চেকমেট পর্ব ১৮

চেকমেট পর্ব ১৮
সারিকা হোসাইন

ন্যালির মুখে রূপকথা সম্বোধনের চিৎকারে কেঁপে উঠলো সারফরাজ।শক্ত সামর্থ্য পা দুটো কেমন দুর্বল শক্তিহীন হয়ে উঠলো।হৃদপিন্ডে কেউ বুঝি খামচে ধরে চূড়ান্ত ব্যাথা দিলো।থাবার ন্যয় পুরুষালি হাত দুটোও তিরতির করে কেঁপে উঠলো।কানের ভ্রম ভেবে ধীরে ধীরে রূপকথার মুখ পানে নজর বুলালো সারফরাজ।মেয়েটি ইতোমধ্যে ভয়ে চোখ বুজে রয়েছে।জ্ঞান হারিয়েছে না কি তা এখনো ঠাহর করা যাচ্ছে না।এখনো বুদ্ধিহীন মানুষের ন্যয় রূপকথা কে পাজা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারফরাজ।এদিকে ন্যালি ভয়ার্ত কন্ঠে রূপকথার গাল চাপড়ে ডেকে যাচ্ছে

“এই রূপকথা!রূপ?এই চোখ খোল।
কিন্তু সাড়াশব্দ নেই রূপকথার।এবার সারফরাজ এর উপর তেঁতে উঠলো ন্যালি।ভয়ার্ত গলা ছেড়ে ঝাঁঝালো গলায় বলল
“দুটো লিচু না হয় খেয়েছিই কি এমন কোটি টাকার লস হলো আপনার?আপনি জানেন আমরা কে?আমরা সারফরাজ এর বন্ধু।ওকে বলে আজই আপনার চাকরি ছুটিয়ে নেবো দাঁড়ান।বদমায়েশ খবিস লোক একটা।
এক দমে এতগুলো কথা বলে শ্বাস নিলো ন্যালি।এরপর আবার কথা বলার জন্য দম ধরলো।কিন্তু সারফরাজ তাকে থামিয়ে বলে উঠলো

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এ এ এই মেয়ে আপনার কি হয়?
ন্যালি চোখ উল্টে ফট করে জবাব দিলো
“আমার বোন হয়।ওর বাপ পুলিশের কমিশনার ।একবার যদি জায়গা মতো নালিশ পরে না?একদম ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করে দেবে।তখন এভাবে লুঙ্গি উঁচিয়ে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসতে আর সাহস করবেন না।
ন্যালির বলা প্রত্যেকটি কথায় সারফরাজ কেমন অবাক থেকে অবাকতর হচ্ছে।তার কাছে মনে হচ্ছে এসব স্বপ্ন।তন্দ্রা ভাব ছুটে গেলেই হয়তো এই স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটবে।
এতো সময় ধরে রূপকথার সাড়াশব্দ না পেয়ে ন্যালি এবার একটু মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল
“ওর অজ্ঞান হবার বাতিক আছে।মনে হচ্ছে জ্ঞান হারিয়েছে।ভেতরে নিয়ে চলুন।ওর রেস্ট প্রয়োজন।
যেই সারফরাজ এর ভয়ানক চোখের ইশারায় বড় বড় দুধর্ষ মানুষ পুতুলের ন্যয় নাচতে বাধ্য থাকে আজ যেনো সেই সারফরাজ ন্যালির বাধ্য গোলাম হলো।ন্যালি যেভাবে যা বললো সারফরাজ তাই করলো।আদেশ পেতেই মাথা ঝাকিয়ে নিজের বেডরুম অভিমুখে চললো।এরপর নরম বিছানায় রূপকথাকে শুইয়ে কম্পিত গলায় শুধালো
“আপনারা এই বাড়িতে এসেছেন কেনো?

ন্যালি এবার চুপ রইলো।এই লোককে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না তার।অনেক প্রশ্ন করে মানুষটা।একজন কেয়ারটেকার এর এতো কৌতূহল পছন্দ হলো না ন্যালির।তার কাছে মনে হলো লোকটা বড্ড গায়ে পরা টাইপের।তাই চুপচাপ বসে রইলো ন্যালি।কিন্তু নানান প্রশ্ন সারফরাজ এর বুকের ভেতর কঠিন ঝড় তুলেছে।মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত লাগছে।তার নিজের ও জ্ঞান খুয়া যেতে চাইছে।কমিশনার এর কথার সাথে বর্তমান চিত্রের কোনো মিল নেই।পিছনের রহস্য সারফরাজ জানে না।রূপকথা এই মেয়ে হলে তাহলে ছবির মেয়েটা কে ছিলো?আর রূপকথা তার বাড়িতেই বা কি করছে?

নানান বিচলিত প্রশ্নের ঘুরপাকে সারফরাজ এর ফর্সা মুখশ্রী বেয়ে ঘাম ঝড়লো।কেমন অসহনীয় অস্থিরতা তাকে পুরোটা গ্রাস করলো।নিজেকে বহু কষ্টে সামলে এক মগ পানি এনে কম্পিত হাতে ছিটা দিলো রূপকথার চোখে মুখে।কিন্তু কোনো ফল হলো না।গভীর নিদ্রায় যেনো ডুবে আছে রূপকথা।এবার রূপকথার মায়াবী কোমল চেহারায় দৃষ্টি তাক করলো সারফরাজ।উপরের ঠোঁটের কোণের তিলটা আরো স্পষ্ট হয়েছে ছোট বেলার তুলনায়।চোখের ঘন পাপড়ি গুলো আরেকটু বেঁকে গিয়েছে।কমলা রঙা ঠোঁট আর বোচা নাক।গ্রীবাদেশে ছোট একটা জন্মদাগ।এইতো রূপকথা!একদম ছোট বেলার সাথে হুবুহু মিলে গিয়েছে।তাহলে কমিশনার তাকে মিথ্যে ছবি দেখালো কেনো?
হঠাতই রূপকথার পায়ের দিকে নজর গেলো সারফরাজ এর।তার দেয়া জুতো জুড়া রূপকথার সফেদ মোহনীয় পায়ে বেশ মানিয়েছে।
“এতো বড় হয়ে গেছে সেই ছোট রূপকথা?

সারফরাজ এর হাসি পেলো।আনন্দের হাসি।অল্প হেসেও ফেললো।সেই হাসি নজরে আটকালো ন্যালির।তার কাছে মনে হলো মানুষটির চরিত্রগত সমস্যা আছে।নইলে একটা জ্ঞান হীন মেয়ের দিকে এভাবে লুলুপ দৃষ্টি কোনো সভ্য মানুষ দিতেই পারবে না।আগত ঝামেলা আঁচ করে ন্যালি আর থাকতে চাইলো না এই বাড়িতে।হুট করেই অজানা ভয় এসে গ্রাস করলো ন্যালির মনে।
“লোকটা যদি আমাদের কিছু করে দেয়?উনার সাথে ভেতরে আসা একদম উচিত হয়নি।
মনে মনে কথাটি ভেবে এখান থেকে পালানোর পথ খুজলো ন্যালি।এরপর বুদ্ধি খাটিয়ে বলে উঠলো
“হসপিটালে নিতে হবে ওকে।ডক্টর ছাড়া ওর জ্ঞান ফেরানো সম্ভব না।প্যানিক এট্যাক এসেছে বুঝলেন?
ন্যালির কথায় কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো সারফরাজ।ন্যালি তাৎক্ষণিক ফাঁকা ঢোক গিলে বললো
“ওঃ আপনি তো আবার এসব প্যানিক ফ্যানিক বুঝবেন না।এসব ডাক্তারি ভাষা।আপনি সরে দাঁড়ান দূরে।আমি ওকে নিয়ে চলে যাবো।

কথাটি বলেই ফোন বের করে একটা উবার বুক করলো ন্যালি।এরপর অপেক্ষা করতে লাগলো।এদিকে সারফরাজ ভেতরের জন্ত্রনয় খালি ছটফট করে উঠলো।ব্যাথায় মুখ ফুটে কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারলো না।সে আগ বাড়িয়ে নিজের পরিচয় টুকুও দিলো না।আগে কমিশনার এর বিষয় তাকে জানতে হবে।এরপর বাকি কাজ সারফরাজ নিজেই করবে।যদি কমিশনার তার সাথে বিন্দুমাত্র চালাকি করে তবে সারফরাজ কমিশনার সুফিয়ান চৌধুরী কে উচিত শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেবে।সারফরাজ তো কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে রূপকথার পানে হাত বাড়ায়নি।শুধু মাঝে মাঝে সুফিয়ান চৌধুরীর থেকে রূপকথার খবর জানতে চেয়েছে।কোনোদিন রূপকথার একটা ছবিও দেখতে চায়নি সে।তবে সুফিয়ান চৌধুরী এই লুকোচুরি কেনো খেলেছে তার সাথে?কি উদ্দেশ্য ছিলো তার?
চিন্তার সমীকরণ আর মিলিয়ে সমাধান করতে পারলো না সারফরাজ।নিজেকে যথেষ্ট সামলে সারফরাজ বললো
“বলছিলাম সারফরাজ তো এবাড়িতে থাকে না।আপনারা কেনো এসেছেন জানলে আমি সারফরাজ কে বলতে পারতাম।

এবার টনক নড়লো ন্যালির।
“এই লোকের সাথে সারফরাজ এর যোগাযোগ আছে?
চকচকে চোখে উচ্ছসিত হয়ে ন্যালি বললো
“আপনি জানেন সে কোথায় আছে?
সারফরাজ মাথা ঝাঁকালো।তা দেখে ন্যালি বললো
“তাকে বলবেন রূপকথা সারফরাজ আর তার মা কে খুঁজতে এখানে এসেছিলো।আর…
আরো কিছু বলতে চাইলো ন্যালি।কিন্তু তার আগেই উবারের ড্রাইভার কল করলো।ন্যালি তার অসমাপ্ত কথা শেষ করতে পারল না।শুধু অল্প রিকোয়েস্ট করে বললো
“ওকে ধরে একটু গাড়িতে তুলে দিন।

কথাটি বলেই নিজেদের ব্যাগ গুছাতে উদ্দত হলো।সারফরাজ রূপকথাকে কোলে তুলতেই হাতের ধাক্কা লেগে বালিশ সরে গেলো।মুহূর্তেই বালিশের তলায় চকচকে কালো একটি বন্দুক ন্যালির নজরে পরলো।চতুর ন্যালি তাৎক্ষণিক দৃষ্টি সরিয়ে না দেখার ভান করে ভয়ে আর অসাবধানে রূপকথার ব্যাগ ফেলেই বেরিয়ে এলো।পেছন পেছন এলো সারফরাজ।এখনো নিথর হয়ে রূপকথা সারফরাজ এর বাহুতে লেপ্টে আছে।সারফরাজ এর ইচ্ছে হচ্ছে রূপকথা কে যেতে না দিতে।কিন্তু কোন অধিকারে আটকে রাখবে?সে নিজেই তো অন্য কারোর কাছে মেয়েটিকে সপে দিয়েছিলো চিরতরে।যাবার বেলায় তো কোনো দাবি পর্যন্ত রাখেনি।তবে এখন কেন এতো ব্যাথার ভার হৃদয় জুড়ে?

অচেতন রূপকথাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে সারফরাজ ইতস্তত করে শুধালো
“রূপকথা কোন মেডিকেল এ পড়ে?
রূপকথার মেডিকেলে পড়ার কথা শুনে ন্যালি কপাল কুঁচকে শুধালো
“আপনি কি করে জানলেন ও মেডিকেল এ পড়ে?
ন্যালির প্রশ্নে থতমত খেলো সারফরাজ।কোনো উত্তর করার আগেই ন্যালি বলে উঠলো
“ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
আর কথা হলো না।গাড়ি ছেড়ে দিলো।অসহায় সারফরাজ শুধু তাদের যাত্রা পানে অসহায় নেত্রে তাকিয়ে রইলো।গাড়ি খানা দৃষ্টি সীমানা পাড় হতেই সারফরাজ যেনো সম্বিৎ ফিরে পেলো।সে নিজের অসামান্য ক্রোধ সংবরন করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো
“হুয়াই মিস্টার সুফিয়ান চৌধুরী?

“,এতো কথা আমি বুঝতে চাইনা ফারুক সাহেব।আপনি আমাকে মানুষের ফ্রেশ অর্গান সাপ্লাই দেবেন এটাই শেষ কথা।জানেন তো বিদেশে এটার অনেক দাম!
ভারী গলায় কথাটি বলে হাসলো যুবক।এতো সুদর্শন পুরুষের এমন বিশ্ৰী রূপ দেখে মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসলো হসপিটাল ডিন ফারুক ওসমান।কিন্তু মুখে বিন্দুমাত্র ভাপ পর্যন্ত প্রকাশ করলেন না।এতো কিছু ভেবে তার কি কাজ?একাউন্টে মোটা টাকা ঢুকলেই হলো তার।এই পৃথিবীতে টাকার চাইতে বড় আর কিছু আছে নাকি?
হুইস্কির গ্লাসে আরেক টুকরো বরফ ঢেলে দুই আঙুলে নাড়তে নাড়তে ফারুক ওসমান বললেন
“এবার কিন্তু আমার পেমেন্ট একটু বাড়াতে হবে চৌধুরী।নইলে এতো রিস্ক নিয়ে আমার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব হবে না।একবার ধরা পড়লেই সমস্ত খেল খতম।

ফারুক ওসমান এর কথায় ভয়ানক শব্দে হাসলো যুবক।এরপর একটা ব্ল্যাংক চেক বের করে বলে উঠলো
“বসিয়ে নিন নিজ খুশিমতো টাকার এমাউন্ট।আপনি আমাকে দেখলে তবেই না আমি আপনাকে দেখবো।
খালি চেক দেখে চকচক করে উঠলো ফারুক ওসমানের চোখ দুটো।সে খপ করে চেক টা দুই হাতে ধরে নাকের কাছে এনে লম্বা শ্বাস টানলো।এরপর বললো
“আহ টাকার সুবাস ফুলের সুবাস কেউ হার মানাবে মিস্টার চৌধুরী।
ফারুক ওসমানের এসব ছোটলকি নাটক দেখতে ইচ্ছে করলো না যুবকের।সে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজলো।এরপর বাঁকা হেসে বলে উঠলো
“চেষ্টা করবেন পাঁচ থেকে দশ বছরের বাচ্চার অর্গান গুলো আমাকে পাঠাতে।দরকার পড়লে সুস্থ বাচ্চা মে*-রে দিন।আজকাল কার বাবা মা রা বাচ্চার পেট ব্যাথা হলেও দৌড়ে হসপিটালে নিয়ে আসে।আশা করি বাকি টুকু খুলে আপনাকে বোঝাতে হবে না।

ফারুক ওসমান একটু দমে গিয়ে বলে উঠলো
“তাজা প্রাণ কিভাবে মারবো?
“তাহলে আপনাকেই মেরে দিই।কি বলুন?
সামনে দাঁড়ানো যুবকের সুন্দর চেহারা নিমিষেই কেমন ভয়ানক হয়ে উঠলো।তা দেখে ফারুক ওসমানের কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝড়লো।ঝটপট টিস্যু দিয়ে সেই ঘাম মুছে উঠে দাঁড়িয়ে ফারুক ওসমান বলে উঠলো
“আপনি যা চাইবেন তাই হবে মিস্টার চৌধুরী।আসছি।
কথাটি বলেই উঠে দাঁড়ালো ফারুক ওসমান।আর এক মুহূর্ত কাল বিলম্ব করলো না সে।দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো মানুষ নামক পশু তুল্য ব্যাক্তির সামনে থেকে।
ফারুক ওসমান চলে যেতেই যুবক ক্রুর হেসে বলে উঠলো
“একটা রাজ্যে একটা রাজাই থাকে সারফরাজ।আর সেই রাজা আমিই হবো।তোকে তো আমি শুয়োরের মতো মারবো।জাস্ট ওয়াচ এন্ড ওয়েট।

রূপকথা আর ন্যালিকে গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজের ঘরে এসে ধপ করে শুয়ে পড়লো সারফরাজ।তার সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে।কোথাও কিছু একটা তো আছে।কিন্তু কি সেটা?হঠাৎ বিছানার কোনে একটা ব্যাগ দেখে নজর স্থির হয় সারফরাজ এর।চট করে উঠে গিয়ে সেই ব্যাগপ্যাক উল্টে পাল্টে দেখে সারফরাজ।এরপর ইতস্তত করে খুলে ফেলে ব্যাগের চেইন।ভেতরে একটা মোটা ডায়েরি।আর দুটো চকলেট।ডায়েরি তে কি আছে তা দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে খুলতেই বেরিয়ে আসে সারফরাজ এর পরিবারের সেই ছবিটি।ছবিটি দেখে সারফরাজ এর হৃদয় ধক করে উঠে।এরপর ধীরে ধীরে পাতা উল্টায় সারফরাজ।
সাল 2016

“তুমি কতো দূরে ঘুরতে চলে গিয়েছো সারফরাজ?
হাজারো বানান ভুলে গোটা গোটা ছোট বাচ্চার হাতের লিখা।লিখাটা পড়ে সারফরাজ এর হৃদয় মুষড়ে উঠলো।
এরপর ধীরে ধীরে পড়তে লাগলো একের পর এক পৃষ্ঠা।
“স্কুলে একটা বাচ্চার সাথে খুব ঝগড়া হয়েছে আমার।ও আমার বিনুনিতে টান দিয়ে আমায় ব্যাথা দিয়েছে।আমি ওকে বলেছি সারফরাজ এসে তোর সব চুল তুলে নেবে দেখিস।তার পর কি করেছি জানো?থুথু দিয়েছি।আমি জিতেছি তাই না সারফরাজ?
লেখাটি পড়ে ফিক করে হেসে দিলো সারফরাজ।হাসি আর কান্নার সংমিশ্রনে খুব সুন্দর এক অনুভূতি হলো এই মুহূর্তে সারফরাজ এর।উল্টালো পরে পাতা
“তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না সারফরাজ।আমার একটা বন্ধুও তোমার মতো নয়।সবাই পঁচা।তুমি কবে ফিরবে?আমার কান্না পাচ্ছে।তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে।পেটে অনেক কথা জমে আছে।পেট ফেটে মরে যাই আমি?

গড়িয়ে পরা চোখের জল মুছে সারফরাজ উত্তর করলো
“তুমি মরবে না রূপকথা।তুমি মরে গেলে আমার মন ভালো করবে কে?
“একটা গান শিখেছি সারফরাজ।ভালো বাসবো বাসব রে বন্ধু তোমায় যতনে।।তুমি ফিরে এলে তোমাকে শুনাবো কেমন?
“আজ আমার পেটে ব্যাথা হয়েছিলো সারফরাজ।চকলেট খেলে বোধ হয় ভালো হয়ে যেতো।নতুন বাবা চকলেট দেয় না।বলে দাঁতে পোকা হবে।
“আমি অনেক বড় হয়ে গেছি সারফরাজ।প্রাইমারির গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক এ পা রেখেছি।
(সাল―২০২২)
“এসএসসি তে খুব ভালো রেজাল্ট করেছি আমি সারফরাজ।ইচ্ছে আছে ডাক্তার হবার।তুমি কিন্তু আমার জন্য অবশ্যই দোয়া করবে।
(সাল―২০২৫)
আমার ঢাকা মেডিকেল কলেজ এ চান্স হয়েছে সারফরাজ।ডাক্তার বোধ হয় হয়েই গেলাম।প্রথম অপারেশন কিন্তু তোমার টাই করবো ঠিক আছে?
ধীরে ধীরে এগারো টি বছরের পাতা শেষ করে লাস্ট পৃষ্ঠায় এসে পৌছালো সারফরাজ।
“মাই সেভিয়র সারফরাজ।

অনেক গুলো বছর কেটে গেছে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই ,সাক্ষাৎ নেই।নেই কোনো কথা।তুমি আমাকে বেড়াতে যাবার কথা বলে কত দূরে চলে গেছো জানিনা।হয়তো পৃথিবীর শেষ প্রান্তে।আমি এখনো তোমার ফিরে আসার প্রতীক্ষায় দিন গুনি।আমার বিশ্বাস পৃথিবী চষে বেড়িয়ে একদিন ঠিক তুমি আমার সামনে এসে দাঁড়াবে।সেদিনের ছোট রূপকথা আজ অষ্টাদশী।হয়তো তুমিও অনেক বড় হয়ে গেছো।তোমাকে দেখলে চিনতে পারবো কি না জানিনা।কিন্তু তোমার ঐ ভয়ানক অদ্ভুত সুন্দর চোখ আমি আজো ভুলিনি।ওই চোখ দিয়ে আমি ঠিক তোমায় খুঁজে নেবো।যাদের কাছে তুমি আমায় রেখে গেছো তারা সত্যিই অমায়িক।এমন বাবা মা পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।

চেকমেট পর্ব ১৭

আমার ভাগ্যের চাকা তুমি ঘুরিয়েছ।নয়তো আমার স্থান হতো ওই দূরের আকাশের এক কোণে।তুমি আমার খুব কাছের কেউ ছিলে।তোমার সাথে মন ভরে কথা বলতে ইচ্ছে করে।তুমি নেই মনে হয় কি যেন নেই।কোথাও একটা বিশাল শূন্যতা সারাক্ষন তাড়া করে বেড়ায় আমাকে।তোমার আর আমার যেই সম্পর্ক তার আক্ষরিক কোনো নাম নেই।শুধু বলবো আমার আত্মার আত্মীয় তুমি।তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।শুধু একটাই প্রশ্ন―――
কবে শেষ হবে তোমার এই বেড়ানো?আমাকে সঙ্গে নিলে খুব ঝামেলা হতো বুঝি?

চেকমেট পর্ব ১৯