আযদাহা পর্ব ৪৫

আযদাহা পর্ব ৪৫
সাবিলা সাবি

দুদিন পেরিয়ে গেছে।অ্যালিসা এখনও ট*র্চার সেলের ঠাণ্ডা, অন্ধকার দেয়ালের মাঝে ব*ন্দি।তার প্রতিটি নিশ্বাস যেন এক ভয়ানক নির্জনতার সাক্ষী।এই সময়ের মধ্যে জ্যাসপার তার সিদ্ধান্ত বদলায়নি।অ্যালিসা এবং সিলভাকে একসঙ্গে ভেনাসে পাঠানোর ব্যবস্থা চলছে।থারিনিয়াস ইতোমধ্যেই অক্সিজেন,হাইড্রোজেন,এবং কার্বন সংগ্রহ করে ভেনাসে রওনা দিয়েছে।সে ফিরে এলে,তাদের পাঠানোর কাজ সম্পন্ন হবে।
পাহাড়ের উপর গ্লাস হাউজে নিজের কক্ষে ফিওনা এক কোণে বসে আছে।তার মন অনেক ভারী।মাঝে মাঝে তার গ্ৰান্ডপার কথা মনে পড়ে।

মিস্টার চেন শিং,যিনি এই মুহূর্তে ফিওনার খুব নিকটে তবুও ফিওনাকে সামনে দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।সেই আশায় তিনি জ্যাসপারের প্রতিশ্রুতিকে আঁকড়ে ধরেছেন—মিশন শেষ হলে ফিওনাকে ফিরে দেয়া হবে।কিন্তু ফিওনা কি ফিরতে পারবে?সে নিজেও জানে না।
মিস ঝাংয়ের মুখটা মনে পড়লে ফিওনার বুকটা একটু ধক করে ওঠে।তার শৈশবের স্মৃতিগুলো ঝাপসা হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে।কিন্তু যখনই সে ভাবতে চায়,তার মন এক অদ্ভুত দ্বিধায় পড়ে যায়।জ্যাসপার… তাকে ছেড়ে যাওয়া কি সম্ভব আদো?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গ্লাসের দেওয়ালের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ফিওনার চোখ আটকে যায় আকাশে।সন্ধ্যার তারা,ভেনাসের উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকিয়ে তার মনে পড়ে যায় প্রথম সেই দৃশ্য—যখন আকাশ থেকে এক সবুজ লম্বা রেখা পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছিল।সেই সময়ের সবকিছু যেন তাকে আজ এখানে টেনে এনেছে।
অন্যদিকে, ষজ্যাসপারও নির্বিকার।সে তার লক্ষ্য স্থির রেখেছে।মিশন শেষ করতেই হবে।মিস্টার চেন শিংকে দেয়া কথা রাখতে হবে।কিন্তু তার ভেতর কোথাও একটা অস্পষ্ট অনুভূতি বাসা বাঁধছে।ফিওনাকে ছেড়ে দেয়ার কথা সে যতবার ভাবে,তার মন ততবার বিদ্রোহ করে।
এই ভাবনার মাঝে থারিনিয়াসের পথে থাকা খবর এসে পৌঁছায়।সবাই জানে,ভেনাসে তাদের পাঠানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন হতে আর বেশি দেরি নেই।অ্যালিসা এবং সিলভা দুজনেই জানে তাদের ভবিষ্যত কী হতে চলেছে।
কিন্তু ফিওনার ভবিষ্যৎ?
এই অদ্ভুত মোড়ে সবাই নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে, অপেক্ষা করছে।আর এইসবের মাঝখানে ফিওনা—এক সাধারণ মানবী,যে নিজের অজান্তেই একজন ড্রাগন প্রিন্সের হৃদয়ের সবচেয়ে গভীর অংশে স্থান করে নিয়েছে।

তিনদিন পেরিয়ে গেছে।জ্যাসপার যেন এক অদৃশ্য পর্দার আড়ালে চলে গেছে।সেদিন ফিওনাকে ওই ড্রাগনের থেকে বাঁচিয়ে আনার পর থেকে সে আর তার সামনে আসেনি।গ্লাস হাউজের নির্জনতায় ফিওনা একা বসে থাকে,তার চোখগুলো কখনো পাহাড়ের দূর দিগন্তে,কখনো গ্লাসের দেয়ালে আটকে যায়।আর জ্যাসপার?
সে ল্যাবেই সময় কাটাচ্ছে।প্রতিটি মুহূর্তে সে থারিনিয়াসের সাথে যোগাযোগ করছে,ভেনাসে উপাদান পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত।মিস্টার চেন শিংয়ের সাথে পরবর্তী মিশনের পরিকল্পনাও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।তার মুখে কোনো অনুভূতির ছাপ নেই,কাজের মধ্যে ডুবে থাকা যেন তার নিজের সান্ত্বনার একমাত্র উপায় হয়ে উঠেছে।কিন্তু মাঝরাতে,যখন গ্লাস হাউজ অন্ধকারে ডুবে থাকে,ফিওনা গভীর ঘুমে,তখনই জ্যাসপার হাউজে ফেরে।সে নির্জনে ফিওনার দিকে তাকিয়ে থাকে,কিন্তু কোনো শব্দ না করে আবার নিজের কক্ষে চলে যায়।

ফিওনার মন অস্থির।সে বুঝতে পারছে না কেন জ্যাসপার এভাবে দূরে সরে যাচ্ছে।সেদিনের ঘটনা যেন তাদের দুজনের মাঝে এক অদৃশ্য প্রাচীর তুলে দিয়েছে।ফিওনার মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খায়—”আমার কোনো ভুল হয়েছে?সে কি আমাকে দোষারোপ করছে?নাকি তার ভেতরে কোনো যুদ্ধ চলছে?”
তবে একটি বিষয় পরিষ্কার,জ্যাসপারের মনে কিছু চলছে। কিছু গভীর, ষকিছু জটিল।ফিওনা জানে এই রহস্য তাকে ছিন্ন*ভিন্ন করে দিচ্ছে।কিন্তু তার হৃদয়ের কোনো এক কোণায় সে অনুভব করে,জ্যাসপার যতই দূরে থাকুক,সে এখনো তার সুরক্ষার জন্যই লড়াই করছে।

ফিওনা আর সহ্য করতে পারছিল না।জ্যাসপারের এমন আচরণ তার মনে এক অজানা শূন্যতা সৃষ্টি করেছিল। শেষমেশ,ফিওনা সিদ্ধান্ত নিল—এভাবে আর চলতে পারে না। জ্যাসপার কেন এমন করছে,সেটা তাকে জানতেই হবে।
অ্যাকুয়ারাকে জিজ্ঞেস করতেই সে জানালো,”জ্যাসপার এখন ল্যাবে আছে।”এই কথাই যেন ফিওনার জন্য যথেষ্ট ছিল।সে মনের ভেতর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে ল্যাবে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। ষলিভিং রুমে এসে যখন পা রাখল, তখনই আলবিরার সাথে দেখা হয়ে গেল।

ফিওনা কোনো দেরি না করেই বললো,”আমাকে ল্যাবে নিয়ে চলো।প্রিন্সের সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
আলবিরা এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে ফিওনার চোখের দিকে তাকালো।তার দৃষ্টিতে কৌতূহল এবং সতর্কতার ছাপ ছিল। তারপর সে শান্ত গলায় বললো,”ফিওনা,এটা সম্ভব নয়। ল্যাবে যাওয়ার অনুমতি নেই।প্রিন্স নিজেই কঠোর আদেশ দিয়েছেন।শুধু ল্যাবের কাজে যুক্ত ব্যক্তিরাই সেখানে প্রবেশ করতে পারে।তুমি সেখানে যেতে পারবে না।”
ফিওনা এবার দৃঢ় কণ্ঠে বললো,”আমাকে যদি তুমি এই মুহূর্তে ল্যাবে তার কাছে নিয়ে না যাও,আমি নিজের ক্ষতি করবো।”
আলবিরা প্রথমে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।কিন্তু ফিওনার চোখের চাহনি দেখে সে ভয় পেয়ে গেল।সে স্পষ্ট বুঝতে পারল, ফিওনা মিথ্যে বলছে না।যদি ফিওনা সত্যি কিছু করে বসে, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।জ্যাসপার তো অ্যালিসার উপরও রেয়াত করেনি,ফিওনার জন্য যদি কোনো অনিষ্ট হয়,তাহলে প্রিন্স ওকে কোনো দায়মুক্তি দেবে না।

আলবিরার মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।”তুমি এমন কিছু করবে না,ফিওনা!”সে কাঁপা কণ্ঠে বললো।
কিন্তু ফিওনার মুখে কোনো পরিবর্তন এল না।সে বরং আরও দৃঢ়তার সাথে বললো,”তাহলে আমাকে নিয়ে চলো।আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”
আলবিরা বোঝে যে এই মুহূর্তে ফিওনাকে আটকে রাখা অসম্ভব।সে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,”ঠিক আছে।আমি তোমাকে ল্যাবের কাছে নিয়ে যাব।কিন্তু ওখানে যাওয়ার পর তুমি যা বলবে সেটা প্রিন্সের সামনে শান্তভাবে বলবে। ঠিক আছে?”
ফিওনা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

আলবিরা তাড়াতাড়ি ফিওনাকে নিয়ে ল্যাবের দিকে রওনা দিল।ফিওনার পায়ে পায়ে ল্যাবের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল দুজন।ল্যাবের দরজা বন্ধ,কিন্তু ভেতর থেকে জ্যাসপারের কাজের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
আলবিরা কাঁপা কণ্ঠে বললো,”আমি দরজার প্যানেল খুলছি।কিন্তু তুমি কী বলতে চাও,সেটা ভেবে নিও,ফিওনা।”
ফিওনা কিছু বললো না।তার মনোযোগ ছিল দরজার ওপাশে থাকা জ্যাসপারের দিকে।আজ সে জ্যাসপারের সমস্ত গোপনা কথা জানবেই।

জ্যাসপার এক্সিকিউটিভ চেয়ারে বসে গভীর মনোযোগে কম্পিউটারের স্ক্রিনে কিছু তথ্য বিশ্লেষণ করছে।তার চারপাশে ল্যাবের নীরব পরিবেশ ভেদ করে কেবলমাত্র যন্ত্রপাতির সূক্ষ্ম শব্দ শোনা যাচ্ছে।হঠাৎ করেই তার নাকে পরিচিত এক হরমোনাল গন্ধ ভেসে আসে।
জ্যাসপার তার মাথা সামান্য ঘুরিয়ে নাক দিয়ে গন্ধ শুঁকে নিশ্চিত হতে চায়।কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে নিজেকে স্থির করে ফেলে।”এটা হয়তো আমার ভ্রম।ফিওনা তো এখানে আসতে পারবে না,”সে নিজেই নিজেকে বলে।
কিন্তু গন্ধটা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।তার ড্রাগন সত্ত্বা এই গন্ধের সঙ্গে খুব পরিচিত।মৃদু রাগ মিশ্রিত কৌতূহল জেগে ওঠে তার মনে।
জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য চেয়ারে গা এলিয়ে বসে এবং চোখ বন্ধ করে হালকা নিঃশ্বাস নেয়।সেই গন্ধ যেন তার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছে।
জ্যাসপার এক্সিকিউটিভ চেয়ারে হেলান দিয়ে ছিল।হঠাৎ, ফিওনা পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরে।জ্যাসপার ধড়ফড় করে উঠে পড়ে।তার চোখে অবিশ্বাসের ঝলক।মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে,ফিওনা ওর খুব কাছে ঝুঁকে আছে।

“ফিওনা?!”জ্যাসপার অবাক হয়ে বলল। “তুমি এখানে কীভাবে?আর কে তোমাকে ল্যাবে ঢুকতে দিলো?আমার অনুমতি ছাড়া কেউ এখানে ঢুকতে পারে না।”
ফিওনা কোনো কথা না বলে এক মুহূর্তের জন্য তার চোখের গভীরতায় তাকিয়ে থাকে।তারপর মুচকি হেসে বলে, “আপনার অনুমতি ছাড়া আমি এখানে আসিনি।আমি তো আপনার নিজের। আপনার কাছে আসতে কোনো অনুমতির দরকার হয় না আমার।”
এটা বলেই ফিওনা তার হাত দিয়ে জ্যাসপারের গলা আরও শক্ত করে ধরে।জ্যাসপার কিছু বলতে যাবে,এমন সময় ফিওনা আরও কাছাকাছি চলে আসে।
ফিওনা আর কোনো কথা না বলে জ্যাসপারের পায়ের ওপর কোলে বসে পড়ে এবং তার গলা জড়িয়ে ধরে।জ্যাসপারের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হয়;সে কিছু বলতে গেলে তার কণ্ঠরোধ হয়ে আসে।ফিওনার স্পর্শে সে যেন পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়,অথচ ভেতরে এক অস্থিরতা কাজ করছে।
“ফিওনা,”সে অবশেষে বলল,”তুমি এমন করছো কেন?এটা ঠিক নয়।” কিন্তু তার কথায় কোন কঠোরতা ছিল না; বরং, তার চোখে অস্পষ্ট একটি উদ্বেগ ছিল।

ফিওনা তার দিকে তাকিয়ে ছিল, যেন বলছে,”আমি এখানে থাকতে চাই।আপনি আমাকে বাধা দিতে পারেন না ।” সেই মুহূর্তে, জ্যাসপারের মনে হয়েছিল,তার চারপাশের সব কিছু অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে,আর ফিওনার উপস্থিতি তাকে একটি নতুন বাস্তবতায় নিয়ে যাচ্ছে।
জ্যাসপার তখন বললো,”আমার জরুরি কাজ আছে,শেষ করতে হবে।আমি আলবিরাকে ডাকছি,ও তোমাকে গ্লাস হাউজে নিয়ে যাবে।”
ফিওনা হেসে বললো,”আপনি কাজ করুন,কে ধরে রেখেছে? আমি এখানে চুপচাপ বসে থাকব,একটুও বিরক্ত করবো না।”

জ্যাসপার কিছু বলতে চাইল,কিন্তু তার মুখ থেকে কোন শব্দ বের হলো না।সে বুঝতে পারছিল,ফিওনার এই মনোভাব তাকে একটু হলেও প্রভাবিত করছে।তাই পুনরায় কম্পিউটারের দিকে মনোযোগ দিল।
কিন্তু ফিওনার উপস্থিতি,তার উষ্ণতা এবং উজ্জ্বলতা,সব কিছুই যেন জ্যাসপারের মনোযোগকে দ্বিধাবিভক্ত করছিল। সে চেষ্টা করছিল কাজের মধ্যে ফিরে যেতে,তবে ফিওনার চোখে যে মাধুর্য ছিল,সেটা তার মনোযোগ টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
হঠাৎ ফিওনা জ্যাসপারের ঘাড়ের কাছে মুখ গুজে দিলো। তার নিঃশ্বাসের ছোঁয়ায় জ্যাসপারের মধ্যে এক অদ্ভুত অসস্থি তৈরি হচ্ছিল।হৃদস্পন্দন যেন বেড়ে যাচ্ছিল,তীব্র অনুভূতি সজাগ হচ্ছিল মনে।
কিন্তু জ্যাসপার চেষ্টা করছিল কাজের দিকে মনোযোগ দিতে। ঠিক তখনই ফিওনা হঠাৎ করে নিজের নাক ঘষতে লাগলো জ্যাসপারের ঘাড়ের সাথে।তার নিঃশ্বাস আর ঠোঁটের ছোঁয়ায় জ্যাসপার প্রায় পাগল হয়ে যাচ্ছিল।
এই অস্থির পরিস্থিতিতে জ্যাসপার ফিওনার বাহু চেপে ধরে বললো,”কি করছো তুমি,ফিওনা?”তার কণ্ঠে এক ধরনের আশ্চর্যতা ছিল,মনে হচ্ছিল,একই সাথে বিরক্ত এবং আকৃষ্ট।

ফিওনার দিকে তাকিয়ে,জ্যাসপার বুঝতে পারছিল,এই মুহূর্তগুলো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
ফিওনা তখন মিষ্টি হাসি নিয়ে বললো,”কোথায়?আমি কি করছি?আমি তো ক্লান্ত,তাই আপনার কাঁধে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।” তার কথায় ছিল চাঁদনী রাত্রির কোমলতা,যেন প্রতিটি শব্দে এক ধরধের দুষ্টু খেলা চলছে।
জ্যাসপার বুঝতে পারলো,ফিওনা আসলে তাকে জ্বালাতেই এখানে এসেছে।কিন্তু সে নিজেকে সামলাতে লাগলো,কারণ তার মনে হচ্ছিল, যদি সে এই মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়,তবে আবার ফিওনার সাথে ফিজিক্যালভাবে যুক্ত হয়ে যাবে,যা সে কোনোভাবেই চাইছিল না।
জ্যাসপার একপাশে গাঢ় শ্বাস নিয়ে বললো,”ফিওনা,তুমি জানো আমি এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি।”তার কণ্ঠস্বর ছিল শান্ত,কিন্তু মনে মনে সে অস্থির হয়ে উঠছিল।এই ঘনিষ্ঠতা তাকে প্রলুব্ধ করছিল,আর সে চেষ্টা করছিল নিজেকে দূরে রাখতে।

ফিওনার চোখে এক ধরনের চাহনি ছিল,যেন সে জানতো তার উপস্থিতি জ্যাসপারের মনে কেমন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। সে আবারও কাঁধে মাথা রেখে বললো,”আমার ভালো লাগছেনা,একা একা লাগছে ।তাই আমি এখানে একটু সময় কাটাতে এসেছি আপনার কাছে কিছুক্ষণ।”
জ্যাসপার মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো,”কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলানো যায়?”
জ্যাসপার তখন বললো,”ঠিকাছে,আমি নিজেই তোমাকে গ্লাস হাউজে নিয়ে যাচ্ছি।”এটা বলেই সে উঠতে গেল,কিন্তু ফিওনা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,”আচ্ছা,আমি আর বিরক্ত করবো না।আমি একটু ল্যাবটা ঘুরে দেখি।আপনি কাজ করুন।”
ফিওনা কথাগুলো বলেই জ্যাসপারের কোলে থেকে উঠে গেল।ধীরে ধীরে পুরো ল্যাবে ঘুরে দেখতে লাগলো,যেন সে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে চাইছে।জ্যাসপার তার কর্মে মনোযোগ দিলেও,মাঝে মাঝে ফিওনার দিকে নজর রাখছিল।

ফিওনার হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে জ্যাসপারের মনে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল।সে বুঝতে পারছিল যে,ফিওনা তার কাজের প্রতি যতটা গুরুত্ব দিচ্ছে,সে ততটাই যেন তার মনোযোগ টানতে চাচ্ছে।ল্যাবের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও পরীক্ষার উপকরণ ঘুরে দেখে ফিওনা কৌতূহল প্রকাশ করছিল।
জ্যাসপার মৃদু হাসি দিয়ে ভাবতে লাগলো,”ফিওনার ‌মাথার কি কোনো দুষ্টু বুদ্ধি চলছে?”এই চিন্তায় তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল,কিন্তু সে নিজের কাজের প্রতি মনোযোগী থাকার চেষ্টা করছিল।
অনেকক্ষণ বাদে ফিওনা আবারও জ্যাসপারের সামনে চলে আসে।হঠাৎ করেই সে আবারও জ্যাসপারের কোলে বসে পড়লো।জ্যাসপার বিরক্ত ভাব প্রকাশ করলো,কিন্তু ফিওনা কিছুটা রেগে গেছে।
“আপনি আমাকে অবহেলা করছেন?তাইনা?আপনি আর আমাকে চান না,তাইনা?শখ মিটে গেছে,একদিন বিছানায় নিতেই মজা শেষ,আর ভালো লাগছেনা আমাকে?”
ফিওনার কথাগুলো শুনে জ্যাসপারের মাথায় রাগ উঠে যায়। সে রাগান্বিত দৃষ্টিতে ফিওনার দিকে তাকিয়ে বললো,”সাট আপ!কি সব বলছো?নিজেই নিজেকে সস্তা ভাবছো? সিরিয়াসলি?”ফিওনা তখন বললো,”আমার তো মনে হয় আমি সস্তাই আপনার কাছে।যখন ইচ্ছা নিজেই কাছে আসবেন,যখন ইচ্ছা নিজেই দূরে ঠেলে দিবেন কেনো? আমার চাওয়ার কোনো মূল্য নেই?”

জ্যাসপার কঠোর হয়ে বললো,”সব আমার নিয়ন্ত্রণেই চলে।”
ফিওনা তখন রাগের সাথে বললো,”আমার ভার্জিনিটি শেষ করে এখন আমাকে অবহেলা করা হচ্ছে,তাইনা?”
এই কথা শুনে জ্যাসপার ফিওনার গালে শক্তভাবে চেপে ধরলো।তার চোখে রাগের আগুন জ্বলছিল।সে বললো, “আর একটা কথা বললে এমনভাবে ছুড়ে ফেলবো,হাড়গোড় ভেঙে যাবে। এক্ষনি তুমি ল্যাব থেকে যাবে।”
জ্যাসপার হঠাৎ উঠে দাঁড়াতে যাবে, কিন্তু উঠতেই পারলো না। কিছু একটা আটকে যাচ্ছে।তার দৃষ্টি ফিওনার দিকে গেল,যে তার হাত দুটো কৌশলে বেঁধে দিয়েছে।জ্যাসপার অবাক হয়ে গেল এবং আবার কিছুটা তাচ্ছিল্যভাবে হাসলো।হাতের বাঁধন খুলতে চেষ্টা করলো,কিন্তু পারলো না। ্সে বুঝতে পারলো,ফিওনা কোনো ক্যামিকেল ব্যবহার করেছে।তবে, জ্যাসপার জানে,সে যদি তার ড্রাগন পাওয়ার ব্যবহার করে এই বাঁধন খুলতে চায়,তাহলে ফিওনার ক্ষতি হবে।

ফিওনা জানত যে জ্যাসপার কখনোই তার শক্তি ব্যবহার করে তাকে বিপদের মধ্যে ফেলবে না।সে তাই কিছু পরিকল্পনা করে এবং ল্যাবে ঘুরে বেড়ানোর সময় যে সব ক্যামিকেল ও যন্ত্রপাতি তার নজরে এসেছে,সেগুলো কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।সে একটি বিশেষ ক্যামিকেল তৈরির উপাদান খুঁজে পায়,যা “ন্যানো বন্ডিং সলিউশন” নামে পরিচিত।এই ক্যামিকেলটি ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে তৈরি হয় এবং যে কোনো পদার্থকে একত্রিত করতে সক্ষম।ফিওনা জানত, এই সলিউশনটি জ্যাসপারের শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্যকরী বাধা তৈরি করতে পারে।
ফিওনা একটি পিপেট ব্যবহার করে ন্যানো বন্ডিং সলিউশনটি জ্যাসপারের হাতের উপর প্রয়োগ করে।অল্প সময়ের মধ্যে, সলিউশনটি জ্যাসপারের হাতের ত্বকে সম্পূর্ণরূপে বেঁধে যায়, ফলে তার হাতগুলো মুক্ত করা অসম্ভব হয়ে যায়।

“এটা তুমি কি করলে?আর এসব বিষয়ে জানলে কিভাবে?” জ্যাসপার জিজ্ঞেস করলো,তার কণ্ঠে বিস্ময় ও রাগের ছাপ।
ফিওনা তখন আরও কাছে এসে বললো,”এই তিন দিনে রিসার্চ করেছি,অ্যাকুয়ারাকে দিয়ে বিভিন্ন বই আনিয়েছি। আর হ্যাঁ,আমাকে এতোটা তুচ্ছ ভাবেন না,প্রিন্স।আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট!”
ফিওনার আত্মবিশ্বাসী কথাগুলো জ্যাসপারের মনে নতুন প্রশ্ন তৈরি করলো। সে ভেবেছিল,ফিওনা শুধুমাত্র একটি সাধারণ মানুষ,কিন্তু তার এই জ্ঞান ও উদ্যোগ তাকে অন্য চোখে দেখতে বাধ্য করলো।”তুমি কী চাইছো,ফিওনা?”জ্যাসপার জানতে চাইল,তার গম্ভীর সুরে।
“আমি চাই আপনার মনোযোগ,” ফিওনা স্পষ্টভাবে বললো। “আমার প্রতি এই যে অবহেলা,সেটা আমি আর মানতে পারছিনা”

জ্যাসপার তার গভীর,সবুজ চোখে ফিওনার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল সে কী করতে যাচ্ছে।”তুমি কি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাও হামিংবার্ড?”জ্যাসপার বলল।
ফিওনা মৃদু হাসি দিয়ে তার এক হাত জ্যাসপারের শার্টের বোতামে নিয়ে গেল।বোতাম খুলতে খুলতে ফিসফিস করে বলল,”ইয়েস,প্রিন্স।”
ফিওনার ঠোঁট জ্যাসপারের ঘাড়ে স্পর্শ করতেই সে কেঁপে উঠল।”ফিওনা,তুমি জানো না তুমি আমার সঙ্গে কী করছ,”জ্যাসপার বলল।

ফিওনা মৃদু হাসল।”আমি জানি,জ্যাসপার।আপনি এখন সম্পূর্ণ আমার হাতে ব*ন্দি,”বলে সে আরও কাছে এগিয়ে এল।এ মুহূর্তে জ্যাসপার বুঝতে পারল,সত্যিকারের দুর্বলতা ভালোবাসার মধ্যে লুকিয়ে থাকে।
ফিওনা জ্যাসপারের শার্টের বোতাম খুলতেই,জ্যাসপারের উন্মুক্ত বডি দেখা দিল।সে কিছুটা স্তব্ধ হয়ে গেছে,যেন সময় থেমে গেছে।তার শরীরে এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়তে লাগল।ফিওনা তখন হঠাৎ করেই জ্যাসপারের দুপায়ের ওপর হাঁটু গেড়ে বসলো।জ্যাসপার একটু পেছনে হেলান দিল তার চোখের দৃষ্টি এখন ফিওনার দিকে নিবদ্ধ।
ফিওনা আলতো করে জ্যাসপারের গালে হাত রেখেছে,যেন একটি স্পর্শে তার সমস্ত বেদনা ভুলে যেতে চাচ্ছে।সে প্রথমে একটি কপালে চুমু দিলো, আর জ্যাসপার চোখ বন্ধ করে নিল।ফিওনার কোমল ঠোঁটের ছোঁয়া যেন তার হৃদয়ে এক নতুন অনুভূতি সৃষ্টি করছে।সে ধীরে ধীরে জ্যাসপারের চোখে এবং গালে চুমু দিতে লাগলো।জ্যাসপার প্রায় দিশেহারা হয়ে গেল,তার মনে হচ্ছিল যেন সারা পৃথিবী শুধুই এই মুহূর্তে সীমাবদ্ধ।
ফিওনা জ্যাসপারের ঠোঁটের দিকে নজর দিলো এবং বললো, “এই ঠোঁটজোড়া আমাকে কতোটা টানে,তা তুমি জানো না, প্রিন্স।তোমার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য আমি কতোটা আকুল হয়ে আছি,জানো না,একয়দিনে আমার কি হাল হয়েছে,তা তুমি বুঝবেনা।”

জ্যাসপারের হৃদয়টা যেন চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যাচ্ছে।সে জানে,সে ফিওনাকে কতোটা কষ্ট দিয়েছে,কিন্তু সে নিজেও এর থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে।এই অনুভূতি তাকে অস্থির করে তুলছে, আর সেটাও ফিওনা বুঝতে পারছে।
ফিওনার এই কথাগুলো জ্যাসপারের অন্তরে একটি তীব্র অনুভূতি তৈরি করল।সে ফিওনাকে কিছু বলতে চাইল,কিন্তু তার কণ্ঠস্বর যেন থমকে গেছে।এ মুহূর্তে, শুধুমাত্র ফিওনার উপস্থিতি,তার মিষ্টি হাসি এবং আলতো স্পর্শই তাকে ঘিরে রেখেছে।

“হামিংবার্ড,” সে বলল,”আমি জানি,আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি, কিন্তু আমি…।”
ফিওনা তার কথা শুনে একটু সরে এলো এবং গভীর চোখে জ্যাসপারের দিকে তাকালো।”এখন কিছু বলার সময় নয়, প্রিন্স,” সে বললো,”আমাদের এখন অনুভব করার সময় একৈ অপরকে।
জ্যাসপারের ভেতরে দাবানল জ্বলছে।ফিওনার এমন অপ্রত্যাশিত আদর,তার কোমল স্পর্শ এবং মুখ থেকে বের হওয়া “তুমি” ডাক শুনে জ্যাসপার যেন তার সমস্ত অনুভূতি ভুলে যেতে পারছে না।তার হৃদয়ে এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা, এক ধরনের আগুন জ্বলে উঠেছে,যা তাকে আগেও কখনো অনুভব হয়নি।
ফিওনা যখন তার সামনে এত কাছে আসছে,জ্যাসপার বুঝতে পারছে,এই মূহূর্তে তার সব কিছুই বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। সে একয়দিন নিজের অনুভূতিগুলোকে গোপন রাখার চেষ্টা করেছে,কিন্তু ফিওনার উপস্থিতি সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে।তার কাছে থাকার এই অনুভূতি,ফিওনার ঠোঁটের ছোঁয়া,আর তাদের মধ্যকার বিদ্যুতের শূন্যতা সবকিছুকে যেন অতিক্রম করছে।

জ্যাসপার তখন বললো,”প্লিজ,সড়ে যাও।এমনটা করো না, হামিংবার্ড তোমার ক্ষতি হবে।সেদিন তুমি অসুস্থ হয়ে গেছিলে,ভুলে গেছো?”
কিন্তু ফিওনা কোনো উত্তর দিলো না।তার চোখে এখন এক অদ্ভুত নেশা,তা হলো প্রেমের নেশা।সে ধীরে ধীরে জ্যাসপারের গলায় চুমু দিতে লাগলো,তার ঠোঁটের কোমল স্পর্শে যেন দুনিয়া থেমে গেছে।ফিওনার ছোঁয়া জ্যাসপারের প্রতিটি স্নায়ুতে শিহরণ জাগিয়ে তোলে।
জ্যাসপার অবশ হয়ে গিয়েছিল।তার বুকের উন্মুক্ত ত্বকে যখন ফিওনা চুমু দিলো,তখন সে সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেল। তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল,আর মনে হলো যেন সে নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
এখন সে জানে,ফিওনার এই ভালোবাসার স্পর্শ তাকে কতটা দুর্বল করে দিচ্ছে।তার সমস্ত শক্তি,তার সমস্ত প্রতিরোধ যেন একদম ভেঙে পড়ছে।সে জানে,ফিওনার কাছে তাকে এমনভাবে হারানো সম্ভব যা সে কখনো কল্পনাও করেনি।

“হামিংবার্ড,”জ্যাসপার যেন কষ্টের সঙ্গে বললো, “তুমি জানো না তুমি কী করছ।”
কিন্তু ফিওনার চোখে সে শুধুই প্রেমের রূপ দেখছিল,তার স্পর্শে এতটা নরমতা ছিল যে জ্যাসপার তার সমস্ত উদ্বেগ ভুলে যেতে চাইলো।ফিওনার এই অভিব্যক্তি তাকে আরও গভীরভাবে আকর্ষণ করছিল।
এখন, দুজনের মধ্যে শুধু প্রেমের একটি অসীম স্রোত বয়ে চলছিল,যা তাদেরকে এক নতুন জগতের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।জ্যাসপার নিজেকে আর আটকাতে পারছিল না,সে শুধু ফিওনার কাছে আরও কাছে যেতে চাইল।
জ্যাসপার এবার বললো,”আমার হাত দুটো খুলে দাও, হামিংবার্ড।আমি তোমাকে আদর করতে চাই,রাইট নাও?”
ফিওনা তার চোখের দিকে তাকালো,এবং সে বুঝতে পারলো যে জ্যাসপার এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছে।তার হৃদয়ে আনন্দের একটি তরঙ্গ বয়ে গেল।
ফিওনা আরেকটা কেমিক্যালের মাধ্যমে জ্যাসপারের হাতের বাঁধন খুলে দিলো আর হাতের বাঁধন খুলতেই জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা না করে,ফিওনার কোমড় ধরে টেবিলের ওপর বসানোর আগেই এক হাত দিয়ে টেবিলে থাকা কম্পিউটার এবং সব ডিভাইস ফেলে দিলো। যন্ত্রপাতিগুলো আছড়ে পড়ে ভেঙে গেল,কিন্তু তাদের মনোযোগ শুধুই একে অপরের দিকে।

জ্যাসপার ফিওনাকে টেবিলের ওপর বসিয়ে দিলো,তার চোখে আগুন জ্বলছে।”এখন আমি তোমাকে আমার মতো করে আদর করবো,”সে বললো,তার কণ্ঠে এক নতুন আবেগের সুর।
ফিওনা তার ঠোঁটের কোণে এক মিষ্টি হাসি নিয়ে বললো, “আমিতো সেটাই চাই প্রিন্স?”
জ্যাসপার তার হাত দিয়ে ফিওনার পিঠে কোমলভাবে স্পর্শ করলো,যেন সে তাকে আরও কাছে আনতে চাইছে।
“তুমি জানো,আমি তোমার জন্য কতটা আকুল,” ফিওনা বললো, তার কণ্ঠে এক অদ্ভুত মাধুর্য।
জ্যাসপার তখন তার হাত দুটো ফিওনার গালের পাশে রেখে বললো,”তুমি আমার কাছে অমূল্য রত্ন হামিংবার্ড।”
জ্যাসপার আর অপেক্ষা না করে ফিওনার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।তার হৃদয়ের প্রতিটি ধকধক ধ্বনিত হচ্ছিল ফিওনার প্রতি।প্রথম চুম্বনটি ছিল সতেজ ও মৃদু,কিন্তু ধীরে ধীরে তা গভীর হয়ে উঠলো,যেন দুজনেই তাদের চারপাশের সমস্ত কিছু ভুলে গেছে।

ফিওনার দেহে উত্তেজনার একটি তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়লো। জ্যাসপারের ঠোঁটের স্পর্শ যেন তার সমস্ত র*ক্তকে উত্তপ্ত করে দিল।সে নিজেকে হারিয়ে ফেললো,চুম্বনের আবেশে নিমজ্জিত হয়ে পড়লো।
জ্যাসপার পুরোপুরি দিশেহারা হয়ে গেছে।তার হাতগুলো ফিওনার মাথায় ঘুরতে লাগলো,যেন সে তাকে আরও কাছে টানতে চাইছে।প্রতিটি চুম্বনে তাদের মধ্যে একটি নতুন আবেগের সঞ্চার হচ্ছিল—ভালোবাসা,কামনা,আর একে অপরকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
ফিওনা তার হাত দিয়ে জ্যাসপারের পিঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তার দেহে এক অজানা শক্তি অনুভব করছিল। চুম্বনটির গভীরতা যেন তাদের মধ্যে কিছুকে পুনর্নবীকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
“আমি তোমাকে ছাড়া একদিন ও থাকতে পারবো না হামিংবার্ড,”জ্যাসপার ফিওনার ঠোঁট থেকে আলগা হয়ে বলে উঠলো,তার গলার স্বরে অদ্ভুত এক চাপা আবেগ ছিল।

এবার জ্যাসপার ফিওনাকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো কেমিক্যাল সেলফের দিকে।তার সারা দেহে উত্তেজনার ঝড় বয়ে যাচ্ছিল,আর ফিওনার জন্য সেই মুহূর্তটি যেন চিরস্থায়ী হয়ে যাওয়ার মতো মনে হচ্ছিল।ফিওনাকে ঠেসে ধরার সাথে সাথেই সেলফে থাকা কেমিক্যালের কাঁচের বোতলগুলো একে একে পড়ে গেলো ফ্লোরে।
জ্যাসপার পুরো হুঁশ হারিয়ে ফেললো,যেন তার সমস্ত চিন্তা-কল্পনা ফিওনার দিকে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে।কাঁচের বোতলগুলো মেঝেতে ছিটকে পড়ার শব্দ হঠাৎ করেই ল্যাবের নীরবতাকে ভেঙে দিলো,কিন্তু জ্যাসপার তার চারপাশের সবকিছু ভুলে গিয়ে ফিওনার দিকে মনোযোগ দিতে থাকলো।

“হামিংবার্ড,” সে বললো,তার কণ্ঠস্বর গম্ভীর হয়ে উঠলো, “আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে চাই না।কিন্তু…”
ফিওনা তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ছিল উত্তেজনায় তার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হচ্ছিল।“কিন্তু তুমি আমাকে না ছুঁয়ে থাকতে পারবেনা,”সে বললো,এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।জ্যাসপার তখন ফিওনাকে আরও কাছে টেনে নিলো।
কেমিক্যালের ঘ্রানে পুরো ল্যাব ভরে গেলো,এক অদ্ভুত ও মাদকতা পরিবেশ তৈরি করে। সেই পরিবেশে,জ্যাসপার যেন পুরোপুরি মত্ত হয়ে আছে ফিওনার মাঝে।তার হাতগুলো ফিওনার কোমরকে ঘিরে ধরে,আর সে তার গলায়,ঘাড়ে চুমু দিতে দিতে ফিওনাকে অস্থির করে তুলছে।
ফিওনার হৃদয় পুকুরের মতো ঠাণ্ডা ছিল,কিন্তু জ্যাসপারের স্পর্শে তা দ্রুত গরম হয়ে উঠলো।জ্যাসপার যখন ফিওনার টপসটা খুলে ফেললো,তখন উন্মুক্ত হলো তার দেহ।শুধু ইননার পরিধান করেই সে জ্যাসপার কোলের মধ্যেই ছিলো, যেন সে নিজেই এখন একটি শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছে।

“হামিংবার্ড…” জ্যাসপারের কণ্ঠস্বর কাঁপছিল,আর তার চোখে এক অদ্ভুত উন্মাদনা ঝলমল করছিল। “তুমি জানোনা আমি তোমাকে কতটা চাই।”ফিওনা তার চোখে তাকিয়ে ছিল,অঙ্গীকারের মতো।“আমি জানি,প্রিন্স।
জ্যাসপার পুনরায় ফিওনাকে কোলে নিয়ে সেলফের ‌থছকে সড়ে এসে আলতো করে এক্সিকিউটিভ চেয়ারে বসাল। ফিওনার কোমড় উঁচু করে থাকার ফলে সে যেন আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠলো।তার চোখে এক অদ্ভুত উন্মাদনা, আর শরীরের উত্তাপ থেকে এক অদৃশ্য চুম্বকীয় শক্তি চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
“তুমি এখানে কমফোর্ট ফিল করছো?”জ্যাসপার প্রশ্ন করলো, তার কণ্ঠস্বর হালকা কাঁপছিল।ফিওনার কোমরের গতি যেন এক ধরনের আহ্বান ছিল,যা জ্যাসপারের সমস্ত অনুভূতিকে উদ্দীপ্ত করে তুলেছিল।
কিছুটা আনইজি,” ফিওনা বললো,তার ঠোঁটের কোণে এক কোমল হাসি। “কিন্তু এই মুহূর্তের অনুভূতিগুলো অস্বাভাবিক করতে চাই ।”

“এবং তুমি সফল হচ্ছ,”জ্যাসপার বললো,তার হাত ফিওনার গালের ওপর রাখলো।”তুমি জানো,তোমার এমন আচরণ আমাকে একদম পাগল করে দিচ্ছে।”
জ্যাসপার ফিওনার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে মনে পড়ে গেলো ডক্টর আগ্নিসের কথা,যা তাকে ভাবতে বাধ্য করলো। “তুমি যদি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলো,তবে এর পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে,”ডক্টর আগ্নিসের সতর্কবার্তা মনে মনে গুনগুন করতে লাগলো সে।
ফিওনা তখনও অস্থির হয়ে উঠে,তার চোখে এক প্রকার আকুলতা।সে জানে,জ্যাসপারের প্রতি তার আকর্ষণ অনেকটাই প্রবল,আর সেটা জ্যাসপার নিজেও বুঝতে পারলো তবে এই মুহূর্তে ফিওনাকে শান্ত করতে হবে।তাই জ্যাসপার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করলো।কিন্তু তারপরও ফিওনার উন্মাদনার প্রতি সে প্রতিরোধ করতে পারলো না।

জ্যাসপার হঠাৎ করেই ফিওনার ঠোঁটে হামলে পড়লো,কিন্তু চুম্বন নয়,বরং তার দন্ত দিয়ে জোরে জোরে কামড়াতে লাগলো।ফিওনা প্রথমে কিছুটা হতবাক হয়ে গেলো,কিন্তু তারপর ব্যথায় কাতর হয়ে উঠলো।”আহ!”সে চিৎকার করে উঠলো।
জ্যাসপার জানত যে সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে।কিন্তু সে চেয়েছিল ফিওনা যেন তার কাছ থেকে পালিয়ে যায় যেন সে নিজেই ছি মুহূর্তটা নষ্ট করে দেয়।তাই সে ইচ্ছে করে ফিওনার গলায় ও বুকে কামড়াতে শুরু করলো,যেন ফিওনার আকর্ষণ দুর্বল হয়ে যায়।
ফিওনা ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো, “আহ! প্রিন্স কি করছো?” তার কণ্ঠে বিভ্রান্তি এবং যন্ত্রণার সম্মিলন।সে বুঝতে পারছিল না কেন জ্যাসপার এমন আচরণ করছে, কেন তার প্রতি সে এতটা রাক্ষসের মতো আচরণ করছে।
জ্যাসপার,যে নিজেই নিজের অস্থিরতা থেকে ভীত ছিল, ফিওনার প্রতি আরও চেপে ধরতে লাগলো।তার ঠোঁট ফিওনার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষ*তবিক্ষত করতে শুরু করলো,যেন সে ফিওনাকে সম্পূর্ণরূপে দখল করতে চাইছে। কিন্তু এই অবস্থায় ফিওনা এখন আতঙ্কিত এবং চরমভাবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে।

ফিওনার চোখের জল তার মুখে ঝরতে লাগলো,কিন্তু সে কিছু বলছিল না।তার মুখের উপর এক ধরনের নিস্তব্ধতা ছিল,যেন সে নিজের ভেতরের যন্ত্রণাকে বাইরে আসতে দিতে চাচ্ছে না।ফিওনা সহ্য করে যাচ্ছে জ্যাসপারের এমন অমানবিক আচরণ।জ্যাসপার বুঝতে পারলো,এই মুহূর্তে ফিওনার সহ্যশক্তি তার সীমা অতিক্রম করছে।
জ্যাসপারের হৃদয়ে এক ধরনের পীড়া জেগে উঠলো।সে দেখলো,ফিওনার চোখে যে যন্ত্রণা রয়েছে,তা তার নিজের জন্যও একরকম কষ্টদায়ক।

জ্যাসপার তখন থেমে গেলো,তার চোখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো।তার মনে হচ্ছিল, সে একজন অপরাধী,ফিওনাকে এতটা কষ্ট দেওয়ার জন্য। হঠাৎ করেই জ্যাসপার ফিওনাকে চেয়ার থেকে তুলে নিলো এবং নিজেই চেয়ারে বসে পড়লো। ফিওনাকে কোলে নিয়ে সে তার বুকে জাপটে ধরলো,যেন তার কাছে সে একমাত্র নিরাপত্তার ঠিকানা।
ফিওনা অবাক হয়ে গেলো,কিন্তু তার মনে এক ধরনের শান্তি আসলো।জ্যাসপার তার চুলের মধ্যে চুমু খেতে শুরু করলো, একটার পর একটা,যেন সে তার সব কষ্টের জন্য ক্ষমা চাইছে।ফিওনার হৃদয় ধড়ফড় করতে লাগলো।তার চোখে জল এসে গেলো,কিন্তু এই মুহূর্তে সেই জল ছিল আনন্দের, প্রেমের।
জ্যাসপার ফিওনার গালে আলতো করে হাত রাখলো,তার স্পর্শে ফিওনার শরীরের প্রতিটি কোণে এক অদ্ভুত অনুভূতি ছড়িয়ে পড়লো।সে তার কপালে একটি মিষ্টি চুমু দিলো এবং তারপর ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল।এই ছোট্ট চুমুর মাধ্যমে যেন সমস্ত বেদনা এবং সন্দেহ দূর হয়ে গেলো।

“হামিংবার্ড,”জ্যাসপার বললো,তার কণ্ঠস্বর কোমল। “আমার বলতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।তুমি জানো ডক্টর আগ্নিস কি বলেছিল?”
ফিওনার চোখের দৃষ্টি তার দিকে কৌতূহলী হয়ে গেলো। “না তাতো জানিনা কি বলেছিলো?।”
জ্যাসপার গভীর নিঃশ্বাস নিলো,যেন কথা বলতে একটু সাহস সংগ্রহ করতে হচ্ছে।“ডক্টর আগ্নিস বলেছিল,আমাদের শারীরিক সম্পর্কের ফলে তোমার জন্য মারাত্মক ফল হতে পারে।এমনি মৃ*ত্যু হতূ সাথে তোমার।আমাদের ফিজিক্যাল হলে সেটা তোমার শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।”
ফিওনার চোখে উদ্বেগের ছাপ পড়লো।“কিভাবে?কেন?”

“তুমি জানো,আমি ড্রাগন।আমার শক্তি,আমার ডিএনএ—সবকিছুই ভিন্ন।তোমার শরীর যদি আমার শক্তির সংস্পর্শে আসে,তাহলে তুমি সেগুলো গ্রহণ করতে পারবে না।সেটা তোমার জীবনকে হুম*কির মুখে ফেলবে,”জ্যাসপার বললো, তার কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে এল।
“কিন্তু তুমি তো…তুমি আমাকে ভালোবাসো তাইনা,”ফিওনা বললো,তার কণ্ঠে হতাশা ছিল।“তাহলে কেন তুমি আমাকে দুরে ঠেলে‌ দিলে?”
“হামিংবার্ড। আমি তোমাকে হারাতে চাই না।কিন্তু যখন আমি তোমার কাছে আসি,তখন আমার মধ্যে অন্যরকম আবেগ কাজ করে।আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।ডক্টর আগ্নিসের সতর্কবার্তা শুনে আমি ভেবেছিলাম,আমি তোমার থেকে দূরে থেকে তোমাকে ভালোবাসবো যদি কাছে যাই তাহলে আবারও আমি তোমার মধ্যে হারিয়ে যাবো।আর সেটা সত্যিই ভয়াবহ হবে,” জ্যাসপার বললো,তার চোখে দুঃখের ছাপ।

ফিওনা তার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ রইলো। তার মনে হচ্ছিল,জ্যাসপার আসলে তার জন্য কতটা চিন্তা করছে। “তুমি কি বলতে চাইছো যে আমার তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে?” সে জিজ্ঞেস করলো, তার কণ্ঠে বিষণ্ণতা।
“না,আমি সেটা বলছি না,” জ্যাসপার তৎক্ষণাত বললো। “আমি চাই তুমি নিরাপদ থাকো।আমি জানি,আমাদের মধ্যে যে ভালোবাসা আছে,সেটা অমূল্য। কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
“তাহলে আমাদের কি করতে হবে?” ফিওনা বললো, তার কণ্ঠে দৃঢ়তা ছিল।
“আমাদের সম্পর্কের মধ্যে সীমা রাখতে হবে, আমি তোমাকে ভালোবাসি,কিন্তু আমার সঙ্গে তোমার শারীরিক সম্পর্কের ফল ভ*য়াবহ হতে পারে।আমি চাই তুমি নিরাপদে থাকো,” জ্যাসপার বললো,তার চোখে এক ধরনের প্র”ত্যয় ছিল।

ফিওনা তখন একটু মুচকি হাসলো,যেন সে কিছু ভেবেছে। “আচ্ছা,চলো আমরা পৃথিবীর নিয়মে বিয়ে করে নেই।এটা আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে আর সবাই জানবে আমরা একসঙ্গে,”সে বললো।
জ্যাসপার হালকা হাসি দিয়ে বললো,“হ্যাঁ,আমি তোমার সঙ্গে পৃথিবীতে একেবারে থাকতে চাই।কিন্তু আগে আমার মিশন শেষ হোক।তখন আমি নিশ্চয়ই তোমার কাছে ফিরে আসবো।”
ফিওনার চোখে উজ্জ্বলতা দেখা দিলো। “তুমি কি বলতে চাও যে, তুমি মিশন শেষে এখানে এসে আমাদের বিয়ের পরিকল্পনা করবে?”

“ঠিক তাই।এবং হ্যাঁ, ধৈর্য ধরো,আমি কিছু একটা উপায় বের করেই ফেলবো।কারণ,তোমাকে না স্পর্শ করতে পারলে আমার সত্যিই ভালো লাগবেনা,”জ্যাসপার বললো তার কণ্ঠে একটি উষ্ণতা ছিল।
জ্যাসপার ফিওনাকে নিজের হাতে ধীরে ধীরে টপস্ পরিয়ে দিলো,যেন সে একটি মূল্যবান জিনিসকে সাজাচ্ছে। ফিওনার এলোমেলো চুলগুলো খুব যত্নের সাথে ঠিক করে দিয়ে, সে তাকে চেয়ারে বসিয়ে রাখলো।
“তুমি ঠিক আছো তো?” জ্যাসপার মৃদু প্রশ্ন করলো, যেন ফিওনার কোনও অস্বস্তি বা যন্ত্রণার প্রমাণ দেখতে না পায়।
ফিওনা তার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল, “হ্যাঁ,আমি ঠিক আছি,তুমি যেভাবে কেয়ার করো ঠিক না হয়ে কোথায় যাবো।”

আযদাহা পর্ব ৪৪

এরপর জ্যাসপার একটা বিশেষ মলম নিয়ে এলো,যেটি সে নিজে তৈরি করেছিল।সেটি ফিওনার ঠোঁটে,গলায় এবং বুকে লাগিয়ে দিতে লাগলো। “এটি তোমার জন্য,” সে বললো, “এটা তোমার ক্ষতগুলো দ্রুত সারিয়ে তুলবে।”
ফিওনা চোখ বন্ধ করে মলমের প্রশান্তি অনুভব করতে লাগলো।”“চলো,এখন আমি তোমাকে গ্লাস হাউজে নিয়ে যাই।তোমার এখন বিশ্রাম প্রয়োজন ,”জ্যাসপার বললো,তার কণ্ঠে সুরেলা রেশ ছিল।ফিওনাকে নিয়ে জ্যাসপার গ্লাস হাউজের দিকে যাত্রা করলো।

আযদাহা পর্ব ৪৬