Tell me who I am part 20

Tell me who I am part 20
আয়সা ইসলাম মনি

একটু পর কারান পোশাক পরিবর্তনের জন্য মিরার সামনেই শার্ট হাতে নিল।
সঙ্গে সঙ্গে মিরা একটু বিব্রত হয়ে পেছন ফিরল। কিছুটা কপট অভিমান নিয়ে বলে উঠল, “আপনি কি আমাকে খেয়াল করেননি নাকি? আমি বের হয়ে যাচ্ছি।”
সামনের দিকে পা বাড়াল সে। কারান গম্ভীর স্বরে বলল, “দাঁড়াও।”
মিরা ঘুরে তাকাতেই কারান নিষ্প্রাণ চোখে গভীর অথচ স্থির কণ্ঠে বলল, “তুমি যেখানে থাকো না কেন, মিরা… তোমার শরীরের ঘ্রাণ আমার নাকে এলে আমি ঠিক বুঝে যাব, তুমি কাছেই আছো। আর এখন তো তুমি আমার ঘরেই। এতক্ষণ তোমার সঙ্গেই কথা বললাম; সেখানে তুমি কীভাবে ভাবলে, আমি তোমাকে খেয়াল করিনি?”
মিরার ভ্রূ একটু কুঁচকে গেল।

“তাহলে?”
কারান এক ধাপে কাছে এসে নিচু স্বরে বলল, “আমি আমাদের মধ্যকার দেয়ালগুলো সরিয়ে ফেলতে চাই, মিরা। সম্পর্কটাকে সাধারণ স্বামী-স্ত্রীর মতো গড়ে তুলতে চাই, যেখানে কোনো লজ্জা থাকবে না, সংকোচ থাকবে না, কোনো বাধা থাকবে না। থাকবে শুধু বিশ্বাস, আবেগ, অনুভূতি আর ভালোবাসা।”
মিরা কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেলল। কারান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সহজ গলায় বলল, “চলো, বাদ দাও। তুমি তোমার ফ্লোতে থাকো। তবে যত শাস্তিই দাও, দিনশেষে কারানের বুকে মাথা রেখেই তোমাকে ঘুমাতে হবে।” বলে সে অন্য ঘরে চলে গেল।
পোশাক পরিবর্তনের পর কারান ব্লুটুথ ইয়ারফোনে কারো সঙ্গে কথোপকথন শুরু করল। টাই ঠিক করতে করতে তার চোখে কঠোরতা ফুটে উঠল। কটমট করে বলল, “ও এখনো সিগনেচার করেনি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওপাশ থেকে ইমন জবাব দিল, “স্যার, সাদনান ওয়াজিদ যে ঘাড়ত্যাড়া লোক, সেটা তো জানেনই। ওকে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বড় অঙ্কের অফারও দিয়েছি, কিন্তু সে এক চুলও নড়ছে না। কে.ছি টেক্সটাইল কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে সে রাজি নয়, কোনোভাবেই। কেন এমন করছে, তা বুঝতে পারছি না। তবে আমি নিশ্চিত, ও কোনো না কোনো কিছুর ভয়ে আছে।”
কারান ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বলল, “আমি জানি সে কিসের ভয় পাচ্ছে। আমি আসছি।”
“ওকে, স্যার।”
ফোন কেটে কারান মিরার কাছে এল। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে রইল। অর্থাৎ মিরার চোখের গভীরে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো স্পষ্ট করে পড়তে চাইছে। তারপর হঠাৎ করেই মিরার কপালে উষ্ণ চুমু এঁকে দিল।
তারপর মিহি স্বরে বলল, “আপনাকে অনেক ভালোবাসি, বেগম। আল্লাহ হাফেজ।”
এ কথা বলে পা বাড়াল।

মিরা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল। কারান দরজার কাছে গিয়ে এক পা বাইরে রেখেই বলে উঠল, “এরপর কীভাবে শাস্তি দেবে, তার প্ল্যান করতে থাকুন, বেগম।”
এরপর হেসে প্রস্থান করলো।
মিরা কিঞ্চিৎ হেসে বলল, “হুম, আপনাকে অনেক জ্বালাবো। তবে কষ্টের কারণে নয়। কারান চৌধুরীকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য যে মিরাও কম নয়।” বলে হাসতে লাগল।
তার হাসিতে অভিমান নেই, নেই কোনো বিষাদ—কেবলই এক ধরনের প্রশান্তি। কারানের ভালোবাসার উষ্ণতা তার সমস্ত বেদনার আস্তরণ গলে মিশিয়ে দিয়েছে। দুঃখগুলো আর আগের মতো তীক্ষ্ণ মনে হয় না; বরং সেগুলো সুখানুভূতির নিচে চাপা পড়ে গেছে।

সাদনান ওয়াজিদ মাথা উঁচিয়ে চেয়ারে বসে আছে। বয়স চল্লিশের কোঠায় হলেও তার কৃষ্ণবর্ণ চেহারার দীপ্তি আর রণহস্তীর মতো দেহসৌষ্ঠব তাকে তিরিশের ঘরে আটকে রেখেছে। চারপাশে সতর্ক পাহারায় কয়েকজন, আর সামনে দাঁড়িয়ে ইমন আহমেদ— তার ঠোঁটে দংশনের মতো হাসি, চোখে ঝলসে ওঠা শিকারির হিংস্র দৃষ্টি।
ইমন একবার দাড়ি চুলকে নিয়ে স্বর সংযত করল। শীতল তেজে বলল, “এখনো সময় আছে, সাদনান ওয়াজিদ। পেপারে সই করে কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। অপ্রয়োজনীয় জেদ কোনো কাজে আসবে না।”
ওয়াজিদ গম্ভীর অথচ স্পষ্টস্বরে বলল, “আমি একবার যা বলেছি, তা পাথরের লিপি। করবো না মানে করবো না। আপনারা হাজারবার বললেও সিদ্ধান্ত বদলাবে না। আমি এক কথার মানুষ।”
ইমন চোখ সরু করল, ভ্রু জড়ো হলো ক্রুদ্ধ বিদ্রূপে। তারপর এক ঝটকায় সামনে রাখা টেবিলে একখানা রিভলভার ঠুকে দিল, শব্দটা ঘরের নিরবতাকে খণ্ডন করল। কিন্তু ওয়াজিদ তাচ্ছিল্যের হাসিতে ফেটে পড়ল, যেন এই অস্ত্র তার কাছে নিছক খেলনার মতো।

ইমন দাঁতে দাঁত চেপে, চোয়াল শক্ত করে বলল, “হাসো, ওয়াজিদ। যত খুশি হাসো। তোমার কি ধারণা, আমাদের দক্ষ লোকের অভাব? একদমই নয়। তবে অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটরের কাজে তোমার দক্ষতার জন্যই তোমার প্রতি এত ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে। ইয়ার্ন, ফেব্রিক, অ্যাপারেল, ওয়েট প্রসেসিং, ডাইং, কেমিক্যাল, ফ্যাশন ডিজাইন— এগুলোতে কে. ছি টেক্সটাইল কোম্পানির ভূমিকা অপরিসীম। তারা শুধু টেক্সটাইল শিল্পে নয়, একাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সাথে যৌথ কাজেও পারদর্শী। আর অর্থমন্ত্রী নিজেই কারান স্যারের সহচর। তুমি জানো না, ওয়াজিদ, কারান স্যারের প্রভাব কতটা বিস্তৃত। তার যোগাযোগ এবং অবস্থান রাজনীতির ক্ষেত্রেও শক্তিশালী। তাই আবারও বলছি, সিগনেচারটা করেই নাও।”

ওয়াজিদ ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ছড়াল, কিন্তু সেই হাসির আড়ালে তার কপালের ঘাম চকচক করছিল। বাহ্যিক দৃঢ়তা সে বজায় রেখেছে বটে, কিন্তু অভ্যন্তরে অস্থিরতার শীতল স্রোত বইছে।
তারপর পাষাণ কঠোর গলায় বলল, “সে হাত যত লম্বাই হোক, ওয়াজিদ কাউকে ভয় পায় না।”
তার কথার রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই দরজার ফ্রেমে কারান উদ্ভাসিত হলো। কঠিন কণ্ঠে বলল, “এই মনোবল সবার মধ্যে থাকে না, ওয়াজিদ। আপনার আছে, মানে আপনি ব্যতিক্রমী।”
তার আগমনমাত্রই ইমনসহ পাহারাদাররা কুর্নিশে মাথা নত করল। অথচ এতক্ষণ অবিচল থাকা ওয়াজিদের গাম্ভীর্য মুহূর্তেই টলে উঠল, এবার আর সে মাথা উঁচু রাখতে পারল না।
ইমন দ্রুত এগিয়ে গিয়ে কারানের জন্য চেয়ার টেনে দিল।
কারান নিখুঁত স্থৈর্যে বসে, এক পা আরেক পায়ের উপর তুলে, বাম হাত টেবিলে ঠেকিয়ে স্থির গলায় বলল, “নরেন রায়, তাই তো?”

ওয়াজিদের শরীরের সমস্ত শিরা-উপশিরায় শীতল স্রোত বয়ে গেল। তার চোখের তারা মুহূর্তের জন্য প্রসারিত হলো, তারপর সে ঢোক গিলে নিল।
কারান মৃদু হাসল। পকেট থেকে রুমাল বের করে ওয়াজিদের কপাল থেকে ঘাম মুছে দিতে দিতে বলল, “আপনি ভুল করছেন, ওয়াজিদ। নরেন রায় এখন আর কিছুই না। শাঁসহীন নারিকেলের খোসা মাত্র। উপরে দাম্ভিকতা বজায় রাখলেও ভিতরে একেবারে শূন্য। আর আপনি কিনা এমন একজন ব্যক্তির জন্য নিজের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে ফেলছেন?”
ওয়াজিদ নতশির হয়ে ক্ষীনতর কণ্ঠে বলে,
“স্যার আপনি জানেন না ওকে যেমনটা ভদ্রলোক মনে হয়, ও ভিতরে ভিতরে ততটাই বর্বর নিকৃষ্ট।”
কারান ঈষৎ হেসে বলে,
“তাহলে আপনি বলতে চাইছেন আমার থেকে ঐ মাদারফা’কারকে আপনি বেশি চিনেন?”
ওয়াজিদ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিল।
এবার কারান কঠিন গলায় বলে,

“চলুন কাজের কথায় আসি। নরেন রায় আপনার কিচ্ছু করতে পারবে না, কারান চৌধুরি নিজে ভরসা দিচ্ছি। কিন্তু আপনি যদি বাংলাদেশি হয়ে ইন্ডিয়ান কোম্পানির সাথে কাজ করেন, আমার কিছুই করতে হবে না। দেশের বাকিরাই আপনার যা করার করে ফেলবে। পলিটিক্সের কি দেখেছেন? স্বয়ং ফাইন্যান্স মিনিস্টার থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট সবাই জড়িত। আর কে.ছি টেক্সটাইল কোম্পানির সাথে কাজ না করে আপনি দেশের সাথে দুই নাম্বারি করে শান্তিতে দিনাতিপাত করবেন, এমনটা আব্দুল মোত্তালেব খালিদ হতে দিবেন?”
ওয়াজিদ কারানের কাটকাট কথা শুনে গভীর ভাবনায় চলে গেল। খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে কারান শান্ত গলায় ভয়ংকর হুমকি দিয়েছে।
সদাসন্ত্রস্ত লোকটা মনে মনে ভয়ার্ত গলায় আওড়ায়,

“তাই তো। কারান চৌধুরির তো কিছুই করা লাগবে না৷ আব্দুল মোত্তালেব, এমপি পারবিন আড়া খান, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইমতিয়াজ বায়জিদ এরাই তো আমাকে বাঁচতে দিবে না। নয়তো বাঁচিয়ে রেখেও মৃত্যুর থেকেও নির্মম শাস্তি দিবে। না, নাহ না।” বলতে বলতেই এতক্ষণের শক্তপোক্ত লোকটার চোখ পানিতে ছাপিয়ে ওঠে।
এরপর আর কিছু না ভেবে টেবিলে রাখা বন্দুকটা উঠিয়ে নিজের মাথায় ঠেকিয়ে ট্রিগারে চাপ দিয়ে শুট করে দিল। বুলেটটা মাথা ভেদ করে বেরিয়ে পাশে দেয়ালে গিয়ে ঠেকলো। সাথে সাথে লোকটার মুখ থেকে এক গলদ রক্ত চট করে বেরিয়ে কারানের মুখমণ্ডল লাল করে দিল। কারান রক্তমাখা চেহারায় দাঁতে দাঁতে চেপে লোকটার নিথর হয়ে লুটিয়ে পরা শরীরটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইমন জলদি করে পকেট থেকে রুমাল বের করে কারানের হাতে দিল।
কারান মুখ মুছতে মুছতে ঠান্ডা গলায় বলে,

“ওর বডিটা অবজারভ করো।”
পাহারাদাররা ওয়াজিদের শরীর পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
ইমন চিন্তিত গলায় বলে,
“স্যার এবার তাহলে কি হবে? ওয়াজিদ তো নেই।”
কারান তীক্ষ্ণ হেসে বলে,
“কারান চৌধুরি সবসময় প্ল্যান বি রাখে ইমন। সাদনান ওয়াজিদ নেই তো কি হয়েছে, সাদনান সাজিদ ঠিকই বেঁচে আছে। আর সাজিদ ওর মতো বোকা না। যত যাই হোক না কেন নিজের প্রাণ দিবে না।”
তৎক্ষণাৎ একজন পাহারাদার বলে উঠে,
“স্যার এর পকেট থেকে এই কাগজটা পাওয়া গেছে।”
কারান কপাল কুঁচকে কাগজটা হাতে নিয়ে পড়তে থাকলো।
এরপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“ওর ভয় পাওয়ার মেইন রেজন তাহলে এটা।”
ইমন উৎকণ্ঠিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে,
“কি হয়েছে স্যার।”

কারান নিরুত্তর কাগজটা ইমনের হাতে তুলে দিল।
ইমন ভ্রূ কুঁচকে বিড়বিড় করে পড়তে থাকে,
“আমি জানি না তোর কাছে নোটটা পৌঁছাতে পারবো কিনা। নরেন রায়ের সাগরেদরা তোর ভাবিকে আর মনাকে বন্দী করে রেখেছে। ওদের বাঁচা। ইতি তোর বড় ভাই ওয়াজিদ।”
পড়া শেষ করে কারানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হা*রামজা*দা কত বড় জিনিস স্যার দেখলেন। এখন তাহলে ওর বউ বাচ্চাকে মেরে ফেলবে না তো?”
কারান শান্ত চেহারায় বলে,
“উঁহুঁ। মেইন খিলারি তো বেঁচে নেই তাহলে উইক পয়েন্ট মেরে কি হবে? মারবে না ওদের। ওয়াজিদ ছোটখাটো কেউ ছিল না। ওর বউ বাচ্চাকে মারলে ওয়াজিদের চ্যালারা কেউ ছাড়বে না নরেন রায়কে।”
“ঠিক স্যার। আর কেউ না হলেও সাজিদ ঠিকই এর বদলা নিবে। কিন্তু লাশ নিয়ে কি করবো স্যার?”
কারান ঠান্ডা গলায় বলে,

“বড় একটা বক্সে সুন্দর করে প্যাকিং করো। তারপর কারান চৌধুরির তরফ থেকে গিফট হিসেবে নরেন রায়কে পাঠিয়ে দাও। আর সাজিদের সাথে আমার কন্টাক্টের ব্যবস্থা করো।” বলে প্রস্থান করলো।
কারান চলে যাওয়ার পর, ওয়াজিদের লাশের প্রতি নির্মম নিষ্ঠুরতা প্রদর্শিত হলো। তার হাত-পা কেটে খণ্ডবিখণ্ড করে বক্সে ভরে ফেলা হলো, এবং এক কোপে মাথা কেটে দিল ইমন।
তারপর সে নির্দেশ দিল, “ওর দেহের প্রতিটি অংশ ভালো করে পরীক্ষা করো। তারপর দেহের খণ্ডিত অংশগুলো মেডিকেল চেকআপের জন্য পাঠাতে হবে।”
বাকিরা নিঃশব্দে মাথা নাড়ল। ইমন একটু পর বাঁকা হাসি ছুঁড়ে দিয়ে আবার বলল, “শোনো, সবকিছু নিশ্চিত হয়ে গেলে ওর অ*ন্ডকো* আর পুরু*ষা* আলাদা করে ফেলবে। তারপর ওর বিচ্ছিন্ন মাথাসহ সেগুলো একটি বাক্সে সাজিয়ে পাঠিয়ে দেবে নরেন রায়কে—একদম গিফট কার্ডসহ। যেহেতু করান চৌধুরীর তরফ থেকে উপহার যাচ্ছে, স্পেশাল না হলে চলে? ”
তার কথা শুনে বাকিরা গভীর দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকাল, তারপর ঠোঁটের কোণে চাপা হাসি ফুটে উঠল।

রাত্রিবেলা কারান ঘরে এসেই ল্যাপটপে ভিডিও কনফারেন্সে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। মিরা যদিও ভেবেছিল এই সময় কারানকে জ্বালালে এটাই কারানের জন্য কঠিন একটা শাস্তি হবে কিন্তু পরবর্তীতে ভাবলো এই সময় উলটো পালটা কিছু করে ফেললে এক তো ব্যাপারটা বাচ্চামো দেখাবে। অন্যদিকে কারানও প্রচণ্ড রেগে কি না কি করে বসে তার ঠিক নেই। তাই নিশ্চুপ পাশের কক্ষে চলে গেল।
কারান ল্যাপটপ রেখে দিলে মিরা দরজার কাছে এসে বলে,
“খাবেন না?”
কারান শান্ত গলায় বলে,
“নাহ খেয়ে এসেছি। তুমি খেয়েছো?”

“হুম আপনার আসতে দেরি হচ্ছিল আর খুদাও লেগেছিল তাই খেয়ে নিয়েছি।”
“আচ্ছা। ভালো করেছ। ঘুমাবে না?”
“না মুভি দেখবো টিভিতে।”
শুনতেই কারান আড় চোখে মিরার দিকে তাকালো।
তারপর বিস্মিত হয়ে বলে,
“আজকেও?”
মিরা মুখ টিপে হেসে বলে,
“কেন ভয় পেয়ে গেলেন নাকি? সকালে আপনিই তো বললেন।”
কারান অনুনয় করে বলে,
“হ্যাঁ বলেছি, কিন্তু প্লিজ মিরা আজকে না। আজকে অনেক কাজ করেছি। অনেক টায়ার্ড।”
মিরা তাচ্ছিল্যের সহিত হেসে বলে,

“তো? আমিও তো অনেক ক্লান্ত থাকতাম। কিন্তু আপনি তো ঠিকই…”
মিরাকে বলতে না দিয়েই কারান সামান্য চেঁচিয়ে বলে,
“হয়েছে, থামো। আবার শুরু করে দিও না।”
এরই মধ্যে অকস্মাৎ মিরা সচকিত হয়ে বলে উঠে,
“ইশশ আপনার মুখে পিম্পলটা কি বিশ্রী দেখাচ্ছে।”
শুনেই কারান লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে বলে,
“কি বলো পিম্পল হয়েছে?” এরপর দৌড়ে আয়নার কাছে গিয়ে দেখলো কিছুই নেই।
তখন দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে তীক্ষ্ণ চক্ষে মিরার দিকে তাকালো। অথচ ইতিমধ্যে মিরা কারানের অবস্থা দেখে হাসিতেই কুপোকাত।
সকৌতুকে হাসতে হাসতে বলে,

“আল্লাহ! সামান্য পিম্পলের জন্য কেউ এত ভয় পায়?” আবার খটাখট শব্দ করে হেসে দেয়।
কারান এপাশ ওপাশ মাথা নাড়িয়ে অসন্তুষ্ট স্বরে বলে,
“রিয়েলি মিরা, এই একটা ব্যাপার আমার বিরক্ত লাগে। ভাগ্যিস এই হরমোনজনিত সমস্যাটা আমার মধ্যে নেই।”
মিরা হেসে বলে,
“একদিন আপনার মুখে এতগুলো পিম্পল হবে দেখে নিয়েন।”
কারান হেসে বলে,
“বাকি যা খুশি বলো। এই অভিশাপটা দিও না বউ।”
মিরা কোমল কন্ঠে শুধালো,
“এত ভয় পাওয়ার কি আছে কারান? আমারও কখনো কখনো হয়।”
কারান ভ্রূ কুঁচকে বলে,
“কই আমার তো কখনো নজরে পড়লো না।”

“পড়বে কীভাবে, থাকে না তো। যেদিন উঠে তার পরের দিনই ভেনিস হয়ে যায়। এই জিনটা মায়ের থেকেই পেয়েছি। মায়ের মুখে আমি কখনো ব্রণ দেখিনি।”
কারান কিঞ্চিৎ হেসে বলে,
“তাহলে আমার বউয়ের সৌন্দর্যের মূলমন্ত্র আমার শাশুড়ি?”
মিরা হেসে বলে,
“উঁহুঁ। হলুদ লাগাও ফির মেরে জেসা খুব সুরাত হো যাও।” বলে মুখে হাত বুলিয়ে নিল।
কারান হাস্কি স্বরে বলে,
“লাগাচ্ছি হলুদ।” বলেই রোমান্টিক চাহনিতে মিরার দিকে তেড়ে আসতে থাকে।
মিরা বিপদের আভাস পেয়ে জলদি টিভি অন করে ভলিউম বাড়িয়ে গান শুনতে থাকে।
তখন কারান থেমে গিয়ে মিরার দিকে নিষ্ফল চক্ষে তাকিয়ে থাকে। এরপর শ্বাস টেনে বুকের মধ্যে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
নিস্পৃহ চোখে নরম গলায় বলে,

“জান প্লিজ আজকে ঘুমাতে দাও। শরীরটা অনেক খারাপ লাগছে।”
মিরা ভাবলেশহীনভাবে ভলিউম বাড়িয়ে পা নাড়াতে নাড়াতে টিভি দেখতে থাকে।
কারান পুনরায় বিরক্তিকর সুরে বলে,
“আলো নিভাও মিরা। আমার ঘুম আসছে না বা’ল।”
মিরা ঈষৎ হেসে বলে,
“বা’ল?” বলে মুখ ফুলিয়ে খপ করে হেসে দেয়।
কারান বিছানার এপাশ ওপাশ করে মলিন চেহারায় বলে,
“বউউউউ। প্লিজ।”
মিরা কানে ঝাড়ি দিয়ে বলে,
“অন্য রুমে গিয়ে ঘুমান, তাহলেই তো হয়।”
“না জানার ভান করো না তো। আমার এই বেড ছাড়া ঘুম আসে না জানোই তো।”

মিরা গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বয়াম থেকে বিস্কুট বের করে খেতে খেতে টিভি দেখতে থাকে। কারান বুঝতে পেরেছে মিরাকে কিছু বলে লাভ নেই। তাই একটা লম্বা শ্বাস ত্যাগ করে চোখের উপর একটা বালিশ রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। কারান চক্ষুদ্বয় বুঝিয়ে নেওয়ার পরপরই মিরা আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে। সাথে কারানের চোখের উপর থেকে বালিশ সরিয়ে নিল।
কারান তখনও জেগে থাকায় পাশ ফিরে চক্ষু নিমীলিত অবস্থাতেই ঈষৎ হেসে মিরাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
“গুড নাইট বউ।” বলে ঘুমিয়ে যায়।
মিরাও আর কারানের হাত সরায় না। অর্থাৎ আজকাল মিরার মনেও কারানের জন্য ভালোবাসার ফুল ফুটেছে।

অনেকদিন পর মিরা যেন মনে একটু শান্তি পাচ্ছে। একদিন যে মিরা আফসোসে পুড়েছিল কেন এমন একজন মানুষকে বিয়ে করেছে, আজকে তার ভালোবাসা মনের গহিন থেকে অনুভব করতে পারছে। এখন মিরার কাছে সবকিছু রয়েছে; নিজের পরিবার, স্বামীর পরিবার, স্বামী, সংসার সবই রয়েছে। আর সব থেকে বেশি যেটা পেয়েছে সেটা হলো কারানের আমূল ভালোবাসা।
মিরা সকালের স্নিগ্ধ সমীরের ছোঁয়া পাওয়ার আশায় সফেদ পর্দাগুলো খুলে দিল। বাহিরের শীতল হাওয়া বুক চিরে ভিতরে প্রবেশ করলেই মন বলে উঠে, আহা কি শান্তি! এমন সময় তীক্ষ্ণ রোদের দ্যুতিময় দৃঢ়তা কারানের চোখে পড়তেই কারান নড়েচড়ে চক্ষের উপর ডান হাত রাখে। কারানের চোখে রোদের কিরণ পড়ছে দেখে মিরা কারানের পালঙ্কের পাশে দাঁড়ালো।
মিরার ছায়া কারানের মুখে পড়তেই কারান ঘুমো চক্ষুদ্বয় ধীরে ধীরে খুলে বলে,
“মর্নিং বেবি।”
মিরা কদাচিৎ স্বল্প হেসে বলে,

“হুম হয়েছে হয়েছে। এখন উঠুন উঠুন অনেক কাজ বাকি।”
কারান বুক ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে বলে,
“কীসের কাজ?” বলেই মিরাকে টান দিয়ে বুকের মধ্যে চেপে ধরে।
মিরা উঠার জন্য দাপাদাপি করলে কারান কঠিন স্বরে বলে,
“মার দিব মিরা। একদম নড়াচড়া করবে না। ঘুমাতে দাও।”
মিরা হাত সরানোর চেষ্টা করে সামান্য মুখ তুলে বলে,
“উমম। ছাড়ুন তো।”
“কীসের ছাড়াছাড়ি। একবার যখন তোমাকে পেয়ে গেছি আর ছাড়ছি না মহারানি ভিক্টোরিয়া।”
মিরা কারানের হাত সরিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
কথাটা শুনতেই কারান উৎফুল্ল হয়ে লাফ দিয়ে উঠে বলে,
“কি সারপ্রাইজ জান?”
মিরা মুখ বুঝে হেসে নিয়ে বলে,
“আগে তো ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

কারান আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলতে তুলতে ওয়াশরুমে চলে গেল।
কারান যাওয়ার পরই মিরা হেসে বলে,
“সারপ্রাইজ দেখে আবার সেন্সলেস না হয়ে যান।” বলে আবার হাসতে থাকে।
কারান ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালের সহিত মুখ মুছতে মুছতে মিরার কাছে এসে মিরার গালে চুমু খেতে যাবে তৎক্ষণাৎ মিরা কারানের হাতে ঝাড়ু ধরিয়ে দিতে চাইলো।
কারান ঝাড়ুটা না ধরে অবাকের সহিত মিরার পানে নেত্রপাত করে রাখে।
মিরা খুক খুক করে দুইটা কাঁশি দিয়ে বলে,
“আআ তো শুরু করে দিন।”
কারানের মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না। সবকিছু মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।

কারান বিস্মিত কণ্ঠে বলে,
“কি শুরু করবো?”
মিরা হাই তুলে বলে,
“আমি দুই মাসের জন্য সব কাজ থেকে ছুটি নিচ্ছি।”
কারান ভ্রুকুঞ্চন করে বলে,
“বুঝিনি।”
“মানে এখন থেকে বাসার সমস্ত কাজ আপনি করবেন। রান্না করা, ঘর ঝাড় দেওয়া, ডিসেস ওয়াশ করা, সবকিছু পরিষ্কার করা, বাকি যাবতীয় যা কাজ আছে আরকি। মানে এভরিথিং আপনাকে করতে হবে। গাছে পানি দেওয়ার কাজটা নাহয় আমি করলাম। ওটা করতে আমার ভালো লাগে।”
কারান আশ্চর্যের চক্ষে মিরার পানে শুধু তাকিয়ে রইলো।
মিরা মুচকি মুচকি হেসে বলে,

“তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। শুরু করুন কারান সাহেব।” বলে কাউচের উপর পায়ের উপর পা তুলে বসলো।
বসার স্টাইল এমন যে, সে এখন মালকিন। আর কারানই তাকে এই পদবিটা দিয়ে দিয়েছে।
কারান কান্নামিশ্রিত হেসে বলে,
“তাহলে অফিস কে করবে জান?”
মিরা সম্মোহনী হেসে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“কেন আপনি করবেন।”
কারান দাঁতে দাঁত চেপে মুখ বিকৃত করে বলে,
“আর আপনি কি করবেন শুনি?”
মিরা হেলদোলহীন ভাব নিয়ে বলে,
“আমি তো বললামই এই দুই মাস আমি শুধু আরাম করবো।”

কারান হাত দিয়ে চুল পিছনের দিকে ব্যাকব্রাশ করে বলে,
“তোমার কাজ করতে ইচ্ছে করছে না বললেই হয়। এখন থেকে তাহলে ফরিদ কাকাও তোমাকে হেল্প করবে।”
“উঁহুঁ। ফরিদ কাকার কাজ বাজার করা, উনি সেটাই করবেন। বাকি কাজ আপনি করবেন।”
এবার কারান ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে শুরু করে।
চোয়ালের পাটি শক্ত করে রাগ সংবরণ করে বলে,
“আচ্ছা আমি সার্ভেন্টের ব্যবস্থা করছি।”
মিরা কাউচ থেকে উঠে কঠিন গলায় বলে,
“কেন? আপনিই তো বললেন দুই মাস যা বলবো তাই করবেন। তাই এখন থেকে সব কাজ আপনাকেই করতে হবে।”
কারান মিরার অবুঝের মতো খামখেয়ালি কথা শুনে বেশ বিরক্ত হয়ে গম্ভীরমুখে দরজা থেকে বের হতে যাবে তৎক্ষণাৎ মিরা তাচ্ছিল্যের সহিত বলে,
“যেটা পারবেন না সেটা বলেন কেন?”
কথাটা কারানের আত্মমর্যাদায় আঘাত করে।
কারান ঘাড় ঘুরিয়ে কঠিন গলায় শুধালো,
“এমন কিছু নেই যেটা কারান চৌধুরি করতে পারবে না। ঠিক আছে আপনার হুকুম আমি পালন করবো প্লাস অফিসও করবো। এতে যদি আপনি শান্তি পান, তাহলে আপনার হুকুম শিরোধার্য।” বলে কারান মিরার হাত থেকে টান দিয়ে ঝাড়ুটা নিয়ে ঝাড়ু দিতে চলে গেল।

কারান চলে যাওয়ার পর কারানের লালমুখো চেহারার কথা মনে করে মিরার মুখে আকর্ণ হাসির ঝলক ফুটে উঠে।
পরেরদিন থেকে কারান সকালে রান্না করে অফিসে যায় আবার রাতে এসে বাকি কাজ করে। এভাবে বেশ কিছুদিন কারানের অক্লান্ত পরিশ্রম চলতে থাকলো। কষ্ট হলেও আত্মসম্মানের খাতিরে বউকে কিছুই বলার নেই। এত কষ্টের পর দিনশেষে একটাই শান্তি ছিল। সেটা হলো, রাতের বেলা মিরাকে জড়িয়ে ধরে মিরার বুকে ঠাঁই নেওয়া।
কিন্তু কারানকে এভাবে কষ্ট করতে দেখে মিরাও আর থাকতে পারলো না। বুঝতে পারলো কারানের শাস্তিটা একটু বেশিই হয়ে গেছে। এত কাজ আবার অফিসে যাওয়া কম কথা না।
তাই পরের কয়েকদিন কারান অফিসে যাওয়ার পর ফাঁকে মিরা ঘরের বাকি কাজগুলো করে রাখতো। এবার কারানও অনুভব করতে পেরেছে ধীরে ধীরে তার মহারানি তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে কারণ রান্না বাদে ঘরের বাকি কাজ যে মিরা করে রাখতো এটা কারান বুঝতে পারতো।

এমনই এক নিরালা দুপুরবেলা, মিরা গোসল করে এসে জানালার পর্দা সরিয়ে দিল। খিড়কির পর্দা সরাতেই এক দমকা হাওয়া গলগল করে ঘরে ঢুকলো। মিরার ভিজে চুলগুলো দমকা হাওয়ায় মৃদু সঞ্চরণে নড়তে থাকে। মিরা হেসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো। প্রথমবার অজানা এক আকাঙ্ক্ষায়, সাজতে ইচ্ছে হলো তার। যে ভালোবাসার রঙে মানুষের মন রাঙানো যায়, মিরার মনও যেন আজ তেমনি কিছু অনুভব করছে। চোখে কাজল লাগালো। তার গায়ে ছিল প্লেইন চিকন সাদা সুতার কারুকাজ করা, পাতলা সফেদ মসলিন শাড়ি। শুভ্র কাপড়ে তাকে সাদাপরী বলে অভিহিত করা যাবে অতি সহজেই।
তখনই কারান তার কক্ষে ঢুকে, মসৃণ হাসি হেসে, তার অপরূপা বউকে এক নজরে মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলো। কারানের প্রতিচ্ছবি আয়নায় পড়তেই, মিরা এক ঝটকায় ঘুরে পিছনে তাকালো। তৎক্ষণাৎ জানালা থেকে আসা দমকা হাওয়া মিরার শরীর ছুঁয়ে গেল।

অকস্মাৎ কারান তার চোখের ওপর আঙুল রেখে, একনাগাড়ে একই বাক্য উচ্চারণ করতে লাগলো, “নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ… আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ।”
মিরা বিস্মিত হয়ে বললো, “আরে, কি হয়েছে?”
কারান তার চোখের ওপর রাখা আঙুলের ফাঁক দিয়ে মিরাকে দেখলো, তারপর এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পুনরায় আবিরাম হাস্যাভিভূত হয়ে বললো, “নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ… কারান, কন্ট্রোল করো, কন্ট্রোল করো। হে আল্লাহ, আমাকে সামলাও। আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ।”
মিরা চরম বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকে বলে,
“মাথা ঠিক আছে নাকি গেছে একদম? কি বলে যাচ্ছেন বার বার।” বলে কারানের কাছে এগোতে থাকলে এবার মিরার এগোনো দেখে কারান খিঁচে নেত্রপল্লব বুঝিয়ে দ্রুত গতিতে আওড়ায়,
“আসতাগফিরুল্লাহ আসতাগফিরুল্লাহ। হে আল্লাহ। কারান কন্ট্রোল কন্ট্রোল। প্লিজ তোর বউ এখনো তোকে মেনে নেয়নি। কন্ট্রোল কর। নাউজুবিল্লাহ নাউজুবিল্লাহ।”

মিরা এবার রেগেমেগে বলে,
“সমস্যাটা কি আপনার?” বলতে বলতেই মিরার নজর নিচে গেলে এবার কারানের এতক্ষণের অবিরত এক কথা বলে যাওয়ার মানে বোধগম্য হলো।
তখন দমকা অনিলের নিমিত্তে মিরার বুকের শাড়ির আঁচল নিচে পড়ে গেছে। আর এইটা দেখেই কারান উত্তে*জিত হয়ে নিজেকে সামলানোর মন্ত্রণা আওড়াচ্ছিল বারংবার। মিরা সাথে সাথে শাড়ির আঁচল পিছন থেকে ঘুরিয়ে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে পিছন মুড়ে দাঁড়ালো। মিরা এতটা বেশি লজ্জা পেয়েছে যে ফরসা মুখশ্রীটা ডালিমের ন্যায় টকটকে রক্তিম হয়ে গেল। মিরা উপায় না পেয়ে সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিল। মিরার লজ্জা দেখে কারানের উ*ত্তেজনা আরও ঘনায়মান হলো। কারান ধীরুজ পায়ে মিরার দিকে এগোতে থাকলো। মিরা কারানের ফুল আর ভ্যানিলার মিশ্রণের সুগন্ধির তীব্র ঘ্রাণের অনুভূতি পেয়ে বুঝতে পারে কারান ওর কাছেই আসছে।

মিরা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই হাঁসফাঁস করতে করতে বলে,
“এগোবেন না বলছি।” বলে লজ্জা নিয়ে অন্য কক্ষে গিয়ে দরজা আটকে দিল।
মিরার লজ্জা পাওয়ার মাত্রা এমন যে এখনই যদি ফ্লোর ফাঁক হয়ে যেত মিরা সেখানেই লাফ দিয়ে নিজেকে লুকিয়ে নিত।
কারান লজ্জাজনক হেসে বলে,
“এত লজ্জা বেগম? তাও কিনা নিজের স্বামীর কাছে। তবে আপনার ফি*গার মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর। আপনার প্রতি যে আসক্তি বেড়েই চলেছে। আর যে নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না।” বলে তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে দিল।

হাওলাদার বাড়ির ডানপিটে দুরন্ত অনুজ কন্যা আরামের সহিত নাক ঢেকে নিদারুণ তন্দ্রায় তন্দ্রাচ্ছন্ন। কয়েকবার এপাশ ওপাশ করে ঘুমাচ্ছে, সাথে ঠোঁটের কোনে মিটিমিটি হাসছে। এরইমাঝে আচমকা পিঠে একটা সপাট করে বাড়ি পড়ায় কোমলমতির নিদ্রায় ভাটা পড়ে।
যথারীতি মাথা ঝাঁকানি দিয়ে চমকে লাফিয়ে উঠে বলে,
“মা দিলে তো আমার লি মিন হোর সাথে স্বপ্নটায় পানি ঢেলে। (হেসে) লি মিন হো হিরো আর আমি হিরোইন। কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখতেছিলাম। আহা।”
মমতাজ কটমট করে বলে,
“বেতের বাড়ি না খেতে চাইলে তাড়াতাড়ি স্কুলে যা। কয়টা বাজে হুঁশ আছে?”
মাহিমা হাই তুলতে তুলতে পাশ ফিরে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, ঘড়ির কাঁটা প্রায় নয়টার ধারাধারি। দেখেই জলদি করে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে যাবে তৎক্ষণাৎ কিছু একটা ভেবে আবার থেমে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,

“না আম্মু আজকে স্কুলে যাব না।”
মমতাজ ভ্রূ কুঁচকে বলে,
“প্রতিদিন শুধু বাহানা না? কেন যাবিনা শুনি।”
মাহিমা আকুলতা নিয়ে বলে,
“কারণ আছে মা। যাব না আজকে।”
“চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে স্কুল ইউনিফর্ম পরে নিচে আয়। আমি খাবার রেডি করছি।” বলে প্রস্থান করলো।
“মাআআ শোনো না। ধুরো। আজকে স্কুলে গেলে ওরা নিশ্চিত রং লাগাবে।”
আর কোনো গত্যন্তর না দেখে বিদ্যালয়ের পোশাক পরিধান করে জলদি করে খেয়ে নিয়ে হনহনিয়ে ছুটলো।

দ্বিপ্রহর দুইটা পার হয়ে গেছে। ছুটির ঘণ্টা বাজতেই মাহিমা ভয়ে ভয়ে ক্লাস কক্ষ থেকে বেরোল। স্কুল গেট পেরোনোর আগেই হঠাৎ কয়েকটি হাত তার মুখে রঙ মাখিয়ে দিল। লাল, হলুদ, সবুজ—বিবিধ রঙের ছোঁয়া মুহূর্তেই তার সাদা পোশাকে ছড়িয়ে পড়ল। রঙে ভিজে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মাহিমা চেঁচিয়ে উঠল, “তোরা কিরে? এতবার নিষেধ করলাম, তবুও দিলি। মুসলিমরা রঙ খেলে না, এটাও জানিস না?”
তার তীব্র রাগের আঁচে মেয়েগুলো থমকে গেল। কিছুটা অপরাধবোধে মাথা নত করে নিল তারা। তবে এক মেয়ে কণ্ঠে তাচ্ছিল্যের ছোঁয়া নিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে উঠল, “এমন তো নয় যে তুই খুব ধার্মিক, মাহিমা। আমরা না হয় একটু মজার ছলেই দিলাম। এতে এত রেগে যাওয়ার কী আছে?”
মাহিমা ভ্রুকুটি করে বলে উঠল, “ইশা, তুই একদম চুপ কর। সবসময় ফোড়ন কাটার স্বভাব! আমি কখনোই এই রঙ খেলা পছন্দ করিনি, আর তোরা সব নষ্ট করে দিলি।”

রাগে গজগজ করতে করতে সে দ্রুত গেট পেরিয়ে বেরিয়ে আসতেই একটা গম্ভীর, স্নিগ্ধ পুরুষালি কণ্ঠ কানে এলো, “আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। আপনি কে বলুন তো?”
একে তো মেজাজ চরমে, তার ওপর হঠাৎ এক অচেনা ব্যক্তি এসে প্রশ্নবাণ ছুড়েছে। বিরক্তিতে দম নিয়ে মাহিমা পেছন ফিরল, ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠল, “কে ভাই আপনি? এমনিতেই মাথা ঠিক নেই–”
কথাটা শেষ করতে পারল না। ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সে।
অর্থাৎ এ সেই ছেলে যে কিনা মাহিমার প্রাণ বাঁচানোর সাথে সাথে মাহিমার পোশাক নষ্ট, ফোন ভাঙার মতো ঘোর অপরাধের জন্য দায়ী। বারগান্ডির রঙের একখানা সাধামাটা টিশার্ট সাথে ডেনিমের কৃষ্ণবর্নের প্যান্ট পরিহিত আগের বারের মতোই পিছনে ল্যাপটপের ব্যাগ ঝুলানো। চুলগুলো এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে আছে। অবশ্য তার মুখ ভর্তি মায়া আর ঠোঁটের কোনে হাসিটা চিরস্থায়ী। তার উপর তার মুখের প্রকাশভঙ্গিমা অমায়িক। আবার ছেলেটি সবার সাথেই সদয় ও সাদর ব্যবহার করে।

ছেলেটি হাতে ধরে রেখেছে মোটা দুইটা পুস্তিকা। একটা বিসিএস এর অন্যটা আইএলটিএস এর। অর্থাৎ পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে, তারই সংকেত বই দুইটা। অথচ সদ্য যৌবনে পা দেওয়া বালকটির বয়স বোধ করি ২১ কি ২২ এর বেশি হবে না।
ছেলেটি বেশ মধুর কণ্ঠস্বরে বলে,
“আমি কে সেটা নাহয় একটু পর বলছি। কিন্তু আপনাকে বেশ পরিচিত লাগছে। কোথায় দেখেছি বলুন তো?”
মাহিমা দুইহাত বক্ষস্থলের নিচে ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে সোজাসাপটা বলে দেয়,
“আপনি কি এমনই? সবাইকে এভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে পরিচয় জিজ্ঞেস করে বেড়ান? নাকি মেয়ে পটানোর নতুন ধান্দা?”
ছেলেটা ঈষৎ হেসে বলে,
“কি যে বলেন! আমাকে দেখে কি বখাটে মনে হয়?”
“না। একদমই মনে হয় না। মনে হয় একজন ভদ্র সভ্য শান্ত সুশীল একজন মানুষ। কিন্তু সর্ষের মধ্যে ভূত থাকে এটা জানেন তো?”
লোকটা বেশ লজ্জা পেয়ে মাথা নত করে বলে,
“সরি মিস। আমার মনে হয়েছিল আপনাকে চিনি। ওকে আমি আসছি।” বলে পিছনে মাথা ঘুরাতেই মাহিমা বলে উঠে,

“কাদামাখা মুখ। মনে পড়েছে এইবার?”
এবার ছেলেটি হেসে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে,
“আরে আপনি তো সেই করলানী। আপনার চটাং চটাং কথা শুনেই আমার বোঝা উচিত ছিল।”
এবার মাহিমা চোখমুখ কুঁচকে বলে,
“এই কি বললেন আপনি?”
মাহিমার রাগ দেখে লোকটি মুখ টিপে হেসে অন্যদিকে চোখ ঘুরাতেই মাহিমা বিরক্তি মুখেই ঘুরে সামনের দিকে পা বাড়ালো।
মাহিমার চলে যাওয়া দেখে লোকটি পিছন দিক থেকে আওয়াজ তুলে বলে,
“এই পিশাচিনী।”

ছেলেটার আকস্মিক সম্বোধনে মাহিমা হোঁচট খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। পরে যেতেই মাহিমার জুতো ছিঁড়ে যায়। এমন দৃশ্যপট দেখে ছেলেটি তাজ্জব বনে গেল।
মাহিমা জুতো জোড়া হাতে তুলে নিয়ে তেতিয়ে ওঠা মস্তিষ্ক নিয়ে ওঠে দাঁড়ালো। রক্তজবার ন্যায় ধারণ করা লাল চক্ষে ঘুরে লোকটার পানে তাকালো।
তথা এবার অতর্কিত হামলা ধেয়ে আসবে ভেবে লোকটি অন্যদিকে চক্ষু ঘুরিয়ে দাঁতে নখ কাটতে কাটতে বলে,
“কাম সারছে।”
মাহিমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্ষোভ জেকে বসেছে।
অত:পর মাহিমা রেগেমেগে আগুন হয়ে মনে মনে আওড়ায়,

“কেন যে কেসটা ধুয়ে দিলাম কালকে। একে তো স্লিপার পড়ার জন্য ম্যামের বকা শুনলাম। এখন তো স্লিপারটাও ছিড়ে গেছে, আবার বাসায় গিয়ে মায়ের বকা শুনবো। সব হয়েছে লোকটার জন্য।”
যত্রতত্র ছেলেটার দিকে তড়িৎ গতিতে তেড়ে এসে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,
“আপনি, আপনি যদি আর আমার সামনে আসেন। আপনি আসলেই আমার সাথে কিছু না কিছু অঘটন ঘটবেই। আর আপনি তো বেশ ম্যানারলেস। অচেনা কোনো মেয়েকে কেউ পিশাচিনী বলে ডাকে?”
আক্কেল সেলামি পেয়ে ছেলেটি খুক করে কাঁশি দিয়ে গলা ছেড়ে বলে,
“আহ দেখুন। আপনার নাম তো আমার জানা নেই। আর এখন আপনার চেহারার যা হাল হয়েছে পেত্নী, শাকচুন্নি, পিশাচিনী এই নামগুলোই মানানসই।”
মাহিমা উৎকট স্বরে বলে,

“আমার নাম ইলিজা বুঝলেন। তাই নেক্সট টাইম থেকে, নাহ। নেক্সট টাইম যেন আপনার সাথে দেখাই না হয়।”
সাগ্রহে শুনে ছেলেটি শান্ত গলায় বলে,
“ওয়াও ইলিজা, সুন্দর নাম তো। আমার নাম শেখ আর_”
“আপনার নাম আমি শুনতে চেয়েছি? ডাকলেন কেন সেটা বলুন।”
কি আর করার!
পরিচিত হওয়ার অবাধ্য বাসনাকে মনের ঝুলিতে প্রবিষ্ট করে ছেলেটি হেসে নরম সুরে বলে,
“আপনি কি সবসময়ই রেগে থাকেন? তবে আপনার ব্রেন কিন্তু অনেক শার্প। একবার দেখেও ঠিকই চিনে ফেললেন।”
মাহিমা ভাবের সহিত বলে,
“জি পড়ালেখা বাদে সব কিছুতেই আমার ট্যালেন্ট আছে।একদিকে আপুর সবসময় ১ থেকে ১০ এর মধ্যে রোল থাকতো। আর আমার ৩০ থেকে ৪০।” বলে একটা শ্বাস ছেড়ে দিল।
ছেলেটি মাহিমার কথা শুনে কিছুটা শব্দ করেই হেসে দিল।

মাহিমা ছেলেটার হাসি দেখে ভ্রূ কুঞ্চিত করে বলে,
“এতে হাসার কি আছে? আর বলুন ডাকলেন কেন?”
এবার হাসি থামিয়ে রয়েসয়ে বলে,
“আপনার থেকে একটা থ্যাংকস প্রাপ্য মিস ইলি।”
“ইলি না ইলিজা। আর আপনি এখনো সেই প্রাচীন যুগের থ্যাংকস নিয়ে পড়ে আছেন?” বলে তীব্র শ্বাস ছেড়ে দিল। অন্যদিকে ছেলেটি কিঞ্চিৎ হেসে নতশির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।
মাহিমা এবার ঠোঁট প্রসারিত করে অকিঞ্চিতকর হেসে বলে,
“আমার মূল্যবান প্রানটি রক্ষা করিবার হেতু আপোনাকে মনের গভীর অন্তঃস্থল থেকে এক প্রাণঢালা সাধুবাদ জানাই মহামান্য জনাব। এইবার আশা করি আপুনি খুশি হইয়াছেন?”
ছেলেটি ভ্রূ জাগিয়ে হাত তালি দিতে দিতে বলে,
“কেয়াবাত কেয়াবাত! কি বলেন আপনি পড়াশোনা করেন না। এমন সুন্দর করে বাংলা তো ভাষাবিদ ড মুহম্মদ শহীদুল্লাহ শুনলেও চমকে যাবে।”

মাহিমা মুখ বাঁকিয়ে হেসে আবার গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“জি এবার আপনার পাওনা ধন্যবাদ সব শোধবোধ করে দিলাম। এবার আসি?” বলে উলটো দিকে হাঁটা ধরে।
যেতে যেতে আসমানের পানে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“হে আল্লাহ। এই বেটা যেন আর সামনে না আসে। আজকে বেত দিয়ে মেরে মা আমার পিঠের মেরুদণ্ড ভেঙে দিবে।” বলে কান্নামিশ্রিত চেহারায় রিকশা হাঁক দিল।
মাহিমার রিকশা সামনে দিকে যাচ্ছে কিন্তু ছেলেটা এক দৃষ্টিতে মাহিমার রিকশার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
“আপনার সাথে আমার হাজারবার দেখা হোক মিস ইলি। তবে এমন দুর্ঘটনার সাথে নয়।” উপরের দিকে তাকিয়ে পুনরায় সুধাময় কণ্ঠে বলে,
“হে রব! আপনিও কি চান এই ছন্নছাড়ার জীবনটা গুছিয়ে নেয়ার জন্য কেউ আসুক? নইলে এই মেয়ের সাথেই কেন বারবার আমার সাক্ষাৎ হচ্ছে। এই প্রথমবার কোনো মেয়ের প্রতি চুম্বকের মতো আকর্ষণ ফিল করছি।” বলে হেসে নিল।
ফের শান্ত গলায় বলে,

“তৃতীয় বার যদি কোনোভাবে আপনার সাথে দেখা হয়ে যায়, আর আপনার পিছু ছাড়ছি না মিস ইলি।” বলে একচিলতে হেসে নিল।
এর মধ্যেই একটা রিংটোনের শব্দ কানে এলে ফোনটা বের করে কানে নিল। ফোনটা অ্যান্ড্রয়েড হলেও মডেলটা খুব একটা দামি না, পুরোনো ব্রান্ডের। সাথে ফোনের স্ক্রিনও কিছুটা ভাঙা।
কানে নিয়েই সামনে গন্তব্যের দিকে পা বাড়িয়ে হেসে হেসে বলে,
“কিরে আশরাইফফার পোলা।”
ফোনের অন্য পাশের মানুষ খানিকটা হেসে বলে,
“ইতা কোন জাতর মাত মাতস বেটা!”

Tell me who I am part 19

“শালা আবার সিলেটি শুরু করছোস? তারপর আমি বরিশালের ভাষায় শুরু করলে তো পা’ছা উল্টাইয়া দৌড়াবি।”
“ওরে বাপ, থাক থাক। আচ্ছা শোন, হালা জিসানরে পিটাইছে সিনিয়রগুলায়।”
ছেলেটি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কিছুটা ভ্রূ কুঁচকে বলে,
“জানতাম ওর কপালে শনি আছে। একটা বলদ। দাঁড়া আসতেছি।” বলে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল।

Tell me who I am part 21