প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৭

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৭
আদ্রিতা নিশি

~বিকেলের আচরণের জন্য আমি খুবই দুঃখিত সারহান ভাই।
মৃদুস্বরে ভেসে আসা মেয়েলী কন্ঠস্বর শুনেই সারহান হাঁটা থামিয়ে অরিত্রিকার দিকে তাকালো। সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো~ কোন ঘটনার জন্য দুঃখিত বলছিস?
অরিত্রিকা অস্বস্তিতে পরে গেলো।এখন সে কিভাবে বলবে?সে তো ভেবেছিলো সারহান হয়তো ঘটনাটা মনে রেখেছে।অথচ তাকে ভু ল প্রমাণ করে দিয়ে কিছু হয়নি এমন ভাব করে আছে।এই মানুষটা আসলে কেমন প্রকৃতির সে বুঝে উঠে পারেনা। গিরগিটি মনে হয় মাঝে মাঝে।গিরগিটির ন্যায় রুপ পাল্টায়। এখন মনে হচ্ছে না বললেই ভালো হতো।

সারহানকে অরিত্রিকাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো~ কয়টা বাজে জানিস? দশটা।আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে।এই জায়গা রাতের জন্য একদম পারফেক্ট নয়।স্থানীয় বখা টেদের উপদ্রব বাড়ে গভীর রাত হলে।এখানে না দাঁড়িয়ে চল।
অরিত্রিকা সারহানের কথা শুনে হাঁটতে শুরু করলো।সারহানও পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।আফ্রিদি হয়তো এতোক্ষণে পদ্মা গার্ডেন পেরিয়ে গেছে।সাথে সাদাত আর ইশরাও আছে।অরিত্রিকার খেতে দেরি হওয়ায় সারহান বলেছিলো আফ্রিদিকে ইশারা আর সাদাতকে নিয়ে এগোতে সে অরিত্রিকাকে নিয়ে আসছে। অরিত্রিকা নোঙর পেরিয়ে আসতেই কিছুটা দূরে বসে থাকা কয়েক জোড়া কাপল দেখলো।কি সুন্দর মুহুর্ত কাটাচ্ছে তারা।অরিত্রিকা তা দেখে মৃদু হাসলো। নিশ্চয়ই তার জীবনে যে আসবে তাকে নিয়ে এভাবেই সময় কাটাবে নিরিবিলিতে।তখন সময়টাও অনেক সুন্দর হবে।সারহান আবছা আলোয় খেয়াল করলো অরিত্রিকা কিছু দেখে হাসছে সে অরিত্রিকার দৃষ্টি খেয়াল করতেই উদঘাটন করলো আসল কাহিনী। তা দেখেই সারহান ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো~ওইদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে কোনো লাভ নেই।এগুলো আমাদের বাড়িতে নট এলাউড।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরিত্রিকার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো।সে আড় চোখে সারহানের দিকে তাকালো।মনে মনে বকে চলেছে সারহানকে।সবসময় শাসন।
সারহানের খেয়াল করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো~ তোর এখন আবেগের বয়স। এগুলো হয়তো দেখে ভালো লাগছে।কিন্তু একটা সময় আসবে যখন এসবের কারণে অনুশোচনা হবে।আমরা কল্পনায় যেমনটা চিন্তা করি বাস্তবতা তার উল্টোটা। তাই সবদিক ভেবে তার পর সিদ্ধান্ত নিবি।
অরিত্রিকার এই কথায় ফুরফুরে মেজাজের বারোটা বেজে গেলো।উফ এই মানুষটা এমন কেনো? সে ঠিকই বলে যন্ত্র মানব একটা। যার জীবনে কোনো ভালোবাসা,ভালোলাগা কিছুই নেই।শুধু পারে রা গ দেখাতে।মুখ গোমড়া করে সে সরাসরি রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে লাগলো। সারহান বুঝেছে অরিত্রিকা রা গ করেছে।রাগ করারই কথা।এই বয়সটা তো সেও পার করে এসেছে।এই সময়ে আবেগ কাজ করে বেশী।তাই ভুল সিদ্ধান্ত নেয় অনেকেই।পদ্মা গার্ডেনের কাছে আসতেই অরিত্রিকার চোখ পরলো লাল টকটকে গোলাপের ঝুড়ির দিকে।একজন মাঝবয়সী মহিলা বিক্রি করছেন রাস্তার একপাশে বসে।একজন মেয়ে ওই মহিলার থেকে ফুল কিনছে। অরিত্রিকার ইচ্ছে হলো গোলাপ কেনার জন্য।সে উচ্ছ্বসিত হয়ে সারহানকে বললো~ আপনি এখানেই দাঁড়ান আমি আসছি।

সারহান কিছু বলবে তার আগে অরিত্রিকা দৌড়ে গোলাপ ফুল বিক্রেতা মহিলাটির কাছে গেলো।সারহান কেনো যে এখানে এসেছিলো? আসায় ভুল হয়েছে তার।এই মেয়ের পাল্লায় পরলে পা গল হয়ে যাচ্ছে।এতো চঞ্চলতা কেনো? সারহানের বির ক্ত লাগছে।সে পা বাড়িয়ে অরিত্রিকার কাছে গেলো।অরিত্রিকা ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে সুন্দর ফুল তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। ফুল খোজার যুদ্ধ শেষে তিনটা ফুল সে পছন্দ সই নিয়ে নিলো।
অরিত্রিকাফুল নিয়ে মাঝ বয়সী মহিলাকে বললো ~ফুলগুলোর দাম কতো?
মাঝবয়সী মহিলা বললেন~ ষাইট ট্যাকা তিনডা।
অরিত্রিকা নিজের পার্স হতে টাকা বের করতে লাগলো। অরিত্রিকা টাকা দেবে তার আগে সারহান তার মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে মহিলাটিকে দিলো। পাঁচশত টাকার নোট দেখে মহিলাটি বললেন~ বাবা আমার কাছে তো ভাংতি হইবোনা।

সারহান স্বাভাবিক ভাবে বললো~ পুরো টাকাটা রেখেদিন।
মহিলাটি ইতস্তত ভাবে বললো~ যে ট্যাকা আমার হয় ওইডাই দেন। এতো ট্যাকা নিমু না।
সারহান মহিলা টির ইতস্ততা কাটানোর জন্য বললো~ আমরা তো আপনার থেকে ফুল নিয়েছি।ফুলগুলো অনেক সুন্দর তাই খুশি হয়ে দিয়েছি টাকা।
মহিলাটি একটু হেসে বললো~ আপনাগো দুইজনরে বহুত মানাইছে।দুইজন দুইজনের হাত ছাইড়েন না।সারাজীবন পাশে থাইকেন।মনে হইছে বিয়া হয় নাই।বিয়া কইরা ফালাইয়েন সুখী হইবেন দুজনে।দোয়া করি সুখী থাইকেন সবসময়।
অরিত্রিকা মহিলার বলা কথা কানে ভেসে আসতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। কান গরম হয়ে গেলো তখনি।এই বদ মেজাজি মানুষটার সামনে এসব কি বলে বসলো?সে সহসা তাকালো সারহানের মুখ পাণে। নিশ্চয়ই মহিলাটি তাদের কাপল ভেবেছে।মূলত বেশীরভাগ মানুষ এখান থেকে প্রিয় মানুষের জন্য ফুল নেয়। ভীষণ অস্বস্তিতে জর্জরিত হলো তার মন সত্তা।কেমন অদ্ভুত অনুভুত হচ্ছে তার।
সারহান মুখশ্রী স্বাভাবিক রেখেই মহিলাটিকে বললো~ আপনার বুঝতে ভুল হয়েছে আমরা কোনো প্রেমিকযুগল নই। অরিত্রিকা আমার কাজিন হয়।
মহিলাটি নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললেন~ না বুইঝা কইয়া ফালাইছি। দুঃখিত।
~ইট’স ওকে।অরিত্রিকা চল।

সারহান কথাটা বলেই পা বাড়ালো সামনের দিকে।অরিত্রিকা সারহানকে চলে যেতে দেখে সেও পিছু পিছু চলতে শুরু করলো। দুজনে হাঁটছে চুপচাপ। তাদের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে। অরিত্রিকা অন্যমনষ্ক হয়ে ভাবছে।সামান্য এই কথা শুনেই লজ্জা য় শেষ সে।এসব পরিস্থিতিতে যে কেনো পরতে হয় তাকে?।সারহান ভাই যে কি ভেবেছে কে জানে? এমন লজ্জাজনক ঘটনা বারবার সারহানের সামনেই ঘটে কেনো সে বুঝে-না। আচ্ছা এখন তো সে জিজ্ঞেস করতে পারে উনার গার্লফ্রেন্ড আছে কি না? বলবে কি বলবেনা এটা নিয়েও দোটানায় পরলো সে।বলা,যেতেই পারে।বললে অপমান করবে এর থেকে বেশী কিছু হবে না।সে সাহস নিয়ে বললো~ সারহান ভাই।
~বল।
~আপনার জিএফ আছে?
~তোকে বলতে আমি বাধ্য নই।আর একটা কথা বললে তোকে এখানে রেখেই চলে যাবো। সব সময় ইডিয়েটের মতো প্রশ্ন করিস।
অরিত্রিকা আর কিছু বলার সাহস পেলোনা।সে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। বলা যায় না যদি সত্যিই রেখে চলে যায়।

আফ্রিদি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সারহান আর অরিত্রিকার জন্য অপেক্ষা করছে। এতোকক্ষণ হয়ে গেলো তবুও আসছেনা কেনো? সাদাত তো গাড়িতেই শুয়ে পরেছে।সে ঘুমে বিভোর। ইশরার মাথা গরম হয়ে গেছে।আর কতোকক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে সে।পরিচিত কেউ হলে এমনটা হতো না কিন্তু অপরিচিত একজনের সাথে দাঁড়িয়ে আছে এটাই বিরক্তিকর। সাদাতকে সে ইচ্ছা মতো মনে মনে বকছে।এখুনি কেনো ঘুমানো লাগবে?সে জেগে থাকলে তাও গল্প করা যেতো। এদিকে মশার জ্বালায় সে অতিষ্ট।হাত দিয়ে মশা তাড়ানোর চেষ্টা করছে সে।আফ্রিদি ইশরাকে এমন করতে দেখে বললো~ মিস আপনি গাড়িতে বসতে পারেন।
ইশরা সাদাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো পুরো সিট জুড়ে শুয়ে আছে।সে করুণ স্বরে বললো ~ কোথায় বসবো? সাদাত তো পুরো সিট জুড়ে শুয়ে আছে।

~সামনের সিটে বসুন।
ইশরার আর ইচ্ছে নেই দাঁড়িয়ে থাকার সে গিয়ে সামনের সিটে বসলো।আফ্রিদি সারহানকে কল দিবে কিন্তু তার কাছে তো নম্বর নেই।অরিত্রিকার নম্বর টাও নেই।সে ইশরাকে জিজ্ঞেস করলো~ আপনার কাছে ব্রো’র নম্বর আছে।
ইশরা বললো ~ হুমম আছে।
~নম্বরটা দিন তো সারহান ব্রো আর অরি এখনো আসছেনা কেনো কল করে জানতে হবে।
ইশরা নিজের ফোন বের করে সারহানের নম্বর বললো।আফ্রিদি নম্বরটা ফোনে তুলে সেভ করে কল করবে এমন সময় সারহান আর অরিত্রিকাকে আসতে দেখলো।
আফ্রিদি পকেটে ফোন রেখে বললো ~ এতো দেরি কেনো হলো তোমাদের?
সারহান অরিত্রিকার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপ করে বললো~ পাগ/লীকে রাস্তা চিনিয়ে আনতে গিয়ে লেট হয়ে গেলো।
আফ্রিদি আশে পাশে তাকিয়ে কিছু না বুঝে বললো~ পাগলী কই পেলে? তোমাদের সাথে তো কোনো পাগলীকে দেখতে পাচ্ছিনা।

~আমার পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে তাকে কি দেখতে পাচ্ছোনা?
আফ্রিদি হতবুদ্ধির ন্যায় অরিত্রিকার দিকে তাকালো।অরিত্রিকা কটমট করে সারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।তার মন চাচ্ছে এই যন্ত্র মানবের মাথা ফাটিয়ে দিতে। সারহান তা দেখেও উপেক্ষা করেই নিজের গাড়িতে গিয়ে বসলো।
আফ্রিদি অরিত্রিকাকে বললো~ রাগ করোনা। চলো তাড়াতাড়ি।
অরিত্রিকা একটু রে গেই বললো~ আমি কোথায় বসবো?
আফ্রিদি দেখলো ইশরাও ঘুমিয়ে গেছে।সে কিছুটা ভেবে বললো ~ সারহান ব্রো’র গাড়িতে যাও।
অরিত্রিকা ক্ষুব্ধ হয়ে বললো~অসম্ভব আমি উনার গাড়িতে যাবোনা।
আফ্রিদি বেচারা পরেছে মহা বিপদে এখন সে কি করবে?অরিত্রিকা রে গে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।সারহান আফ্রিদিকে ডাকলো।আফ্রিদি সারহানের গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলো।সারহান কিছু একটা বলতেই আফ্রিদি ফিরে এসে নিজের গাড়িতে বসে স্টার্ট দিলো।

অরিত্রিকা আফ্রিদিকে বললো~ আমি কোথায় বসবো?
~ব্রো’র গাড়িতে বসো।বলেই গাড়ি টান দিলো।
অরিত্রিকা আশ্চর্য হয়ে গেলো আফ্রিদির এহেন কান্ডে।সে আফ্রিদির গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। এরও নিশ্চয়ই ওই যন্ত্র মানবের বাতাস লেগেছে। তাই তো হার্টলেসের মতো আচরণ করলো।এখন সে কিভাবে যাবে? ওই ব দ মানুষের গাড়িতে সে কখনোই যাবেনা।অটোতে যাবে? তাও সাহস হচ্ছেনা তার।একা একটা মেয়ে অটোতে একা যাওয়া ঠিক হবেনা।সারহান অরিত্রিকাকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেলো।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৬

সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো~ এখানেই কি দাঁড়িয়ে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করবি নাকি? যদি না যাস আমি চলে গেলাম।
অরিত্রিকা হঠাৎ সারহানের কথা শুনে চমকে গেলো।সে নিজেকে ধাতস্ত করে মিনমিনে কন্ঠে বললো~আসছি।
অরিত্রিকা গিয়ে সারহানের পাশের সিটে বসে পরলো।সারহান আর দেরি না করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো গন্তব্যে।

প্রণয়ের সন্ধিক্ষণে পর্ব ৮