Tell me who I am part 7

Tell me who I am part 7
আয়সা ইসলাম মনি

মিরা একটু লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে, সংকোচে ভরা স্বরে বলে, “আ-আমার…(হালকা কেশে) আমার পিরিয়ডের ব্যথা শুরু হয়েছে।”
শুনেই কারানের চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল, মুখটাও বাংলা পাঁচের মতো বিকৃত হয়ে যায়। এক মুহূর্তের হতভম্বতা কাটিয়ে, দু’বার খুকখুক করে কেশে নিয়ে বলল, “ওহ, আচ্ছা… (কিছুক্ষণ থেমে) আচ্ছা তুমি বিশ্রাম নাও। আমি একটু আসছি।”
“হুম।”

কারান কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই মিরা হাসিতে ফেটে পড়ে। কী অদ্ভুত লজ্জাই না পেয়েছে বেচারা! তার রোমান্সের মোহ এক মুহূর্তেই উবে গেল। এদিকে কারানও দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে।
ক্ষণিক বাদেই, মিরা বালিশটি পেটের উপর চেপে ধরে খাটে মাথা হেলিয়ে বসে রইল। ধীরে ধীরে যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় আর বসে থাকতে পারল না, কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে শুয়ে পড়ল।
প্রায় আধঘণ্টা পর কারান হাতে দুটি বিশাল বাক্স নিয়ে ফিরে এল। মিরার কক্ষে পা রেখেই দেখল, মিরা যন্ত্রণায় কুণ্ঠিত হয়ে শুয়ে আছে। সে এগিয়ে গিয়ে আলতো করে মিরার মাথায় হাত রাখল এবং তার এলোমেলো চুলের মধ্যে আঙুল বোলাতে শুরু করল। হঠাৎ এই স্পর্শে মিরা ঘুম ভেঙে চমকে উঠল। চোখে চোখ পড়তেই দেখল, কারানের মুখে একরাশ মায়া।
কারান স্নিগ্ধ কণ্ঠে বলে উঠল, “উঠতে হবে না বউ, তুমি শুয়ে থাকো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আপনি কোথায় গিয়েছিলেন?”
কারান হালকা হেসে জবাব দেয়, “কেন? আমার অনুপস্থিতি মিস করছিলে?”
মিরা ঠোঁটে একরাশ হাসি এনে বলে, “ফ্লার্ট করতে তো আপনি ভালোই জানেন। তবে লাভ নেই।”
কারান তার কথায় মৃদু হেসে উত্তর দিল, “বউয়ের সাথে কেউ ফ্লার্ট করে না, বউয়ের সাথে প্রেম নিবেদন করে জান।”

কারানের এ কথায় মিরার মুখটা বিরক্তির ভাঁজে ভরে উঠল। সে অভিমানী দৃষ্টিতে চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল।
একটু থেমে রাশভারী কণ্ঠে কারান বলল, “হোয়াটএভার, তোমার জন্য কিছু এনেছি। দেখো তো, এই বক্সে…”
মিরা ভ্রূ উঁচিয়ে বক্সের দিকে তাকিয়ে অবাক স্বরে বলে, “ওয়েট ওয়েট! এত বড় বাক্সে কি?”
কারান একটু সংকোচ নিয়ে বলে, “বলছি বলছি… উমম… আসলে মিরা, আমার এই ব্যাপারে তেমন কিছু জানা ছিল না। তাই গুগল থেকে সামান্য ধারণা নিলাম। এই বক্সটাতে তোমার জন্য পিরিয়ডের প্যাড এনেছি। তুমি কোনটা ইউজ করো, সেটা তো জানতাম না; তাই দোকানে যত ব্র্যান্ড ছিল, এক পিস করে নিয়ে এলাম।”
মিরার চোখ বিস্ময়ে আর আবেগে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। কারান পুনরায় বলল, “And in the other box, I got an assortment of chocolates and some essential medicines; thought these might help you out.”

(অনুবাদ: “আর অন্য বাক্সটায় আমি বিভিন্ন ধরনের চকলেট আর কিছু দরকারি ওষুধ এনেছি; ভাবলাম এগুলো তোমার কাজে লাগতে পারে।”)
কারানের এই যত্ন আর খুঁটিনাটির প্রতি মনোযোগ দেখে মিরা নিঃশব্দে তাকিয়ে রইল।
খানিকটা সময় পর, মিরা কপাল চাপড়ে হতাশা ও বিস্ময়ে ভরা কণ্ঠে বলে, “হে আল্লাহ! আপনি আসলে কী বলুন তো? এটা কোনো কাজ করলেন।”
কারান চিন্তিত মুখে মিরার পাশে বসে। তার চোখে কিছুটা অনুশোচনা নিয়ে বলে, “কেন মিরা, কিছু ভুল করেছি? আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। তখন তোমাকে… ঐ কিস এর কথা বলা উচিত ছিল না। সরি, মিরা।”
মিরা একটু হেসে বলল, “আপনি যখন এগুলো কিনলেন, মানে শপ থেকে আনলেন, তখন একটুও এমব্রেসিং ফিল হয়নি?”
“এমব্রেসিং কেন ফিল হবে? ইট’স নর্মাল, মিরা। (একটু থেমে) আচ্ছা, বাদ দাও। তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।”
“কি?”
কারান তার দিকে একটু ঝুঁকে কিঞ্চিৎ হাসি দিয়ে বলল, “মিরা, তোমাকে কেউ কখনো প্রশংসা করেনি?”
মিরা মুখে এক চিলতে হাসি এনে বলল, “হ্যাঁ করেছে তো। মাহি আর আয়াশ।”
কারান হেসে বলল, “আমাদের আয়াশ?”
“হ্যাঁ।”

মিরা কিঞ্চিৎ হেসে আবার বলল, “সে আমাকে ফেইরী প্রিন্সেস বলেছিল।”
কারান হালকা হাসল। তারপর কণ্ঠে সামান্য সন্দেহ এনে জিজ্ঞেস করল, “এছাড়া আর কেউ প্রশংসা করেনি?”
“কেউ তো দেখেইনি। মা মাঝেমধ্যে আমাকে পরী বলত, এই তো।”
কারান স্মিতহাস্যে মনে মনে শুধালো, “এর জন্যই তুমি জানো না মিরা, তোমার সৌন্দর্য কতটা মায়াবী। তুমি যেন সদ্য ফোঁটা কামিনী ফুল। তোমার চোখে আর মুখে অদ্ভুত আলো ছড়িয়ে আছে, যা অজান্তেই হৃদয়কে মোহিত করে।”
মিরা হঠাৎই সামান্য গম্ভীর স্বরে বলে উঠল, “আমার মনে অনেকদিন ধরে একটা প্রশ্ন ঘুরছে। জিজ্ঞেস করব?”
কারান হেসে বলল, “মিরা, তুমি পারমিশন কেন চাচ্ছ? বলে ফেলো না।”
মিরা একটু দ্বিধায় পড়ে। তারপর মুগ্ধ ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, “আপনি এতো সুন্দর করে বাংলা বলেন কীভাবে? মানে, আপনি তো অনেক বছর ধরে ইউ.এস.এ-তে থেকেছেন। তবুও বাংলা এতোটা ফ্লুয়েন্টলি…”
কারান হালকা ভ্রুকুটি করে হেসে বলল, “কি অদ্ভুত প্রশ্ন! বাংলা আমার মাদারটঙ মিরা। তবে হ্যাঁ, প্রায় আঠারো বছর ধরেই আমেরিকা ছিলাম। (একটু থেমে) আসলে.. আমি নোবেলপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হুমায়ুন আহমেদ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখার ভীষণ ভক্ত।”

মিরা তার কথা শুনে প্রশান্তি মিশ্রিত মুগ্ধতায় তাকিয়ে রইল।
কারান মিরার আরও খানিকটা কাছে গিয়ে সঙ্কোচহীন চাহনিতে রবীন্দ্রনাথের একটা উক্তি বলে, “ধরা আমি দিতে চাইনি তোমার প্রেমে, তবুও এ যেন কোন আলো মায়ার কারসাজি!”
মিরা কারানের কথার যথার্থ অর্থ মনের গভীরে অনুভব করে নীরব থাকে। যদিও কারানের এমন কোমল, গভীর ভালোবাসাময় উক্তি তাকে স্পর্শ করেছে। তবুও অদ্ভুত দ্বিধার অনুভূতি তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। কারানের ব্যক্তিত্বের প্রতিটি খুঁটিনাটি কখনো কখনো তার কাছে অতিরঞ্জিত মনে হলেও, কিছু কথা, কিছু শব্দ মনের মধ্যে ঠিকই অনির্বচনীয় চিহ্ন এঁকে যায়।
এর মধ্যে কারান সহজ ভঙ্গিতে বলে উঠল, “কথা বলতে বলতে আসল কথাই বলা ভুলে গেছি। মিরা তুমি বরং সব দেখে নাও, ঠিকঠাক হয়েছে কিনা। আর চকলেট খাও। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

কারান চলে গেলে মিরা বাক্সটা খুলে তাকাল। সে আপনমনে নিজেকে বলল, “আমি আসলেই ঠিক বুঝতে পারছি না, আপনাকে ঘৃণা করবো নাকি বিশ্বাস করবো। তবে এটুকু জানি, আপনাকে কখনো ভালোবাসতে পারবো না।”
মনের গভীরে জমাট বাধা এই দ্বিধা মিরার চোখে ক্লান্তির ছায়া ফেলে, আর সে সুদীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে চুপচাপ বসে রইল। নারীর মন এক সূক্ষ্ম ছুরির মতো; আঘাত যতই হোক, যদি পুরুষের জন্য সামান্য ভালোবাসাও থেকে যায়, তবে তার একটি সামান্য প্রেম বাক্যও হৃদয়ের গভীরে ভালোবাসার জোয়ার তুলে আনতে পারে। সমরেশ মজুমদার বলেছেন, ‘মেয়েরা প্রথমবার যার প্রেমে পড়ে, তাকে ঘৃণা করলেও ভুলতে পারে না। পরিষ্কার জল কাগজে পড়লে শুকিয়ে গেলেও দাগ রেখে যায়।’
কারান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে মিরা ডার্ক চকলেট খাচ্ছে, আর ঠোঁটের কোণে সামান্য চকলেট লেগে আছে। কোনো কিছু না বলেই কারান তার আঙুল বাড়িয়ে ঠোঁটের কোন থেকে চকোলেটের অংশটুকু তুলে নিয়ে নিজ মুখে পুরে নিল।
পরে মুচকি হেসে বলল, “ওয়াও! এবার তো টেস্ট আরো বেড়ে গেছে।”
কারানের এই আচমকা স্পর্শে মিরার গাল লজ্জায় রঙিন হয়ে উঠল। মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে সে দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে শুয়ে পড়ল।

কারান সূক্ষ্ম হাসিতে ঠোঁটের কোণে এক ধরনের রহস্য লুকিয়ে আপন মনে বলল, “শুধু ভালোবাসাটা এখনও পূর্ণতা পায়নি। নাহলে আঙুলের পরিবর্তে ঠোঁট দিয়েই স্পর্শ করতাম তোমার ঐ ঠোঁট। আমি শুধু জানতে চাই, কী এমন মধুরতা মিশে আছে সেখানে, যা আমাকে পাগলের মতো আকর্ষণ করছে।”
এরপর মিরার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে চুপচাপ নিচে চলে যায়। ক্ষণকাল পর কিছু ফল কেটে স্লাইস করে সাজিয়ে মিরার ঘরের দিকে পা বাড়াল। ততক্ষণে মিরা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় শুয়ে আছে। কারান মিরাকে দেখে তার গায়ে চাদরটা টেনে দিল। তারপর ফলের থালাটা পাশের টেবিলে রাখল।
মাথা নত করে মিরার নরম মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে কষ্টের এক ঝলক অনুভব করল।
“এই একমাত্র যন্ত্রণাই তোমাকে সহ্য করতে হবে, যেটা কারান চৌধুরির সাধ্যের বাইরে।”
বলা বাহুল্য, কারান মিরার পিরিয়ডের ব্যথাকে ইঙ্গিত করে বলেছে।

আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করল। পাশে রোমানাকে দেখে আড়চোখে তাকিয়ে বলল, “আজকাল তো তোমার ডিমান্ড বেড়ে গেছে, রোমানা।”
রোমানা বাঁকা হেসে জবাব দিল, “ডিমান্ড যদি সত্যিই বেড়ে যেত, তাহলে তোমার মতো পুরোনো মা’লের সঙ্গে থাকতাম না। কিন্তু হঠাৎ এই প্রসঙ্গ কেন?”
আরিয়ান এবার রোমানার দিকে তাকিয়ে বলল, “শালির ঘরের শালি, টেক্সটে ওগুলো কি লিখে পাঠিয়েছিস?”
রোমানা নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, “কে. ছি কোম্পানির মালিক যদি একটা নেকলেস পর্যন্ত না দিতে পারে, তাহলে সে আবার কীসের মালিক?”

আরিয়ান এক মুহূর্ত রোমানার দিকে তাকিয়ে থেকে অসহায়ভাবে আপনমনে বলল, “মালিক হয়ে লাভ কী, যদি নিজের স্ত্রীর থেকে প্রাপ্য সম্মানটুকু না পাই? শালার হা’রামি বউ আমার।”
রোমানা ভ্রূ উঁচিয়ে বলল, “কেন, নেকলেস দিতে পারবে না? না পারলে বলে দাও, নতুন কাউকে খুঁজে নেই।”
আরিয়ান এবার ঠোঁট কামড়ে তার গালে একটা চপেটাঘাত করল, “শালী, তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলব। আবার বিয়ে করবি মানে?”
রোমানা গালে হাত দিয়ে রাগে-অভিমানে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল, তারপর কোনো আড়ষ্টতা ছাড়াই আরিয়ানের গালে পাল্টা চপেটাঘাত করে বলল, “এত সহজে তোমাকে ছাড়ছি না। এতদিন যে আমাকে জ্বালিয়েছ, তার প্রতিটা হিসেব বুঝিয়ে তবে যাব।”

এই বলে সে ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে চুল ঝাঁকিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। আরিয়ান গালে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। এই মেয়েটার কত বড় সাহস! আরিয়ান আপনমনে বলল, “দেখতে দু ফিটের হলে কি হবে, শালির কলিজা দশ ফিটের। কবে যেন তোকে খুন করে ফেলি, রোমানা।”
রোমানা কিছুক্ষণ পর বাথরুমে ঢুকতেই ভেতরের গন্ধে নাক চেপে ধরে দ্রুত বেরিয়ে এল। মুখ বিকৃত করে চেঁচিয়ে বলল, “আরিয়ানের বাচ্চা! বাথরুম থেকে কী ভয়ানক গন্ধ আসছে! ফ্লাশ করিসনি?”
আরিয়ান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে বলল, “তুমি ফ্লাশ করে নাও।”
রোমানা বিরক্ত মুখে বলল, “ইয়াক ছি! দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে, শালা আরিয়ান।”
আরিয়ান ঠান্ডা স্বরে বলল, “বাথরুম থেকে সুগন্ধ আশা করছ নাকি? এয়ার ফ্রেশনারটা অন করলেই তো হয়।”
এই বলে সে নির্বিকার ভঙ্গিতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল। রোমানা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “গিধোর একটা!”
এই কথা শুনেই আরিয়ান ফিরে তাকিয়ে রাগত স্বরে বলল, “কাকে গিধোর বললি তুই?”

“তোকে বলেছি।”
“দাঁড়া, আজ তোকে বাথরুমেই চুবাব।”
“গু খা তুই।”
“তুই খা, শালীর ঘরের শালী।”
আরিয়ান মুখ ফেরানোর আগেই রোমানা পেছন থেকে তার পায়ে এক লাথি দিল। এবার আরিয়ান ক্ষিপ্ত হয়ে তার দুই হাত একসঙ্গে চেপে ধরে দেয়ালে ঠেকিয়ে বলল, “আমাকে আর ক্ষেপাস না, রোমানা।”
রোমানা কটমট করে তাকিয়ে বলল, “একটা চুড়ি শুধু ভাঙুক, তারপর তোমাকে চাঁন্দে পাঠাব, গো’লামের পুত।”
আরিয়ান এবার হো হো করে হাসতে লাগল।

“তুই কি সত্যিই মেয়ে, রোমানা? আল্লাহ কী জিনিস জুটিয়েছে আমার কপালে।”
রোমানা হাসল, “এতদিন সংসার করেও বুঝতে পারোনি? তখন চেক করোনি আমি মেয়ে, না অন্য কিছু?”
আরিয়ান এবার গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে এগিয়ে এল। গলায় নেশাময় সুর এনে বলল, “চলো, চেক দেই।”
এই বলেই রোমানাকে আচমকা কাঁধে তুলে নিল।
রোমানা হাত-পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে বলল, “আরিয়ান! নামাও বলছি।”
আরিয়ান ব্যঙ্গভরা হাসি দিয়ে বলল, “সোজা বিছানায় নামাব।”
এই বলে সে এগিয়ে গিয়ে রোমানাকে বিছানায় ফেলে দিল। শার্টের বোতাম একে একে খুলতে খুলতে বলল, “চলো বেবি, আজ খেলা দেখাই।”
রোমানা হেসে উঠে পালাতে যাবে, তখনই আরিয়ান তার কোমর শক্ত করে ধরে কাছে টেনে নিল। রোমানা বিছানায় পড়ে যেতেই দ্রুত উঠে পুনরায় পালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু আরিয়ান তার কোমরে শক্ত করে হাত রেখে এক ঝটকায় আবারও শুইয়ে দিল।
“আরিয়ান, এসব করো না।”

রোমানা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু তার কণ্ঠে লুকোনো হাসি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।
আরিয়ান তার চুলের গোছা আঙুলে পেঁচিয়ে গভীর চোখে তাকিয়ে বলল, “আমি কি করব না করবো, তা তো তুমি ঠিক করবি না, বেবি।”
রোমানা এবার ধমকের সুরে বলল, “তোমাকে এসব বউ-টউ মানায় না, বুঝলে? ওসব আদিখ্যেতা ছাড়ো।”
আরিয়ান হেসে বলল, “তুমি আসলে কী চাও, জান?”
“আমি চাই, তুমি আমাকে একদম বিরক্ত করবে না।”
“হারা’মির ঘরের হারা’মি, বিরক্ত করলে কী করবি তুই?”
রোমানা ভ্রূ কুঁচকে বলল, “তোমার গলায় ঝুলে চুইচাইড করব।”
আরিয়ান এবার হো হো করে হেসে বলল, “যদি মরতেই হয়, তাহলে আমার কাছে থাকতেই বা ভয় কীসের?”
রোমানা চোখ ঘুরিয়ে বলল, “ভয় তো তোমার লাগা উচিত, আরিয়ান। আমাকেও যেনতেন মানুষ ভেবো না।”
আরিয়ান এবার তার গালে আলতো ছোঁয়া দিয়ে বলল, “একবার তো বলতেও পারো, ভালোবাসো আমাকে।”
রোমানা চট করে উঠে বসে বলল, “তোমাকে আবার ভালোবাসা যায় নাকি?”
আরিয়ান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।

মিরা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখল পাশে কিছু ফল কাটা রাখা আছে। ফ্রেশ হয়ে ফলগুলো খেয়ে সে নিচে নেমে এল। নিচে আসতেই তার চোখে পড়ল এক অভাবনীয় দৃশ্য; ড্রয়িং রুমটি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
কারান ঘরটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলেছে। দেয়ালে ঝোলানো নতুন শিল্পকর্ম আর জলপ্রপাতের অনবদ্য পেইন্টিং, কোণে জীবন্ত ফুলের টব, ঝলমলে নতুন পর্দা সবকিছুই পরিবেশটাকে মোহময় করে তুলেছে।
মিরা কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল। কারান তখন পর্দার পেছনের কাচগুলো গ্লাস ওয়াশ দিয়ে মুছে ঝকঝকে করতে ব্যস্ত।
মিরা চমকে উঠে বলল, “অসাধারণ লাগছে রুমটা! কিন্তু আজ এত গোছগাছের কারণ কী?”
কারান কাচ পরিষ্কার শেষ করে বেসিনে হাত ধুতে ধুতে হালকা হাসল।
“কারান চৌধুরির ঘর কখনো অগোছালো দেখেছ?”

মিরা হেসে উত্তর দিল, “না, তা দেখবই বা কীভাবে? সবসময় তো আমিই সব গুছিয়ে রাখতাম। তবে আজ ড্রয়িং রুমটা একটু বেশিই ঝকমক করছে। কোনো কাহিনি আছে নাকি?”
কারান উত্তরে চোখ দিয়ে দরজার দিকে ইশারা করল। মিরা কৌতূহল নিয়ে দরজার দিকে তাকায়। ঠিক সেই মুহূর্তে কলিং বেলের শব্দ ভেসে আসে। মিরা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই মিরার মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
উৎসাহে চোখে-মুখে আলো ছড়িয়ে মিরা কাঁদতে কাঁদতে মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মা, বাবা! হঠাৎ করে তোমরা! আমি তো বুঝতেই পারছি না কী বলব। কেমন আছো তোমরা?”
কারান পাশে এসে উচ্ছ্বসিত হেসে বলল, “আসসালামু আলাইকুম বাবা। আসসালামু আলাইকুম মা। মিরা, মা-বাবাকে কি বাহিরেই দাঁড় করিয়ে রাখবে? আপনারা ভিতরে আসুন।”
“ইশ! খুশিতে তো ভুলেই গিয়েছিলাম। ভিতরে এসো মা। ভিতরে এসো বাবা।”
মমতাজ ঈষৎ হাসি ছড়িয়ে বললেন, “ওয়ালাইকুমুস সালাম বাবা। তুমি কেমন আছ?”

কারান মাথা নীচু করে বিনয়ের সঙ্গে বলল, “এই তো মা, আলহামদুলিল্লাহ। আসুন, আপনারা বসুন।”
তবুও মিরার চোখে কিছু খুঁজে পাওয়ার ব্যাকুলতা। বিষণ্ন স্বরে বলে উঠল, “মা, মাহি আসেনি?”
ঠিক তখনই মাহিমা ছুটে এসে মিরাকে জড়িয়ে ধরল। মিরার অন্তরে জমে থাকা সমস্ত আবেগ এক প্রবল ঢেউয়ে ভেসে গেল। কান্নায় তার গলা ভারী হয়ে উঠল। মাহিমার আলিঙ্গন তার সমস্ত দুঃখের আশ্রয় হয়ে উঠল।
“তুই শয়তান মেয়ে, বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন?” মিরার কণ্ঠে মমতা মেশানো ধমক।
মাহিমা হেসে বলল, “দেখছিলাম আমার মিরু আপুর আমাকে মনে পড়ে কিনা।”
মিরা তৎক্ষণাৎ মারের ভঙ্গি করে বলল, “আয় মনে পড়াচ্ছি তোকে।”
মাহিমা হাসতে হাসতে চিৎকার করে উঠলো, “আম্মু বাঁচাও!”

তখনই কারান সামনে এসে খানিকটা হাসি মেশানো কণ্ঠে বলল, “এসব কি করছো মিরা? আমার শালিকার গায়ে একদম হাত তোলা চলবে না। ও এখন বড় হয়ে গেছে।”
মাহিমা ভরসার হাত পেয়ে খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বলল, “এই তো, পারফেক্ট! একদম আমার জিজাজির মতো কথা। ভাইয়া, আপু বুঝতেই চায় না যে আমি বড় হয়ে গেছি।”
একটু নাটকীয় ভঙ্গিতে যোগ করল, “আমি কিন্তু নাইনে পড়ি!”
মিরা ভ্রূ কুঁচকে বলে, “মাহি, তুই খুব বাড় বেড়েছিস।”
মমতাজ তাদের দিকে এগিয়ে এসে কড়া স্বরে বললেন, “তোরা থামবি? বাবা তুমি কিছু মনে করো না। ওরা একসাথে হলেই এমন খুনশুটি শুরু করে বেড়ায়।”
কারান হেসে বলল, “আরে না মা, কিছু মনে করিনি। আপনারা আসুন, বসুন।”
মমতাজ ও আব্দুর রহমান সোফায় বসে পড়লেন। মিরাও তড়িঘড়ি করে তাদের মাঝে বসে প্রাণখোলা গল্পগুজবে মেতে উঠল।

কারান মাহিমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি এদিকে এসো মাহি। তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে।”
মাহিমা কারানের সামনে কিছুটা তফাতে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁ ভাইয়া, বলুন বলুন। তবে একটা কথা, আমার কিন্তু আরও একটা নাম আছে।”
“কি বলো? তাই নাকি?”
“হুম হুম। আমার আরেকটা নাম হলো ইলিজা।”
কারান বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, “মা শা আল্লাহ! চমৎকার নাম তো! কিন্তু ইলিজা নামের অর্থ জানো?”
মাহিমা একটু ভ্রূ কুঁচকে ভেবে বলল, “নাহ।”
কারান একটুখানি হাসি মিশিয়ে বলল, “ইলিজা আরবি নাম। এর অর্থ ‘মূল্যবান’, ঠিক যেমন তুমি সবার কাছে।”
“ওমা সত্যি?”
কারান মাথা নাড়ল।

“হ্যাঁ, আর এখন থেকে আমি তোমাকে ইলিজা বলেই ডাকব। ভাইয়ের থেকে ইলিজা শুনতে খুশি হবে তো ইলিজা?”
মাহিমা উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বলল, “খুব খুশি হবো ভাইয়া! এই প্রথম কেউ আমাকে এই নামে ডাকল।”
কারান হেসে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা, এবার চলো। তোমার জন্য একটা গিফট আছে। এসো।”
কারান এগিয়ে গেল, আর মাহিমা উচ্ছ্বাসে তার পদক্ষেপ অনুসরণ করল। দোতলায় পৌঁছে কারান একটি কক্ষের দরজা খুলে দিল। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে মাহিমার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। ঘরটি যেন এক স্বপ্নরাজ্য; চকলেট, চিপস, চানাচুর, আইসক্রিম, পিজ্জা, বার্গার, ললিপপ সবকিছুতেই ভরপুর।
মাহিমা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বলে, “ভাইয়া আপনাকে আর ধন্যবাদ দিয়ে সময় নষ্ট করব না। আমি গেলাম খেতে।”

যেতে যেতে গলা উঁচিয়ে বলে, “আপনার বোনও একদিন কোনো উপহার দিয়ে ঋণ শোধ করে দিবে।”
কারান ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে।
এদিকে মিরা ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, “মা, বাবা, তোমরা কিছু জানাবে না? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কীভাবে কি করব। কত খুশি হয়েছি জানো?”
মমতাজ হেসে বললেন, “কারান তোকে জানাতে বারণ করেছিল। কাল বিকেলেই ও ফোন করে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে, এতদিন ব্যস্ততার জন্য তেমন সময় দিতে না পারার কারণে। তারপর আমাদের নিমন্ত্রণ করেছে।”
আব্দুর রহমান শান্ত স্বরে বললেন, “আসলে কারান তো সবসময়ই ফোন করে খবর নিত। আমি কেমন আছি, মাহির কথা, তোর মায়ের কথা; সবই জানতে চাইত। যদিও কখনো আসার কথা বলেনি। আমিও অবাক হয়েছিলাম হঠাৎ নিমন্ত্রণ পেয়ে। কিন্তু কারান এমন অনুরোধ করল যে না বলতে পারলাম না। আর কতদিন আমার মেয়েকে দেখি না, সেই কষ্টও…”

মমতাজ আব্দুর রহমানকে চোখের ইশারায় থামিয়ে মিরাকে স্নেহময় স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “সেসব বাদ দে। তুই কেমন আছিস সোনা মা?”
শব্দাতিরেক, মমতাজ চায়নি মেয়ে বুঝতে পারুক, এতদিন মেয়েকে দূরে রেখে বাবা-মা কেমন তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে ছিল।
“অনেক ভালো আছি মা। তবে…” মিরার কণ্ঠ একটু বিচলিত হয়ে উঠলো। “তবে কারানের সঙ্গে যে তোমাদের কথা হতো, আমাকে তো বলোনি কখনো।”
ততক্ষণে কারান এসে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি বারণ করেছিলাম।”
মিরা কপাল কুঁচকে বলল, “কিন্তু আপনি…”

মিরার কথা শেষ হওয়ার আগেই মমতাজ বললেন, “মা রে, একটু বুকে আয়।”
মায়ের কথা শুনে মিরা আর কোনো কথা না বলে মমতাজের বুকে মাথা গুঁজে দিল। যেন মায়ের স্নেহময় বক্ষেই নিজের সমস্ত দুঃখ, অভিমান আর কষ্টের ভার লুকিয়ে রাখতে পারে।
কারান এ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন মনে করেনি। কারণ তার অভিপ্রায় কখনোই মিরার সুখের নিশ্চয়তা দেওয়া ছিল না। যদিও সে মিরার বাবা-মায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিল, কিন্তু তাদের কখনোই বুঝতে দেয়নি যে মিরার প্রতি তার আচরণে শীতল উদাসীনতা লুকিয়ে ছিল।

অনেক দিন পর মা-বাবার সান্নিধ্যে মিরা কথার জালে হারিয়ে গেল। এক গল্প থেকে আরেক গল্পে ভেসে যেতে যেতে সময়ের হিসেবই হারিয়ে ফেলেছে। দ্বিপ্রহরের সূর্য মাথার উপর উঠলে কারান সবার জন্য রান্নার ভার নিলো।
কারান এসে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করে আহ্বান জানায়, “মা বাবা, আপনারা খেতে আসুন। মিরা, তুমিও খাবে এসো। (গলা উঁচিয়ে) ফরিদ কাকা উপরে ইলিজাকে ডেকে আনুন।”
মমতাজ অবাক দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে বসে, “খাবার কি বাহির থেকে এনেছো বাবা?”
কারান হেসে জবাব দেয়, “না মা, আমি নিজে রান্না করেছি। আপনারা খেতে আসুন, প্লিজ।”
মমতাজ আর আব্দুর রহমান অবাক হয়ে কারানের দিকে তাকিয়ে রইলেন। অথচ মিরার মনে প্রচণ্ড অপরাধবোধ কাজ করছে। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে কারান একাই রান্নার সমস্ত কাজ সেরে ফেলল!
মমতাজ আর আব্দুর রহমান একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষায় কথা সেরে নিলেন। তাদের মনে হলো, তাদের মেয়ে বুঝি সত্যিই সুখময় জীবনের স্বাদ পেয়েছে।

টেবিলে গিয়ে দেখলেন, কারানের আয়োজনে কোথাও কোনো কমতি নেই। খাবারের আড়ম্বর তাদের অভিভূত করে তুলল। সবাই টেবিলে বসতেই কারান যত্নসহকারে সবার প্লেটে খাবার তুলে দিল। এমনকি মাহিও দৌড়ে এসে উচ্ছ্বাসভরে খেতে বসে গেল। মমতাজ আর আব্দুর রহমানের হৃদয়ে এই মুহূর্তে অদ্ভুত প্রশান্তি ভর করল।
কারান হাসিমুখে বলে, “কাকা আপনিও বসুন। আমি সার্ভ করে দিচ্ছি।”
কারানের শীতল, নির্বিকার আওয়াজ শুনে ফরিদ কাকা অবাক হয়ে গেলেন। যে মানুষটি এত দিন রাগে তুষার-স্তুপের মতো শীতল এবং কঠোর ছিল, আজ আকস্মিকভাবে কী এমন ঘটল, যে তার অন্তরটা বরফ গলিয়ে নরম স্রোতের মতো প্রবাহিত হচ্ছে? এই পরিবর্তন তাকে অভ্যস্ত হতে দিচ্ছিল না। তবে ফরিদ আর কোনো মন্তব্য করার সাহস পেলেন না। তাই চুপ করে টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে খেতে বসে গেলেন।

রাতে সবার খাবার শেষ হলে, কারান ঠান্ডা স্বরে বলল,
“কাকা, আপনি বাবা-মায়ের রুমটা দেখিয়ে দিন। (মাহিমার দিকে তাকিয়ে) আর যে রুমে খাবার রাখা হয়েছে, সেটা তোমার রুম ইলিজা।”
ইলিজা খুশির চোটে লাফিয়ে উঠে বলল, “ওকে ওকে, জিজাজি!”
একটুপর সবাই নিজের নিজের রুমে চলে গেল। মিরা আজ কিছুটা বেশিই খুশি। আজ বাবা-মা এবং বোনকে কাছে পেয়ে তার হৃদয়টা ভরে গেছে। তাই খুশি মনে বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পড়ল। আর কারানও আজ তার শুভ্র মঞ্জুরীকে জ্বালানোর প্রয়োজন মনে করলো না। তাই কারান কোনো শব্দ না করে বিছানার অপর পাশের শুয়ে পড়ল।
রাত তিনটা। কারান পাশে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। কিন্তু মিরা ঘুমাতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর, মিরা বিছানা থেকে উঠে পোর্চের আরাম কেদারায় গিয়ে বসে পড়ে। ঝিঝিপোকার শব্দে তার মধ্যে বেড়ে ওঠে এক অপ্রতিরোধ্য বিরহ। অথচ রাতের অন্ধকার তাকে ভীত করতে পারেনি। মিরার ভেতর জমে থাকা ব্যথা, উদ্বেগ ও বেদনা তাকে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে, সে নিজের সঙ্গে মানসিক দ্বন্দ্বে হারিয়ে যায়।

“ওর প্রতি এতটা ভালো ব্যবহার কি ঠিক হচ্ছে? অন্তত কিছুটা হলেও তো ওকে সেই ব্যথাটুকু অনুভব করানো উচিত, যা আমায় তিলে তিলে শেষ করেছিল। অথচ আমি কি করছি? আমি কি সত্যিই এতটা বোকা? গত এগারো মাস ধরে যে প্রতিনিয়ত আমার হৃদয় ভেঙে চূর্ণ করে দিয়েছে, আজ তার একটুখানি ভালো ব্যবহারে এত সহজেই নিজেকে সঁপে দিচ্ছি? পরে এর জবাব নিশ্চয়ই দেব কিন্তু এভাবেও তো চলতে পারে না। যদি ওর আচরণের মধুরতায় গলে আবার সেই ভুল প্রেমে পড়ে যাই, তখন কি হবে?”

একটু গভীর নিশ্বাস ছেড়ে ফের বলল, “কি করলাম এই কয়টা দিন? এতটা নরম হওয়া কি আমার মতো মেয়ের শোভা পায়? যে মানুষটা ক্ষমারও অযোগ্য, তার সঙ্গেই কিনা এত সহজে মিশে যাচ্ছি? লজ্জা হওয়া উচিত মিরা! প্রতিটি গভীর রাতে সীমাহীন কষ্টগুলো বুকে চেপে ধরেছি, কত রাত ডুকরে কেঁদে কেটেছে। অথচ সেই আমিই এখন… সব ঠিক আছে। কিন্তু নিজের মধ্যে এতটুকু আত্মসম্মানও কি নেই তোর? যে লোকটা তোর চোখের সামনেই মেয়েদের… ছিঃ! শুধু বিদ্যা অর্জন করলেই তো হবে না, মাথায় বুদ্ধি আর আত্মমর্যাদার দীপ্তি থাকতে হবে। একবার হলেও তো তাকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত যে সে আমাকে কতটা অপমান করেছে। এখন যদি এভাবে তোল্লাই দিই, তবে সে ভাববে আমায় আবারও তেমন আগের মতো…”
তার গভীর কষ্ট নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে আশপাশের বাতাসে ভারী হয়ে উঠল। তার প্রতিটি শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে অন্তরের চাপা যন্ত্রণার অচেনা সুর।

কেদারায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে নিজেকে সামলে বলল, “তুমি এখানে আছো শুধু তোমার বাবা-মায়ের সম্মানের কথা ভেবে। কিন্তু কেন বারবার ভুলে যাচ্ছো মিরা? সরলতা ভালো, কিন্তু এতটা আবেগপ্রবণতা? এটা তো যুক্তি দিয়েও মেলে না। তুমি কি একটুও প্রতিবাদ করতে পারো না? (একটু থেমে) না হয় প্রতিবাদ না-ই করলে, কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখাটা কি এতই কঠিন? এই জবাব আজ না দিলেও একদিন ঠিকই সুদে আসলে ফেরত দেব। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি কারান, একদিন আপনিও ভয়ংকর রকমের ব্যথা অনুভব করবেন। (থেমে) কিন্তু আমি ভেবে কূল পাই না, ওর স্বপ্নটা এমন কি ছিল যে ও এত দ্রুত এমন পরিবর্তন আনল! স্বপ্নটায় যদি একবার ঢুকে দেখতে পারতাম, তাহলে অন্তত নিজের মনকে ভরসা দিতে পারতাম। কিন্তু এটা কি সত্যিই ওর স্বপ্ন ছিল, নাকি যা আমি ভেবেছি, সেটাই সত্যি? অর্থাৎ পুরো বিষয়টাই একটা অভিনয়।”

মিরার মনে এক অশান্ত স্রোতধারা নিরন্তর প্রবাহিত হচ্ছে। যেখানে যুক্তি আর সন্দেহের ঢেউ বারবার আঘাত হেনে চূর্ণ-বিচূর্ণ করছে তার শান্তির প্রাচীর।
অতি গভীর শ্বাস বুকের গভীরে নিঃশব্দ ক্রন্দনের জন্ম দেয়। সেই এগারো মাসের দহনক্লান্ত যন্ত্রণা তার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে বারে বারে নিষ্ঠুর আঘাত হেনে চলেছে। বিষণ্নতার ভারে দৃষ্টিপথ ঝাপসা হয়ে এলে অজান্তেই চোখের কোণ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
তন্দ্রা যেন চক্ষু-যুগলের সীমানা এড়িয়ে চলে গেছে, অথচ রাতের দীর্ঘতা অসীমতার দিকে ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। একাকিত্বের অন্ধকার মেঘে তার আচ্ছন্ন মন ক্রমেই শূন্যতার অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে চায়।

বারান্দার অপর প্রান্তে দিবাকর ধীরগতিতে তার সোনালি কিরণে ধরণীকে আলোকিত করে তুলছে। বহিরঙ্গনে পাখির কোলাহল ক্রমশ বাড়ছে৷ তাদের কিচিরমিচির ধ্বনি আর প্রভাতের স্নিগ্ধ সমীর মিরার অনমনীয় স্থবিরতাকে ভেদ করে এক অব্যক্ত আহ্বান জানায়; এবার ওঠো মিরা।
মিরা উঠে রসুইঘরের দিকে পা বাড়ায়। বিছানায় শুয়ে থাকা অধিপতির দিকে তাকানোর প্রয়োজনটুকু সে মনে করল না।
বেশ অনেকটা সময় পেরোতেই, রসুইঘরে নাস্তা তৈরির ব্যস্ততার মধ্যে হঠাৎ চেনা এক সুর কর্ণকুহরে ভেসে আসে, “গুড মর্নিং। কী করছে আমার বেগম?”
অথচ মিরা না চমকে সহজ-সরল স্বরে উত্তর দেয়,
“সবার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করছি। আপনি বসুন, আপনার কফি ইতোমধ্যেই বানিয়ে ফেলেছি।”
কারান খানিক বিস্ময় মিশিয়ে বলে ওঠে, “এটা করা কি খুব দরকার ছিল? আমি কি করতে পারতাম না? তোমার শরীর ঠিক নেই মিরা। তুমি রেস্ট নাও, আমি করছি।”

মিরা তার কণ্ঠে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে, “আমাকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করছেন দেখছি। এত ভাবার কিছু নেই। কাল সবার জন্য আপনি যে রান্না করেছেন, তাতেই আমি যথেষ্ট লজ্জিত। তাই এখন চুপচাপ বসুন। মা-বাবাও চলে আসবেন; ফজরের নামাজ পড়ে তারা কেউ ঘুমান না।”
কারান খানিক হেসে বলে উঠল, “আমি যদি তোমার চিন্তা না করি, তাহলে কে করবে বেগম? তবে আজ দেখছি, আমার মহারানি যেন রাগিণীর মূর্তি ধারণ করেছে। ব্যাপারটা কী?”
মিরা কয়েক ন্যানোসেকেন্ড চোখ বন্ধ করে এক গভীর নিশ্বাস নিল। এরপর কটমট দৃষ্টিতে কারানের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনার কথাগুলো আমার একদম ভালো লাগছে না কারান। খুব ভালো হয় আপনি টেবিলে গিয়ে বসুন।”
মিরার তীব্র ক্রোধ দেখে কারান খানিকটা বিচলিত হলেও তার মন মিরার অসন্তোষের গভীরতা মাপতে ব্যর্থ। কারণ তার চেতনায় তখন এক দুষ্টু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

তাই সে কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে বলে, “হুম, বুঝতে পেরেছি।”
কারান কি বুঝতে পেরেছে, এমন প্রশ্ন করার প্রয়োজন অনুভব করল না মিরা। তার বদলে কারানের তুচ্ছ কথাকে উপেক্ষা করে সে পুরোপুরি নাস্তা তৈরিতে মনোনিবেশ করল।
তবে কারান থেমে থাকল না। সে ধীর পায়ে মিরার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে, খানিকক্ষণ তার কাজের প্রতি একাগ্রতা লক্ষ্য করল। এরপর ম্লান হাসি হেসে, মিরার কানের কাছে মাথা ঝুঁকিয়ে, নিজের তৃষ্ণার্ত অধর দিয়ে তার ভাবপ্রবণ গালে এক আলতো চুম্বন এঁকে দিল।

কারানের আচমকা স্পর্শে মিরা দহনক্লিষ্ট আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলে উঠল। তীব্র শাসনের অভিপ্রায়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটল; কারানের চিবুকের সঙ্গে সংঘর্ষে নিজেই হতচেতন হয়ে গেল।
মিরা কপালে হাত রেখে ভ্রূ কুঞ্চিত করে বিরক্ত কণ্ঠে বলে উঠল, “উফফ, লাগলো!”
কারান তৎক্ষণাৎ উদগ্রীব হয়ে মিরার ললাটে আলতো ফুঁ দিতে শুরু করে।
মিরার কপালে হাত রেখে কোমল কণ্ঠে বলল, “ইশশ, লেগেছে না? ঠিক হয়ে যাবে সোনা।”
কারানের এমন অতিরিক্ত দরদে মিরার ক্রোধ দ্বিগুণ বেড়ে গেল। কাঠিন্যস্বরে কিছু বলতে যাবে, এমন সময় রান্নাঘরে এলোপাতাড়ি পায়ের শব্দ শোনা গেল।
মমতাজ ঢুকে উচ্ছল ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, “মিরু! (কারানের দিকে তাকিয়ে) আরে বাবা, তুমিও তো দেখি উঠে পড়েছ!”

কারান ভদ্র হাসি দিয়ে বলে, “শুভ সকাল মা।”
মমতাজ মৃদু হাসি ঝুলিয়ে বলেন, “শুভ সকাল বাবা। তুমি কি কালকের মতোই আজকেও আমার মেয়েকে সাহায্য করতে এসেছ?”
কারান মিরার দিকে তাকিয়ে কৌতুকমিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
“চেষ্টা করেছিলাম মা। কিন্তু আমার অর্ধাঙ্গিনী তা একেবারেই পছন্দ করছে না।”
রুষ্ট মিরা এবার সামান্য উচ্চস্বরে বলে উঠল, “আপনি কি যাবেন এখান থেকে?”
মিরার রাগের তীব্রতা আঁচ করে কারান আর কিছু না বলে রেফ্রিজারেটর খুলে একটা আপেল বের করল। পরে আপেলের কামড়ে মনোযোগী ভঙ্গিতে রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
মমতাজ মিরার রাগে উদ্ভাসিত মুখ দেখে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলেন, “কী হয়েছে মা? তোর চোখ-মুখ ভারী লাগছে কেন?”
মিরা নিজের ক্ষোভকে সংযত করে, মুখের অভিব্যক্তি স্বাভাবিক করে বলল, “কিছু না মা। তুমি গিয়ে বসো।”
মমতাজ মুখে হাসি ধরে বলেন, “আমার মেয়েকে একটু সাহায্য করতে এলাম। বসলে চলবে?”
“সব হয়ে গেছে মা। শুধু অমলেটটাই বাকি। আর সারা জীবন তো তুমিই করেছ। এবার না হয় মেয়ের বাড়িতে একটু বিশ্রাম নাও।”
মমতাজ সন্তুষ্ট হাসি নিয়ে মিরার মাথায় স্নেহভরা হাত বুলিয়ে রান্নাঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।

মিরা রান্নাঘরে বেসিনের কাছে থালাবাসন ধুতে ধুতে গভীর চিন্তায় ডুবে ছিল।
এমন সময় কারান সুধাময় কণ্ঠে পিছন থেকে বলল, “অন্তত একটা মেইড রাখতে পারতে মিরা। তোমাকে এভাবে কষ্ট করতে দেখতে ভালো লাগে না আমার।”
কারানের কথাগুলো মিরার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। সে তো আজই ঠিক করে রেখেছিল কারানকে শায়েস্তা করার। তার উপর এমন প্রেমালাপ শুনে মনের মধ্যে জমে থাকা আগুন নতুন করে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।
মিরা হাতের কাজ থামিয়ে, ক্ষোভে চেঁচিয়ে উঠলো,
“আপনি শুরুটা কি করেছেন! এটা কি ধরনের নাটক আপনার?”
কারান একটু থমকে গিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল, “কি হয়েছে মিরা? আমি আবার কি করেছি?”
মিরা ব্যঙ্গের হাসি দিয়ে বলল, “কি করেছেন সেটা না বলে বরং বলুন, কি করেননি।”
কারান ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এসে নরম স্বরে বলল,
“তুমি একটু শান্ত হও মিরা। আমার কথাটা শোনো।”

মিরা ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফুঁসতে ফুঁসতে এক পলক চোখ বুজে নিজেকে সংবরণ করল।
এরপর চোয়াল শক্ত করে বলল, “আপনাকে একটা ফ্রি অ্যাডভাইস দেই। আমার সাথে কথা কম বলুন, সেটাই আপনার জন্য ভালো। আর আপনাকে এতো ভালোবাসার অভিনয় করতে হবে না। আমি কিন্তু কিছুই ভুলিনি।”
কারান দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুটা আহত কণ্ঠে বলল,
“ঠিক আছে, ভুলতে হবে না। মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখে দাও। কিন্তু বাবা-মা যেন কষ্ট না পায়। তারা কিছু বুঝুক, সেটা আমি চাই না। হোক তারা তোমার বাবা-মা।”
মিরা রাগে আরো অবাক হয়ে শক্ত চোয়ালে তার দিকে দৃষ্টিপাত করল। তারপর তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “আপনার এত ভালো সাজার চেষ্টা আপনাকে মানায় না। আপনি কি জানেন? আপনাকে আমি কতটা ঘৃণা করি। আর আপনার সেই আচমকা কিস! (চিৎকার দিয়ে) কেন করলেন সেটা? আপনার স্পর্শ আমার কাছে বিষের মতো লাগে।”
তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। কিছুক্ষণ থেমে পুনরায় বলে,
“আমি যে দুর্বল, এমনটা ভাববেন না। আমি শুধু ইসলামে বিশ্বাসী। আর এতগুলো দিন এসব সহ্য করেছি কেন জানেন? কারণ আমি আপনাকে…”

মিরার কণ্ঠ হঠাৎ থেমে যায়। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা বাক্য ভিতরেই আটকে রইল। ‘কারণ আমি আপনাকে ভালোবাসতাম’ বাক্যটা আর উচ্চারণ হলো না।
কারান নিষ্প্রাণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। মনে মনে সেও জানতে চায়, তুমি আমাকে কি মিরা? কিন্তু এই মুহূর্তে তার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের করার শক্তি নেই।
মিরা মুখের অভিব্যক্তি দৃঢ় রেখে পুনরায় বলল,
“আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন, আমাকে ভালোবাসেন? মোটেও না। হয়ত সেই স্বপ্নের কারণে নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করছেন। কিংবা হয়ত অন্য কোনো গল্প আছে, যা আমি জানি না। কিন্তু আমি এটা জানি, ঐ এগারোটা মাস আপনি আমাকে যা যন্ত্রণা দিয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আরও কিছু করার সুযোগ থাকলে, আপনি সেটাও করতেন। আমি কি বোকা, তাই না? (থেমে) আপনার উপস্থিতি আমার অসহ্য লাগে। দয়া করে আমার থেকে দূরে থাকুন।”

মিরার চোয়াল কাঁপছে। অথচ কারান চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। মিরার এই কথাগুলো তাকে পাথরের মতো ভারী করে তুলেছে, কিন্তু তার মুখ থেকে একটিও শব্দ বের হলো না।
মিরা গভীর শ্বাস নিয়ে স্থির কণ্ঠে বলল,
“যদি একদিন আমার হৃদয়ের পৃষ্ঠাগুলো পড়তে পারতেন, তবে দেখতে পেতেন কতগুলো রাত চোখের পানিতে বিছানা ভিজিয়ে কাটিয়েছি। অনুভব করতে পারতেন, আমার হৃদয়জুড়ে জ্বলা ক্ষতগুলো।”
কথাগুলো বলে মিরা আবার কাজে মনোযোগ দিল। কারণ নিজের কষ্টের ভার কারানের সামনে আর বেশি সময় ধরে তুলে ধরতে চায়নি।
কারান মিরার অগোচরে নিঃশব্দে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে চলে যায়। নিজ কক্ষে ফিরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে সোফায় বসে থাকে।

Tell me who I am part 6

কিছুক্ষণ পর, তার রগরগে হাতের আঙ্গুলগুলো শক্ত করে মুঠো বেঁধে টেবিলের উপর সজোরে চাপড় মারে। সোফার মোলায়েম কুশনগুলো ফুঁসতে ফুঁসতে ছিঁড়ে দু ভাগ করে ফেলে।
বিছানার একপাশে গুছিয়ে রাখা মিরার শাড়ির দিকে চোখ পড়লে তার অস্থিরতা বেড়ে যায়। একটা শাড়ি হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরে। তার চোখে আগুনের শিখা জ্বলে ওঠে, ঠোঁটের কোণে রহস্যময় কাঁপন দেখা দেয়।
ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আপনমনে বলে, “মিরা, তোমাকে আমি আমার করবোই; এটা কোনো সাধারণ প্রতিশ্রুতি নয় বরং এটা আমার জেদ। এই জেদ আগুনের মতো প্রজ্বলিত থাকবে, যতক্ষণ না তুমি আমার অস্তিত্বের অংশ হয়ে যাও।”

Tell me who I am part 8