আযদাহা পর্ব ৫১

আযদাহা পর্ব ৫১
সাবিলা সাবি

পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়।দুই মাস ধরে ভার্সিটি এবং পড়াশোনার প্রতি ফিওনার কোনো মনোযোগই ছিল না। আজ রেজাল্ট বের হতে তার মনের ভেতর যে ভয় ছিল, সেটাই বাস্তবে রূপ নিল।খাতায় তার নাম্বার দেখে নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না।
লিন আর লিয়া তার এই অবস্থা দেখে বুঝতে পারছিল যে ফিওনার জীবনে কিছু একটা গভীরভাবে প্রভাব ফেলেছে।
লিন জিজ্ঞেস করল,”ফিওনা,তুই না ! কতো ভালো স্টুডেন্ট ছিলি,এতোটা খারাপ রেজাল্ট এটা কীভাবে সম্ভব?”
লিয়া যোগ করল,”তোমার কিছু একটা হয়েছে,ফিও।প্লিজ আমাদের বলো,আমরা তো তোমার প্রিয় বন্ধু।”
কিন্তু ফিওনা কিছুই বলল না।শুধু ম্লান হাসি দিয়ে বলল,

“কিছু না তোমার এতো ভেবো না আমাকে নিয়ে।হয়তো আমার মনোযোগ কম ছিলৎতাই,সমস্যা নেই সামনের পরিক্ষাগুলো ভালোই হবে।
রেজাল্ট নিয়ে বাসায় পৌঁছে ফিওনা সরাসরি নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।মিস ঝাং তখন ডাইনিং রুমে বসে চায়ের কাপ হাতে টিভি দেখছিলেন।তিনি এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন।তিনি ফিওনার বিষণ্ন মুখ দেখে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
“ফিওনার কি হয়েছে?”মিস ঝাং মৃদু কণ্ঠে মিস্টার চেন শিংকে জিজ্ঞেস করলেন।মিস্টার চেন শিং জানতেন,ফিওনা গত কয়েক মাস ধরে কতটা ভেঙে পড়েছে।কিন্তু তিনি কিছুই বললেন না,শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজ করতে চলে গেলেন।
ঘরের দরজা বন্ধ করে ফিওনা চুপচাপ বিছানায় বসে পড়ল। তার চোখ ভিজে উঠল।তার মনে পড়ল মাউন্টেন গ্লাস হাউজের সেই দিনগুলো,জ্যাসপারের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো।
লকেটটা হাতে নিয়ে সে তাকিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তুমি তো বলেছিলে,কোনোদিন আমাকে একা থাকতে দেবে না।তাহলে এখন আমি এতটা একা কেন?”
ঘরের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফিওনা দৃষ্টি নিবদ্ধ করল আকাশে জ্বলজ্বল করা সন্ধ্যাতারার দিকে।তার চোখে গভীর ব্যথা আর অভিমানের ছায়া।নিজের হাতে থাকা লকেটটা আলতোভাবে স্পর্শ করল সে।যেন লকেটের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্মৃতিগুলো তার প্রিয় জ্যাসপারকে কাছে নিয়ে আসবে।
নিঃশ্বাস নিয়ে ফিওনা মৃদু স্বরে বলল,

“প্রিন্স,তুমি কি এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছ যে আমাকে একটা ইমেইলও দিতে পারছো না?আমি কতোগুলো ইমেইল করেছি তোমাকে একটাও রেসপন্স করোনি।আমি তো দিনে অন্তত ১০০ বার এই লকেটটা স্পর্শ করেছি।রাতেও তোমার দেওয়া পারফিউম মেখে ঘুমিয়েছি,যেন তুমি আমার কাছেই আছো। তবুও তোমার একটু রেসপন্স পাচ্ছিনা।”
তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল।চোখের কোণ দিয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।সন্ধ্যাতারার দিকে তাকিয়ে সে আরও বলল,”তোমাকে তো বলেছিলাম,আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব।কিন্তু তুমি কি একবারও আমাকে মনে করো না? নাকি ভেনাসের রাজ্য তোমাকে এতটাই দূরে নিয়ে গেছে যে পৃথিবীর এই ছোট্টপাখি তোমার হামিংবার্ড আর তোমার প্রিয় নয়?”

ফিওনা জানত,জ্যাসপার এমন একজন যে দায়িত্ব আর কর্তব্যকে সবার আগে রাখে।তবুও তার মন এই দীর্ঘ নীরবতার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি।
লকেটটা শক্ত করে ধরে সে বলল,
“প্রিন্স,তুমি যদি আমাকে ভুলে গিয়ে থাকো,তাহলে আমি কেন তোমাকে ভুলতে পারছি না?বলো,আমি কেন তোমাকে এত ভালোবাসি?”
ফিওনার কথাগুলো যেন শূন্য আকাশের দিকে ছুটে গেল। কিন্তু কোনো উত্তর এলো না।শুধু সন্ধ্যাতারা অটুটভাবে আকাশে জ্বলছিল,যেন সে জ্যাসপারের নীরবতার একমাত্র সাক্ষী।

রাত গভীর। বাড়ির পরিবেশ নিরব আর ভারী।ডাইনিং টেবিলে সবার জন্য খাবার সাজানো থাকলেও ফিওনার প্লেট খালি পড়ে ছিল।মিস ঝাং অসুস্থ থাকায় বাড়িতে আরেকজন মেইড রাখা হয়েছে।সেই বাড়ির সাহায্যকারী এসে জানিয়ে গেল,”ম্যাডাম বলেছেন,তিনি আজ খাবেন না।”
মিস্টার চেন শিং চুপচাপ বসে ছিলেন।ফিওনার ভার্সিটি থেকে আসা ফোনের খবর তাকে গভীর চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।তার প্রতিভাবান নাতনি,যে সবসময় সেরা রেজাল্ট করত,আজ সে এত বাজে রেজাল্ট করেছে।চেন শিং বুঝতে পারলেন, সমস্যাটা অনেক গভীর,যা এড়িয়ে গেলে ফিওনার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।
অবশেষে,তিনি নিজের সিদ্ধান্ত নিলেন।রাতের নীরবতায় তিনি উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ফিওনার ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন।দরজায় নক করে বললেন,
“ফিওনা,দরজা খোলো।আমার তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”
ভেতর থেকে কোনো সাড়া পেলেন না।কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করেও যখন ভেতরে কোনো শব্দ শোনা গেল না, তখন তিনি আবার বললেন,”দরজা খুলতে হবে না যদি তুমি না চাও,কিন্তু শোনো ফিওনা।তুমি আর কতদিন এভাবে নিজেকে ধ্বং*স করবে?তুমি কি জানো,তোমার রেজাল্ট কতটা খারাপ হয়েছে?তুমি কি জানো,এটা তোমার ভবিষ্যতের জন্য কতটা বিপজ্জনক?”

ফিওনা ভেতরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল।মিস্টার চেন শিংয়ের কণ্ঠ তাকে তেমনভাবে স্পর্শ করতে পারছিল না।তিনি আবার বললেন,”ফিওনা, আমি জানি তুমি কী হারিয়েছো।আমি জানি,কী কারণে তুমি এই অবস্থায় পড়েছ। কিন্তু জানো তো,জীবন এভাবেই চলে।আমাদের উঠে দাঁড়াতে হবে। ফিওনা,দরজা খুলে আমার সাথে কথা বলো।”
ফিওনা দরজার কাছে এসে হাত রাখল। কিন্তু খুলল না। তার কণ্ঠ নরম অথচ বিষণ্ন।ভেতর থেকে বলল,
“গ্র্যান্ডপা,দয়া করে আমাকে একা থাকতে দাও।আমি জানি তুমি আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছো।কিন্তু আমার যা হারিয়েছে,তা আর ফিরে আসবে না।তুমি শুধু দয়া করে আমাকে সময় দাও।”
মিস্টার চেন শিং কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।তারপর বললেন,

“ঠিক আছে,ফিওনা। কিন্তু একবার তো আমার সাথে কথা বলে দেখো, এই বয়সে এসে এতো চিন্তা করলে আমি তো অসুস্থ হয়ে যাবো সেটা কি বুঝবে না তুমি?নিজের গ্ৰান্ডপাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারবে তুমি?।”
অবশেষে ফিওনা দরজাটা খুলে দিলো,ধীরে ধীরে ঘরের ভেতর ঢুকলেন মিস্টার চেন শিং।
ফিওনার হাত কাঁপছে,মনে হচ্ছিল এতদিনের গোপন কথাগুলো আজ বেরিয়ে আসার পর আর কোনো কিছুই গোপন থাকবে না।মিস্টার চেন শিং ধীরে ধীরে সোফায় বসে পড়লেন।তার চোখের গভীরতায় এক অজানা প্রশান্তি,যেন তিনি আগে থেকেই জানতেন আজ এই কথাগুলো শোনার দিন।ফিওনা তার পাশে বসল,চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু আড়াল করতে না পেরে সরাসরি বলেই ফেলল,
“গ্ৰান্ডপা,তুমি যে ড্রাগন এথিরিয়নকে ব*ন্দি করেছিলে,তার ভাই,ভেনাসের ড্রাগন প্রিন্স,যে আমাকে কি*ডন্যাপ করেছিল—আমি আসলে তাকে ভালোবাসি।সেও আমাকে ভালোবাসে।আমাদের সম্পর্কটা অনেক গভীর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।”

ফিওনার কণ্ঠে অদ্ভুত এক কম্পন,মনে হচ্ছিল তার ভেতরের সমস্ত জগৎ যেন টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।কিন্তু মিস্টার চেন শিং কোনো রাগ বা বিস্ময়ের প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।বরং তার ঠোঁটে হালকা একটা স্মিত হাসি ফুটে উঠল।শান্ত গলায় বললেন,”আমি জানি, ফিওনা।আমি সবটাই জানি।”
ফিওনার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল।
“তুমি জানো? কিন্তু কীভাবে?”
মিস্টার চেন শিং ধীরে ধীরে বললেন,
“ওই ড্রাগন প্রিন্স,জ্যাসপার,সে আমার সাথে কথা বলেছিল। ভেনাসে যাওয়ার আগে সে আমার সাথে দেখা করে গিয়েছিল।সে আমাকে বলেছিল,তুমি তার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।কিন্তু তার আরও অনেক দায়িত্ব আছে,ফিওনা। সে শুধু একজন ড্রাগন নয়,সে ভেনাসের প্রিন্স।ওর দায়িত্ব অনেক বড়।”
ফিওনা তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করল,
“কিন্তু গ্ৰান্ডপা,তাহলে দু’মাস হয়ে গেল,সে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করছেনা কেনো?ওর কি কোনো বিপদ হয়েছে?নাকি সে আমাকে ভুলে গেছে?”

মিস্টার চেন শিং ফিওনার মাথায় স্নেহভরে হাত বুলিয়ে বললেন,”না,ফিওনা।জ্যাসপার তোমাকে ভুলে যায়নি।কিন্তু তোমাকে বুঝতে হবে,তার জীবনটা আমাদের মানুষদের মতো সহজ নয়।ভেনাসে ফিরে যাওয়ার পর থেকে ওর অনেক কাজ ও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।তার রাজ্যের জন্য সে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।”
ফিওনার চোখে পানি টলমল করছিল।
“কিন্তু আমি তাকে মিস করছি,গ্ৰান্ডপা।আমি রাতে তার দেয়া পারফিউম মেখে থাকি,তার দেয়া লকেট স্পর্শ করি।কিন্তু কিছুতেই তার উপস্থিতি অনুভব করতে পারি না।সে কি আর আমার কাছে ফিরবে না?”
মিস্টার চেন শিং গভীর গলায় বললেন,

“ফিওনা,তোমার অপেক্ষা করতে হবে।ভালোবাসা যদি সত্য হয়,তাহলে কোনো বাধাই তাকে থামাতে পারবে না।আর জ্যাসপার?সে শুধু তোমাকে ভালোবাসে না,সে তোমার জন্য নিজের জীবনও দিতে পারে।তুমি শুধু একটু ধৈর্য ধরো।”
ফিওনা স্থির চোখে মিস্টার চেন শিং-এর দিকে তাকিয়ে বলল,”আমি আর কিছুদিন অপেক্ষা করবো গ্ৰান্ডপা।কিন্তু যদি ততদিনেও জ্যাসপার আমার সাথে যোগাযোগ না করে, আমি নিজেই ভেনাসে যাবো।আর সেই ব্যবস্থা তুমি করবে, গ্ৰান্ডপা।আমাকে কথা দাও,তুমি আমাকে ভেনাসে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে।”
মিস্টার চেন শিং বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন।তার কণ্ঠে চাপা উৎকণ্ঠা,”তুমি কি পাগল হয়ে গেছ,ফিওনা?মানুষ হয়ে ভেনাসে যাওয়ার কথা ভাবছো?ওখানের পরিবেশ, ওখানকার প্রকৃতি,সবকিছুই ভিন্ন।তুমি এক মুহূর্তও টিকতে পারবে না সেখানে।ভেনাস কোনো সাধারণ জায়গা নয়। বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা এবং প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে যায়। সাধারণ মানুষ ওখানে যেতে পারে না,আর যাওয়ার অনুমতিও নেই।”

ফিওনা কোনো ভয় বা দ্বিধা দেখাল না। তার কণ্ঠে ছিল অদম্য সংকল্প,”এসব কিছু আমি জানি না,গ্ৰান্ডপা।কিন্তু তুমি আমার জন্য এটা করতেই হবে।তুমি তো বিজ্ঞানী।তুমি যদি ঠিক করতে চাও,তুমি পারবে।আমি শুধু আমার জ্যাসপারের কাছে যেতে চাই।সে যদি আমার কাছে আসতে না পারে, আমি নিজেই সেখানে যাবো।তুমি তো সবকিছুই করতে পারো,আমাকে সাহায্য করো।”
মিস্টার চেন শিং দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
“তোমার আবেগ বুঝি,ফিওনা।কিন্তু বাস্তবতা এত সহজ নয়। ভেনাসে যাওয়ার জন্য শুধু প্রযুক্তি নয়,দরকার বিশেষ অনুমতি,বিশেষ প্রস্তুতি।তুমি যদি কিছুতেই থামতে না চাও, তবে আমাকে সময় দাও।আমি দেখতে পারি,কোনো নিরাপদ উপায় আছে কিনা।তবে তোমাকে বুঝতে হবে,এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”
ফিওনার চোখে আশা ঝিলমিল করল।সে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

“আমি কোনো ঝুঁকির পরোয়া করি না,গ্ৰান্ডপা।আমি আমার জ্যাসপারের কাছে যাবো,যেভাবেই হোক।”
মিস্টার চেন শিং ফিওনার মুখের দৃঢ়তা দেখে বুঝতে পারলেন,তাকে থামানো সম্ভব নয়।তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন,ভেনাসে যাওয়ার প্রস্তুতির বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবেন।কিন্তু একই সাথে,তিনি বুঝতে পারলেন,এই সিদ্ধান্ত তাদের জীবনে অনেক বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

আরো কয়েকটা দিন কেটে গেছে।ফিওনার চোখের নিচে ক্লান্তির কালো ছাপ,মন ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ।জ্যাসপারের এখনো কোনো খোঁজ নেই—না কোনো বার্তা,না কোনো সংকেত। প্রতিটি মুহূর্ত যেন তার বুকের ভেতর ছুরি চালাচ্ছে।এবার আর ধৈর্য ধরতে পারল না সে।সোজা মিস্টার চেন শিং-এর কক্ষে গিয়ে দাঁড়াল।
“গ্ৰ্যান্ডপা,আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না।আমাকে ভেনাসে যেতে দিন।আপনি এখনই ব্যবস্থা করুন।” ষতার গলা কাঁপছিল,চোখে একরাশ দৃঢ়তা।
মিস্টার চেন শিং-এর মুখ থমথমে হয়ে গেল।পাশেই মিস ঝাং হতবাক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।দুজনেই জানতেন,এই মেয়েটি একবার কিছু ঠিক করলে তাকে থামানো অসম্ভব।কিন্তু ভেনাসে যাত্রা?এটি কোনো সাধারণ বিষয় নয়।
“ফিওনা,এটা সম্ভব নয়।ভেনাসে যাওয়া কেবল বিপজ্জনকই নয়,এর জন্য শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি দরকার।তুমি জানো না সেখানকার পরিবেশ কেমন,”চেন শিং কঠোর গলায় বললেন।

“গ্ৰ্যান্ডপা,আমি সেটা পরোয়া করি না।জ্যাসপার আমার ভালোবাসা,আমাকে আমার ভালোবাসার জন্য এটা করতে হবে, যেহেতু আমি পৃথিবীর কাউকে ভালোবাসি নি, বেসেছি একজন ভিনগ্রহের ড্রাগনকে তাহলে তার ভালোবাসা হয়ে এতবড় রিস্ক নেয়ার ক্ষমতা আর যোগ্যতা দুটোই আমার থাকতে হবে।আমি এবার ভেনাসের যেতে চাই আর জানাতে চাই সে কেনো এতো প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করছেনা” ফিওনার গলায় ভাঙা আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠল।

মিস ঝাং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। “ফিওনা,তুমি আমাদের একমাত্র পরিবার।তোমার জীবনের ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না।ভেনাসে যাওয়া কোনো সাধারণ অভিযান নয়। সেটা মৃ*ত্যু ডেকে আনতে পারে।”
কিন্তু ফিওনা নাছোড়বান্দা।কিছুতেই তাকে বোঝানো গেল না।অবশেষে,হতাশ হয়ে গ্র্যান্ডপা আর মিস ঝাং কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলেন। ফিওনা দাঁড়িয়ে থাকল,চোখ ভরা ক্রোধ আর বেদনা।
কিছুক্ষণ পর,সিদ্ধান্ত নিয়ে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিল সে। “আপনারা যদি আমাকে যেতে না দেন,তাহলে আমাকে মৃ*ত দেখবেন!” দরজার পেছন থেকে ফিওনার কণ্ঠস্বর ভেসে এল।

চেন শিং হতভম্ব হয়ে দরজার দিকে তাকালেন। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল।দরজা ঠেলে খুলে দিলেন তিনি।“তুমি যদি আমাকে এমন করতে বাধ্য কর,তাহলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।তবে এটি সহজ হবে না,ফিওনা।ভেনাসে যাওয়ার জন্য স্পেসশিপ চালানোর প্রশিক্ষণ লাগবে।সেটা তোমাকে নিতে হবে।তার আগে আমি কিছুতেই তোমাকে যেতে দেব না।”
ফিওনার চোখে স্ফুলিঙ্গ ফুটে উঠল।“আমি সব শিখতে রাজি আছি।শুধু আমাকে অনুমতি দিন গ্ৰান্ডপা আর সব ব্যবস্থা করুন।”
মিস্টার চেন শিং গভীর শ্বাস নিলেন।“ঠিক আছে।তবে মনে রেখো,এটি সাধারণ মানুষের কাজ নয়।তুমি যদি একটুও ব্যর্থ হও,আমি এই মিশন বাতিল করব।”

রাতের গভীরতা বাড়ছে।মিস্টার চেন শিং একটি ছোট ব্যাগ হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন।তিনি জানেন,এই মিশন অত্যন্ত বিপজ্জনক,কিন্তু ফিওনার জেদের কাছে তিনি হার মেনেছেন।তার মনের গভীরে একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে,তবে তিনি জানেন,এই কাজে তাকে সাহায্য করার মতো একজনই আছেন—তার পুরোনো বন্ধু, ড.হুয়াং ঝি।
ড. হুয়াং ঝি,একসময় চেন শিং-এর সঙ্গে একাধিক গবেষণায় কাজ করেছেন।দুজনেই ছিলেন একে অপরের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।কিন্তু হুয়াং ঝি এখন অনেক সাফল্যের শীর্ষে,একটি অত্যাধুনিক ল্যাব পরিচালনা করেন এবং সবসময়ই নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় ব্যস্ত।
চেন শিং তার বাড়ি থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত হুয়াং ঝি-এর ল্যাবে পৌঁছালেন।রাতের অন্ধকারে ল্যাবটি যেন আরও রহস্যময় দেখাচ্ছিল।ল্যাবের নিরাপত্তা চেক পেরিয়ে তিনি ভেতরে ঢুকলেন।হুয়াং ঝি তখনও তার ডেস্কে বসে কিছু পরীক্ষার কাজ করছিলেন।চেন শিং-কে দেখে তিনি চমকে উঠলেন।

“চেন!তুমি এত রাতে এখানে?কিছু ঘটেছে নাকি?”
চেন শিং গভীর শ্বাস নিয়ে বললেন,
“হুয়াং আমি তোমার সাহায্য চাইতে এসেছি।একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
হুয়াং ঝি গম্ভীর মুখে বললেন,
“তোমার গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা সহজ নয়। বসো,বলো কী হয়েছে।”
চেন শিং একটু থেমে ধীরে ধীরে সবটা খুলে বললেন—ফিওনার জেদ,জ্যাসপারের কথা,ভেনাসে যাওয়ার পরিকল্পনা,এবং স্পেসশিপের প্রয়োজনীয়তা।হুয়াং ঝি হতবাক হয়ে শোনেন।
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছ,চেন?একজন সাধারণ মানুষকে ভেনাসে পাঠানোর পরিকল্পনা করছ?জানো না ওখানকার পরিবেশ আমাদের জন্য কতটা প্রতিকূল?এটা অসম্ভব!”
চেন শিং শান্ত গলায় বললেন,
“আমি জানি,হুয়াং।কিন্তু ফিওনা আমার নাতনি।ওর জেদ আর ভালোবাসা এতটাই গভীর যে আমি ওকে থামাতে পারিনি।যদি তুমি সাহায্য না করো,ও হয়তো নিজের জীবন শেষ করে দেবে।তুমি তো জানো,আমি ওর জীবন রক্ষা করতে যা করা লাগে,তা করব।”

হুয়াং ঝি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।তারপর বললেন,
“চেন,আমি বুঝি তোমার পরিস্থিতি।কিন্তু এর ঝুঁকি খুব বেশি। ভেনাসে পৌঁছানোই শুধু নয়,ওখান থেকে ফিরে আসাটাও প্রায় অসম্ভব।”
চেন শিং জোর দিয়ে বললেন,
“আমি জানি,কিন্তু আমি ওর পাশে আছি।আমি চাই না ও একা এই যাত্রায় বেরিয়ে পড়ুক।তুমি যদি সাহায্য করো, তাহলে আমরা এটা নিরাপদে সম্পন্ন করতে পারব।”
হুয়াং ঝি কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
“এই কাজ করলে আমি আমার ক্যারিয়ার ধ্বং*সের মুখে ফেলতে পারি। তবে…যদি এটা সফল হয়,তাহলে একবার ভাবো!আমরা শুধু ভেনাসে মানুষ পাঠানো নয়,ওখানকার পরিবেশে টিকে থাকার চিত্রও লাইভ দেখতে পাব। আমি যদি এটা রেকর্ড করি,তাহলে সারা বিশ্বে আমার নাম ছড়িয়ে পড়বে।”
চেন শিং একটু হাসলেন।

“আমি জানতাম,তুমি আমার কথা ফেলবে না।তবে এটা সম্পূর্ণ গোপনে করতে হবে।ফিওনার কথা যাতে বাইরের কেউ না জানতে পারে।”
হুয়াং ঝি মাথা নাড়লেন।
“ঠিক আছে,চেন।আমি রাজি।কিন্তু মনে রেখো,একবার যাত্রা শুরু হলে এটা আর থামানো যাবে না।ফিওনাকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করতে হবে।আমাদের সব কিছু নিখুঁতভাবে করতে হবে।”
চেন শিং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।
“ধন্যবাদ,হুয়াং।আমি জানতাম,তুমি আমাকে নিরাশ করবে না।আমরা একসঙ্গে এটা সফল করব।”
দুজন মিলে তৎক্ষণাৎ কাজ শুরু করলেন।হুয়াং ঝি তার ল্যাবের সবচেয়ে দক্ষ কর্মীদের মধ্যে কয়েকজনকে গোপনে এই প্রজেক্টে যুক্ত করলেন।তারা একটি বিশেষ স্পেসশিপ ডিজাইন করার কাজ শুরু করলেন,যা ফিওনাকে ভেনাসে নিরাপদে পৌঁছে দেবে এবং আবার পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে।
চেন শিং ফিওনাকে খবর দিলেন,
“তোমার প্রশিক্ষণ শুরু করো।আমরা তোমার জন্য স্পেসশিপ প্রস্তুত করছি।তবে এটা মনে রেখো,এই যাত্রা সহজ হবে না।”
ফিওনার চোখে একরাশ আশার আলো ফুটে উঠল।
“ধন্যবাদ,গ্র্যান্ডপা।আমি প্রতিটি চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত।”

তিন মাসের কঠোর পরিশ্রম এবং নিখুঁত পরিকল্পনার পর অবশেষে সেই দিনটি এলো।ড.হুয়াং ঝি এবং মিস্টার চেন শিং একসঙ্গে ফিওনাকে তাদের গোপন ল্যাবের ভেতর নিয়ে গেলেন।এটি ছিল গভীর পাহাড়ি এলাকায় লুকানো একটি অত্যাধুনিক সুবিধা,যেখানে সাধারণ চোখ কখনো পৌঁছাতে পারে না।ল্যাবের প্রধান অংশে প্রবেশ করার সময় ফিওনার হৃদয় উত্তেজনায় ধকধক করছিল।
বিশাল এক স্বচ্ছ ঘরের মধ্যে রাখা হয়েছিল সেটি।ফিওনার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।এটি দেখতে যেনো কোনো কাল্পনিক জগতের কিছুর মতো।
স্পেসশিপটি একক যাত্রীর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।এর আকার একটি ছোট্ট আধুনিক কারের মতো,তবে এর গঠন অনেক বেশি মসৃণ ও বায়ুবিদ্যুতীয়।গাঢ় রুপালি রঙে ঢেকে থাকা গ্লাস-ফাইবারের ফিনিশিং এটিকে ভিনগ্রহীয় প্রযুক্তির মতো দেখাচ্ছিল।সামনের অংশটি একটি ত্রিভুজাকৃতির কাঁচ দিয়ে ঢাকা,যা ফিওনার জন্য চারপাশ দেখার সুযোগ তৈরি করেছে।

ভেতরে ছিল একটি আরামদায়ক বসার আসন,যা সম্পূর্ণরূপে “স্ট্যাটিক ক্যাপসুল”সিস্টেমে আবদ্ধ।এটি ফিওনাকে ভেনাসের প্রতিকূল পরিবেশে রক্ষা করার জন্য বিশেষ তাপ-প্রতিরোধী এবং রেডিয়েশন-প্রুফ সিল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ইউরেনিয়াম ফিউশন মডিউল ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে,যা পৃথিবী থেকে ভেনাস পর্যন্ত গতি তুলতে পারে মাত্র ১০ ঘণ্টায়। এর জ্বালানি এতটাই কার্যকরী যে এটি একবার লোড করলেই ৩টি গ্রহ পরিভ্রমণ করা সম্ভব।
কৃত্রিম অক্সিজেন সরবরাহের জন্য একটি অত্যাধুনিক সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে,যা ভেনাসের ৯২ বার চাপের মধ্যে ফিওনার শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করবে।ভেতরে স্বয়ংক্রিয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য “ক্রায়োজেনিক কুলিং সিস্টেম” সংযুক্ত করা হয়েছে।

এটি একটি অর্ধ-স্বয়ংক্রিয় চালকব্যবস্থা,যাতে ফিওনা প্রাথমিকভাবে ম্যানুয়ালভাবে পরিচালনা করতে পারবে।কিন্তু বিপদের সময় রোবোটিক পাইলট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ নেবে।
ফিওনাকে সঠিক পথে রাখতে একটি হাই-রেঞ্জ রেডার এবং সরাসরি পৃথিবীতে যোগাযোগের জন্য লেজার কমিউনিকেশন সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে।
ড. হুয়াং ঝি বললেন,”তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এটি প্রস্তুত হয়েছে।এটি শুধু একটি স্পেসশিপ নয়,এটি তোমার স্বপ্নের দরজা ফিওনা।”
ফিওনা এক মুহূর্তের জন্য যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।সে স্পেসশিপের চারপাশে ঘুরে দেখতে লাগল,তার আঙুল দিয়ে মসৃণ পৃষ্ঠ স্পর্শ করল।
চেন শিং বললেন:”কাল থেকে তোমার প্রশিক্ষণ শুরু হবে ফিওনা।এটি শুধু চালানোর জন্য নয়,তোমাকে বুঝতে হবে এর প্রতিটি অংশ,কারণ ভেনাসে কোনো ভুলের সুযোগ নেই।”
ফিওনার চোখে তখন এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞার ঝিলিক।এটি কেবল একটি যন্ত্র নয়;এটি ছিল তার ভালোবাসার কাছে পৌঁছানোর একমাত্র সেতু।

পরের দিন সূর্য ওঠার আগেই ফিওনা প্রস্তুত হয়ে গেল।তার সামনে অপেক্ষা করছে এক নতুন অধ্যায়—স্পেসশিপ চালানোর প্রশিক্ষণ।মিস্টার চেন শিং এবং ড.হুয়াং ঝি বিশেষজ্ঞদের একটি দল নিয়ে একটি গোপন ক্যাম্প তৈরি করেছেন, যেখানে ফিওনাকে প্রয়োজনীয় সব দক্ষতা শেখানো হবে।
(১ম মাস)
ফিওনাকে প্রথমে স্পেসশিপের প্রতিটি অংশ এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে শেখানো হয়।এটি জ্বালানী ব্যবস্থাপনা, লিফট-অফ এবং ল্যান্ডিং সিস্টেম সম্পর্কে তাত্ত্বিক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করে।
ফিওনাকে মাইক্রোগ্রাভিটি এবং ভেনাসের উচ্চ-চাপ পরিবেশের ধারণা দেয়া হয়।এটি বোঝানোর জন্য ভার্চুয়াল রিয়ালিটি সিমুলেশন ব্যবহার করা হয়।
স্পেসশিপের কন্ট্রোল প্যানেলের প্রতিটি বোতাম এবং সুইচের কাজ শেখানো হয়।

(২য় ও ৩য় মাস):
ফিওনাকে মডেল স্পেসশিপের একটি ভার্চুয়াল ককপিটে বসিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।এতে টেক-অফ,ক্রুজ মোড, এবং ল্যান্ডিং অনুশীলন করতে হয়।
মহাকাশে সম্ভাব্য বিপদের জন্য প্রস্তুতি, যেমন—অক্সিজেন লিক, তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন, এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া।
একটি বিশাল চেম্বারে ফিওনাকে মহাকাশের পরিবেশ অনুভব করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এটি চাপ, কম অক্সিজেন, এবং তাপমাত্রার প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে।

(৪র্থ মাস):
ফিওনাকে পুরোপুরি হাতে স্পেসশিপ নিয়ন্ত্রণ করার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।রোবোটিক পাইলট কীভাবে সাহায্য করবে এবং এটি পুনরায় সেট করা যাবে তা শেখানো হয়।
ভেনাসের প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে নিরাপদে অবতরণ করা যায় তা শেখানোর জন্য মডেলিং এবং বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

(৫ম ও ৬ষ্ঠ মাস):
ফিওনাকে স্পেসশিপের লেজার যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যবহার শেখানো হয়।তাকে জানানো হয় কীভাবে ভেনাসের ঘন মেঘমালা এবং উত্তপ্ত পৃষ্ঠের চাপ এড়িয়ে চলা যায়।
ফাইনাল টেস্ট:একবার সিমুলেটর এবং মডেলে সফল হওয়ার পর, তাকে একটি ছোট স্কেলে প্রকৃত স্পেসশিপে অনুশীলন করতে দেয়া হয়।

এদিকে,মিস্টার চেন শিং ফিওনার জন্য বিশেষ সুট তৈরির কাজ তদারকি করছেন।সুটটি ছিল ফিওনার ভেনাসে কয়েক ঘণ্টার জন্য টিকে থাকার চাবিকাঠি।
সুটটি ভেনাসের ৪৬৫°C তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন।
এটি ভেনাসের ৯২ বার বায়ুচাপ মোকাবিলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।সুটে একটি পোর্টেবল অক্সিজেন ট্যাঙ্ক রয়েছে, যা ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করবে।
রেডিয়েশন থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য এতে হালকা-ওজনের সীসার স্তর রয়েছে।সরাসরি স্পেসশিপের সাথে সংযোগ রাখার জন্য একটি অন্তর্নির্মিত কমিউনিকেশন সিস্টেম।

প্রতিদিনের প্রশিক্ষণে ফিওনার শরীর ও মন আরো দৃঢ় হচ্ছিল। সে জানত, এই যাত্রা শুধু ভালোবাসার জন্য নয়, বরং নিজের সামর্থ্যের এক অনন্য পরীক্ষা। অন্যদিকে, মিস্টার চেন শিং ও ড. হুয়াং ঝি নিশ্চিত করলেন, কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে ফিওনার স্বপ্ন পূরণ হবে।
ছয় মাসের শেষে,ফিওনা স্পেসশিপ চালানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত,এবং তার সুটও পরীক্ষার মাধ্যমে সফল প্রমাণিত হয়েছে।
ফিওনার প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর,তাকে ভেনাসে পাঠানোর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট দিন ও সময় নির্ধারণ করা হয়।মিশনের প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত গোপনীয় রাখা হয় এবং চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় নেওয়া হয়।

মিশনটি সফল করার জন্য ভেনাস এবং পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান (হোহম্যান ট্রান্সফার উইন্ডো) নির্বাচন করা হয়।এটি ছিল একটি শান্ত রাত,ভোর ৩টার সময়,কারণ তখন রাডার বা অন্য নজরদারি ডিভাইস সহজে এড়ানো সম্ভব।
স্পেসশিপে পুনরায় সব সিস্টেম চেক করা হয়।
ফিওনার জন্য প্রয়োজনীয় খাবার,পানীয়,এবং অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।
মিস্টার চেন শিং তাকে শেষবারের মতো মহাকাশযাত্রার প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে মনে করিয়ে দেন।
ড. হুয়াং ঝি যোগাযোগ পদ্ধতি চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করেন।

গভীর রাত,একটি নির্জন অঞ্চলের লঞ্চ প্যাডে ফিওনাকে গোপনে নিয়ে যাওয়া হয়।সাদা রঙের,অতি-তাপ প্রতিরোধী স্পেসশিপটি লঞ্চের জন্য প্রস্তুত।
ফিওনা স্পেসশিপে ওঠার আগে মিস্টার চেন শিংয়ের হাতে শেষবারের মতো শক্ত করে হাত ধরেন।
তিনি বলেন,”ফিওনা,তুমি শুধু একজন বিজ্ঞানীর নাতনী নও,তুমি সাহসের প্রতীক।সাবধানে যেও।”শেষবারের মতো মিস্টার চেন শিং তার আদরের নাতনীকে জড়িয়ে ধরলেন।
কাউন্টডাউন শুরু হয়:”5… 4… 3… 2… 1… Liftoff!”
বিশাল শিখার আভায় আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। ফিওনার স্পেসশিপ ভেনাসের পথে রওনা দেয়।

ফিওনার স্পেসশিপ পৃথিবী থেকে ভেনাসে পৌঁছাতে প্রায় ৪০ দিন সময় নেবে।
এই সময়কালে,ফিওনাকে প্রতিদিন সঠিকভাবে খাবার খেতে, শরীরচর্চা করতে এবং যোগাযোগ ডিভাইস পরীক্ষা করতে বলা হয়।
-ফিওনাকে মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে অডিওবুক এবং জ্যাসপারের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাবতে বলা হয়।
– স্পেসশিপের টেকনিক্যাল সমস্যা হলে কীভাবে সমাধান করতে হবে তার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ফিওনার যাত্রা শুধুমাত্র তার ভালোবাসার জন্য নয়,এটি ছিল নিজের সামর্থ্য এবং ধৈর্যের একটি পরীক্ষা।প্রতিটি মুহূর্তে সে জ্যাসপারের মুখ কল্পনা করে নিজেকে উৎসাহিত করে। যাত্রার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপই ছিল অত্যন্ত গোপনীয় এবং কৌশলী।
একদিন,জ্যাসপার যখন নিজ ভেনাসের আকাশে একটি স্পেসশিপ দেখবে,তখন সে ভাবতেও পারবে না যে,তার ভালোবাসা তাকে খুঁজে পেতে এত দূর পর্যন্ত আসতে পারে। সাধারণ একজন মানবী তার ভালোবাসার জন্য এমন ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
ফিওনা স্পেসশিপের চালনার সময় তার হৃদয়ের গভীরতা থেকে জ্যাসপারের উদ্দেশ্যে বলল:
“আমার প্রিয়তম জ্যাসপার,আমার ফায়ার মনস্টার
তুমি আমার সেই অমলিন ভালোবাসা।
যাকে আবার ফিরে পেতে,

আযদাহা পর্ব ৫০

তোমার হামিংবার্ড পাড়ি দিচ্ছে
৪১ মিলিয়ন কিলোমিটার আলোকবর্ষ।
পৃথিবী থেকে ভেনাসের নীলচে আকাশে,
যেখানে আবারো মিলিত হবে
আমাদের প্রেমের আত্মা,
মহাবিশ্বের কোণে লেখা হবে
আমাদের ভালোবাসার গল্প।”

আযদাহা পর্ব ৫১ (২)