা কর। একটু সময় লাগবে আমার আসতে। রিকশায় আছি।
‘ আচ্ছা, আয়।

মায়া কল কেটে হাতের ফোনটির দিকে তাকাল। রিদ বাড়িতে নেই। গত দুদিন আগেই ঐ রাতে ঢাকায় গিয়েছিল রিদ নিজের কোম্পানির তাগিদে। সঙ্গে অবশ্য আসিফও গিয়েছে। তবে মায়াকে সঙ্গে নেয়নি। চট্টগ্রামে রেখে গিয়েছে খান বাড়িতে। কথা ছিল রিদ নিজের কাজ শেষ করে একদিন পর চট্টগ্রামে ফিরে আসবে, অথচ রিদের ব্যস্ততা গোটা দুদিন পার হতে চলল, রিদ চট্টগ্রামে ফিরতে পারছে না। একদিকে নিহাল খানের নির্বাচন, অপরদিকে নিজের কোম্পানি নিয়ে বিশাল ব্যস্ততায়—দিন যাচ্ছে রিদের। তাই এসময়ে রিদকে খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। মায়ার সাথে রিদের কথা হয়েছিল আরও একদিন আগে, তাও পাঁচ মিনিটের জন্য। রিদ জানিয়েছিল আজ চট্টগ্রামে ফিরবে। মায়ার ধারণা রিদ হয়তো রাতের মাঝে চট্টগ্রামে ফিরতে পারে। সেজন্য মায়া রিদের চট্টগ্রামে ফেরার আগে একবার রাফার সাথে দেখা করার মনস্থির করল।

এবার রিদের অগোচরে আল্লাহ আল্লাহ করে মায়া রাফার সাথে দেখা করে খান বাড়িতে ফিরতে পারলেই হলো। এরপর আর কখনো রিদকে না জানিয়ে কোথাও যাবে না মায়া। এটাই শেষ। মায়া নিজেকে আড়াল করতে গায়ের ওড়নাটি ভালোভাবে পেঁচাল। নিজেদের বাড়িতে না গিয়ে সময় নিয়ে কলেজ গেটের সম্মুখে পৌঁছাতে মায়া রিকশা থেকে নামল। ভাড়া মিটিয়ে ভয়ার্ত চোখে এদিক সেদিক তাকাতে বেশ কিছু পরিচিত মুখ দেখল আশেপাশে। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে মায়া বারবার গায়ে ওড়নাটা টানল। আজ কত দিন পর মায়া আবার নিজের কলেজের গেটে পা রেখেছে। এই কলেজ জুড়ে রয়েছে মায়ার অসংখ্য স্মৃতি। মায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রাফার খোঁজে সামনে এগোতে চাইলে কেউ ঝড়ের গতিতে মায়াকে ঝাঁপটে জড়িয়ে ধরল। ভয়ার্ত মায়া নিজের তাল সামলাতে না পেরে দু-কদম পিছিয়ে যেতেই রাফার ফুঁপানো শব্দ এল মায়ার কানে। রাফা বলল….

‘ আই মিস ইউ জানু। অনেক মিস করেছি তোকে।
মায়া দুহাতে রাফাকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল রাস্তার বেশ কিছু মানুষের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু ওরা দুজন। মায়া পরিচিত মানুষের দৃষ্টিতে পড়তে চায় না বলে রাফার পিঠে হাত বুলিয়ে আশ্বস্ত করে বলল…
‘ রাফা, মানুষ আমাদের দেখছে, ছাড় আমাকে। পরিচিত কারও চোখে আমি ধরা পড়ে গেলে সমস্যা হবে। চল অন্য কোথাও বসি আমরা।
মায়ার কথায় রাফা তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিয়ে আশেপাশে তাকাল। দুই বান্ধবীর ভালোবাসা বেশ মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। রাফা নিজের চোখ মুছে মায়ার হাত চেপে রাস্তার অপর পাশে যেতে যেতে বলল…
‘ আমাকে ভুল বুঝিস না মায়া। আমি নিরুপায় হয়ে তোকে আজ এখানে আনতে বাধ্য হয়েছি। তবে বিশ্বাস রাখ, আমি তোর কোনো ক্ষতি হতে দেব না। কিছু সত্যের মোকাবিলা আমি একা করতে পারছিলাম না বলে তোকে ডাকলাম। আমার তোর সাহায্যের খুব প্রয়োজন।
রাফার কথার মানে মায়া তৎক্ষণাৎ বুঝল না। কিসের সত্য আর কিসের ক্ষতি করবে রাফা মায়ার? মায়া অবুঝ গলায় শুধাল রাফাকে। বলল…

‘ কিসের সত্য, কিসের ক্ষতির করার কথা বলছিস তুই আমাকে? কী হয়েছে তোর? আমার কী সাহায্য লাগবে?
রাফা মায়াকে নিয়ে রাস্তা পার হয়ে কয়েক কদম হেঁটে সামনে এগোল। কলেজ রোডের পাশে একটা রেস্টুরেন্টের সম্মুখে দাঁড়াল। মায়া তখনো রাফার দিকে কৌতূহল চোখে তাকিয়ে উত্তরের আশায়। রাফা রেস্টুরেন্টের ভিতরের দিকে তাকিয়ে মায়ার হাতটা শক্ত করে চেপে পরপর দুটো বড়সড় নিশ্বাস ফেলে নিজেকে প্রস্তুত করল। মায়াকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করতে করতে বলল…
‘ নাদিম ভাই এসেছেন।
মায়া তখনো রাফার কথাটা চট করে বুঝতে পারল না। বরং রাফার সাথে পা মিলিয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করতে করতে আগের মতোই কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল…
‘ কোন নাদিম ভাই? কার কথা বলছিস তুই?

মায়ার ধারণাতে ছিল না চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে নাদিম মায়ার সঙ্গে দেখা করতে চট্টগ্রামে চলে আসবে তাও আবারও রাফা নাদিমকে মায়ার অবধি নিয়ে আসবে। রাফার কাজটা মায়ার কাছে অবিশ্বাস্য হলো এটাই সত্য ছিল। রাফা মায়াকে বিশ্বাস দিয়ে একই গলায় বলল….
‘ আশুগঞ্জের নাদিম ভাই! যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সেই নাদিম ভাই চট্টগ্রামে এসেছেন তোর সাথে দেখা করতে।
রাফার কথায় মায়া আকাশসমান চমকাল, ভড়কাল, উত্তেজিত হয়ে অবিশ্বাস্য গলায় বলল…
‘ কিহ?
মায়ার অবিশ্বাস্য চিৎকারে রাফা তৎক্ষণাৎ মায়ার দুহাত নিজের দুহাতের মুঠোয় চেপে বলল…
‘ প্লিজ জানু, হাইপার হোস না। খুব বিপদে পড়ে তোকে এখানে এনেছি। তুই শুধু একবার আমার সাথে থাক। বাকিটা তুই নিজে বুঝতে পারবি। কেন তোকে এখানে ডেকেছি।
মায়া উত্তেজিত গলায় তৎক্ষনাৎ নাহুচ করে বলল…

‘ অসম্ভব! আমি এই মূহুর্তে এখানে থাকলে কী হতে পারে সেটা তুই জানিস রাফা। উনি আমাকে, তোকে, নাদিম ভাইকে—কাউকে ছাড়বে না। জানে মেরে ফেলবে সবাইকে। তাছাড়া তুই জানিস নাদিম ভাইয়ের চট্টগ্রামে আসা আর আমার মুখোমুখি হওয়া মানে কী হতে পারে। তুই জেনেশুনে আমার সাথে বেইমানি করেছিস রাফা, আমি তোকে বিশ্বাস করেছিলাম। এমনটা না করলেও পারতি।
মায়া চলে যেতে চাইলে রাফা দুহাতে মায়াকে টেনে বাঁধা দিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল…
‘ আমার কথাটা শোন মায়া প্লিজ। আমি তোকে মিথ্যা বলতে চাইনি, কিন্তু এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।
‘ আমি তোর কোনো কথা শুনব না। আমাকে ছাড় রাফা। আমার এখানে থাকা মানে সকলের জন্য বিপদ। উনি আমাকে জানে মেরে ফেলবে রাফা। প্লিজ আমাকে ছাড়! যেতে দে।
রাফা যখন কোনো ভাবে মায়াকে আটকাতে পারছিল না তখন হুট করে বলে উঠলো রাফা…

‘ আমি নাদিম ভাইকে পছন্দ করি মায়া। প্লিজ আমাকে হেল্প কর।
রাফার কথায় মায়া থমকে দাঁড়ানোর মতো ধাক্কা খেল। জোরাজুরি থামিয়ে শকট খাওয়ার মতোন করে বলল…
‘ তুই তো আসিফ ভাইকে পছন্দ করতি রাফা তাই না?
রাফা তৎক্ষনাৎ অসম্মতি জানিয়ে বলল…
‘ নাহ!
রাফার কথায় মায়ার ভিতরকার অস্থিরতা বাড়ল। মায়া ফের বলল…
‘ না মানে? আসিফ ভাই যে তোকে পছন্দ করে সেটার কী হবে?
মায়ার কথায় রাফার ভিষণ কান্না পেল। সে নিজের কান্না আটকাতে চেয়ে রাফা কান্নাভেজা গলায় বলল..
‘ আমি ম্যারিড মায়া।

রাফার কথায় মূহুর্তে যেন মায়ার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। রাফা ম্যারিড মানে? রাফা বিয়ে করে নিল অথচ মায়া জানে না। আল্লাহ, কখন করল রাফা এই বিয়ে? রাফা যে বিয়ে করল, সেটা কি আসিফ ভাই জানে? নাকি আসিফ ভাইয়ের সাথেই রাফার বিয়ে হয়েছে? রাফার যদি আসিফ ভাইয়ের সাথে বিয়ে হতো তাহলে রাফা কেন নাদিম ভাইকে পছন্দ করতে যাবে? তাছাড়া নাদিম ভাই কি রাফাকে পছন্দ করে নাকি একতরফা শুধু রাফাই পছন্দ করে নাদিম ভাইকে? মায়া নিজের চিন্তা ভাবনায় সে নিজেই গোলকধাঁধায় পড়ে গেল। অস্থির উত্তেজিত গলায় মায়া রাফাকে শুধাল…

‘ ম্যারিড মানে কাকে বিয়ে করেছিস তুই? তোর জামাই কে?
মায়ার কথায় রাফা তৎক্ষণাৎ উত্তর করতে পারল না। শুধু মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে নীরবে নিজের চোখের পানি ফেলল। রাফার বাঁধভাঙা কান্নায় মায়ার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল অজানা ভয়ে। শুকনো ঢোঁক গিলে মায়া ভয়ার্ত মুখে বলল…
‘ রাফা, তুই আমাকে অন্তত এটা বলিস না যে তুই নাদিম ভাইকে বিয়ে করেছিস। তাহলে আমার হার্ট অ্যাটাক কনফার্ম।
রাফা তখনো চুপ। মায়া রাফার নীরবতাকে সম্মতি ধরে নিয়ে আতঙ্কে মাথায় হাত দিয়ে বলল…
‘ আল্লাহ গো, শেষ! রাফা তোর পরিবার জানে তুই যে ম্যারিড? নাদিম ভাইকে বিয়ে করেছিস সেটা?
রাফা মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাল। যার অর্থ ওর পরিবার জানে না এই বিয়েটা সম্পর্কে। মায়া অস্থির উত্তেজিত গলায় আবারও প্রশ্নটা করে বলল….

‘ আর আসিফ ভাই? উনি জানে তোর যে বিয়ে হয়েছে সেটা?
রাফা তাতেও অসম্মতি জানাল—আসিফ জানে না বলে। মায়া উত্তেজিত ভঙ্গিতে আরও কিছু বলার আগেই এক পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে এল মায়ার কানে…
‘ কেমন আছো মায়া?
মায়া চমকে উঠে পাশে তাকাতে দেখতে পেল মায়াদের থেকে খানিকটা দূরে নাদিমকে দাঁড়িয়ে থাকতে। নাদিমকে দেখে মায়ার গলা শুকিয়ে এল রিদের ভয়ে। যদি রিদ জানে মায়া নাদিমের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে, তাহলে আজ মায়ার শেষ রক্ষা হবে না। মায়ার মনে হলো সে মস্ত বড় ভুল করেছে এখানে এসে—মায়ার উচিত হয়নি কাউকে না জানিয়ে এখানে আসাটা, বিশেষ করে রিদকে। মায়া নাদিমের কথার উত্তর না দিয়ে বরং নিজেই প্রশ্ন করে বলল…

‘ আপনি এখানে কেন এসেছেন ভাইয়া?
মায়ার কথায় তৎক্ষণাৎ উত্তর করল নাদিম। বেশ শান্ত কণ্ঠে বলল…
‘ তোমার সাথে দেখা করতে।
নাদিমের কথায় মায়া শক্ত গলায় বলল…
‘ আপনি ভুল করেছেন ভাইয়া। আপনার এখানে আসা উচিত হয়নি। বিশেষ করে আমার মুখোমুখি হওয়াটা ঠিক হয়নি। আমার স্বামী জানতে…
মায়ার কথা শেষ করতে না দিয়ে মাঝে নাদিম বলে উঠলো….

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৬৬

‘ তোমার সাথে বিয়ে তো আমারও হয়েছিল মায়া। সেক্ষেত্রে আমিও তোমার….
নাদিমকে বলতে না দিয়ে মায়া বেশ শক্ত গলায় শুধালো….
‘ আমার আপনার সাথে কোনো বিয়ে-টিয়ে হয়নি।
সেদিন আমি কবুল বলেনি। আমি শুরু থেকে রিদ খানের বউ ছিলাম, আছি, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকব, অন্তত যতদিন বেঁচে আছি ততদিন।

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৬৭ (২)