আযদাহা পর্ব ৪
সাবিলা সাবি
গভীর রাত।চারপাশে স্তব্ধ নিস্তব্ধতা,পৃথিবী নিজেও নিদ্রাহীন। মিস্টার চেন শিং এর বাড়ির চারদিকে সুনসান নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে।
এমন সময়,এক রহস্যময় আগন্তুক নিঃশব্দে প্রবেশ করে সেই বাড়িতে।
তার চলাফেরা বাতাসের মতো হালকা,কোনো শব্দ নেই,কোনো ছাপ নেই।
বাগান পেরিয়ে আগন্তুক এগিয়ে যায় মিস্টার চেন শিং-এর গোপন ল্যাবের দিকে।
তার চোখে রয়েছে অদ্ভুত দৃঢ়তা, সে ঠিক জানে,কীভাবে পৌঁছাতে হবে তার লক্ষ্যে।
ল্যাবের শক্তপোক্ত দরজার সামনে এসে দাঁড়ায় সে।
তার চোখের সবুজ মণি তীক্ষ্ণভাবে স্ক্যান করে দরজার পাসকোডের ডিসপ্লেকে।আর সাথে সাথে ডিসপ্লেতে ভেসে উঠে “এক্সেস গ্রান্টেড” মাথার ওপর লেড লাইটটা সবুজ আলো প্রদর্শন করে আশ্চর্যজনকভাবে, দরজা ধীরে ধীরে খুলে যায়, মনে হলো সেই আগন্তুকের উপস্থিতি এখানে আগে থেকেই জানা ছিল।
ল্যাবের ভিতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে,কোনো সিকিউরিটি অ্যালার্ম বাজে না,কোনো সতর্ক সংকেত দেয় না—সবকিছুই তার জন্য প্রস্তুত ছিল।
রহস্যময় আগন্তুক ধীরে ধীরে ল্যাবের ভেতরে পা রাখে।
তার উপস্থিতি চারপাশের বাতাসকে আরও ভারী করে তোলে অজানা কিছু ঘটতে চলেছে।
সুনসান নিস্তব্ধতার মধ্যে সে এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে,চারপাশের প্রতিটি সূক্ষ্ম পরিবর্তনকে অনুভব করতে চেষ্টা করে।
ল্যাবের ভিতরে নিঃশব্দে পা ফেলে, আগন্তুক এগিয়ে যায় সেই বিশাল আকৃতির রুমের দিকে।
সেই মুহূর্তে,তার হাতে থাকা স্মার্ট ঘড়িটি হঠাৎই সক্রিয় হয়ে ওঠে, নীলাভ আলো ঝলমল করে জ্বলে ওঠে স্ক্রিনে।
ঘড়ির স্ক্রিনে একটা সিগন্যাল স্পষ্ট হয়ে ওঠে,আর সঙ্গে সঙ্গে একটি বার্তা ভেসে ওঠে: “Aethirion is in this room.” (এথিরিয়ন এই রুমেই অবস্থিত)
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই তথ্য পাওয়া মাত্রই আগন্তুকের চোখে ধরা পড়ে একটুকরো প্রজ্ঞা।
রুমের ভারী দরজার সামনে থেমে,তার মুখে এক রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে।
সে জানে,সে এখন তার লক্ষ্যের খুব কাছাকাছি—এথিরিয়ন,সেই ড্রাগন, তার একমাত্র ভাই,এখানেই বন্দী।
রহস্যময় আগন্তুক রুমের দরজার দিকে তাকায়,তার হাতের স্মার্ট ঘড়িতে আবারো একবার নজর বুলিয়ে নেয়। সে জানে,এবার তার সামনে অপেক্ষা করছে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ,যা তাকে তার লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করবে অথবা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে।
কিন্তু সে থামে না। সামনে যা-ই থাকুক না কেন, সে প্রস্তুত। সবকিছু নির্ভর করছে এই মুহূর্তের উপর—এথিরিয়নকে উদ্ধার করা তার একমাত্র লক্ষ্য।
আগন্তুক হাত দিয়ে তুড়ি বাজাতেই রুমের ভারী দরজাটি মৃদু গুঞ্জন তুলতে তুলতে খুলে যায়। সে ধীরে ধীরে সেই রুমে প্রবেশ করে,চোখের কোণায় প্রতিটি সূক্ষ্ম পরিবর্তন ধরা পড়ছে। চারপাশে রয়েছে শুধু বিভিন্ন ডিভাইস আর যন্ত্রপাতি,দেখে বোঝা যাচ্ছে জায়গাটা কোনো পরীক্ষাগারের অংশ।
কিন্তু আশেপাশে আর কিছু নেই—কোনো ড্রাগনের উপস্থিতির আভাসও নেই।
আগন্তুকের ভ্রু কুঁচকে ওঠে। সে সন্দেহাতীতভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, আর তখনই তার দৃষ্টি পড়ে একটি গোপন দরজার ওপর। ওই দরজার অবয়বটাই বলে দিচ্ছে,
এটা একটি সিক্রেট রুমের প্রবেশপথ।
আগন্তুক সেই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তার হাতের স্মার্ট ঘড়িটি সাথে সাথেই সিগন্যাল দিতে শুরু করে, একটানা অনবরত। আগন্তুকের চোখে এক চিলতে সংকল্প ফুটে ওঠে। সে জানে, এথিরিয়ন ঠিক এই রুমের ভেতরেই বন্দী।
এই রুমের ওপারে রয়েছে তার আসল লক্ষ্য, আর যে কোনো মূল্যে তাকে এই রুমে প্রবেশ করতে হবে।
সে এক মুহূর্তের জন্যও দ্বিধা না করে সেই সিক্রেট রুমের পাসকোডের ডিসপ্লের সামনে এগিয়ে যায়।
তার চোখের মণি তীক্ষ্ণভাবে স্ক্যান করে ডিসপ্লেটিতে।
কিন্তু এইবার কিছু অস্বাভাবিক ঘটে। দরজাটা কোনো সাড়া দেয় না, কোনো গুঞ্জনও ওঠে না। রহস্যময় আগন্তুক কিছুটা চমকিত হয়, যদিও তার মুখে তা প্রকাশ পায় না। তার চোখে এক মুহূর্তের জন্য সন্দেহের ছায়া ভেসে ওঠে।
দরজা স্থির, কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এটা যেন তাকে চ্যালেঞ্জ করছে, তার ধৈর্য্য পরীক্ষা করছে।
আগুন্তক পুনরায় পাসকোড স্কেন করার প্রচেষ্টা চালায় এবারও ব্যার্থ হয়।
ডিসপ্লেতে এখনো ভেসে উঠেছে “অ্যাক্সেস ডিনাইড”
এই বার্তা দেখেই আগন্তুকের মুখের রহস্যময় হাসি মিলিয়ে যায়, আর তার চোখে ফুটে ওঠে দমিত ক্রোধের তীব্র ঝলক। মুহূর্তেই তার মন ভরে ওঠে এক ভয়ানক রাগে। সবকিছু ধ্বংস করে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছা তাকে গ্রাস করতে শুরু করেছে। তার শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে আগুন জ্বলে উঠছে, মনে হচ্ছে এখনই এই পুরো ল্যাবরেটরিটা জ্বালিয়ে দিতে পারলে সে শান্তি পেত।
রাগে ফুঁসতে থাকা আগন্তুক এবার আর অপেক্ষা না করে দরজাটায় সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। তার মনের ভেতর একটাই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল—যেভাবেই হোক, তাকে এই রুমে ঢুকতেই হবে।
কিন্তু ঠিক যখন তার হাত দরজার পৃষ্ঠ স্পর্শ করে,এক মুহূর্তের মধ্যে ঘটল অপ্রত্যাশিত কিছু আগন্তুক প্রচণ্ড জোরে ছিটকে পড়ল পেছনে, অদৃশ্য কোনো শক্তি তাকে ঠেলে দিলো। তার পুরো শরীরটা বিদ্যুতের শকের মতো প্রবল আঘাতে কেঁপে উঠল।
ধাক্কাটা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে আগন্তুক মেঝেতে পড়ে গেল, শরীরের প্রতিটি পেশী কুঁকড়ে উঠতে লাগলো যন্ত্রণায়। তার মুখ থেকে একটা দম বন্ধ করা চিৎকার বেরিয়ে এল, আর সে বুঝতে পারল—এই দরজা জোর করে ভাঙা সম্ভব নয়।
সাথে সাথেই আগন্তুক উঠে দাঁড়ায়,শরীরের ব্যথা উপেক্ষা করে দ্রুত নিজের মানসিক দৃঢ়তা ফিরিয়ে আনে। এবার সে বুঝতে পারে, এই রুমে সাধারণ সিকিউরিটির বাইরে অন্য কিছু আছে, এমন কিছু যা এক ড্রাগনকেও দমিয়ে দিতে পারে। এই দরজাটা খোলা এতো সহজ হবে না, এর পেছনে আরও গভীর কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সে তার চোখের মনি দিয়ে রুমের ভেতরের দৃশ্য স্ক্যান করতে শুরু করে। এইবার তার লক্ষ্য দরজার ওপাশে কী ধরনের সিকিউরিটি সিস্টেম সক্রিয় আছে, তা খুঁজে বের করা।
স্ক্যানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে রুমের ভেতরের জটিল সুরক্ষা ব্যবস্থা তার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করে।
যখন আগন্তুক তার চোখের মণির সাহায্যে রুমের ভেতরের দৃশ্য স্ক্যান করে, তখন মুহূর্তেই তার ভাবমূর্তি বদলে যায়। স্ক্যানের ফলস্বরূপ, রুমের ভেতরে সে যে দৃশ্য দেখতে পায়, তা তার মনের গভীরে ধাক্কা দেয়।
ভেতরে থাকা এথিরিয়ন স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান—যদিও তার মানব রূপে। কিন্তু তার শরীরের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। ক্ষতবিক্ষত, দ*গ্ধ আর বিবর্ণ, এথিরিয়নের মানব রূপ মাটিতে পড়ে আছে। তার দেহের বিভিন্ন অংশে রক্তা*ক্ত চিহ্ন, আর তার মুখে এক ধরনের কষ্টের ছাপ ফুটে উঠেছে।
এই দৃশ্য দেখে আগন্তুকের মুখে হতবাক প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। সে জানে,এথিরিয়নকে এমন অবস্থায় দেখে তার অভিযান আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এখন তাকে কেবল দরজাটি ভাঙতেই হবে না, বরং এথিরিয়নের জীবনও রক্ষা করতে হবে।
এথিরিয়নের অবস্থা দেখে আগন্তুকের মনে গভীর উদ্বেগের জন্ম হয়। যদি এভাবে আরও কিছুদিন ধরে এথিরিয়ন এই অবস্থায় থাকে, তবে সে তার ড্রাগন সত্তাকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেলবে।
তাদের জাতির জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। ড্রাগন সত্তার অভাব এথিরিয়নের শক্তি আর ক্ষমতাকে শেষ করে দিতে পারে, এমনকি তার জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
এই মুহূর্তে তার লক্ষ্য শুধু এথিরিয়নকে মুক্ত করা নয়, বরং তাকে দ্রুত তার ড্রাগন সত্তা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করা।
পাসকোডের ডিসপ্লে স্ক্যান করার পরেও কোনো তথ্য প্রদর্শিত না হওয়ায় আগন্তুকের মন উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। তার চিন্তা দ্রুত গতিতে চলতে থাকে, আর সে সিদ্ধান্ত নেয় দরজার চারপাশে আরও গভীরভাবে স্ক্যান করার জন্য।
দরজার চারপাশে স্ক্যান করতে গিয়ে সে দেখতে পায়, রুমের দরজার আশপাশে অদ্ভুত ধরনের ক্যামিকেল ধারা তৈরি করা হয়েছে। এই ক্যামিকেল বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে শুধুমাত্র মানুষই এটি স্পর্শ করতে পারে—আর কোনো প্রাণীর জন্য এটি সম্ভাব্য বিপজ্জনক বা অতিক্রম করা অসম্ভব।
এই সিকিউরিটি সিস্টেম শুধুমাত্র সাধারণ নিরাপত্তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল আর শক্তিশালী। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হলে তাকে কৌশলী হতে হবে।
আগন্তুকের মস্তিষ্কে হঠাৎ করে একটি ধারণা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে বুঝতে পারে যে এই সিক্রেট রুমের দরজাটি আসলে “সেরাফিক ডিটারেন্ট”* নামের কেমিক্যাল দ্বারা সুরক্ষিত। এই রাসায়নিকটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা কিছু বিশেষ জীব বা প্রাণীর জন্য বিপজ্জনক।
এই কেমিক্যালটি এক ধরনের ‘রেডিওঅ্যাকটিভ রিডিং’ তৈরি করতে পারে,যা অন্যান্য প্রাণীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এতে করে দরজার আশেপাশে অতিক্রম করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে ওঠে।
অতিরিক্তভাবে, দরজার পাসকোড ডিভাইসটি শুধুমাত্র বায়োমেট্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে খুলতে সক্ষম,যা একমাত্র মানুষের জীববৈজ্ঞানিক সনাক্তকরণকে গ্রহণ করে।এই সমন্বয়ে,আগন্তুকের জন্য দরজা খোলার পথ অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে।
অত্যন্ত রেগে উত্তেজিত,আগন্তুক চারপাশের ডিভাইসগুলোকে ভাঙচুর করতে শুরু করে। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি ফেটে যায়,স্ক্রীনগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে, আর মেটাল টুকরো মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
তারপর,সে দ্রুত কম্পিউটারের সামনে এসে একটি বার্তা টাইপ করতে শুরু করে। তার হাত চলতে থাকে, আর কিছুক্ষণ পরেই একটি বার্তা স্ক্রীনে উঠে আসে।বার্তাটি থ্রেড জাতীয়,অর্থাৎ স্পষ্টভাবে একটি হুমকির চিহ্ন।
“মিস্টার চেন শিং”
আপনার সিক্রেট রুমের সুরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙতে আমি কিছুতেই পিছপা হব না। আপনার প্রযুক্তির দুর্বলতা আমি খুঁজে পেয়েছি।
এথিরিয়ন মুক্তি পাবে,আর যে কোনো বাধা অতিক্রম করা হবে। আপনার প্রতিরোধ যতই শক্তিশালী হোক, আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
— “আপনার অনিচ্ছাকৃত আগুন্তক”
পরের দিন সকালে সূর্যের প্রথম আলোর রশ্মি ফিওনার ঘরের জানালা দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ঘুমের তাড়াতাড়ি প্রভাব কাটিয়ে সে চোখ মেললো।
তাজা বোধ করতে করতে, সে দ্রুত বিছানা থেকে ওঠে আর ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। ব্রেকফাস্টের জন্য স্নিগ্ধভাবে প্রস্তুত হয়ে, ফিওনা সুস্বাদু নাস্তা শেষ করে।নাস্তা শেষ করার পর, সে পছন্দসই পোশাক পরিধান করে সে আজ সকালে চিনো প্যান্ট আর সাদা শার্ট পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়।
গাড়ির দরজা খুলে, সে ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রাইভার একটি মৃদু হাসি দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানায়। ফিওনা গাড়ির সিটে বসে,গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর জন্য প্রস্তুত।গাড়ি শহরের ব্যস্ত রাস্তায় প্রবাহিত হতে থাকে, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলো দূর থেকে ক্রমশ ঘন হতে থাকে।
গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটে এসে থামে,আর ফিওনা গাড়ি থেকে নেমে পা রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে। তার দৃষ্টিতে স্পষ্টভাবে এক নতুন দিনের জন্য প্রস্তুতির চিহ্ন দেখা যায়।
মিস্টার চেন শিং ল্যাবে প্রবেশ করতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পুরো ল্যাবের অবস্থা দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান—ডিভাইসগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, স্ক্রীনগুলো চূর্ণবিচূর্ণ, আর ক্যাবল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
চেন শিং কিছুক্ষণ স্তম্ভিতভাবে দাঁড়িয়ে থাকে,তার চোখ একে একে ল্যাবের ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলোর দিকে ঘোরায়। এরপর,তার দৃষ্টি কম্পিউটারের স্ক্রীনে থাকা বার্তায় গিয়ে পড়ে। বার্তাটি সবার জন্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, তিনি জানেন—ভেনাসের ড্রাগনের আসন্ন সংকট আর তাদের পৃথিবীতে আসার খবর।
বার্তাটি পড়ে চেন শিংয়ের মুখমণ্ডলে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি বুঝতে পারেন যে,তাদের গোপনীয়তা আর নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে,আর পৃথিবীতে আগুন্তকরা এসে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতি তার জন্য এক নতুন সংকট তৈরি করেছে,যা তিনি নিরসনে এখন দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বার্তাটি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছিল যে, আগুন্তক পুনরায় আসতে পারে আর তার উপস্থিতি ল্যাবের নিরাপত্তাকে চরম হুমকিতে ফেলবে।
তিনি দ্রুত বুঝতে পারলেন যে, এই বিপদ কেবল ল্যাব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়; ফিওনার জীবনও এতে হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
তার মস্তিষ্ক দ্রুত কাজ করতে শুরু করলো।তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন,ফিওনাকে এখনই এই বাড়ি থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।তিনি জানতেন, তার প্রিয় নাতনি যদি এই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে,তবে তিনি নিজকে ক্ষমা করতে পারবেন না।
চেন শিং দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ করলেন।তিনি ফিওনাকে কোন একটি সুরক্ষিত স্থান যেমন গোপন আশ্রয়ে বা নিরাপদ আবাসিক এলাকায় স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করবেন। তার মনে ছিল দৃঢ় সংকল্প—ফিওনার জীবন যেন কোনোভাবে বিপন্ন না হয়। তাকে সুরক্ষিত রাখতে,যতদূর সম্ভব এই বিপদ থেকে তাকে দূরে সরিয়ে নিতে হবে।
ফিওনা বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথেই তার চোখে পড়ল মিস্টার চেন শিং সোফায় বসে আছেন। তার মুখাবয়বে চিন্তার চিহ্ন স্পষ্ট—চোখে উদ্বেগের ছাপ আর মলিন চেহারা। তিনি গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত।
ফিওনা নিজের কাঁধ থেকে ব্যাগটি নামিয়ে সোফায় বসে গেলেন, চেন শিং-এর পাশে গিয়ে।
“গ্ৰান্ডপা কী হয়েছে? তুমি এত চিন্তিত কেন?” উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করলো।
চেন শিং তার দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এরপর ফিওনার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে বললেন,
“ফিওনা, মাই ডিয়ার! আমাদের এখন দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তোমাকে এখনই এই বাড়ি থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে।”
ফিওনার মুখে চিন্তার ছায়া, “কিন্তু কেন? হঠাৎ কি এমন হয়ে গেলো যে আমাকে নিরাপদ স্থানে থাকতে হবে?”
চেন শিংয়ের মুখে দৃঢ়তা, “এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তোমার নিরাপত্তা। কিছু বিপদ আসন্ন, আর তোমার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে তোমাকে এই বাড়ি থেকে সরিয়ে নিতে হবে, তুমি আমার ওপর ভরসা করোনা? তুমি জানো না তোমার গ্ৰান্ডপা তোমায় জন্য যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটা তোমার একান্ত মঙ্গলের জন্যই।”
ফিওনা অবাক হলেও,তার গ্ৰান্ডপার কথা শুনে গভীরভাবে চিন্তা করতে লাগলো।
অবশেষে সে নীরব সম্মতি জানিয়ে বললো,
“ঠিক আছে,গ্ৰান্ডপা। আমি প্রস্তুত। কোথায় যেতে হবে আমাকে?”
মিস্টার চেন শিং গভীর চিন্তায় ডুবে থেকে ফিওনার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমি ঠিক করেছি, আজকের মধ্যে তুমি তোমার পিকিং ইউনিভার্সিটির ডরমিটরিতে (হলরুমে) থাকবে। আমি সব ব্যবস্থার করে ফেলেছি। তুমি তোমার ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও।
মিস ঝাং ফিওনার জন্য পানি নিয়ে আসার সময় কথাগুলি শুনে অবাক হয়ে যান। ফিওনা কান্নারত হয়ে মিস্টার চেন শিংএর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “গ্র্যান্ডপা, আমি তোমাকে আর মিস ঝাংকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো?”
চেন শিং তার নাতনির দিকে গভীরভাবে তাকালেন, আর তার চোখে মায়ার জল জমে উঠল। “ফিওনা, আমি জানি এটা তোমার জন্য খুবই কঠিন, কিন্তু তোমার নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তুমি যদি এখানে থাকো, তাহলে বিপদ হতে পারে।”
মিস ঝাং পানির বোতল রেখে মনঃপূতভাবে এগিয়ে এসে ফিওনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “ফিওনা মামনি, তুমি জানো আমরা সবসময় তোমার পাশে আছি। তোমার নিরাপত্তা আমাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
ফিওনার চোখে জল আরও বেশি গড়িয়ে পড়ল,কিন্তু সে একে অপরের কাছে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
“আমি তোমাদের খুব মিস করব।।”
মিস্টার চেন শিং আর মিস ঝাং তার চোখের জল মোছার জন্য তার দিকে সহানুভূতির চোখে তাকিয়ে ছিলেন,তাদের ভালবাসা আর উদ্বেগ ফিওনার হৃদয়ে পৌঁছে গেলো।
অবশেষে, ফিওনা তার ব্যাগপত্র গুছিয়ে তৈরি হলো। একান্তে ঘরের দিকে ফিরে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে নামল। নেমে এসে দেখল মিস ঝাং সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, চোখেমুখে এক অদ্ভুত শূন্যতা। দরজার বাইরে, মিস্টার চেন শিং গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছেন,তার মুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট।
সে তার লাগেজটা হাত থেকে ছেড়ে মিস ঝাংয়ের দিকে এগিয়ে গেল। জড়িয়ে ধরে সে কান্নায় ভেঙে পড়ল। মিস ঝাংও নিজেকে সামলাতে পারলেন না, চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
সে কান্নারত কণ্ঠে বলল, “মিস ঝাং,আমি আপনাকে অনেক,অনেক মিস করবো। কী থেকে কী হয়ে গেল, বুঝতেই পারলাম না। এমন দিন আসবে, কোনোদিনও কল্পনা করিনি।”
মিস ঝাংয়ের কণ্ঠ কাঁপতে কাঁপতে বের হলো, “আমিও তোমাকে খুব মিস করবো, ফিও মামনী। কিন্তু মনে রেখো, তোমার ভালো থাকা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
ফিওনা মিস ঝাংকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল, এই মুহূর্তটাই তাদের জীবনের শেষ সান্ত্বনা।
বাইরে অপেক্ষায় থাকা মিস্টার চেন শিং গাড়ির ভেতর থেকে এই দৃশ্যটি দেখছিলেন। তার চোখেও জল জমে উঠল,কিন্তু তিনি মুখ শক্ত করে জানতেন যে, এটা ফিওনার সুরক্ষার জন্যই দরকার।
ফিওনা শেষবারের মতো মিস ঝাংয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়াল। গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দের সঙ্গে সঙ্গে যেন তার জীবন থেকে একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।
গাড়ি চলছে,আর সে আপনমনে বাইরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। রাস্তার দুই পাশের দ্রুত পাল্টে যাওয়া দৃশ্যগুলোও তার চিন্তাগুলোর প্রতিফলন। অনেক কিছুই ভাবছে সে—নানান স্মৃতি, ভাবনা, আর এক অজানা ভবিষ্যতের উদ্বেগ সবকিছুই তার মনের মধ্যে ঝড় তুলছে।
মিস্টার চেন শিং একবার আড়চোখে ফিওনার দিকে তাকালেন। তার দৃষ্টিতে উদ্বেগ আর স্নেহের মিশ্রণ। তিনি জানেন, এই মুহূর্তটা ফিওনার জন্য কতটা কঠিন।
তিনি আস্তে করে ফিওনার মাথায় হাত রাখলেন,যেন বলতে চাইলেন, “আমি তোমার পাশে আছি।”
ফিওনা ধীরে ধীরে তার গ্ৰান্ডপার দিকে তাকিয়ে মৃদু একটা হাসি দিল। কোনো কথা না বলে সে মাথা তুলে মিস্টার চেন শিংয়ের কাঁধে রেখে দিল। এভাবে সে তার গ্ৰান্ডপার স্নেহে সান্ত্বনা খুঁজে পেল, এই মুহূর্তে পৃথিবীর সমস্ত কষ্টের মাঝেও একমাত্র এই আশ্রয়ই তার জন্য যথেষ্ট।
গাড়ি চলতে থাকল, আর সে তার গ্ৰান্ডপার কাঁধে মাথা রেখে নিঃশব্দে বাইরের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে রইল,তার নতুন জীবনের পথে পা বাড়ানোর প্রস্তুতি নিলো।
গাড়িটি ধীরে ধীরে থামল পিকিং ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গণে। ফিওনা আর মিস্টার চেন শিং গাড়ি থেকে নামলো।আশেপাশে একটি গভীর নীরবতা বিরাজমান। দু’জনেই সোজা এগিয়ে গেলেন প্রফেসরের রুমের দিকে। দরজার সামনে এসে ফিওনা একটু পেছনে দাঁড়িয়ে রইল, মিস্টার চেন শিং একাই ভেতরে প্রবেশ করলেন। ফিওনার হৃদয় ধাক্কা খাচ্ছে এক অজানা আশঙ্কায়। বাইরে অপেক্ষা করতে করতে তার মনে নানা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর, মিস্টার চেন শিং প্রফেসরের সাথে কথা শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন। তার পিছনে প্রফেসরও বের হয়ে এলেন। প্রফেসর হাসিমুখে ফিওনার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ফিওনা, তুমি তোমার কক্ষে যাও। আজ থেকে তুমি শাওইয়ুয়ান ডরমিটরিতে থাকবে। ৫ নম্বর রুম তোমার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।”
ফিওনা একটু চমকে উঠল। শাওইয়ুয়ান ডরমিটরি! এটি তো অন্যতম আধুনিক ডরমিটরি। তার জন্যই বরাদ্দ! মনের মধ্যে খানিকটা স্বস্তি আসলেও চেন শিংকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট তাতে কমেনি। সে মৃদু কণ্ঠে মিস্টার চেন শিং আর প্রফেসরকে বিদায় জানিয়ে ডরমিটরির দিকে পা বাড়ালো।
বিদায়ের মুহূর্তে, মিস্টার চেন শিং প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“প্রফেসর! ফিওনা আমার একমাত্র নাতনী। ও যেন কোনো রকম অসুবিধায় না পড়ে। আপনি দেখবেন,ঠিক আছে?”
প্রফেসর আশ্বস্তভাবে মাথা নেড়ে বললেন,
“নিশ্চয়ই,মিস্টার চেন শিং। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। ফিওনার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা থাকবে।”
ফিওনা ততক্ষণে বেশ কিছুটা দূরে চলে গেছে। তার অন্তরে মিশ্র অনুভূতির ঝড় বয়ে যাচ্ছে—একদিকে নতুন পরিবেশের উত্তেজনা, অন্যদিকে মিস্টার চেন শিংকে ছেড়ে যাওয়ার বেদনা। কিন্তু তার সামনে এখন এক নতুন অধ্যায়, শাওইয়ুয়ান ডরমিটরির ৫ নম্বর রুমের দিকে।
শাওইয়ুয়ান ডরমিটরির ৫ নাম্বার রুমটি সাদামাটা কিন্তু আরামদায়ক স্থান। রুমটি হালকা রঙের দেয়াল আর আধুনিক আসবাবপত্রের সাথে সাজানো।এ খানে দুটি একক বিছানা রয়েছে, প্রতিটি বিছানার পাশে একটি ছোট কাঠের টেবিল। একটি বড় জানালা রুমটিতে প্রাকৃতিক আলো প্রবাহিত করে আর বাইরের সবুজ পরিবেশের দৃশ্য দেখায়।
রুমটিতে একটি স্টাডি ডেস্ক, একটি বুকশেলফ আর একটি আলমারি রয়েছে, যা স্টুডেন্টদের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু রাখতে সুবিধাজনক। নরম পর্দা, একটি ছোট কার্পেট আর কয়েকটি গাছপালা রুমটিতে আরামদায়ক পরিবেশ যোগ করেছে।মোটকথা,রুমটা ফিওনার থাকার জন্য একটি সুস্থ ও সুন্দর স্থান হবে।
ফিওনা লাগেজ হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে শাওইয়ুয়ান ডরমিটরির ৫ নাম্বার রুমে প্রবেশ করলো। ঘরের ভেতরে ঢুকতেই সে লক্ষ্য করল,রুমটি পরিপাটি আর পরিচ্ছন্ন।
ফিওনার চোখ চলে গেল পাশের বেডে,যেখানে একটি মেয়ে বসে তার লাগেজ গোছাচ্ছিল। মেয়েটি ছিল ফিওনার ক্লাসমেট লিয়া। তাকে দেখে ফিওনার মুখে একটি মৃদু হাসি ফুটে উঠল।
“ওহ, তুমি এখানে!, ভালো লাগছে তোমার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে।”
লিয়া হাসিমুখে উত্তর দিল, হ্যাঁ, আমি এখানেই থাকি। তুমি কেমন আছো? আসো, আমি তোমার লাগেজ কোথায় রাখতে হবে দেখিয়ে দিই।”
ফিওনা মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পেলো। লিয়া তার লাগেজের ব্যবস্থা করতে সাহায্য করল আর দুইজনেই রুমে নতুন পরিবেশে নিজেদের স্থান করে নিলো।
গভীর রাত,পুনরায় সেই অজানা পাহাড়ের গুহায় ল্যাবের সামনে বসে আছে সেই আগুন্তক।তার সামনে কম্পিউটারের স্ক্রিনে আরেকটি ল্যাবের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ভিডিও কল চলছে।
“ড্রাকোনিস!” আগুন্তক ভঙ্গুর কণ্ঠে বললো,
“আমি ব্যর্থ হয়ে ফিরেছি।আমি পারিনি আমার ভাই এথিরিয়নকে ফিরিয়ে আনতে।ওর অবস্থা খুবই গুরুতর।এভাবে কিছুদিন থাকলে ও তার সর্বস্ব শক্তি আর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।”
কম্পিউটারের স্ক্রিনে,ড্রাকোনিসের মুখ চিন্তা আর উদ্বেগে ভরা। “কিন্তু তুমি ব্যার্থ হলে কিভাবে? তুমি তো ভেনাসের সর্বশক্তিমান ড্রাগন প্রিন্স”
আগুন্তক গভীর হতাশার সঙ্গে বললো, “আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু সিকিউরিটি ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী ছিল। আমি সেরাফিক ডিটারেন্ট নামের একটি রাসায়নিক দেখেছি,যা আমার জন্য তো বটেই,অন্য কোনো ড্রাগনের জন্যও বিপজ্জনক। আমাদের এখন অন্য কোনো পরিকল্পনা নিতে হবে।”
ড্রাকোনিস মাথা নেড়ে বললো, “তুমি ওখান থেকে ফিরে এসেছো, এখন আমাদের দ্রুত কিছু করার প্রয়োজন। তুমি যা পারো তা করবে,কিন্তু এথিরিয়নের জন্য সময় খুবই কম।”
আগুন্তক কলটি কেটে দিলো।
গভীর সুনসান নীরবতা গুহার অন্ধকারে আগুন্তক কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছু টাইপ করছিল।হঠাৎ স্ক্রিনে একে একে কিছু ছবি ভেসে উঠল। প্রথম ছবিটি ছিল মিস্টার চেন শিং-এর, দ্বিতীয় ছবিটি ছিল ওয়াং লির,আর তৃতীয় ছবিতে একটি তরুণীর ছবি দেখা গেল।
তরুণীর ছবিটি দেখে আগুন্তক কিছুটা অবাক হলো। এতক্ষণ সে ল্যাবে কার কার আগমন ঘটিছিলো এথিরিয়ন বন্দি থাকা অবস্থায় তা বিশ্লেষণ করছিল,আর এই তরুণীর উপস্থিতি তার পরিকল্পনায় নতুন একটি ধাঁধা যোগ করল।
“এই মেয়েটি কে?” আগুন্তক নিজের মনে প্রশ্ন করল, তার চিন্তার লাইনটি এবার নতুন দিক নিতে শুরু করল।
ছবিটি ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে স্ক্রিনে বিস্তারিত তথ্য ভেসে উঠলো। আগুন্তক মৃদু কণ্ঠে বলল, “এলিসন ফিওনা।”
তথ্যের বিশ্লেষণে আগুন্তক বুঝতে পারলো যে এই তরুণী,ফিওনা,ল্যাবের সিক্রেট প্রকল্পের সাথে কোনোভাবে জড়িত।তার উপস্থিতি এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, আর তার সম্পর্কিত তথ্য আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল।
পুরোপুরি ডিটেইল বের করার সাথে সাথে,
আগুন্তক গম্ভীরভাবে চিন্তা করতে করতে বলল, “মিস্টার চেন শিং-এর একমাত্র নাতনি পিকিং ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে।পেয়েছি আমি আমার শিকার।এবার তার মাধ্যমেই আমি আমার ভাইকে উদ্ধার করবো।”
আগুন্তক লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেমে ফিওনার অবস্থান সনাক্ত করার সাথে সাথেই তার মুখে একটি সন্তুষ্টির হাসি ফুটে উঠল।স্ক্রিনে দেখা গেল,ফিওনার অবস্থান পিকিং ইউনিভার্সিটির ডরমিটরিতে।আগুন্তক ঠোঁট প্রসারিত করে হাসল,চোখে মুখে এক অদ্ভুত উল্লাস প্রকাশ পেল।
“মিস্টার চেন শিং, এবার তোমার আদরের নাতনীই খুলবে ওই সিক্রেট রুমের দরজাটা।যদি আমি আমার পরিকল্পনায় সফল হতে না পারি,তবে আমি ড্রাগন প্রিন্স জ্যাসপার অরিজিন নই।”
তার এই কথাগুলো দেয়ালের উপর ধ্বনিত হয়ে ফিরে আসলো,আকাশ ও বাতাসও তার সংলাপে সাড়া দিলো।এক ঝাঁকুনি হাওয়ার গর্জনে চারপাশ কেঁপে ওঠে।
ফিওনা পড়ার ডেস্কে বসে ছিল।খোলা জানলা দিয়ে প্রবাহিত দমকা হাওয়া তার মুখে লাগল,যা অস্বাভাবিকভাবে তীব্র আর ঠান্ডা ছিল।এই হাওয়ার মধ্যে এমন কিছু ছিল যা তার অজান্তেই তার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টির আগাম বার্তা দিলো।মনে হলো, এই অদ্ভুত হাওয়া কিছু বড় পরিবর্তনের অথবা বিপদের সংকেত বহন করছে,যার প্রভাব তার জীবনে শিগগিরই স্পষ্ট হবে।
রাতের অন্ধকারে, ফিওনা আর লিয়া ঘুমিয়ে পড়ার পরেও ফিওনা সঙ্গমতেও ছিল না। সে জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়ে,গভীর মনোযোগের সাথে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।আকাশে বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন তারার মাঝে ভেনাস খুঁজে পাওয়া এক কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার মনে হঠাৎই একটা অস্বস্তির অনুভূতি ছাড়া,নিজের অজান্তেই সে নিজের ভিতরের অস্থিরতা অনুভব করছিল।
আযদাহা পর্ব ৩
জ্যাসপার তার স্মার্ট ঘড়িটি নিয়ে একটা নতুন কৌশল গ্রহণ করল। সে বিশেষ একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ফিওনার ছবির সাথে ঘড়ির সংযোগ স্থাপন করল।এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ঘড়িটি ফিওনার সামনের দিকে গেলে একটি সিগন্যাল দিবে।
অ্যাপ্লিকেশনটি ঘড়ির ব্লুটুথ ফিচারের মাধ্যমে ফিওনার ছবি বিশ্লেষণ করে,আর যখনই ফিওনা তার দৃষ্টির আওতায় আসবে,ঘড়িটি একটি বিশেষ সংকেত পাঠাবে যা জ্যাসপারকে তার উপস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করবে।এটি একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা তাকে বাস্তব সময়ের তথ্য সরবরাহ করবে,ফিওনার অবস্থান নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে,জ্যাসপার নিশ্চিত হতে পারবে যে তার লক্ষ্য ফিওনা কোথায় রয়েছে,আর সে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে।