পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬৪

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬৪
সাদিয়া আক্তার

— মা হওয়া একটা ব্লেসিং আমাদের নারীদের জীবনে চন্দ্র সংসার জীবনের একটা পরিপূর্ণতা। প্রত‍্যেকটা নারীই চায় মা হতে। তাই পুনমের এই চাওয়াটা অযৌক্তিক না চন্দ্র তুমি পুনমের বীনা অনুমতিতে ওকে সেটা থেকে বাধা দিতে পারো না।
ডক্টরের কথা শুনে চন্দ্র মাথা কয়েক সেকেন্ড থম মেরে থাকলো ফেল বলল — মানছি ভুলটা আমার ছিলো তবে ওকে আমি বুজিয়েছি অনেকবার ও আমার একটা কথা মানতে রাজী না। যেখানে ওর জন‍্য আমি কোনো কিছু বরদাস্ত করি না সেখানে ওর জানের বিনিময়ে সন্তান আমি চাই না।
এবার পুনম ঝরঝরিয়ে কেদেঁ দিলো এরমধ্যেই রিপোর্ট নিয়ে কেবিনে নক করল মেয়েটি

— ম‍্যাম রিপোর্ট এসেছে,,
রিপোর্ট খুলে চেক করল ডাক্তার। পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল — ইটস পজিটিভ তুমি যা আন্দাজ করেছিলে তাই তবে থাইরয়েডের ঔষধটা মিস দিও না ঐটার সাথে আরো কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি।
চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বলল — চন্দ্র কাল এসে বাকি টেষ্ট গুলো করিয়ে নিয়ে যেও ব্লাডের হিমোগ্লোবিন আলহামদুলিল্লাহ্ টেন আছে বাট পুরো বেড রেষ্টেই রেখো। অন্তত তিনমাস পযর্ন্ত আর কাল তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পুরো কথায় চন্দ্র ছিলো নিরব। সে ডাক্তারের কথা অনুযায়ী বুঝেছে কি পজিটিব এসেছে। তবে সে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। আর দেখাবে না সে বুঝেছে এই কয়দিন পুনম কেনো খাবার আনলেই বাহানা করতো। সে বুঝেছে সে অনেক আগেই ধরা পরে গিয়েছিল পুনমের কাছে তবে মেয়েটা সেটা তাকে ঘুর্নাক্ষরে টের পেতে দেয়নি।
বাসায় এসে চন্দ্র হনহন করে নিজের ঘরে চলে গেলো সঙ্গে পুনম। কাউকে কিছু বলতে দিলো না। ঘরে গিয়ে পুনমের হাত ছাড়ল। টেবিলের চেয়ার টেনে পুনমকে বসাল তার সামনে হাটু গেড়ে বসে তার হাত জোড়া আকরে শান্ত কন্ঠে বলল

— ভুল দুইজনেরই ছিলো আমি তোমাকে জানাইনি তুমি আমাকে জানাওনি শোধবোধ,,, থেমে গেলো চন্দ্র ফের বলল — কাল রিপোর্টে যদি নেগেটিভ কিছু আসে তুমি বাচ্চাটা এবোর্ট করে ফেলবে,।
চন্দ্রর কথা শুনে পুনম হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল তারপর নিনাদ কন্ঠে বলল — নাহ তা আমি কোনোদিন পারব না।
— এটাই তোমার শেষ কথা??
— হ‍্যা
চন্দ্র ছেড়ে দিলো পুনমের হাত পুনমের দিকে তাকিয়ে ছিলো কয়েক মিনিট সেই দৃষ্টিতে চোখ মেলানোর সাহস হয়নি পুনম নজর ঝুকাতে বাধ‍্য হয়।

চন্দ্র বারান্দার দিকে যাওয়ার আগে ঠাস করে লাথি মার মিনি টেবিলটাতে। ফ্লাওয়ার ভাজ সহ টেবিলটা উল্টে পরে গেলো কেপে উঠল পুনম চন্দ্রের এমন রাগ কখনও দেখেনি পুনম শান্তশীষ্ট দেখেছে সদা। পুনমের সাথে তো কোনোকালে রাগেনি চন্দ্র রাগী চন্দ্রকে দেখার ভাগ‍্য তার এখনো হয়নি।
চন্দ্রর ঘরের থেকে আওয়াজ আসলে সবাই দৌড়ে আসে উপরে দরজায় চাপর মেরে কামরুল সাহেব বলল — চন্দ্র এই চন্দ্র কি হয়েছে??
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসল না। আজ প্রায় তিন বছর পর অশান্ত চন্দ্রকে দেখছে কামরুল সাহেব ও চাদনী বেগম। এবার চাদনী বেগম ডাকল ছেলেকে!! পারভেজ ও রোজিনা বেগম হতবাক দৃষ্টিতে দেখছে তাদের কেমন ভয়ে ভয়ে আছে।

পারভেজ সাহেব কামরুল সাহেবকে সামলায় তাকে বলল — থামেন ভাই কি হয়েছে হয়তো দুইজনের মধ‍্যে মনোমালিন‍্য হয়েছে ঠিক হবে।
রোজিনা বেগম ও চাদনী বেগমকে বুঝায়। তবে তারা শান্ত হতে পারছে না। দুইজনকে বুঝিয়ে নিয়ে যায় পারভেজ সাহেব রোজিনা বেগম। মুক্তির কাছেও যেতে হবে ভেবে তারা আপাতত সরে যায় তবে মনের খচখচানি কমাতে পারে না।
সেই যে ঘরে ঢুকেছে দুজন একজনকেও ঘর থেকে বের হতে দেখা যায়নি। রাত আটটা বাজে চাদনী বেগম গিয়েছে হাসপাতালে কামরুল সাহেব দোকানে গিয়েছে সন্ধ্যায় পারভেজ সাহেব তো দুপুরের দিকেই চলে গেছে তাদের আসতেও দশটা পার হবে। টেনশনে পড়ে গেলো রোজিনা বেগম। মেয়েটা সেই সকাল থেকে না খাওয়া ঔষধটাও খায়নি।

আর না পেরে তিনি উঠে গেলেন চন্দ্রদের ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললেন — চন্দ্র বাবা খাবি না তোরা সেই সকাল থেকে না খাওয়া
ঘুমিয়ে গিয়েছিল চন্দ্র হঠাত শাশুড়ির কথায় ঘুম হুরমুর করে উঠে ঘরে যেয়ে দেখে পুনম গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে চন্দ্র নিজের ঘুম দেখে নিজেই অবাক রাগ কমানোর জন‍্য বারান্দায় এসেছিল যাতে রাগে পুনমকে কিছু না বলে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে টের পায়নি। হয়তো ক্লান্তি অবসাদে ঘুম এসে গেছে।।
চন্দ্র গেট খুলে রোজিনাকে বলল — চাচী পুনম ঘুম আমিও ঘুমিয়ে ছিলাম ওকে নিয়ে আসছি খেতে দাও
চন্দ্রকে দরজা খুলে কথা বলতে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে রোজিনা বেগম চন্দ্রকে বললেন

— আয় বাবা
চন্দ্র পুনমের দিকে তাকায় চোখের পানি শুকিয়ে গেছে কেদেঁছে অনেক্ষণ।
— জোহরা জোহরা,,,,
পিটপিট চোখে তাকায় পুনম চন্দ্রকে দেখে বরাবরের মতো মিষ্টি হাসি দেয়।
— উঠো সকাল থেকে না খাওয়া তুমি
— নিয়ে যান
হাত বাড়িয়ে আহ্লাদী স্বরে বলল। চন্দ্র বিনা বাক‍্যে নিয়ে গেলো ওয়াশরুমে একটা কথাও বলল না।
ওয়াশরুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিতে দিতে তার মনে পরল দুপুরের কথা। মন খারাপ হয়ে যায় তার। আর যাই হোক সে তার সন্তানকে মারতে পারে না কোনোদিনও পারবেনা পুনম।
ফ্রেশ হয়ে বের হয় পুনম। সে বের হতেই চন্দ্র যায় তবে যাওয়ার আগে বলে যায় — নিচে যাবে না একদম আমি খাবার নিয়ে আসব।

পুনম চন্দ্রর কথা উপেক্ষা করে নিচে চলে যায়। চন্দ্র পুনমকে ঘরে না দেখে নিচে নামে শান্ত কন্ঠে বলল — আমি নামতে বারন করেছিলাম না
তখনই কামরুল সাহেব বাসায় ঢুকে। ঢুকেই ছেলের দিকে তার নজর যায় এমন শান্ত চন্দ্রকে চিনে তারা। তবে সমস্যা কোথায় সেটা বুঝতে পারছে না।।
পুনম কিছু না বললে চন্দ্রও চুপচাপ খেতে বসে খেয়ে দেয়ে কোনো রকম উঠে যায় চন্দ্র। তার খাওয়া দেখে অবাক রোজিনা এতো অল্প খাওয়া চন্দ্র কোনোদিনও খায়নি কি হয়েছে আজ

— এতো অল্প খেলি কেনো বাবা??
— অনেক্ষণ ঘুমিয়েছি চাচী এজন্য ভালো লাগছে না!!
বাইরের সাথে মিলিয়ে আজ বাড়ির পরিবেশটাও কেমন শান্ত মনে হচ্ছে ঝড় আসার পূর্বাভাস।।
কোনোরকম রাতটা কেটে গেলো সকালে চন্দ্র পুনমকে নিজের হাতে খাইয়ে হাসপাতালে গেলো আজ তার ক্লাস আছে বারোটার দিকে তাই সকালেই সকল টেস্ট করিয়ে আসবে।
মুক্তিকে দেখে মাকে নিয়ে চন্দ্র বের হয় ডাক্তারের সাথে কথা বলে সকল টেস্ট করায় চন্দ্র। বিকালে রিপোর্ট দিবে বিকালে ডাক্তার থাকে না তাই কাল রিপোর্ট দেখাবে তারা। পুনমের এতো টেষ্ট করতে দেখে চাদনী বেগম অবাক বনে যায়।। চন্দ্র তাদের নামিয়ে দিয়েই চলে যায়।
বাসায় আসতেই পুনমকে চেপে ধরে চাদনী বেগম। — কি হয়েছে পুনম এতো এতো টেস্ট করালি ক‍্যান আবার আল্ট্রা ও করালি,,

ঢোক গিলল পুনম সাথে লজ্জাও পেলো মাথা নিচু করে বলল — তুমি দাদী হতে চলেছো,,,
খুশীতে পুনমকে জড়িয়ে ধরে চাদনী বেগম রোজিনা বেগমও খুশী হয় মেয়েটার কাতরতা দেখে এতোদিন। আল্লাহর কাছে কত ফরিয়াদ করেছে মেয়ের সুখের জন‍্য তিনিও পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে তাদের দেখাদেখি পূর্ব পুনমের কোলে ঢুকে পরে হেসে দেয় তারা।
— এতো খুশীর খবর চন্দ্র জানে
চাদনী বেগমের কথায় পুনমে ঢোক গিলে বলল
— জানে কাল জেনেছে,,,,
রোজিনা বেগম অবাক স্বরে বলল — কাল জানলি আমাদের জানালি না কেনো??
— উনি রাজী না
— কিহ
দুই জা সমস্বরে বলল।

— আজ আসুক ঐ ছেলে এতো বড় খুশীর খবরে আমাদের জানালো না কেনো আবার রাজীও না কেনো??
চুপ থাকে পুনম কিছু বলে না মেয়ের চুপ থাকায় সন্দেহ হয় রোজিনার তাই সে বলল — ভাবী নিশ্চয়ই কোনো কিছু হয়েছে নাহলে
তাকে বলতে না দিয়ে বলল — তুই জানিস না ঐ ছেলে বদের হাড্ডি আজ আসুক ঐ ছেলে বলেই তিনি চলে গেলেন
রোজিনা মেয়েকে চেপে ধরেন তবুও পুনম চুপ থাকে। কিছু বলে না।।
বিকালে চন্দ্র একবারেই রিপোর্ট নিয়ে বাসায় আসে পুনম দুপুরে ফোন দিলেও রিসিভ করে না।
রিপোর্টের খাম রেখে নিজের কাপড় নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।
পুনম ঘরে ঢুকে দেখে চন্দ্র একেবারে গোসল করেই বের হয়েছে ফুল ড্রেসড। পুনম অবাক প্রতিদিন বাসায় এসেই পুনমের খোঁজ করে নিজের সকল কাজ পুনমকে দিয়ে করায় পুনম বেশ আনন্দ নিয়েই সব কাজ করে মাঝেমধ্যে রাগ দেখালেও সেটা উপরে উপরে।

— খাবার দিব
পুনমের দিকে একপল তাকিয়ে তাকে কোলে তুলে বেডে বসিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বলল
— বিছানা থেকে যেনো না নামা হয়,,,,
চলে গেলো চন্দ্র পুনম ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকল চন্দ্রর যাওয়ার দিকে। কাল রাত থেকে তার সাথে কথা বলে না লোকটা সকালেও নিজের মতো রেডি হয়ে চলে গেছে তবে তার রাখতেও ভুলে নাই।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬৩

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে চন্দ্র ডাক্তার গম্ভীর মুখে রিপোর্ট দেখে বলল — চন্দ্র ভালো মন্দ সবকিছুতে আছে,,
— আপু আই ওয়ান্ট ক্লিয়ার কথা,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৬৫