Tell me who I am part 30

Tell me who I am part 30
আয়সা ইসলাম মনি

শুভ্রের আকস্মিক প্রস্তাবে ইলিজা হতভম্বের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে কাব্যের মনে অশান্ত ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তবুও সে গভীরভাবে প্রার্থনা করে, “প্লিজ মিস ইলি, এমন কিছু করবেন না। আমি আপনাকে হারাতে চাই না। জানি, আপনাকে পাওয়া, চাঁদে হাত দেওয়ার মতো এক অসম্ভব সাধনা। আপনাকে না পেলেও দূর থেকে সারাজীবন ভালোবাসতে চাই। কিন্তু আপনি যদি অন্য কারো হয়ে যান, তাহলে সে ভালোবাসার অধিকারটুকুও আমার থাকবে না।”

এদিকে স্নেহা ভিতরে ভিতরে তীব্র রাগে ক্ষতবিক্ষত, সাথে তার হৃদয়ে দুঃখের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় স্নেহা আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি না পেয়ে, ক্ষোভের সঙ্গে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে। অথচ স্নেহা চলে যাওয়ার ব্যাপারে ইলিজার কোনো খেয়াল নেই; সে শুধু হতভম্বের মতো শুভ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে, যে আংটি ও ফুলের তোড়া হাতে হাসিমুখে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
শুভ্র স্নিগ্ধ হাসি হেসে, কিছুটা অস্পষ্ট কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “কিছু (থেমে) বলছো না যে।”
ইলিজার এতক্ষণ ধরে গাঢ় স্থিতাবস্থায় থাকা মনোভাব এক ঝটকায় ভেঙে গেল। ওদিকে কাব্য এক দৃষ্টিতে অসহায়ের মতো ইলিজার দিকে তাকিয়ে আছে। এইতো ইলিজা বললো, ‘হ্যাঁ।’ তারপর এত মাসের ধরে রাখা ভালোবাসা শূন্যে মিলিয়ে যাবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু কাব্যের এসব চিন্তার মাঝেই, এতক্ষণের গভীর নিরবতা ভেঙে ইলিজা অবলীলায় উচ্চারণ করল, “I’m sorry, I don’t know what to say. But I’ve never thought about you in that way. I just enjoy listening to your songs, nothing more. You’ve made a proposal to the wrong person. Sneha cares deeply for you, and you should think about her. Honestly, I don’t want to get caught up in all of this.”
(অনুবাদ: “আমি দুঃখিত, আমি জানি না কী বলব। কিন্তু আমি কখনোই আপনাকে সেভাবে ভাবিনি। আমি শুধু আপনার গান শুনতে পছন্দ করি, এর বেশি কিছু নয়। আপনি ভুল ব্যক্তিকে প্রস্তাব দিয়েছেন। স্নেহা আপনাকে গভীরভাবে ভালোবাসে এবং আপনার তার কথাই ভাবা উচিত। সত্যি বলতে, আমি এসব ঝামেলার মধ্যে পড়তে চাই না।”)

কথাটি কর্ণগোচর হতেই শুভ্রের মনটা মুহূর্তেই চুরমার হয়ে ভেঙে যায়। আইফোনটি বের করার কোনো প্রয়োজন আর অনুভব করেনি সে। তার ধারণা, এটি আরও দুর্বিপাক ডেকে আনতে পারে। সম্ভবত ইলিজা রেগে যাবে। তাই সুকনিষ্ঠ মন নিয়ে বসে থাকা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে।
অথচ এদিকে কাব্যের মনে যেন বসন্তের মৃদু হাওয়া বইছে, আনন্দঘন উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ছে তার সত্তায়। কাব্য খুশিতে এক অনিবার্য লাফ দিতে মনস্থ করেছিল।
কিন্তু সে নিজেকে সংবরণ করে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে বললো, “ম্যাডামফুলি তো দেহি ইংলিশ রটায়। আজকে জমানো সমস্ত টাকা দিয়ে মুন্নাদের খাওয়াবো। তারপর মাসের শেষে খেতে পাই বা না পাই, সেটা পরে দেখা যাবে।”
অর্থাৎ খুশিতে তার মন পাখির মতো উড়ছে।

এবার ইলিজা শান্ত গলায় বললো, “দেখুন, আপনি সবদিক থেকেই পারফেক্ট। সব মেয়েরই হয়ত ভালো লেগে যাবে, কিন্তু আপনি আমার জন্য নয়। প্লিজ, আপনি আমার রিজেক্ট করাটাকে খারাপভাবে নিবেন না।”
শুভ্রের ভিতরটা যদিও এখন সম্পূর্ণ খালি। মুখ থেকে একটি শব্দও বের করার মতো পরিস্থিতি নেই। তবুও সে নিজেকে শান্ত করে নরম গলায় বলে, “তুমি কি অন্য কাউকে পছন্দ করো?”
এই প্রশ্ন কাব্যের কানে আসতেই তার মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে ওঠে। কাব্যও জানতে চায়, ইলিজার মনে কাব্যের জন্য কিছু আবেগ রয়েছে কিনা।

ইলিজা স্বাভাবিকভাবেই বলে, “না না, এমন কিছু নেই। আচ্ছা, আমি আসছি,” বলে সামনে পা বাড়ায়।
ওদিকে স্নেহা বসে বসে কাঁদছে। ইলিজা মুচকি হেসে স্নেহার পিঠে একটানা চাপড় মেরে বলে, “মামা।”
আকস্মিক সম্বোধনে স্নেহা কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে। পিছনে ফিরে তাকিয়ে ইলিজাকে দেখতেই তার রাগ বেড়ে গেল। কিন্তু ইলিজাকে কিছু বললো না, কারণ এখানে ইলিজার তো কোনো দোষ নেই। তাই স্নেহা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রইলো।
ইলিজা হাসতে হাসতে স্নেহার কানের কাছে ফিসফাস করে বলে, “তুই চাইলে শুভ্র ভাইয়াকে প্রোপোজাল দিতে পারিস, আমি রিজেক্ট করে এসেছি তোর পাগলা সিঙ্গারকে।”
কথাটি শুনে স্নেহা লাফিয়ে উঠে খুশিতে ইলিজাকে জড়িয়ে ধরে।
এদিকে কাব্যের মনে মনে খুশির জোয়ার বয়ে গেলেও, মুখে কিছুটা বিষণ্নতা ফুটিয়ে বলে, “মামা, স্নেহা মেয়েটাও কিন্তু সুন্দর আছে। চান্স নিতে পারিস।”
এটা শুনে শুভ্র ভয়ানক রেগে বলে, “আইজগো যদি গেরামে থাকতাম, তোর মুখে আমি গোবর মাইখা দিতাম হা’রামজাদা। খাড়া তুই!” বলেই কাব্যের পিছনে দৌড় লাগায়।
কাব্য দৌড়াতে দৌড়াতেই হাসতে হাসতে বলে, “শোন মামা, তোর আইফোনটা বেইচা জাইঙ্গা কিন্না আমি এলাকায় বিলামু; টেনশন নিস না।”

২০০৭ সাল। সেদিন তারা তিনজন গোপনে নিষিদ্ধ শাশ্বত বনে কথোপকথন করছিল। অবস্কিউর কথা শেষ করে। ব্লাডশেড বলে উঠে, “উঁহুঁ, আমি এসবের মধ্যে এখন অন্তত থাকতে চাই না, টেলিং অল অফ ইউ, আলী আবসার ইজ নো অর্ডিনারি ম্যান। হি’জ মিয়ারলি ওয়েটিং ফর হিজ চান্স।”
কিন্তু ডার্ক উত্তেজনা এবং তীব্রতার সঙ্গে বলে উঠে, “But I can’t wait any longer; I need someone to calm my restlessness (অস্থিরতা).”
ব্লাডশেড নাবোধক মাথা নাড়িয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে।

রাত আটটা। শহরের এক প্রান্তে বনের কিনারে একা হেঁটে যাচ্ছে মেয়েটি। চারপাশ নিস্তব্ধ অথচ তার চোখে অপার শূন্যতা। মেয়েটি অন্ধ—অন্ধকার তার নিত্যসঙ্গী। তবুও তার চলার ভঙ্গিতে বিন্দুমাত্র ভয় নেই, বরং জ্বলজ্বল করছে আত্মবিশ্বাস।
পাশে রাস্তার কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা ডার্ক ও অবস্কিউর তাকে দেখে। তাদের চোখে ফুটে ওঠে শিকারের হিংস্র লালসা, ক্ষুধার্ত পশুর মতো তারা তাকে অনুসরণ করে।
হঠাৎই হামলা। মেয়েটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মুখ বেঁধে ফেলা হলো। তাকে টেনে-হিঁচড়ে বনের অন্ধকার গভীরে নিয়ে যাওয়া হলো। তার চিৎকার করার পথও রুদ্ধ। একটি জ্বলন্ত আগুনের ওপর তার হাত চেপে ধরতেই হাতটি পুড়ে ছাই হয়ে, মাংস ঝরে গিয়ে কঙ্কালের মতো বেরিয়ে এলো।
এরপর তারা আরও ভয়াবহ কিছু করতে উদ্যত হয়। অর্থাৎ মেয়েটিকে উন্মুক্ত করার জন্য মেয়েটির দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে তারা। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, পেছন থেকে ডার্কের পশ্চাৎদেশে প্রচণ্ড জোরে এক লাথির আঘাত পড়ে। ডার্ক মুখ থুবড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

সঙ্গে সঙ্গে তাদের বুঝতে আর বাকি থাকে না—সেই অদম্য, অপরাজেয় আলি আবসার এসে গেছে।
তার তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বজ্রের মতো নির্দেশ ভেসে আসে, “মেয়ে, তুমি পালাও। যেদিকে মন চায় পালাও।”
মেয়েটি উঠে প্রাণপণে ছুটতে থাকে। পেছনে শিকার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ক্রোধে অবস্কিউর আর ডার্কের র*ক্ত টগবগ করে ফুটছে। কিন্তু আলি আবসার থেমে থাকার পাত্র নয়। সে তাদের দুজনের সাথেই সমানে লড়াই চালিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ লড়াইয়ের পর অবস্কিউর আর ডার্ক পরাজিত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
আলি আবসার তৎক্ষণাৎ দড়ি বের করে তাদের বেঁধে ফেলার উদ্যোগ নেয়। একইসঙ্গে সে সাহায্যের সংকেত পাঠানোর জন্য ফোন বের করে। কিন্তু ঠিক তখনই ব্লাডশেড হাজির হয়। তার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আলি আবসারের একটি হাত মাটিতে পড়ে যায়। ভলভলিয়ে র*ক্ত ঝরতে থাকে। আলি আবসার তীব্র কণ্ঠে আর্তনাদ করে উঠেন, কিন্তু দমে না। অপর হাত দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে, কিন্তু সেই হাতও ব্লাডশেড কে*টে আলাদা করে ফেলে।

তবুও আলি আবসারের দৃঢ়তা অক্ষুণ্ন। পা দিয়ে ব্লাডশেডকে আঘাত করতে যায়, কিন্তু ব্লাডশেড তার দুই পা-ও কে*টে ফেলে।
অবস্কিউর আর ডার্ক তখন হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “তুমি OWL-এর অর্থ বুঝেছো, অথচ এটা বোঝোনি যে আমরা তিনজন একসঙ্গে থাকবো। উফফ, হোয়াট আ এন্ট্রি ব্রো।”
এই বলে ডার্ক ব্লাডশেডের গায়ে চাপড় মারে। ব্লাডশেড হেসে বলে, “এবার এটাকে খতম কর।”
অবস্কিউর বলে উঠে, “ফা*ক দিস বি’চ। নো, আই ওন্ট বিট হিম সো ইজিলি। ওর বোঝা উচিত, ও কাদের পিছনে লেগেছে। আমার একটা প্ল্যান আছে,” বলে আড় হাসতে থাকে।
আলি আবসারের মুখ শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে। ওদিকে ব্লাডশেড, অবস্কিউর, আর ডার্ক আবসারের বাসায় হানা দেয়। সেখানে যে কয়জন পাহারায় ছিল, তাদের একে একে নির্মমভাবে হ’ত্যা করে। এরপর আবসারের স্ত্রী আর চার বছরের নিষ্পাপ কন্যাকে অজ্ঞান করে গভীর অরণ্যে নিয়ে আসে।

নিজের স্ত্রী আর সন্তানকে দেখতে পেয়ে আবসারের হৃদয়ে আগুন ধরে যায়। সে প্রাণপণে চিৎকার করার চেষ্টা করে, কিন্তু বাঁধা মুখে তার ক্ষীণ শব্দ বাতাসেই মিলিয়ে যায়। এদিকে ওরা তার কন্যাকে একপাশে শুইয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখে। এরপর তার স্ত্রীর কাপড় খুলে নৃশংসতার তাণ্ডব শুরু করে।
ডার্ক নিজের বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করতে অন্ধকার দানবের মতো তার শরীরের উপর চড়াও হয়। ডার্ক পু*রুষাঙ্গ প্রবেশের মাধ্যমে নিকৃষ্টতরভাবে ধ*র্ষণ চালাতে থাকে। ব্লাডশেড তার ধারালো দাঁত দিয়ে স্ত*র কোমল মাংসে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। একসময় ক্ষুধার্ত জা*’নোয়ারের মতো দাঁতের সহিত স্ত* বৃন্ত ছিঁড়ে ফেলে। হিমা ছটফট করতে করতে হাত পা ছিটানোর চেষ্টা চালাতে থাকে, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। তার হাত, পা, মুখ এতটা শক্ত করে বাধা হয়েছে যে দড়ির সেই অংশ তার মাংসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মুখের কোনা বেয়েও র*ক্তের ক্ষীণ ধারা ঝড়ে পড়তে থাকে। তার চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুপাত হচ্ছে। এদিকে অবস্কিউর শরীরের বিভিন্ন অংশ কামড়ে র*ক্ত-মাংস চিবিয়ে খেতে থাকে। এই পাশবিক দৃশ্যে দেখে আবসারের চোখের জল থামতে চায় না। নিজের বুকে অদৃশ্য আঘাত করতে করতে সে নীরব চিৎকার করে সাহায্য প্রার্থনা করে।

তার মনের কোণে কেবল একটাই অনুশোচনা—কেন সে এমন ভয়ংকর শকুনদের সাথে একা লড়তে গিয়েছিল? কেন সে আগেভাগে বুঝতে পারেনি যে OWL-এর এই শিকারিরা কেবল একজন নয়, আরও দশজন আবসার থাকলেও তাদের রুখতে অপ্রতিহত। পাশে শিশুটির চোখ অশ্রুধারায় উপচে পড়ছে—তার সামনে মা-বাবার এই নিষ্ঠুর পরিণতি হৃদয়কে কুঁড়ে খাচ্ছে। কিন্তু তার হাত-পা-মুখ শক্তভাবে বাঁধা থাকায়, প্রতিরোধের কোনো শব্দই তার অসহায় ঠোঁট থেকে নিঃসৃত হতে পারে না।
পাষণ্ডরা আবসারের স্ত্রীর ওপর দীর্ঘ সময় ধরে লালসার তাণ্ডব চালিয়ে, শেষে নিষ্ঠুরতম বর্বরতায় তার স্ত* কেটে ছিন্ন করে তা আবসারের চোখের সামনে ছুঁড়ে ফেলল। দৃশ্যটি দেখে আবসারের হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। যে নারীর জন্য সে সাত বছরের প্রেম আর ছয় বছরের দাম্পত্যে ভালোবাসার এক অটুট অধ্যায় রচনা করেছিল, তার এমন পরিণতি সহ্য করতে পারা তো দূরের কথা, কল্পনার সামান্যতম কোণেও স্থান পায়নি। ক্রমাগত নিজেকে অপরাধী ভেবে, নিজের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে সে বিষাদে ডুবে যেতে থাকল।

মনে মনে বলে, “ফা*কিং প্রি*ক তুই, আবসার। আজ তোর জন্যই হিমার এত নিকৃষ্ট অবস্থা। হিমা, আমাকে ক্ষমা করে দিও,”বলে অঝোরে কাঁদতে থাকে। কিন্তু কিছুই করার থাকে না।
এদিকে ওরা হিমার যৌ*না*র মধ্যে ছু*রি প্রবেশ করিয়ে বারংবার ক্যাচ ক্যাচ করে কাটতে থাকে। হিমার মৃ*ত্যুর পর, তারা শিশুটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। বাচ্চাটির উপর একের পর এক ধ*র্ষণের আক্রমণ শুরু হয়। সে শুধু নীরব দৃষ্টিতে তার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার চোখে অশ্রুর নদী বয়ে চলে। তার মুখ বাধা থাকায় চিৎকারের শক্তিও তার নেই। তার নিঃসঙ্গ আত্মা প্রার্থনায় নিবদ্ধ থাকে। এদিকে অবস্কিউর বাচ্চাটার চোখের মধ্যে ছু*রি ঢুকিয়ে চোখ দুটো হাতে নিয়ে মুখে পুরে চাবাতে থাকে। আর ডার্ক যকৃৎ বের করে সেটা উন্মাদনায় খেতে থাকলো। বাচ্চাটা এর মধ্যে মৃ*ত্যুবরণ করলেও ব্লাডশেড মৃ*ত বাচ্চাটার উপর নিজের কামনা পূরণ করতে থাকে। অর্থাৎ তখনও ধর্ষ*ণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সে।

আবসারের আর কোনো শক্তি অবশিষ্ট ছিল না। তার একমাত্র সঙ্গী ছিল গভীর বেদনা ও অশ্রু। তারপর অবস্কিউর পানীয় হিসেবে সদ্য বের হওয়া র*ক্ত গোগ্রাসে গিলে হাসতে থাকলো। এরপর দুইটি মৃ*তদেহকে টুকরো টুকরো করা হলো এবং তাদের কাটা যৌ*ন সেই অবিস্মরণীয় চিহ্নের সাথে একটি OWL নাম জুড়ে দেওয়া হলো। পরে র*ক্তমাখা চেহারা নিয়ে ডার্ক আবসারের কাছে এসে তার মুখে রক্ত ও তাদের দেহের কিমা করা মাংস ঢেলে দিল। মুহূর্তেই আবসার বমি করে ভাসিয়ে দিল।
এবার আবসারের অ*ন্ডকো* ধরলো ডার্ক আর পুরু*ষা* ধরলো অবস্কিউর। ব্লাডশেড একসাথে দুটি অঙ্গ কেটে ফেললো। এখানেই আবসারের সমাপ্তি হলেও, ওরা শিগগিরই বুঝতে পারল, আবসারের মতো একজন প্রতিষ্ঠিত অফিসারের পরিবারসহ যেভাবে নির্মমভাবে হ*ত্যা করেছে, তাদের এখন আর কোনো রেহাই নেই। সরকার নিশ্চয়ই এই হ*ত্যাকাণ্ডের জন্য অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
তাই ডার্ক এবং অবস্কিউর, নিজেদের সমস্ত পরিচয় এবং সার্টিফিকেট পালটে, একসাথে দেশ ছেড়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাল।

তবে ব্লাডশেডের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। আবসার ছিল প্রকৃত বুদ্ধিমান ও চতুর ব্যক্তি, যে OWL নামের গুপ্ত রহস্যের সমাধান করতে দেরি করেনি। আবসার এতগুলো প্রমাণ রেখে গেছে, নিশ্চয়ই তার চেহারা সহ বহু কিছুই পুলিশ রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আবসারের হাতে অনেক মূল্যবান এভিডেন্সও ছিল। তাই ব্লাডশেড তার বাবার সাহায্য নিয়ে থানার সমস্ত রেকর্ডসহ, তাদের তিনজনের সমস্ত প্রমাণ মুছে দিল।
ব্লাডশেড যদিও সমস্ত পরিচয় ও সার্টিফিকেট পাল্টে ফেলেছে, কিন্তু তার বাহ্যিক চেহারা তো পরিবর্তন হয়নি। ব্লাডশেড গত চার বছরে শরীরকে বেশ স্বাস্থ্যবান করে তুলেছিল, তাতে তাকে দেখলে পুলিশরা চিনে ফেলবে। তাই এবার সে সিদ্ধান্ত নিল, সে পালিয়ে যাবে না। এরপর ব্লাডশেড ছয় মাস ধরে জিমে কঠোর পরিশ্রম করে তার শরীরের গঠন পাল্টে সুঠাম ও বলিষ্ঠ দেহ গঠন করল, যার ফলে তার চেহারাতেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এল। তারপর সে নতুন রূপে নিজের ছবি সহ চার বছরের সমস্ত সার্টিফিকেট, এনআইডি কার্ডে একে একে সীল মেরে ফেলল। নিজের নামও পরিবর্তন করে পুরোনো ডাকনামটিকেই সনদপত্রের নাম হিসেবে ব্যবহার করল। এখন আর ব্লাডশেডকে চেনা ছিল প্রায় অসম্ভব।

তবে দেশের বাইরে পালানোর প্রয়োজন ছিল, কারণ সরকার এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করেছে—যতদিন না আবসারের হ’ত্যাকারী ধরা পড়ছে, ততদিন এই মামলা চলমান থাকবে। এই আশঙ্কায় ব্লাডশেড দেশের বাইরে চলে গেল। এসব সুরক্ষার ব্যবস্থা তার বাবা আগেই করে দিয়েছিল।
পরবর্তীতে কয়েক বছর পর ব্লাডশেড দেশে ফিরে এক বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করল। কারণ সে জানত, ডার্ক ও অবস্কিউর ছাড়া তার আগের কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে মাঝে মাঝে শারীরিক প্রবৃত্তির তাড়নায় প’তিতালয়ে তার যাতায়াত ছিল, যা তার ভেতরকার অন্ধকার প্রবৃত্তিকে প্রশমিত করত।

বেশ কিছুদিন ধরে ফারহান বারবার তারান্নুমকে ফোন করে চলেছে, তবে প্রতিবারই তারান্নুম উত্তেজনায় অগ্নিগোলক হয়ে ফোন কেটে দেয়।
কিন্তু আজ সে ফোনটি রিসিভ করে নির্লিপ্তভাবে বলে, “বল, কী প্রয়োজন তোর?”
ফারহান হেসে উত্তর দেয়, “তোমার মুখ থেকে কি শুধু সাপের বিষই ঝরে? মধুর শব্দ কি কখনো বের হয় না?”
তারান্নুম তীব্রভাবে রেগে গিয়ে ফুঁসতে থাকে, “তুই যদি সামনে থাকতি, তোর নাক ফাটিয়ে দিতাম। শালা বদমাইশ, বজ্জাত! ফোন রাখ।” বলে ক্ষিপ্তভাবে ফোন কেটে দেয়।
অন্যদিকে তারান্নুমের ঝাঁঝালো কণ্ঠের রাগ শোনার পর, ফারহান হেসে বলে, “এই গোবরচারিনীকে আমার লাগবেই। আই’ভ হ্যাড রিলেশনশিপস উইথ মেনি গার্লস, বাট শি ইজ কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট ফ্রম অল অফ দেম। আর ওর গালিগুলো তো শুনলে যে কেউ নিজেকেই গালি দেওয়া শুরু করবে।”
হাসতে হাসতে সে আবার বলে, “বেবি, তুমি যদি আমার গালি শোনো, শিওর হার্ট ফেইল করবে।”
তারপর একা একা হেসে চলে।

এদিকে তারান্নুম ঠিক করেছে, এবার কারানকে আর কোনোভাবেই অবহেলা করতে দেবে না। যদিও জানে, কারানের সামনে কথা বলতে গেলে তার হাত-পা কাঁপবে, তবুও মনোবল মজবুত করে কারানের বিপক্ষে দাঁড়াতে হবে।
যেতে যেতে সে ফুঁসে উঠতে উঠতে বলতে থাকে, “কি পাইছেটা কি আমারে? ফয়সালইল্লা পোলা, আইজকা তুই শ্যাষ। লগে আসাদইদ্দার পোলারও খবর করুম।”
এবার পুরো বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে শেষে বাড়ির পিছনে এসে সবাইকে দেখতে পেল। সেখানে সবাই মিলে ডাবের পানি খাচ্ছে।
কারান মিরার হাতে ডাব তুলে দিয়ে, কানের কাছে গিয়ে মৃদুস্বরে বলল, “বউ, আজকে আমরা একটু বাইরে বের হবো। তোমাকে আমার গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখাবো।”

মিরা তার কথায় মুচকি হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
এটা দেখে তারান্নুমের চোখ বিস্ময়ে চড়কগাছ। মনের ভেতর ক্রোধের আগুন তো জ্বলছেই, তার ওপর কারান ও মিরার প্রেমালাপ দেখে তার ইচ্ছে হয় মিরার মাথায় একটি ডাব ভেঙে ফেলতে। এদিকে ডাব খাওয়া শেষ হতেই শুরু হলো আখ খাওয়ার প্রতিযোগিতা। কিন্তু মিরা আখ ছিলতে না পারায় কারান নিজেই দাঁত দিয়ে আখ ছিলে মিরাকে খেতে দিল।
সবাই তখন খাওয়ায় ব্যস্ত। ঠিক সেই মুহূর্তে মিরা স্বামীর এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় আপ্লুত হয়ে সবার অগোচরে কারানের অধরে টুপ করে একটি চুম্বন এঁকে দিল। পরক্ষণেই লজ্জায় রক্তিম হয়ে সরে গেল। কারান বিস্মিত হয়ে চারদিকে তাকাল, কিন্তু দেখে সবাই খাওয়ায় এতটাই মগ্ন যে কেউ কিছু লক্ষ্য করেনি। মিরা তখনও লজ্জার আভায় মুখ নামিয়ে রেখেছে।
অন্যদিকে কারান ও মিরার এত গভীর ভালোবাসা দেখে তারান্নুমের চোখে জল চলে এলো। নীরবে সেখান থেকে সরে যেতে যেতে সে নিজের মনে বলে উঠল, “ঠিক আছে, তোমরা সুখে থাকো। আমি আর তোমাগো ভিতরে আসুম না। আমার রাজপুত্তুররে আল্লাহ আমার কপালে লেখেননি।”
বলতে বলতেই তার চোখ থেকে অনবরত অশ্রুধারা ঝরতে থাকল।

দুপুরের আকাশ থেকে বিকেলের আলো ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে। এমন একটা সময়ে কারান কক্ষে প্রবেশ করল। পিছন থেকে মিরাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে মৃদু স্বরে বলল, “যাও জান, রেডি হয়ে এসো।”
মিরা হেসে ফিরে তাকিয়ে বলল, “কিন্তু বাইরে বের হবো, বোরকা তো আনিনি, কারান।”
“বোরকা পরার দরকার নেই। যে পথ ধরে যাব, সেখানে কোনো পুরুষের দেখা মিলবে না। তাছাড়া তোমার পাশে স্বয়ং তোমার বর থাকবে, মিরা।”
এবার মিরা এক চিলতে হাসি এনে নরম স্বরে বলল, “তাহলে ওয়েট করুন, আপনার সুরক্ষার ছায়ায় রওনা হই।”
মিরা হেসে অন্য কক্ষে চলে গেল।

মিরা কালো থ্রিপিসে সজ্জিত হয়ে ঠোঁটে হালকা লিপ বামের ছোঁয়া দিয়ে কারানের সামনে এসে দাঁড়াল। এদিকে কারানও কালো প্যান্ট আর কালো শার্টে নিজেকে এক ভিন্ন আভায় প্রকাশ করেছে। মিরাকে দেখেই কারান তার হাত ধরে এগিয়ে এল।
তারপরে একজোড়া সোনার উপর হীরে গাঁথা চুড়ি তার হাতে পরাতে পরাতে মৃদু হাসি নিয়ে বলল, “আমি তো দুনিয়াতেই জান্নাতের হুর পেয়ে গেছি। অহংকার করো মিসেস মিরা, তোমার উপর অহংকার স্যুট করে।”
মিরা লাজুক হাসিতে উত্তর দিল, “করি তো। আপনার মতো স্বামী পেয়েছি, অহংকার না করলে চলে? আপনি-ই তো আমার অহংকার, কারান চৌধুরি।”
কারান মুগ্ধ দৃষ্টিতে মিরার দিকে তাকিয়ে রইল। মিরাও তার চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণ নীরব রইল। এরপর মিরা মিহি স্বরে বলল, “কিন্তু এই চুড়ি কার, কারান?”

কারান নরম সুরে উত্তর দিল, “এখন থেকে তোমার। দিদা দিয়েছে। তবে এটি মূলত আনতারা কৌশিকার ছিল।”
মিরার কণ্ঠে এক টুকরো আফসোসের সুর ঝরে পড়ল, “মায়ের চুড়ি? আমি যদি যত্ন করে রাখতে না পারি?”
কারান একটু হাসি ঝরিয়ে বলল, “পারবে, বরং তোমার হাতে এ চুড়ি আরও বেশি মূল্যবান হয়ে উঠবে।”
এরপর কারান মিরার হাত ধরে তাকে টেনে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। আয়নার প্রতিফলনে তারা দুজনকেই দেখতে পেল—কালো পোশাকে দুজন পরিপূর্ণতার প্রতীক। কারান মিরার চুলে মুখ গুঁজে তার মৃদু সুবাস গ্রহণ করল। চোখ বন্ধ করে বলল, “একটা সিক্রেট কথা বলি, মিরা। তোমার শরীরের প্রতিটি অংশই আমাকে মোহিত করে, কিন্তু তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জাদুকরী সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তোমার চুলে। তোমার চুলের এই মৃদু সুবাস আমাকে অদ্ভুত উন্মাদনায় ভরিয়ে তোলে। কেন জানি না, তোমার চুলগুলো এতটা প্রিয় কেন আমার।”
মিরা কারানের এই অকপট স্বীকারোক্তিতে কিঞ্চিৎ হাসল। তারপর ঘুরে তার গলায় দুহাত পেঁচিয়ে আলতো করে বলল, “হলো? এখন যাবে না নাকি? আর দেখো তো, লিপ বামটা ঠিক আছে কিনা।”
কারান মিরার ঠোঁটে গভীর চুম্বন দিয়ে জিভ দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে মৃদু স্বরে বলল, “হুম পারফেক্ট, স্ট্রবেরি ফ্লেবার।”

এরপর ঈষৎ হাসি নিয়ে মিরার মাথায় ওড়নার ঘোমটা টেনে দিল। মিরা লজ্জায় আরও গুটিয়ে গেল।
কারান ঠোঁট কামড়ে বলল, “এতটা লজ্জা পেয়ো না, সুইটহার্ট। লজ্জা জমিয়ে রাখো। যখন তোমার পুরোপুরি কাছে আসব, তখন তোমার এই লাজুক মুখটা দেখার জন্য আমার প্রাণ উতলা হয়ে থাকবে।”
মিরা লজ্জায় রাঙা মুখ নিয়ে কারানের বুকে মাথা গুঁজে নিল। কারানও তাকে দুই হাতে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরল। কিছুক্ষণ নীরব আবেশে কাটিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়ল।
কারান মিরার হাত ধরে বাড়ির পেছনের পথে হাঁটতে লাগল। মিরার দুষ্টু-মিষ্টি কথার খুনশুটিতে কারানের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটল। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর তারা একটি ছোট নদীর সামনে এসে দাঁড়াল। নদীর তীরে বাঁধা একটি ছোট নৌকার দিকে ইঙ্গিত করে কারান বলল, “চলো, নৌকায় উঠো। আজ তোমাকে নৌকা ভ্রমণের স্বাদ দিব, এমন এক্সপেরিয়েন্স ঢাকায় কখনোই পাবে না, বেগম।”
মিরা কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে হেসে বলল, “কিন্তু মাঝি কোথায়? চালাবে কে?”
“আছে তো। তোমার পার্সোনাল বোটম্যান।”

মিরা বিস্মিত হয়ে বলল, “তুমি নৌকাও চালাতে পারো? আর কি কি পারো, স্বামীজি?”
কারান হেসে আত্মবিশ্বাসী স্বরে বলল, “রিকশা বাদে মোটামুটি সবই চালাতে পারি। তবে তুমি যদি বল, রিকশাও চালানো শিখে নিব।”
মিরা খিলখিলিয়ে হেসে বলল, “হয়েছে হয়েছে, চলুন এবার।”
কারান মিরার হাত ধরে সাবধানে নৌকায় উঠিয়ে দিল। তারপর নিজেই দাঁড় টেনে নৌকা চালাতে শুরু করল। মিরা চারপাশের অপূর্ব পরিবেশে ডুবে গিয়ে নিজের মনে এই সুন্দর মুহূর্ত অনুভব করছে।
একসময়ে মিরা পানি তুলে কারানের মুখে ছিটিয়ে দিল। কারান হেসে চোখ বন্ধ করল, তারপর আবার চোখ খুলে মিরার দিকে চেয়ে রইল।
মিরা হেসে বলল, “জানো, ছোট থেকেই আমার কত ইচ্ছে ছিল নৌকায় চড়ার, কিন্তু কখনো হয়ে ওঠেনি। আজ তোমার সঙ্গে এই নৌকাভ্রমণ করে আমি এত খুশি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।”
কারান ঈষৎ হেসে বলল, “তাহলে তোমার এই মুহূর্তটাকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলি।”
সে গভীর শ্বাস নিয়ে মায়াময় সুরে গান ধরল,

“একটা ছিল সোনার কন্যা, মেঘবরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ
দুই চোখে তার আহা রে কী মায়া
নদীর জলে পড়লো কন্যার ছায়া।”
মিরা বিস্ময়ের মুগ্ধতায় তাকিয়ে রইল তার স্বামীর দিকে, যে প্রতিটি মুহূর্তকে অপার্থিব রূপকথায় রূপান্তরিত করছে।
অল্প সময়ের মধ্যেই নৌকা এসে তীরে ভিড়ল। মিরা ধীরে ধীরে নেমে দাঁড়াতেই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে কারানের গালে এক চিলতে চুম্বন এঁকে দিল। কারান হেসে ফুল আর বুনো পাতার মিশ্রণে একটি সুনিপুণ টায়রা তৈরি করে মিরার মাথায় পরিয়ে দিল। সে যেন এই অরণ্যের একান্ত রানি।
এরপর কারান স্বচ্ছ হাসি নিয়ে বলল, “এই হলো আমার শশীকা—অরণ্যের অন্ধকারে চাঁদের আলো ছড়ানো রানী।”
মিরা হাসিতে রঙ ছড়িয়ে শুধালো, “আর আপনি আমার অরণ্যরাজ।”
“চলো, তোমাকে একটা স্পেশাল জায়গায় নিয়ে যাই।”

তারপর মিরার হাত ধরে কারান এগিয়ে চলল। পাথুরে মেঠোপথ ধরে তারা হাঁটতে লাগল। চারপাশের নীরবতার মধ্যে শুধু তাদের পায়ের আওয়াজই শোনা যাচ্ছে। অনেকটা পথ পেরিয়ে তারা একটি পুরোনো, ভাঙাচোরা ঘরের সামনে এসে থামল। কারান ঘরটির পানে তাকিয়ে সম্ভাষণ করে, “শেফালি, শেফালি।”
কারানের কথা শেষ হতে না হতেই বাড়ির ভেতর থেকে একটি বুড়ি মহিলা তড়িঘড়ি বেরিয়ে এলো। কারানকে দেখেই অশ্রুভেজা চোখে তাকে জড়িয়ে ধরল। মিরা বিস্ময়ে হতবাক। কারান যেভাবে নাম ধরে ডাকছিল, সে ভেবেছিল, তা কোনো ছোট বাচ্চার হবে। কিন্তু ইনি তো কারানের দাদির বয়সী এক বৃদ্ধা!
বৃদ্ধার চোখে খুশির ঝিলিক, দীর্ঘদিনের অপেক্ষার শেষে তার প্রাণে নতুন সঞ্জীবনী সঞ্চারিত হয়েছে। কারান হেসে বলল, “কেমন আছ তুমি?”

বৃদ্ধা ভারাক্রান্ত স্বরে বলল, “এদ্দিন (এতদিন) পরে আইলি (আসলি) তুই?”
কারান মুচকি হেসে তার গাল টেনে দুষ্টুমির সুরে বলল, “এসেছি তো। আর এবার একদম সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছি। এই দেখো, আমার একমাত্র বউ—মিসেস মিরা চৌধুরি।”
মিরা শ্রদ্ধাভরে সালাম জানাল। বৃদ্ধা আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে মিরার মাথা একটু নীচু করে কপালে এক টুকরো স্নেহপূর্ণ চুমু দিল। এরপর মিরার হাত ধরে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল। মিরাকে এমনভাবে আদরে ভাসাল যেন কতদিনের চেনা মানুষ। মিরা আর শেফালি কথার ফাঁকে পরিচিত হয়ে গল্পে মেতে উঠল।
এদিকে কারান চুপিচুপি টেবিলে একটা খামের মধ্যে কিছু টাকা রেখে দিল, সঙ্গে একটি চিরকুট।
চিরকুটে লেখা: ‘ভুলেও ভেবো না আমি ফ্রিতে টাকা দিচ্ছি। এটা সেই আংটির দাম, যেটা নিয়ে আমি ছোটবেলায় একদিন দৌড় দিয়েছিলাম।

ইতি,
তোমার না হওয়া জামাই।’
তবে টাকার পরিমাণ ছিল সেই আংটির মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
এরপর কারান হেঁয়ালিপূর্ণ কণ্ঠে বলল, “এটা কি ঠিক, শেফালি? তোমার জামাই এসেছি, আর আমাকে ফেলে আমার বউকে আদরে ভাসাচ্ছ?”
কারানের বাচ্চাসুলভ এই দুষ্টুমি শুনে মিরা হেসে ওঠে। বৃদ্ধা মুচকি হেসে বলল, “তোয়ার কপালে চুমা দিলে মিরা বেটি গোসা করিবে। ছোট্ট বেলা দিতে চাইতাম, তহন তো ধারেও আইতে চাইতি না।”

এই দুষ্টুমিভরা আলাপের মাঝেই মিরা একবার চারপাশ খেয়াল করে দেখল। কাদার স্নিগ্ধ সুবাসে পুরো ঘর মাতোয়ারা। বোঝাই যায়, শেফালি কুমারের কাজ করেন। ঘরজুড়ে কোনো বাড়তি আয়োজন বা উপস্থিতি নেই। শেফালি ছাড়া আর কোনো মানুষেরও দেখা নেই। কিছুক্ষণ পরে শেফালি মিরাকে সেই কারুশিল্পের কক্ষে নিয়ে গেল, যেখানে হাঁড়ি-পাতিল তৈরি হয়। মিরা আগ্রহভরে জানতে চাইল, কীভাবে এই শিল্পকর্ম তৈরি করা হয়।
শেফালি মিরাকে কাজ শেখানোর সময় কারানও যোগ দিল। এবার মিরা আর কারান একসঙ্গে কাদা হাতে একটি ফুলদানি তৈরির চেষ্টা শুরু করল। কারান মিরার কাঁধে চিবুক রেখে, মৃদু হাসি নিয়ে তার হাত ধরে পাত্র তৈরির শৈল্পিক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করতে লাগল।

এক পর্যায়ে কারান দুষ্টুমি করে সেই কাদা তুলে মিরার বক্ষস্থলের মাঝে আলতোভাবে লাগিয়ে দিয়ে সেখানে গভীর চুম্বন করল। মিরা লজ্জায় আর আবেশে থমকে গেল। এই মুহূর্তে দুজনেরই হৃদয়ের স্পন্দন এক হয়ে গেল। এরপর তাদের ওষ্ঠাধর এক হয়ে কিছু সময়ের জন্য মায়াময় বন্ধনে আবদ্ধ রইল।
অবশেষে কারান নিজে পানি এনে মিরার হাত ধৌত করতে লাগল। মিরা অপলক দৃষ্টিতে দেখছে, কী যত্ন আর ভালোবাসায় কারান তার হাত ধুয়ে দিচ্ছে। এ দৃশ্য মিরার হৃদয়ে স্নিগ্ধ প্রশান্তি এনে দিল।
কিছুক্ষণ পরে তারা সেখান থেকে বেরিয়ে শেফালির কাছ থেকে বিদায় নিল। বিদায়বেলায় শেফালি তাদের জন্য হৃদয়ভরা দোয়া করল। এরপর দুজন পাহাড়ের দিকে যাত্রা শুরু করল।
পথ চলতে চলতে মিরা অবশেষে হাঁপিয়ে উঠল। হাঁটুতে ভর দিয়ে ক্লান্ত কণ্ঠে বলল, “আর পারছি না, কারান। চলো, আজকের মতো ফিরে যাই। অন্য একদিন আসব।”

তবে কারান মিরার কথার কোনো জবাব না দিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ার দিকে পৌঁছাতে লাগল। মিরার কথা বলার শক্তি এক নিমিষে হারিয়ে গেল। এত উঁচু পাহাড়ে কারান কীভাবে নির্ভীকভাবে মিরার দিকে তাকিয়ে, এক মুহূর্তের জন্যও না থেমে উপরে উঠছে। অথচ কারানের চেহারায় কষ্টের কোনো ছাপও নেই বরং তার মুখে এক ধরনের সুখী হাসি ফুটে উঠেছে।
বেশ কিছু সময় পর পাহাড়ের শিখরে উঠে, কারান মিরাকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। তারপর মিরার অনামিকা আঙুলে, একটা ছোট নীল ‘স্করপিয়ান গ্রাসেস’ ফুল পরিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলল, “আই লাভ ইউ, মহারানি ভিক্টোরিয়া।”

মিরা খুশিতে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। মিরাও এবার বলার জন্য উদ্ধত হলো, ‘সেও কারানকে ভালোবাসে।’ কিন্তু বলার সুযোগ মিললো না। তখনই হঠাৎ কারান তার চোখ ও মুখে হাত দিয়ে অস্থিরভাবে বসে পড়ল। কারানের চোখের সামনে সমস্ত কিছু ঝাপসা হতে শুরু করল। তার দৃষ্টি বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। কারান ক্রমাগতভাবে পাহাড়ের ঘাস খামচে ধরে কিছু একটা যন্ত্রণা সহ্য করার চেষ্টা করছে।
মিরা চমকে উঠে বিচলিত হয়ে তার বাহু ধরে বলল, “কি হয়েছে? কি হয়েছে, কারান?”
এদিকে কারান মিরাকেও স্পষ্টভাবে দেখতে পারছে না। সে চোখের কোণে আঙুল বুলিয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকে।
মিরা আতঙ্কিত হয়ে বারবার তার হাত ঝাঁকিয়ে বলল, “কি হয়েছে, বলো না? তোমার কি অসুস্থতা অনুভব হচ্ছে?”
কিন্তু কারান কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
এদিকে সূর্য অস্ত গিয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়েছে অনেক আগেই। মিরার চোখে অশ্রু জমে উঠেছে। কারানের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, তার নিশ্বাস যেন আটকে যাচ্ছে। মুহূর্তেই তার প্যানিক অ্যাটাক শুরু হয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে মিরা বলে, “কি হয়েছে, জান? বলো না, আমি কী করতে পারি? কাউকে যে কল করবো, কিন্তু এখানে নেটও কাজ করছে না। বলো না, জান।”

এমন সময় কারান মিরাকে জড়িয়ে ধরে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে গিয়ে বলল, “আ..আমার.. অ্যাকরোফোবিয়া আছে।”
মিরা তার কাঁধে হাত রেখে গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, “তুমি এটা আমাকে আগে কেন বলোনি? আর জানো ফোবিয়া আছে, তাও কেন উঠতে গেলে?”
কারান দীর্ঘ এক নিশ্বাস নিয়ে, মিরার দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমার… তোমার উইশ ছিল পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা। সে…সেটাই পূর্ণ করতে চেয়েছিলাম।”
মিরা তৎক্ষণাৎ বুঝে নিল, কারান নিশ্চয়ই তার ইচ্ছে সম্পর্কে ইলিজার কাছ থেকে কোনো পরামর্শ পেয়েছিল। তবে তার ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ মিরার কাঁধে পড়তে থাকলে, এক অজানা উদ্বেগ মিরার মধ্যে প্রবাহিত হয়, যা তার চিন্তাকে আরও দ্বিগুণ করে দেয়।
মিরা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে, ধীরেসুস্থে কারানকে মাটিতে শুইয়ে দিল। এরপর মিরা কারানের বুকের উপর এসে পুসড লিপ ব্রিথিংয়ের নিয়মে, অত্যন্ত কোমলভাবে নিজের ঠোঁট কারানের ঠোঁটে চেপে ধরল এবং ঠোঁট দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস বের করে, প্রায় চার সেকেন্ড স্থায়ী একটি নিশ্বাস ছাড়লো। কারান তখন নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে শুরু করল।

কিছু সময় পর কারান আস্তেধীরে চোখ খুলে। আর সেই সঙ্গে তার দেহের অস্থিরতা কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করল। মিরা তার দিকে তাকিয়ে অনুভব করল, যেন নতুন করে জীবনের স্পন্দন ফিরে পেয়েছে। মিরা দ্রুত বলে উঠল, “অনেক হয়েছে। এবার চলো, বাড়িতে ফিরে যাই।”
কিন্তু কারান মিরার অস্থিরতা লক্ষ্য করে তাকে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিয়ে আঁকড়ে ধরে। ঠিক তখনই পাশ থেকে হোস হোস শব্দে এক বিপজ্জনক বন্য সাপ দ্রুত তাদের দিকে ছুটে আসতে থাকে। কারান মিরাকে কোনো তাড়া না দিয়ে, দ্রুত তার দুই হাত দিয়ে সাপটির গলা চেপে ধরে এবং মুহূর্তেই সাপটিকে ছিঁড়ে দুদিকে ফেলে দেয়। এরপর শোয়া থেকে উঠে বলে, “চলো, সুইটহার্ট।” বলেই মিরাকে নিয়ে পাহাড়ের গা বেয়ে দ্রুত নিচে নামতে থাকে।
মিরা কিছুটা বিচলিত হয়ে কারানের শক্ত হাত আঁকড়ে ধরে তার পাশে পাশে পা বাড়াতে থাকে। এরমধ্যেই অকস্মাৎ মিরার মুখে ফোনের ফ্ল্যাশলাইটের আলো পড়ে। মিরা অপ্রস্তুত হয়ে চমকে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয়।
কিছুটা দূর থেকে একটি অচেনা পুরুষালি কণ্ঠ ভেসে আসে,

“পুষ্পানগরে পুষ্পের আগমন ঘটেছে রে, বিল্লা।”
বিল্লা নামের ছেলেটি পাশ থেকে উঁচু কণ্ঠে বলে উঠে, “হ ভাই। কি মা*ল রে ছেমড়ি! বু*ক থেকে কোমর, সবই চেটেপুটে খা*ইয়া ফেলোন যাইব।”
এটি শুনে মিরা কাঁপতে কাঁপতে কারানের পিছনে গিয়ে তার পিঠের আড়ালে মুখ লুকিয়ে, তার হাত মজবুতভাবে খামচে ধরল। মিরার নখের তীক্ষ্ণ গাঢ় আঘাতে কারানের হাতের উলটো পাশ অনেকটা র*ক্তাক্ত হয়ে গেল, কিন্তু কারানের মুখাবয়ব একদম শান্ত। চোখের কোণে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছড়িয়ে সে চুপচাপ ছেলে দুটিকে লক্ষ্য করছে।
মিরা আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল, “চলো এখান থেকে।”
কারান ভারী গলায় উত্তর দিল, “হুম।”
পরে পা বাড়িয়ে সামনে চলতে লাগল। এদিকে পিছন থেকে বিল্লা নামের ছেলেটি মিরার চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে অশ্লীলতার সাথে বলে, “ভাই, শালীর লগে যদি শুইতে না পারি, তাইলে এ জীবন রাইখা লাভ কি?”

রাতের প্রায় নয়টা। বিল্লা আর হাসান গভীর বনাঞ্চলের পিছনে একটি ছোট ঘরের মধ্যে গোপনে আলোচনা করছে। হাসান উত্তেজিত কণ্ঠে বলে, “শোন মাইয়াটারে যদি তুইলা আইনা বসের হাতে দিতে পারি, বুঝবার পারছোস, আমাগো পজিশন কই থেকে কই যাইব।”
তবে বিল্লা উত্তেজনায় জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে প্রলোভিত সুরে বললো, “কিন্তু ভাই, আমি লোভ সামলাইতে পারতেছি না। ওরে তো আমারই চিবাইয়া খাইয়া ফেলতে মন চায়। শালীর কি মারাত্মক চেহারা। তার উপর রসের মতো ফি*গার।”
হাসান রাগের মিশ্রণে বলে ওঠে, “আরে বা*ইনচো*। খাওয়া মা*ল কি আর বসরে দিলে…”
এর মধ্যেই দরজা অদ্ভুতভাবে ‘ক্রিং’ শব্দে খুলে যায়। আলো-আঁধারের মাঝখানে এক অবয়বের উপস্থিতি দেখা গেল। তার মুখ সম্পূর্ণ অন্ধকারে ঢাকা, কিন্তু ঠোঁট থেকে সিগারেটের ধোঁয়া বাতাসে ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে। হাতের মুঠোয় ধরা রয়েছে একটি তীক্ষ্ণ কুঠার, যার ফলায় আলো প্রতিফলিত হয়ে অদ্ভুত এক ঝলক সৃষ্টি করছে। তারা দুইজন মুহূর্তেই সতর্ক হয়ে ওঠে। তাদের চোখে চূড়ান্ত আতঙ্ক। কারণ তারা নিশ্চিত—এই ভয়ংকর আগন্তুক তাদের দলের কেউ নয়। বিল্লা বলে উঠে, “কে বে তুই?”

আগন্তুকটি ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে গভীর কণ্ঠে উচ্চারণ করল, “মিস্টার এক্স।”
শব্দটি মৃতপ্রাণ কক্ষের শূন্যতাকে ছিন্ন করে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। তারপর নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কাঁধে কুঠারটা তুলে, ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে এলে আলোর আভায় তার মুখমণ্ডল উন্মোচিত হলো। ভস্মরেখার মতো গভীর চোখের চাহনিতে এমন এক শীতলতা ছড়ানো যে মুহূর্তেই তাদের মেরুদণ্ড বেয়ে শিরশিরে ভয় নামিয়ে দিল। তারা চটজলদি বন্দুক বের করে বন্দুকের ট্রিগারে চাপ দিতে উদ্যত হয়, কিন্তু এক চতুর ভঙ্গিতে লোকটি তাদের হাত থেকে বন্দুকগুলো ছিনিয়ে নেয়। সে ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি নিয়ে দু’হাতে বন্দুক দুটি টানটান করে দুজনের কপালে ঠেকায়। লোকটির এই নিপুণ দক্ষতা দেখে তারা স্থবির হয়ে গেল।

লোকটি অনায়াসে বন্দুক থেকে গুলিগুলো বের করে নিয়ে নিজের পকেটে পুরে ফেলল। তারপর ঠান্ডা মাথায় খালি বন্দুকগুলো তাদের হাতে ধরিয়ে দিল। তাদের ভেতরে ভয় তোলপাড় করলেও মুখে রাগের মুখোশ আঁটল।
বিল্লা রাগে উত্তপ্ত হয়ে বলে ওঠে, “তুই কি ভাবলি, তোর মতোন শুয়া*রেরবাচ্চারে ভয় পাই? তুই জানিস না আমাদের বস কে; দুবাই কিং। আর তুই তার চা*মচার মাথায় গুলি ঠেকাস?”
হাসান তীব্র কণ্ঠে বলে ওঠে, “শালা চো*না, তোর কোন কোন জায়গা দিয়া যে গুলি ভরুম, টের পাবি কার গুহায় পা দিছোস।”
এবার লোকটি সামান্য হাসি দিয়ে, ঠান্ডা স্বরে বলে, “আমি কোনো আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়া কিং নই; আমি কিং এরও কিং। আ’ম দি এম্পেরর; যার সামনে রাজারাও মাথা নত করে। আর তোরা সেই সম্রাটের সম্রাজ্ঞীর দিকে চোখ তোলার সাহস দেখালি।”

“শালা মা*দারচো*। তুই সামান্য একটা চু*মা*রানীর লাইগা আইছোস? (বাঁকা হেসে) আর আমরা ভাবলাম কি না কি। আর শুইনা রাখ, তোর ওই বান্দিরে আইজ রাইতেই উধাও করুম,” বলে হাহা শব্দে হাসতে থাকে।
এবার কারান চোখে গভীর স্থিরতা নিয়ে শান্ত গলায় বলে, “যদিও আমি আমার মাকে ঘৃণা করি, বাট শি ইজ দ্য ওয়ান হু গেইভ মি লাইফ টু ওয়াইপ আউট ফা’কিং স্কাম লাইক ইউ। অ্যান্ড ইউ ডেয়ার্ড টু ইনসল্ট হার। প্রথমত আমার বউ, তারপর আমার মা। তোদের যে কীভাবে কীভাবে শেষ করব, সেটা কেবল আমি জানি। আর তা তোদের কল্পনার থেকেও ভয়াবহ হবে।”

কথাটা শোনামাত্রই তারা কারানকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। কিন্তু কারান কুঠার দিয়ে তাদের দুজনের ডান পা মুহূর্তে কেটে ফেলে। ফলস্বরূপ, তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে ব্যথার যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। এদিকে হাসান উত্তেজনায় মিরা এবং কারানকে অকথ্য গালাগাল করতে থাকে। যদিও কারান চৌধুরি শীতল মনে খু*নখারাপের কাজ করে, কিন্তু এখানে বিষয়টা অন্য। স্বয়ং মিরাকে, তার হৃদপিণ্ডকে অশ্রাব্য গালাগাল করা হচ্ছে। এই আবেগে কারানের মধ্যে তীব্র রাগের সঞ্চার হয়। তার চোখের কোনা র*ক্তের মতো লাল হয়ে ওঠে। যে কারণে হাসানের নাকে ঘুসি মারে। কারানের হাতে এত শক্তি যে, তার এক ঘুষিতে লোকটির নাক ভেঙে, চিৎকারের সঙ্গে র*ক্ত বের হয়ে যায়। আর মুহূর্তের মধ্যে হাসান অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
এই দৃশ্য দেখে পাশের বিল্লা ভয়ে ভিতরে ভিতরে গুমরে ওঠে।
কিন্তু তবুও সে মুখে দৃঢ়তার সঙ্গে বলে, “তুই ভুল করছিস খা*কির পোলা। কার সাঙ্গপাঙ্গের গায়ে হাত দিছোস তোর জানা নেই।”

কারান সাধারণত শান্ত থাকত। কিন্তু বিল্লা গালাগাল করায়, সে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তৎক্ষণাৎ ওর কা’টা পা তুলে বিল্লার মাথায় সজোরে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে মাথার একপাশ ফেটে র*ক্ত ঝরতে শুরু করে।
কারান এবার তার মুখের কাছে ঝুঁকে ঠান্ডা গলায় বলে, “নাম বল?”
বিল্লার শরীরে শীতল স্রোতের মতো ভয় বইতে থাকে। যার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ, ভারত, কোরিয়া, দুবাইসহ আরও নানা দেশের সেবকরা কাজ করে অথচ কারান এখন এমনভাবে নাম জিজ্ঞেস করছে, যেন কোনো ভয়ই নেই তার অন্তরে। তবে কারানের সামনে সহজে দমে যাবে না ভাবতে ভাবতে ভয় এবং অস্থিরতায় কাঁপানো গলায় সে বলল, “ই.. ই.. (ঢোক গিলে) ইব্রাহিম বিন জা… জায়েদ।”

এবার কারান ক্ষুদ্র হাসি দিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে, “আমি শুধু তোদের শেষ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন তোদের গোড়া পর্যন্ত উপড়ে ফেলবো। ইব্রাহিম বিন জায়েদকে আমি খু*ন করবো, তাও দুবাই গিয়ে।”
এটা শুনে বিল্লার মুখে ঘামের বিন্দু বিন্দু কণা ফুটে ওঠে। তার শরীর কাঁপছে, গলাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারে, সে ভুল করে ভুল ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
বিল্লা অবাক হয়ে বলে, “বা… বাহিরে যে আমার দলবল ছিল, তাদেরকে কি মা… মাইরা ফেলছিস?”
কারান ঠান্ডা হাসি দিয়ে বলে, “ওরা তো বাঘের সামনে পিঁপড়া সমতুল্য। এক পিষাতেই শেষ।”
এবার বিল্লার অবস্থা আরও নাজুক হয়ে ওঠে। তার ভিতরে ভিতরে ভয়ের আতঙ্ক তাকে গ্রাস করে। মনে মনে সে ভাবে, “ও বাহিরের ৩২ জন মানুষকে মা*ইরা ফেললো, অথচ ভিতরে আমরা আলাপও পাইলাম না। হালায় কি জিনিস!”

কারান আড় হাসি দিয়ে বলে, “আমার একটা বিশেষ ট্যালেন্ট আছে। আমি হলাম মাইন্ড রিডার। যা, তোর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেই। ওদের মারতে খুব বেশি সময় লাগেনি। শুধু ঘাড়ে একটা কো*প মেরেই কাজ শেষ। কারণ আমার আসল টার্গেট তোরা। ওদের মতো মা*দারফা*কার বিচ্ছুর সাথে খেলে তো কোনো মজা নেই।”
এরপর আর অপেক্ষা না করে কারান বিল্লার হাত বাঁধতে দ্রুত এগিয়ে আসে। কিন্তু বিল্লা রুখে দাঁড়ায়, শক্ত হাতে হাত ছিটকে দিতে চায়। তার প্রতিরোধ সত্ত্বেও, কারান তার হাত ধরে নিমিষে উলটো দিকে মচকে তার কবজি ভেঙে ফেলে।
এরপর চেয়ারে বাধতে বাধতে শান্ত চেহারায় বলে,
“আগে আমার একটা স্টাইল ছিল— সামান্য শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিয়ে একটা সুযোগ দিতাম। কিন্তু এখন সেই স্টাইল পুরোপুরি বদলে গেছে। এর মানে, তোদের হাতে আর কোনো সুযোগ নেই। আজকে তোদের এমনভাবে মারবো যে যদি রাইটার্সরা কখনো এই ঘটনা জানে, তা হলে সেটা ইতিহাসের পাতায় একটা ভয়ংকর রহস্যময় অধ্যায় হয়ে থাকবে।”

বিল্লার শরীর প্রবলভাবে কাঁপছে। তার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। অথচ কারানের শান্ত চেহারা এবং তার ভয়ার্ত হুমকি বিল্লার শরীরের প্রতিটি শিরা ও উপশিরায় ভয় ছড়িয়ে দিল। দুজনকে শক্ত করে দুটি চেয়ারে বাধার পর, কারান ধীরেসুস্থে হিটার চালিয়ে পানি গরম করতে থাকে। কিছু সময় পর সেই গরম পানির ঝটকায় হাসানের জ্ঞান ফিরিয়ে আনে। মুহূর্তেই হাসানের মুখ লাল হয়ে ওঠে। সে চিৎকার দিয়ে হঠাৎ জেগে উঠে।
এদিকে কারান কুঠার হাতে মাটি খুঁড়তে থাকে। মাটি কাটার সময় কক্ষের নীরবতায় মৃদু আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। সেই আওয়াজই ওদের হৃদয়ে ভূত দেখার চেয়েও বেশি ভয় ঢুকিয়ে দেয়। গোলাকার গণ্ডি তৈরি করার পর কারান দুটি চেয়ারের হাতলে ভর দিয়ে বসে। চোখদুটো স্থিরভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা কণ্ঠে বলে, “এখন যা হবে, সব এই গণ্ডির মধ্যেই। আমি কখনো তাড়াহুড়ো করে খু*ন করি না, বরং ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে শেষ করি। কারণ তোদের মতো শকুনদের চিৎকার, কাতরানি, আর ছটফটানির দৃশ্য দেখলে মেরে দিল মে সুকুন মিলতা হ্যায়। আর আজ আমার হাতে অনেক টাইম আছে।”

হাসান কাঁপতে কাঁপতে তীব্র কষ্টে বলে ওঠে, “ভা..ভাই, আমরা যদি একবার জা..জানতাম, ও তো.. তোর বান্দি। তাকানোর কথা তো দূরের কথা, ওর কথা ভাবনায়ও আনতাম না। পি… প্লিজ, ছেড়ে দে ভাই। মাইরি বলছি, এই জীবনে আর কোনো মাইয়ার দিকে তাকাবো না।”
অন্যদিকে বিল্লার গলা দিয়ে কোনো শব্দই বের হচ্ছে না।
কারান একটুখানি তাচ্ছিল্য নিয়ে হেসে ঠান্ডা গলায় বলে,
“বান্দি আবার কি জিনিস? ও আমার তিনবার কবুল বলা বউ। ইয়েস, গো অন, কিপ আপলোজাইজিং। আই রেলিশ দ্য সাইট অফ সামওয়ান বাওয়িং দেয়ার হেড ইন ফ্রন্ট অফ মি, প্লিডিং ফর ফরগিভনেস। বাট অ্যালাস, মার্সি হ্যাজ নো প্লেস ইন মাই হার্ট।”

(অনুবাদ: “হ্যাঁ, চালিয়ে যা, ক্ষমা চাইতে থাক। আমি উপভোগ করি যখন কেউ আমার সামনে মাথা নত করে ক্ষমা প্রার্থনা করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমার হৃদয়ে দয়ার জন্য কোনো স্থান নেই।”)
এবার কারান নিজের রূপে ফিরে আসে। সিগারেটের শেষ অংশটি হাতে নিয়ে সেটা হাসানের গলার অ্যাডামস অ্যাপলের নিচে চেপে ধরে, কারণ সে মিরাকে গালাগাল করেছিল। হাসান চিৎকার করে উঠে, তার গলার আওয়াজ আতঙ্কে ফেটে পড়ে। অথচ কারানের ঠোঁটের কোণে তীক্ষ্ণ, শীতল হাসি ফুটে ওঠে। অর্থাৎ সে প্রতিশোধের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছে।

একপর্যায়ে কারান তাদেরই রাখা টেবিল থেকে চা*পাতি তুলে নেয়। সে ঠান্ডা মাথায় সম্পূর্ণ ধীর গতিতে, তাদের শরীরে পো*চাতে পো*চাতে তাদের গায়ের কাপড় কেটে ফেলতে শুরু করে। প্রতিটি পোচে তাদের শরীরের কাপড়ের পাশাপাশি মাংসও কাটতে থাকে। তখন বিল্লা তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলে ফেলে, “তোর বউরে চু*দি, হা*রামজাদা।”
এটা কারানের কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্রই তার চোখ রাগে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়। তার চোখের শিরাগুলোতে টগবগে রক্তের ধারা স্পষ্ট ফুটে ওঠে। সে রাগে কিড়মিড় করতে থাকে। তার দাঁতের কিড়মিড়ের আওয়াজ চারদিকে ধ্বনিত হয়। ক্রোধে তার শরীরটা থরথর করে কাঁপছে।
হাসান আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “বোকাচো* কি বললি এইটা তুই? ভা.. ভাই মাফ কর। ও..ও বুঝবার পারে নাই। তো.. তোর পায়ে পড়ি। ভাই, প্লিজ ছেড়ে দে। ছেড়ে দে, ভাই।”

কারান এক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করে। তার ভেতরে দহনকারী ক্রোধ ম্লান করার প্রয়াসে মিরার মুখটি কল্পনায় ভেসে ওঠে। সে তার হৃদয়ের তাণ্ডবকে সংযত করার চেষ্টা করে। কারণ এই মুহূর্তে তার ইচ্ছা করে বিল্লার গলা এক কো’পে সাফ করে দিতে। কিন্তু এত সহজে প্রতিশোধের পূর্ণতা লাভ করা তার স্বভাব নয়।
চোখ খুলতেই কারানের মুখে ভয়ানক এক অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে। কিঞ্চিৎ সংযত ভঙ্গিতে সে বিল্লার ঠোঁটের এক পাশ এমনভাবে কেটে ফেলে তার চোয়ালের হাড় পর্যন্ত স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিল্লার যন্ত্রণা আর চিৎকারে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে, কিন্তু কারানের রাগ এতেও প্রশমিত হয় না।

তারপরে কোনো ধারালো অস্ত্র ছাড়াই, সে বিল্লার জি*ভ হাতে ধরে এমন শক্তিতে টেনে ছিঁড়ে ফেলে যে র*ক্ত ছিটকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দৃশ্যটি এত ভয়াবহ ছিল যে পাশে থাকা হাসান ভয়ে নিজের প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে। এদিকে কারান শরীরকে আড়মোড়া ভাঙার মতো মোচড় দিয়ে, ঘাড় ডানে-বামে কাত করে। এরপর সে ধীরস্থিরভাবে ফোন বের করে। ঠান্ডা চোখে মিরার ছবিগুলো দেখতে শুরু করে; যেগুলো সে মিরার ফোন হ্যাক করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করেছে। তার ঠোঁটে কোমল হাসি ফুটে ওঠে, যেন এ ছবি তার ক্রোধের দাবানলকে প্রশমিত করে দিচ্ছে। অন্যদিকে হাসান ক্রমাগত প্রাণভিক্ষার আকুতি জানাচ্ছে, কিন্তু কারানের চোখে তার কোনো গুরুত্ব নেই।
নিজেকে সম্পূর্ণ শান্ত করার পর, কারান শীতল মাথায় প্রতিশোধের চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করে। সে ওদের সামনে দুই পা ফাঁক করে চেয়ারে আরাম করে বসে। এরপর পকেট থেকে একেকটি গুলি বের করে বন্দুকে লোড করতে থাকে।
লোডিং শেষ করে বন্দুকের নলটি হাসানের মুখে প্রবেশ করায়। হাসান এই মৃ*ত্যুর ঘনিষ্ঠতা অনুভব করে ভেতরে ভেতরে প্রায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে। চোখে আতঙ্ক আর শরীরে থরথর কাঁপন সত্ত্বেও সে কোনো প্রতিবাদ করার শক্তি খুঁজে পায় না। কিন্তু কারান ট্রিগারে চাপ দেয় না। সে নিঃশব্দে বন্দুক নামিয়ে রাখে।

এরপর পাশ থেকে কুঠার তুলে নিয়ে, হাসান আর বিল্লার উরুর ওপর এমনভাবে আঘাত করতে থাকে যেন প্রতিটি কো*প তার দেহের সমস্ত রাগের বহিঃপ্রকাশ। প্রতিটি কো*পে মাংস বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঝেতে পড়তে থাকে, আর র*ক্তের ধারায় পুরো কক্ষ লাল হয়ে যায়। চিৎকার আর আর্তনাদে চারদিক ভারী হয়ে ওঠে। কিন্তু কারানের মুখে কোনো বিরক্তি নেই। বরং সে এই চিৎকারের মধ্যেই অদ্ভুত প্রশান্তি খুঁজে পায়। কারান শান্তগলায় বলে, “তোরা যদি আমার রাজত্বে থাকতিস, তবে এই শাস্তি দেওয়াটা নিঃসন্দেহে আরও উপভোগ্য হতো। তবে শুকরিয়া আদায় কর, আমার দ্বীপের সীমানার বাইরে আছিস।”

ওদিকে মিরাকে অপমান করার দুঃসাহস দেখানো বিল্লা এখন চেয়ারে নিস্তেজ হয়ে মাথা হেলিয়ে পড়ে আছে। তার চোখে-মুখে শুধুই একটাই প্রত্যাশা—মৃ*ত্যু। সে আর যন্ত্রণা সইতে পারছে না, প্রতিটি নিঃশ্বাসই তার কাছে বোঝার মতো ভারী হয়ে উঠেছে।
পাশের হাসান অসহায় ভঙ্গিতে মাথা নুইয়ে ভাঙা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে, “ভা.. ভাই, তুই স.. সবা.. সবার (শ্বাস টেনে), গুরু। আ… আমি মানছি তুই সম্রাট। আ.. আমি তোর গোলাম, ভা.. ভাই। ছেড়ে দে, নইলে একেবারে মে.. মেরে ফেল।”
কারান শান্তভাবে চেয়ার থেকে উঠে, টেবিলের উপর রাখা হুইস্কির বোতলটি হাতে তুলে নিল। এক হাতে গ্লাসে কিছু ঢেলে, আরেক হাতে সে আবার নিজের চেয়ারটি টেনে বসে। গ্লাসের গা ঘেঁষে ঠোঁট ছুঁয়ে তৃপ্তির সাথে চুমুক দেয়। এরপর ঠান্ডা সুরে বলল, “এটা তো শুরু মাত্র। এত তাড়াতাড়ি মৃত্যুর আহ্বান জানালে হবে? তবে এখন, সত্যি বলতে তোর বার বার প্রাণভিক্ষার আকুতি আমাকে কিছুটা বিরক্ত করছে।”
এবার বিল্লার মতোই হাসানের জি*ভটা টেনে ছিঁড়ে ফেললে, ভীষণভাবে খসে যাওয়া চামড়ার নিচে উন্মুক্ত হয় লাল র*ক্তমাংস।

আচমকা তার মনে পড়ে গেল সেই পাহাড়ের মুহূর্তের কথা, যখন তারা মিরার প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিল; কুৎসিত, পশুচোখে মিরাকে দেখেছিল। তাই আঙুলের খোঁচা দিয়ে, কারান একে একে দুজনের একটা করে চোখের মণি তুলে আনে। চোখের কোটর থেকে গাল ছুঁয়ে র*ক্ত ঝরতে থাকে। তারপর ভয়ানক শক্তিতে তাদের দুটো চোখ হাতের মুঠোয় চেপে ধরলে, তা মুঠোয় গলে যায়। আরেকটি চক্ষু রেখে দেয়, যেন সেই চোখে কারানের নিষ্ঠুরতার প্রতিটি আঘাত স্পষ্টভাবে তারা দেখতে পারে।
এরপর কারান তার হুইস্কির গ্লাসে শেষ চুমুক নিয়ে, হালকা শ্বাস ফেলে গ্লাসটা দুজনের মাথায় সশব্দে ভেঙে ফেলে।
তারপর শোনা যায় ভয়ংকর গর্জন, “You all are nothing but pathetic, insignificant rats. If I have to burn the whole world to ashes for Mira, I’ll fu*cking do it without a second thought. Mira isn’t just in my heart; she is my everything.” বলে হাত দিয়ে বুকের বাঁ পাশ দেখিয়ে দিল।

(অনুবাদ: “তোরা সবাই তুচ্ছ, নগণ্য ইঁদুর ছাড়া আর কিছুই না। মিরার জন্য যদি পুরো পৃথিবীকে ভস্মে পরিণত করতে হয়, আমি তা এক মুহূর্তও চিন্তা না করেই করব। মিরা শুধু আমার হৃদয়ে নয়; সে আমার সবকিছু।”)
পরে কারান নিজের চুলে হাত দিয়ে চুলগুলো পিছনে ঠেলে নিল। অথচ তার চেহারায় কোনো বিরক্তি, কোনো ক্লান্তি, কিছুই নেই।
এদিকে বিল্লা এবং হাসানের মস্তিষ্ক এখন কার্যত একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। তবে যতটুকু বুদ্ধি এখনও কাজ করছে, তাতে তারা বুঝতে পারে—ওরা এমন এক সাইকোপ্যাথের শিকার হয়েছে, যার কাছে তার বউ মানে এক জীবন্ত দেবী।

এরপর কারান সুঁই সুতা দিয়ে তাদের মুখ সেলাই করতে থাকে। কারণ এই মুখ দিয়েই মিরার বিরুদ্ধে অশ্রাব্য, অশালীন বাক্য বেরিয়েছিল। পরবর্তী মুহূর্তে ওদের কানগুলো অর্ধেক কেটে বাকিটা টেনে ছিঁড়ে ফেলে।
এরপর কক্ষের এক কোণে স্থির দাঁড়িয়ে কারান ইনজেকশনের মাধ্যমে তাদের শরীর থেকে র*ক্ত বের করতে থাকে। একের পর এক করে চারটি ব্যাগে তা ভরে যায়।
“মরার আগে অন্তত একবার জেনে তো নে, তোরা কার হাতে প্রাণ হারাতে চলেছিস,” এই ঠান্ডা বাক্যটুকু উচ্চারণ করে কারান আড় হাসতে থাকে।

তারপর বন্দুকের নল বিল্লার অন্ড*কো*র ওপর রেখে নিষ্ঠুর স্বরে বলে, “আবরার কারান চৌধুরি।”
কথাটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে ট্রিগারে চাপ দেয়। তৎক্ষণাৎ অ*ন্ডকো*র ভেতর থেকে র*ক্ত বেরিয়ে আসতে থাকে। র*ক্ত ছিটকে গিয়ে পুরো কক্ষের পাশাপাশি কারানের মুখেও ছড়িয়ে পড়ে।
কারান এবার মাথা ঝুঁকে হাসানের দিকে তাকায়। হাসানের চোখের মধ্যে গভীর আতঙ্ক স্পষ্ট।
“She is undeniably (নিঃসন্দেহে) mine, my property, Aidah Ahsan Mira.” বলেই চোখ টিপ মেরে হাসানের প্যান্টের চেইন খুলে পু*রুষা*টি টেনে ধরে এক পোচে কেটে ফেলল।
সাথে সাথেই হাসানের শরীর ঝাঁকি দিয়ে উঠল, কিন্তু তার গলা থেকে কোনো শব্দ বের হতে পারলো না। কারণ মুখ তো সেলাই করা। এবার কারান হাসানের অন্ড*কো* ঘুসি মেরে, পূর্বের মতোই অন্ড*কো* বরাবর বন্দুকের ট্রিগারে চাপ দিল। এর সঙ্গেই তার প্রাণপ্রবাহ থেমে গেল।

এরপর কারান ঠোঁটে মিষ্টি এক শিস বাজিয়ে একটি ব্যাগ ভর্তি র*ক্ত দিয়ে পা ধুতে থাকে। অন্য একটি র*ক্তের ব্যাগ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিল। তারপর কিছু কিছু জিনিস সেখান থেকে সরিয়ে নিল। পরবর্তীতে এক ঝটকায় তাদের মাথা কে*টে শরীর থেকে আলাদা করে ফেলল। বাকি শরীর কাঁধে তুলে তাদেরই সেডান গাড়ির ডিকিতে তুলে দিল। এরপর কা’টা দুই মাথা দুই হাতে তুলে গাড়ির সামনের অংশে রাখল। শেষমেশ সেই কুড়ালটা কাঁধে তুলে গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করল। অথচ সেই ৩২ জন মানুষের লা*শ ও র*ক্ত কিছুই পরিষ্কার করলো না। অর্থাৎ কারান চাচ্ছে পুলিশ তাকে খুঁজুক, কিন্তু সে জানত যে তারা কখনোই তাকে পাবে না। কারণ কারান কোনো প্রমাণই রেখে যায়নি—না কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট, না কোনো পায়ের ছাপ। এদিক থেকে সে অত্যন্ত চতুর, তাই ধরা পড়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার পর, কাটা মাথা দুটি মিরার সাথে ঘুরতে যাওয়া সেই ছোট নদীর পাশে ফেলে দিল। বাকি শরীর, জি*ভ এবং দুই ব্যাগভর্তি র*ক্ত নিয়ে তার রাজ্য, সেই দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

দ্বীপটি কোনো গ্রাম বা শহরের নিকটবর্তী নয় বরং তারও অনেক দূরে, নির্জন এক স্থানে অবস্থিত। সেখানে পৌঁছাতেই গাড়িটি এক বিশালাকৃতির নদীর তীরে স্থির হলো। অতঃপর স্পিডবোটে আরোহণ করে, সঙ্গে তুলে নেওয়া হলো র*ক্তের থলে ও দেহাংশের ছিন্নাবশেষ। স্পিডবোট জল ছিন্ন করে ছুটে চলল দ্বীপের অন্তহীন নির্জনতার দিকে।
কারান দ্বীপের পাথুরে তীরে পা রাখতেই, গভীর নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে একটি রিমোট তুলে নিল। চোখে অদ্ভুত স্থিরতা নিয়ে আঙুলটি রিমোটের বোতামে চাপ দিল। সঙ্গে সঙ্গে মাটির নীচ থেকে একটি বাড়ি ধীরে ধীরে উঠে আসল। বাড়িটি সম্পূর্ণ কালো। তবে ভিতর থেকে র*ক্তিম আলো ঝলমল করছে। এই লাল আভা যেন হরর হাউজের মতো ভয় আর রহস্যের অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়। কারান বাড়ির সামনে এসে গুপ্তকোড প্রবেশ করাল। এরপর তার চোখে পলক ফেলল। তৎক্ষণাৎ স্মার্ট লকের সেন্সরটি তার চোখ স্ক্যান করে এক ক্লিকের শব্দে লকটি খুলে গেল।

এবার ভিতরে ঢুকে দুটি বিকার নিয়ে, এক এক করে তার মধ্যে দুটি ব্যাগের র*ক্ত ঢেলে দিল। এরপর দুটি তাজা লাল গোলাপ সেই রক্তে ডুবিয়ে দিয়ে, বিকারে অ্যান্টিকোইগুলেন্টস (যে পদার্থ র*ক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না) মিশিয়ে দিল। তারপর জি*ভ দুইটি ঐ দুই আলাদা আলাদা বিকারে রেখে, বিকার দুটি একটা নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দিল। এই জি*ভ দুটো সংরক্ষণের কারণ একটাই–এখান থেকেই মিরার বিরুদ্ধে অশালীন কথাগুলো বেরিয়েছিল।
পরে কারান দুষ্টুমির হাসি হেসে, সুমধুরভাবে সম্বোধন করল, “কাইজার।” (অর্থ-সম্রাট) বলতেই একটা বাঘ তীব্র গতিতে ছুটে এসে তার সামনে গভীর শ্রদ্ধার ভঙ্গিতে বসে পড়ল।
কারান সন্তুষ্ট হাসি হেসে বাঘটার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “ওহ মাই হার্ট, আজকে তোমার জন্য বিশেষ খাবার এনেছি।”
দুই ছেলের দেহটি বাঘটার সামনে ফেলে দিল। বাঘটি এবার হিংস্র রূপ ধারণ করে, তীব্র কাম*ড়ে কাম*ড়ে মাংসগুলো খে’তে থাকে। তাকে ওভাবে খেতে দেখে কারান গভীর আনন্দ অনুভব করে। এবার কারান চিৎকার দিয়ে বলল, “এ্যাবিস্কো।”

মুহূর্তে একটি বৃহদাকার আফ্রিকান রকি পাইথন (যা বিষাক্ত সাপের মধ্যে অন্যতম, যদিও সাপপ্রেমীরা এটিকে পোষ মানাতে পারে, তবে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক) দৌড়ে এসে কারানের পা বেয়ে উপরে উঠে, তার গলায় পেঁচিয়ে মাথা উঁচু করে রইলো। কারান মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, “গলা থেকে নামো, এ্যাবিস্কো।”
সঙ্গে সঙ্গেই সাপটি নিচে নেমে গেল।
এবার কারান এক হাঁটুতে ভর দিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল, “যাও, বাহিরে গিয়ে ঘুরে এসো,” বলতেই সাপটি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
এবার কারান উঠে দাঁড়িয়ে শীতল চাহনিতে নয়নগোচর করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “এই গল্পের রাইটার তুমি নও, এর রাইটার আমি। তোমার হাতে শুরু, আর তার চূড়ান্ত রচনা আমার কলমের গতি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, সুইটহার্ট,” বলে ঠোঁটের কোনে তীক্ষ্ণ বাঁকা হাসল।
এরপর কাঁচা নারিকেলের দুধ আর গোলাপজলের মিশ্রণে পূর্ণবিকসিত বাথটবে নিজেকে পরিষ্কার করে নিল। গোসল শেষে ঊর্ধ্বাঙ্গ ন*গ্ন অবস্থায় একটি ট্রাউজার পরিধান করে, লাইটার দিয়ে সিগারেট জ্বালিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলি আকাশে ছড়িয়ে দিতে লাগল। সাথে একটি ল্যাপটপ নিয়ে দুবাইয়ের ইব্রাহিম বিন জায়েদের সম্পর্কে গুপ্ত খবর সংগ্রহ করতে লাগল।

এসময় চারটি হিংস্র কুকুর এসে কারানের পায়ের পাতা চাটতে শুরু করল। কারান সামান্য হাসি দিয়ে ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে ফ্রিজ থেকে তাজা মানব মাংস বের করে ওদের সামনে রেখে দিল। ওরা পরমানন্দের সহিত খেতে থাকে।
এর মধ্যে কারানের ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। স্ক্রিনের নম্বর দেখে, কারান কিঞ্চিৎ হাসি দিয়ে ফোনটা কানে ধরল।

Tell me who I am part 29

তার কানে মিরার স্নিগ্ধ কণ্ঠ ভেসে এল, “কোথায় তুমি, কারান? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, শুধু আমি একা জেগে আছি। কাজ আছে বলে সেই যে বের হলে, আড়াইটা বাজে এখনো আসার নাম নেই।”
কারান রহস্যময় হাসি দিয়ে উত্তর দিল, “আসছি বেইবি।” ফোনটি কেটে দিল।

Tell me who I am part 31