মায়াকুমারী পর্ব ৩০

মায়াকুমারী পর্ব ৩০
মেহেরিন আনজারা

চায়ে চুমুক বসালেন আসাদ সাহেব। পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করে সামনে রাখলেন দিলরুবা খাতুন।
“দিলরুবা কিছু বুঝচ্ছ?”
“এত বুঝার দরকার নেই। চলতে থাকুক।”
ফোন,চাবি,ওয়ালেট বের করে একসঙ্গে রাখলেন। কাপ রেখে পাঞ্জাবি পরে তৈরী হলেন।
“কালকের বিষয়টির জন্য তুমি কি অসন্তুষ্ট?”
“আপনার কী মনে হয়?”
“কিছু না।”
তৈরী হয়ে বেরিয়ে গেলেন।

নক পড়লো ধ্রুবর দরজায়। দরজা খুলতেই দেখলো ধূসর।
“কী হয়েছে?”
কার্ড বাড়িয়ে ধরলো।
“ওদের শপিংয়ে নিয়ে যাও।”
“আমার সময় নেই।”
“তো কে নিবে?”
“তুই কী করিস?”
“সবসময়ই আমিই নিই। আজ তুমি নাও।”
“আমার ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে তুই নিয়ে যা।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রইলো ধূসর। ওর এই ডোন্ট কেয়ার ভাবের জন্য ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় নিশুকে সঙ্গ দিতে হয় তার। এই ডোন্ট কেয়ার ভাবের জন্য নিশুর প্রতি উইক হয়েছে সে। জায়গা খালি করবে না আবার সরবে নাও। এক রকম দখল করে বসে রয়েছে। স্টেইট ফরওয়ার্ড যদি বলতো,ডিভোর্স হয়েছে সংসার করবে না। তাহলে সে নিশুকে নিয়ে বিদেশে সেটেল্ড হয়ে যেতো। সব জায়গা দিয়ে আঁটকে রেখেছে। রুমে ফিরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো। নেশাটা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয় সংসার করবে নাকি করবে না? না করলে চেপে ধরে চুমু খাওয়ার মানে কী? আবার বাসর করতেও জোর করে। ডিভোর্সের ব্যপারটি ক্লিয়ার করে না।
“ভাইয়া তোমার কফি!”
খুঁক খুঁক করে কেশে উঠলো নিশু। সিগারেট ফেলে দিলো।
“রেখে যা।”
ধূসরের গলা কেমন শক্ত শোনালো। একপলক তাকিয়ে পা বাড়ালো।
“শোন।”
থমকে দাঁড়ায়।
“শপিংয়ে যাবি রেডি হো।”
সায় দিয়ে চলে গেল।

ভার্সিটিতে আজ গেল না দু’জন। দ্রুত রেডি হয়ে শপিংয়ে চলে গেল। সর্বপ্রথম শাড়ির দোকানে ঢুকলো। নানারকম শাড়ি পছন্দ করতে লাগলো ওরা। অবশ্য নিশুকে কেন জানি শাড়িতেই ভালো লাগে। অনেকক্ষণ শাড়ি দেখলো দু’জন কিন্তু পছন্দ করতে পারলো না। মেজাজ খারাপ হলো ধূসরের। এদের দু’জনের সঙ্গে এই কারণে শপিংয়ে আসতে চায় না সে। বিরক্ত হয়ে নিজেই শাড়ি পছন্দ করতে লাগলো। আচমকা চোখ আঁটকালো একটি লাল খয়েরী রঙের শাড়ির উপর। একপলক তাকায় ব্যস্ত হয়ে অন্য শাড়ি দেখায় নিশুকে। হঠাৎই তারার মতো জ্বলতে থাকা নাকফুলের উপর দৃষ্টি পড়লো। কেমন চিকচিক করে উঠলো। ধূসরের মনে হচ্ছে শাড়িটা নিশুকে মানাবে। ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। লাল খয়েরি রঙের শাড়িটিতে জবা ফুল। ফুলের চারিপাশে সোনালি জরি সুতা আর দুইপাশের লেইস বসানো। জবাফুলগুলো এমব্রয়ডারি করা এবং জবা ভর্তি স্টোন। সোনালি রঙের আভা ছড়িয়ে পড়তেই শাড়িটা কেমন চিকচিক করে উঠলো।

“শাড়িটা ট্রায়াল দিয়ে আয় তো নিশু।”
চমকে তাকায় নিশু।
“ওয়াও কি সুন্দর!”
“ভাইয়া এটা আমি নিবো।”
“মনে হচ্ছে নিশুকে মানাবে।”
চুপসে গেল দ্যুতি।
“তুমি সবসময়ই নিশুকে প্রায়োরিটি দাও। সবসময়ই সুন্দর জিনিসটি নিশুর জন্য চুজ করো।”
অভিমানী হয় দ্যুতি।
“আশ্চর্য এখানে রাগ করার কী আছে?”
নীরব রইলো দ্যুতি।
“নিশু বউ মানুষ তাকে লাল রঙ মানাবে। তুই মেয়েমানুষ তোকে পিংক কালারে মানবে।”
“কোথায় লেখা আছে এমন কথা?”
“লেখা নেই আমি বলছি।”
মুখ গোঁজ করলো দ্যুতি।
“আচ্ছা দ্যুতি নিক শাড়িটা।”
“না এটা তোর জন্য।”

সেলসম্যানকে জিজ্ঞেস করলো একই ডিজাইনের আর শাড়ি আছে কিনা! সেলসম্যান একই ডিজাইনের আরো দুটি শাড়ি বের করলো তবে কালার ভিন্ন। ভাগ্যিস পিংক কালারও পেয়ে গেল। দ্যুতির কাঁধের উপর রেখে ট্রায়াল করে দেখতে নিতেই ফেলে দিতেই ধমকে উঠলো। চুপসে রইলো দ্যুতি।
“ভাইয়া পিংক কালারটা দারুণ! আমি এটা নিই?”
“না।”
দুই ভাইবোনে জেদ ধরলো।
“ভাইয়া ল্যাভেডার কালারটাও দারুণ!”
“নিবি?”
কাচুমাচু করলো নিশু।
“নিলে নে।”
“বলছিলাম এটা বুশরার জন্য নাও।”
চমকে তাকায় ধূসর।
“ওর জন্য কেন?”
“আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল ওকে এই কালারটায় মানাবে। আর আমরা তিনজন তো সবসময়ই ম্যাচিং ড্রেস কিনি।”
নীরবে তিনটি শাড়িই প্যাক করতে দিয়ে বিল পে করে অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনে বাসায় ফিরলো ওরা।

ডিনার করতে বসলো সবাই। ডিনারের জন্য দু’জনই রান্না করলো। মুডিবয় ধ্রুব বাজার করলোই না করলো না! এই তো শপিং শেষে ক্লান্ত দেহটা টেনেহিঁচড়ে আবারও বাজার করতে গেল ধূসর। সত্যি বলতে ভীষণ মায়া হয় নিশুর। শপিং করতে করতে প্রায় বিকেল হয়ে গিয়েছিল। বললেই তো শপিং হয়ে যায় না! মেয়েলি ঝামেলা! ধ্রুবর উপর চাপা ক্ষোভ তৈরি হলো নিশুর। একটা মানুষ আর কত বোবা হয়ে থাকতে পারে তা সত্যিই তার জানা নেই। ঠিক কী করবে বুঝে পায় না! দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইলিশের টুকরোগুলো কড়কড়া করে ভেজে নিলো। টেবিল সাজানো শেষ। মাছ এনে টেবিলের মাঝখানে রাখলো। শক্ত মুখে খেতে বসেছে ধ্রুব। সবাইকে সার্ভ করতে লাগলো। ইলিশের ঘ্রাণ ছড়ালো। সবার প্লেটে ধোঁয়া ওড়া গরম ভাত দিলো নিশু।

“ভাইয়া নিন ইলিশ ভাজা। আশা করি ভালো লাগবে।”
দম আঁটকে রইলো ধ্রুব।
“সাবধানে খাবেন ভাইয়া ইলিশে প্রচুর কাঁটা থাকে।”
ইলিশে কাঁটা থাকে এটা কে না জানে মেয়েটা ইচ্ছে করে জব্দ করছে তাকে। নিঃশব্দে খেতে লাগলো।
“নিন ভাইয়া এটা ইলিশের ডিম।”
সবার পাতে তুলে দিতে লাগলো। প্লেট বাড়িয়ে ধরে বলল,”মেজ ভাইয়াকে দাও ফুপি।”
প্লেট হাতে নিয়ে এক টুকরো মাছ এবং ডিম ধূসরের পাতে তুলে দিলেন।
“ডিমটা নিশুর জন্য রেখে দাও আম্মা।”
ধূসরের দিকে তাকায় ধ্রুব।
“নিশুর জন্য আছে তো।”
“সমস্যা নেই। ও খাবে।”
প্লেটে রেখে দিলো।

“ভাইয়া আরো আছে তো!”
শক্ত চোখে তাকায়। আমতা আমতা করলো নিশু। ধূসর সবসময়ই এমন। নিশুর বুক আদ্র হয়ে আসে।
“আম্মু জানো ভাইয়া আজকে আমাকে লাল শাড়িটা দেয়নি। তোমার ছেলে কী বলে জানো?”
“কী?”
“লাল শাড়ি নাকি বউ মানুষদের জন্য।”
মৃদু হাসলেন তিনি।
“ঠিকই তো বলেছে।”
“ঠিক বলেনি। নিশুর জন্য লাল শাড়ি,নিশুর জন্য ইলিশের ডিম ব্যপার কী?”
“খাবি তুই নাকি চটকাবো গাধী কোথাকার! আউল-ফাউল বকবক!”
“নিশুর জন্য তোমার এত দরদ কেন?”
বিষাক্ত লাগছে ধ্রুবর। গলা দিয়ে খাবার নামছে না। নিজেকে ধাতস্থ করলো নিশু।
“আচ্ছা ডিম খেও না। তোমার পছন্দের সরিষা ইলিশ করেছি নাও।”
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। ধূসরের পছন্দের সরিষার ইলিশ করলো তার জন্য কী করলো! তবুও নীরব রইলো। বড় দেখে এক পিস মাছ তুলে দিলো।

“কেমন হয়েছে ভাইয়া?”
“কেকা ফেরদৌসির মতো!”
“তোমার মাথা।”
ওদের এইসব কথপোকথনে শরীর জ্বালাপোড়া করছে ধ্রুবর। একপলক তাকায় দ্যুতি। ধ্রুবর মুখভঙ্গি বুঝে চিমটি কাটলো নিশুকে। বৃদ্ধা আঙ্গুল তুলে ইশারা দিলো সব ঠিক হচ্ছে।
“ভাইয়া আরেকটু ভাত নিবেন?”
নীরব রইলো ধ্রুব।
“রান্নাটা কেমন হয়েছে ভাইয়া একটুও বললেন না যে?”
ক্রোধে ফেটে যাচ্ছে মস্তিষ্ক! তপ্তশ্বাস ফেলে খাবার খেতে লাগলো।
“ফুপি তোমার ছেলে আমার উপস্থিতি পছন্দ করছে না বোধহয়!”
দ্যুতি বলল,”কে বললো! ওতো এমনই ইগোওয়ালা।”
খাবার খেয়ে উনারা দু’জন দ্রুত চলে গেলেন।
“সরি ভাইয়া আপনার ফিউচার অন্ধকার করার জন্য। আসলেই এভাবে অন্ধকার করে ফেলবো ভাবতে পারিনি। আপনি বোধহয় সেইজন্য আমার উপর এখনও রেগে আছেন।”
“তোকে নিয়ে আবার লাইট জ্বালাবো রেডি থাকিস।”
উঠে গেল ধ্রুব। বেসিনে হাত ধুয়ে নিশুকে হতভম্ব করে পা বাড়ালো ধ্রুব।

চিন্তিত হয়ে আরামকেদারায় বসলেন আসাদ সাহেব। এক খিলি পান বানিয়ে দিলেন দিলরুবা খাতুন।
“মনখারাপ কেন?”
“খারাপ নয়। নিশুর কিছু বুঝতে পারছি না!”
“কেন?”
“আজকের ঘটনাগুলো দেখোনি?”
“দুষ্টুমি করেছে হয়তো!”
“দুষ্টুমি নয় আমার মনে হচ্ছে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”
“আরে না।”
“স্বামীকে কেউ স্বজ্ঞানে ভাই বলে ডাকে?”
“এমনিতেই ওরা হয়তো দুষ্টুমি করেছে! দেখেন না আপনার ছেলে কেমন মুড নিয়ে থাকে কিছুই তো মুখ দিয়ে বেরুয় না।”

“ধূসরকে বলিও তো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে।”
“আপনার বড় ছেলেকে বললেই তো পারেন। ধূসর আর কত করবে! কিছুই হলেই ধূসর! সব জায়গায় ধূসরকে টেনে আনেন কেন?এই বয়সেই ছেলেটা হাঁফিয়ে গেছে হয়তো প্রকাশ করে না। কিন্তু বাধ্য হয়েই করতে হচ্ছে তাকে। এবার ওর বিরতির দরকার আমি মনে করি।”
“ওর যে ঘাড়ত্যাঁড়া স্বভাব কিছুই তো শোনে না। হাজারটা কথা জিজ্ঞেস করলেও তো বলে না।”
“আপনি কড়া কণ্ঠে কয়েকটা কথা শোনালেই তো পারেন দেখবেন ঠিক হয়ে গেছে।”
“তোমার এই ছেলেটা আমাকে জ্বালাযন্ত্রণা দিয়েই আমার পুরো জীবনটা শেষ করলো। ওর এই জিদের কাছেই আমি বারবার হেরে যাই।”
“ও এমনই। তাই বলে সব হজম করতে হবে নাকি! ওর কি কোনো দায়দায়িত্ব নেই?”
“ছেলেটাকে মানুষ করতে পারলে না দিলরুবা।”
“ঘুমাবেন নাকি বসে বসে আফসোস করবেন? নিজেও তো কম আস্কারা দেননি তখন। যখন যা চেয়েছে সব হাজির! ও দুঃখ-কষ্টের কী বুঝবে! আছে ওর মধ্যে কোনো মায়া-মানসিকতা আর না মানবিকতা!”

প্রায় বিকেল তিনটা। লাঞ্চ সেরে রেডি হলেন আসাদ সাহেব। নিশুকে ডেকে পাঠালেন।
“আব্বু ডেকেছো?”
“হুম। পান খাব।”
বিছানার উপর বসে মন দিয়ে পান বানাতে লাগলো নিশু।
“তোর ফুপি কী পান বানায় একটুও মজা লাগে না।”
“ফুপি শুনলে তোমার খবর আছে আর বানিয়েই দিবে না।”
চা নিয়ে এলেন দিলরুবা খাতুন। চায়ে চুমুক দিলেন। কয়েক চুমুক পান করে কাপ রেখে দিলেন।
“পান নাও আব্বু।”
মুখের মধ্যে পান পুরলেন। আয়েশ করে চিবুতে লাগলেন। উনার কেন জানি মনে হয় নিশুর হাতের পানটা খুব মজা হয়। খেতে মিষ্টি মিষ্টি লাগে।
“আমি বেরুচ্ছি। তোরা পাঁচটার মধ্যে উপস্থিত থাকিস কেমন!”
“আচ্ছা।”
“আলমারিতে টাকা আছে নিশু দে তো।”
মৃদু হাসলো নিশু। আলমারি খুলে টাকার ব্যান্ডেল নিয়ে উনার পকেটে তুলে দিলেন। এটা আজ-কালকার ঘটনা নয় আজ থেকে প্রায় সাড়ে এগারো বছর ধরে এমনটাই চলছে। আসাদ সাহেব মনে করেন নিশু সৌভাগ্যবতী। নিশু পকেটে যেই টাকা তুলে দেয় সেটা আল্লাহর রহমতে দশগুণ হয়ে ফিরে। তাই সবসময়ই ব্যবসায়িক কোনো শুভকাজে যাওয়ার সময় এমনটা করেন যদিও রিযিকের মালিক আল্লাহ। নিশু হয়তো একটা উছিলা। বেরিয়ে গেলেন তিনি।

বিকেল সাড়ে তিনটা বাজতেই পার্লারের দিকে রওনা হলো নিশু-দ্যুতি। পার্টির সাজটা ওরা বেশির ভাগ পার্লারেই করে থাকে। গাড়ি থেকে নামলো ওরা।
“ভারী মেক-আপের দরকার নেই হালকা করিস। তোর আবার মেক-আপে এলার্জি রয়েছে।”
ধূসরের দিকে তাকায় নিশু। তার এই বিষয়টিও মনে রেখেছে ধূসর। অবশ্য প্রতিবারই এভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।
“আচ্ছা।”
“গাজরা পাঠিয়ে দিবো কিছুক্ষণ পর।”
মাথা নেড়ে সায় দিয়ে লিফটে করে উপরে চলে গেল ওরা।
“আমার একটা ইমার্জেন্সি কল এসেছে। তুই ফুলের দোকানে গিয়ে দ্রুত চারটা গাজরা নিয়ে আয় যায়।”
সায় দিয়ে গাজরার জন্য পা বাড়ালো ধীরাজ। বেশ কিছুক্ষণ পর তাকে খালি হাতে ফিরতে দেখে মেজাজ খারাপ হলো ধূসরের।

“কীরে খালি হাতে এলি যে?”
“এদিকে কোথাও গাঞ্জা বিক্রি করে না।”
“কী বললি?”
“গাঞ্জা এদিকে নেই। অনেকগুলো দোকানে জিজ্ঞেস করেছি,উল্টা আরো লজ্জা দিয়েছে। বলছে ফুলের দোকানে গাঞ্জা পাওয়া যায় না আরো নানান কথাবার্তা।”
আচমকা কোমড়ের মধ্যে একটা লাথি মা’রলো।
“গাঞ্জা নয় গাজরা। বেলি ফুলের মালা চিনিস?”
মাথা নাড়ায়।
“ওইটাই।”

চুপসে গেল ধীরাজ। ধূসর নিজেই চারটা গাজরা কিনে এনে পাঠিয়ে দিলো উপরে। সাজগোছ করতে করতে প্রায় দু’জনের দেড় ঘন্টার মতো লেগে গেল। এই দেড় ঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলো ওরা দু’জন। দ্রুত বেরিয়ে এলো ওরা এবং বাসায় ফিরে গেল। রুমে ঢুকে দ্রুত তিনটি পাঞ্জাবি বের করলো নিশু। পাঞ্জাবিগুলোর বুকের দিকটায় সুতো দিয়ে কাজ করেছে সে। একটায় অপরাজিতা,আরেকটায় বাগানবিলাস এবং অন্যটায় গাঁদাফুল। প্রথমে ধীরাজকে গাঁদাফুলেরটা দিয়ে এলো এবং দ্রুত রেডি হতে বললো। এরপর ধূসরের ডোরে নক করলো।
“ভাইয়া কী করছো?”
“রেডি হচ্ছি।”
“এটা তোমার জন্য। পরলে খুশি হবো।”
নির্লিপ্তে হাতে নিলো ধূসর। হোয়াইট কালারের উপর মেজেন্টা কালারের ফুল-পাতা সহ বাগানবিলাস করা। চোখ আঁটকে গেল ধূসরের। প্রতিটি ফোঁড় কি সুক্ষ্ম!
“ভাইয়ার গায়ের রঙ শ্যামলা ওকে হোয়াইট কালারটায় দারুণ মানাবে। এটা ভাইয়াকে দিস।”
“এটা তোমার জন্য করেছি ভাইয়া। কারণ হোয়াইট কালারটায় তোমায় বোল্ড লাগে।”
“সমস্যা নেই আজ ভাইয়া পরুক।”

“না এটা তোমার জন্যই।”
“ভাইয়াকে দে ভালো লাগবে। আমাকে অন্যটা দে।”
মুখটা মলিন হয়ে গেল নিশুর।
“ঠিক আছে নাও।”
মলিন মুখে ধ্রুবর ডোরে নক করলো। বেশ সময় নিয়ে ডোর খুলতেই নিশুকে দেখতেই চমকালো। অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করলো নিশু। নিশুর লিপস্টিক দেওয়া লাল টকটকে ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইলো ধ্রুব।
“কী হয়েছে?”
“কী করছো?”
“কেন?”
অপ্রস্তুত হয় নিশু।
“রেডি হওনি?”
“কেন?”
“এটা তোমার জন্য?”
“কী?”
“পাঞ্জাবি।”
“কেন?”
“এটা পরে রেডি হয়ে নাও।”
“কেন?”
“যাবে না?”
“কোথায়?”
“তুমি জানো না?”
“না।”

“আচ্ছা জানা লাগবে না তুমি বরং এটা পরে রেডি হয়ে নাও। তারপর আমাদের সঙ্গে গেলেই দেখতে পাবে।”
“প্রয়োজন নেই।”
মুখটা মলিন হয়ে গেল নিশুর।
“রিভেঞ্জ নিচ্ছ?”
“প্রয়োজন মনে করি না।”
“তুমি আমাকে প্রতিবারই অসম্মান করেছো আমি তোমাকে সম্মান দিয়ে গিফট দিলাম তুমি রিজেক্ট করলে!”
চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।
“যেতে পারো।”
মুখের উপর ঠাস করে ডোর অফ করতেই চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো। নাক টানলো নিশু। ঠোঁট চেপে কান্না আঁটকানোর চেষ্টা করলো। তবুও কেন জানি বুক ঠেলে কান্না আসছে। টিস্যু দিয়ে খুব সাবধানে জল মুছে নিলো। জোরে জোরে শ্বাস ফেলে ধাতস্থ করলো নিজেকে। ধূসর-ধীরাজ রেডি হয়ে বেরুতেই ফুপিকে বলে দোয়া নিয়ে ওরা দু’জন একসঙ্গে নিচে নেমে গেল। নিচে গিয়ে ধূসর দেখলো ধ্রুব নেই। নিশুর দিকে দৃষ্টি পড়তেই লক্ষ্য করলো মুখখানি কেমন বিষন্ন!

“ভাইয়া কই দ্যুতি?”
“জানি না।”
“যাবে না?”
“কিছু বলেনি তো!”
ধূসর ভেবেছিল ধ্রুব রেডি হয়ে হয়তো নিচে অপেক্ষা করছে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। নিচে দাঁড়িয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করলো ওরা। বারবার হাতঘড়িতে সময় দেখতে লাগলো তবুও আসার নামগন্ধ পেলো না।
“তোরা দাঁড়া আমি আসছি।”
মাথা নেড়ে সায় দিলো ওরা। লম্বা লম্বা কদম ফেলে দ্রুত বাসায় ঢুকলো। গেইটের দু’ধারে স্পাইডার লিলি লাগানো। অবসর সময়টায় আসাদ সাহেব উনার কাজের ছেলেটাকে দিয়ে এইসব লাগায়। গেটের দু’ধারে মাটিতে ঘাসের মতো লাগিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ এগিয়ে গেল নিশু।

“দ্যুতি দেখ!”
“কী?”
“স্পাইডার লিলি ফুটেছে!”
“কই দেখি!”
“কি সুন্দর দেখ!”
“সত্যি!”
“গাছগুলো যে এত সুন্দর ফুল দিবে ভাবতেই পারিনি। জানিস,এই ফুলগুলো দেখলে আমার মনে হয় যেন চুলের ভেতর উঁকুন।”
“কেন?”
“এত ছোট এই লম্বা পাতাগুলো সিঁথি করে সরিয়ে দেখতে হয় ফুল।”
“মন্দ বলিসনি।”
একটি বাগানবিলাস ফুল ছিঁড়েতেই,”আবারও ফুল ছিড়ছেন?”
চমকায় দ্যুতি। পিছু ফিরতেই দেখলো সেদিনের সেই ছেলেটি। ছেলেটিকে দেখতেই চমকায় নিশুও। ঠিক তাহমিদের মতো। কিন্তু কোথাও একটা ডিফরেন্ট রয়েছে। দ্যুতির দিকে তাকিয়ে রইলো তানজিল। অপ্রস্তুত হয় দ্যুতি।

“আপনার কাজ কি শুধু ফুল ছেঁড়া?”
“তাতে আপনার কি সমস্যা?”
“ফুল ছেঁড়ায় কোনো মহানুভবতা নেই।”
প্রতিত্তোর করলো না দ্যুতি।
“গাছের ফুল গাছেই সুন্দর হাতে নয়।”
বিরক্ত হলো দ্যুতি। নিশুর দিকে দৃষ্টি পড়তেই বুঝতে পারলো তার ভাইয়ের জন্য দেখা সেই পাত্রী। তার মা যেমনটা বলেছে মনে হচ্ছে কমই বলেছে! দৃষ্টি সরিয়ে দ্রুত কারে উঠে চলে গেল।

মায়াকুমারী পর্ব ২৯

“কোথ থেকে যে আসে যত্তসব ফাউল!”
“সর্বনাশ দ্যুতি!”
“কী?”
“ছেলেটার মনের মধ্যে কিছু একটা চলছে!”
“ধূৎ! বাদ দে! ছেলেদের কাজই এমন। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই সেধে সেধে গায়ে পড়া স্বভাব।”

মায়াকুমারী পর্ব ৩১