প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৩

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৩
Drm Shohag

মাইরা পিটপিট করে চেয়ে রইল ইরফানের পানে। ইরফানের ব্যবহার তার মাথার উপর দিয়ে গেল। ইরফান গটগট পায়ে এগিয়ে যায়। সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে পা গুটিয়ে নিল। নিচে তার আত্মীয়স্বজন সবাই আছে। সবার আগে চোখে পড়ল জাহারাকে। মাইরা তার ঘরে না থাকায় মাইরাকে অপমান করে বলা কথাগুলো ইরফানের কানে বেজে উঠলো। কিছু একটা মাথায় খেলে গেল। মাইরাকে অন্য ঘরে রাখলে বাইরের মানুষ মাইরাকে অপমান করার সুযোগ হাত ছাড়া করবে না। ব্যাপারটায় ইরফান চরম বিরক্ত হলো। দ্রুত পায়ে উল্টো ঘুরে মাইরার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
মাইরা ইরফানের দিকেই চেয়ে ছিল। ইরফানকে ফেরত আসতে দেখে অবাক হয়। ইরফান মাইরার বাম হাত তার হাতের মুঠোয় নেয়। এরপর পকেট থেকে চাবি বের করে তার ঘরের দরজা খুলে মাইরাকে নিয়ে ঘরের ভেতরে যায়। মাইরা অবাক হয়ে শুধু ইরফানের কর্মকাণ্ড দেখছে। ইরফান ঘরের দরজা আটকে দিল। এরপর মাইরার কাছে এসে দু’হাতে মাইরার গাল আঁকড়ে ধরে মৃদুস্বরে বলে,

“তুমি যাস্ট এই ঘরেই থাকবে। ওকে?”
মাইরা বাকরুদ্ধ হয়ে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। লোকটা কি পা’গ’ল হয়ে গেল? কখন কি বলে নিজেই জানেনা যেন।
ইরফান মাইরার চোখের দিকে তাকায়। মাইরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“আপনি যে বললেন পা কাটবেন?”
ইরফান মাইরার পুরো মুখে দৃষ্টি বুলিয়ে নেয়। মেয়েটার উপর ইদানীং রাগ হয় না তার। রাগ হয় তার বাবার উপর। প্রচণ্ড রাগ।
মাইরার বোকা বোকা প্রশ্ন ইরফান চুপ করে হজম করে। মাইরার দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে মৃদুস্বরে বলে,
“হুম কাটবো, তবে ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বেরোলে।”
মাইরা চোখের পাতা ফেলে ফেলে ইরফানের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই লোকটা কেমন যেন। মাইরা একদমই বুঝতে পারে না। সেকেন্ডে সেকেন্ডে রঙ পাল্টায়।
ইরফান মাইরার মাথা থেকে ওড়না নামিয়ে দিল। ডান হাতের উল্টোপিঠে মাইরার গলার ভাঁজে হাত দেয়। মাইরার শরীর শিরশির করে। ইরফান মাইরার গলায় লেগে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে দেয়। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ঘামলে কিভাবে? কোথায় ছিলে?”
মাইরা চোখ নামিয়ে মিনমিন করে বলে,
“রান্নাঘরে, নাস্তা বানিয়েছিলাম।”
ইরফান বিস্ময় চোখে মাইরার দিকে চেয়ে বলে,
“হোয়াট?”
মাইরা অদ্ভুদ ভাবে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফানের রিয়েকশন দেখে মনে হচ্ছে সে এলিয়েন কে ধরতে মঙ্গল গ্রহে গিয়েছিল। ইরফান বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“লিটল গার্ল হয়ে এইটুকু হাতে নাস্তা বানাতে গিয়েছ কেন? স্টুপিট গার্ল।”
মাইরা অবাক হয়ে তাকায়। মানে? সে ছোট, তাই তার হাতও ছোট। এজন্য সে কি রান্না করতে পারবে না? কি অদ্ভুদ কথাবার্তা!

ভাবনার মাঝেই ইরফানের ফোনে কল আসে। ইরফান কল রিসিভ করে ডান হাতে ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে থাকে। মাইরার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত হয় ইরফান,, তবে দৃষ্টি তার মাইরার গলায়। ধীরে ধীরে বা হাতে মাইরার গলায় থাকা ওড়নাটা নিচের দিকে নামিয়ে দেয়। মাইরা সরে যেতে নিলে ইরফান মাইরার কোমড় জড়িয়ে তার সাথে চেপে ধরে। ফোনে কথা বলছে তো বলছেই। মাইরা ভ্রু কুঁচকে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান মাইরার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে ঘাড় বরাবর আনে। এরপর পিছন থেকেই বা হাত গলায় এনে মাইরার বাদামি তিলটার উপর আলতো হাতে স্লাইড করতে থাকে।

মাইরা চোখ নামিয়ে নেয়, বারবার শুকনো ঢোক গিলে দু’হাতে ইরফানের হাত সরাতে চাইলে ইরফান বিরক্ত হয়ে মুখ নামিয়ে মাইরার গলায় তিলের উপর তার ঠোঁটজোড়া রাখে। মাইরা কেঁপে ওঠে। ফোনের ওপাশে কেউ কথা বলতে থাকে। ইরফান শুনলো না। কল কেটে হাতের ফোন পকেটে রাখল। দু’হাতে মাইরাকে তার দিকে টেনে আনে।
মাইরা ঢোক গিলে ইরফানকে তার থেকে সরাতে যায়। তবে কোনো কথা বলে না। ইরফান মাইরার তিলটার উপর বেশ কিছুক্ষণ ঠোঁট চেপে রেখে, এরপর শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে মুখ সরিয়ে নেয়। মাইরার মুখের দিকে তাকালে দেখল মাইরা মাথা নামিয়ে রেখেছে।
ইরফান মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে,
“নাস্তা করেছ?”

মাইরা চোখ তুলে ইরফানের দিকে তাকায়। মাইরাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে ইরফান ভ্রু কুঁচকে মাইরার দিকে চেয়ে থাকে। মাইরা ইরফানের থেকে নিজেকে ছাড়াতে চায়। ইরফানের কিছু একটা মনে পড়তেই কারেন্ট শক খাওয়ার মতো ঝটকা মেরে মাইরাকে ছেড়ে দেয়। চোখ বুজে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কিছু একটা ভেবে প্রশ্ন করে,
“তোমার কবে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল?”
ইরফানের প্রশ্নে মাইরা বোকা চোখে তাকায় ইরফানের দিকে। লোকটা কেমন যেন অদ্ভুদ বিহেব করছে। একেক সময় একেক রকম বিহেভে মাইরার নিজেরই নিজেকে পা’গ’ল পা’গ’ল লাগছে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“স্পিক আপ।”
মাইরা ঢোক গিলে। তখনকার কথায় যে রেগে গিয়েছিল, এখন আবার রেগে যাবে না তো? আবার ভাবলো নাহ, এখানে তো ইরফান রিলেটেড না। তখনকার কথায় তো তার মাকে ব্লেম দিতে গিয়ে ইরফান জড়িয়ে গিয়েছিল। এই প্রশ্নের উত্তরে তো ইরফান জড়াবে না। তাই সরল মনে উত্তর দেয়,
“অনার্স সেকেন্ড ইয়ার বা থার্ড ইয়ার। আমার বান্ধীরা, আমি সবাই সবসময় এটাই চাইতাম, ওরা সবাই সেই সময়-ই বিয়ে করবে।”

লাস্ট কথাটা মলিন সুরে বলে মাইরা। ইরফান মাথা নিচু করে রাখা মাইরার পানে চেয়ে রইল। বেশ অনেক সময় নিয়ে মাইরার দিকে চেয়ে থাকে। মাইরা ইরফানকে নিরব দেখে মাথা তুলে তাকালে দেখল ইরফান তার দিকেই চেয়ে আছে। তবে চোখেমুখে রাগ নেই। একদম শান্ত, ঠাণ্ডা। ইরফান মাইরার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। কোনো কথাই বললো না। চাপা শ্বাস ফেলে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মাইরা অবাক হয়। সে ইরফানকে বুঝতে পারছে না। এমন অদ্ভুদ বিহেভ করছে কেন?
ইরফান ঘরের বাইরে বেরিয়ে দরজা চাপিয়ে দেয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে মাইরার দিকে তাকায় একবার৷ এরপর গম্ভীর গলায় বলে,
“বাইরে আসবে না।”
কথাটা বলেই শব্দ করে দরজা লাগিয়ে গটগট পায়ে চলে যায়। নিচে নেমে রিতাকে মাইরার ঘরে এক প্লেট খাবার দিয়ে আসতে বলে। মাইরা আগে যে ঘরে থাকতো, সে ঘরে গিয়ে একবার চোখ বুলায়। এরপর ঘর থেকে বেরিয়ে রিতার উদ্দেশ্যে বলে, মাইরার এই ঘরে যা যা আছে সব যেন তার ঘরে নিয়ে যায়। এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তার মা পিছু ডাকলে ছোট করে বলে, ‘খেয়ে নিব সময় করে।’

নুসরাত ভার্সিটির মাঠে তার বোনের সাথে একটু কথা বলছিল। চোখ ঘুরিয়ে উপরে তাকালে ইরফানকে তাদের ক্লাসরুমের দিকে যেতে দেখে নুসরাত চোখ বড় বড় করে তাকায়। তার বোনকে বাই বাই বলে কোনোরকমে এক দৌড় দেয়। শেষ শেষ। তার আগে এই স্যার রুমে ঢুকে গেলে তার কপাল ফাটবে।
পিছন থেকে অন্তরা বিরক্তি কণ্ঠে বলে,
“এই আস্তে যা। পড়ে যাবি।”
নুসরাত পিছু ফিরে বলে,
“তাতে কি? ক্লাস মিস দিলে পরীক্ষায় পাবো গোল্লা, আর এখন লেট করলে ক্লাসে যে ঢুকতেই পারবো না। জীবন শেষ আপু। তুমি যাও।”

অন্তরা বিরক্ত হলো। তার এই বোনটা লাফায় বেশি। তার আর এর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ।
ভাবনা রেখে ভার্সিটির চত্বর থেকে বের হয়ে তার গন্তব্যে রওয়ানা হয়।
নুসরাত উপরে উঠে দিকবিদিকশুন্য হয়ে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ-ই কেউ তার হাত টেনে ধরে। নুসরাত চেঁচিয়ে ওঠে, “কোন বে’য়া’দ’ব রে?”
সাজিদ বিরক্ত হয়ে বলে,
“পড়বি ভালো কথা। আমারে ফালানোর ধান্না করছিস না-কি? দেখি সর।”
নুসরাত অসহায় মুখ করে তার রুমের দিকে তাকালো। ইরফান তাদের থেকে কয়েক হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। নুসরাত সাজিদের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ভদ্র হয়ে দাঁড়ায়। ফিসফিসিয়ে বলে,
“তাড়াতাড়ি চল, নয়তো ক্লাস মিস।”
সাজিদ সম্মতি দিল। দু’পা এগোতেই ইরফান ক্লাসরুমে প্রবেশ করে। নুসরাত সাজিদ ও তখনই দরজার সামনে দাঁড়ায়। ইরফান ক্লাসরুমে প্রবেশ করে দাঁড়িয়ে যায়। পিছু ফিরে নুসরাত আর সাজিদকে দেখে গম্ভীর গলায় বলে,
“হু আর ইউ?”

নুসরাত চোখ বড় বড় করে তাকায়। এই ত্যাড়া লোকের ঝাড়ি খেতে খেতেই তার রাত পার হয়। তাকে না-কি চেনে না! কি ভয়ংকর পল্টিবাজ লোক ভাবা যায়!
সাজিদ সাধারণ একজন স্টুডেন্ট। সে ভদ্রভাবে উত্তর করল, “স্যার আমি এই ক্লাসের স্টুডেন্ট।”
ইরফান হাতঘড়িতে সময় দেখে বলে, “রঙ অ্যান্সার।”
নুসরাত খুব ভালোই বুঝলো এক সেকেন্ড লেট হয়েছে মানে এই স্যার এখন তাদের ধুইয়ে দিবে। মিনমিন করে বলে,
“স্যরি স্যার!”
ইরফান কিছুই বললো না। এগিয়ে গিয়ে ক্লাসরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নুসরাত আর সাজিদ ভাবলো নিরবতা সম্মতির লক্ষ্মণ। ভেতরে প্রবেশ করতে এক পা বাড়ালে ইরফান কড়া কণ্ঠে ধমক দেয়, “স্টপ।”
দু’জনের পা থেমে যায়। ক্লাসের সবাই ঝাঁকি দিয়ে ওঠে হঠাৎ ধমকে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“You’re not allowed in my class.”

এরপর আর কোনো কথা না বলে লেকচার দেয়া স্টার্ট করে। টানা এক আওয়ার ইংলিশে লেকচার দেয়। সবার চোখেমুখে ক্লান্তি। ইরফান একবার হাতঘড়িতে টাইম দেখল। এরপর গম্ভীর গলায় বলে,
“টেন মিনিট’স ব্রেক।”
নুসরাত, সাজিদ অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নুসরাতের পা ব্য’থা হয়ে গিয়েছে। এখান থেকে তাদের এক পা নড়তেও দেয়নি। বিড়বিড় করে সাজিদকে বলে, “এই লোকের বউ টিকবে না রে।”
সাজিদ কিছু বলল না। মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তার। আজ ইম্পর্ট্যান্ট টপিকের উপর ক্লাস করিয়েছে। আর তাদের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গিলতে হয়েছে।
ইরফান তার অফিসের স্টাফ এর সাথে ফোনে কথা বলে কিছু সময়। ঠিক ঠিক দশ মিনিট পর আবারও লেকচার দেয়া শুরু করে। সাজিদের কেন্দে দেয়ার মতো অবস্থা। সে ভালো স্টুডেন্ট। আজকেই একটু লেট হয়েছে, তবুও এই স্যারের জন্যই। এক আওয়ার আগে জানিয়েছে ক্লাস টাইম। এরকম দুইএকটা স্যার থাকলে জীবন প্যারাময় হতে আর কি লাগে!
ইরফান আবারও প্রায় ১৫ মিনিট লেকচার দিয়ে পুরো একটা টপিক শেষ করে। এরপর গটগট পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ইরফান বেরিয়ে যেতেই নুসরাত এক দৌড়ে রুমের ভেতরে গিয়ে একটা ফাঁকা চেয়ারে বসে পড়ে। শব্দ করে বলে ওঠে,

“শেষ শেষ শেষ, আমার পা গেল!”
সবাই অসহায় চোখে তাকায়। কিছু করার নেই। এ স্যার এমনই। সাজিদ নুসরাতের মাথায় একটা আলতো থাপ্পড় দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে বলে,
“এমনেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। এর মধ্যে মাইয়া মানষের ঢঙ দেখে আরও মেজাজ গরম করাবি না ছেমড়ি। যা ফুট।”
নুসরাত মাথা ডলে কটমট দৃষ্টিতে তাকায় সাজিদের দিকে। রেগে বলে,
“তোরে ছাড়মু না সাজিদ্দা।”
সাজিদ এগিয়ে এসে বলে, “আগে ধর। তারপর ছাড়ার কথা কইবি।”
নুসরাত চোখমুখ কুঁচকে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,
“তুই যা ফুট কালা মানিক।”
সাজিদ বিরক্ত হয়ে বলে,
“আমি কালো হয়ে বাংলাদেশের মান রাখছি। তোরা শা’লি সাদা হইয়া বাংলাদেশের নাম মুইছা ফেলতাছিস।”
সাজিদের কথা শুনে সবাই হেসে ফেলল। নুসরাত মুখ বাঁকালো।

ফারাহ ক্লাসে তার ফ্রেন্ড জুইয়ের সাথে হেসে কথা বলছিল, হঠাৎ-ই কোথা থেকে জুইয়ের খালাতো ভাই জামিল এসে সামনের একটা চেয়ারে বসে। ফারাহ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“এখানে বসলি কেন? আর একটু পর ক্লাস, যা।”
জামিল গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,
“আমি এখানে বসেই ক্লাস করব, তোর বাপের কি?”
ফারাহ মুখ কুঁচকে জুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোর ভাইয়ের মুখ ঠিক না করলে কিন্তুু কপালে দুঃখ আছে বলে দিচ্ছি।”
তখনই ক্লাসে শুদ্ধ প্রবেশ করে। সবাই ঠিকঠাক হয়ে বসে। জামিল দ্রুত ফারাহ এর পাশের চেয়ারটায় বসে। শুদ্ধর নজর সর্বপ্রথম ফারাহ’র দিকেই পড়লো। দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। পাশে জামিলের দিকে তাকালে দেখল হাসি-হাসি মুখ করে তাকিয়ে আছে। শুদ্ধ বিরক্ত হলো। আজ কি তার মেজাজ খারাপের দিবস না-কি? ফারাহ’র দিকে আর তাকালো না। চুপচাপ লেকচার দিতে শুরু করে। টানা ১৫ মিনিট ইংলিশে লেকচার দেয়। এরপর থেমে যায়। চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। বুকে দু’হাত গুঁজে চোখ বুজে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
জামিল ফারাহ’র দিকে একটু চেপে গিয়ে বলে,

“এটা তোর কে যেন হয়?”
ফারাহ চিরিত করে উঠল। গায়ের মধ্যে আসে কেন? মে’জাজ খারাপ লাগে। পুরো ক্লাস নিস্তব্ধ, তার মাঝেই ফারাহ রেগে হঠাৎ-ই বলে ফেলে, “বাপ হয়। হয়েছে?”
ফারাহ যদিও এতো জোরে কথা বলতে চায়নি, না চাইতেও গলা বড় হয়ে গিয়েছে। ক্লাসে সবাই ফারাহ’র দিকে তাকায়। শুদ্ধ নিজেও ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে ফারাহ’র দিকে। ফারাহ ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে যায়। আড়চোখে একবার শুদ্ধর দিকে তাকায়। তারপর চোখ নামিয়ে নেয়। ডান পাশে বসা জুই ফিসফিসিয়ে বলে, “তোর বাপ তো সেই ইয়াং!”
ফারাহ কটমট দৃষ্টিতে তাকায় জুইয়ের দিকে। জুই মুখ লুকিয়ে হাসে। ওপর পাশ থেকে জামিল বলে,
“তোর বাপকে একটু বল তো, আমাকে যেন পরীক্ষা ছাড়াই পাশ করে দেয়।”
শুদ্ধ হঠাৎ-ই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ফারাহ’র দিকে চেয়ে ধমকে বলে, “সাট আপ!”
সবাই কেঁপে ওঠে। ফারাহ চোখ বন্ধ করে। শুদ্ধ গটগট পায়ে এগিয়ে এসে ফারাহ বরাবর দাঁড়িয়ে জামিল কে দাঁড় করায়। এরপর জামিলের দিকে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“বাকি টপিক তুমি ফিনিশ কর। গো।”
জামিল চোখ বড় বড় করে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,

“স্যার আমি তো স্টুডেন্ট। আমি কিভাবে..”
“এজন্যই টিচারের কথা শুনতে হবে। গো।”
জামিল অসম্মতি প্রকাশ করলে শুদ্ধ রেগে বলে,
“ওকে। গেট আউট।”
জামিল অসহায় মুখ করে তাকায়। কি আর করার! চুপচাপ ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেল।
শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে চেয়ে বলে,
“কথা বলা পাবলিকদের জন্য ক্লাসরুম নয়।”
ফারাহ ঢোক গিলে। ঠিক বুঝল তার দিকে চেয়েই কথাটা বলেছে। শুদ্ধ সামনে গিয়ে আরও দশ মিনিট লেকচার দেয়। এরপর সবার সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“এই টপিক এর বাকি অংশ, নেক্সট ডে, বাইরে দাঁড় করানো ছেলেটি পড়াবে।”
জামিল বাইরে দাঁড়িয়ে চরম হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল। তার জীবন শেষ। শুদ্ধ ফারাহ’র দিকে তাকায়। ফারাহ শুদ্ধর দিকেই তাকিয়ে ছিল। শুদ্ধ চোখ সরিয়ে নিয়ে গটগট পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ফারাহ ভ্রু কুঁচকে নিল। শুদ্ধ কে তার কাছে ঠিক লাগেনি। শুদ্ধ বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে ফারাহ তার ব্যাগ নিয়ে একপ্রকার দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

শুদ্ধ গটগট পায়ে তার রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতে চায়, তখনই পিছন থেকে ফারাহ ডাকে, “শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ পিছু ফিরে তাকায়। চোখ দু’টো লাল। ফারাহ শুদ্ধকে কাছ থেকে দেখে আরও অবাক হলো। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“তোমার কি হয়েছে?”
শুদ্ধ আশেপাশে তাকালো। তেমন কাউকে না দেখতে পেয়ে ফারাহ কে টেনে তার রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। রুম অন্ধকার। শুদ্ধ লাইট জ্বালালো না। ফারাহ অন্ধকারেই অবাক হয়ে কিছু বলতে চায়, তার আগেই শুদ্ধ ফারাহকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ফারাহ কেঁপে ওঠে। হাত থেকে ব্যাগ পড়ে যায়। ফারাহ থেমে থেমে বলে,
“শুদ্ধ ভাই?”
শুদ্ধ হাতের বাঁধন আরও খানিকটা শক্ত করল। কিন্তুু কোনো কথা বললো না। ফারাহ ঢোক গিলে শুদ্ধর পিঠে কাঁপা হাত রাখে। আবারও বলে,
“শুদ্ধ ভাই ছাড়ো।”
শুদ্ধ ছাড়লো না। বেশ কিছুক্ষণ পর মৃদুস্বরে বলে,
“আমার ফারাহ পাখি তুমি।”

কথাটা বলে আবারও বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। এরপর ফারাহকে ছেড়ে ফারাহ’র বাম গালের সাথে তা বাম গাল লাগিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে,
“তুমি আমার। আমি কিন্তুু আর কাউকে বিয়ে করব না, বুঝেছ? আমার বউ তুমি হবে। আমার ফারাহ পাখি।”
ফারাহ’র শরীর শিরশির করে। শুদ্ধ ফারাহ’র গালে ঠোঁট দাবায়। ফারাহ ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। এই প্রথম শুদ্ধ অভাবনীয় এক কাজ করল।
শুদ্ধ ফারাহ’র দু’গালে ছোট ছোট দু’টো চুমু খায়। এরপর ফারাহ’র কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বুজে বলে,
“অ্যা’ম স্যরি ফারাহ পাখি। যা যা করেছি সবকিছুর জন্য। তোমার স্বামীর হক ন’ষ্ট করছি। বাট স্বামী তো আমিই হব, তাই নিজের হক নিজে নষ্ট করলে প্রবলেম নেই। তুমি কিছু মনে কর না। ফারাহ পাখি চলো আমরা বিয়ে করে নিই এক্ষুনি।”
ফারাহ ঢোক গিলে। শুদ্ধকে কেমন অস্বাভাবিক ঠেকল। দু’হাতে শুদ্ধকে ঠেলে সরাতে চাইলো। শুদ্ধ হঠাৎ-ই রেগে বলে,

“ফারাহ, ডিস্টার্ব কর না। আমি ঠিক নেই, কোথায় নিজে থেকে জড়িয়ে ধরবে, তা না করে সরিয়ে দিচ্ছো। এমনিতেও বাড়িতে আমার হবু বউ অপেক্ষা করছে। বেশি টাইম নিব না।”
ফারাহ রেগে যায়। এই লোক জীবনেও শুধরোবে না। ধাক্কা দিয়ে বলে,
“তোমরা এক বাড়িতে ছিলে। আমি তবুও তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি। তুমি উল্টে আমাকে ফালতু কথা শোনাচ্ছো?”
শুদ্ধ একটু হাসলো। দু’হাতের আঁজলায় ফারাহ’র মুখটা নিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,
“ফারাহ পাখি, তুমি কোনো ছেলের পাশে বসবে না, বুঝেছ?”
ফারাহ অবাক হয়ে তাকায় শুদ্ধর দিকে। যদিও অন্ধকারে স্পষ্ট দেখতে পেল না, তবে ঝাপসা দেখতে পায়। শুদ্ধর এসব নতুন নতুন রূপ মেয়েটাকে যেন অদ্ভুদ অনুভূতির সাথে পরিচিত করালো। ছোট করে বলে,
“আমি তো বসি না।”
শুদ্ধ মানলো না। আবারও ফারাহকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মৃদুস্বরে বলে,
“বসেছ তো! আমি রাগতে পারছি না। নয়তো তুমি মার খেতে আমার হাতে এখন।”
ফারাহ ঢোক গিলে বলে,

“তোমার আম্মু ওই মেয়েটাকে এখনো তোমার বউ ভাবে?”
শুদ্ধ হেসে ফেলল। ফারাহ’র কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“আমিও ভাবি। একটু আগেই তো বললাম হবু বউ। তুমি কি বাংলা কম বোঝো?”
ফারাহ মোচড়ামুচড়ি করে। রেগে বলে,
“ছাড়ো আমায়।”
শুদ্ধ ছেড়ে দিল। দূরে সরে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিল। দরজার লক খুলে রাখল। এরপর তার চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোমার আর কয়টা ক্লাস আছে?”
ফারাহ শুদ্ধর কথার উত্তর না করে উল্টে প্রশ্ন করে,
“শুদ্ধ ভাই তুমি কি তোমার মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করবে, তোমার মা কষ্ট পাবে বলে?”
শুদ্ধ অদ্ভুদভাবে তাকায় ফারাহ’র দিকে। বসা থেকে দাঁড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
“তুমি কি করে বুঝলে? তুমি তো জিনিয়াস ফারাহ!”
ফারাহ রেগে বলে,
“তুমি কি জীবনেও সিরিয়াস হবে না? আমার কিন্তুু রাগ লাগছে।”
শুদ্ধ সিরিয়াস কণ্ঠে বলল,

“আসলেই আমি মা কে কষ্ট দিতে চাই না ফারাহ। একটুও কষ্ট দিতে চাই না। তাকে ভীষণ ভালোবাসি আমি, বুঝলে? একটু আগে আবেগের বশে ভুলভাল বলে ফেলেছি। ডোন্ট মাইন্ড। তুমি এখন যাও এখান থেকে।”
ফারাহ অবাক হয়ে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে ফারাহ’র দিকে। ফারাহ’র চোখজোড়া ভিজে উঠল। কিছু কথা মিথ্যে জেনেও কান্না পায়, ফারাহ’র তেমনি হলো। কিন্তুু শুদ্ধকে ভীষণ সিরিয়াস লাগলো। মিথ্যে জেনেও তো চোখ ভিজছে। তাহলে সত্যিই শুদ্ধ ওই মেয়েটাকে বিয়ে করে নিলে তার কি হবে? ফারাহ নাক টেনে বলে,
“তুমি সত্যি বলছো?”
শুদ্ধ মৃদুস্বরে বলে, “একদম।”
ফারাহ মাথা নিচু করে নেয়। কান্নামাখা গলায় বলে,
“তুমি আসলেই খারাপ লোক। স্বার্থপর লোক। আমার কথা একবারো ভাবছো না।”
শুদ্ধ ঝরের গতিতে ফারাহ’র কাছে এগিয়ে আসে।হিজাবের উপর দিয়েই ফারাহ’র মাথার পিছনে চুলের গোছা শক্ত করে ধরে। ডান হাতে ফারাহ’র গাল চেপে মুখ উঁচু করে। ফারাহ চুলে, গালে ভীষণ ব্য’থা পায়। মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে,
“আহ! শুদ্ধ ভাই ছাড়ো, লাগছে আমার।”
শুদ্ধ আরও শক্ত করে ধরল ফারাহ’র গাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“একদিন বলেছি না? মা কে ভালোবাসি, কিন্তুু বউকে বাদ দিয়ে না। মাকে কষ্ট দিতে চাই না, কিন্তুু এর মানে এই না বউকে ছুঁড়ে ফেলে মায়ের ভালোবাসার প্রুফ দিব। বলেছিলাম না তোকে? তবুও জ্বালাবি ক্যান আমারে? দুই ভাই-বোন কি পেয়েছিস আমায়? আমি সস্তা? তোর জন্য এতো বছর অপেক্ষা করে আরেকজনকে বিয়ে করব? এই আমারে তোর কা’পুরুষ লাগে? কা’পুরুষ হলে তো আগে তোরে তুলে নিয়ে বিয়ে করতাম। তোর মতামতের দাম দিই বেশি, এজন্য আমার দাম নাই?
তোর ভাই আমারে নিয়ে আফসোস করে! তুই আমারে স্বার্থপর বলিস। তোর ভাইয়ের জনমের আফসোস আগে মেটাবো, এরপর তোকে স্বার্থপরের সজ্ঞা বোঝাবো আমি। ওয়েট।
একটু থেমে আগের চেয়েও শক্ত কণ্ঠে বলে,
‘ব্রেনলেস এর জাত দু’টো।’

কথাগুলো বলে ফারাহ কে ধাক্কা দেয়। ফারাহ পড়তে পড়তে বেঁচে যায়। অবাক হয়ে শুদ্ধর দিকে তাকায়। চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। এর আগে কখনো শুদ্ধর এই রূপ দেখেনি। শুদ্ধ তার মাথার চুল টেনে রাগে টেবিলে একটা লাথি মেরে রেগে বলে,
“বেরো এখান থেকে। এক্ষুনি বেরোবি”
ফারাহ কেঁপে ওঠে। তখনই দরজা ঠেলে কেউ একজন ভেতরে প্রবেশ করে। শুদ্ধ তাকায় দরজার দিকে। তার এক সহকর্মীকে দেখে বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ফারাহ মাথা নিচু করে নেয়। ডান হাতে ভেজা চোখমুখ মুছে নেয়। দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তার সেই স্যারকে ভারি গলায় ছোট করে একটা সালাম দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
ভদ্রলোক খুব স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটা নিয়েছে। কিছু বোঝে নি। গলা ঝেড়ে বলে,
“কি অবস্থা শুদ্ধ? অনেকদিন পর দেখা করতে এলাম।”
শুদ্ধ তার চেয়ারে বসে শরীর এলিয়ে দেয়। একটু চুপ থেকে বলে,
“ভালো।”
কথাটা বলে চোখ বুজে নেয়।

ঘড়িতে একবার সময় দেখল শুদ্ধ। বিকাল ~ ৩:৩০।
সকালে ক্লাস নিয়ে পর পর আজকের আরও দু’টো ক্লাস ক্যান্সেল করে অফিস রুমে চুপ করে বসে থেকেছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অফিস রুম থেকে বের হয়। গন্তব্য বাড়ি। ভার্সিটি চত্বরে দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলে পিছন থেকে ফাইজ ডাকে। শুদ্ধর পা থেমে যায়। ফাইজ দ্রুতপায়ে শুদ্ধর দিকে এগিয়ে আসে। শুদ্ধ পায়ের গতি বাড়ালো। তার আগেই ফাইজ শুদ্ধর হাত টেনে ধরে। শুদ্ধর পা আবারও থেমে যায়। ফাইজ অসহায় কণ্ঠে ডাকে,
“ভাই?”
শুদ্ধ ফাইজের দিকে তাকালো। মুখাবয়বে হাসির ছিঁটেফোঁটা নেই। কিছুটা দূরে ফারাহকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। চোখ ঘুরিয়ে ফাইজের দিকে চেয়ে হঠাৎ-ই ফাইজের বুক বরাবর গায়ের জোরে একটা ধাক্কা দিয়ে রাগান্বিত স্বরে বলে,
“ভুলেও আমার আশেপাশে ঘেঁষবি না। ইচ্ছে করে তো দূর, ভুল করেও ঘেঁষবি না।”
কথাটা বলেই তার গাড়িতে উঠে পড়ে। ফাইজ কিছু বলার সুযেগ-ই পেল না।
কিছুটা দূরে দাঁড়ানো ফারাহ ভীষণ অবাক হলো। সে তো শুদ্ধকে চিনতে পারছে না। কি হয়েছে তার ভাইয়ের সাথে?
শুদ্ধ গাড়ি চালিয়ে একদম ফারাহ’র সোজা নিয়ে যায়। ফারাহ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। ধাক্কা লাগবে লাগবে ভাব তখনই শুদ্ধ ব্রেক ঘুরিয়ে ভার্সিটির গেট থেকে বেরিয়ে যায়। সামনের আয়নার একবার ফারাহ’র মুখটা দেখে। মৃদু হাসলো। বিড়বিড় করে, “ফারাহ পাখি, কত জ্বালাও আমায়! নির্দয় মেয়ে।”

ঘড়ির কাটা টিকটিক করে জানান দেয় বিকাল ~ ৪:০০।
ইরফান ভার্সিটি শেষে অফিস করে ফিরেছে মাত্র।মাইরাকে ঘরে দেখল না। বিরক্ত হলো বোধয়।
ওয়াশরুমে নিয়ে শাওয়ার নেয়। এরপর একটা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরে নেয়।
বেলকনি থেকে ঠকঠক আওয়াজ পেয়ে সেদিকে যায়। ঘর থেকে বেলকনিতে পা রাখলে চোখেমুখে বিস্ময় ভর করে।
মাইরা মেঝেতে গোল হয়ে বসেছে। তার চারপাশে অনেকগুলো টব রাখা। সবগুলোতে একটা একটা করে ফুলের গাছ লাগানো। বেলি, গোলাপ আর নয়নতারা এই তিনটি ফুল আনিয়েছে মাইরা।

কোলের উপর একটা টবে খুব মনোযোগের সহিত মাটি ভরছে। এরপর লাস্ট ছোট্ট নয়নাতারা ফুলের গাছটা নিয়ে খুব সুন্দর করে গেঁথে দিল টব ভর্তি মাটির মাঝে। সব কাজ শেষ করে মেয়েটা বিশ্ব জয় করা এক হাসি দেয়। দ্রুত বসা থেকে উঠে বেলকনি থেকে রুমে আসার জন্য এগোতে নিলে ইরফানকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ঘাড় বাঁকিয়ে বেলকনির মেঝেতে তাকালো। সে ভেবেছিল এই লোকটা আসার আগেই সব পরিষ্কার করবে। কিন্তুু তা তো পারলো না। এখন তাকে কি করবে লোকটা? ভয়ে ভয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি এক্ষুনি সব পরিষ্কার করে দিচ্ছি। আমাকে পাঁচ মিনিট টাইম দিন প্লিজ!”
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে আছে। মাইরার কপালে গালে অসংখ্য জায়গায় মাটি লেগে। ইরফান ডান হাত উঠিয়ে মাইরার কপালে লেগে থাকা মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে গম্ভীর গলায় বলে,

“বাড়িতে আরও অনেকে আছে, তারা করবে।”
মাইরা মন খারাপ করে বলে,
“রিতা তো ঘুমিয়েছে।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,
“আরও দু’জন আছে।”
মাইরা অবাক হয়ে বলে,
“আপনি কিভাবে জানলেন?”
ইরফান কিছু বললো না। মাইরা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে,
“আপনি যাওয়ার পর এ বাড়িতে দু’টো মহিলা আসে। তাদের নাকি কেউ পাঠিয়েছে। তারা এই বাড়িতে কাজ করবেই। কারণ এই বাড়িরই কেউ তাদের পাঠিয়েছে। কিন্তুু আপনার বাবা মা কেউই জানেনা এই ব্যাপারে। কেমন ভূতূড়ে ব্যাপার!”
ইরফান শান্ত চোখে মাইরার কথাগুলো শুনলো। ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। বিড়বিড় করে, ‘স্টুপিট গার্ল।’
এরপর জিজ্ঞেস করে,

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪২ (২)

“এসব কোথায় পেয়েছ?”
মাইরা উৎফুল্লতার সাথে উত্তর দেয়, “আপনার বাবা এনে দিয়েছে।
একটু থেমে আবদারের সুরে বলে,
এগুলো কি এখানে রাখতে পারবো?”
ইরফান মাইরার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। এরপর প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে ঘরের ভেতর যেতে যেতে ছোট করে বলে,
“পারবে।”

প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৪৪