পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬৩
সাদিয়া আক্তার
রাত তিনটা নিশি জাগা রাত পাখির মতো জেগে আছে চন্দ্র পুনম। কাল শুক্রবার সেটার পুরো ফায়দা উঠিয়েছে চন্দ্র তবে অন্যান্য দিনের মতো আজ পুনম ছটফট করেনি উল্টো আলিঙ্গন করেছে তখন চন্দ্র অবাক হয়েছে বলেছে
— আজ এই অধমের প্রতি এতো দয়া কিভাবে?
— কিসের দয়া আমার স্বামী আমাকে এতো ভালোবাসে আমি তাকে একটু ভালোবাসতে পারব না।
ফাজিল হেসে চন্দ্র বলল — তাহলে আজ থেকে ভালোবাসার পরিমাণও বাড়াতে হয় তাহলে। আমারও তো ইচ্ছে করে জোহরা বিবির ভালোবাসা পাওয়ার।
পুনম চোখ রাঙিয়ে চন্দ্রর বুকে কিল দেয়। হাসে চন্দ্র।
ফজরের আজানের একটু আগে চন্দ্র তোয়ালে পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। ট্রাউজার ও টিশার্ট পরে নিচে যায় তার জোহরা বিবির আবদার এখন তার খিদে লেগেছে। সিড়ি দিয়ে নামছে চন্দ্র কোলে পুনম।
রান্নাঘরে গিয়ে পুনমকে একটা টুলে বসিয়ে চুলা জ্বালায়। নিজের জন্য কফির পানি বসিয়ে পুনমের জন্য মিল্কসেকের ইনগ্রেডিয়েন্স রেডি করে
দুধ কলা বাদাম একে একে সব কিছু পরিমাণ মতো ঢেলে দিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে। গ্লাসে চারটা বরফ কীউব ঢেলে মিক্সারটা গ্লাসে ঢালে। পাশাপাশি নিজের কফিটাও করে ফেলে গ্লাস দুইটা ট্রেতে রেখে পুনমকে কোলে নেয়।
পুনম ট্রেটা নিজের হাতে নেয়।
আবার তারা নিজেদের ঘরে যায়। বারান্দায় ফ্লোরে বসে দুইজন কতশত কথা বলতে থাকে হঠাৎই চন্দ্রর কিছু মনে পরতে পুনমকে জিজ্ঞাসা করল — জোহরা,, থাইরয়েডের ঔষধটা খেয়েছিলে রাতে??
— হুম আপনার সামনেই না খেলাম,,
চন্দ্র নিশ্চিত হয় নাহলে কয় দিন পরে মেয়েটা ব্যাথায় আবার কাতরাতো। তাদের কথোপকথনের মাঝে আজান দিলে দুইজন ওযু করে আগে পিছে দাড়ায় আজ পুনমের আবদারে চন্দ্র ইমামতি ও করে।
আজ দুজনের মুনাজাতটাও বেশ দীর্ঘ হয় চন্দ্র চায় জোহরার সুস্থতা আর পুনম চায় তাদের ভালোবাসার পরিপূর্ণতা একটা সন্তান।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চন্দ্রর চোখ ফাকি দিতে দিতে কেটে গেছে অনেক দিন। তবে চন্দ্রর চোখ ফাকি দিতে পুনমকে বেশ কসরত করতে হয়েছে। যেদিন যেদিন ড্রিংকস জাতীয় কিছু আনে সেদিন তখনই সেটা খায়না পুনম। সেটা রেখে রেনু অথবা মিনুকে দিয়ে বাজার থেকে সেরকমই আরেকটা আনিয়ে রাখে আর ঐ বোতল তাদের সেখানে ফেলে আসতে বলে।
দুইজনও বেশ ভালোভাবে পুনমের আদেশের পালন করে।
চন্দ্র যখন রাতে পুনমকে তার আনা ড্রিংকস খেতে দেখে তখন নিশ্চিন্ত হয়।
মুক্তির হঠাৎই ব্যাথা উঠায় কামরুল সাহেব ও পারভেজ সাহেব তাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। তাদের সাথে চাদনী বেগমও গিয়েছে। পুনম ইহানকে খবর দিয়ে দিয়েছে।
বাসার মধ্যে মায়ের ঘাড়ে মাথা রেখে পুনম বসে আছে তার মাথা কেমন ঝিমঝিম করছে পেটে চিনচিনে ব্যাথা করছে।
— খারাপ লাগছে মা,,,
পুনম মাথা নাড়ে রোজিনা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ইদানীং তার একটাই চাওয়া মেয়েটার সুস্থতা ও তার কোল আলো করে যেন একটা সন্তান আসে। রোজিনা উগলে আসা কান্নাটা গিলে ফেলে।। মেয়েটা অনেক আগে থেকেই রক্ত শূন্যতায় ভুগছে আর সে মা হয়ে কোনো খেয়ালই করতো না সেই পশ্চাতাপে রোজিনার জায়নামাযে অশ্রু ঝড়ে।
চন্দ্রর ফোন আসে — আসসালামু আলাইকুম
— ওয়ালাইকুমুস সালাম,, মুক্তিকে কোন হাসপাতালে নিয়েছে,,??
— এনাম মেডিক্যাল নিয়েছে আর হ্যা লিমন ভাইকেও একটা ফোন দিয়েন।
— আচ্ছা
ফোন রেখে দেয় পুনম আর এই অসুস্থতার খবর চন্দ্র জানে না সকাল থেকেই তার খারাপ লাগছে তবে সেটা লুকিয়ে চন্দ্রকে রেডি করিয়ে ভার্সিটি পাঠিয়েছে।
কিছুক্ষণ পরেই খবর আসে মুক্তির সি সেকশন করা লাগছে পানি ভাঙ্গায় শরীর বেশী খারাপ হয়েছে গিয়েছে।
ডাক্তার এখনো অপারেশন থিয়েটারে বের হয়নি।
কথা শেষ করে রোজিনা। পাশে তাকিয়ে দেখে পূর্ব ও পুনম একসাথে ঘুম রোজিনা উঠে রান্নার জোগাড়ে লাগে।
হাসপাতালে খাবার নিয়ে যাবে তাই সেই মতোই রান্না করে সেতো আর থাকতে পারবেনা তাই চাদনী বেগম থাকবে।
পূর্ব ও পুনমকে নিয়ে রেনু মিনুকে বাসার খেয়াল রাখতে বলে রোজিনা হাসপাতালে যায়।
রিক্সা থেকে নেমে রিসিপশনে জিজ্ঞাসা করে যায় এদিকে।
ওটির থেকে ডাক্তার বেড়িয়ে জানায় মুক্তির ও ছেলে হয়েছে।
— আলহামদুলিল্লাহ্
রিশান চন্দ্র একত্রে দাড়িয়ে একটু পরে বাচ্চাটা আসলে সবাই তাকে নিয়ে হুরোহুরি শুরু করে। মুক্তিকে আপাতত অবজারবেশন রুমে রাখা হয়েছে। রাতে কেবিনে শিফ্ট করবে। কারো যাওয়ার অনুমতি নেই শুধু ইহান জোর করে গিয়েছে।।
সবাই আনন্দে থাকলেও পুনমের অস্বস্তি লাগছে। পেট ব্যাথায় মনে হচ্ছে বমি চলে আসছে।
সে ওয়াশরুমে গিয়ে গরগর করে বমি করে ফেলে। চন্দ্র ছুটে যায় সেদিকে। পুনমের পিঠে মালিশ করতে থাকে পরপর চারবার বমি করে পুনম ক্লান্ত মাথা চন্দ্রের বুকে এলিয়ে দেয়।
— জোহরা তুমি এই কয়দিন থাইরয়েডের ঔষধটা খাওনি।
চন্দ্রের প্রশ্নে ঢোক গিলে পুনম। লাষ্ট দুই সপ্তাহ আগে তার সার্কেল ছিলো সেটা মিস গেছে তাই ঔষধটা খায়নি পুনম যদি সে যেটা ভাবছে তাই হয় তাহলে যদি বাচ্চাটার ক্ষতি হয়।
— জোহরা কিছু জিজ্ঞেস করছি
চন্দ্রের কথায় ভাবনা ভাঙ্গে পুনমের। কিছু বলে না চন্দ্র পুনমকে হাত মুখ ধুয়িয়ে বের হতেই রোজিনা পারভেজ সাহেব একজোট জিজ্ঞাসা করে
— পেট ব্যাথা কমেছে আম্মা
তাদের কথা শুনে অবাক চন্দ্র সে গম্ভীর স্বরে বলল — তোমার পেটেও ব্যাথা ছিলো কখন থেকে??
পুনম চুপ থাকে। চন্দ্র এবার ঝাড়ি মারে — কথা বলো না কেনো??
— ককাল রাত থেকে
— এই কাল রাত থেকে ব্যাথা আর তুই এখানো আমাকে বলিস নি আমি বারবার জিজ্ঞাসা করলেও চেপে গেছিস। চল
বলেই পুনমকে টানতে নিয়ে গেলো তার রেগুলার ডাক্তারের কাছে। গাইনি ও প্রসূতি ডা: জোহরা মুনমুন
— কি সখি কি অবস্থা??
পুনম চন্দ্রের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করল। ডাক্তার দুইজনের দিকে তাকিয়ে চন্দ্রকে বলল — ভাই চন্দ্র একটু বাইরে যাও তো।।
চন্দ্র একপল পুনমকে দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
— একটু আগেই তোমার ননদের একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে দেখেছো??
— জ্বী আপু
— পুনম কি হয়েছে খুলে বলো?? ডাক্তার হিসেবে না বড় আপু হিসেবেই বলো জানো তো চন্দ্রের ভার্সিটি কলিগের বড় বোন আমি,,
পুনম কিছু পল চুপ থাকে এরপর একেএকে সব খুলে বলে। চন্দ্রের চুপি চুপি গর্ভনিধোরোক পিল খাওয়ানো সব কিছুই সেটা মিস দেয়া সবকিছুই।
পুনমের কথা শুনে ডাক্তার স্বশব্দে হেসে দিলো।
— দুই জামাই বউ ভালোই লুকোচুরি খেলেছো যাই হোক তোমার সন্দেহ ঠিক কিনা দেখি বলেই
বেল প্রেস করে কাউকে ডেকে আনায়
— প্যাথলজি বিভাগ থেকে কাউকে আসতে বলো।
মেয়েটি চলে যায়। তার কয়েক মিনিটের পরেই প্যাথলজি বিভাগ থেকে একটি মেয়ে আসে কেবিনে ঐ দিকে চন্দ্র অস্থির হয়ে এদিক ওদিক পায়চারি করছে।
তখনই পারভেজ ও রোজিনা বেগম এদিকে আসে
— চন্দ্র বাবা ডাক্তার কি বলেছে??
— কিছু বলেনি এখনো চাচ্চু,, তোমরা চলে যাও বাসায় আমি আছি আব্বু আম্মু কি এখন চলে যাবে,,
— হ্যা ভাবী আবার পরে আসবে মুক্তির শাশুড়ি আপাতত ওর কাছে আছে। আবার রুপশাও এসেছে।।
— আচ্ছা তোমরা চলে যাও,,,
পারভেজ সাহেব আরো কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। এরমধ্যে পুনমের ব্লাড ও ইউরিন নিয়েও চলে গেছে। ডাক্তারের রেফারেন্সে একঘন্টার মধ্যেই রিপোর্ট দিবে।
ডাক্তারের অ্যাসিসট্যান্ট এসে চন্দ্রকে বলল — আপনাকে ম্যাম ডাকছে,,
চন্দ্র সেকেন্ডের মাথায় কেবিনে ঢোকে।
— ধীরে সুস্থে প্রবেশ করো চন্দ্র তোমার বউ আমি খেয়ে ফেলব না।
ডাক্তারের রসিকতায় ধ্যান নেই চন্দ্রর সে পুনমকে জিজ্ঞাসা করল — পেট ব্যাথা কমেছে
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬২
— জ্বী
— আপু কি বুঝলেন?? ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলল।
— ভুলটা তোমারও আছে চন্দ্র