আযদাহা পর্ব ৪৮

আযদাহা পর্ব ৪৮
সাবিলা সাবি

পাহাড়ের চূড়ায় বাতাসের প্রবল শো শো শব্দের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাসপার আর এথিরিয়ন।জ্যাসপারের চোখ রাগে জ্বলজ্বল করছে,আর এথিরিয়নের মুখে এক অদ্ভুত মিশ্র অভিব্যক্তি—অপরাধবোধ আর অস্বাভাবিক সাহস।
জ্যাসপার ধমক দিয়ে বলল,
“তুই ফিওনাকে চুমু দিলি কোন সাহসে?”
এথিরিয়ন খানিকটা বিব্রত হলেও মুখের হাসি চাপা দিল না। মৃদু স্বরে বলল,”কারণ আমি ওকে পছন্দ করি,ভাইয়া। হয়তো প্রেমে পড়েছি।ফিওনা অদ্ভুত কিউট মেয়ে।”

জ্যাসপার মুহূর্তেই সামনে এগিয়ে এথিরিয়নের কলার চেপে ধরল।তার হাতের শক্তি এতো প্রবল ছিল যে,এথিরিয়নের মুখের হাসি মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল।”তুই পছন্দ করিস?তুই কি জানিস,ফিওনা তোকে পছন্দ করে কি না?তুই প্রশ্ন করেছিস, নাকি নিজের ইচ্ছেতে তার অনুমতি ছাড়াই চুমু দিয়েছিস?”
এথিরিয়ন গম্ভীর হয়ে গেল। সে ধীরে ধীরে বলল,
“দেখো,জ্যাসু ভাইয়া।আমি ওকে পছন্দ করি।ওকে প্রপোজ করার আগে একটা চুমু দিয়েছি,যাতে ও আমার অনুভূতি বুঝতে পারে।কিন্তু তুমি এসে সবকিছুতেই জল ঢেলে দিলে!”
জ্যাসপার হঠাৎ গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠল।
“ফিওনা আমার!শুধু আমার!ও আমাকে ভালোবাসে,আর আমি ওকে।ওকে স্পর্শ করার সাহস আর কখনো দেখাস না!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এথিরিয়নের চোখে বিস্ময়ের ছাপ পড়ল।তার মাথায় যেন বজ্রপাত হলো।সে ফিসফিস করে বলল,”তুমি… তুমি কি বলছ,জ্যাসু ভাইয়া?তুমি ওকে ভালোবাসো?এটা কীভাবে সম্ভব?তোমার তো লাভ ফাংশনাল ডিলিট করা হয়েছে!”
জ্যাসপার এবার শান্ত স্বরে বলল, কিন্তু তার কণ্ঠে রাগ স্পষ্ট।
“সেটা এখন এক্টিভ হয়ে গেছে,আর তার কারনটাই ফিওনা,ওর কারনেই আমি ভালোবাসার এতো সুন্দর স্বাদ পেয়েছি।আমি ওকে ভালোবাসি।এটা কোনো প্রোগ্রামিং নয়, এথিরিয়ন।এটা আমার অস্তিত্ব।ফিওনা আমার প্রাণের অংশ।”

এথিরিয়ন এবার পুরোপুরি চুপ হয়ে গেল।তার মাথায় যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে।এটাই তো অসম্ভব ছিল।একজন ড্রাগন, যার মধ্যে প্রেমের ফাংশন সরিয়ে ফেলা হয়েছে,কীভাবে এক মানবীর প্রেমে পড়তে পারে?
জ্যাসপারের হাত দুটো নিজের কলারের কাছ থেকে সড়াতে সড়াতে এথিরিয়ন দৃঢ় কণ্ঠে বলল,”জ্যাসু ভাইয়া,তুমি শুধু আমার ভাই না,তুমি পুরো ভেনাসের প্রিন্স।তোমার প্রতিটা পদক্ষেপ আমাদের রাজ্যের জন্য একটা উদাহরণ।কিন্তু এই ভালোবাসা… এটা আমাদের রাজ্যের জন্য অভি*শাপ।আমি ফিওনাকে ভালোবাসি,এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।কিন্তু তুমি প্রিন্স হয়ে এই পথ বেছে নিতে পারো না।প্লিজ,ভাইয়া, এই পথ থেকে সরে যাও।”
জ্যাসপারের রাগ যেন দপদপ করে জ্বলতে লাগল।তার চোখ ধ্বংসের ইঙ্গিত দিচ্ছিল।এক মুহূর্তে সে তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এথিরিয়নের দিকে সজোরে ঘু*ষি চালিয়ে দিল।এথিরিয়ন ছিটকে পড়ে গেল পাহাড়ের পাথুরে মাটিতে,বেশ কিছুটা দূরে।

এথিরিয়ন নিজেকে সামলাতে না সামলাতেই তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল।জ্যাসপার তার ড্রাগন রূপ ধারণ করেছে।বিশাল ডানাগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে, তার সবুজ আঁশগুলো চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে,আর চোখগুলো আগুনের মতো জ্বলছে।
এথিরিয়ন শুয়ে শুয়ে ফিসফিস করে বলল,
“এই জ্যাসু ভাইয়া…এই তুমি?তুমি আমাকে বাঁচানোর জন্য একসময় নিজের প্রাণ সংশয়ে পড়েছিলে,আজ সেই তুমিই আমাকে আঘাত করলে?তাও কার জন্য?একটা মানবী মেয়ের জন্য?”
জ্যাসপারের ড্রাগন রূপে কণ্ঠ ছিল গম্ভীর আর গর্জনের মতো।”ফিওনা আমার।শুধু আমার।তুই তাকে ভালোবাসতে পারিস না,তাকে স্পর্শও করতে পারিস না।এটাই আমার কথা।”

এথিরিয়ন এবার ধীরে ধীরে উঠার চেষ্টা করলো,মুখে হতাশার ছাপ।”তুমি কি জানো,ভাইয়া,তুমি আসলে কী বলছ?তুমি কি জানো,তোমার এই ভালোবাসা আমাদের প্রাচীন রীতি, আমাদের অস্তিত্বের জন্য কী বিপদ বয়ে আনতে পারে?তুমি এক মানবীর জন্য আমাদের রাজ্যের ভবিষ্যৎকে আ*গুনে ফেলে দিচ্ছ।তুমি…তুমি এটা করতে পারো না।”
জ্যাসপার হেসে উঠল, কিন্তু সেই হাসিতে যেন ছিল উপহাস আর যন্ত্রণা।”তুই ভালো করেই জানিস,এথিরিয়ন।আমি কী পারি আর কী পারি না,সেটার সীমা কোনো রাজ্য নির্ধারণ করে না।ফিওনা আমার,আর ওকে রক্ষা করতে আমি পুরো ভেনাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। তুই যদি এই পথে আসিস, তবে তুই শুধু আমার ভাই না,আমার শত্রুও হবি।”
এথিরিয়নের মুখে হতাশা আর অবিশ্বাস।সে পিছু হটতে হটতে বলল,”তাহলে হয়তো তোমার জন্য প্রার্থনা করা উচিত, ভাইয়া।কারণ যে পথ তুমি বেছে নিয়েছ,সেই পথ তোমাকে ধ্বং*সের দিকে নিয়ে যাবে আর আমি এটা হতে দেবো না, আমি বাবাকে জানাবো সবটা।”

জ্যাসপার কোনো কথা বলল না।তার ড্রাগন রূপ আকাশে ঝাঁপিয়ে পড়ল,পাহাড়ের চারপাশের বাতাস হঠাৎ করেই ভারী হয়ে উঠল।এথিরিয়ন পাথরের উপর ভর দিয়ে উঠার চেষ্টায় রইল,তার মনে একটাই প্রশ্ন—এই মুহূর্তে সে কাকে দেখছে?
হঠাৎ জ্যাসপার তার ড্রাগন রূপে বিশালাকার পা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, এথিরিয়নকে পি*ষে ফেলার জন্য প্রস্তুত।তার চোখে আগুনের মত রাগ আর বিদ্বেষ,তার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো তার সামনে তার ভাই না,‌এ যেনো তার কোনো জন্ম জন্মান্তের চিরশত্রু,রাখে এই মুহূর্তে শেষ করে দিতে হবে তানাহলে তার জীবনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
এথিরিয়ন স্থির হয়ে পড়ে ছিল,ব্যথায় কাতর।সে জানত, এখন তার ভাইয়ের রাগের সামনে তার কিছুই করার নেই। জ্যাসপার যখন তার পা নিচে নামাতে যাচ্ছিল,ঠিক তখনই হাওয়ার মতো দ্রুত গতিতে ফিওনা সেখানে উপস্থিত হলো।

ফিওনা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।তার সামনে জ্যাসপার,যে তাকে সবসময় রক্ষা করেছে,এখন তারই ভাইকে শেষ করে দিতে চাইছে।ভয় আর দুঃখ মিশ্রিত কণ্ঠে ফিওনা চিৎকার করে উঠল,”প্রিন্স! থামো!তুমি এটা করতে পারো না!”
ফিওনা দৌড়ে এথিরিয়নের সামনে চলে গেল,তাকে আড়াল করে দাঁড়াল।তার হাত দুটো প্রসারিত,যেন তার শরীর দিয়ে এথিরিয়নকে রক্ষা করতে চায়।

জ্যাসপারের আগুনে চোখ ফিওনার দিকে ঘুরল।তার রাগের স্রোত এক মুহূর্তে থেমে গেল।সে দেখল,ফিওনা তার সামনে দাঁড়িয়ে,দৃঢ় ও ভীত একসঙ্গে।এই দৃশ্য যেন তাকে তার নিজের রাগের জগৎ থেকে টেনে বের করে আনল।
তার বিশাল ড্রাগন পা হাওয়ায় স্থির হয়ে রইল।কয়েক মুহূর্তের জন্য পাহাড়ে এক নিঃস্তব্ধতা নেমে এলো।তারপর জ্যাসপার ধীরে ধীরে ড্রাগন রূপ থেকে সরে এসে তার মানব রূপ ধারণ করল।তার সবুজ আঁশগুলো মিলিয়ে গেল,ডানা গুটিয়ে শরীর আবার মানুষের রূপে ফিরে এলো।
জ্যাসপারের মুখে এখনও ক্রোধের ছাপ ছিল,কিন্তু তার কণ্ঠ শান্ত হয়ে এলো।”ফিওনা,তুমি কি জানো,তুমি কী করছো? তুমি ওর পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে বাধা দিচ্ছ?”
ফিওনার চোখে জল। তার কণ্ঠে হতাশা আর ব্যথা স্পষ্ট।
“প্রিন্স,তুমি যে কারণে এথিরিয়নকে আঘাত করতে যাচ্ছ, সেটা কীভাবে ন্যায়সঙ্গত হতে পারে?তুমি জানো না,তুমি কী করছিলে এটা তুমি নও,প্রিন্স। তুমি নিজের মধ্যে নেই।”
জ্যাসপার কণ্ঠ নিচু করল,কিন্তু তার ভিতরে এখনও দ্বন্দ্ব চলছিল।”তুমি জানো না, ফিওনা,ও কী কী বলেছে এই মুহূর্তে।ও তোমার কাছাকাছি আসার সাহস দেখিয়েছে।তুমি শুধু আমার।আর কেউ তোমার দিকে তাকানোরও অধিকার রাখে না।”

ফিওনা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,”তুমি বুঝতে পারছো না,প্রিন্স ও তোমার আপন ভাই,তুমি সামান্য আমাকে স্পর্শ করার জন্য ওকে মেরে‌ ফেলতে পারোনা, আর যেখানে আমিও তোমাকে ভালোবাসি সেখানে তোমার এতো ভয় পাওয়া উচিত না প্রিন্স আমাকে নিয়ে,আমার ও তো স্বাধীনতা দরকার।”
এই কথাগুলো যেন জ্যাসপারের রাগের ঢেউকে ভেঙে ফেলল।সে হতভম্ব হয়ে ফিওনার দিকে তাকিয়ে রইল,তার মুখে একটা গভীর বেদনার ছাপ ফুটে উঠল।
জ্যাসপার ফিওনার কথা শুনে নিরব হয়ে গেল।তার ভেতরের রাগ ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে লাগল।ফিওনা যে এত দৃঢ়ভাবে তার সামনে দাঁড়িয়ে তার ভাইকে রক্ষা করছে,তা তার হৃদয়ে একটা অদ্ভুত যন্ত্রণা জাগিয়ে তুলল।
কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকার পর,জ্যাসপার ধীরে ধীরে বলল,

“তুমি জানো না,হামিংবার্ড এই পৃথিবীতে আমার একমাত্র দুর্বলতা তুমি।আমি তোমাকে হারানোর ভয় পাই।কেউ যদি তোমার কাছে আসার চেষ্টা করে,সেটা আমি সহ্য করতে পারি না।”
ফিওনার চোখে জল ঝরছিল,কিন্তু তার কণ্ঠ ছিল স্থির।
“প্রিন্স,ভালোবাসা মানে শুধু নিজের অনুভূতির কথা ভাবা নয়।এটা মানে অন্যের স্বাধীনতাকেও সম্মান করা।তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো,তাহলে আমাকে বাঁচানোর জন্য এভাবে নিজের কাছের মানুষদের আঘাত করবে না। এথিরিয়ন তোমার ভাই।”
জ্যাসপার এক পা পেছনে সরল।তার মুষ্টি শক্ত ছিল,কিন্তু তার চোখে কষ্ট ফুটে উঠল।সে এথিরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি ওকে ছেড়ে দিলাম,কিন্তু শুধু তোমার জন্য, হামিংবার্ড।”
এথিরিয়ন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।সে জ্যাসপারের চোখে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,”ভাইয়া,আমি যা করেছি,সেটা হয়তো ভুল ছিল।কিন্তু আমি তোমার মতো এমন কিছু করতাম না যাতে আমাদের সম্পর্ক ধ্বংস হয়ে যায়।”

জ্যাসপার কোনও উত্তর দিল না।সে শুধু ফিওনার দিকে শেষবারের মতো তাকিয়ে নিজের গলা পরিষ্কার করল এবং শান্ত কণ্ঠে বলল,”আমি তোমাকে সময় দিলাম,হামিংবার্ড। কিন্তু মনে রেখো,কেউ যদি আমার এবং তোমার মাঝখানে আসার চেষ্টা করে,আমি তখন এইভাবে নিজেকে আটকাতে পারব না।”
এই কথা বলেই জ্যাসপার পেছন ফিরে চলে গেল,তার চেহারায় এখনও একটা অদ্ভুত গম্ভীরতা।ফিওনা তার চলে যাওয়া দেখল,আর তার হৃদয় আরও ভারী হয়ে উঠল।সে জানত, এই সম্পর্ক আরও গভীর সংকটে জড়িয়ে যাচ্ছে।

এথিরিয়ন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল,গায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলল।তার চোখে একটা দ্বিধা আর হতাশা।পাহাড় থেকে হিমেল বাতাস বইছিল,কিন্তু তার ভেতর যেন আগুনের ঝড় বয়ে যাচ্ছিল।
ফিওনার চলে যাওয়া আর জ্যাসপারের আচরণ নিয়ে ভাবতে ভাবতে সে নিজের মনে বলতে শুরু করল,”জ্যাসু ভাইয়া কি সত্যিই পাগল হয়ে গেছে?এতটা রাগ, এতটা পাগলামি… এটা কি শুধু ভালোবাসার জন্য?ফিওনার জন্য নিজের ভাইকে শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবলো!এভাবে কি কেউ ভালোবাসে?”
সে এক পা সামনে এগিয়ে গেল,তারপর থেমে গেল।তার মন যেন দ্বিধার জালে জড়িয়ে গেছে।”আমি এখন কী করবো? ভাইয়ার প্রতি রাগ করবো,নাকি তার ভালোবাসাকে মেনে নেবো?কিন্তু এই ভালোবাসা তো সবার জন্য বিপদ। ফিওনাকে কেন্দ্র করে ওর এই অন্ধ আবেগ ভেনাসের শান্তি নষ্ট করবে।পুরো রাজ্য ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ওর এই পাগলামির জন্য।”

এথিরিয়নের চোখে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ ফুটে উঠল।
“কিন্তু এটা তো সেই ভাই,যে আমার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছিল।যার কারণে আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি।এই অবস্থায় কি আমি তার পাশে দাঁড়াবো,নাকি তার ভুলের বিরুদ্ধে যাবো?আমি কি ফিওনার সঙ্গে তারএই সম্পর্ক মেনে নেবো?নাকি তাকে থামানোর চেষ্টা করবো?”
তার মুখে একটা কঠিন অভিব্যক্তি ফুটে উঠল।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল,”জ্যাসু ভাইয়া, আমি তোমার ভালোবাসাকে সম্মান করি।কিন্তু যদি এই ভালোবাসা আমাদের রাজ্যের জন্য বিপদ হয়,তাহলে আমি বাধ্য হবো তোমাকে থামানোর।ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানো আর সত্যের পথে থাকা—এই দুইয়ের মধ্যে যে যুদ্ধ আমার সামনে আসছে, আমি সেটার জন্য প্রস্তুত হবো।”
এথিরিয়ন ধীরে ধীরে পাহাড় থেকে নেমে আসতে শুরু করল। তার মুখে ছিল দ্বন্দ্বের ছাপ,কিন্তু হৃদয়ে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি।”ভাইয়া,যদি তুমি নিজের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে যাও,তাহলে আমাকে হয়তো তোমার বিরোধী হতে হবে। কিন্তু আমি তোমাকে কখনো একা ছেড়ে দেবো না, সবসময় তোমার পাশেই থাকবো।”

জ্যাসপার তার কক্ষে বিছানায় বসে ছিল,চোখ দুটি স্বচ্ছ কাঁচের দেয়ালের বাইরে স্থির।পাহাড়ের অন্ধকার মেঘাচ্ছন্ন আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি তাকে আরও অস্থির করে তুলছিল মনে মনে বারবার নিজেকে বলছিল,এতোটা রাগ করা উচিত হয়নি।এথিরিয়ন তার আপন ভাই।যে ভাইয়ের জন্য নিজের জীবনকে বাজি রেখেছিল,তাকে এত নিষ্ঠুরভাবে আঘাত করার কোনো অধিকার তার ছিল না।

তবুও,একটি গোপন উপলব্ধি তার অন্তরে চাপা রাগের মতো দাউ দাউ করে জ্বলছিল।এথিরিয়ন ফিওনার কাছে যেতে সাহস পেয়েছিল,আর এই সাহসই তাকে শা*স্তি পেতে বাধ্য করেছিল।জ্যাসপারের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছিল দুর্বলতার সমতুল্য,আর সে কখনোই নিজেকে দুর্বল কখনোই দেখাবেনা।তবে তার মনে এ কথাও গভীরভাবে দাগ কাটছিল যে,এথিরিয়ন এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে—ফিওনার কাছে যাওয়া কেবল তার নিজের জন্যে মহাবিপদ।
নিজের রাগ আর অনুশোচনার মধ্যেই সে ভাবছিল,”আমি যা করেছি,তা সঠিক ছিল।এথিরিয়ন যদি ফিওনার কাছ থেকে দূরে না থাকে,তাহলে তার পরিণতি আরও ভ*য়ঙ্কর হতে পারে।”তবুও মন যেন শান্ত হচ্ছিল না।তার অস্থিরতায় ছায়া আরও গাঢ় হলো।যেন কোনো অজানা ঝড় তার ভালোবাসা,তার দায়িত্ব,আর তার রাজ্যের মধ্যে একটা ভয়ানক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে চলেছে।

**রাতের নীরবতা ভেঙে ঘরের দরজা স্লাইডিং করে খুলে গেল। কক্ষের ভেতরে বসে থাকা জ্যাসপার জানতো কে আসতে পারে,তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।তার চোখ দুটি কাঁচের দেয়ালের বাইরে ঘন অন্ধকারে স্থির ছিল।তবে তার মুখের অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট ছিল যে,নিজের আচরণের জন্য তার মনে সামান্য অনুশোচনা কাজ করছে।এথিরিয়নের প্রতি এতটা কঠোর হওয়া উচিত হয়নি,কিন্তু ক্ষমা চাওয়া জ্যাসপারের চরিত্রের অংশ নয়।
ফিওনা ধীরে ধীরে কক্ষে ঢুকে এল।তার চেহারায় ছিলো দৃঢ়তা,কিন্তু তার চোখে লুকিয়ে থাকা কষ্ট আর হতাশা লুকাতে পারছিল না।জ্যাসপার ঘাড় ঘুরিয়েও তাকাল না।সে নিজের অস্থিরতাকে চেপে রাখার চেষ্টা করছিল।
“আজকে যা করলে সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?”ফিওনার কণ্ঠে অভিযোগ ঝরে পড়ল।”এথিরিয়ন তোমার আপন ভাই। তুমি নিজেই তো একসময় তাকে বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করেছিলে।আজ তাকে আঘাত করার আগে কি একবারও ভাবলে না?”

জ্যাসপার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।তার দীর্ঘ ছায়া ঘরের মেঝেতে পড়ে আরও গভীর লাগছিল।ফিওনার সামনে এসে দাঁড়িয়ে সে ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,”তুমি এখনো কিছুই বুঝতে পারো না,ফিওনা।”তার চোখে গভীরতা বাড়তে থাকলো।
“তোমার আর আমার ভালোবাসা ভেনাস কখনোই মেনে নেবে না।পুরো ভেনাস আর পুরো রাজ্য তোমার শত্রু হয়ে যাবে।তারা তোমাকে শেষ করে দিতে চাইবে,আর সেটা করতে আমার পরিবারও পিছপা হবে না।”
ফিওনা চুপ করে তার কথা শুনছিল।জ্যাসপারের বলা প্রতিটি শব্দ যেন তার হৃদয়ে গভীরভাবে আঘাত করছিল।তবুও সে সাহস হারালো না।এক ধাপ এগিয়ে এসে দৃঢ়তার সঙ্গে বলল,
“তুমি থাকতে আমার কেউ স্পর্শ করতেও পারবে না,আমি জানি।কারণ তুমি শুধু ভেনাসের প্রিন্স নও,তুমি আমার রক্ষক।”

জ্যাসপারের চোখে ক্ষণিকের জন্য দ্বিধা ফুটে উঠলো। তারপর সে আবার কঠিন মুখে বলল,”আমার স্বভাব ক্ষমা চাওয়া বা ক্ষমা করা কোনোটাই নেই।তুমি এথিরিয়নকে এতটা সাহস দিয়েছো যে সে আজ তোমাকে চুমু দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে।”
ফিওনার ভেতরে যেন রাগ আর কষ্ট একসঙ্গে জেগে উঠলো।
“তাহলে তুমি কি মনে করো,এটা আমার দোষ?আমি কি তাকে বলেছিলাম এটা করতে?”
জ্যাসপার তার দিকে এক পা এগিয়ে এল। তার গভীর গলায় উত্তর দিল,”তুমি জানো না,ফিওনা। তোমার সান্নিধ্য শুধু আমার জন্যে তাই কাউকে নিজের কাছে আসাতে দেয়ার দুঃসাহস করোনা। এথিরিয়নকে দূরে থাকতে দাও।”
ফিওনা দৃঢ় কণ্ঠে বলল,”ঠিক আছে কিন্তু এবার তো রাগটা একটু কমাও।”
জ্যাসপার এবার এক মুহূর্তের জন্য চুপ থাকলো।তার চোখে একটি অদ্ভুত ঝলক ফুটে উঠলো,যেন নিজের আবেগ আর রাগের মধ্যে আটকে গেছে।তারপর সে ঘুরে কাঁচের দেয়ালের দিকে এগিয়ে গিয়ে গভীর শ্বাস নিয়ে বলল,”বললাম না একবার ক্ষমা করে দেয়ার মতো এতো মহৎ গুণ আমার মধ্যে নেই, তাই তোমাকেও শাস্তি পেতে হবে।

ফিওনা চমকে উঠে তাকালো জ্যাসপারের দিকে।
“তুমি কি সত্যিই আমাকে শাস্তি দেবে, প্রিন্স?”ফিওনার কণ্ঠে বিস্ময় আর হতাশা মিশে ছিল।তার চোখে কৌতূহলের ঝিলিক,যেন জ্যাসপারকে বুঝতে চেষ্টা করছে।
জ্যাসপার ফিওনার দিকে এগিয়ে এসে একটু ঝুঁকে ফিওনার চোখের গভীরে তাকিয়ে বললো,“হ্যাঁ,তোমার শাস্তি আমি নির্ধারণ করেছি।তুমি মানবে না?”
ফিওনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,“আমার আচরণে যদি তোমার সামান্য খারাপ লেগে থাকে তাহলে দাও শাস্তি। আমি মেনে নেবো।”
জ্যাসপারের ঠোঁটের কোণে একটু রহস্যময় হাসি ফুটে উঠলো। “আজ রাতে তুমি আমার কক্ষে থাকবে,” সে ঠান্ডা স্বরে বললো।“আমি ঘুমাবো,আর তুমি থাকবে আমার পাশে। তবে শর্ত একটাই—তুমি ঘুমাতে পারবে না।তুমি সকাল পর্যন্ত আমাকে চুমু দিয়ে যাবে।”

ফিওনা হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,“তুমি কি মজা করছো?”জ্যাসপার চোখ সরিয়ে নিলো,তারপর ধীরে ধীরে পায়চারি করতে করতে বললো, “এটা তো সবে শুরু, হামিংবার্ড।এর আগে আরেকটা কাজ আছে।”
ফিওনা বিস্ময় নিয়ে বললো, “আরেকটা কাজ?সেটা কি?”
জ্যাসপার একটি টেস্ট টিউব থেকে একটি বিশেষ কেমিক্যাল বের করলো।কেমিক্যালটি হালকা নীলাভ রঙের,যা স্পর্শ করলে সামান্য ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়।এটি একটি উচ্চ-সংবেদনশীল রাসায়নিক,যার নাম “Neuro-Thermo Cleanser” (NTC-7)।
Neuro-Thermo Cleanser (NTC-7) হলো একটি বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারড কেমিক্যাল,যা মূলত ড্রাগনের শক্তি থেকে উদ্ভূত।এটি শুধুমাত্র ড্রাগন রাজ্যে ব্যবহৃত হয়।এটি চামড়ার উপরের স্তরে তাপ-উৎপাদন করে এবং পুরনো কোষ ধ্বংস করে নতুন কোষ তৈরি করতে সহায়তা করে।বিশেষ ক্ষেত্রে এটি স্মৃতি মুছে ফেলতেও ব্যবহৃত হয়, যেখানে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশের স্নায়ুকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। NTC-7 এর বিপদজনক দিক হলো, এটি অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যথা ও ক্ষতি করতে পারে,তবে ড্রাগনের ইমিউনিটি সিস্টেমের জন্য এটি তুলনামূলক নিরাপদ।

জ্যাসপার এটি একটি নরম টিস্যুতে ঢেলে,তাতে সামান্য পাউডার মিশিয়ে ফিওনার গালে ঘষে দিলো।কেমিক্যালটি এমনভাবে কাজ করে,যেন চামড়ার সবচেয়ে উপরের স্তরকে উত্তপ্ত করে তুলে এবং স্নায়বিক সংযোগগুলিকে উত্তেজিত করে,যা থেকে তীব্র জ্বালাভাব সৃষ্টি হয়।
ফিওনা সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলো,“এটা কি দিলে তুমি প্রিন্স,আমার প্রচণ্ড জ্বালা করছে!”
জ্যাসপার শান্ত,নির্লিপ্ত স্বরে বললো,“এথিরিয়ন তোমাকে এখানে চুমু দিয়েছে।ওর চুমুর চিহ্নও থাকবে না।”
ফিওনার গাল লাল হয়ে উঠলো,জ্বালার মাত্রা এতোটাই বেড়ে গেলো যে মনে হলো চামড়ার স্তর উঠে গেছে।তার হাত দিয়ে বারবার গাল ঘষে ফেলে দিতে চাইলো,কিন্তু স্পর্শ করতেই তীব্র ব্যথা অনুভূত হলো।

জ্যাসপার ফিওনাকে বিছানায় বসিয়ে তার মুখে শান্ত স্বরে বললো, “তোমার গাল এখনো জ্বলছে তাইনা হামিংবার্ড?আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।”এরপর জ্যাসপার একটি বরফ টুকরো তুলে ফিওনার লাল হয়ে যাওয়া গালে আলতো করে ঘঁষতে শুরু করলো।ফিওনা জ্বালার মাঝেও অবাক হয়ে দেখছিলো,এই একই মানুষ এক মুহূর্তে ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে,আবার পরম যত্নশীলও হয়ে যেতে পারে।
জ্যাসপার বরফ সরিয়ে একটি ছোট কাঁচের পাত্র থেকে নীলাভ একটি মলম বের করলো।ফিওনার গালে আলতো করে মলমটা লাগিয়ে দিলো।ফিওনার মনে হলো যেন শীতল একটা অনুভূতি পুরো গালে ছড়িয়ে পড়ছে,জ্বালাটা ধীরে ধীরে কমে আসছে।
সে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,

“তুমি আসলে কি যে করো আমি বুঝিন।এতটা রাগ করে আমাকে কষ্ট দাও,আবার নিজের হাতে যত্ন নাও।আমি কিছুই বুঝতে পারি না।”
জ্যাসপার কোনো উত্তর দিলো না,তার চোখে একইসাথে কঠোরতা আর গভীরতা খেলা করছিলো।ফিওনা খানিকক্ষণ চুপ করে রইলো,কিন্তু তার কৌতূহল তাকে থামাতে পারলো না।সে আবার বললো,”আচ্ছা,যদি কেউ আমার পুরো শরীরে স্পর্শ করে?তখন তুমি কি করবে?”
জ্যাসপার তার স্বভাবসিদ্ধ ঠান্ডা ভঙ্গিতে উত্তর দিলো,” যে স্পর্শ করবে তাকে মহাবিশ্ব থেকে মুছে ফেলবো।আর তোমাকে পুরো NTC-7 কেমিক্যালের মধ্যে চুবিয়ে রাখবো।”

ফিওনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।সে গিলে নেয়া ঢোকের শব্দ যেন ঘরের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিলো।
ফিওনা ফিসফিস করে বললো,”তুমি… তুমি কি আসলে সত্যি বলছো?”
জ্যাসপার কোনো শব্দ করলো না,শুধু তার ঠোঁটের কোণে হালকা একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠলো।ফিওনার মনের ভেতর অজানা আতঙ্ক আর একধরনের অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।

জ্যাসপার এক অদ্ভুত প্রশান্ত ভঙ্গিতে বললো,”আমার এখন ঘুম পেয়েছে।আমি ঘুমাবো।আর তোমার কাজ তো জানোই—সারারাত আমাকে চুমু দেবে।এক মুহূর্তের জন্যও থামবে না।”
ফিওনা হতবাক হয়ে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে রইলো।তার মনে হচ্ছিল,পৃথিবী যেন হঠাৎ করেই উল্টো হয়ে গেছে।সে অস্পষ্টভাবে ফিসফিস করে বললো,”তুমি মজা করছো,তাই না?”
জ্যাসপার একটুও হাসলো না।তার মুখে সেই কঠিন, আদেশমূলক অভিব্যক্তি।ফিওনার গলা শুকিয়ে গেলো। মাথায় ঝড়ের মতো একটাই চিন্তা ঘুরছিল—এই জ্যাসপার আসলেই পাগল।এই ড্রাগন নরমাল নয়।একেবারে সাইকো ড্রাগন।

মনে মনে সে নিজেকে ধমক দিলো।কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলাবো?কিন্তু মুখে কিছু বলার আগেই জ্যাসপার আরেকটা বালিশ ঠিক করে নিলো এবং শান্তভাবে বললো, “যাও,এখন শুরু করো।আমি ধৈর্য হারানোর আগেই।”
ফিওনা ভেতরে ভেতরে জ্বলে উঠলো।সে সাহস করে বললো, “তুমি কি জানো এটা কতটা অস্বাভাবিক?এভাবে কেই সারারাত চুমু দিতে পারেনা প্রিন্স।”
জ্যাসপার চোখ বন্ধ করলো,কিন্তু ঠোঁটের কোণে মৃদু একটা হাসি ফুটে উঠলো। “আমার সব কিছুই অস্বাভাবিক, হামিংবার্ড।আর তুমি সেই অস্বাভাবিকতার অংশ।এখন কাজ শুরু করো।অথবা শাস্তি আরও বড় হবে।”
ফিওনা হতাশ হয়ে বিছানার এক পাশে বসল।মনে মনে বললো,এ তো পুরো সাইকো কেস।এভাবে থাকলে আমিও হয়তো একদিন পাগল হয়ে যাবো।

জ্যাসপার ধীরে ধীরে শুয়ে পড়লো,আর ফিওনা আড়চোখে ওকে দেখতে লাগলো।তার মুখে এমন একটা ভাব যে,সে যেনো মনে মনে নিজেকে প্রবোধ দিচ্ছে।জ্যাসপার চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে,কিন্তু আচমকা আধশোয়া হয়ে বললো,”কি হলো,হামিংবার্ড?বসে আছো কেনো?আমি কি বলেছি ভুলে গেছো নাকি?”
ফিওনা রাগ আর হতাশার মিশ্রণ নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর ধীরে ধীরে জ্যাসপারের পাশে শুয়ে পড়লো।মনে মনে ভাবলো,এটাই হয়তো আমার জীবনের সবচেয়ে আজব মুহূর্ত।
জ্যাসপারের দিকে ঝুঁকে ফিওনা আলতোভাবে তার গালে একটা চুমু দিলো।তারপর তার কপাল,থুতনি,ঠোঁট—সব জায়গায় একে একে আলতো চুমু দিতে লাগলো।প্রতিটি চুমু যেন তার মনের কথা গোপন রাখার একটা উপায়।
জ্যাসপার চোখ বন্ধ রেখেই সেই অনুভূতি নিচ্ছিলো।তার ঠোঁটের কোণে একটা মৃদু হাসি ফুটে উঠলো।ফিওনার প্রতিটি চুমু যেনো তার রাগের আগুনকে শান্ত করতে সাহায্য করছিলো।

একটা সময় ফিওনা নিজেই হাল ছেড়ে দিলো এবং নিচু স্বরে বললো,”তুমি কি ঘুমিয়েছো?”
জ্যাসপার মৃদু স্বরে বললো, “না,আমি জেগে আছি।আর তুমিও জেগে থাকবে।মনে রেখো এখনো পুরো রাত কিন্তু বাকি আছে।”ফিওনার মুখ ব্যাজার হয়ে গেলো। মনে মনে বললো, এ তো পুরো অত্যাচার।জ্যাসপারকে ছাড়া এই জীবন হয়তো অনেক সহজ হতো। কিন্তু তাকে ছাড়া আমার জীবন কি আর জীবন হতো?

ফিওনা টানা এক ঘণ্টা ধরে জ্যাসপারকে চুমু দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।জ্যাসপারের ফর্সা গাল,কপাল,আর মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে ফিওনার নরম চুমুর স্পর্শে।ধীরে ধীরে ফিওনার চোখ বুজে আসছে,কিন্তু তার ঠোঁট তখনো জ্যাসপারের গালে স্পর্শ করে আছে।চুমু দিতে দিতে কখন যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে,সে নিজেও টের পায়নি।
জ্যাসপার ঘুমানোর ভান করে শুয়ে ছিলো,তার মনোযোগ পুরোপুরি ফিওনার প্রতি।সে অনুভব করছিলো ফিওনার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা আর ঠোঁটের কোমল স্পর্শ।অনেকক্ষণ কোনো সাড়া না পেয়ে সে চোখ খুললো।ফিওনার ঘুমন্ত মুখ দেখে তার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো।

“তোমাকে কি বলবো,হামিংবার্ড?”জ্যাসপার ফিসফিস করে বললো।তারপর ধীরে ধীরে ফিওনার দিকে ঝুঁকলো।আলতো করে তার গালে,কপালে,ঠোঁটে আর পুরো মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলো।ফিওনার চুলে আঙুল চালিয়ে মৃদুস্বরে বললো,“তুমি ঘুমাও,হামিংবার্ড।তোমার মতো কোমল,আর হালকা জেদি মেয়েকে বশ মানানো কতটা সহজ,সেটা আজ বুঝলাম,তবে তোমার ভালোবাসা সত্যি কঠিন।”

আযদাহা পর্ব ৪৭ (৩)

এরপর সে নিজেও শুয়ে পড়লো,কিন্তু ফিওনার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় রেখে।সেই মুহূর্তে জ্যাসপার অনুভব করলো, মহাবিশ্বের সমস্ত রাগ,জেদ,আর ক্ষমতার লড়াইয়ের মাঝেও এই ছোট্ট মেয়েটিই তার জীবনের সবচেয়ে মধুর স্বস্তি।

আযদাহা পর্ব ৪৯