চেকমেট পর্ব ১২
সারিকা হোসাইন
ক্যালিফোর্নিয়ার আজকের ওয়েদার ভারী মিষ্টি।মৃদু মন্দ উষ্ণ রোদ সেই সাথে ঝকঝকে আকাশ।থেকে থেকেই শিরশিরে বাতাস গায়ে লাগছে।ফকফকে রোদের আলোয় সারফরাজ এর ঘুম একটু আগে ভাগেই ভাঙলো।চোখ বন্ধ রেখেই লম্বা শ্বাস টানলো সারফরাজ।এরপর ছোট ছোট চোখ করে পুরো কক্ষ জুড়ে নজর বুলালো।লিটল এঞ্জেলো কে কোথাও দেখা গেলো না।হয়তো ইয়ার্ড এ ঘুরাঘুরি করছে নয়তো প্রজাপতির দলের পিছু পিছু ছুটছে।গায়ের সাদা কমফোরটার দুই হাতে ঠেলে সরিয়ে উঠে বসলো সারফরাজ।মাথাটা কেমন ভারী হয়ে আছে।ঝলমলে চুল গুলো দুই হাতে মুঠি পাকিয়ে টেনে ধরে কিছুক্ষন চোখ বুজে রইলো সে।এরপর হাই তুলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
বেড সাইড টেবিলের উপর থাকা ঘড়িতে সামান্য নজর বুলালো।সাড়ে আটটা বাজে।এলার্ম বাজার আগেই ঘুম ভেঙেছে।এক হাতে কপাল স্লাইড করতে করতে ঘড়ির এলার্ম বন্ধ করে ওয়াশ রুমের দিকে পা বাড়ালো।গায়ে একটা বাথ রোব জড়িয়ে ফিরলো মিনিট বিশেক পর।এরপর গায়ে একটা হাত বিহীন নেভি ব্লু স্যান্ডো গেঞ্জি আর ট্রাউজার পরে কিচেনে ছুটলো।ধরা মাথায় ফ্রিজ হাতড়ে কিছু নাশতা বের করে চুলা ধরাতে ব্যস্ত হলো সারফরাজ।এমন সময় অভিরূপ এর গলা পাওয়া গেলো।হাতে ধোয়া উঠা গরম কফি মগে চুমুক দিতে দিতে বিজ্ঞের ন্যয় বলে উঠলো
“বয়স তো আর কম হলো না।একটা বিয়ে করে ফেল।এটলিস্ট সকাল বেলা গরম খাবার খেতে পারবি সেই সাথে জং ধরা মেশিনের একটু খাতির যত্ন হবে আরকি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সকাল সকাল মুখ খারাপ করতে ইচ্ছে হলো না সারফরাজ এর।সারফরাজ অভিরূপ এর কথা তোয়াক্কা না করে নিজের কাজে ব্যস্ত হলো।কিন্তু অভিরূপ কি থামার পাত্র?সে আয়েশ করে লিভিং রুমের সোফায় বসে বলে উঠলো
“তা মেশিন খানা আছে নাকি শীতের চোটে বিকল হয়ে গেছে?
হাতের পাউরুটি গুলো টোস্টার এ ঢুকিয়ে ট্রাউজার এর পকেটে হাত গুঁজে অভিরূপ এর সামনে এসে দাড়ালো সারফরাজ।এরপর ছোট ছোট চোখ করে অভিরূপ এর পানে তাকিয়ে খপ করে অভিরূপ এর হাত ধরে মোটা গলায় বলে উঠলো
“মেশিন বিকল নাকি সচল চল তোকে দেখাই।বাট তুই চোট কুলাতে পারবি তো?
সারফরাজ এর এহেন ভয়ানক কথায় ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে অভিরূপ বলে উঠলো
“ছি, ছি ছি ছি।শেষ পর্যন্ত এতো দূরে গিয়ে ঠেকছে তোর অধঃপতন?শেষে কিনা ছেলে মানুষের প্রতি তোর আকর্ষণ!
এমনিতেই মাথায় জন্ত্রনা তার উপর অভিরূপ এর বাজে বকাবকিতে চুপ করে থাকতে পারলো না সারফরাজ।দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“শাউয়ার নাতি নিজের মেশিনে তেল দাও।আমার মেশিন নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।আমার সব ঠিক আছে।
সারফরাজ এর মুখের গালি শুনে কিটকিটিয়ে হেসে অভিরূপ বলে উঠলো
“গালি ছাড়া কফিটা কেমন পানসে লাগছিলো।একটু চিনি যোগ করলাম আরকি।ডোন্ট বি আ্যন্ঙরি ওকে?
কথাটি বলে আরেক দফা হেসে চট করে বলে উঠলো
“বাই দ্যা ওয়ে ব্লাইন্ড ডেটে যাবি?এটলিস্ট একটা প্রেম কর।মেয়ে মানুষ হীন জীবনের কোন দাম আছে?
টোস্টার থেকে পাউরুটির টোস্ট বের করতে করতে সারফরাজ শুধালো
“নিজে কেনো করছিস না?অন্যের ঘাড়ে বিপদ চাপানোর জন্য এতো উতলা কিসের?
কফিতে লম্বা চুমুক দিয়ে অভিরূপ বলে উঠলো
“তোকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাতে চাচ্ছি।তুই ট্রায়াল দিয়ে দেখা শেষ করলে আমিও একটু করবো আরকি। ওই প্রেম টেম।
গ্লাসে দুধ ঢালতে ঢালতে সারফরাজ ব্যস্ত গলায় বলল
“মেয়ে মানুষে আমার ইন্টারেস্ট নেই।
“কেনো নেই?তুই কি আই মিন….
কথাটি বলে বাঁকা হাসলো অভিরূপ।সারফরাজ কপাল কুঁচকে বললো
“যা ভাবছিস তা মোটেই নই।যদি এমন ভাবনা আর ভেবেছিস তবে ঝুলিয়ে পেটাবো।
প্রসঙ্গ পাল্টে অভিরূপ বললো
“বাঙালি মেয়ে বিয়ে করবি?সেটাও আছে।
সারফরাজ তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো
“নাও আম নট রেডি ফর ম্যারেজ এন্ড ওয়ান থিং আমার বিয়ে নিয়ে তোর এতো হেডেক হচ্ছে কেনো??
“কজ আমি তোর এহেন এলোমেলো লাইফ লিডিং সহ্য করতে পারছি না।আমার মনে হচ্ছে তোর মন থেকে দয়া মায়া ভালোবাসা সব উঠে যাচ্ছে।তুই নির্দয় হয়ে যাচ্ছিস।জীবনে নতুন কেউ এলে তোর লাগাম ধরতে পারবে।এন্ড ফাইনালি আমি তোকে নিয়ে ভয় পাচ্ছি।
“কদিন ধরে চিনিস আমায়?
“ন বছর।
“ন বছরেই এতো ভালোবাসা?
“সারফরাজ তোকে দেখলে মানুষ দৌড়ে পালায়, তোর চোখ দেখলে মানুষ প্রানের মায়ায় তোর পায়ে লুটিয়ে পরে, তুই একটা নিষ্ঠুর মানব।বিধাতা তোকে এতো সুদর্শন করে গড়ে তুলেছেন এমন শয়তান হবার জন্য?
শান্ত ভঙ্গিতে টোস্ট চিবুতে চিবুতে সারফরাজ বললো
“আমি কোনো ভালো মানুষের প্রাণ নেইনি অভি।তাই এসব জ্ঞান দেয়া বন্ধ কর।নয়তো সকাল সকাল মেজাজ বিগড়ে যাবে।
“একটা মানুষের জীবন কেড়ে নেয়া চাট্টি খানি কথা নয়।এসব ছেড়ে দে।বিগ রিকোয়েস্ট ফর ইউ।
খাওয়া বন্ধ করে ধাক্কা দিয়ে টোস্টের প্লেট সরিয়ে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে রইল সারফরাজ।এরপর শান্ত গলায় বলল
“তোকে বাঁচানোর জন্য যখন চারটে মানুষের প্রাণ নিলাম তখন এই নীতিবাক্য কোথায় ছিলো তোর?তখন কেনো বললি না ভাই এদের হাতে আমার মৃত্যু হোক তবুও এদের মারবেন না।তখন বলিস নি কেনো যে অপরিচিত হয়ে আপনি আমার জন্য মানুষের প্রাণ নিচ্ছেন কেনো?হুয়াই?এনসার মি?ওহ নিজের জান ভিক্ষা পাবার খুশিতে তাই না?
সারফরাজ এর উঁচু গলায় অভিরূপ মাথা নিচু করে ফেললো।সারফরাজ সত্যি বলেছে।সেদিন রাতে সারফরাজ না থাকলে অভিরূপ আজ এতো সুন্দর পৃথিবী দেখার জন্য বেঁচে থাকত না।তার জীবন ওই দিন ই থেমে যেতো ।
সারফরাজ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ভয়ানক গ্যাঙ লিডার ব্রুনোর হাত থেকে বাঁচিয়ে ছিলো অভিরূপ কে।অপরাধ ছিলো খুবই নগণ্য।না জেনে ব্রুনোর চোখে চোখ রেখে ছিলো অভিরূপ।চোখ রেখে ছিলো বললে ভুল হবে।ব্রুনোর চোখে অদ্ভুত ট্যাটু দেখে উৎসাহ নিয়ে সেটাই মনোযোগ সহকারে দেখছিলো অভিরূপ।ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিলো এই দেশে সে।একদিন সন্ধ্যার পর নিজের ডোরমিটোরি থেকে একটু বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছিল ।এরপর রাস্তা ভুলে এলোমেলো গলিতে হারিয়ে যায়।অভিরূপ জানতো ও না এই গলির আলাদা মালিক আছে।এটাই তার ভুল।নিজের অজ্ঞতা বুঝতে না পেরে অমন অদ্ভুত মানুষকে বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে দেখছিলো অভিরূপ।অভিরূপ এর দৃষ্টি অনুসরণ করে ক্রুর হেসে এগিয়ে আসে ব্রুনো।কোনো সতর্কবার্তা বা থ্রেট না দিয়ে অভিরূপ এর চুলের ঝুটি চেপে ধরে ফ্যাসফ্যাসে গর্জন ভরা কন্ঠে বলে উঠে
“ইউ মাস্ট ডাই।
কথাটি বলেই নিজের সহযোগী দের ডেকে উঠে ছেলেটি।
ছেলেটির কথায় অভিরূপ এর প্রাণপাখি উড়ে যাবার অবস্থা।মুহূর্তেই আরো তিনজন ছেলে এসে ঘিরে ধরে অভিরূপ কে।ভয়ে নিজের অপরাধ না বুঝেও সমানে ক্ষমা চায় অভিরূপ।বার বার জিজ্ঞেস করে তার অপরাধ কি?কিন্তু ছেলে গুলো যেনো কানেই তুললো না অভিরূপ এর কথা।তারা নিজেদের মতো রাস্তায় ফেলে কুকুরের মতো আঘাত করতে থাকে অভিরূপ কে।অভিরূপ যখন রক্তাক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার অবস্থা হলো ঠিক সেই মুহূর্তে সারফরাজ এসে বাঁচিয়ে ছিলো তাকে।উহু যেমন তেমন করে নয়।চারটে ছেলের নৃশংস মৃত্যুর বিনিময়ে বাঁচাতে পেরে ছিলো অভিরূপ কে।শুধু কি তাই?লম্বা চওড়া অভিরূপ কে কাঁধে তুলে এনে নিজের বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছিলো।চিকিৎসা পর্যন্ত করিয়েছে সে।এরপর অভিরূপ ভয়ে আর নিজের ডরমিটরিতে ফিরে যায়নি।এখানেই থেকে গেছে।শুনেছে সারফরাজ এর জীবনের কাহিনী।সারফরাজ এর সাথে সাথে সেও ব্যথিত হয়েছে।ধীরে ধীরে কবে যেনো সারফরাজ এর ডান হাত হয়ে গেলো সে।সারফরাজ প্রথমে একজন ভাড়াটে খুনি ছিলো।মোটা টাকার বিনিময়ে মানুষের প্রাণ নিতো।এভাবে রাতারাতি বহু টাকার মালিক হয়ে যায় সে।সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন ড্রাগস আর মানুষের অর্গান নিয়ে বিজনেস শুরু করে ।কালো কারবারী তে মোটামুটি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ তার।কয়েক বছরের ব্যবধানেই ক্যালিফোর্নিয়ার সেরা বিজনেস ম্যান তালিকায় নাম লিখিয়েছে সে।সকলেই সারফরাজ কে একজন সফল ডায়মন্ড ব্যসবসায়ী হিসেবে চিনে জানে।কিন্তু ভেতরের এহেন ভয়ানক নিগূঢ় খবর সকলের অজানা।
নিজের অবৈধ কাজের স্বার্থে নাম পরিচয় পাল্টে সারফরাজ শাহজাইন থেকে হয়েছে জাগুয়ার।কখনো কেউ দেখেনি জাগুয়ার নামক মানুষটি দেখতে কেমন।কিন্তু যার মৃত্যু তার হাতে হয়েছে সেই মানুষটি হয়তো করুন নজরে অস্ফুট স্বরে আওড়াতে পেরেছে সারফরাজ নামটি। ওই ভয়ানক চোখের সামনে যে স্বেচ্চায় পরেছে তার ইহকালের সমস্ত খেলা সাঙ্গ হয়েছে।
চোখের নিচের ভয়ানক তিনটা টিয়ার ড্রপস মানুষের শীতল হৃদয়ে কাপন তুলে দেয়।ধারকান বেড়ে তেজ হয়ে হাজার গুণ।যারা এই ট্যাটুর মানে জানে তারা দৌড়ে পালাতে চায়।কিন্তু হিংস্র জাগুয়ার এর থেকে পালানো কি এতোই সহজ?নিজের চূড়ান্ত নির্দয়তা প্রকাশ করে সেই মানুষটি কে দুনিয়া ছাড়া করে সারফরাজ।এতো এতো হিংস্রতা দমানোর জন্য কাওকে প্রয়োজন।কিন্তু সেই মানুষটি কোথায়?
অভিরূপ এর ভাবনার মাঝেই খাওয়া শেষ করে পোশাক পাল্টে বেরিয়ে এলো সারফরাজ।হাতে গল্ফ ক্লাব সাদা পোশাক আর একটা ব্যাক প্যাক।
হাতের গলফ ক্লাব দিয়ে অভিরূপ এর কাঁধে গুঁতো দিয়ে চিন্তার জগৎ থেকে অভিরূপ কে বের করে আনলো সারফরাজ।অভিরূপ হকচকিয়ে সামনে তাকাতেই সারফরাজ বললো
“খুব সুন্দর ওয়েদার।চল গলফ কোর্স এ।একটু চিল করা যাক।
অভিরূপ মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালো।এরপর চলতে চলতে বললো
“আগামী সপ্তাহে তোর ফ্লাইট।সব কিছু এরেঞ্জ হয়ে গেছে।আমিও যাবো।অনেক দিন মা বাবার সাথে দেখা হয় না।
অভিরূপ এর মুখে মা বাবার নাম শুনে হাঁটা থামিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো সারফরাজ।এরপর মনে মনে বললো
“তুমি কি বেঁচে আছো আম্মু?কেউ তোমাকে খুঁজে পেলো না তবে।কোথায় নিরুদ্দেশ হলে তুমি?
সন্ধ্যার পরপর ডিউটি থেকে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাড়ি ফিরলেন সুফিয়ান চৌধুরী।আজকাল প্রচুর চাপ যাচ্ছে।সামনে ইলেকশন।সেই ইলেকশন কে কেন্দ্র করে প্রতিটা জায়গায় মারপিট ভাঙচুর হচ্ছে।পুলিশ পর্যন্ত তাদের থামাতে ব্যার্থ হচ্ছে।এদিকে উপর মহল থেকে চাপের উপর চাপ।সব মিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস অবস্থা।
সুফিয়ান ঘরে ঢুকেই মেয়ের খুজ করলেন।নিজ ঘরে সারফরাজ এর পরিবারের ছবিটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো রূপকথা।সুফিয়ান এর ডাক পেয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো রূপকথা।এরপর এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে বলে উঠলো
“অনেক ব্যস্ত ছিলে পাপা?
ঢকঢক করে পুরো জল সাবাড় করে সুফিয়ান চৌধুরী বলে উঠলেন
“আর বলিস না।এই দেশের সব মানুষ পাগল।
এরপর থানায় কি কি হলো তার পুরোটাই মেয়েকে বললেন।রূপকথা বড় বড় চোখ করে সেসব শুনলো।সুফিয়ান গায়ের ইউনিফর্ম খুলতে খুলতে ব্যাস্ত গলায় বললেন
“তোর টিকিট কেটে ফেলেছি।
“কবের টিকিট কাটলে?
“উনিশ তারিখ।
“রাতের টিকিট কেটেছো তো নাকি?
“হ্যা রে বাবা।রাত সাড়ে এগারোটায় ।
একা একা জার্নির খুশিতে এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো রূপকথা।এরপর হঠাৎ সারফরাজ এর ছবির পেছনের ঠিকানার কথা মনে পড়লো তার।কিছুটা উৎসুক আর ভাবুক হয়ে শুধালো
“মেডিকেল কলেজ থেকে রামপুরা কতো দূর বাবা?
বেসিনে হাত ধুতে ধুতে সুফিয়ান চৌধুরী বললেন
“বেশি দূর নয় কেনো?
“এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
কথাটি বলে আর দাঁড়ালো না রূপকথা।তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।এরপর মনে মনে বলে উঠলো
“একবার এই ঠিকানায় গিয়ে খুঁজ করবো?
মনে মনে কথাটি বলে নিজের ফোন হাতে নিলো রূপকথা।লম্বা সময় পরে আছে হাতের মুঠোয়।আপাতত পড়াশোনা নেই।ইউটিউব এ বিভিন্ন রান্নার রেসিপি,ফেসবুকিং,আর ঢাকার বিভিন্ন দর্শনার্থী স্থানের রিভিউ দেখেই কেটে যাচ্ছে তার দিন কাল।সবকিছু অলস অলস লাগে কেমন যেনো।অলস সন্ধ্যার বোরিং নেস কাটাতে ফেসবুকে ঢু মারলো রূপকথা।বিছানায় আরাম করে শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে স্ক্রলিং করতে লাগলো একের পর এক।হঠাৎ এক উদ্ভট ফেসবুক আইডি নজর কাড়লো তার।কয়েক দিন ধরেই আইডিটা তার নিউজ ফিডে পিপল ইউ মে নো তে স্থান দখল করে বসে আছে।কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি রূপকথা এমন প্রোফাইল ওয়ালা মানুষ কে চিনেনা।চিনতে চায় ও না।নামটাও কেমন উদ্ভট “ডেভিল কিং।
প্রোফাইল টাতে একটু গুতোগুতি করার খায়েশ হলো রূপকথার।শয়তান নাড়া দেয়া যাকে বলে।প্রোফাইল ঘেঁটে মোট সাত জন মেয়ে আর তিন জন ছেলে পেলো।মেয়ে গুলোর পোশাক আশাক আস্তাগফিরুল্লাহ মার্কা ঠেকলো রূপকথার কাছে।মিনিট দুয়েক সেই আইডিতে ঘুরাঘুরি করে রূপকথা বুঝলো নিউ খোলা হয়েছে।ছেলেটা বিদেশি।ঠিকানা ,বিজনেস এরিয়া সব দেশের বাইরের।আরেকটু ঘাটাঘাটি করে রূপকথা টুক করে একটা মেসেজ ড্রপ করলো বাংলায়
“মিস্টার ডেভিল আরেকবার অপনার এই উদ্ভট ছবি ওয়ালা প্রোফাইল আমার নিউজ ফিডে আসলে আপনার সব গুলো দাঁত একটা একটা করে ভা*; ঙ বো আমি।
মেসেজটি লিখে রূপকথা মনে মনে হাসলো।বিদেশি ব্যাটা বুঝবেও না কি লিখেছে সে।তাই মনস্থির করলো ইংলিশ এ লিখবে সেইম মেসেজ।ফোন হাতে নিয়ে আবার সেই ইনবক্সে ঢুকতেই কপাল কুঁচকে এলো তার।লোকটি ইতিমধ্যে তার মেসেজ দেখে ফেলেছে এবং কিছু লেখার ট্রাই করছে।রূপকথা নিজের মেসেজ খানা লিখার আগেই ওপাশ থেকে উত্তর এলো
“ওপস রিয়েলি?
অবাক হয়ে রূপকথা অবাকের ইমুজি সেন্ড করলো।সাথে সাথেই চোখ টিপের ইমুজি ফিরতি এলো।রূপকথা বিরক্তি নিয়ে বললো
“বাংলাদেশে বসে বসে বিদেশি সাজা হচ্ছে?ফেইক লোক কোথাকার!
ওপাশের ব্যাক্তি কিছুক্ষন পর একটা অদ্ভুত সুন্দর পাখির ডাক সহ নাইট ভিউ ভিডিও সেন্ড করে লিখলো
“আম নট ফেইক।
রূপকথা ভিডিও টা দেখে অবাক হয়ে শুধালো
“এখন ক’টা বাজে?
নিজের ফোনের স্ক্রিন শট পাঠিয়ে দেখালো
“এখন ভোর রাত।
রূপকথা আর কিছু লিখার আগেই আরেকটা মেসেজ টিং করে উঠলো
চেকমেট পর্ব ১১
“নাইস আইস।দে ওয়ান্না কিলিং মি
রূপকথা ঠোঁট টিপে লিখলো
“আর ইউ ফ্লার্টিং?
ওপাশ থেকে ভয়ংকর আকর্ষণীয় ভয়েস মেসেজ এলো
“গড সয়ার।ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম মাই হার্ট ফিলস সিক।এন্ড অলসো মাই হার্ট ইজ বিটিং ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম ।হুয়াট ইজ দ্যা নেইম অফ ডিজ ফিলিং?