Tell me who I am part 28
আয়সা ইসলাম মনি
আরিয়ান কাঁচুমাচু মুখে বলে, “ও বাবা! আমি তো ভয় পেয়েছি। প্লিজ, রোমানা মেরো না।”
পরে শয়তানি হাসি দিয়ে ছুরিটা ঘুরিয়ে রোমানার গলায় ধরে। রোমানা এই আকস্মিক আক্রমণে কিছুটা থমকে যায়।
রোমানা আড়ষ্ট স্বরে বলে, “আরিয়ান, লাগতে পারে কিন্তু…”
“আর কখনো এমন কিছু করবে?”
রোমানা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, “একবার শুধু ছাড়, তোকে দেখে নিবো। জা’র্ক!”
তারপর গলা চড়িয়ে বলে, “না করবো না, ছাড়ো!”
আরিয়ান হেসে ছেড়ে দিতেই রোমানা তার হাত চেপে ধরে প্রবল জোরে কামড়ে দেয়।
আরিয়ান ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে, “কু’ত্তাআআআআ!”
এরপর রাগে ফুঁসে উঠে রোমানাকে কাঁধে তুলে নেয়, “এখন তোকে ছাদ থেকে ফেলে দিব! ছোট কু’ত্তা একটা!”
রোমানা খিলখিলিয়ে হেসে আরিয়ানের কাঁধে নিজের বড় বড় নখ বসিয়ে দেয়, এবারও ব্যথায় আরিয়ান বাধ্য হয়ে তাকে নামিয়ে দেয়।
রোমানা মুচকি হেসে বলে, “আমার সাথে পারবি না আরিয়ান। চল, একটা কাজ করি—তোকেই কোলে তুলে নর্দমায় ফেলে আসি। যদিও তোর মতো একখানা দামড়া গরুকে তুলতে দুটো রোমানার দরকার পড়বে।”
আরিয়ান তার কথায় রেগে না গিয়ে বরং হাসতে হাসতে রোমানার হাত ধরে তাকে কাছে টেনে বলল, “বিল্লি কোথাকার! শালীর ঘরের শালী, দেখি তোর সেই নখগুলো!” বলেই তার হাত ধরে যে নখ দিয়ে আঁচড় মেরেছে, সেটা কায়দা করে ভেঙে দেয়।
রোমানা কষ্ট পেয়ে কান্নামিশ্রিত গলায় বলে, “তোকে এর একটা পানিশমেন্ট ঠিকই দিব, শয়তান।”
তার রাগ অবলোকন করে আরিয়ান নিজের উরুর উপর ভর দিয়ে খিলখিল করে হাসতে থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
শহরের বাজারে প্রবেশ করতেই চারপাশে চাঞ্চল্যের ঢেউ বয়ে যায়। মানুষের ভিড়, বিক্রেতাদের হাঁকডাক আর টাটকা সবজির ঘ্রাণে মুখরিত বাজারে তাজা লাউ, কাঁচা মরিচ, করলার স্তূপ সাজানো। দোকানিরা ক্রেতা ডাকছে আর গৃহিণীরা দামা-দামিতে ব্যস্ত।
আব্দুর রহমান মাসের বাজারের জন্য দোকান থেকে একের পর এক ব্যাগ ভরলেন। এই কাঁচাবাজার থেকে মাছের বাজার, সব মিলিয়ে চার-পাঁচটি ব্যাগ বোঝাই করলেন। কাজ শেষ করে বাজারের ভিড় থেকে বের হওয়ার জন্য যখন প্রস্তুত, তখনই নতুন সমস্যা দেখা দেয়—কোথাও কোনো রিকশা কিংবা কুলি নেই। দুই হাতে বোঝাই ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি অথচ সহায়তার কেউ নেই।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে এদিক-ওদিক খুঁজে অবশেষে এক রিকশার সন্ধান পেলেন তিনি।
আব্দুর রহমান হালকা হাসি মুখে গলা উঁচিয়ে বললেন, “এই রিকশা, যাবেন?”
রিকশাওয়ালা সাড়া দিয়ে বলল, “হ ভাই।”
তবে এর মধ্যেই এক মহিলা বাজার নিয়ে এসে সেই রিকশায় উঠে বসে পড়লেন, “চলেন ভাই,” বলে তাড়াহুড়ো করতে লাগলেন।
রিকশাওয়ালা কিছুটা বিরক্তির সুরে বলল, “আরে আফা, পোরথোমে তো এই ভাই রিকশা থামাইছিলো।”
মহিলা মানুষ বলে আব্দুর রহমান আর কথা বাড়ালেন না। বরং সহজভাবে বললেন, “আচ্ছা, সমস্যা নেই। আপনি যান।”
“তাইলে আইজকা চইলা যান, ভাই। রিকশা পাইবেন না। ওইদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইয়া-পোলারা আন্দোলনে নামছে। রাস্তা বন্ধ, রিকশা আইবে না।”
আব্দুর রহমান কিছুটা কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলেন, “কীসের আন্দোলন, ভাই?”
“কি জানি, শিক্ষক শিক্ষার্থী উধাও লইয়া কাহিনি। (রিকশা চালানো শুরু করে) আচ্ছা যাই, ভাই।”
আব্দুর রহমান কিছুক্ষণ গভীর চিন্তায় ডুবে থাকেন। তারপর দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলে বললেন, “কেন যে আজ এত বাজার করতে গেলাম! যাই, ধীরে ধীরে এগোই।”
সে আস্তে আস্তে সামনের দিকে পা বাড়াল। কিন্তু ভারী ব্যাগগুলো নিয়ে ক্লান্তিতে তার শরীর নুইয়ে পড়তে চাইছে। দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটার পর তার পাঞ্জাবি ঘামে ভিজে গেছে। একটু পর হঠাৎ এক যুবক এসে তার হাতের ব্যাগগুলো নিজের হাতে তুলে নিল। আব্দুর রহমান পাশে তাকিয়ে দেখলেন, শ্যামবর্ণের একজন তরুণ, যার চেহারায় ক্লান্তির নিদর্শন স্পষ্ট। এই যুবক আর কেউ নন, শেখ আরভিন কাব্য। সারাদিন ক্লাস করে এসে তার অবস্থাও বেশ খারাপ।
আব্দুর রহমান যখন কাব্যের দিকে চোখ তুলে তাকালেন, তখন কাব্য হাসিমুখে বলে উঠল, “আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল। আপনি কোথায় যাবেন, বলেন? আমি এগিয়ে দিচ্ছি।”
এমন এক মুহূর্তে এই যুবকের উপস্থিতি এবং কথায় যে এত সহানুভূতি, তা দেখে আব্দুর রহমান বেশ অবাক হলেন।
তিনি মিষ্টি কণ্ঠে বললেন, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমি যেতে পারবো বাবা, তুমি ব্যাগগুলো আমার হাতে দাও।”
কাব্য হেসে বলল, “আরে আঙ্কেল, কোনো সমস্যা নেই। আপনি সামনে যান। এতগুলো ভারী ব্যাগ বয়ে নিয়ে যাবেন, যেকোনো সময় রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারেন, তখন তো বিপত্তি হয়ে যাবে। বরং আপনি সামনে যান, আমি আপনাকে অনুসরণ করে পৌঁছে দিচ্ছি।”
তার কথাটি সঠিক মনে করে, এবার আর আব্দুর রহমান কথা বাড়ালেন না। তিনি হেসে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলেন।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর সে কাব্যকে জিজ্ঞেস করল, “বাবা, তোমার নাম কি?”
কাব্য একটু হেসে বলল, “শেখ আরভিন কাব্য। আপনি কাব্য বলে ডাকতে পারেন।”
“মা শা আল্লাহ, খুব সুন্দর নাম। তবে তুমি এদিকে কোথায় যাচ্ছিলে?”
“ক্লাস করে এদিক থেকেই টুকটাক খাবার কিনে যাচ্ছিলাম।”
“আচ্ছা আচ্ছা। তা বাবা, তুমি কোথায় পড়ছো?”
“বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে।”
আব্দুর রহমান খুশি হয়ে বললেন, “বাহ! আমার মেয়েটাকেও বুয়েটে পড়ানোর ইচ্ছে আছে।”
এভাবে কথোপকথনের মাধ্যমে তারা সামনে এগিয়ে যেতে থাকল। বেশ কিছুক্ষণ পর, মিরা মঞ্জিলের সামনে এসে আব্দুর রহমান দাঁড়ালেন। সে হেসে কাব্যের হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে বললেন, “এই যে, এটাই আমার ছোট্ট বাড়ি।”
কাব্য মৃদু হেসে বলল, “ওহ আচ্ছা। আচ্ছা আঙ্কেল, তাহলে আসি।”
সে বিদায় নিতে সামনে পা বাড়াতেই আব্দুর রহমান তার হাত ধরে বললেন, “আরে, দাঁড়াও দাঁড়াও। আসবে মানে? ভেতরে এসো, একটু বসো। তারপর যাওয়ার কথা হবে।”
কাব্য কিছুটা সংকোচ নিয়ে বলল, “আঙ্কেল, অন্য একদিন। আজকে আসি।”
আব্দুর রহমান হাসতে হাসতে বললেন, “অন্য একদিন নাহয় আবার আসবে। এখন ভিতরে এসো।”
প্রায় জোর করেই তিনি কাব্যকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। পরে বৈঠকখানায় সোফায় বসতে বললেন। কাব্য কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলেও তার আন্তরিক আতিথ্যে সাদরে বসে পড়ল।
আব্দুর রহমান রসুইঘরের দিকে এগোতে এগোতে ডাকলেন, “মমতা, বাজার এনেছি। কোথায় গেলে?”
কাব্য তখন মাথা নীচু করে কিছু একটা চিন্তায় মগ্ন। এদিকে পাশের ঘর থেকে ইলিজা প্লাজো আর গেঞ্জি পরে, গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় আসতে আসতে বলে,
“বাবা, তোমাকে বললাম, গাড়িটা নিয়ে যাও। তা না, বলবে, জামাইয়ের দেওয়া গাড়ি কেন নিব, তোর জন্য দিয়েছে তুই…”
তবে অকস্মাৎ কাব্যকে দেখতে পেয়ে কথা শেষ করার আগেই সে থমকে গেল। এদিকে ইলিজাকে দেখে কাব্যের মুখে আনন্দের ঝলক ফুটে উঠল। উঠে দাঁড়িয়ে বিস্ময়ভরা চোখে বলল, “ক… করলানী? না মানে, মিস ইলি! আপনি এখানে?”
ইলিজা কিছুটা বিরক্তি নিয়ে শুধালো, “আপনাকে তো ভালো ছেলে ভেবেছিলাম। ফলো করতে করতে বাড়ি অবধি চলে এলেন?”
কাব্য একটু বিব্রত হয়ে চারপাশে তাকিয়ে বলল, “এটা আপনার বাড়ি? আর আপনি ভুল ভাবছেন।”
এমন সময় আব্দুর রহমান এসে মমতাজের পানে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, “এই ছেলেটাই আমাকে সাহায্য করে সব ব্যাগ নিয়ে এসেছে।”
মমতাজ হেসে বললেন, “আরে বাবা, বসো বসো।”
এটা শুনে ইলিজা লজ্জায় ভ্রূ উঁচু করে ফিসফিস করে বলল, “হে আল্লাহ, আর আমি কি ভাবলাম ওনাকে। ছি ছি! তার মানে আসলে উনি অনেক ভালো মানুষ। ধুর পালাই আমি।” বলে দ্রুত উপরের দিকে উঠতে সিঁড়ি ধরল। কিন্তু তাড়াহুড়োয় সিঁড়িতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল।
কাব্য উচ্চকণ্ঠে বলে উঠল, “আরেহ! সাবধানে!”
তার কথায় ইলিজা আরও লজ্জায় পড়ে দৌড়ে উপরে উঠে গেল।
দরজা বন্ধ করে নিজেকে বকতে লাগল, “এই লোকটা থাকলেই কিছু না কিছু হয়। ইশ! কি লজ্জা, কি লজ্জা! ওনার সামনেই পড়ে গেলাম!”
এদিকে কাব্যকে আন্তরিক আতিথ্যে আপ্যায়ন করা হলো। আব্দুর রহমান ও কাব্য বৈঠকখানার সোফায় বসে নানা কথায় মেতে উঠলেন।
বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর, হঠাৎ আব্দুর রহমান শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা কাব্য, তোমার বাবার নাম কী?”
আচমকা ‘বাবা’ শব্দটা শুনে কাব্যের মুখে ম্লানতা ছড়িয়ে পড়ল। তবে তা সামলে নিয়ে সরল গলায় উত্তর দিল, “শেখ ইমতিয়াজ বায়জিদ।”
আব্দুর রহমান কিছুটা অবাক হয়ে বললেন, “শিল্পপতি ইমতিয়াজ বায়জিদ?”
কাব্য মাথা নীচু করেই আওড়ালো, “জি, আঙ্কেল।”
আব্দুর রহমান ঠোঁট প্রসারিত করে মুগ্ধ হেসে বললেন,
“আরে বাবা! তুমি তো তাহলে আমাদের দেশেরই মানুষ। তোমার বাবা তো আমাদের বরিশালের লোক।”
“হ্যাঁ, আঙ্কেল। দাদাবাড়ি বরিশালেই। আচ্ছা আঙ্কেল, অনেক কথা হলো। এবার উঠি।”
“আচ্ছা, যাও বাবা। আবার যেন তোমার দেখা মিলে।”
“ইন শা আল্লাহ, আঙ্কেল।”
কাব্য সালাম দিয়ে মৃদু হাসিতে বিদায় নিল। তবে তার মুখে বিষণ্নতার এক চিহ্ন রয়ে গেল।
২০০৩ সালের ঘটনার দিকে ফিরে যাওয়া যাক। খুনের রক্তে OWL সদস্যদের নেশা চড়তে শুরু করেছিল। ডার্কের হাত এমিন কেটে ফেলায় তার শরীরে প্রোস্থেটিক্স (prosthetics) প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করা হয়। যদিও এই কৃত্রিম হাত পুরোপুরি মানব হাতের মতো না হলেও প্রয়োজনীয় কাজ চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।
এভাবেই টানা দুই বছর ধরে তারা নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষ*ণ ও হত্যার মাধ্যমে একের পর এক নারীর জীবনের প্রদীপ নিভিয়ে আসছিল। হ*ত্যার পর, চিহ্ন রেখে যাওয়া OWL-এর স্বাক্ষর, আর কিছু র*ক্তমাখা মাং*সের টুকরো ফেলে রেখে আসতো শহরের নোংরা অলিগলিতে, যেন পুলিশের হতাশা বাড়তে থাকে। প্রথমদিকে সরকার কিছুটা সাড়া দিলেও, হ*ত্যার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় এবং গণধ*র্ষণের শেষ কোথায় তা অজানা থাকায় পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে একথা সবার কাছে স্পষ্ট ছিল যে, এই খুনিরা অন্ধকারের ভেতর থেকে উঠে আসা কিছু নৃশং*স ও নির্দয় চরিত্র।
OWL-এর এই তিন নিকৃষ্ট সদস্যের মধ্যেই ঘটনার নতুন বাঁক তৈরি হয়, যখন তাদের ক্লাসে সেলমা নামের এক সুন্দরী মেয়ে ভর্তি হয়। শিক্ষামন্ত্রীর নাতনি হওয়ায় মেয়েটিকে ঘিরে আলাদা একটি আভিজাত্য ছিল। ব্লাডশেড প্রথম দেখায়ই তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় এবং মনের গভীরে সিদ্ধান্ত নেয়, এ মেয়েকে কষ্ট দিয়ে নয় বরং তাকে ধীরে ধীরে তার প্রেমিকা বানিয়ে আপন করে নিবে। তার কাছে সেলমার মতো অতি সুন্দরী মেয়েকে আঘাত দেওয়া বর্বরতা বলে মনে হয়। ডার্ক অবশ্য এই সিদ্ধান্তে আপত্তি তুলেছিল, কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে নীরব থাকে। সেলমার প্রতি ব্লাডশেডের এই আকর্ষণই পরে ঘটনাপ্রবাহকে অন্যদিকে মোড় দেয়।
কিন্তু সমস্যা বাঁধে যখন সেলমার সৌন্দর্য ও আভিজাত্য তার দুই বান্ধবী, রাইমা ও সারার নজরে পড়ে। সারা সেলমার সৌন্দর্যে হিংসা করতো কারণ সেলমাকে আলাদা সম্মান দেওয়া হতো, অন্যদিকে রাইমা সবসময় মনে মনে ব্লাডশেডকে ভালোবাসত। কিছুদিনের মধ্যে ব্লাডশেড বিভিন্ন উপায়ে সেলমাকে নিজের প্রেমিকা বানাতে সক্ষম হলো। এমনই একদিন ব্লাডশেড সেলমাকে রুম ডেটে রাজি করাতে জোরাজুরি করছিল, কিন্তু সেলমা তাতে সায় দেয়নি। ব্লাডশেডের অনেকবার চেষ্টা করায়, সেলমা তাকে ধাক্কা দিয়ে একপাশে সরিয়ে দিয়ে, ইংরেজি ভাষায় নানাবিধ অশ্রাব্য গালিগালাজ করে, এমনকি সবার সামনে তাকে চড় মেরে সতর্কও করে। কিন্তু এতে ব্লাডশেডের অন্তরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে, ব্লাডশেড তখনই তাকে আঘাত করতে চাইলেও আশেপাশে লোকজন থাকায় পরিস্থিতির জন্য নিজেকে সংযত রাখে।
রাইমা দূর থেকে এই পুরো ঘটনাটি দেখতে থাকে। তার মনে ব্লাডশেডের প্রতি ভালোবাসা আর সেলমার প্রতি ঈর্ষা এক অশুভ মিশ্রণে রূপ নেয়, যা পরবর্তীতে আরও গুরুতর কিছু ঘটনার ইঙ্গিত দিতে শুরু করে।
সেলমা চলে যাওয়ার পর রাইমা আর সারা গিয়ে ব্লাডশেডকে বলে, “We know you want Selma to be yours, don’t you?”
ব্লাডশেড কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে শুধু ঠোঁটের কোনে তীক্ষ্ণ বাঁকা হাসলো।
এরপর রাইমা আবার বলে উঠে, “Should you desire, I can see to it that Selma becomes yours.”
ব্লাডশেড গম্ভীরমুখে শুধু একটা শব্দ বের করলো, “ওকে।”
ব্লাডশেড জানে, সেলমাকে ধর্ষ*ণ করা সহজ হবে না। একদিকে সেলমার চলাফেরায় পাহারাদারদের সরব উপস্থিতি, অন্যদিকে সেলমার স্বতন্ত্র মনোভাব—সে কখনোই ব্লাডশেডের হবে না। কিছুদিন পর রাইমা ও সারা, ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে সেলমাকে পাহারাদার ছাড়াই নিয়ে যেতে রাজি করালো। ওরা সেলমার কাছের বান্ধবী হওয়ায় বিশ্বাসে বাঁধা হয়নি, সেলমাও হাসিমুখে যেতে রাজি হলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেলমাকে আনা হলো ‘নিষিদ্ধ শাশ্বত’ বনে।
সেলমা OWL দের দেখে প্রথমেই কিছু অনুভব করে পালাতে চাইলে ওরা পাঁচজন মিলে তার মুখ বেঁধে নিচে ফেলে দেয়। অবশেষে তাদের সেই অমানবিক ধ*র্ষণ ও হ*ত্যার নৃশংস কাজ সম্পন্ন হয়। এতক্ষণ রাইমা ও সারা অদ্ভুত হাসিতে মত্ত থাকলেও, সেলমাকে হ*ত্যার পদ্ধতি দেখে তারাও ভয়াবিষ্ট হয়। কাটাকুটি শেষ হলে, তাদের দিকে OWL-এর তীক্ষ্ণ ও ভয়াল চাহনি দেখে, তখন তাদের বুঝতে আর দেরি হয় না যে এবার তাদের পালা। এমনকি তারা এটাও বুঝে নেয়, এ সেই ভয়ংকর গোষ্ঠী যার জন্য সাধারণ মানুষ আতঙ্কে থাকে এবং পুলিশ তাদের পেছনে ছুটে বেড়ায়। আর এটাই মূলত মিরার দেখা ধর্ষ*ণের দৃশ্য।
তিনটি খু*ন ও ধ*র্ষণের পর, ওরা হাড়-মাংস ব্যাগে করে বনের নির্জন বাড়ির বেসমেন্টে নিয়ে যায়। সেখানেই মাংসগুলো রান্না করে খায়, আর অবশিষ্ট হাড় ও অপ্রয়োজনীয় অংশ রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পুরিয়ে ফেলে। তিনজনের স্ত* ‘OWL’ লিখে সেই চিহ্নসমেত ময়লার স্তূপে ফেলে দেয়। কিন্তু এইটাই ছিল ওদের সবচেয়ে বড় ভুল।
শহরে একজন পুলিশ অফিসার আলি আবসার, দু’মাস ধরে গোপনে OWL গোষ্ঠীর কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে চলেছেন। প্রমাণ হিসেবে পাওয়া যায় শুধুমাত্র কিছু কা’টা মাংস, যেখানে সূক্ষ্মভাবে লেখা থাকে ‘OWL’। পুলিশ কেবল OWL-এর পেছনে ছুটলেও, আলি আবসার বুঝতে চান এই নামের অর্থ। তিনি ক্রমাগত চেষ্টা করেন OWL নামটির রহস্য উন্মোচনে। কিন্তু ঘুরেফিরে মাথায় একটা কথাই যুক্ত হয় OWL মানে তো প্যাঁচা।
অবশেষে, শিক্ষামন্ত্রীর নাতনির হ*ত্যার ঘটনা শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আলি আবসার প্রথম ক্লু হিসেবে—তিনটি স্ত* পান, যা তিনটি মেয়ের এবং একই বয়সের। এখান থেকেই আলি আবসারের সন্দেহ বাড়ে। তিনি অনুসন্ধান করেন শেষবার মেয়েরা কার সাথে কথা বলেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্ট হয়, তাদের কথা হয়েছিল ডার্ক, অবস্কিউর ও ব্লাডশেডের সাথে। কিন্তু শুধুমাত্র কথা বলায় প্রমাণিত হয় না যে তারাই OWL।
তবে আলি আবসারের ঠোঁটে হাসি খেলে যায় যখন তিনি OWL নামের রহস্য উন্মোচন করেন এবং নিশ্চিত হন যে, OWL হল এই তিনজন ছাত্রই। যদিও তারা প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান, তাও আলি আবসার দমে যান না। এদিকে OWL এর কানে খবর পৌঁছে যায় যে, আলি আবসার তাদের ধরার চেষ্টায় আছেন। তাই OWL বাধ্য হয় থামতে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় যখন আলি আবসার সব বুঝেও, প্রমাণের অভাবে কিছুই করতে পারেন না। তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন সেই একটুখানি প্রমাণের জন্য যা সব রহস্য ভেদ করবে।
এই এক বছরে তারা কোনো খু*’ন বা ধর্ষ*ণ করতে পারেনি। কিন্তু ডার্ক প্রতিনিয়ত বেলকে ধ*র্ষণ করে যেত, কারণ বাহিরে কারও ওপর আক্রমণ চালানো তাদের জন্য নিরাপদ ছিল না। কিছুদিন পর লুনা, যিনি একজন দাঁতের ডাক্তার, বেলের শরীরে পরিবর্তন দেখে বুঝতে পারেন সে অন্তঃসত্ত্বা। তবে বেলকে তিনি কোনো শাসন না করে বরং কোমল ভাষায় জানতে চান,
“হু ডিড দিস টু ইউ, বেল? আমি তোমাকে কিচ্ছু বলবো না। আমাকে সত্যি বলো, সোনা।”
কিন্তু বেল নিরবতা ভেঙে কিছু না বলে শুধু ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। এরই মধ্যে ডার্কও জানতে পারে যে বেল গর্ভবতী। এতে তার রাগ অসীমে পৌঁছায়, বিশেষত বাইরে সব জায়গায় পুলিশ টহল দেওয়ার কারণে অনেকদিন ধরে তার সহিংস ইচ্ছাগুলি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
[🔺রেড অ্যালার্ট: দুর্বল হৃদয়ের মানুষ এড়িয়ে চলুন।]
অবশেষে বেলের নীরবতা ভেঙে, লুনা জানতে পারেন ডার্কই এর জন্য দায়ী। লুনা রাগে আগুন হয়ে কটমট করে বলেন, “শয়তান, শয়তান জন্ম দিয়েছি আমি।”
এরপর ডার্কের কক্ষে গিয়ে ক্ষুব্ধ লুনা তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ডার্ককে জোরালো চড় মারেন, এতটাই জোরে যে ডার্কের গাল ফেটে র*ক্ত বেরিয়ে আসে। এতে ডার্ক আরও উগ্র হয়ে লুনাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
বেল চিৎকার করে বলে, “মম…”
মায়ের এই অবস্থা দেখে বেল তার ভয় সরিয়ে লুনাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ডার্ক বেলকেও মারধর করে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তী সময়ে, লুনাকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় এবং মাথার চা*মড়াসহ চুল কে*টে ফেলে, যার ফলে লুনা করুন চিৎকারের সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। অন্যদিকে সিমেন্টের আঘাতে বেলের মাথা থেকে র*ক্ত গড়িয়ে মেঝে ভিজে যায়, কিন্তু মায়ের এমন করুণ অবস্থা দেখে সে যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে উঠে এসে চেয়ারের সাহায্যে ডার্ককে আঘা*ত করে। কিন্তু ডার্কের মতো দানবিক শক্তির সামনে এই আঘাত তুচ্ছ হয়ে যায়। তথা ডার্কের এমন শক্তপোক্ত অবস্থা দেখে বেল ভয়ে কাঁপতে থাকে।
বেল কাঁদতে কাঁদতে কেঁপে উঠে বলে, “পি…প্লিজ, ডোন্ট হিট মি, ব্রাদার। আই..আ’ম ইয়োর সিস্টার। প..পি..প্লিজ, লেট মি গো।”
“ইউ ফা*কিং বি*চ,” বলে ডার্ক বেলের পেট বরাবর লাথি মেরে তাকে অবচেতন করে দেয় এবং তাকেও একইভাবে বেঁধে ফেলে। এবার সে বেলকে নির্মমভাবে ধ*র্ষণ করে।
কয়েক ঘণ্টা ধ*র্ষণ শেষে ক্রোধে তেতে উঠে বলে, “তোকে তোর ঠিকানায় পৌঁছে দিচ্ছি, বেল জান।”
এরপর ছুরি এনে বেলের পেটের নরম মাংস চিরে ফেলল। শীতল ফলার স্পর্শে তার পরীর কেঁপে উঠল, আর র*ক্তের উষ্ণ স্রোতে ভিজে গেল মেঝেটি। তীব্র ব্যথায় ছটফট করতে করতে বেল আর্তনাদ করে উঠল, তার কণ্ঠ বিদীর্ণ হয়ে গেল বেদনাবিধুর চিৎকারে, “মঅঅঅঅম। হে ঈশ্বর…ভাই ভাই..না, দয়া করো। ভাই…”
কিন্তু সেই আর্তনাদ দয়াহীন অন্ধকারের গহ্বরে বিলীন হয়ে গেল। তার নিশ্বাস ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছিল। সে অনুভব করল, তার শরীর থেকে ধীরে ধীরে প্রাণ নিঃসৃত হচ্ছে।
তার চোখের কোণে জমে থাকা জল গড়িয়ে পড়ে, তারই রক্তের স্রোতে মিশে যাচ্ছিল। আর ঠিক তখনই, তার গর্ভের এক নিষ্পাপ ভ্রূণ নিঃসাড় হয়ে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই ঝরে পড়ল।
পরবর্তীতে ডার্ক লুনার ডেন্টাল সরঞ্জাম থেকে ফোর্সেপ তুলে এনে এক এক করে লুনার সব দাঁত উপড়ে ফেলে। র*ক্তে তার মুখ ভরে ওঠে। অসহ্য যন্ত্রণায় লুনার চেতনাবোধ ফিরতে থাকে, আর সে য*ন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। মৃ*ত্যুর প্রান্তে পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে, বেলের মাথায় কিছু লোহা গেঁথে দেওয়া হয়, যা তার নাক ও চোখ ভেদ করে প্রবাহিত হয়। লুনা তার মেয়ের মর্মন্তুদ মৃ*ত্যু দেখে নিজেকে মুক্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে, তবে বেলের মৃতদেহে ডার্কের আরো ক্ষিপ্ততা উদ্রেক হয়, আর সে বারবার বেলের উন্মুক্ত শরীরে ছুরি বসাতে থাকে। পরে বেলের শরীর থেকে স্ত* ও যৌ*না* কেটে নেওয়া হলো।
লুনার চোখের কোণে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে, এক সময় সেই অশ্রুও থেমে যায়। বুকের গভীরে বেদনা নিয়ে সে মনে মনে বলে, “তোকে পেটে থাকতেই মেরে ফেললে, আজ এমন দিন কখনো আসত না। তোর বাবার বিরুদ্ধে গিয়েও তোকে এ দুনিয়ায় আনাই আমার জীবনের চরম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।”
আবারও অশ্রু গড়িয়ে পড়ল তার গাল বেয়ে। ব্যথার স্রোতে তার দেহ ক্ষত-বিক্ষত, কিন্তু যন্ত্রণার চেয়ে ভয়াবহ ছিল সেই বিশ্বাসভঙ্গের শূন্যতা, যে বিশ্বাস একদিন সে লালন করেছিল।
ডার্ক চোখে পৈশাচিক উন্মাদনা নিয়ে এগিয়ে এল। লুনাকে বস্ত্রহীন করে দু-হাতে লোহার শলাকা বিদ্ধ করল, আর সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ল পো*ড়া মাং*সের ঝাঁঝালো গন্ধ। লুনার চিৎকার ঘর কাঁপিয়ে তুলল।
বাঁধন খুলে দিতেই সে নিথর হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল, নিঃশেষিত দেহে রক্তের প্রবাহ ধীরে ধীরে শীতল হয়ে আসছিল। তবুও সেই অসহ্য বেদনাকে পাশ কাটিয়ে সে উপলব্ধি করল এখন ডার্ক আর তার কোনো সন্তান নয়, সে এক ভয়াল নরপিশাচ।
লুনা সর্বশক্তি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করল, হাতের ক্ষত উপেক্ষা করে এক ঝটকায় কাঁচের ঝাড় তুলে নিল। চোখে-মুখে বিদ্রোহের দহন নিয়ে সে তেড়ে গেল ডার্কের দিকে। কিন্তু দুর্বল, র*ক্তাক্ত শরীর প্রতিরোধ গড়তে পারল না। তার ক্ষতবিক্ষত হাত কেঁপে উঠল, আঙুলের ফাঁক দিয়ে ঝাড়টি পড়ে গেল মেঝেতে। ডার্ক উল্লাসে হেসে লুনার কোমরে কষিয়ে এক লাথি দিল।
এক বিকট শব্দে তার কোমরের হাড় চিরে বেরিয়ে এল, মাংস ছিঁড়ে সাদা হাড়ের মাথায় ঝুলে রইল লালচে র*ক্তের ফোঁটা। অসহনীয় যন্ত্রণায় লুনার চোখ অন্ধকার হয়ে এল, কিন্তু তার কষ্ট উপভোগ করেও ডার্কের নিষ্ঠুরতা শেষ হলো না।
এরপর সে লুনার র*ক্তাক্ত শরীরে বিষাক্ত কীটপতঙ্গ ছেড়ে দিল। লুনা অনুভব করল, ক্ষুদ্র অথচ হিংস্র জীবেরা তার উন্মুক্ত হাড় ও ক্ষতের গভীরে ঢুকে পড়ছে, ধারালো দাঁত দিয়ে মাংস চিবিয়ে চিবিয়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে, তাদের বিষাক্ত লালা র*ক্তের সঙ্গে মিশে দগদগে ক্ষতের জন্ম দিচ্ছে। প্রতিটি কামড়ে তার শরীর কেঁপে উঠছিল, আর একটার পর একটা ক্ষ*ত ফুটে উঠছিল তার সারা দেহে।
ডার্কের চোখে এখনো উন্মত্ত নৃ*শংসতার দহন। লুনার নিথর দেহ তার সামনে পড়ে আছে, তবুও তার পৈশাচিক ক্ষুধা মেটেনি। এক শীতল নির্মমতায় সে লোহার রড তুলে নিল।
হঠাৎ এক প্রচণ্ড আ*ঘাত!
লোহার রড লুনার যৌ*না*র মাংস ছিঁড়ে, হাড় ভেঙে দেহের ভেতর প্রবাহিত হতে হতে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো। তার নিঃশেষিত শরীর কেঁপে উঠল, চোখ বিস্ফারিত হলো, ঠোঁটের ফাঁক গলে তীব্র আর্তনাদ বেরিয়ে আসল।
তারপর… নিস্তব্ধতা।
লুনার দেহ নিথর হয়ে পড়ল, চোখের কোণে এসে থাকা শেষ অশ্রুবিন্দুটি গড়িয়ে পড়ল মাটিতে। কিন্তু ডার্কের উন্মত্ততা এতেও শেষ হলো না। সে বেল ও লুনার নিথর দেহ টেনে নিয়ে বাথরুমে ঢুকল। ছুরি হাতে সে প্রতিটি অঙ্গ একে একে বিচ্ছিন্ন করল।
তারপর হাইড্রোক্লোরিক এসিডের স্বচ্ছ তরলে নিমজ্জিত হলো সেই খণ্ডিত দেহ। একটানা ফেনা উঠতে লাগল, মাংস গলতে থাকল ধীরে ধীরে, এক ভয়ংকর রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় হাড়ের সাদা কাঠামোও মিলিয়ে যেতে লাগল।
একটু পর তাদের শরীরের কোনো চিহ্ন রইল না। আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
অন্যদিকে অবস্কিউর নিজের চাচাকে হ*ত্যা করে এবং তার মাংস রান্না করে প্রতিদিন খেতে থাকে। একদিন অনিন্দিতা অবস্কিউরের ঘরে ঢুকে ফ্রিজে তার বাবার কা*টা মাথা, পুরু*ষা*, অন্ড*কো ও অন্যান্য দেহাংশ দেখে প্রায় অবচেতন হয়ে পড়ে।
সবাই জানতো অবস্কিরের চাচা শহরের বাহিরে কাজের উদ্দেশ্যে গেছেন, কিন্তু আজকে অনিন্দিতার চোখে সব ধরা পড়ে গেল। অনিন্দিতা বয়সে অবস্কিউরের থেকে ৭ বছরের বড়, কিন্তু তার চেহারায় জৌলুস ভাব ছিল। সে দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে পুলিশকে কল করতে চাইলে অবস্কিউর ভোজালি নামক অস্ত্র দিয়ে তার দুই হাত কেটে ফেলে। অনিন্দিতার যন্ত্রণাদায়ক চিৎকারের সাথে হাতের ফিনকি বেয়ে গড়গড়িয়ে র*ক্ত ঝড়তে থাকল। এবার থাবা দিয়ে অনিন্দিতাকে উন্মুক্ত করতে থাকল। পরে হ্যা*ন্ডকাফ দিয়ে তাকে বিছানার সাথে বেঁধে ফেলে। অবস্কিউর তাকে কয়েক ঘণ্টা যাবত ধ*র্ষণ করে। তারপর রাগের বশে তার ডান স্ত* কেটে ছিড়ে নিয়ে তা রান্না করে আয়েশে খায়। অনিন্দিতা চিৎকার করলেও, আশেপাশে কোনো ঘরবাড়ি না থাকায় তার আর্তনাদ কারো কানে পৌঁছায় না।
অবস্কিউর নিষ্ঠুর ইঙ্গিতে সেদ্ধ করা অঙ্গ অনিন্দিতার সামনে তুলে ধরে।
অনিন্দিতার চিৎকার শুনে অবস্কিউর উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলে, “Would you like to have this?”
‘খাবে?’ – অবস্কিউরের ঠান্ডা কণ্ঠে এ প্রশ্ন শুনেই অনিন্দিতার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যায়, বমিতে লুটিয়ে পড়ে সে। তারই নিজের স্ত*র রান্না করা মাং*স তাকেই এমনভাবে খাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হলো, যেন কোন সুস্বাদু খাবার!
তবে এখানেই শেষ নয়। পৈশাচিক উল্লাসে বিভোর অবস্কিউর হঠাৎ করে অনিন্দিতার কানে গরম তেল ঢেলে দেয়। যন্ত্রণায় তার গোটা শরীর টলতে থাকে, আর তার সমস্ত বোধ শক্তিও হারিয়ে যেতে থাকে। সেই তেলের কারণে অনিন্দিতার ঘিলু গলে নাক দিয়ে বেরিয়ে পড়ে গেল। তার জীবনের সমাপ্তি এখানেই ঘটে, তবুও তার দেহের প্রতি নিষ্ঠুরতার অবসান হয় না। মৃত্যুর পরও একাধিকবার তার শরীর অবমানিত হয়, তার সত্তাকে ভেঙেচুরে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়। চূড়ান্ত নৃশংসতায় ধারালো ছুরি যৌ*না* প্রবেশ করিয়ে তার জ*রায়ু ছিন্ন করা হয়। পরে একের পর এক তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ টুকরো টুকরো করে কে*টে ফেলা হয়।
তাজা র*ক্তের বন্যায় ভিজে যায় পুরো স্থান, র*ক্তের উষ্ণ স্রোত ঝরে পড়ে মেঝেতে। অবস্কিউর সেই র*ক্ত তার হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও, আঙুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়। শেষে একটি পাত্র এনে, তার ভেতর সেই র*ক্ত সংগ্রহ করে পান করতে শুরু করে। এ যেন নারকীয় ভোজের এক নির্মম উদ্যাপন। তারপর কিছু মাংস নিজের খাওয়ার জন্য রেখে বাকিটা পুড়িয়ে ফেলতে উদ্যত হয় সে।
কিন্তু OWL এর নিষ্ঠুরতার ঘটনা শহরে ছড়িয়ে পড়ায় পরবর্তী ছয় মাস ধরে শহরজুড়ে অস্বস্তিকর নীরবতা বিরাজ করে। তবে তার কিছু দিন পরই আবার মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। এদিকে আলি আবসারের জন্য দুই বছর ধরে অবস্কিউর, ডার্ক এবং ব্লাডশেড শান্ত থাকে, কিন্তু তাদের মনে প্রশ্ন জাগে—আর কতদিন তারা এসব বন্ধ রাখবে? একজন সাধারণ পুলিশের জন্য OWL থেমে যাবে, এটা তো হতে দেওয়া যায় না।
অবশেষে সেই গোপন আস্তানায় তারা আবার একত্রিত হয়। অর্থাৎ তারা কোনো অশুভ পরিকল্পনা নিয়ে পৃথিবীর উপর পৈশাচিক ছায়া নিয়ে পুনরায় নেমে আসবে।
ডার্ক গম্ভীর মুখে ও হিংস্র চোখে বলে, “আই কা’ন্ট ওয়েট এনি লংগার। আমার কারো প্রয়োজন, এক্ষুনি প্রয়োজন। উত্তেজনা সামলানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আই নিড আ গার্ল রাইট নাও।”
অবস্কিউর বলে ওঠে, “আই কা’ণ্ট গো অন লাইক দিস এনিমোর। হাউ মাচ লংগার অ্যাম আই সাপোজড টু কিপ কোয়াইট বিকজ অফ দ্যাট বা*স্টার্ড, আবসার?”
(অনুবাদ: “আমি আর এভাবে চলতে পারছি না। ওই হা*রামি আবসারের জন্য আর কতদিন আমাকে চুপ থাকতে হবে?”)
প্রভাতের প্রথম আলোয় কারান আর তালহা এসে পুকুরপাড়ে দাঁড়ায়। কারান খালি পায়ে নেমে আসে শিউরে ওঠা ঘাসের ওপর। শরতের মিষ্টি হাওয়ায় তার লুঙ্গিটা আলতো দুলছে। লুঙ্গিটা কোমরে গোঁজা কিন্তু কাজের সুবিধার জন্য হাঁটুর কাছ পর্যন্ত তুলে রেখেছে। ছাইরঙা শার্টে পরিপাটি কারান আর তার পাশে তালহা, দুজনের মুখে মৃদু উচ্ছ্বাসের ঝিলিক। পুকুরের জলের মাছেদের দিকে চোখ মেলে অপেক্ষা করছে তারা। কোঁচ ও জালের নিপুণ ব্যবহারে মাছ ধরে ভরিয়ে তোলা হলো পুরো বালতি। সযত্নে মাছ নিয়ে তারা ঘরে ফেরে। এই মাছ দিয়েই সাজবে বিয়েবাড়ির রান্নার আয়োজন।
তবে ঘরে ফিরতেই শুরু হয়ে যায় তারান্নুমের অকথা।
একটা খুক করে কাশি দিয়ে বলে, “লুঙ্গি পড়লেও যে কাউরে এত্ত হ্যান্ডু লাগে, কারান চৌধুরিরে না দেখলে বুঝবার পারতুম না।”
ভেজা শরীর নিয়ে ঘরে ফিরতেই কারান আরও অস্বস্তিতে পড়ে। শরীরে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা তো রয়েছেই, তার উপর তারান্নুমের উদ্ভট কথা শুনে রাগে মুখ বিবর্ণ হয়ে ওঠে। হঠাৎ চটে গিয়ে কারান বালতি থেকে জ্যান্ত একটা মাছ তুলে তারান্নুমের মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিল।
তারান্নুম তড়িঘড়ি করে মাছটা মুখ থেকে বের করে “ছি!” বলে কুলকুচি করতে ছুটল।
তারান্নুমের এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে কারান মুখে হাসি চেপে মনে মনে বলে, “তোর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। গাধি কোথাকার।”
এমন সময় মিরা এসে কারানকে দেখে মুখে একরাশ দুষ্টুমি নিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে বলে, “উঁহুঁ, উঁহুঁ… আপনাকে তাহলে সব আউটফিটেই দেখা হয়ে গেল, মিস্টার কারান চৌধুরি। বাই দ্য ওয়ে, বেশ মানাচ্ছে আপনাকে।”
তারপর একটু কাশির ভঙ্গি করে সুর করে বলে ওঠে,
“পড়েনা চোখের পলক
কি তোমার রূপের ঝলক
দোহাই লাগে মুখটি তোমার
একটু লুঙ্গির নিচে ঢাকোওওও!”
কারান উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলে, “এখন আমার নিজেকে একজন সুন্দরী রমণী মনে হচ্ছে, আর তুমি হলে রাস্তার বখাটে ছেলে। এতটা অসভ্য হলে কবে থেকে?”
এটা শুনে মিরা খিলখিলিয়ে হেসে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে নিল কেউ আছে কিনা। নিশ্চিত হয়েই সে দুষ্টুমিতে ভরা চোখে কারানের কোমরে গোঁজা লুঙ্গিতে হাত রেখে, ছলনায় ভরা স্বরে বলল, “এখন আমি তোমার সর্বনাশ করবো, কারান চৌধুরি।”
কারান চমকে উঠে জিভ কেটে শক্ত করে লুঙ্গির গিট্টুতে হাত দিয়ে বলল, “ছেড়ে দে শয়তান, তুই আমার দেহ পাবি, কিন্তু মন পাবি না।”
মিরা দুষ্টু হেসে বলে, “রাখো তোমার মন তোমার কাছেই, আমার তো দেহই চাই।”
কারান ভ্রূ উঁচিয়ে দুষ্টামিতে ভরা হাসি দিয়ে বলে, “ঐ মিরা, না প্লিজ।”
এভাবে খুনশুটি করতে করতে দুজন আরও কাছে চলে আসে। কারান আলতো করে মিরার ঠোঁটে চুমু বসাতেই হঠাৎ তারান্নুম এসে বলে ওঠে, “কালনাগিনী, চুন্নি, ঘসেটি। তোর গলায় মাছের কাঁটা বাজবে, দেইখা লইস।”
তারারুমের বাজখাঁই কণ্ঠের এসব কথায় মিরা তৎক্ষণাৎ লজ্জা পেয়ে সরে গিয়ে দ্রুত গতিতে প্রস্থান করে।
আর কারান হাসি চেপে ঠোঁটে কামড় বসিয়ে বলে, “রাম দা টা কই? আজকেই তোর গলা কাটবো, আমার রোমান্সে বাধা দিলি!”
তারান্নুম খিলখিলিয়ে হেসে বলে, “মা গো মা, বাঁচাও!” বলে ছুটতে ছুটতে ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়।
কারান ঘরে গিয়ে জামাকাপড় পাল্টাতে পাল্টাতে ফারহানকে ফোন করে বলে, “মামা, তোর জন্য একটা মেয়ে দেখেছি। একদম পারফেক্ট।”
ফারহান অবাক হয়ে উত্তর দেয়, “কি রে ভাই, এত দিন পর কল করলি, আর এখন কিনা মেয়ের আলাপ তুলছিস?”
কারান হেসে বলে, “আরে, আগে আমার কথা শোন।মেয়েটার বয়স হয়েছে, তবে মাথাটা একেবারে ফাঁকা। গর্দভ একটা! মাঝেমধ্যে ক্ষেপে গেলে যেমন থাপড়াতে পারবি, আবার যখন তখন বাচ্চার মতো কোলে উঠিয়ে ফিডার খাওয়াতে পারবি। তবে আদর করে চুমু খাওয়ার ব্যাপারটা একান্তই তোর ব্যাপার।”
প্রথমবার কারানের মুখে এমন রসালো কথা শুনে ফারহান চমকে উঠে সশব্দে হাসতে থাকে।
কারান কথায় একটু তেজ এনে বলে, “হাসিস না, ওটা ছাগলের তিন নাম্বার ছানা। (বিড়বিড় করে) ধুর, নিজের ফুফিকেই গালি দিয়ে ফেলছি।”
ফারহান হাসির মাঝেই বলে, “আচ্ছা আচ্ছা, শান্ত হ ভাই। আগে বল, মেয়েটা কে?”
“সম্পর্কে আমার বোন হয়, তবে এখন সে আমার বউয়ের প্রধান শত্রু।”
ফারহান কৌতূহলী হয়ে বলে, “তাহলে তো মন্দ নয়। তুই ওর পিক পাঠা তো।”
“ওকে বাই,” বলে কারান ফোনটা কেটে দেয়।
রাতের খাবার টেবিলে আজ বিয়ের আলাপ চলছে। সবাই সেই আলোচনায় মশগুল, তবে কারান আলাদা ভাবনায় ডুবে আছে। টেবিলের নীচ থেকে মিরার পায়ে বার কয়েক পা ছুঁয়ে দিল সে। কিন্তু কোনো সাড়া মিলল না। এদিকে তারান্নুম মুচকি মুচকি হাসছে দেখে কারান বুঝল, ভুল মানুষের দিকে ইঙ্গিত করে বসেছে।
কপালে হাত রেখে আফসোস করে আনমনে বলে উঠল,
“তাহলে এতক্ষণ এই গাধিকেই লাইন মারছিলাম!”
ঠিক সেই মুহূর্তে তারান্নুমও পা দিয়ে কারানকে ইশারা করতে গিয়ে পৌঁছে গেল মিরার পায়ে। মিরা বুঝে নিল, কারানই হয়ত এই খেলা শুরু করেছে। সে নিজেও ইশারায় পা বাড়াতে গিয়ে আঘাত করল সোফিয়ার পায়ে। এভাবে একে একে সবাই ভুল পায়ে পা ঠুকতে লাগল। আর অনাকাঙ্ক্ষিত এই মজার ভুলের ফাঁদে সকলেই হাসির জালে বন্দি হয়ে পড়ল।
ক্ষণিকের মধ্যে মিরা ভুল করে আম্বিয়ার পায়ে খোঁচা দিয়ে ফেলে। এবার আম্বিয়া মুচকি হেসে বলে, “টেবিলের তলে ইন্দুরের উপক্রম বাইড়া গেছে দেহি। ইন্দুর গুলানরে মারোন লাগবো, খালি পায়ে গুঁতা মারে।”
এই কথা শুনে সবাই নিজের মতো করে পা ঠিক করে খেতে থাকে। তবে সোফিয়া, তালহা, কারান আর মিরা লজ্জায় মুখ নীচু করে মৃদু হেসে ফেলে।
বিয়ের রাতের গান-বাজনার ফাংশন আনন্দে ভরা এক মহোৎসব। পরিবারের কোলাহলে বাড়ি গুঞ্জরিত, সন্ধ্যার হলুদ আভায় উৎসবের রং আরও গাঢ় হয়েছে। বাংলা লোকগান থেকে বলিউড, হলিউডের সুরে সবার মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। হলুদ লেহেঙ্গায় সজ্জিত সোফিয়া স্নিগ্ধ হাসিমুখে এক পাশে বসে আছে। গ্রামের নারীদের লোকগাথার তালে নাচে আয়োজন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। হলুদ লেহেঙ্গায় মিরা সোফিয়ার পাশে বসে হাতে তালিতে মেতে উঠেছে।
অন্যদিকে বাইরে ছেলেরা আলাপ-আলোচনায় মশগুল।
তালহার কিছু বন্ধুর মধ্যে একজন মুচকি হেসে বলে উঠল,
“মামা, বিয়ে করেই যেন বেবি নেওয়ার দিকে ঝুঁকিস না। অন্তত দু’বছর এনজয় করার জন্য সময় নিস। আর তোর জন্য একটা স্পেশাল গিফট আছে।” বলে সে তালহার হাতে একটি ছোট বাক্স তুলে দিল।
তালহা কৌতূহলে বাক্স খুলতেই তার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। দ্রুত বাক্সটা ফেলে দিয়ে চোখ নামিয়ে আপনমনে বলল, “হারা’মি কতগুলো।”
তালহার লজ্জিত আদল দেখে, সবাই হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়ল।
এদিকে সবাই এমন আজেবাজে মজায় মেতে থাকলেও, বউকে ছাড়া এভাবে দূরে থেকে কারানের ভালো লাগছে না।
অথচ এর মধ্যে একটা ছেলে বলে উঠে, “কারান ভাই, আপনি একটু তালহাকে শিখিয়ে দিন। আপনার তো বাসর রাতের এক্সপেরিয়েন্স আছে।”
এটা শোনামাত্র কারানের মস্তিষ্ক সজাগ হলে বলে, “ভালো কথা মনে করেছো। আমি কিনা এত বড় কোম্পানির সিইও হয়েও বাসর করতে পারলাম না। (উঠে দাঁড়িয়ে উচ্চবাচ্যে) বউ, বেগম।” বলে হাঁটা ধরে।
এদিকে বাকিরা আশ্চর্যের সহিত কারানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে।
কারান কারো অনুমতি ছাড়াই মেয়েদের অনুষ্ঠানের মধ্যে ঢুকে মিরার হাত ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
“আজকে আমার বউয়ের লজ্জাহরণ করবো। লেট’স গো, বেইবি।”
এটা শুনে মিরা কারানের পায়ে একটা লাথি মেরে হাত ছাড়িয়ে নিল। কারান ব্যথায় মুখ বিকৃত করে মিরার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থাকে।
এর মধ্যেই সব মেয়েরা কারানকে ঘিরে ধরে বলে, “আপনে ফাঁইসা গেছেন। অহোন আমাগো মাইয়া গো লগে নাচোন লাগবো।” বলে সবাই হাসতে থাকে।
তাদের কথা শুনে মিরা কারানের পানে দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে থাকে। কারান হেসে মিরাকে কাছে টেনে নিয়ে বলে, “নাচবো তো। আমার বউয়ের সাথে।”
কিন্তু মিরা রাগ করে সোজা সামনে হাঁটতে থাকে। এমন সময়ে গান চালু করে দেওয়া হয়।
মিরা গানের তালে তালে গাইতে থাকে,
“কিউ আগে পিছে ঢোলতে হো ভাওরোঁ কি তারহা
কিউ দেখতে হো মুঝকো ইউন বেসাব্রোঁ কি তারহা
ক্যা মেরে দিওয়ানে হো?”
কারান হেসে বলে, “নেহি নেহি।”
“ক্যা কোই পরওয়ানে হো?”
“নেহি নেহি।”
“কাম ক্যা হ্যায় মুঝসে ইতনা কেহ দো জি জারা।”
এদিকে কারান আর মিরার এমন খুনশুটি দেখে বিয়ে বাড়ির সবাই আনন্দে মুগ্ধ হলেও তারান্নুমের অন্তরে জ্বলন্ত ঈর্ষা বিরাজ করে।
মনে মনে সে ফুঁসে ওঠে বলে, “তোর মুখে আমি কাদা মাইখা দিউম, মিরা শয়তানি।”
কিন্তু কারান মিরার পাশে থাকায় তার সেই ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গেল।
বেশ জাঁকজমক ও ধুমধামের মধ্য দিয়েই তালহা আর সোফিয়ার বিয়ের পর্ব সম্পন্ন হলো। বাড়ি জুড়ে প্রতিটি দিনই উৎসবের আমেজে ভেসে যেতে থাকে।
এদিকে কারান বাড়ির পিছনের বাগানের দিকটায় মন দিল। পরিত্যক্ত হয়ে পড়া অংশটুকু পরিষ্কার করতে শুরু করল। আগাছার জটলা মোটামুটি সরিয়ে ফেলার পর, সে পুরোনো স্টোররুমের দিকে এগোয়। ঘরের কোণে জমে থাকা ধুলোর স্তূপে কারানের দৃষ্টি কিছু পুরোনো খেলনায় থমকে যায়। খেলনাগুলো হাতে তুলে নিয়ে কারান গভীরভাবে তাকিয়ে থাকে। খেলনাগুলো দেখে তার ঠোঁটে স্নিগ্ধ হাসি ফুটে ওঠে। এগুলোই সেই খেলনা, যাদের সঙ্গে তার শৈশবের কত মুহূর্ত জড়িয়ে আছে।
তবে সেই স্মৃতির ফাঁকে হঠাৎ চোখে পড়ে খেলনার বাক্সের তলানিতে চাপা পড়ে থাকা কিছু ভাঁজ করা পুরোনো কাগজ। কাগজগুলো হাতে তুলে নেওয়ার পর কারান বুঝল, এগুলো বহু বছর আগের কিছু চিঠি। একটু বিস্ময় নিয়ে সেগুলো উল্টেপাল্টে দেখে।
চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক রেখে দাড়ি চুলকাতে চুলকাতে কারান বলে, “কীসের পেপার এগুলো?” বলেই একটা কাগজের ভাঁজ খুলে নিতেই আম্বিয়া এক টানে ছোঁ মেরে কাগজগুলো কারানের থেকে কেড়ে নিল।
কারান চরম আশ্চর্যের দৃষ্টিতে আম্বিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, “দিদা, তুমি এখানে? আর এগুলো কীসের কাগজ?”
আম্বিয়া ভয়ার্ত গলায় বলে, “তুই এইহানে আইছোস কিল্লাই?”
কারান কপাল কুঁচকে বলে, “স্টোর রুমটা একদম ময়লা হয়ে গেছে, তাই ক্লিন করার জন্য…”
কারানকে পুরো কথা বলতে না দিয়েই আম্বিয়া দ্রুতবেগে বলে, “তুই অহোনই বাইরা। আর এদিকে আইবি না।”
কারান অবাকের স্বরে বলে, “কিন্তু হয়েছেটা কি?”
আম্বিয়া কোনো কথা না বলে আচমকা কারানের হাত ধরে তাকে ঘর থেকে বের করে দিল। দরজা বন্ধ করেই দ্রুত হাতের কাগজগুলো টুকরো টুকরো করে ফেলে, সেগুলো আঁচলের নিচে লুকিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। কারানের মনে হলো কিছু একটা গোপন বিষয় রয়েছে, যেটা আম্বিয়া তার সামনে থেকে আড়াল করতে চাচ্ছে।
কারানের সামনেই আম্বিয়া দ্রুত পা বাড়াতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার আঁচলের নীচ থেকে দুইটা কাগজের টুকরো নিচে পড়ে গেল। আম্বিয়া তখনও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল, তাই ঘটনাটি লক্ষ্য করেনি।
কারান কাগজের টুকরো দুইটি হাতে তুলে নিল। কাগজের উপর ছেঁড়া ছেঁড়া লাইন—অল্প অল্প করে কিছু কথা লেখা।
কারান পড়তে শুরু করলো, “জানিস ওইদিন
Tell me who I am part 27
(পরের লাইন) আমি জানতাম তোর
(পরের লাইন) শুধু প্রমাণের অপেক্ষা।”
এই ভাঙা ভাঙা তিনটা লাইন পড়ে কারান কিছুই বুঝতে পারলো না। কিন্তু এবার পরের টুকরোটি পড়ার পালা। সম্ভবত এটাই চিঠির প্রথম অংশ।
সেখানে লেখা, “কেমন আছিস? আমি জানি এটা তুই, আবরার।”