প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৬

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৬
আদ্রিতা নিশি

গোধূলির আকাশ আজ মেঘের আঁচলে মুখ ঢেকে বসে আছে। জানুয়ারির শীতল বিকেল অথচ বাতাসে হঠাৎ এক অস্থিরতার স্পর্শ। তীব্র শীত হাড়ের গভীরে প্রবেশ করে প্রকৃতির শরীরকে কাঁপিয়ে তুলছে। পরিবেশ এতটাই শীতল যে বিকেলের আলোও ম্লান হয়ে সন্ধ্যার ছায়া নেমে আসার আভাস দিচ্ছে। আকাশের বিষণ্ণ রঙ, বাতাসের শীতল স্পর্শ, আর নিস্তব্ধ প্রকৃতি যেন একটাই কথা বলে নিম্নচাপের কোনো নির্জন বার্তা হয়তো লুকিয়ে আছে আগামীর মেঘেদের বুকে।

সারহান অরিত্রিকার রুম থেকে বেরিয়ে ধীরপায়ে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে আসে। ছাদের ঠান্ডা হাওয়ায় তার শারীরিক ক্লান্তি কিছুটা কমলেও মনের উদ্বেগ এতটুকু মলিন হয়নি। জরুরি একটি কল করতে হবে এই চিন্তায় তার ভ্রূ কুঁচকে আছে তার। একটু আগেই আবির কল করেছিল কিন্তু ফোন সাইলেন্টে থাকার কারণে সে বুঝতেই পারেনি। এখন মেহমুদ রঈসের হসপিটালের অবস্থান জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেইসঙ্গে রঈসের মেয়ে হৈমীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে কি না সেটাও জানা জরুরি।এমপি হওয়ার পর থেকেই সারহানের জীবন জটিলতার বেড়াজালে আটকে গেছে। প্রতিটি মুহূর্তে নতুন দায়িত্ব, নতুন সমস্যা। অথচ এগুলোর শেষ কোথায় তা সে নিজেও জানে না। গভীর শ্বাস ফেলে সে ফোনটি হাতে নেয়। প্রথমেই ইনানকে ফোন করে।সে
হসপিটালে অবস্থান করছেন। সেখানকার খবর জানা এখন অত্যন্ত জরুরি কারণ তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই নির্ভর করবে।
কল রিসিভ হতেই সারহান ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল;

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ মেহমুদ রঈসের অবস্থা কেমন?”
“ ভাই মেহমুদ রঈসের অবস্থা আশংকাজনক। ”
ইনানের কন্ঠে উদ্বেগের ভাব স্পষ্ট। সারহান পায়চারী করতে করতে গম্ভীর কণ্ঠে জানতে চাইল;
“ বাঁচার চান্স কতো পার্সেন্ট? ”
“ অনলি ফাইভ পার্সেন্ট। অতিরিক্ত ড্রিংকস আর নে*শা দ্রব্য নেওয়ার ফলে ফুসফুস বিকল হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম হয়ত অতিরিক্ত পেটানোর ফলে অবস্থা আশংকাজনক হয়ে গেছে। কিন্ত মেহমুদ রঈস আগে থেকে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। ”
সারহান উক্ত কথা শুনে তৎক্ষনাৎ দাঁড়িয়ে গেল। কপালে আঙুল স্পর্শ করে কিছুক্ষণ মৌন থেকে বলল;
“ ডাক্তারদের সাথে কথা বল, উন্নত চিকিৎসা দিতে বল। চিকিৎসায় যত টাকা লাগে আমি দেব, শুধু আমার মেহমুদ রঈসকে জীবিত চাই।”

“ ঠিক আছে।”
সারহান ফোন কেটে দিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়ায় কিন্তু তার মস্তিষ্কের ভেতর ঝড় বইতে শুরু করেছে। নয়ন তালুকদার তার বুকের ভেতর জমে থাকা প্রতিশোধের দাবানলকে প্রতিনিয়ত উস্কে দেয়। নয়ন তালুকদারের মতো কুচক্রীকে শায়েস্তা করতে হলে মেহমুদ রঈসের মতো পাকা পোক্ত একজন সাক্ষীর প্রয়োজন। সারহান জানে সময় তার পক্ষেই কাজ করবে। আজ না হোক, কাল তার সেই সময় আসবেই, যখন নয়ন তালুকদার নামক প্রিয় শত্রুকে নিজের পথে থেকে সরে যেতে বাধ্য করবে।সারহানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে যা প্রতিশোধের আগাম বার্তা দেয়। মনের ভেতর গভীর পরিকল্পনা এঁটে নেয় সে।ফোনটি আবার হাতে তুলে নেয় সারহান। ঠান্ডা ধীর এবং অটল আঙুলে স্ক্রিন স্পর্শ করে নির্ধারিত নাম্বারে কল দেয়। ফোনের অপর প্রান্তে আবিরের অপেক্ষা। সারহানের কণ্ঠে অভ্রান্ত দৃঢ়তা।
“ হ্যালো সারহান। ”

সারহান ফোন কানে চেপে ধরে স্বাভাবিক কন্ঠে শুধায়;
“ বাচ্চাটার কি খবর? পেয়েছিস। ”
“ হ্যা পেয়েছি। ”
আবির আমোদিত কন্ঠে বলল। সারহান পুনরায় বলে ;
“ কোথায় পেয়েছিস? ”
“ কোথায় আবার! শা*লা নয়ন তালুকদারের পুরনো বাড়িতে। ”
“ ওখানে আর কেউ উপস্থিত ছিল?”
“ নয়ন তালুকদারের দুজন লোক ছিল। দুটোকে এমন পেদিয়েছি মনে হয় না তিন চার মাস আর দাঁড়াতে পারবে। ”
সারহান শুনল তবে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করে ;
“ কোথায় তোরা? ”
“ গাড়িতে আছি, হসপিটালে যাচ্ছি। হৈমীর হাতে আঘাত লেগেছে একটু। ”

“দ্রুত ডাক্তার দেখা। আর বাচ্চাটাকে খাবার খাইয়ে দিস। ”
“ঠিক আছে কিন্তু তারপর বাচ্চাকে কোথায় রাখব? ”
“ তোর কাছে রাখ আপাতত। ”
“ ঠিক আছে।”
“শোন হৈমীকে সাবধানে রাখিস আমি এখান থেকে বেরিয়ে সোজা পার্টি অফিসে যাব। তারপর ভাবা যাবে বাচ্চাটাকে কোথায় রাখা যায়। ”
“ ওকে।”

সারহান ফোন কেটে দিয়ে গভীর তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে অদূরের নীলচে আকাশের দিকে উদাসীন চোখে তাকায়। শীতের সন্ধ্যার বাতাস তার গা ছুঁয়ে যায় কিন্তু তার মনের জ্বলন্ত অগ্নি এক বিন্দুও নেভে না। মনের ভেতর প্রশ্ন ওঠে এই রাজনীতি তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? মানুষ থেকে পশু হয়ে যাওয়ার এই যাত্রা কি সে নিজেই বেছে নিয়েছিল? বুকের গভীরে যেন কোনো অদৃশ্য হাহাকার বাসা বেঁধেছে। একাকীত্বের বিষণ্ণ সুর তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে শুরু করেছে।রাজনীতির কঠিন খেলায় জড়িয়ে সে আজ এমন এক ব্যক্তি হয়ে উঠেছে যার মনে দুর্বলতার কোনো স্থান নেই। পরিবার ছাড়া আর কারো জন্য তার জীবনে কোনো নরম কোণ নেই। তার প্রতিটি পদক্ষেপ ধূসর শৈলশ্রেণির মতো কঠিন।সে ভাবে, এই রাজনীতি তাকে কী দিয়েছে? হয়তো কিছু নাম, কিছু খ্যাতি, একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। কিন্তু সেইসঙ্গে দিয়েছে অগণিত শত্রু।যাদের উপস্থিতি গভীর অন্ধকারের মতো তার জীবনের প্রতিটি কোণায় ছায়া ফেলে। স্বাধীনচেতা জীবনের স্বপ্ন এখন তার কাছে দুর্বার মরীচিকা। এখানে ভুলের কোনো জায়গা নেই কারণ একটি ভুল পদক্ষেপই তার জীবনকে শেষ অধ্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।

সারহান আবারও গভীর শ্বাস ফেলে, তার মনের দ্বন্দ্ব আর হতাশার জালে বন্দী হয়ে নীরব দাঁড়িয়ে থাকে।
“ ভাই তুমি আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছো? আর একটা বাচ্চাও আছে তোমার। আমাদের এসব জানাবে না তাই আমার ভাতিজীকে পার্টি অফিসে লুকিয়ে রেখেছো?”
পেছন হতে সাদাতের বিস্ময়ে বলা কথাগুলো শ্রবণ হতেই সারহান আকাশ হতে দৃষ্টি নামিয়ে নেয়। বুক টান টান করে তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় সাদাতের দিকে। ভ্রুযুগল বেঁকে যায় কিছুটা। বিরক্তে ছেয়ে যায় তার মুখ। ভরাট কন্ঠে বলে ;
“ কি বললি আবার বল। ”
সাদাত কিছুটা এগিয়ে আসে। অবিশ্বাস্য চাহনিতে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলে ;
“ ভাই তুমি এটা ঠিক করোনি। বিয়ে করবে বললেই বাবা তোমার বিয়ে দিয়ে দিত। তা না বলে তুমি নিজে একা একা বিয়েটা সেরে নিলে?”

সাদাত সারহানকে ডাকতে ছাদে এসেছিল। এসে শুধু শেষের গুটিকয়েক কথা শুনে মনমতো যা ইচ্ছে ভেবে নিয়েছে। আগে পরে কিছু না ভেবে উৎকন্ঠা চেপে না রাখতে পেরে গরগর করে মাথায় চলা হযবরল বলে দিল। সারহানের মন মেজাজ বিগড়ে আছে। দুই দিকের চিন্তায় সে ভীষণ চিন্তিত। এর মাঝে সাদাতের উদ্ভট কথা শুনে সারহানের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। গমগমে কন্ঠে বলল ;
“ এক লাইন বললে দশ লাইন বুঝিস। আগে কথাটা পুরো শুনে তারপর বিচার করবি। তোকে কে বলল আমি বিয়ে করেছি?”
সারহানের চোখে বিরক্তি অথচ কণ্ঠে চাপা ধমক। সাদাত একটু থতমত খেয়ে যায়। গলার স্বরে যে গভীর রাগের ছাপ তাতে নিজের ভুলটা আঁচ করতে দেরি হয় না। তবুও সে হাল ছাড়ে না। গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ তাহলে বাচ্চাটা কে ভাই?”
“ তোকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই।

সারহানের কণ্ঠে রাগের অদৃশ্য তীর প্রতিটি শব্দে ছুটে আসল। অন্যদিকে সাদাতও কম যায় না! তার মনের গহীনে একরাশ সন্দেহ দানা বেঁধেছে। তার ধারণা ভাই নিশ্চয়ই গোপনে বিয়ে করেছে এবং একটি বাচ্চাও রয়েছে। যা সবাই থেকে লুকিয়ে রাখছে।এই সন্দেহ তাকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। সাদাত ভাবল মায়ের কানে এই কথা তোলাই সঠিক হবে। তার মনে বিশ্বাস সত্যটি সামনে আনতেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। এক মুহূর্ত দেরি না করে সাদাত উল্টো দৌড় দিল চিলেকোঠার দিকে।সেখানে গিয়েই মায়ের সামনে সমস্ত কথা ফাঁস করে দেবে।
দুপুরের খাবার শেষে বসার ঘর জমজমাট। হাসি-আড্ডা, গল্প আর স্মৃতিচারণে ঘর জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তবে এই প্রাণবন্ত পরিবেশে অনুপস্থিত দুজন আরশাদ সাহেব এবং আজমল সাহেব। বহুদিন পর দেখা হওয়ায় তারা বাড়ির পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন সাথেই চলছে চা আর হালকা নাশতা।

অরিত্রিকা এক কোণে বসে চিপস মুখে দিচ্ছে আর তার পাশে দাঁড়িয়ে ইশরা সেই চিপস ভাগ করে নিচ্ছে নির্লজ্জ ভঙ্গিতে। কিন্তু অরিত্রিকার মন অন্য কোথাও। তার চোখের সামনে ভেসে উঠছে দুপুরের দৃশ্য। সারহান রুম থেকে বেরোনোর পর তড়িঘড়ি করে সে নিচে নেমে আসে। নিচে এসে দেখে আরশাদ সাহেব, তানিয়া বেগম, সাদাত এবং ইশরা সকলে নাস্তা করছেন। অন্যদিকে সাথী বেগম আর অরিন আরশাদ সাহেবের নিয়ে আসা ফলমূল ফ্রিজে সাজাচ্ছেন। আজমল সাহেব বড় ভাই আর ভাবীর সঙ্গে হাসিমুখে গল্পে মেতে আছেন।অরিত্রিকাকে দেখে আরশাদ সাহেব আর তানিয়া বেগম তাকে কাছে ডেকে শরীরের খবর নেন। তার এখন কেমন লাগছে তা জানতে চান। তখন অরিত্রিকা বুঝেছিল সবার এই হঠাৎ একত্রিত হওয়া মূলত তাকে নিয়েই। এতদিন পর এতজনকে একসাথে দেখে তার মন যেন শান্ত হয়ে আসছিল। তবে সেই শান্ত মনের ভেতরও একজনের জন্য রাগের আগুন জ্বলছিল। সে আর কেউ নয় অতি বদমেজাজি, খারুস, কাঠখোট্টা সারহান ভাই। দুপুরে তাকে এক মুহূর্তের জন্য গাধী বানিয়ে ছেড়েছিল! সারহানের সেই অভদ্র আচরণ তার মনের গভীরে কাঁটার মতো বিঁধে আছে।

“ ইশরা বেবি, তোর মনে হয় না সারহান ভাই আজ কাল বেশী ভাব নেওয়া শুরু করছে? ”
অরিত্রিকার সন্দিহান সুর। একমনে কিছু একটা ভেবে চলেছে। ইশরা চিপসের অবশিষ্ট অংশ মুখে পুরে বলল ;
“ ভাব নেওয়াই তো স্বাভাবিক। এমপি হয়েছে, হ্যান্ডসাম দেখতে। জানিস ইদানীং বড় মামুর বাড়িতে সারহান ভাইয়ের জন্য বিয়ের সম্বন্ধ আসছে। ”
অরিত্রিকা আড় চোখে তাকাল। কৌতুহলী ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করল;
“ কোনো মেয়ে পছন্দ করেছে বড় মা?”
“ বড় মামী বেশ কয়েকটা মেয়ের ছবি পছন্দ করে রেখেছেন তবে এখনো সারহান ভাইকে দেখায় নি। আমি ওয়েট করছি বিয়ের দাওয়াতের জন্য। জানিস এখনি প্ল্যান করে রেখেছি সারহান ভাইয়ের বিয়েতে কি ড্রেস পরব, কোন গানে নাচব। ”

অরিত্রিকা মুখ বাঁকিয়ে নিজেকে নিজেই ভাবতে থাকে”যার বিয়ে, তার কোনো খবর নেই, অথচ পাড়া-প্রতিবেশীর ঘুম নেই।” এমন বিরক্তিকর ভাবনাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। চিপসের প্যাকেট থেকে আরেকটা চিপস তুলে মুখে পুরে মনোযোগ দিয়ে চিবাতে শুরু করল। যদিও বাইরে সে শান্ত ভঙ্গিতে চিপস খাচ্ছে কিন্তু তার মনের ভেতর ভয় এক বিশাল সাইক্লোনের মতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।তার ভাবনা আটকে আছে ভার্সিটির সেই চিরকুটের কাহিনিতে। সেই ঘটনাটা যদি কোনোভাবে সারহান ভাই জানতে পারে? আর যদি জানতে পারে যে সেই চিরকুটের আসল মালিক আর কেউ নয়, বরং অরিত্রিকা নিজেই! তখন কী হবে?সারহানের সেই খারুস, বদমেজাজি স্বভাবের কথা ভাবতেই অরিত্রিকার শরীর দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। সেদিন হয়তো তার বাঁচার আর কোনো উপায় থাকবে না। সারহান ভাই তাকে মুহূর্তে ধুয়ে-মুছে শেষ করে দেবে তা নিয়ে তার একটুও সন্দেহ নেই। এমন ভয়ে আচ্ছন্ন হয়েও বাইরে সে নির্বিকার থাকার ভান করে চিপস খেতে থাকে।

সাদাত সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত নামল। ছুটে এসে দাঁড়াল সবার সামনে। মনে উত্তেজনা আর দৌড়ে আসায় হাঁপিয়ে গিয়েছে সে। তানিয়া বেগম কথা বলা বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলেন;
“ সারহানের কথা বলা শেষ হয়নি?”
সাদাত যেন এই প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছিল। জোরে শ্বাস টেনে গরগর করে বলল;
“ আমি ডাকতে গিয়ে দেখলাম ভাই কথা বলছে।”
তানিয়া বেগম বললেন;
“ তারমানে এখনো কথা বলা শেষ হয়নি। ”
“ হয়েছে। কাকে নিয়ে কথা বলছিল এটা শুনলে মাথা ঘুরে যাবে। ”
“ কাকে নিয়ে কথা বলছিল সারহান?”
“ আমার ভাতিজীকে নিয়ে কথা বলছিল।”
“ তোর ভাতিজী মানে?”

তানিয়া বেগম বুঝতে না পেরে বললেন। উপস্থিত সকলে সাদাতের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। সাদাত মুখ ভার করে বলল;
“ ব্রো বিয়ে করেছে মা। তার একটা মেয়ে আছে। ”
সকলে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। সাদাতের বলা কথা যেন বজ্রপাত ঘটাল। এসব তারা কি শুনছে বিয়ে, বাচ্চা। কখন কি হলো? ”
তানিয়া বেগম কিছুটা রেগে বলল ;
“ এসব কি বলছিস?”
সাদাত আগের মতো বলে উঠে ;
“ সত্যি বলছি। ব্রো’র মেয়ের নাম হৈমী। আমি নিজ কানে শুনেছি।”

তানিয়া বেগমের মাথা ঘুরে গেল। তিনি থম মেরে মাথা ধরে বসলেন। সাথী বেগম কি বলবে বুঝতে পারছে না। অরিন ছুটল সারহানকে ডাকতে। ইশরা স্তব্ধ হয়ে রইল।অরিত্রিকার হাত থেকে চিপসের প্যাকেট মেঝেতে পড়ে গেল। হতবুদ্ধির ন্যায় বসল। এসব সে কি শুনছে? সারহান ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে একটা বাচ্চা আছে। সে এসব শুনে পুরাই শকড।
অরিত্রিকা নাটকীয় ভঙ্গিতে দুকানে হাত দিয়ে মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল;

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৫

“ না আমি বিশ্বাস করি না।”
❝প্রেমের সমাধী ভে’ঙে,মনের শিকল ছিঁড়ে, পাখি যায় উড়ে যায়।
তোমায় পাবো না জানি,শুধু চোখের পানি দিয়ে গেলে আমায়।
খাঁচার পাখি কভু খাঁচায় থাকে না, বনেরও পাখি বনের মায়া ছাড়ে না।
ও ও ও,পাখি যায় চলে যায়,আমার হৃদয় ভে’ঙে যায়।❞
সেই মুহুর্তে ভেসে এলো ইশরার হতাশায় নিমজ্জিত কন্ঠের গানটি।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে সিজন ২ পর্ব ৭