এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৬
আদ্রিতা জান্নাত অরিন
নোটন খাবার খেতে থাকে আর সমুদ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কোনো জানি সমুদ্রের করা সব নাটক নোটনের কাছে সত্যি মনে হয়। নোটন একটু রেস্ট নিতে থাকে সমুদ্র খাবারের প্লেট নিচে রেখে আসে।নোটন বেশ অনেক সময় ঘুমিয়ে ছিলো যার কারণে তার এখন ঘুম আসছে না। সমুদ্র রুমে আসে আর বলে –
“- নোটন আপনি তাহলে একটু রেস্ট নেন? প্রায় রাত হয়ে গেছে আমি গিয়ে অফিসের সকল কলিগের সাথে কথা বলে আসি। সবার কোনো সমস্যা হচ্ছে না কি?
” হুম সমস্যা নাই সমুদ্র আপনি যান “।
সমুদ্র রুম থেকে বের হয়ে যায় নোটন বিছানায় শুয়ে থাকে তবে চোখে কোনো ঘুম নাই। হঠাৎ করে নোটনের ফোনে একজন কল করে সেটা তার বাবা নোটন ফোন রিসিভ করে বলে –
“- হুম আব্বু কি অবস্থা তোমার? সবাই কি ঠিক আছে?
“- এখানে সবাই ঠিক আছে কিন্তু নোটন তোমার শরীর কি ঠিক আছে? শুনলাম তোমার দিকে কেউ পাথর ছুঁড়ে মেরেছে তুমি কি ঠিক আছো নোটন? মাথায় কি বেশি ব্যাথা লেগেছে? ডক্টর দেখিয়েছো কি?
নোটন তার বাবার চিন্তা করা দেখে হাসে কারণ একমাত্র তার বাবা এখন তার জন্য মন থেকে টেনশন করছে। নোটন বলে –
“- আব্বু টেনশন করবে না আমি ঠিক আছি মাথায় বেশি ব্যাথা পায় নাই ডক্টর দেখ ঔষধ দিয়েছে। আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও আপু কি করছে ডক্টর কি নতুন আপডেট দিয়েছে কিছু?
নোটনের বাবা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার বড় মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে যে এখন একটা পুতুল নিয়ে খেলা করছে। বাবা বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- নোটন তোর আপু খেলছে এখন আর ডক্টর কি নতুন বলবে প্রতিদিন যা বলে তাই বলেছে। আচ্ছা বলতো নোটন আমাদের সাথে কোনো এইরকম হলো আমার সুখী পরিবার ওই চৌধুরী পরিবার শেষ করে দিলো “।
“- আব্বু আমাদের পরিবারের সাথে যা হয়েছে তার শাস্তি চৌধুরী পরিবারকে আমি দিবো. কিন্তু এখানে সব দোষ তাদের না ওইদিন রাতে যা হয়েছে তার অপরাধী হলেন অন্য কেউ। যে আজকে আমাকে নিজের রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলতে চেয়ছে। তুমি চিন্তা করো না আব্বু এই নোটন সবার কর্মের যোগ্য শাস্তি সবাইকে দিবে “।
“- হুম সেটা আমি জানি আমার মেয়ে কখনো হেরে যেতে পারে না। একটা কথা মনে রাখবি নোটন জীবনে জিততে গেলে সবসময় মাথা ঠান্ডা রেখে ধৈর্য ধরে খেলতে হয়।
নোটন তার বাবার সাথে কথা বলে অনেক সময় সমুদ্র নিচে গিয়ে অফিসের কলিগদের সাথে কথা বলতে থাকে। সবার সাথে সমুদ্রের বেশ ভালো বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে উঠছে যার জন্য তাদের সাথে আড্ডা বেশ জমে সমুদ্রের। রাত হয়ে যায় নোটন এখনো ঘরে বসে আছে ল্যাপট দিয়ে অফিসের জরুরি কাজ শেষ করে ফিরে। তবে রুমে অনেক সময় ধরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না নোটনের।
নোটনের ল্যাপটপ রেখে বিছানা থেকে নেমে যখন বাহিরে যেতে চাই তখন সমুদ্র আসে রুমে। সমুদ্র বলে –
“- কি হয়েছে নোটন কোনো সমস্যা? বিছানা থেকে নিচে নেমে কোথায় যাবেন?
“- না আসলে ঘরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না।বাহিরে সুন্দর চাঁদ উঠেছে যা দেখতে ইচ্ছে করেছে তার জন্য ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে “।
“- এখন ছাদে যাবেন আপনি নোটন শরীরের কি অবস্থা আপনার সেটা কি জানা নাই আপনার। ছাদে সিঁড়ি বেয়ে উঠার কারণে যদি মাথার ক্ষত হয়ে যাওয়া জায়গায় ব্যাথা শুরু হয় তখন কি হবে। ডক্টর বলেছে আপনাকে সম্পূর্ণ রেস্ট নিতে না হলে সমস্যা হতে পারে “।
“- কিন্তু সমুদ্র অনেক সময় ধরে বসে থাকতে থাকতে বোর হয়ে যাচ্ছি আমি। আর ভালো লাগছে না আমার “।
সমুদ্রের কথা শুনে নোটন বিছানায় বসে যায় তবে মন খারাপ করে। সমুদ্র বিষয়টা খেয়াল করে তার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠে সে নোটনের কাছে গিয়ে ওকে বিছানা থেকে হঠাৎ করে কোলে তুলে নেয়। সমুদ্র এইরকম কাণ্ডে নোটন অবাক হয়ে যায় আর ভয় পায় সমুদ্রের শার্ট আঁকড়ে ধরে। নোটন বলে –
“- সমুদ্র কি করছেন এইসব হঠাৎ করে কোলে তুলে নিলেন কোনো? সমুদ্র নামান আমাকে পড়ে যাবো?
“- নোটন টেনশন করবেন না এই সমুদ্র থাকতে নোটনের কখনো কোনো ক্ষতি হবে না। চলুন ছাদে গিয়ে চন্দ্রবিলাস করে আসি তাহলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে “।
সমুদ্র কথাটা বলে নোটনকে কোলে তুলে রুম থেকে বের হয়ে যায়। অফিসের সবাই নিচে বসে গল্প করছিলো সমুদ্রকে সিঁড়ি বেয়ে নোটকে কোলে করে নিতে দেখে সবাই হাসতে দেখে। নোটন বিষয়টা বুঝতে পারে নোটন বলে –
“- সমুদ্র কি করছেন সবাই দেখুন আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে? কি মনে করবে সবাই? নিচে নামান আমাকে হেঁটে যেতে পারব আমি “।
নোটনের কথা শুনে সমুদ্র সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে নোটন আর সমুদ্রকে। সমুদ্র বলে
“- নোটন সবাই করে মনে করবে তাতে আমার কোনো কিছু যায় আসে না কারণ আমার কাছে আপনার সুস্থ থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনি আমার বিবাহিত বউ নিজের বউকে কোলে তুলার অধিকার আমার আছে। সেটা নিয়ে কে কি বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না “।
সমুদ্র কথা শুনে নোটনের মুখে হাসি ফুটে উঠে কারণ আজ অবধি কখনো সমুদ্র তাকে বউ হিসাবে মানে নাই বা বলে নাই। সমুদ্রের প্রতিটা যত্ন কেয়ার ভালোবাসা নোটনের কাছে ভালো লাগছে যদি ও সে তার প্রতিশোধ ভুলে কখনো যাবে না। আর সমুদ্র যা ভুল করেছে তার শাস্তি ওকে দিবে কিন্ত সমুদ্রকে আরেকটা সুযোগ দেওয়া কি নোটনের ঠিক হবে?
নোটন যখন সব কথা ভাবতে থাকে এতোখনে সমুদ্র সিঁড়ি বেয়ে ছাদে পৌঁছে গেছে। সমুদ্র নোটনকে নিচেঁ নামিয়ে দেয় এরপর তারা একটা চেয়ারে বসে চাঁদ দেখছে। নোটনের সাথে প্রতিদিন চাঁদ দেখতে দেখতে সমুদ্র ও এখন চাঁদের মায়ায় পড়ে গেছে। সমুদ্র বলে –
‘- কেমন লাগছে এখানে এসে? এখন মন ভালো হয়েছে আপনার নোটন?
নোটন সমুদ্রের তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয় আর বলে –
“- হুম অনেক ভালো লাগছে ধন্যবাদ আপনাকে সমুদ্র। তবে একটা কথা বলুন হঠাৎ করে এই নোটনের প্রতি এতো মায়া কি করে তৈরি হয়ে গেলো আপনার? না সম্পত্তির জন্য ভালোবাসার নাটক করছেন সমুদ্র?
নোটনের কথাটা শুনে সমুদ্রের খারাপ লাগে না কারণ হঠাৎ করে তার এমন পরিবর্তন হয়ে যাওয়া সত্যি অবাক করা বিষয়। নোটনের মনে সন্দেহের জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক বিষয় সমুদ্র বলে –
“- নোটন নাটক করছি না সত্যি সবকিছু মন থেকে করছি জানি না আমি। তবে মনে আছে নোটন আপনি একবার বলে ছিলেন আমাদের বিয়েকে একবার সুযোগ দিতে রাইমার জায়গা আপনাকে দিতে কেয়ার করতে। অনেক ভেবে দেখলাম আজকে আপনার সাথে যা হচ্ছে সবকিছুর জন্য দায়ী আমি। যদি বিয়ের পর বিদেশে চলে না গিয়ে দেশে থেকে আপনার আর আমার বিয়েকে একটা সুযোগ তখন দিতে দেখতাম। তাহলে হয়তো আজকে এমন পরিস্থিতি আসতো না?
“- তাহলে কি আপনি চান আবার আমাদের সম্পর্ককে সুযোগ দিতে? সেটা আর সম্ভব না সমুদ্র কারণ এখন আপনার আর আমার মধ্যে শুধু প্রতিশোধ আর ঘৃণা ছাড়া আর কোনো কিছু হতে পারে না “।
“- হুম সেটা আমি জানি তবে চেষ্টা করলে সমস্যা কোথায়। এতোদিন আপনি চেষ্টা করেছেন আমাদের বিয়েটা বাচাঁতে এখন আমি করতে চাই। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা না হয় দেখা যাবে?
সমুদ্রের কথা শুনে নোটন বলে –
“- তাহলে রাইমার প্রতি আপনার ফিলিংসের কি হবে? ও আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে ভবিষ্যতে যদি কখনো ফিরে আসে তখন কি করবেন। সমুদ্র চৌধুরী শুধু তার রাইমাকে ভালোবাসে?
এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৫
“- ভালোবাসা কথাটা বড় অদ্ভুত কখন কার প্রতি মনে মায়া তৈরি করে ফেলে সেটা কেউ জানে না। আর রাইমার কথা যদি বলেন তাহলে বলবো জীবনে ভুল মানুষটা যাওয়ার পর সঠিক মানুষ আসে। এই চৌধুরী চৌধুরী জীবনে রাইমার জন্য ভালোবাসা মায়া মুগ্ধতা সব অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
ইন্টারে পড়ি আমি কলেজ খোলা তাই প্রতিদিন কলেজ করতে হয় আমাকে।যার জন্য গল্প দিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে সরি সবাইকে