চেকমেট পর্ব ১৪
সারিকা হোসাইন
ঘড়ির কাটা এগারোর ঘরে গিয়ে জানান দিলো তার সময়।নিস্তব্ধ সিয়েরা ফরেস্ট এ সেই ঢং ঢং ধ্বনি কেমন ভৌতিক আর গা ছমছমে ঠেকলো।কুয়াশার ভারী আস্তরণ চারপাশে ধুম্র জালের ন্যয় বিস্তার লাভ করেছে।হুতুম পেচা আর নাম না জানা ভয়ানক স্বর ওয়ালা নিশাচর প্রাণী গুলো কেমন বেসুরে আহত গলায় অবিরত ডেকে চলেছে।বৃহৎ পাখা ঝাপটিয়ে দূরে কোথাও পালাতে চাইছে তারা।কিন্তু কেনো?
কুয়াশার জাল আরেকটু যখন ঘন হয়ে এলো আলপাইন এলাকায় ঠিক তখন সারফরাজ এর গাড়ি এসে থামলো বাড়ির ফ্রন্ট ইয়ার্ডে।মেয়েটিকে গাড়ি থেকে নামার অনুরোধ করতেই প্রশস্ত হেসে নেমে দাঁড়ালো সে।এরপর সারফরাজ চলে গেলো পার্কিং স্পেসে।ফিরলো মিনিট পাঁচেক পর।মেয়েটি তখনও আগের জায়গাতেই স্থির দাঁড়ানো।বিমুগ্ধ হয়ে সারফরাজ এর বিলাসবহুল বাড়িটা পরখ করছে সে।বাঁকা হেসে মেয়েটির সম্মুখে এসে দাড়ালো সারফরাজ।এরপর কিছু বুঝে উঠবার আগেই এক ঝটকায় তাকে কোলে তুলে নিজের বেড রুমের অভিমুখে চলতে লাগলো।মেয়েটি সারফরাজ এর গলা জড়িয়ে অদ্ভুত চোখ জোড়া পড়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু ওই ভয়ানক চোখের ভাষা পড়া কি এতোই সহজ?সারফরাজ এর মনের ভেতর আসলে কি চলছে তার কিচ্ছুটি ঠাহর করতে পারলো না মেয়েটি।
কীয়তখন গড়াতেই নিজের অন্ধকার বেডরুমের নরম বিছানায় মেয়েটিকে ছুড়ে ফেললো সারফরাজ।অল্প কোকিয়ে উঠলো মেয়েটি।সুইচবোর্ড হাতড়ে কক্ষ ফকফকে আলোয় পরিপূর্ণ করলো সারফরাজ।এরপর গায়ের শার্ট এর বাটন খুলতে খুলতে মেয়েটির উদ্দেশ্য বলে উঠলো
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“টেক অফ ইউর ক্লথস বেবি।
সারফরাজ এর শীতল গলার কথায় মেয়েটি একটু নড়ে উঠলো।কিন্তু গায়ের কাপড় খুললো না।এতে সারফরাজ মেয়েটির অগোচরে বাঁকা হাসলো।হঠাৎই শোয়া থেকে উঠে খপ করে সারফরাজ এর কলার চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়াতে চাইলো মেয়েটি।কিন্তু কৌশলে এড়িয়ে গেলো সারফরাজ।এরপর গায়ের শার্ট মেঝেতে ছুড়ে ফেলে পাশে থাকা ডিভানে আয়েশ করে বসলো।সারফরাজ এর মোহনীয় শরীর মেয়েটিকে কেমন উন্মাদ করে তুললো।নিজের ধ্যান ভুলে অভুক্ত কুকুরের ন্যায় এগিয়ে গেলো সারফরাজ এর পানে।এরপর সারফরাজ এর শক্ত এবস এ হাতের আঙ্গুল বুলিয়ে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো
“লেট মি বি ক্রেজি।
মেয়েটির কথায় সারফরাজ এর রক্তিম ঠোঁটের কোণে কেমন রহস্যজনক হাসির রেখা খেলে গেলো।কিন্তু মেয়েটি তা খেয়াল করলো না।সে যেনো এখন এই দুনিয়াতেই নেই।ধীরে ধীরে সারফরাজ তার খাবার ন্যায় হাত বাড়ালো মেয়েটির পানে।অজানা সুখে মেয়েটি চোখ বুজে সারফরাজ এর পায়ের কাছে হাটু মুড়ে বসে রইলো।কিন্তু যা ভেবে চোখ বুঝলো তা যেন মুহূর্তেই দাবার চালের ন্যয় উল্টে গেলো।মেয়েটির পানে কোন আকাঙ্ক্ষার হাত বাড়ায় নি সারফরাজ।যা বাড়িয়েছে তাতে কেবল নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতা।মেয়েটির বাদামি কোঁকড়ানো চুলের মুঠি বেশ শক্ত করে চেপে ধরেছে সারফরাজ।মেয়েটি ব্যাথায় গুঙিয়ে উঠে সারফরাজ এর পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।চোখ জোড়া কেমন চকচকে দেখাচ্ছে।কোনো শিকারীকে ঘায়েল করার পর একটা পশুর চোখের মণি যেমন নিষ্ঠুর হয়ে উঠে ঠিক তেমন।মেয়েটি কিছু বুঝে উঠবার আগেই ডিভানের পাশ থেকে একটা বন্দুক বের করে মেয়েটির কপালে তাক করে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো সারফরাজ।এরপর গম্ভীর ভয়ানক গলায় শুধালো
“হু সেন্ট ইউ ডিয়ার?
মেয়েটি এমন ভয়ানক কাণ্ডে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো।তার কাছে মনে হচ্ছে সেচ্ছায় সে সিংহের খাঁচার সামনে এসে খাঁচার দুয়ার উন্মুক্ত করেছে।ভীত চোখে মুখে দ্রুত মাথা নাড়িয়ে মেয়েটি ভাঙা কম্পিত গলায় বলল
“আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড ইউ।
মেয়েটির বেকাবু অবস্থায় সারফরাজ এক চোট হাসলো।বেজায় বিশ্ৰী আর ভয়ংকর সেই হাসির শব্দ।এমন সুদর্শন পুরুষের এমন ভয়ানক বিশ্ৰী হাসি যে কারোর জন্য অবাককর।
মেয়েটির গাল থেকে গলদেশ পর্যন্ত রিভলবার এর নল স্লাইড করতে করতে হঠাৎ মেয়েটির বক্ষদেশে হাত ঢুকিয়ে দিলো সারফরাজ।এহেন কাণ্ডে মেয়েটি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।কিন্তু তাচ্ছিল্য হাসলো সারফরাজ।বুকের ভেতর থেকে একটা ধারালো ব্লেড বের করে এনে দম ফাটানো হাসলো সারফরাজ।এরপর গর্জে উঠা গলায় শুধালো
‘আর ইউ গোয়িং টু কিল মি উইথ ডিজ স্মল ওয়েপন ?হুহ?
লুকিয়ে রাখা ব্লেড সারফরাজ এর হাতে দেখে গলা শুকিয়ে উঠলো মেয়েটির।তবুও নিজেকে সামলে উত্তর করলো
“ইটস নট ফর কিলিং ইউ ডার্লিং।জাস্ট ফর মাই সেফটি।
মেয়েটির কথায় আরেক চোট হাসলো সারফরাজ।এরপর চুলের মুঠি ধরে মেয়েটিকে দাঁড় করিয়ে জামার নীচে হাত ঢুকিয়ে উরুর কাছ থেকে বের করে আনলো আরেকটি ব্র্যান্ড নিউ রিভলবার।রিভলবার টা হাতে নিয়ে ঠোঁট উল্টে ভ্রু উঁচিয়ে সারফরাজ বললো
“wow… নাইস গান।
মেয়েটি এবার নিজেকে বাঁচানোর জন্য কোনো সাফাই গাইলো না।নিজের সেফটির জন্য মুহূর্তেই এক ঘুষি মেরে দিলো সারফরাজ এর চোখে।ঘুষির তোড়ে কিছুটা সটকে দাঁড়ালো সারফরাজ।মুহূর্তেই নিজের কোমর থেকে একটা ধারালো চাকু বের করে সারফরাজ এর দিকে তেড়ে গেলো সে।এবার যেনো নিজের চূড়ান্ত নির্দয়তা দেখালো সারফরাজ।কৌশলে কব্জা করে মেয়েটির হাত চেপে ধরে কপাল বরাবর শুট করে দিলো।নিমিষেই পিছন দিকে চিৎ হয়ে পরে গেলো মেয়েটি।রক্তের ধারায় সারফরাজ এর কক্ষের সফেদ কার্পেট রঙিন হলো।মেয়েটির নিথর দেহের পানে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে নাক ফুলিয়ে সারফরাজ বলে উঠলো
“সী হাউ আই ফাকড ইউ বিচ।
কথাটি বলে সেই লাশ ডিঙিয়ে পুনরায় ডিভানে গিয়ে বসলো সারফরাজ এরপর একটা সিগারেট ধরিয়ে চোখ বুঝে হেলান দিলো।কিছুক্ষন পর এঞ্জেলো কে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হলো অভিরূপ।মেয়েটির নিষ্প্রাণ দেহ আর সারফরাজ এর কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে অভিরূপ ব্যাস্ত গলায় শুধালো
“ডেকে এনে মেরে দিলি?
সিগারেট এ লম্বা টান দিয়ে সারফরাজ ঠান্ডা গলায় বলল
“নয়তো এখানে আমার লাশ থাকতো।
অভিরূপ যেনো নির্বাক হলো এমন কথায়।একটা অচেনা মেয়ে সারফরাজ কে কেনো মারতে চাইবে?এদিকে এঞ্জেলো ঘেউঘেউ করে সমানে ডেকে চলেছে।হয়তো মেয়েটির নিথর দেহ তার ভালো লাগছে না।সব কিছু উপেক্ষা করে সারফরাজ শুধালো
“ব্লাইন্ড ডেট এর ব্যাবস্থা কার মাধ্যমে করেছিস?
অভিরূপ চট করে উত্তর দিলো
“ড্যাভিন এর মাধ্যমে।
তাচ্ছিল্য হেসে সারফরাজ বললো
“কাল ওকে বাড়িতে ডাক অজগরের কাবাব খাওয়াবো।
অজগরের কাবাব কথাটি শুনে পেট গুলিয়ে বমি পেলো অভিরূপ এর।তবুও মুখ চেপে ধরে শুধালো
“ঘটনা খুলে বল।
“মেয়েটির হাতে যেই স্পাইডার ট্যাটু দেখছিস এটা ওই ডেভিল কিং এর গ্যাঙ এর।এই ট্যাটুর মানে জানিস?
অভিরূপ নিঃশব্দে মাথা নাড়লো।
সারফরাজ সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বললো
“ধীরে ধীরে শিকারীকে ফাঁদে ফেলে তার জীবন নিয়ে নেয়া।একটা গ্যাঙ এর ট্যাটুর সাথে আরেকটা গ্যাঙ এর ট্যাটুর কোনো মিল পাবি না তুই।এই ট্যাটু আমার এরিয়ায় কারোর নেই।মেয়েটি এখানকার নয়।সে লসএঞ্জেলস এর।
“তুই কিভাবে জানলি?
বিস্ফারিত চোখে জানতে চায় অভিরূপ।
“কথার টোন আর হাতের ট্যাটু দেখে।এই ট্যাটু লস এঞ্জেলস ঘুরতে গিয়ে দেখেছি আমি।ওকে কেউ পাঠিয়েছে আমাকে শেষ করার জন্য।এমনকি সে আমার প্যালেস এর চারপাশে চক্কর কেটে সুযোগ খুঁজেছি যদি কোনো ভাবে আমাকে এখানেই শেষ করা যায় সেই আশায়।কিন্তু বিষাক্ত ম্যাম্বা তাকে বিফল করেছে।
অভিরূপ ভয়ার্ত কন্ঠে বললো
“তাহলে কি হবে এবার?
বাঁকা হেসে সারফরাজ উত্তর করলো
“আমাকে মারা এতো সহজ নয় বন্ধু।মরার আগে ঘাতক কে মেরে তবেই আমি মারবো।কারন হেরে যাওয়া একদম পছন্দ নয় আমার।
আজ উনিশ তারিখ।সকাল থেকেই ব্যাস্ত সময় কাটলো রূপকথার।ঢাকায় গিয়ে ভর্তি কিভাবে হবে,কোথায় কোন ড্রেস পরে ঘুরবে কি কি কাগজপত্র নেবে এবং কোন কোন স্যান্ডেল সাথে নেবে এসব পরিকল্পনা করতে করতেই দিনের অর্ধেক বেলা গড়িয়ে গেলো।এদিকে রূপকথার ফুপু শিউলি আর ন্যালি সমানে ফোন করে যাচ্ছে রূপকথা কখন ট্রেনে উঠবে।সুফিয়ান চৌধুরী ও আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরলেন।মেয়ে চলে যাবে বলে কথা।রেখা একে একে সব সব গুছিয়ে দিলো রূপকথাকে।কুলসুমও আজ অনেক ব্যস্ত।নিজের ব্যাগ খানা গুছানো শেষ হতেই আরেকবার তা ভালো করে পরখ করলো রূপকথা।এরপর রিডিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ছোট বক্স বের করলো।তপ্ত শ্বাস ফেলে সেটা খুলতেই একটা শার্টের বোতাম বেরিয়ে এলো।বোতামের উপর আঙ্গুলি স্পর্শ করে রূপকথা বললো
“এটা ছাড়া আমার কাছে আর কিছুই নেই সারফরাজ।এই বোতামে এখনো তোমার গন্ধ পাই আমি।কি নিষ্ঠুর ছিলো সেই দিনটা তাই না?
কথাটি বলে ব্যাথিত মনে নিজের হ্যান্ড ব্যাগের ভেতর সযত্নে বক্স টা রেখে চেইন আটকে টেবিলে রেখে দিলো রূপকথা।এরপর সারফরাজ এর ফ্যামিলি ফটো আর সারফরাজ এর পুরাতন কাপড় গুলো ব্যাগে তুলে চেইন আটকে দিলো।হঠাৎই শো রেক এর ভেতরে থাকা এক জোড়া জুতার কথা মনে এলো রূপকথার।তার ষোল তম জন্মদিনে সুফিয়ান তাকে গিফট করেছিলো।বেশ দামি জুতা।জুতা জোড়া বিদেশি কোম্পানির।রূপকথার যতদূর মনে পড়ে আগামী কয়েকবছর সুফিয়ান কোন বাইরের দেশে ঘুরতে যায়নি।গুগল ঘেটেও রূপকথা দেখেছে বাংলাদেশ এ এই জুতো পাওয়া যায়না।খুবই সুন্দর র্যাপিং পেপারে মোড়ানো ছিলো জুতার বাক্স খানা।দেখেই মনে হয়েছিল খুব যত্ন সহকারে আনা হয়েছে জুতো জোড়া।এমন নিখুঁত বক্সিং করে কখনোই জুতো গুলো অন্য দেশে থেকে এদেশে আনা পসিবল নয়।বক্সের উপরে লিখা ছিলো “ডিয়ার রূপকথা।
লিখাটাও সুফিয়ান চৌধুরীর না।রূপকথা তখন সেসব মাথায় না আনলেও পরে এটা নিয়ে অনেক ভেবেছে।বেশ কয়েকবার সুফিয়ান চৌধুরীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস ও করেছে।কিন্তু কেমন এলোমেলো উত্তর দিয়েছেন তিনি।রূপকথার মনে হয়েছে উনি কিছু লুকাচ্ছেন।কিন্তু কি?
মনে মনে এসব ভেবে সেই জুতা জোড়াও বের করে আনলো রূপকথা।এরপর খুব যত্নে পায়ে তুললো তা।আগে লুজ হলেও এবার ঠিকঠাক খাটলো।সুন্দর এক জোড়া স্নিকার্স।রূপকথা ভাবলো এই জুতো পড়ে কলেজ করবে সে।তাই খুব যত্নে সেগুলোও ব্যাগে ভরলো।এরপর অপেক্ষা করতে লাগলো যাত্রার।
সাতটার দিকে রূপকথাকে নিয়ে সুফিয়ান আর রেখা ছুটলো চিটাগাং স্টেশনের অভিমুখে।যাবার বেলায় কুলসুম রূপকথাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো।এই প্রথম কুলসুম এর জন্য বেশ মায়া হলো রূপকথার।নিজের কিছু জুতো আর ড্রেসের মালিক করে খুশি করলো কুলসুম কে।এরপর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।নির্ধারিত সময়ের আগেই প্লাটফর্মে এসে উপস্থিত হলো তারা।রেখা ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদলেন।তাতে বিরক্ত হলেন সুফিয়ান।স্ত্রী কে মৃদু ধমকে বললেন
“আহ কি হচ্ছে কি এসব?মেয়ে কি মহাকাশে যাচ্ছে?দুদিন পর তো আমরাও যাচ্ছি।এতো কান্নাকাটির কি আছে?বেক্কল মহিলা মানুষ।
স্বামীর ধমকে আচঁলে চোখ মুছে কান্না বন্ধ করলেন রেখা।সুফিয়ান নিজের বোনকে ফোন করে রূপকথার যাত্রা সম্পর্কে জানালেন।মেয়ের যাতে এই দুমাস কোনো প্রকার কষ্ট না হয় তার ও হুমকি দিলেন।এরপর ব্যাগ পত্র নিয়ে রূপকথার কেবিনে তুলে দিলেন।আরো কিছু আলাপ চারিতায় ট্রেন ছাড়ার সময় এলো।রেখাকে নিয়ে সুফিয়ান ট্রেন থেকে নামার প্রস্তুতি নিলেন।যাবার আগে মেয়েকে আরো কয়েক দফা সতর্ক বাণী ছুড়ে সব কিছু বুঝিয়ে নেমে গেলেন।সুফিয়ান আর রেখা প্রস্থান নিতেই রূপকথার মন ভার হলো।খুব করে কান্নাও পেলো।কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখলো।হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন ধীর গতিতে নড়ে উঠলো।চাকা গুলো একটু সচল হতেই হুড়মুড়িয়ে কে যেনো লাফিয়ে উঠে গেলো ট্রেনের ভেতর।এরপর কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে সিটে বসে দম ছাড়লো।
আকস্মিক আগন্তুক এর আগমনে কপাল কুঁচকে রূপকথা ধমকে বলে উঠলেন
“এই এই আপনি কে?আমার কেবিনে কি করছেন?
রূপকথার মিহি স্বর লোকটির কানে গেলো না।রূপকথা আরেক দফা চেঁচিয়ে উঠতেই নিজের টিকিট রূপকথার সামনে মেলে ধরে ছেলেটি ভারী গলায় বলল
“এটা আমার কেবিন।ইউ শুড গেট আউট ফ্রম হেয়ার।
ছেলেটির হাত থেকে ছো মেরে টিকিট নিয়ে রূপকথা নজর বুলালো।এরপর নিজের টিকিট ও বের করলো।একই কেবিনের নম্বর।রূপকথার জানা মতে সুফিয়ান কখনো মেয়ের জন্য অন্য লোকের কামরায় টিকিট কাটবে না।মুহূর্তেই এক হাউকাউ লেগে গেলো কেবিন জুড়ে।দুজনের তর্জন গর্জনে এগিয়ে এলো এটেন্ডেন্স।দুজনেই তার হাতে টিকিট গুঁজে বলে উঠলো
“এক্সপ্লেইন ইট।
এবার যেনো ভ্যাবাচ্যাকা খেলো মানুষটি।বোকার মতো হেসে বললো
“আপনাদের থেকে কেউ একজন ব্ল্যাকে টিকিট কেটেছেন তাই এমন হয়েছে।কিচ্ছু করার নেই কো অপারেট করুন।।
লোকটির থেকে টিকিট কেড়ে নিয়ে রূপকথা বলে উঠলো
“কো অপারেট মাই ফুট।
ছেলেটিও কানে হেডফোন গুঁজে সটান হয়ে বালিশে শুয়ে পড়লো।অগত্যা উপায় না পেয়ে রূপকথা বসে বসে গজগজ করতে করতে বলে উঠলো
“পুরো এডভেঞ্চার ঘেঁটে দিলো ফাজিল লোকটা।
ছেলেটি কান থেকে হেডফোন খুলে বলে উঠলো
“আর একটাও কথা বললে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলবো দেড় ইঞ্চি মেয়ে মানুষ কোথাকার।
রূপকথা চড়াও হয়ে বলে উঠলো
চেকমেট পর্ব ১৩
“খাম্বা একটা।
আর কোনো কথা হলো না দুজনের।ট্রেনের দোলায় কখন ঘুমের ঘোরে ঢলে পরলো রূপকথা তার খেয়াল রইলো না।স্বপ্নে কেউ কানের কাছে ফিসফিস করে ডাকলো
“প্রিয় রূপকথা….