প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৭
Drm Shohag
ইরফান দুই বছর আগে কীভাবে জানে, মাইরা মিলিয়েনিয়ার হতে চায়? শুদ্ধ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইরফানের প্রস্থান দেখে। ইরফানের কথাটা তার পুরো মাথার উপর দিয়ে গেল।
চোখ ঘুরিয়ে ফারাহকে খুঁজলে দেখল নেই। ক্লাসে গিয়েছে হয়তো। তার ক্লাসের আর দশমিনিট এর মতো টাইম আছে। ফোনে ফাইজের কল আসলে শুদ্ধ কল রিসিভ করে কানে দেয়। সে ফাইজকে কল দিয়েছিল। রিসিভ করেনি। এখন ব্যাক করেছে।
“কিছু বলবি?”
শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে বলে,____”ইনায়ার লাভার এর নাম্বার নিবি না?”
ফাইজ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,___”তুই ওর গলা ধরে বসে থাক যা। শা’লা বাঁদর।”
শুদ্ধ মুখটা ছোট করে বলে,____”দেখ তোরা সবাই আমাকে এভাবে বাঁদর ডাকতে পারিস না। আমার একটা প্রেস্টিজ বলে কিছু আছে!”
ফাইজ পাত্তা দিল না। শুদ্ধ হেসে বলে,____”তুই কি আমার থেকে কিছু শিখেছিস সোনা? আমাকে আমার ফারাহকে কেড়ে নেয়ার ভ’য় দেখালি ক্যান? শোন, ভালো হয়ে যা। ভালো হতে পয়সা লাগে না।”
ফাইজ আসমান থেকে পড়ার মতো করে বলে,___”বিশ্বাস কর, একটুও মানায় না এসব ডায়লগ তোর মুখে।”
শুদ্ধ হাসল। এরপর একটু সিরিয়াস হয়ে বলে,____”আমি বিজনেস করতে চাই না ফাইজ। যাস্ট এই চাকরি করতে চাই।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফাইজ অবাক হয়ে বলে,____”মানে? আমি আমার বিজনেস এর পাশাপাশি তোর বিজনেস-এ তোকে অনেক হেল্প করেছি। ভুলে গিয়েছিস?”
শুদ্ধ হতাশ কণ্ঠে বলে,____”আমার ভালো লাগে না। আমার বাবা প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার ছিল, সেই হিসেবে আরেকটু উপর জায়গায় আমি আছি। এটাই অনেক।”
ফাইজ গম্ভীর স্বরে বলে,____”ফারাহ মানাতে পারবে না। তুই এসব কথা বাদ দিয়ে কাজ কর। রাখছি।”
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলে,___”আমি করব না বিজনেস। আমার ভালো লাগে না। এতো টাকা লাগবে না আমার।”
ফাইজ বিরক্তি কণ্ঠে বলে,___”আমার বোনের লাগবে। ভালো লাগে না এটা কেমন কথা? এসব ফা’ল’তু চিন্তা বাদ দিয়ে টাইম লস করিস না। কাজ কর যা।”
শুদ্ধ রেগে বলে,___”আমি করব না মানে না। এটাই ফাইনাল।”
ফাইজ রেগে বলে,____”তাহলে আমার বোনকে ভুলে যা।”
বলেই কল কেটে দেয়।
শুদ্ধর চোখেমুখে বিস্ময়। ফাইজের বিহেভে তার খা’রা’প লাগলো। মানে ফাইজ তাকে কোটিপতি বানিয়ে তার হাতে তার বোনকে তুলে দিতে চায়। কিন্তু সে তো চায় না টাকা। বিরক্ত লাগে কেন যেন। বাবার কথা মনে পড়ল। হালকা হালকা মনে পড়ে শুদ্ধর। তখন তার বয়স সাত বছর হবে হয়ত।
গরমকালে তার বাবা গ্রামের প্রাইমারি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতো বিকাল করে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে থাকতো। শুদ্ধ খেলা রেখে দৌড়ে বাবার কাছে আসতো। পানি এগিয়ে দিতো, টেবিল ফ্যান চালিয়ে দিতো। কারেন্ট না থাকলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতো। তার বাবা স্নেহের হাত বুলাতো তার মাথায়। একদিন হঠাৎ-ই মানুষটা চলে গেল। শুদ্ধ র বাবা ডাক টা হারিয়ে গেল। শুদ্ধ আর খেলতে যেত না। খেলার মাঝে বাবাকে দেখে দৌড়ে আসা হবে না যে আর। তার বাবার পরা লুঙ্গি গুলো ছোটবেলায় সে গুছিয়ে রেখেছিল। সবাই বলতো মানুষদের দিয়ে দিতে। শুদ্ধ দেয়নি। বেশি জোর করলে সে কেঁদে কেঁদে বলত, ‘তার বাবার কাপড় সে বড় হয়ে পরবে।’
সে সত্যিই পরে। তার বাবার তিনটে লুঙ্গি, তিনটে ফতুয়া ছিল। অনেক বিলাসিতা তো তাদের ছিল না। তিনটে লুঙ্গি, তিনটে ফতুয়া শুদ্ধর আলমারিতে খুব যত্নে তুলে রাখা আছে। মাসে এক থেকে দুইদিন সে এটা পরে।
কথাগুলো ভাবতেই চোখজোড়া কখন যে ভিজে উঠেছে বুঝতেই পারে নি। গ্রামের বাড়িতেই তার বাবার কবর। তার মাকে এজন্যই এখানে একেবারে আসতে বলতে পারে না। সে নিজেই তো পারবে না। সেই গ্রাম ছেড়ে কি করে আসবে? যেখানে তার বাবা শুয়ে আছে। ফোন পকেটে রেখে দু’হাতে চোখ ডলে স্বাভাবিক করে নিল। এরপর ক্লাসরুমের দিকে এগিয়ে যায়।
ক্লাস শেষে শুদ্ধ ইরফানের রুমে আসে। ইরফানকে দেখল না। চুপচাপ গিয়ে বসল একটা চেয়ারে। এরপর চোখ বুজল। ভালো লাগছে না কিছু। কিছুক্ষণ পর ইরফান তার রুমে এসে শুদ্ধকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কিছু না বলে তার চেয়ারে গিয়ে বসে। শুদ্ধ চোখ মেলে ইরফানের দিকে তাকায়। ইরফান ফোনে কিছু করছে, শুদ্ধর দিকে একবার তাকিয়ে আবারও ফোনে মগ্ন হয়ে থাকে কিছু সময়। এরপর ফোন ডেস্কের উপর রেখে শুদ্ধর দিকে তাকায়। এই রেডিও চুপ থাকায় ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকায় শুদ্ধর দিকে। শুদ্ধ চেয়ারে হেলান দিয়ে বুকে আড়াআড়ি ভাবে দু’হাত গুঁজে চোখ বুজে আছে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,____”হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
শুদ্ধ চোখ মেলে তাকায় ইরফানের দিকে। গালে হাত দিয়ে বলে,___”বউ কে ভালো রাখতে, সুখী করতে কত টাকা লাগে ইরফান?”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,____”লট’স অফ মানি।
একটু থেমে বলে,___সে যখন যা চাইবে, এটা সেকেন্ড টাইম চাওয়ার আগেই সবকিছু তার সামনে এনে দেয়া প্রয়োজন। কিছু একটা চুজ করলে, তার বিকল্প আরও অনেকগুলো তার সামনে হাজির করা প্রয়োজন। যেন সে পিছু ফিরে না বলে, যেটি নিয়েছি, এটার মতোই ওইটাও সুন্দর। এই ভাবনা ভাবার টাইম টায় সে তার পার্সোনাল পার্সনকে নিয়ে ভাববে,,
‘সে না চাইতেও তার হাসবেন্ড তাকে তার পছন্দের সবকিছু এনে দিয়েছে?’
দ্যটস ফিলিংস ইজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। অ্যান্ড, এই ফিলিংস মানি ছাড়া ইম্পসিবল।
সে মাটিতে হাঁটতে হাঁটতে বোর ফিল করলে হাসবেন্ড এর আকাশে উড়তে নিয়ে যাওয়ার অ্যাবিলিটি থাকতে হবে। সে আফসোসের শ্বাস ফেলার সময়টায় হাসবেন্ড এর দিকে কৃতজ্ঞতার চোখে তাকাবে। দিস ইজ কলড হ্যাপিনেস। অ্যান্ড এই হ্যাপিনেস এর জন্য যেটা প্রয়োজন তা হলো মানি। আর মানি অ্যারেঞ্জ করতে প্রয়োজন, আ লট অফ হার্ড ওয়ার্ক।”
শুদ্ধ বিস্ময় দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান ভালোবাসার সজ্ঞা দিল না! হ্যাঁ তাই তো! কিন্তুু ইরফানের সাথে তার ভাবনা তো মিললো না। একদম না। নিজেকে সামলে বলে,
“আমি জানি তুই এসব ভালোবাসার সজ্ঞা বললি। কিন্তুু আমার মনে হয়, ভালোবাসা শুধু শখ পূরণে নয়, কখনো কখনো শখ বিসর্জনের মাঝেও ভালোবাসা নিহিত থাকে। তুই বললি, বউ কিছু পছন্দ করলে তার বিকল্প আরও অনেকগুলো জিনিস সে চাওয়ার আগেই তার সামনে হাজির করতে। কারণ কখনো যেন পিছু ফিরে আফসোস না করে, সেই সময়টায় সে যেন এটা ভাবে,
‘আহা! আমার বর টা এতো ভালো কেন? না চাইতেই সবকিছু এনে দেয়।’
আমি বলছিনা হাসবেন্ড এর এসবে ভালোবাসা মিশে নেই। অনেক ভালোবাসা মিশে থাকে এখানে।
কিন্তু বউ কোনো কিছুর অভাবে আফসোস না করে যখন সেই স্বামীর হাতটাই আঁকড়ে ধরে। সেখানেও তো কম ভালোবাসা মিশে থাকে না!
সবসময় পছন্দের জিনিস এর পাশাপাশি বিকল্প জিনিস এনে দিলেই সেখানে সুখ বয়ে আসে না। কখনো কখনো অনেক লোভনীয় জিনিস এর মাঝ থেকে হাসবেন্ড ভালোবেসে একটা সস্তা জিনিস এনে দিলে, সে নারী তার হাসবেন্ড কে ভালোবাসলে তার কাছে সেই সস্তা জিনিসটাই অনেক লোভনীয় হয়ে যায়। এটাকেও সুখ বলে। এর জন্য টাকার প্রয়োজন হয় না, প্রয়োজন হয় একটা সুন্দর মন এর।”
ইরফান চেয়ারে হেলান দিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে শুদ্ধর দিকে চেয়ে রইলো কিছু সময়। এরপর সোজা হয়ে বসে ঠোঁট বাঁকিয়ে সূক্ষ্ম হেসে বলে,___
“You are right. But I a not wrong – in fact I am even more right than you.”
[তোর কথা সঠিক। তবে আমার কথাটা ভুল নয় বরং তোর কথার চেয়েও বেশি সঠিক]
একটু থেমে ইরফান আবারও বলে,,
“For example,
ওয়াইফ সিক হলে, অনেক বড় বড় ডিজিজ দেখা দিলে, এর ট্রিটমেন্ট করাতে অভিয়েসলি টাকা লাগবে। যদি টাকা না থাকে, দ্যন ট্রিটমেন্ট এর অভাবে সে মা’রা যাবে। সো, মানি ইজ ভেরি ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট।
Suppose,
ওয়াইফ অনেক সিক হয়ে পড়েছে। তাকে হসপিটাল নিতে হবে। সিচুয়েশন ক্রিটিকাল। বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো হসপিটালে নিতে হবে তাকে নেক্সট এক ঘণ্টার মাঝে। সিক ওয়াইফ আর সবচেয়ে ভালো হসপিটাল এর ডিসটেন্স মিনিমান দশ থেকে বারো ঘণ্টা। What now?” [এখন উপায়?]
কথাটুকু বলে ইরফান শুদ্ধর দিকে চেয়ে রইল। শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। ইরফান আবারও সামান্য ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,____
“ইনস্ট্যান্ট হেলিকপ্টার প্রয়োজন। কজ, হেলিকপ্টার ছাড়া তাকে বাঁচানো পসিবল না। সেই সস্তা জিনিস নিয়ে সুখী হতে গেলে আগে হেলিকপ্টার দিয়ে তাকে বাঁচাতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন মানি।
Money is power. It’s true.”
কথাগুলে বলে ইরফান একটু থামে। শুদ্ধর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
“Sometimes, money is love.”
শুদ্ধর কাছে উত্তর নেই। ইরফান শুদ্ধর অবস্থা বুঝতে পেরে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ফোনে মগ্ন হয়। ইরফান একটু পর আবারও মাথা তুলে শুদ্ধর দিকে তাকায়। কিছু একটা ভেবে বলতে শুরু করে,,
“নো টেনশন। তোর কথাগুলো হান্ড্রেড পার্সেন্ট রাইট। তোর কথাগুলো লাভ এর ব্যাসিক পার্ট। আমিও মানি এটা। এই টপিকে ডেফিনেশন দিতে গেলে শেষ করা যাবে না। তাই এই চ্যাপ্টার ক্লোজ রাখলাম। যেহেতু টাকার চ্যাপ্টার নিয়ে আস্ক করলি, তাই এটা নিয়েই বললাম।
ধরে নিলাম, ওয়াইফ এর কোনো ডিজিজ হয়নি।
বাট আমাদের হাতে ওয়ে থাকতে টাকা ইনকাম না করে বসে থাকা উচিৎ নয়। কারণ তুই টাকা ছাড়া ওয়াইফ এর অনেক ইচ্ছেই পূরণ করতে পারবি না। দ্যন তোর নিজের গিল্টি ফিল হবে। তুই কেন বসে বসে টাইম ওয়েস্ট করলি, সেই টাইমটায় টাকা ইনকাম করলে তোর বউকে তুই বেস্ট টা-ই এনে দিতে পারতি। তোর বউ সস্তা জিনিস নিয়েই সুখী হবে। ওকে, মেনে নিলাম।
বাট একবার হলেও তার লোভনীয় জিনিসের উপর চোখ পড়বে,, ওই জিনিসটা হাতের কাছে পেলে মুখে হাসি ফুটবে। তার মুখে ওই হাসিটুকু ফোটাতে তুই যখন হার্ড ওয়ার্ক করবি, সেটাও লাভ এর পার্ট। এসব বললাম, যার টাকা ইনকাম করার সোর্স আছে। তার বসে থাকা বেমানান।
বাট ইউ আর ডিফরেন্ট। কজ, অ্যা’ম উইথ ইউ।
একবার শ্বাস ফেলে ইরফান আবারও বলে,
যদি কেউ অনেক ট্রাই করার পরও টাকা ইনকামে ফেইল করে, দ্যন সেই ওয়াইফ মানিয়ে নিবে, ইট’স কলড লাভ। ইট’স ট্রু।
যাস্ট লাইক দ্যট [ঠিক তেমনি] হাসবেন্ড ওয়াইফের সব ইচ্ছে পূরণে তার বেস্ট টা দিয়ে টাকা ইনকাম করে বউ কে কুইন করে রাখবে, ইট’স অলস কলড লাভ।
আই থিংক, এভরি হাসবেন্ড এর ইচ্ছা তার বউকে কুইন বানিয়ে রাখা। সেটা সবকিছু দিয়ে। লাইক Heartfelt emotion[হৃদয়ানুভূতি] and Money.”
কথাগুলো বলে ইরফান চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজল। লম্বা শ্বাস টেনে বিড়বিড় করে,_____”আমি আমার বার্ডফ্লাওয়ার কে টাকা ও হৃদয়ানুভূতির কুইন বানিয়ে রাখতে চাই।”
একটু পর আবারও সোজা হয়ে বসে ইরফান। এরপর ফোনে কাউকে কল দিয়ে কথা বলতে থাকে।
শুদ্ধ বুঝলো কি-না! চুপচাপ শুনলো ইরফানের কথা। কিছু বললো না। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। একটা চেয়ার নিয়ে ইরফানের পাশে রাখে চেয়ারটি। এরপর সেই চেয়ার বসে ইরফানের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজে। ইরফান ঘাড় বাঁকিয়ে শুদ্ধর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। চিন্তিত কণ্ঠে বলে,____”হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
শুদ্ধ নির্জীব গলায় বলে,___”তোরা সব বড়লোকী মানুষ ভাই। তোদের হিসাব তোদের কাছে রাখ।
কিন্তু আমি বিজনেস করব না। আবার আমার ফারাহকেও লাগবে। কিন্তু ফাইজ বলেছে বিজনেস না করলে ওর বোনকে না-কি আমাকে দিবে না। ভুলে যেতে বলেছে।”
ইরফানের চোখেমুখে বিস্ময়। ভ্রু কুঁচকে বলে,___”তুই বিজনেস করবি না কেন?”
শুদ্ধ ওভাবেই চোখ বুজে বলে,___”আমার ভালো লাগে না।”
ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,___”ওকে ফাইন, করতে হবে না।”
শুদ্ধ একটু হাসলো।
ইরফান কথাটা বলে সরাসরি ফাইজকে কল করল। কল রিসিভ হওয়ার সাথে সাথেই ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,____”তুই শুদ্ধকে কেন বলেছিস ও যেন ফারাহ কে ভুলে যায়?”
ওপাশ থেকে ফাইজের কপালে ভাঁজ পড়ে। সে কিছু বলার আগেই ইরফান রাগান্বিত স্বরে বলে,___
“ওর বিজনেস ভালো লাগে না ও করবে না। সিম্পল। তুই কেন বলবি ফারাহকে ভুলে যেতে? তোর কি স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে?
দ্যন, ওকে ফাইন, আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি।
শুদ্ধর ভাই একদম জলজ্যান্ত বেঁচে আছে। অ্যান্ড হি’ল বি এবল টু হ্যান্ডেল এভরিথিং, আন্ডারস্ট্যান্ড?”
একটু থেমে শ্বাস ফেলে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
“তোর কি আমাকে ভিখারি লাগে? তোর বোনের কত চাওয়া পাওয়া আছে? আমি ইরফান নেওয়াজ সব মিটিয়ে দেয়ার পরও তোর বোন হাবুডুবু খাবে। তুই কোন সাহসে শুদ্ধকে বললি ফারাহকে ভুলে যেতে?”
শুদ্ধ চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে ইরফানের দিকে। কোন মাথা পা’গ’লার কাছে তার দুঃখ প্রকাশ করে ফেলেছে! হায় হায় সব গেল। শুদ্ধ দ্রুত চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে ইরফানের কান থেকে ফোন টেনে নিতে চাইলে ইরফান জ্বলন্ত চোখে তাকায় শুদ্ধর দিকে। রাগান্বিত স্বরে বলে,____”ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
শুদ্ধ অসহায় কণ্ঠে বলে,___”ভাই রে থাম। তোর পায়ে ধরি। চুপ যা মেরি বাপ।”
ইরফান শুদ্ধর কথা শুনলো না। বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ফাইজ ওপাশ থেকে কিছু বলার-ই সুযোগ পাচ্ছে না বেচারা। এতোক্ষণ পর একটু সুযোগ পেয়ে বলে,____”ইরফান তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি রে’গে বলে ফেলেছিলাম। আমার কথাটা…
ইরফান ফাইজকে কথাটা শেষ করতেই দিল না। চিৎকার করে বলে,____”রাগ মাই ফুট! তোর সাহস কি করে হলো ওকে এইসব ফা’ল’তু কথা বলার?”
শুদ্ধ বিড়বিড় করল,___”লে হালুয়া! এ রাগ করছে সেটা কিছু না। অন্যের রাগকে বলছে রাগ মাই ফুট! হাহ!”
এসব রেখে ইরফানের পিছনে দাঁড়িয়ে জোর খাটিয়ে ইরফানের কান থেকে ফোন সরিয়ে কল কেটে দেয়। ইরফান রেগে বলে,____”তোর প্রবলেম কি? তুই আমাকে ডিস্টার্ব করছিস কেন?”
শুদ্ধ হঠাৎ-ই ইরফানকে জড়িয়ে ধরল। ইরফান এক পা পিছিয়ে যায়। রাগ কমেছে বোধয়। শুদ্ধ শব্দ করে হাসছে। ইরফান ভ্রু কুঁচকে নেয়। শুদ্ধ ইরফানকে ছেড়ে হাসতে হাসতে ইরফানের চেয়ারে বসে পড়ে। ইরফান বিরক্তি চোখে চেয়ে আছে। শুদ্ধর হাসি থামছেই না। ইরফান রেগে বলে,___”পা’গ’লের মতো হাসছিস কেন? কি প্রবলেম?”
শুদ্ধ বেশ কিছুক্ষণ পর হাসি থামায়। মুখে মিটিমিটি হাসি। লম্বা করে শ্বাস টেনে বলে,____”ভাই আমি ভাবতাম তুই শুধু মাইরার জন্যই মাথা খা’রা’প ছেলে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সামথিং সামিথিং…”
ইরফান ভ্রু কুঁচকে বলে,___”হোয়াট?”
শুদ্ধ এই ব্যাপারে আর কিছু বললো না। বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে,___”ফাইজ মন থেকে বলেনি। এটা আমি তো বুঝেছিলাম-ই। তবুও খা’রা’প লাগায় তোকে বলেছি। ওকে ফাও কথা শোনালি। সর, দেখি ওর কাছে যাই।”
ইরফান কিছু বলল না। শুদ্ধ ইরফানের রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে গিয়েও দরজার কাছে দাঁড়িয়ে পিছু ফিরে তাকালে দেখল ইরফান চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে। শুদ্ধ মিটিমিটি হেসে ডাকল,___”ইরফান সোনা?”
ইরফান চেয়ারে হেলান দিয়েই চোখ মেলে তাকায়। শুদ্ধ একটা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দেয়। ইরফানের চোখেমুখে বিরক্তি। শুদ্ধ এটা দেখে হেসে বলে,___”ওমাগো দূর থেকে হচ্ছে না? দাঁড়া সোনা কাছে গিয়ে দিচ্ছি। তবুও কান্দিস না সোনা।”
ইরফান রেগে ডেস্কের উপর থেকে পেপার ওয়েট নিয়ে শুদ্ধর দিকে ছুঁড়ে মারে। শুদ্ধ দ্রুত কেচ ধরে নেয়। আসফোসের সুরে বলে,____”মানুষের ভালো করতে নেই!”
ইরফান রেগে বলে,____”যাবি তুই?”
শুদ্ধ ততক্ষণে দরজা আটকে হাওয়া।
ঘড়ির কাটা জানান দেয় রাত ৮ টা বেজে ২০ মিনিট। মাইরা মুখ ফুলিয়ে বেডের উপর বসে আছে। সে ইরফানের কাছে মিষ্টি চাইলো। কিন্তু লোকটা তাকে মিষ্টি এনে দিল না। ভাবনার মাঝেই ইরফান ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। মাইরা দু’হাঁটুর উপর কপাল ঠেকিয়ে রেখেছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে দেখল ইরফানকে। দু’জনের চোখাচোখি হতেই মাইরা মুখ ফিরিয়ে বামদিকে নিল। ইরফান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মাইরার মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ধরণ তার পছন্দ হলো না।
ইরফান অপরপাশে গিয়ে মাইরার সামনে দাঁড়ায়। মাইরা তার সামনে ইরফানকে দেখে আবারও ডানদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। এগিয়ে এসে মাইরাকে টেনে সোজা করে বসায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,____”হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
মাইরা অভিমানী চোখে তাকায়। ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে,____”কি প্রবলেম? কথা বলছো না কেন?”
মাইরা গাল ফুলিয়ে বলে,____”আপনি মিষ্টি আনলেন না কেন? আমি তো বলেছি-ই আপনাকে টাকা দিয়ে দিব। তবুও কিপ্টামি করছেন কেন?”
ইরফান মাইরার দিকে চেয়ে রইলো। মাইরাও ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। ইরফান গম্ভীর গলায় বলে,____”স্টুপিট, এনেছি মিষ্টি। ১০ মিনিটে রেডি হবে।”
মুহূর্তেই মাইরার চোখেমুখে উৎফুল্লতা খেলে গেল। কিন্তু রেডি হবে হবে কেন? অতঃপর কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে,___”রেডি হব কেন?”
ইরফান স্বাভাবিক গলায় বলে,___”তোমার ভাই মিষ্টি খাবে না?”
মাইরা ইরফানের কথায় অবাক হলো। দ্রুত বলে ওঠে,___”হ্যাঁ হ্যাঁ ওর তো মিষ্টি খুব পছন্দ। আপনি এই রাতে আমাদের গ্রামে যাবেন?”
ইরফান ওয়াশরুমে যেতে যেতে বলে,_____”ইয়াহ! ফাস্ট কর।”
মাইরা ভীষণ খুশি হলো। সে দ্রুত বেড থেকে নেমে জলপাই কালারের একটি বোরখা পরে নিল, সেইম কালারের হিজাব বেঁধে নিল। আজ হিজাবের নিচে একটা কালো ক্যাপ দিয়েছে, ডান পাশে একটুখানি বেরিয়ে আছে, যেখানে ছোট্ট ছোট্ট সাদা রঙের কয়েকটা স্টোন বসানো। একটু অন্যরকম লাগছে দেখতে।
এরকম দু’টো ক্যাপ তাকে ইনায়া দিয়েছিল। মাইরা ছোট থেকে শুধু হিজাব-ই পরতো। আজকেই ফার্স্ট এই ক্যাপ পরলো। ভালোই লাগছে।
এরই মাঝে ইরফান শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে। মাইরা ইরফানের দিকে হেসে তাকালো। ইরফানও মাইরার দিকে তাকায়। চোখ সরাতে গিয়ে সরালো না। নতুনত্ব কিছু পেয়েছে বোধয়। মাইরা ইরফানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,___”আমি আপনার আগে রেডি হয়ে গিয়েছি। আপনি দ্রুত আসুন।”
ইরফান মাইরার দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখেমুখে কি উৎফুল্লতা! বাড়ির কথা বলাতেই এমন! মাইরা ইরফানকে পাশ কেটে যেতে নিলে ইরফান মাইরার হাত টেনে তার সামনে দাঁড় করায়। মাইরার মাথার হিজাবের কোণায় কালো ক্যাপটুকু টেনে বলে,___”এটা কি?”
মাইরা দ্রুত তার মাথার ক্যাপ আটকে বলে,___”আরে কি করছেন? খুলে যাবে তো!”
ইরফান মাইরার দিকে তাকালো। গম্ভীর গলায় বলে,____”এটার নাম কি?”
মাইরা ডান হাত কোমড়ে রেখে জবাব দেয়,____”এটার নাম ক্যাপ, হিজাবের নিচে পরে। তাহলে সুন্দর লাগে, বুঝলেন?
আমি গেলাম। আপনি আসুন।”
কথাটা বলে একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। ইরফান বিড়বিড় করল,___”Girls’ cap! Nice!”
মাইরা নিচে নেমে দেখল পুরো টেবিল মিষ্টির প্যাকেট বুক হয়ে আছে। এতো মিষ্টি এনেছে হায় আল্লাহ? টেবিলের এক কোণায় শুদ্ধকে আরাম করে মিষ্টি খেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে বসেছে সে। একটার পর একটা মুখে দিচ্ছে। মাইরার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। এভাবে খাওয়া দেখে তার নিজের-ই কেমন গুলিয়ে আসছে। এতো মিষ্টি কিভাবে খায়?
রুমা নেওয়াজ এগিয়ে এসে বলে,_____”শুদ্ধ আব্বু আর দিব?”
শুদ্ধ প্যাকেটে থাকা শেষ দু’টো মিষ্টি মুখে পুড়ে চিবিয়ে খেয়ে নিল। এরপর বলে,_____”নাহ মামি। পুরো হাফ কেজি খেয়েছি। আজ আর কিছু খেতে পারবো না।”
মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। হাফ কেজি? একবারে? শুদ্ধ চেয়ার থেকে উঠে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে নেয়। মাইরাকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে বলে,____”কংগ্রাচুলেশনস মাইরা!”
মাইরা হাসতে পারলো না। সে কখনো কাউকে একবারে এতো মিষ্টি খেতে দেখেনি। শুদ্ধ টিস্যু দিয়ে হাত মুখ মুছে হেসে বলে,____”আমার মিষ্টি খাওয়া দেখে ভয় পেও না। আরও হাফ কেজি খেতে পারবো। একটু রেস্ট নিচ্ছি আর কি!”
ইরফান উপর থেকে নেমে মাইরার হাত ধরে বাইরে যেতে থাকে। শুদ্ধ পিছন থেকে হেসে বলে,____”তোর বউ আমার মিষ্টি খাওয়া দেখে শক পেয়েছে। তুই একটুখানি স্পেশাল মিষ্টি দিয়ে দিস।”
ইরফান মাইরার বাড়ির জন্য ১০ কেজি মিষ্টি নিয়ে এসেছে। মাইরা তার মাকে শুধু একবার জিজ্ঞেস করেছিল, ‘সে কেমন আছে।’ আর কোনো কথা বলেনি। আপাতত তার ঘরে লাবিবকে কোলে নিয়ে বসে আছে মাইরা। সামনে একটি বাটিতে ৫ টি মিষ্টি, যা লাবিব আরামে তার আপুর কোলে বসে খাওয়ায় ব্যস্ত। মাইরা লাবিব এর কাঁধে থুতনি রেখে লাবিবের খাওয়া দেখছে। চোখজোড়ায় পানি চিকচিক করছে। তার ভাইটা আর মাকে ছাড়া তার কি যে খা’রা’প লাগে, এই কথাটা কাকে বোঝাবে সে? কেউ নেই শোনার। লাবিব মুখ ভর্তি মিষ্টি নিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তার আপুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে। মাইরা ডান হাতে ঝাপসা চোখ মুছে লাবিব এর দিকে চেয়ে হেসে বলে,____”কেমন লাগে ভাইয়া?”
লাবিব মুখের মিষ্টি টুকু চিবিয়ে গিলে নেয়। এরপর মাইরার দিকে ঘুরে বসে দু’হাতে মাইরার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,____”অনেক মুজা। আমাল আপুই টুমি।”
মাইরা দু’হাতে তার ভাইকে জড়িয়ে হেসে বলে,___”নিহালের আপুইও আমি।”
লাবিব সাথে সাথে মাইরার গলা আরও শক্ত করে জড়িয়ে বলে,____”ইইইই নাআআআ, টুমি শুদু আমাল আপুই।”
মাইরা মুখ টিপে হাসলো। নিহাল নামের একটি ছেলে তাদের পাশের বাসায়-ই তাকে। লাবিবের সামনে তাকে কোলে নিতেও পারতো না আগে। লাবিব কান্না জুড়ে দিতো। তার কথা তার আপুই এর কোলে শুধু সে থাকবে।
লাবিব কিছু একটা ভেবে মাইরার কোল থেকে নেমে দৌড় দেয়। মাইরা ডাকল, সে শুনলো না। দৌড় দিল। মিনিট তিনেক এর মাঝেই হাতে একটা খাতা এনে বেডের উপর উঠে বসে। মাইরা চেয়ে আছে। লাবিব দু’পা মেলে, পায়ের উপর খাতা মেলে পেজ উল্টায়। মাইরা গালে হাত দিয়ে দেখছে লাবিবের কান্ড। লাবিব কিছু একটা বের করে খাতায় আঙুল দিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে বলে,____”আপুই দেক, আমি আল টুমি।”
মাইরা একটু নিচু হয়ে দেখল। পেন্সিল দিয়ে কাঁচা হাতে দু’টো মানুষ এঁকেছে। একটা মেয়ে, তার কোলে বাচ্চা। যদিও আঁকাতে পারেনি, তবে মাইরা বুঝলো। মুখে হাসি ফুটলো। লাবিবকে টেনে তার কোলে বসিয়ে বলে,____”এটা কিভাবে এঁকেছিস?”
লাবিব মন খা’রা’প করে বলে,___”আপুই আমাল কাছি আসে না। তাই আমি ইকেচি।”
মাইরার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। লাবিবের গালে অসংখ্য চুমু খেয়ে বলে,___”এই যে আপুই এসেছি। অনেক সুন্দর হয়েছে এটা। আবার আসব আপুই। আচ্ছা ভাইয়া?”
লাবিব হাতের খাতা রেখে মাইরার গলা জড়িয়ে হেসে বলে,____”আপুই আবাল আছবা। কি মুজা!”
মাইরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ডান হাতে চোখ মুছে মুখে হাসি ফোটালো। এরপর বাটি থেকে একটা মিষ্টি নিয়ে লাবিবের দিকে তাকিয়ে বলে,____”ম্যাজিক করে মিষ্টি খাবি না?”
লাবিব মাথা উপর-নীচ করে। মাইরা হেসে তার মুখে অর্ধেক মিষ্টি ঢুকিয়ে নেয়। এরপর লাবিবের মুখের সামনে নেয়। লাবিব হেসে মাইরার মুখে ধরে রাখা মিষ্টির বেরিয়ে থাকা অংশ থেকে কিছু অংশ কা’ম’ড়ে মুখে নিয়ে দু’হাত তালি দেয়, যেন এটাই তার কাছে বেশ মজার খেলা।
সেসময়-ই ইরফান মাইরার ঘরে এসে এই কান্ড দেখে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। মাইরা লাবিবের দিকে চেয়ে মুখের মিষ্টিটুকু নিয়ে একবার মুখ নাড়াতেই ইরফান ঝড়ের গতিতে মাইরার কাছে এসে বা হাতে মাইরার গাল চেপে ধরে। মাইরা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ইরফানের চোয়াল শক্ত। ডান হাতের দু’আঙুল মাইরার মুখের ভেতর দিয়ে মুখ থেকে মিষ্টি বের করে আনে। হাতের টুকু ছুঁড়ে ফেলে মাইরার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,_____”স্টুপিট গার্ল। থা’প্প’ড় দিয়ে সব দাঁত ফেলব তোর।”
মাইরা বিস্ময় দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে চেয়ে আছে। লাবিব পিটপিট করে ইরফানের দিকে চেয়ে ডান হাতের আঙুল উঁচিয়ে বলে,___”খু’চি’ব ডুলাভাই!”
ইরফান লাবিবের কথা শুনে ধমকে বলে,___”সাট আপ।”
লাবিব ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। মাইরা লাবিব কে কোলে নিতে গেলে ইরফান মাইরাকে টেনে মাইরার ঠোঁটজোড়া আঁকড়ে ধরে। লাবিব চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। ছেলেটা বুঝতে পারে না। মাইরা ছটফটায়। ইরফানের গলায়, বুকে খামচি দেয়। এই লোকের আক্কেল জ্ঞান নেই।
ইরফান তার সময় মতো মাইরাকে ছাড়লো। মাইরা কটমট দৃষ্টিতে তাকায় ইরফানের দিকে। ইরফান ভাবলেশহীন। মাইরার ছোটোখাটো বেডের উপর বসে বিরক্তি কণ্ঠে বলে,___”এতো গরম কেন এখানে? ফাস্ট রেডি হও। এক্ষুনি বেরুবো।”
তখনই লাবিব ইরফানের কাছে বসে মাথা উঁচু করে বলে,___”টুমি আপুইকে তুমু খেয়িচ?”
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে তাকায় লাবিবের দিকে। এতোটুকু বাচ্চা, অথচ মনে হচ্ছে চিরুনি অভিযান চালাতে প্রশ্ন করছে। লাবিবের কথায় মাইরা বিব্রতবোধ করে। বেড থেকে নেমে ইরফানের দিকে চেয়ে রেগে বলে,____”আপনি একটা অ’স’ভ্যের দাদা।”
ইরফান তীক্ষ্ণ চেখে চেয়ে গম্ভীর গলায় বলে,___”ইউ আর রঙ।”
মাইরা ইরফানের কথা শুনলোই না। ধুপধাপ পা ফেলে ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেল। ইরফান বিড়বিড় করল,___”স্টুপিট গার্ল।”
এরপর লাবিবের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,___”ইউ আর আ স্টুপিট বয়।”
লাবিব কথার অর্থ বুঝতে না পেরে বোকা চোখে চেয়ে থাকে ইরফানের দিকে। আবারও বলে,___”টুমি আপুইকে তুমু খেয়িচ কেনু?”
ইরফান কিছুটা অবাক কণ্ঠে বলে,_____”ও আমার ওয়াইফ। তাই কিস করেছি। আন্ডারস্ট্যান্ড?”
লাবিব অবুঝ গলায় বলে,___”উইপ কি?”
ইরফান চোখ ছোট ছোট করে বলে,____”বউ। ও আমার বউ। বুঝেছ?”
লাবিব আবারও অবুঝ গলায় বলে,____”বুউ কি?”
ইরফান ঠোঁট বাঁকায় সামান্য। অতঃপর আগ্রহী গলায় বলে,____”বউদের আদর করতে হয়। তুমি বড় হলে বুঝবে।”
লাবিব ভাবনায় ব্যস্ত হয়। বিড়বিড় করে,__”বুউদের আদল কলতে হয়।”
মাইরা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে তার মায়ের সামনে পড়ে। ভদ্রমহিলা কেমন মায়া মায়া চোখে মাইরার দিকে চেয়ে আছে। মাইরা ঝাপসা চোখজোড়া নামিয়ে নিল। মাইরার মা এগিয়ে এসে বলেন,____”এতো অভিমান কোথায় পেয়েছিস মা? আমি নাহয় পেটে ধরিনি তোকে। কিন্তু বড় তো আমি-ই করলাম। আমার একটা গুণ রপ্ত করতে পারিস নি?”
মাইরা চোখ তুলে তাকায় মায়ের দিকে। জমানো অশ্রুগুলো না চাইতেও গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। মাইরার মা আরেকটু এগিয়ে এসে মাইরাকে জড়িয়ে ধরল। মাইরা চোখ বুজল। না চাইতেও মাকে নিজেও জড়িয়ে ধরল। বেশ কিছুক্ষণ পেরিয়ে গেলে মাইরা নাক টেনে বলে,____”তোমার আর ভাইয়ার কথা খুব মনে পড়ে মা।”
ভদ্রমহিলার কষ্টে বুকটা বোধয় ফেটে যাবে। তিনি কি বলবেন? তার কাছে কথা নেই। এরই মাঝে লাবিবের বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে তার স্ত্রী আর মাইরাকে এভাবে দেখে বোধয় বিরক্ত হলো। মাইরার চোখ পড়ল লোকটার দিকে। সাথে সাথে তার মাকে ছেড়ে দিল। মাইরার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাইরার চোখ মুছে দিয়ে বলে,____”আজ রাত টা থেকে যাবি মা?”
মাইরা অসহায় চোখজোড়া লাবিবের বাবার দিকে রাখে। যার চোখেমুখে এখনো বিরক্তি। মাইরার মা ঘাড় বাঁকিয়ে নিজ স্বামীকে দেখে আবারও বলেন,____”আমার জন্য একটা রাত থেকে যাবি মা?”
মাইরা তার মায়ের দিকে তাকালো মায়া ভরা চোখে। লাবিবের বাবা ঘরে চলে গিয়েছে। মাইরার খুব বলতে ইচ্ছে করল, ‘তাহলে আমাকে তোমায় জড়িয়ে ঘুমাতে দিতে হবে কিন্তু।’
মনের কথা মনেই রইল। এটা তো সম্ভব নয়। লাবিবের বাবা এই বাড়ি মাথায় তুলবে। তবে তার মা তাকে থাকতে বলেছে, হয়তো লাবিবের বাবা কিছু বলবে না। এই যেমন একটু আগে বলল না। মাইরার একটুও ইচ্ছে করল না এখানে থাকতে, কিন্তু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করল। জড়িয়ে থাকতে পারবে না, তাতে কি! সকাল সকাল উঠে মায়ের মুখ টা তো দেখতে পাবে! এটায় কি কম শান্তি! মাথা নেড়ে বলে,_____”থাকবো মা।”
মাইরার মায়ের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। মাইরার কপালে একটা চুমু খায়। মাইরার কি যে শান্তি লাগে! এবার নিজে থেকেই মাকে জড়িয়ে ধরে।
মাইরা ঘরে এসে দেখল ইরফান ঘরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। লাবিব বেডের উপর বসে কিছু আঁকছে। মাইরা ইরফানের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, কথা বলা শেষ হওয়ার আশায়। ইরফান কথা বলতে বলতেই উল্টো ঘুরে দাঁড়ালে মাইরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মাইরার দিকে তাকিয়ে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে বলে,____”কি বলবে?”
মাইরা ঢোক গিলে। তাদের বাড়িতে তো এসি নেই। ফ্যানের বাতাসও কম। ছাদ নেই। দেয়াল ইটের, তবে উপরে টিন। ইরফান কে কিভাবে থাকতে বলবে? শুদ্ধদের বাসা গ্রামে হলেও শহুরে বাসার মতো।
মাইরাকে চুপ দেখে ইরফান আবারও বলে,____”হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
প্রণয়ের অমল কাব্য পর্ব ৫৬
মাইরা পিটপিট করে তাকায় ইরফানের দিকে। মৃদুস্বরে বলে,____”আজ রাত এখানে থাকতে চাই।”
কথাটা শোনার সাথে সাথে ইরফান বিস্ময় কণ্ঠে বলে,____”হোয়াট?”
মাইরা কেঁপে ওঠে। ইরফান ফোঁস করে শ্বাস ফেলল। না চাইতেও গলার আওয়াজ জোরে হয়ে গিয়েছে। তার তো কাজ আছে। এখানে থাকলে কি করে হবে?মাইরা আবারও বলে,____”আপনি চাইলে চলে যান। আমি কালকে চলে যাবো।”
ইরফান বেডের উপর বসা লাবিবের দিকে তাকালো। লাবিব তাদের দিকেই চেয়ে আছে। ইরফান দৃষ্টি ঘুরিয়ে মাইরার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,____”আমি চলে গেলে তুমি ফা’ল’তু ওয়েতে মিষ্টি খেতে বসে যাবে, রাইট?”