Tell me who I am part 26
আয়সা ইসলাম মনি
আবার সেই মিহিসুরের আওয়াজ শুনে ইলিজা পিছন ঘুরে তাকাল। কাব্য সামান্য হাসি দিয়ে বলল, “আল্লাহ হাফেজ। সাবধানে যাবেন।”
এই প্রেমময় কথাগুলো শোনার পর কিছুক্ষণ অস্থিরতায় আটকে গেল ইলিজা, কিন্তু তার অসুবিধা দ্রুত কাটিয়ে উঠে স্নেহাকে বলল, “চল চল।”
স্নেহা ও ইলিজা একসঙ্গে সামনে হাঁটতে শুরু করল।
স্নেহা আফসোসের সুরে বলল, “দোস্ত, তুই তো জানিসই, আমি এলভিন শুভ্রের কত বড় ফ্যান। একটা অটোগ্রাফ নেই। চল, প্লিজ মাহিমা।”
ইলিজা ভ্রূ কুঁচকে বিরক্তির সুরে বলল, “মাথা গেছে তোর? দেখছিস, কত মানুষ! আজেবাজে কিছু ভেবে বসবে। চল তাড়াতাড়ি।”
কিন্তু কাব্য ও শুভ্র দুজনেই ইলিজার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
কাব্য মনে মনে শুধালো,
“আমি সেই ফাংশন হতে চাই, যা তোমার প্রতিটি ইনপুটে রান করবে।
আমি সেই কোড হতে চাই, যা তোমার প্রতিটি কম্পাইলে এক্সিকিউট হবে।
আমি সেই ভেরিয়েবল হতে চাই, যার মান তোমার মেমোরিতে সেভ হয়ে থাকবে।
আমি শুধু তোমাকেই চাই, মিস ইলি। এটি আমার সিএসই-এর ভাষা, যা আপনি অর্ধেক বুঝবেন, বাকি অংশটা বুঝবেনই না। (ক্ষণকাল থেমে)
আমি বাতাস হতে চাই, যেন তোমার প্রতিটি স্পর্শে মিশে যেতে পারি।
আমি সেই পথ হতে চাই, যেখানে তোমার পায়ের ছাপ আমার হৃদয়ের গভীরে চিরকাল রয়ে যাবে।
আমি অক্সিজেন হতে চাই, যেন তোমার নিঃশ্বাসের প্রতিটি শব্দ আমার আত্মায় সুরের মতো গুণগুণ করে।
আমি শুধু তোমাকেই চাই, মিস ইলি। এবার নিশ্চয়ই বুঝবেন। কিন্তু কই, আপনার থেকে তো কোনো রিপ্লাই আসছে না। আপনি কি আমার অন্তস্তলের কথা শুনতে পাচ্ছেন না, ইলিজা?”
এমন সময় শুভ্র হঠাৎ বলে উঠল, “ঐ হালিরে আমার ভাল্লাগছে রে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এমন অদ্ভুত উক্তি কাব্যের ভাবনাকে ভেঙে দিল।
এদিকে ইলিজা ও স্নেহা গাড়িতে উঠে গেছে। গাড়িটি তার নিজস্ব গতিতে চলতে শুরু করেছে। স্নেহা বলে উঠল, “ভাইয়াটা কিন্তু হ্যান্ডসাম আছে, তাই না বল?”
ইলিজা ভ্রূ কুঁচকে বলল, “কে?”
“আরে, এলভিন শুভ্র তো সুন্দরই। তার পাশে যে তোকে অনেক সুন্দর করে ডাকল, সে-ও কিন্তু সেই লেভেলের হ্যান্ডসাম। তোর সাথে কিন্তু সেই মানাবে। আচ্ছা, ওনার নাম কি রে?”
ইলিজা স্নেহার মাথায় একটা গাঁট্টা মেরে বলল, “তোকে এখন এখানেই নামিয়ে দিব। বেয়াদব কোথাকার। আসছে! আমার কোরিয়ান হিরো কোথায়, আর উনি কোথায়?”
স্নেহা মাথা নেড়ে বলল, “হয়েছে, রাখ তোর কোরিয়ান হিরো। ভাইয়াও হিরোর থেকে কম নাকি? তবেএএএ…” এটুকু বলে মৃদু হাসতে থাকে।
মাহিমা অবিচলিত কণ্ঠে বলে, “তবে?”
“আমার না, এলভিন শুভ্রকে অস্থির লাগে রে। আমি আজকে দেখে কতক্ষণ যে তাকিয়ে ছিলাম। আচ্ছা, তুই কি ওনার নাম্বার জোগাড় করে দিবি মাম্মা? প্লিজ, প্লিজ মাহিমা।”
ইলিজা কপাল কুঁচকে বিরক্তির ভাব নিয়ে বলে, “আঙ্কেল, দাঁড়ান। এটাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিন তো। একদম দোলা মোচ করে ঐ পাশের ডাস্টবিনটায় ফেলবেণ।”
এটা শুনে স্নেহা অসহায়ের মতো ইলিজার পানে তাকিয়ে রইল।
এদিকে এমন উক্তি শুনে কাব্য রাগ দেখিয়ে বলে, “কথাটা কাকে বললি? ইলিজাকে নাকি পাশের মেয়েটাকে?”
“সে কথা রাখ। আগে ক তুই কি ইলিজার লগে টাংকি মারোছ?”
কাব্য চোখ উল্টে ভ্রূ কুঁচকে বলে, “হারা’মজাদা, কি কইলি তুই?”
“আরে, বুঝোস নাই। আই মিন, তুই কি লাইন মারোছ?”
এবারও কাব্য কটমট করে তাকিয়ে রইল।
“প্রেম করিস কিনা, এইডা ক?”
কাব্য চেতেমেতে আগুন হয়ে জুতা খুলে শুভ্রকে মারতে যাবে।
তখনি শুভ্র কাব্যের পিছন দিকে আঙুল দিয়ে সম্বোধন করে বলে, “আরে, ক্যালিস্তা (অতুলনীয় সুন্দরী) ইলিজা!”
কাব্য হঠাৎই লজ্জায় পড়ে যায়। এই অর্থে যে, ইলিজার সাথে আবারও বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো। মুখে অস্বস্তির ছাপ নিয়ে সে দ্রুত পিছনে ফিরল, কিন্তু দেখল আশেপাশে কেউ নেই। অর্থাৎ শুভ্র মিথ্যা বলেই নিজের গা বাঁচিয়েছে, তা বুঝতে কাব্যের বেশি সময় লাগল না। অথচ দূরে এক গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শুভ্র পুরো ঘটনাটি দেখে, কাব্যের বিব্রতকর অবস্থা বুঝে হো হো করে হাসতে লাগল।
কাব্য জুতো নামিয়ে পায়ে পড়ে ধীরে ধীরে হাসতে হাসতে বলে, “তুই বেটা…”
“কেমন ঘোল দিলাম বন্ধু?”
কাব্য হেসে বলে, “চল সামনে।”
“আমার গাড়ি আছে তো। গাড়িতেই যাই চল।”
কাব্য মন বেজার করে বলে, “তোকে না বললাম, আমাকে গাড়িঘোড়ার কথা বলবি না। হাঁটতে না পারলে তুই যা তোর গাড়িতে। আমি হেঁটেই যাব।”
“ওরে মামা চেতিস না। চল হেঁটেই যাব।”
এভাবে তারা গাছের ছায়ায় হাঁটা শুরু করে, আর কথার স্রোতে বন্ধুত্বের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে।
শুভ্র সন্দেহের আভাস নিয়ে বলল, “এবার বল, তোর সাথে ইলিজার সত্যিই কোনো সম্পর্ক নেই?”
কাব্য অসন্তোষী কণ্ঠে জবাব দিল, “ফাজলামো করিস না তো।”
“আচ্ছা মামা, মাইয়া গো পটানো যায় কেমনে?”
কাব্য তার দিকে চেয়ে হাসল।
“ক্যান, কোনো মেয়েকে ভালো লাগছে নাকি?”
“শুধু ভালো লাগে না ভাই, প্রেমে ডুব দিয়েছি আমি।”
কাব্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি কস বেটা? কোন মেয়ে?”
“কইতাছি খাড়া। আগে ক মাইয়াগো প্রোপোজ করমু কেমনে?”
কাব্য হালকা ভ্রূ কুঁচকে বলল, “তুই নাম বলবি কি না বল?”
শুভ্র দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলল, “ইলিজা।”
কথাটা শোনামাত্রই কাব্যের মুখ শুকিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তার চাহনিতে গভীর দুঃখের ছায়া ফুটে উঠলো। জীবনে প্রথম যে নারীকে নিয়ে একসাথে পথচলার স্বপ্ন দেখেছিল, যে নারীর জন্য অজান্তে প্রতিটি ধাপে স্বপ্নের বুনন করেছিল, সেই প্রিয় মানুষটিই যে তার অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ভালোবাসার পাত্রী, এ সত্য কোনোভাবেই তার মনের গভীরে মানিয়ে নিতে পারল না। হৃদয়ের অন্তঃস্থল মুহূর্তেই মোচড় দিয়ে উঠে, ব্যথার ভারে ভারাক্রান্ত হলো।
কাব্য ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে, “তু.. তুই তো ওকে ঠিকভাবে চিনিসও না। এর মধ্যেই?”
শুভ্র হাসতে হাসতে বলে, “ওরে আমার চিনা লাগবে না। আমার বাপের টাকার তো অভাব পড়ে নাই। আমিও কম টাকা কামাই না। যদিও বুঝি, ক্যালিস্তা ইলিজা ভালো ঘরেরই মাইয়া। তাছাড়া, ও যদি রাস্তার মাইয়াও হইতো তাও ওরে আমি বিয়া করতামই করতাম।”
এ কথা শুনে কাব্য নীরব থাকে। কথাগুলো তার ভেতরে অসহনীয় যন্ত্রণা তৈরি করলেও, বন্ধুর সামনে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে নিজেকে ছোট করতে চায় না। কাব্য বরাবরই আত্মমর্যাদাশীল, নিজের সম্মানের ব্যাপারে সংবেদনশীল। অভাব বা কষ্টে থাকলেও কখনো কারো কাছে সাহায্য চায়নি, ধার চাওয়ার প্রশ্ন তো ওঠেই না। সেই জেদ আর আত্মসম্মানের কারণেই আজও সে নিজের হৃদয়ের গভীর ক্ষত কাউকে জানাতে প্রস্তুত নয়।
শুভ্র হেসে আবার বলে, “ক না মামা, কেমনে ওরে প্রোপোজাল দেওয়া যায়?”
কাব্য আস্তে করে বলে, “তুই কি সত্যিই ওকে ভালোবাসিস নাকি জাস্ট ভালো লাগছে এই পর্যন্তই।”
“ভাই, এত কিছু জানি না। তবে ওকে ফার্স্ট দেখাতেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গেছি। ওর সৌন্দর্য যে কারোর হুঁশ উড়িয়ে দিবে। দেখলি না, আসে পাশের সব পোলাপান গুলা ওর দিকে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে ছিল।”
কাব্য ম্লান হেসে বলে, “তাহলে তুই ওর সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছিস? এমন হলে ওকে প্রোপোজ করিস না।”
“কে সৌন্দর্য পছন্দ করে না বল? হ্যাঁ, প্রথমে ওর সৌন্দর্যের প্রেমে পড়লেও এখন ওর সবকিছুই ভালো লাগে।”
কাব্য শ্বাস টেনে আপনমনে বলে, “সবাই তো সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে না, শুভ্র। আমিও পড়িনি। আমি প্রেমে পড়েছি এক দুরন্ত, সৎ মেয়ের, যার সরলতাই তার আসল সৌন্দর্য। যার প্রতিটি কথা যেন কবিতার মতো। সত্যি বলতে, আমি কখনোই কোনো সুন্দরীকে জীবনে আনতে চাইনি। কখনোই চাইনি। কিন্তু ভাগ্যের খেলা; ইলিজা অসাধারণ সুন্দরী। তবে এখন তো মনে হচ্ছে, হয়ত ইলিজাও আমার জন্য নয়।”
শুভ্র কৌতূহলী হয়ে হেসে বলে, “এসব কথা ছাড়। বল না ওকে কীভাবে প্রোপোজ করা যায়। ও যেন খুশি হয়ে অ্যাকসেপ্ট করে ফেলে এমন। ফ্লোয়ার বুকে দিব? নাকিইই, আচ্ছা ওকে একটা আইফোন দিয়েই প্রোপোজাল দেই, কি বলিস? আজকালকার মেয়েরা এইগুলিই পছন্দ করে।”
কাব্য ঢোক গিলে বলে, “ইলিজা এমন মেয়ে না। আর দেখ ওর বয়স কিন্তু অনেক কম। তোর, আমার থেকে মিনিমাম পাঁচ বছরের ছোট। ওর এখন এসবে না জড়ানোই ভালো। ওর একটা ব্রাইট ফিউচার আছে, ক্যারিয়ার গড়বে। টিনএইজের মেয়ে তো, এখন এসবে জড়ালে সব যাবে।”
শুভ্র কপাল কুঁচকে বলল, “তুই বালডা এক্কেরে বেশি কতা কস। এহনকার মাইয়ারা সব বুঝে। যা জিগাইছি ঐডা ক।”
কাব্যের মনের ভেতর তখন ঝড় বইছে। কথার কোনো সুর বা শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না সে। অবস্থা সামাল দিতে এবং পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে হঠাৎ বলে উঠল, “শোন, তুই ভাবিস কি করবি। আমার টিউশনে যেতে হবে। (দ্রুত সামনে যেতে যেতে) চললাম, বাই মামা।”
শুভ্র আশ্চর্যের সহিত বিড়বিড় করে বলে, “যা বাবাহ! এ হালার আবার কি হইলো? ও নাকি শুক্রবার টিউশন করায় না!”
চাঁদের স্নিগ্ধ আলো পুকুরে পড়ে ঝিঁঝি পোকাদের গানকে মধুর করে তোলে। অন্যদিকে হালকা বাতাসে গাছের পাতার লুকোচুরি শান্তির আবহ তৈরি করে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য উপভোগ করার কারণে মিরার মন শীতল হয়ে যায়। মিরার ঠোঁটে শান্তির হাসি ফুটে উঠে। অন্যদিকে, কারান ইমনের সাথে ইয়ারফোনে কথা বলায় ব্যস্ত।
কারান স্ত্রীর এই প্রশান্তিময় মুহূর্ত দেখে মুগ্ধ হয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে পেছন থেকে মিরার কোমর ঘিরে ধরে, কথোপকথন চালিয়ে যায়।
“হ্যাঁ, রিভিউ দ্য ফাইলস অ্যান্ড অর্গানাইজ দেম প্রোপারলি। দিস উইল স্ট্রিমলাইন আওয়ার প্রজেক্ট প্রসেস,” বলে মিরার কাঁধে ঠোঁট ছুঁয়ে রেখেই বাকিটা বলল,
“প্রিপেয়ার এভ্রিথিং ফর সাসটেইনেবিলিটি অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। আই উইল রিভিউ দেম হোয়েন আই অ্যারাইভ,” বলে ফোন কেটে দিল।
মিরা হেসে বলে, “এটা কেমন ধরনের কথা বলার প্রক্রিয়া হলো?”
কারান ঠোঁটে কামড় দিয়ে হাসতে হাসতে বলে, “কোনটা, সোনা?”
“এই যে আপনি ঘাড়ের উপর ঠোঁট রেখে কথা বললেন, এটা কি আপনার ভালোবাসার নতুন টেকনিক?”
কারান মিরাকে ঘুরিয়ে দিয়ে হাসির চিহ্ন রেখে বলে, “আমার বউয়ের খুশি দেখে আমি অভিভূত।”
“হুম, খুশি তো অনেক বেশি। জানো, আজ সারাদিন ফুফির সাথে গল্প করে কাটিয়েছি। ফুফি যে কি মিশুক! উফ, তার কথার মধ্যে শান্তির এক অদ্ভুত মাধুর্য মিশে আছে।”
কারান ঈর্ষান্বিত হয়ে বলে, “তুমি আমাকে ছাড়া বাকি সবার সাথেই কথা বলে শান্তি পাও, মিরা।”
মিরা মুখে হাসি রেখেই বলে, “হয়ে গেল! এত জেলাস কেন, কারান চৌধুরি?”
“অনেক জেলাস, আমার বউ আমাকে ছাড়া আর কোথাও শান্তি অনুভব করবে, এটা আমার সহ্য হবে না।”
কারানের মুখে এমন আলগা রাগের ছাপ দেখে মিরা কৌতূহলী হাসি হেসে তাকে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরল।
কারানও মৃদু হাসিতে সাড়া দিয়ে সুন্দরভাবে মিরার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে বলল, “আমার বউ তো দেখছি, দিনে দিনে আরও ভালো হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা কী?”
মিরা মুখ টিপে হেসে জবাব দিল, “আপনার প্রেমে পড়েছি।”
কারান অবাক সুরে প্রশ্ন করল, “আর ইউ ফর রিয়েল, সুইটহার্ট?”
মিরা হেসে বলল, “তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করো না?”
কারান স্নিগ্ধ হেসে বলল, “বিলিভ মি, জান। তুমি যখন প্রেম রিলেটেড কিছু বলো, আমি শুধু ভাবি, সত্যিই আমার বউ বললো তো!”
মিরা কারানের গলা থেকে মুখ তুলে মিষ্টি করে হাসল। তারপর কয়েক মুহূর্তের জন্য কারানের দিকে তাকিয়ে তার দু’গাল হাতের মাঝে বন্দী করল।
তারপর একটু ঝাঁকিয়ে বলল, “এই সুন্দর ক্ষোমাশোভিত আইটেমটার প্রেমে না পড়ে আর কার প্রেমে পড়বো, হানি?”
কারান হালকা হেসে ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কি আমার প্রশংসা করলে? কিন্তু ক্ষোমাটা কী, বেবি?”
মিরা খিলখিল করে হেসে উত্তর দিল, “চেহারা হাবি, চেহারা।”
তারপর হাসতে থাকল। কারানও মিরার হাসির সাথে এক হয়ে হাসল।
মিরা হাসি থামিয়ে বলে, “এই অন্ধকার ম্লান আলোর পরিবেশ, আর আমাদের এই রোমান্টিক মোমেন্টের মধ্যে দিয়ে আমার সুন্দর একটা গান মনে পড়ছে, কারান।”
কারান কপাল কুঁচকে বলে, “কি গান?”
“ওয়েট, বলছি।”
মিরা গলা কেঁশে নিয়ে গীত ধরে,
“তুমি দিও নাগো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া
আমি বন্ধ ঘরে অন্ধকারে যাবো মরিয়া…”
কারান এটা শুনে চক্ষুদ্বয় বড় করে দ্রুত মিরার মুখ চেপে ধরে বলে, “তোর মুখে আমি টেপ লাগিয়ে দিব, মিরার বাচ্চা। বারণ করেছিলাম, এসব গান গাইবি না তুই।”
মিরা হঠাৎ করে কারানের হাতে আলতো করে দাঁত বসাতেই, কারান ব্যথায় মুখ বিকৃত করে তার মুখ ছেড়ে দেয়। ব্যথার তীব্রতায় সে হাতটি ঝাঁকাতে থাকে।
মিরা হাসতে হাসতে বলে, “আরে সোয়ামি, পরের লাইনটা আরও মজার। যদিও সেটা তোমার বলার কথা। তবে আমিই বলি, তুমি তো আর জানো না।”
মিরা আবার কেঁশে গলা ছেড়ে শুরু করে,
“তুমি ভয় কেন পাও
প্রাণ সজনি আমায় দেখিয়া
তোমায় প্রেম সোহাগে রাখব
আমার বুকে জ..”
মিরা বাকিটা বলার আগেই, কারান দ্রুততার সাথে মিরার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। এভাবে কারান মুহূর্তের পর মুহূর্ত সুধায় মগ্ন থাকে। মিরা যখন বুঝতে পারে কারান আবারও লাগামহীন হয়ে উঠছে, ঠিক তখনই সে তার ঠোঁটে কষে কামড় বসায়।
কারান তৎক্ষণাৎ মিরার ঠোঁট ছেড়ে ব্যথায় বলে ওঠে, “আহ!”
পরে টিস্যু দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে সামনে এনে দেখে রক্তের আভাস ফুটে উঠেছে। কারানের মুখ বিষণ্ন হয়ে আসতেই, মিরা খিলখিল করে হেসে ওঠে। কারান দাঁতে দাঁত চেপে মিরার থুতনি ধরে মুখটা তুলল এবং মিরার দুই ঠোঁট আলগা করে হেসে বলল, “তোর দাঁতে এত ধাআআর, মিরা। কোন দাঁতটা দিয়ে কামড় দিলি রে। ওটা এখন আমি তুলে ফেলবো।”
মিরা হেসে বলে, “হ্যাঁ, তুলো তুলো। তারপর ফোকলা দাঁতের বউ নিয়ে থাকবে। আর এমন হলে তো তোমার সব দাঁত আমার তুলে ফেলা উচিত।”
এই কথা কারানের কর্নকূহরে পৌঁছাতেই কারান কাটকাট চেহারায় মিরার দিকে তাকিয়ে রইলো।
মিরা খপ করে হেসে বলে, “কীভাবে তাকিয়ে আছে দেখো; যেন খেয়ে ফেলবে।”
কারান নেশালো গলায় বলে, “ফেলতাম তো, যদি আপনি পারমিশন দিতেন। তাছাড়া আমি তো কোনো বাঘ বা সিংহ নই, তাই ভয় পেয়ো না জান–পুরোটা খাবো না।”
মিরা নয়নগোচর করে বলে, “তুমি ওদের থেকেও হিংস্র, কারান।”
কারান হাস্কি স্বরে বলে, “আমার হিংস্রতা তো দেখাই-ই নি। তার আগেই.. বাদ দাও। বেবি, একটা রিকোয়েস্ট রাখবে?”
মিরা কিঞ্চিৎ হেসে বলে, “বলো।”
“আজ সারা রাত জুড়ে আমি তোমার চোখে, ঠোঁটে, ঘাড়ে, গলায়; এসব স্থানে চুমু খাবো। তুমি আটকাতে পারবে না।”
মিরা কিছুটা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে বলে, “তারপর যদি তুমি কন্ট্রোল না করতে পারো?”
“ভয় পাও তুমি আমাকে?”
“না.. মানে এমন নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে, এই বাড়িতে..মানে আমি..”
“হয়েছে, আর মানে মানে করতে হবে না। এতদিন যখন নিজেকে সামলে রেখেছি, আজকেও পারবো।”
এবার মিরা চোখমুখ কুঁচকে বলে, “আবার যদি উলটো পালটা কামড় দাও, তাহলে খবর আছে কিন্তু।”
কারান হেসে বলে, “একটা কামড়ও দিব না জান, কেবল কিস করবো।”
মিরা হাসতে থাকে। কারান সামান্য কপাল কুঁচকে হেসে বলে, “হাসছো কেন?”
“তোমার পাগলামি দেখে।”
“তুমি আমাকে চেনো না, সোনা। আমার ভেতরের পাগলামি কতটা গভীর আর অন্ধকার, তা তোমার কল্পনার বাইরে। আর এক মুহূর্তও সময় নষ্ট করতে চাই না,” বলে মিরাকে নিজের বাহুডোরে তুলে নিল।
এরপর কারান মিরাকে বিছানায় আলতো করে শুইয়ে দিল। মিরা কিঞ্চিৎ হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করল। অর্থাৎ তাকে চুম্বনের অনুমতি দিল। কারান তার দুই আঙুলে মিরার কানের পাশ থেকে কাঁধের বাঁক পর্যন্ত আলতো ছোঁয়ায় অনুভূতি জাগিয়ে তুলল। তার স্পর্শে মিরা কারানের উত্তেজনাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করল। কারান এবার কোমল চুম্বনে মিরার গলা নিজের ঠোঁটের অধিকারে নিল। একে একে মিরার ঠোঁট, ঘাড়, কাঁধ, চোখ ও গালে তার ঠোঁটের স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়ে নিজের উপস্থিতির রাজত্ব কায়েম করল। মিরাও তাকে আরো দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে এই মুহূর্তের সাথে একাত্ম হয়ে গেল।
বর্ষার সকালে ভেজা গাছপালা, কাদামাখা পথ, আর মিষ্টি সুবাসে গ্রাম জেগে উঠেছে।
এমন প্রভাতে মিরা, ফাতিমা, তুব্বা বেশ গল্প জমিয়েছে। তুব্বা হেসে হেসে বলে, “আমার ভাবিটা যে কত্ত সুন্দর, মনে হয় সারাটাদিন খালি দেখতেই থাকুম।”
মিরা লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করে হাসতে থাকে।
ফাতিমা কিঞ্চিৎ ধমকের সুরে বলে, “হইলো? বউটারে আর লজ্জা দেওন লাগবো না। যান গিয়া পড়তে বহেন।”
এমনটা শুনে তুব্বা মন খারাপ নিয়ে রসুইঘর থেকে প্রস্থান করে।
এরইমধ্যে কারান এসে একটা পিঠে নিয়ে তাতে কামড় বসাতে বসাতে বলে, “বউ, উঠে এসো। তোমার সাথে একজন ব্যক্তির পরিচয় করানো হয়নি।”
মিরা মাথা নাড়িয়ে ফাতিমার থেকে অনুমতি নিলে, ফাতিমা হেসে ইশারায় যেতে বলে।
কারান ও মিরা একসাথে চলতে থাকে। কারান হঠাৎ করেই একটি কক্ষে মিরাকে দাঁড় করাল। মিরা সামান্য ভ্রূ কুঁচকে অবাক দৃষ্টিতে কারানের দিকে তাকিয়ে রইল। কারান মৃদু হাসি মুখে মিরার পেছনের আঁচলটি তুলে নিয়ে তার মাথায় ঘোমটার মতো সাজিয়ে দিল।
এরপর আলতো করে মিরার কপালে একটি কোমল চুমু এঁকে বলল, “এবার চল, প্রিয়।”
মিরা ঈষৎ হাসি দিয়ে কারানের পিছু নেয়।
কারান ঘরের বাইরে এসে সম্ভ্রমের সাথে অভিবাদন জানিয়ে বলল, “আকবর কাকা।”
একটি পুরোনো দিনের গাড়ির টায়ার মুছতে মুছতেই কারানের ডাক কানে আসলো। তৎক্ষণাৎ সে কাজ ফেলে তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে হাত ধুয়ে, রুমাল দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। কারানের সামনে এসে হাসিমুখে দাঁড়ালো। লোকটির পরনে হালকা ধূলিমলিন ধূসর শার্ট ও লুঙ্গি, যা তার দৈনন্দিন পরিশ্রমের সাক্ষ্য দিচ্ছে।
কারান ঈষৎ হেসে বলে, “তোমাকে বলেছিলাম না, আমার অর্ধাঙ্গিনীকে দেখাবো।”
মিরার হাত ধরে সামনে এনে, “এই হলো আমার বউ, মিসেস মিরা চৌধুরি। (মিরার দিকে তাকিয়ে) আর মিরা, ইনি হলেন আকবর আলী খান। এই বাড়ির সবথেকে পুরোনো ও বিশ্বস্ত একজন মানুষ। উনিও এই বাড়িরই একজন। ঐ যে পুরোনো গাড়িটা দেখছো, আমার দাদার কেনা। ওটার দেখাশোনা কাকা করে।”
মিরা হেসে বলে, “আসসালামু আলাইকুম।”
আকবর হেসে বলে, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম, মা। কারান তুই তো দেখি আকাশচারিণী আনছিস।”
মিরা লজ্জায় মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
কারান হেসে বলে, “মিরা কাকার কিন্তু অনেক সুন্দর একটা ট্যালেন্ট আছে। কাকা মাঝে মাঝে ছন্দ বলে। তা মিরাকে নিয়ে কিছু বলুন, কাকা।”
আকবর হেসে শান্ত গলায় বলে, “সে তো বলবোই। দাঁড়াও ভেবে নেই। (থেমে)
তোমার মিষ্টি হাসিতে সে বন্দী যে হয়েছে,
স্বপ্ন তোমার চোখে তার জীবন জুড়ে রয়েছে।
তোমার মায়ায় মিশে গেছে তার প্রতিটি দিন,
তোমার ছোঁয়া ছাড়া যেন নেই তার কোনো ঋণ।”
কারান হেসে মিরার কানের কাছে মাথা কাত করে বলে, “এই তার কিন্তু আমাকে বুঝিয়েছে সোনা।”
মিরা হেসে বলে, “অনেক সুন্দর হয়েছে, আঙ্কেল। আপনি তো চাইলে কবিতা লিখতে পারেন।”
লোকটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে দিল। কারানও কিঞ্চিৎ শ্বাস ছেড়ে উক্তিটাকে ঘুরিয়ে বলে, “আচ্ছা কাকা। এখন তাহলে মিরা ভিতরে যাক।”
লোকটা হেসে বলে, “হ্যাঁ মা, যাও। তোমার সৌন্দর্য যত কম মানুষ দেখবে, ততই ভালো। নজর লাগলে সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যায়,” বলে আকবর গাড়ি মুছতে চলে যায়।
মিরা অবাকের সুরে বলে, “কারান আমি কি কিছু ভুল বলে ফেললাম? শেষ দিকে কেমন যেন ওনার চেহারা অন্যরকম লাগলো।”
কারান স্থির স্বরে বলে, “তেমন কিছু না। চলো, ভিতরে চলো।”
মিরা আর কিছু না ভেবে কারানের সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করতে গিয়ে আকবরের দিকে একবার ফিরে তাকাল। মিরার মনে হলো, তার মুখে অদৃশ্য যন্ত্রণার ছাপ আছে, যেন কিছু বলতে চান। কিন্তু মিরা সে অনুভূতি উপেক্ষা করে কারানের হাত ধরে, সামনে হাঁটতে শুরু করে। আর আবেগময় মুহূর্তগুলো অনুভব করতে থাকে।
সকালের নাস্তা সেরে কারান বলে, “ফুফি সকাল থেকে তালহাকে দেখছি না। গেল কোথায়?”
ফাতিমা হেসে বলে, “দেখবি দেখবি, আইতেছে। তোর আর বৌমার লাইগা একখান সারপ্রাইজ নিয়া আইতেছে।”
মিরা ও কারান একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে নিল। কারান কিঞ্চিৎ পরিমাণে ভ্রূ কুঁচকে বলে, “সারপ্রাইজ মানে?”
এর মধ্যে তালহা হাস্যমুখে বলে, “ভাই, সারপ্রাইজ।”
মিরা ও কারান দুজনেই একসাথে পিছনে মুড়ে তাকালো।
তালহা হেসে বলে, “এই হলো ক্যাব্বি, অরূপে সোফিয়া।”
কারান ও মিরা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে দেখল; তার মুখাবয়ব শীতল, গোলাপি ঠোঁটে মৃদু হাসি। সাদা ত্বক ধবল পলাশের মতো, আর আঁখিদ্বয় সবুজ। তার স্বর্ণালী চুল বাতাসে দোল খাচ্ছে, আর গোধূলির নীলাভ গাউনের সূক্ষ্ম কাপড়ে মধ্যে কোমল ঢেউ খেলছে, সাথে কোমরে বাঁধা রুপালি বেল্ট। তবে মেয়েটি হুইলচেয়ারে বসা।
বাকি সবাইকে বাদ দিয়ে কারান আর মিরাকে মেয়েটা মধুময় সুরে বলল, “আসসালামু আলাইকুম। হাই, আ’ম সোফিয়া।”
মিরা ও কারান দুজনেই অবাক হয়েছে। তবে কারানের অবাকের মাত্রা বেশি ছিল।
মিরা ভণিতা সহকারে বলে, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আই অ্যাম মিরা, দ্য স্পাউস (পত্নী) অফ কারান চৌধুরি।”
ফাতিমা হেসে সোফিয়ার স্বানিধ্যে গিয়ে বলে, “এই হইলো এই বাড়ির আরেক বউ, সোফিয়া। বউ অহনো হয় নাই। আর কিছুদিন পরই বাড়ির বউ হইবে।”
এ কথায় কারান প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তালহার দিকে তাকিয়ে থাকে।
তালহা খুক করে কাশি দিয়ে কারানের কাছে এসে বলে, “ভাই, ও অস্ট্রেলিয়ান। যখন গ্র্যাজুয়েট করার জন্য গেলাম, সেখানেই ও আর আমি সেইম ইউনিভার্সিটিতে পড়েছি। এ বাড়ির সবার সাথেই ওর ভিডিও কলে পরিচয় আছে। তাই কেউ অবাক হয়নি।”
কারান অবাকের সুরে বলে, “এত বছরে বিয়ে করিসনি কেন?”
“সেটাই তো ঝামেলা, ও তো খ্রিষ্টান ধর্মের ছিল। ওর ফ্যামিলি মুসলিম পরিবারে বিয়ে দিতে চায়নি। এটা নিয়েই এত বছর কাটলো। আর কিছুদিন হলো ও খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। এখন পরিবার ছেড়ে এখানে এসেছে, তবে আমরা কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে করবো। ভালোই হলো তুই আর ভাবি এসেছিস। তোকে না জানিয়ে এমনিতেও বিয়ে..”
কারান ভ্রূ কুঁচকে আওড়াল, “ওয়েট ওয়েট। তার মানে ওর ফ্যামিলির সাথে ওর কোনো রিলেশন নেই?”
“নাহ, নেই।”
কারান বিরক্তির ভাব নিয়ে কপাল চুলকাতে চুলকাতে বলে, “তুই কি বোকা, তালহা? এমন বাচ্চাদের মতো কাজটা কীভাবে করতে পারলি?”
কারানের কথা শুনে সবাই রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে গেলো। বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠল তাদের চোখে, তারা অবাক দৃষ্টিতে কারানের দিকে চেয়ে রইলো।
তালহা মাথা নীচু করে বলে, “দেখ ভাই, তুই আমাকে ভুল ভাবছিস। আমি কখনোই চাই নাই, ও ওর ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে চুজ করুক। ইভেন, এই একটা কারণে আমরা ৭ বছর ওয়েট করেছি। আমি ওকে এটাও বলেছি তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নাও। কিন্তু ও রাজি ছিল না। এই যে দেখছিস, ওর পা ভেঙে গেছে, সেটাও আমার জন্যই।”
কারান কপাল কুঁচকে বলে, “তোর জন্য মানে?”
“মানে, আমি একমাস আগে যখন বাংলাদেশে ফিরলাম, তার আগে ওর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিলাম। তখন রাগে মাথা ঠিক ছিল না। তাই রাস্তার মধ্যে থেকেই চলে আসার সময় একটা গাড়ির ধাক্কায় ওখানেই মারা যেতাম। কিন্তু ক্যাব্বি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাঁচাতে গিয়ে ওর পা হারিয়েছে। আর সেদিন থেকেই আমি বলেছি, যত যা-ই হোক ক্যাব্বিকে আমি ছাড়বো না। তারপর ও মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। আমি ওকে কিছুদিন সময় দিলাম, ফ্যামিলিকে বোঝানোর জন্য, আর আমি বাংলাদেশে চলে আসলাম। কিন্তু ওর ফ্যামিলি আগের মতোই রাজি হয়নি। তাই ক্যাব্বিও বাংলাদেশ চলে এসেছে।”
মিরা হেসে মনে মনে বলে, “মেয়েদের ভালোবাসা একটু বেশিই গভীর হয়। শুধু আমিই আমার বরটাকে যে কতটা ভালোবাসি, তা প্রকাশ করতে পারি না।”
কারান কিঞ্চিৎ হেসে বলে, “কবে বিয়ে করছিস?”
“এইতো, কয়েকদিন পরই। আজকে থেকেই ইনভাইটেশনের কাজ শুরু করবো।”
“ওর ফ্যামিলির তো কেউ আসবে না। অস্ট্রেলিয়া থেকে তোর কেউ আসবে?”
“হুম, ওর আর আমার ফ্রেন্ডরা আসবে।”
“ওকে,” বলে কারান সোফিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে, “Good to meet you Sofia. I’m Karan Chowdhury, the Chief Executive Officer of K C Company. I look forward to our conversation.”
সোফিয়া হেসে বলে, “Indeed, I am familiar with you. Your brilliance is undeniable, and your swift ascent to success is nothing short of extraordinary and commendable. It brings me great joy to meet you in person, and I am particularly delighted that you chose to address me as Sofia rather than ‘cabby.'”
(অর্থ: “অবশ্যই, আমি আপনার সম্পর্কে জানি। আপনার প্রতিভা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই এবং আপনার দ্রুত সাফল্যের যাত্রা সত্যিই অসাধারণ ও প্রশংসনীয়। আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে দেখতে পেয়ে আমি খুব আনন্দিত এবং বিশেষ করে এটি আমার জন্য আনন্দের যে আপনি আমাকে ‘ক্যাব্বি’ না বলে সোফিয়া নামে ডাকতে বেছে নিয়েছেন।”)
কারান হেসে মিরাকে বলে, “তুমি ওর সাথে কথা বলো তাহলে। তালহা, তুই এদিকে আয়।”
কারান সোফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “I anticipate our future discussions, Sofia.”
সোফিয়া ঈষৎ হাসল। তালহা ও কারান অন্য একটা কক্ষে কথা বলার উদ্দেশ্যে চলে গেল। মিরা সোফিয়ার দিকে এগিয়ে স্বচ্ছ হেসে বলে, “You possess an enchanting beauty. This is my first time meeting a foreigner in person, and I find myself eager to have many conversations with you.”
(অনুবাদ: “আপনার সৌন্দর্য মুগ্ধকর। এটি প্রথমবারের মতো কোনো বিদেশির সাথে আমার সামনাসামনি সাক্ষাৎ এবং আমি আপনার সাথে অনেক কথোপকথন করার জন্য উদগ্রীব বোধ করছি।”)
সোফিয়া হেসে বলে,”I am truly amazed that a woman of such unimaginable beauty has spoken to me with such kindness. You are, without a doubt, the most stunning woman I have ever encountered. My cousin won the title of Miss World last year, yet calling you Miss World feels like an underestimation of your beauty.”
(অনুবাদ: “আমি সত্যিই বিস্মিত যে এত অবিশ্বাস্য সৌন্দর্যের এক নারী আমার সাথে এমন দয়ার সাথে কথা বলেছেন। আপনি নিঃসন্দেহে আমি যতজনকে দেখেছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর নারী। আমার চাচাতো বোন গতবার মিস ওয়ার্ল্ড-এর খেতাব জিতেছিল, তবুও আপনাকে মিস ওয়ার্ল্ড বলা আপনার সৌন্দর্যের তুলনায় কম বলা হবে।”)
মিরা হেসে নিল। সোফিয়া আবার ভণিতা সহকারে বলে, “If you prefer, feel free to converse with me in Bengali. While I may not be fluent in speaking it, I do understand the language.”
(অর্থ: “যদি তুমি চাও, তাহলে আমার সাথে বাংলায় কথা বলতে পারো। যদিও আমি বাংলায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারি না, তবে ভাষাটি বুঝতে পারি।”)
মিরা এবার খুশি হয়ে বলে, “আচ্ছা, তোমার সাথে তাহলে বাংলাতেই কথা বলবো। এমনিতেও নিজের ভাষায় কথা বলতে আলাদা শান্তি। তুমিও তোমার ভাষাতে কথা বলতে পারো, সমস্যা নেই।”
দুজনেই হেসে ক্ষণকাল কথোপকথন চালালো।
এখন আমি সেই অন্ধকার অধ্যায়ে ফিরে যাব, যেখানে ২০০৩ সালের ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনাগুলো তাদের কালো ছায়া বিস্তার করে রেখেছে। যেখানে প্রতিটি স্মৃতি একেকটি রক্তাক্ত দুঃস্বপ্নের মতো জেগে ওঠে।
সেদিন প্রথমবারের মতো ধর্ষ*ণ করার পর তিনজনেই এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করেছিল, যা তাদের বিকৃত আকাঙ্ক্ষাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এরপর থেকে তারা আর পিছনে ফিরে তাকায়নি। দিন-রাতের কোনো সীমা ছিল না- একটার পর একটা নির্মম নির্যাতন, ধ*র্ষণ এবং হত্যা করে শহরজুড়ে ভয়াবহতার রক্তাক্ত চিত্র এঁকে যাচ্ছিল। শান্ত ও নিরিবিলি শহরটি রক্তাক্ত বিভীষিকায় পরিণত হতে থাকে।
এক সময় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দিনে ২ থেকে ৩টি মেয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হতে শুরু করে, এমনভাবে যে তাদের কোনো চিহ্নই পাওয়া যেত না-কোনো ছেঁড়া কাপড়, চুলের অংশ, কিছুই না। মানুষ বুঝতে পারছিল না, এই মেয়েগুলো ধর্ষ*ণ বা হত্যার শিকার হচ্ছে। তারা শুধু অনুভব করছিল, একে একে মেয়েরা হারিয়ে যাচ্ছে।
শহরের প্রতিটি ঘরে বাবা-মায়ের হৃদয়বিদারক কান্না চারপাশের পরিবেশকে আরও অন্ধকারময় করে তুলছিল। কারো বোন নেই, কারো স্ত্রী বা কারো মেয়ে নেই। এক অদ্ভুত রহস্যময় খেলা চলছিল শহরজুড়ে।
পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ রূপ নেয় যে প্রশাসন বাধ্য হয়ে স্কুলকলেজ বন্ধ ঘোষণা করে। দুই মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। রাস্তা-ঘাটেও যদি কোনো মেয়ে কাজের জন্য বের হত, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যেত না। শেষ পর্যন্ত সরকার মেয়েদের পরিবার ছাড়া বাইরে বের হওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করল।
কিন্তু OWL-এর মতো ভয়ংকর খুনিদের থামানো এত সহজ ছিল না। কোনো মেয়ে তার বাবা, ভাই বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বের হলেও রক্ষা পেত না। পুরো পরিবারকে হত্যা করে সেই মেয়েটিকে ধর্ষ*ণ করে, পরে তাকে ভস্ম করে ফেলত। শহরজুড়ে এই বর্বরতা থামানোর কোনো উপায় ছিল না।
আজ স্কুল থেকে অভিভাবক ও ছেলেদের অতি জরুরি মিটিংয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তবে মেয়েদের ঘরবন্দি রেখে আসতে বলা হয়েছে। কারণটা জানার আগ্রহ সবার মধ্যে প্রবল। স্কলাস্টিকা স্কুলটিতে সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন এক প্রভাবশালী শিক্ষিকা; শ্রীলঙ্কা থেকে আগত রাদিআহ বিনতে এমিন। যদিও তিনি বাংলাদেশি, তবে শ্রীলঙ্কাতেই তার পড়াশোনা এবং বসবাস। তার নামের অর্থ যেমন নির্ভীকতা ও সাহসের প্রতীক, তেমনই তার ব্যক্তিত্বও দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের মূর্ত রূপ।
এমিনের বয়স ৩৬ থেকে ৩৮ হলেও তাকে দেখলে মনে হবে যৌবনের উজ্জ্বল প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। কোট ও প্যান্ট পরিহিত এমিন, সবার উদ্দেশ্য এই উধাও হওয়ার ব্যাপারে কিছু বক্তব্য ও সতর্কতা বানী দিচ্ছেন, “Even though the school follows an English medium curriculum, 80% of the students are Bangladeshi. Should I engage in conversation in English or Bengali? What are your thoughts on this?”
অভিভাবকগণ সহ শিক্ষার্থীরাও বাংলাতে বলার জন্য মতামত জানালেন।
বাংলাতে কথা বলার সুযোগ পেয়ে এমিন শান্ত কণ্ঠে বলল, “আচ্ছা। দেখুন এই তিন মাসে যতগুলো মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে, আমার মনে হয় না এ কাজের পেছনে কেবল একজন রয়েছে। সম্ভবত এটি একটি দলের কাজ। যেহেতু পুলিশও কোনো প্রমাণ পাচ্ছে না, সেখানে আরও অনেক কিছুই ঘটতে পারে। হতে পারে, কোনো সিরিয়াল কিলার তাদের হত্যা করছে অথবা পাচার করা হচ্ছে। এমনকি ধ*র্ষণ করে পরবর্তী হত্যার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। (একটু থেমে) তবে যা-ই ঘটুক, এই দলটি একদমই সাধারণ কোনো দল নয়। প্রতিটি কাজ তারা অত্যন্ত নিখুঁত ও সূক্ষ্মভাবে করছে, যার ফলে কোনো প্রমাণ মিলছে না। এখন যেখানে পুলিশ তদন্তে কোনো অগ্রগতি করতে পারছে না এবং সরকারও বিশেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন, তবুও কোনো প্রতিকার মিলছে না। এই ধ্বংসলীলা কবে শেষ হবে, তাও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাই আপনাদেরই সতর্ক থাকতে হবে।”
শেষ কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘর যেন বুদবুদের মতো ফেটে যায়। সবাই একসঙ্গে লাফিয়ে উঠে, নিজেদের মতো করে কথা বলতে শুরু করে। তারা কি এতদিন সাবধানতা অবলম্বন করেনি? মেয়েদের আটকে পর্যন্ত রেখে এসেছে, কোনোভাবেই নামতে দিচ্ছে না ঘর থেকে। এমনকি, এখন তো পরিবারই উধাও হয়ে যাচ্ছে! এই গুঞ্জনের মাঝেই মিস এমিন এবং বাকিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও আলাপচারিতা চলতে থাকে।
কিন্তু অন্যদিকে ব্লাডশেডের নজর এমিনের দিকে স্থির হয়ে আছে। ব্লাডশেডের জন্য সৌন্দর্য সবসময়ই আকর্ষণীয়। আর এমিনের অনিন্দ্য সৌন্দর্য তার ভিতরের পশুত্বকে জাগিয়ে তুলেছে। তার মনে কামনার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। এমিনের প্রতি অবস্কিউর ও ডার্কেরও আকর্ষণ কম নয়, কিন্তু ব্লাডশেডের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেন এমিনকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি নিয়ে সে এমিনকে দেখতে থাকে। শুধু তাকে নিজের শিকার বানানোর জন্য অপেক্ষায় আছে।
অবশেষে মিটিং শেষ হলে এমিন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে যান। এদিকে অন্য অভিভাবক ও ছেলেরা একে একে চলে গেলেও OWL রয়ে যায়—তারা তাদের শিকারকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় তৎপর। আর সেই মুহূর্ত ধীরে ধীরে আসতে থাকে।
সন্ধ্যার দিকে, কাজ শেষ করে যখন এমিন বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, OWL তার পিছু নেয়। এমিন তার ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যার চালক তাকে নিতে আসবে। তিনজন লোক যে আড়ালে আড়ালে তাকে অনুসরণ করছিল, সেটা এমিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দেখে ফেলেন। পরে এক মুহূর্তেই তাদের চিনতে পারেন।
এমিন ভ্রূ কুঁচকে মনে মনে আওড়ায়, “ওদের তিনজনকে তো ক্লাসে দেখেছি। কিন্তু এই সময়ে ওরা এখানে কি করছে তাও স্কুল ড্রেসে। স্ট্রেঞ্জ! ওরা কি বাসায় যায়নি নাকি?”
তারা যদিও লুকিয়ে অন্য দিকে দাঁড়িয়ে ছিল, তবে এমিন ওদের কাছে গিয়ে বলে, “তোমরা এখানে কি করছো, বাচ্চারা?”
কথাটা এমিন অকস্মাৎ বললেও ওরা তিনজন ভয়ঢড়হীন পিছন ফিরে তাকায়।
এমিন সহজ ভঙ্গিতে আবার বলে, “এভাবে রাস্তাঘাটে থেকে মোটেও ঠিক করোনি তোমরা। হতেই পারে, সেই দলগুলো ছেলেদেরও কিডন্যাপ করে।”
কথাটি শোনার পর তিনজনের ঠোঁটের কোনে তীক্ষ্ণ হাসি ফোটে। একটুপরই তারা একসাথে হা হা করে হেসে ওঠে। তাদের ভয়ংকর হাসি দেখে এমিন কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। সে আর কিছু বলতে সাহস করল না এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও পূর্বের অবস্থানে ফিরে গিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
এরই মধ্যে ব্লাডশেড এমিনের সামনে এসে বিশ্রী একটি হাসি নিয়ে বলে, “হাই, বেবি।”
[🔺রেড অ্যালার্ট]
এটা শুনে এমিন চোয়াল শক্ত করে রাগে কিছু বলতে যাবে, এমন সময় তার মুখে চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে তাকে অবচেতন করে ফেলা হয়। এমিনের গাড়ি এসে পড়লেও, ড্রাইভার নেমে তাকে অজ্ঞান দেখে সাহায্যের জন্য মুখ খোলার চেষ্টা করে। ঠিক তখনই তার মুখে ভয়াবহভাবে এক কো’প দেওয়া হয়, যা সাথে সাথে তাকে নিস্তেজ করে ফেলে। চেহারা সমান দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। ড্রাইভারকে এতটাই দ্রুত নির্মমভাবে হত্যা করা হয় যেন সময় নষ্ট না হয়।
এমিন ও ড্রাইভারের নিথর দেহ গাড়িতে তুলে নেওয়া হলো। তাদের গন্তব্য সেই ‘নিষিদ্ধ শাশ্বত’ বন, যেখানে নির্জনতা ও রহস্য ঘিরে আছে। সেখানে পৌঁছানোর পর তারা এমিনের দিকে তাকিয়ে এক ধরনের হিংস্র ক্ষুধায় মেতে উঠল। একে একে নিজেদের পোশাক খুলে ফেলল তারা। অর্থাৎ তারা শিকারকে ছিঁড়ে খেতে উদ্যত। এমিনের সৌন্দর্য ব্লাডশেডকে গভীরভাবে আচ্ছন্ন করেছিল। তাই সে বস্ত্রহরণে কোনো হিংস্রতা দেখায়নি বরং আলতো হাতে এমিনের পোশাক খুলতে শুরু করল।
এমিনের হাত, পা, মুখ শক্ত করে বেঁধে ফেলা হলো। বাঁধন এতটাই শক্ত ছিল যে এমিনের হাত-পায়ের মাংস ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্তাক্ত হতে শুরু করল। সেই মুহূর্তেই এমিনের জ্ঞান ফিরল, আর তার সঙ্গে সঙ্গে তারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। এক মুহূর্তেই এমিন বুঝে গেল, এরাই সেই পিশাচ যারা তার বক্তব্যের মূল বিষয় ছিল। এমিনের চোখ বিস্ফারিত হলো, শরীর অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে লাগল। কপালের ওপর জমে ওঠা ঘামের বিন্দুগুলো একে একে গড়িয়ে পড়ছে।
এবার শুরু হলো সেই অসভ্যদের নির্মম খেলা। ব্লাডশেড এমিনের নগ্ন শরীরের ওপর আলতো স্পর্শ বুলিয়ে তার কামনা আরো প্রবল করে তুলতে থাকল। এরপর শুরু হলো একের পর এক নিপীড়নের ধারা। এমিন যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল, কিন্তু হাতের বাঁধন এতটাই শক্ত ছিল যে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। হাত-পা থেকে ক্রমাগত র*ক্ত ঝরছিল, তবুও এমিন মুক্তির আশায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধ*র্ষণের পর, যখন এমিনের শরীর পুরোপুরি ক্ষত*বিক্ষত ও র*ক্তাক্ত হয়ে পড়ল, তারা তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্লাডশেড হালকা হেসে বলল, “আরো একটা সুন্দরী শেষ হতে চলেছে।” বলেই মাল্লা নামক মার্শাল আর্টের অস্ত্র এনে, একে একে এমিনের আঙুল কেটে ফেলতে থাকে।
অন্যদিকে, ডার্ক উন্মাদ হয়ে নিজের পাশবিক তৃষ্ণা মেটাতে আবারও এমিনকে ধর্ষ*’ণের খেলায় মেতে ওঠে। একটা সময় এমিনের প্রবল চেষ্টায় এক সময় হাতের বাঁধন ছিড়ে যায়, আর এমিন এক টানে ব্লাডশেডের থেকে মাল্লা তুলে নিয়ে ডার্ককে আঘাত করে।
ডার্কের ডান হাত কেটে নিচে পড়ে যায়, আর সে যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে, “আআআআআআআ, ইউ বি*চ।”
তবে এমিন দ্বিতীয় আঘাত করার আগেই অবস্কিউর এসে তার মুখে অ্যাসিড ঢেলে দেয়। এমিনের চেহারা বিকৃত হয়ে যায়, আর সে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। ডার্কের রাগ তখন এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে সে গদা এনে এমিনের স্ত* ভয়াবহভাবে আঘাত করে। এমিনের ডান স্ত* ফেটে, রক্তের ছিটে ওদের তিনজনের মুখে লেগে বিভীষিকাময় দৃশ্য তৈরি করে। কিন্তু এতে কারও ভ্রূক্ষেপ নেই। এমিন এখনো বেঁচে আছে, মরিয়া হয়ে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তীব্র ব্যথায় শরীর কাঁপছে, কিন্তু চিৎকার করার সুযোগ নেই—শুধু চোখ থেকে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে।
ব্লাডশেড ঠোঁটের কোণে বিকৃত হাসি নিয়ে এগিয়ে আসে। সে চাপাতির ধার পরীক্ষা করতে করতে বলে, “মানুষ কেমন অদ্ভুত প্রাণী, মৃত্যুর আগে অবধি আশাটা ছাড়তে জানে না।”
তারপর নির্দয়ভাবে চাপাতি চালায়। মাং*স ছিঁ**ড়ে যাওয়ার বিকট শব্দ ভেসে আসে, এমিনের শরীর থেকে এক টুকরো মাংস খসে পড়ে মেঝেতে। তার মুখ থমকে যায়, ব্যথার চোটে শরীর ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে ওঠে, কিন্তু কেউ একটুও দয়া দেখায় না।
ডার্ক পরামর্শ দেয়, “আরে, আরেকটু গভীর কো*প মার। আমি তীব্র চিৎকার শুনতে চাই। ওপস সরি, মুখ তো বাধা তোমার, সেটাও তো পারবে না ডার্লিং।”
এরপর বাঁকা হাসতে থাকে।
একটু পর কালো কেরোসিনের বোতল খুলে ঢেলে দেয় ওরা। তরলটা গায়ের চামড়ার সাথে মিশে একটা বিকট গন্ধ ছড়িয়ে দেয়। তারপর…
আগুন জ্বলে ওঠে, শিখাগুলো এক লাফে পুরো শরীরকে গ্রাস করে। এমিনের চামড়া বুদবুদ হয়ে ফুলে ওঠে, মাংস গলে গলে গড়িয়ে পড়ে। ফাটা ফাটা ঠোঁট থেকে একসময় গোঙানির মতো বিকৃত শব্দ বেরিয়ে আসে, কিন্তু ওরা আগুন নেভায়।
অবস্কিউর কপাল কুঁচকে বলে উঠে, “না, এত সহজে মরতে দেওয়া যায় না ওকে।”
কাতর হয়ে হাত তুলে ইশারা করে এমিন, প্রাণভিক্ষা চায়। কিন্তু তাদের ঠোঁটের কোণে একটুখানি হাসি ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না।
এক সেকেন্ডের মধ্যে ধারালো রামদা নেমে আসে। মাথার হাড় চিড় ধরে, ধড়মড় করে দু’ফাঁক হয়ে যায় তার মুখমণ্ডল। চোখদুটো ছিটকে বেরিয়ে এসে গড়িয়ে পড়ে রক্তমাখা মেঝেতে।
তারা এতেও থামে না। গলা থেকে যৌ*না* পর্যন্ত নিখুঁতভাবে সমান ভাগে কেটে ফেলে। যেন কোনো কসাই নিষ্ঠুর হাতের কারুকাজ করছে।
এবার পুলিশকে ধোঁকা দেওয়ার পালা। ওরা পোড়া স্ত*নে ছুরি চালিয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করে, খোদাই করে তিনটি অক্ষর—OWL। পাশে বিষাক্ত খুলির চিহ্ন আঁকে।
ব্লাডশেড হেসে ফিসফিস করে বলে, “পুলিশ ভাববে, প্যাঁচা মানে তো রাতের পাখি। কিন্তু আমরা জানি, এর আসল মানে কি!”
পুরোনো চৌধুরি বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ। তালহার বিয়ে উপলক্ষ্যে দূরদূরান্ত থেকে অতিথিরা আসতে শুরু করেছে। প্রথমে ভিড়ে মিরার অস্বস্তি হলেও, সে দ্রুতই সবার সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা আর গল্পে মেতে ওঠে। বাড়ির প্রতিটি কোণ এখন মানুষের জীবন্ত আনাগোনায় মুখরিত—ঘুম, খাওয়া সব চলছে উৎসবের উচ্ছ্বাসের মধ্যেই।
আজও মিরা বাড়ির মেয়েদের সাথে তাদের আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে বসে আছে। সবার মুখে একটাই কথা, এ মেয়ে নাকি পরী? তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, মিরাসহ হবু বউ সোফিয়া। এত প্রশংসা শুনে মিরা মাঝে মাঝে লজ্জায় মুখ নামায়, আবার ভিতরে ভিতরে একটু খুশিও হয়।
অন্দরমহলের দরজা খোলা, তবুও কারান বারবার বাইরে থেকে দরজায় টোকা দেয়। তবে ঘরের ভেতরের মহিলাদের হাসি-ঠাট্টার মাঝে সেই টোকার শব্দ হারিয়ে যায়। কারান দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে, কিন্তু কারো কানে তার উপস্থিতির কোনো শব্দ পৌঁছায় না।
এবার কারান চেঁচিয়ে বলে, “আমি কি আসবো?”
কারানের আওয়াজ শুনে যে যার মতো নিজেকে কিছুটা ঠিক করে নিল।
একজন মহিলা বলে, “আয় বাপ।”
কারান ভিতরে এসে কিঞ্চিৎ পরিমাণে হেসে বলে, “তা আর কতক্ষণ? আপনারা কি ঘুমাবেন না নাকি? অলরেডি সাড়ে ১১ টা বেজে গেছে।”
একজন গ্রামীণ মেয়ে বলে, “আমনে ঘুমাইতে যান শহুরে ভাই। আমরা ভাবিরে লইয়া সারা রাইত গল্প করুম।”
কারান ভ্রূ কুঁচকে বলে, “মানে কি? আমার বউ ছাড়া আমার ঘুম আসবে না। বউ, এদিকে এসো।”
এটা শুনতেই সবাই খটখট করে হেসে দেয়। মিরা লজ্জায় রক্তজবার ন্যায় আরক্ত হয়ে জিভ কেটে নিয়ে কারানের দিকে কটমট করে তাকিয়ে থাকে।
অথচ কারান এসব অগ্রাহ্য করে ভাবলেশহীনভাবে বলে, “যে যার মতো যা খুশি ভেবে নিন। আমার বউকে লাগবে,” বলে সামনে এগিয়ে এসে মিরার হাত ধরতে যাবে, তখনই একজন মাঝবয়েসী নারী খপাৎ করে মিরার হাত নিজের আঁচলের মধ্যে লুকিয়ে বলে,
“সোনারচান, তুমি ঘুইমাইতে যাও। আইজগো বৌমা আমাগো লগেই ঘুমাইবো। এমনিতেই বাড়িতে জায়গার অভাব। তুমি বউরে লইয়া পুরা একখান ঘরে ঘুমাইবা, তা তো হইবে না। আজকে মাইয়ারা মাইয়ারা এক লগে ঘুমাইবে, আর পোলারা পোলারা এক লগে ঘুমাইবে।”
কারান কাঁদো কাঁদো চেহারায় বলে, “এ অন্যায়। আন্টি প্লিজ আমার বউকে দিয়ে দিন, আমি চলে যাচ্ছি।”
এরই মধ্যে আম্বিয়া এসে কারানের হাতে চিমটি কেটে থরথরানি গলায় বলে, “বউডা ছাড়া অহোন কয়ডা রাত্তির কাটা, মানিকচাঁদ। হেরপর আবার কোলের মধ্যে লইয়া ঘুমাইস।”
এমন কথা শুনে কারানও লজ্জায় মুখ লুকাতে শুরু করে। আর মিরার লজ্জা যেন আকাশের চূড়ায় পৌঁছে গেছে। কারান উপলব্ধি করল, এখন তার মুখ থেকে যে কোনো কথাই বের হবে, তা কেবল অস্বস্তিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। তাই নীরবে সেখান থেকে সরে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে যায়।
আম্বিয়া হাসতে হাসতে বলে, “দেখলা গো, আমার নাতিডায় কি রম বউডারে ভালা পায়। সোফুয়া, তোমারেও আমার লালমানিক ভালা পাইবো দেইখো।”
মিরা আর সোফিয়া একে অপরের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে, চোখে মিশে থাকে নীরব ভাষা। দু’জনের লজ্জাই বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
রাত দুইটা বেজে চল্লিশ মিনিট। মিরা বিছানায় শুয়ে, চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। এপাশ ওপাশ করবে তো দূরের কথা, বিছানার প্রতি ইঞ্চি জায়গা ভর্তি মানুষের দেহ। বহুক্ষণ ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু ঘুম যেন তার সাথে অভিমান করে চোখের কোণে আর উপস্থিত হতে চায় না।
অবশেষে গাদাগাদির অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে, মিরা উঠে জানালার কাছে যায়। বাইরে একটি মানুষও নেই, অথচ ভিতরে এমনভাবে জমাট বাঁধা যে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গাও নেই। অনেকক্ষণ ধরে জানালার পানে তাকিয়ে থাকে মিরা, কিন্তু বাইরেটা শান্তিভাবে দেখার মতো পরিস্থিতিও নেই। কিছু মানুষের নাক ডাকার শব্দ এতটাই প্রবল যে, তা কান ভেদ করে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছে যায়।
মিরা এবার বিরক্ত হয়ে উঠে, গায়ে একটি চাদর জড়িয়ে পিছনের দরজায় চলে যায়। দরজা খুলে বাইরে এসে সে গভীর একটা নিশ্বাস ফেলে, যেন চাপা পড়া এক জায়গা থেকে মুক্তি পেয়েছে। মুক্ত বাতাসে মিরা নিজেকে নতুনভাবে খুঁজে পায়।
মিরা হেসে বলে, “বাবাহ, এতক্ষণে শান্তি। মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
এবার কিছুক্ষণ পিছনের উঠানে হেঁটে বেরিয়ে বলে, “ইশশ! ওকে ছাড়া এখন আর ঘুমই আসবে না। এমন একটা বাজে অভ্যাস করিয়েছে যে ও জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না,” বলে স্বচ্ছ হাসতে থাকে।
এর মধ্যে পিছন থেকে একটা অচেনা পুরুষালি শব্দ ভেসে আসে, “আশ্চর্য! এই হুরপরী গ্রামের মাটিতে এল কীভাবে?”
কথাটি শুনতেই মিরা অবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকাল। তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে এক স্যুট-বুট পরিহিত যুবক, যাকে দেখলেই মনে হবে শহরের। অকস্মাৎ এমন একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া যে তার পক্ষে সম্ভব, তা মিরা কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি। হতভম্ব হয়ে মিরা দ্রুত ঘরের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াল।
তৎক্ষণাৎ ছেলেটা হুড়মুড়িয়ে মিরার সামনে এসে দুই হাত ছড়িয়ে বলে, “আরে আরে, কোথায় যাচ্ছেন? আপনার মতো পরীকে দেখে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আচ্ছা, আপনি কি আসলেই পরী? না হলে এই রাতের আধারে আপনার দেখা পেলাম কীভাবে?”
মিরা ভিতরে ভিতরে ভয়ে গুমড়ে গেলেও চোখমুখে শক্তভাব রেখে বলে, “পথ ছাড়ুন। আমি যাবো,” বলে অন্য দিক থেকে যেতে শুরু করতেই সেদিকেও ছেলেটা হাতের দেয়াল তৈরি করে বলে,
“আরে, দাঁড়ান দাঁড়ান। তবে মা শা আল্লাহ, আপনার চেহারার মতোই আপনার ভয়েসও অসাধারণ। শুনে মনটা ভরে গেল।”
Tell me who I am part 25
মিরা কটমট করে বলে, “আপনি কি পথ ছাড়বেন নাকি আমি চিৎকার করে মানুষ জড়ো করে আপনার ব্যবস্থা করবো?”
ছেলেটা ভ্রূ উঁচিয়ে শয়তানি হাসিতে বলে, “কেয়াবাত কেয়াবাত! আপনার রাগি মুখ দেখতে বেশি ভালো লাগছে দেখছি। যেমন চোখ আর ঠোঁট তেমন এট্রাক্টিভ ফিগার। এমন একজন হুরপরী যদি জীবনে পেতাম, আর কি চাই।”
এবার মিরা প্রচন্ডরকম ক্ষুব্ধতায় যখন লোকটিকে ঘুসি মারার উদ্দেশ্যে হাত মুঠ করতে প্রস্তুত, তখন হঠাৎ করে পিছন থেকে একটি চেনা পুরুষালি গম্ভীর কণ্ঠের আওয়াজ ভেসে আসে।
“ঐ হুরপরী আমার বউ।”