Tell me who I am part 31

Tell me who I am part 31
আয়সা ইসলাম মনি

সেদিন রাতেই কারান প্রতিশোধের আগুনে দগ্ধ হয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। তখন এমন এক নিঃসঙ্গ মুহূর্ত ছিল, মিরার কাছে যাওয়ারও কোনো উপায়ই ছিল না। কারণ তাদের দাম্পত্য সম্পর্কটা অস্বাভাবিক আর দুর্বল ছিল। কারানের ক্রোধের অগ্নিশিখা তখন এমন তীব্র হয়ে উঠেছিল যে, নিজেকে নিবৃত্ত করার কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছিল না। কারান কমোল পার্কে এসে গাড়ি থেকে নামল। ফুচকাওয়ালা তখন নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কারানের অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি আর তার দৃষ্টির অনল দৃষ্টিপাত দেখে ফুচকাওয়ালার মনে অচেনা আতঙ্ক বাসা বাঁধল। হঠাৎই কিছু না ভেবে লোকটি পলায়নের চেষ্টা করল।

তবে কারান সেখানেই স্থির দাঁড়িয়ে বন্দুকের ট্রিগার টানল। গু*লিটি ফুচকাওয়ালার পা ছুঁয়ে ছুটে গেল, সেই ক্ষ*তচিহ্ন তাকে মাটিতে বসিয়ে কাঁদিয়ে ছাড়লো। কারান ইচ্ছা করলে তার পায়ে সটান গু*লি করতে পারত, কিন্তু সে তা করেনি। এখানে বন্দুক চালানোর ক্ষেত্রে তার নিপুণ দক্ষতা স্পষ্ট হয়ে উঠল। কারান শান্ত চেহারায় ধীর পায়ে ফুচকাওয়ালার দিকে এগিয়ে গেল। এরপর লোকটির কলার ধরে শূন্যে তুলে গাড়ির সাথে চেপে ধরলো।
ফুচকাওয়ালা ভয়ার্ত কণ্ঠে মিনতি করল, “স্যার, আমারে ছাইড়া দ্যান। কী করছি আমি? দয়া কইরা আমারে যাইতে দ্যান।”
কিন্তু কারান কোনো উত্তর দিল না। তাকে সরাসরি গাড়ির ডিকিতে পুরে দিল। স্পিডে গাড়িটি ছুটল গন্তব্যের পথে প্রত্যন্ত এক দ্বীপে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সেখানে পৌঁছে লোকটিকে গাড়ি থেকে টেনে নামালো। ভয়ার্ত ফুচকাওয়ালা তখন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল। কারানের উপর আঘাত করার জন্য হাত তুলল। কিন্তু কারান বিদ্যুৎগতিতে তার গালে একটি চপেটাঘাত করল। লোকটির মাথা ভনভন করে ঘুরে গেল এবং তার গালের চামড়ায় নীলচে দাগ ফুটে উঠল।
কারান নির্লিপ্ত চোখে তাকে স্পিডবোটে তুলল। গন্তব্য ছিল তার কুখ্যাত ‘ডার্কব্লাড ভিলা’। গভীর জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত সেই বাড়ি যেন পৃথিবীতেই নরকের এক প্রতিচ্ছবি। ফুচকাওয়ালা মলিন চোখে সেই ভিলার নামফলক আর তার ভয়ংকর চেহারা দেখে কেঁপে উঠল। তার মনে হচ্ছিল, এটাই পাপিষ্ঠদের জন্য চূড়ান্ত শাস্তির প্রাঙ্গণ।
ভিতরে ঢুকেই কারান লোকটিকে শক্ত করে চেয়ারে বেঁধে ফেলল।

“সা.. সা.. স্যার, ছাইড়া দ্যান। স্যার, আর করতাম না। স্যার ছাইড়া দ্যান।”
কারান লোকটার কোনো কথাই কানে তুলছে না। নাকি শুনছেই না, সেটাও বোঝা মুশকিল। কারান একদম ঠান্ডা চেহারায় ধীরে ধীরে, কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে, এক হাতে গরম লোহার একটি শিখ প্রস্তুত করতে থাকে। তার অন্তরে মহাক্রোধের অগ্নিকুণ্ড দগ্ধ হয়ে জ্বলছে, কিন্তু তার চেহারা দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, এই লোকের সামনে যে নিরন্তর মৃ*ত্যু অপেক্ষা করছে।
এবার লোকটার বোঝার বাকি থাকে না, যে দৃষ্টি মিরার দিকে পড়েছিল, আজ সেই চোখ তাকে চেপে ধরবে। লোকটির শরীরে শিহরন জাগে, ক্ষমার ভিক্ষা তার কণ্ঠে আরো গভীর হয়।
কান্নার সুরে সে মিনতি করতে থাকে, “স্যার, স্যার, পায়ে পড়ি। দয়া কইরা ছাইড়া দ্যান। ম্যাডামের কাছে আমি ক্ষমা চাইয়া নিব। ছাইড়া দ্যান, স্যার, আর হইবে না। বাপের জন্মেও এমন ভুল করতাম না। ছাইড়া দ্যান, স্যার।”
কিন্তু কারান লোকটার চুলগুলো শক্ত হাতে ধরে, মাথা তুলে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে, গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “নাম কি?”

কারানের কণ্ঠের ভয়ানক গভীরতা শুনে, লোকটি ঢোক গিলতে থাকে। তার শরীরের প্রতিটি কনিষ্ঠাংশ কাঁপতে থাকে। তার মুখের ঘাম নদীর স্রোত হয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে।
লোকটি ভয়ার্ত গলায় বলে, “ক ক ক করি করিম মি মি…আআআআআআআ…”
তার চিৎকারে দ্বীপটা কেঁপে ওঠে। অর্থাৎ কারান ঠান্ডা চেহারায় বাঁকা হেসে, লোহার শিখটি তার চ*ক্ষে ঢুকিয়ে দিয়েছে। এরপর এক চো*খ বের করে এনে একটি পাত্রে রাখলো।
অন্য চোখটি হাতে ধরে, সেটিকে গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে করতে কারান ঠান্ডা গলায় বলল, “ক্ষমা? হুম, ক্ষমা তো তোকে এমনিতেই চাইতে হবে।”
লোকটার চোখের কো*টর বেয়ে র*ক্ত ঝরতে থাকে। এদিকে কারানের ঠোঁটে শিষ বাজতে থাকে। এই অবস্থা দেখে লোকটার অভ্যন্তরে ভয়ের শীতল হাওয়া প্রবাহিত হতে শুরু করে। একটু পর একদল কুকুর কারানের সামনে এসে সম্মানের ভঙ্গিতে বসে পড়ে।

কারান হাতের চোখটি নিয়ে চুলায় প্যানের মধ্যে রাখে।
উল্টে পাল্টে সেটি ভাজতে ভাজতে বলে, “আমি কখনোই নির্দোষ কাউকে শাস্তি দেই না। এটা আমার নীতির বিরুদ্ধে। শুধু একজন নির্দোষ এবং অবলা নারী আমার নি*র্যাতনের শিকার হয়েছে, আর সেটা আমার বউ। তাও যদি আমার নিষ্ঠুরতার দশভাগের এক ভাগও সে দেখতে পেত। (বাঁকা হেসে) ওকে সামান্য আ*ঘাত করলেই ওর গাল যেন গালের স্থান থেকে উধাও হয়ে যেত। তাও আমার বউটা ভালো, যে আমাকে ছেড়ে যায়নি। আর জানিস, এই একমাত্র নারীকে আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসি। আর তুই তার দিকে বাজে চোখে তাকিয়েছিস। বিশ্বাস কর, ইচ্ছে করছে তোর মাথাটা ভেঙে ফেলি। কিন্তু আমি সবসময় সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেই।”
এবার প্যানটি হাতে নিয়ে, কুকুরদের দিকে তাকিয়ে বলল,

“অমলেট খাবে? চোখের অমলেট।”
চোখটা কুকুরদের মাঝে ছুড়ে দিলে, তারা একে অপরের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক চোখের জন্য তুমুল ধাপাধাপি শুরু করে দেয়। এবার কারান লোকটার দিকে ঝুঁকে, গাম্ভীর্য মুখাবয়বে বলে, “কাল কীভাবে মিরার কাছে ক্ষমা চাইবি, এটা তোর উপর ছেড়ে দিলাম। আমি চাই না দ্বিতীয়বার এই নরমকুন্ডে তোর পা পড়ুক।”
এটা বলে তার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিল। লোকটি দ্রুত ছুটে যেতে থাকে। কিন্তু অন্ধ হয়ে যাওয়ায় বার বার দেয়ালে ধাক্কা খায়। কারান তার এদিক-ওদিক ঘোরা দেখে তাচ্ছিল্যের সুরে হেসে, তাই তার কলার ধরে নিজেই বের হওয়ার পথ দেখিয়ে দেয়।

পরদিন যখন লোকটি মিরার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য যায়, তখন আবার একটি অদ্ভুত কাজ করে বসে। ক্ষমা চাওয়ার প্রক্রিয়ায়, সে মিরার পা ছুঁয়ে দেয়। অর্থাৎ তার মধ্যে সেই লালসা আবার উথলে ওঠে।
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কারান এটা দেখে মনেমনে বলে, “শালা বি*চ। সত্যিই কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।”
এরপর কারান রাতে গলির অন্ধকার কোণ পেরিয়ে লোকটার বাসার সামনে এসে পৌঁছাল। যদিও তার মন ভারাক্রান্ত ছিল রাগে। কিন্তু সে আরও অধিক উত্তেজিত হয়ে উঠলো, যখন জানালা দিয়ে এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখল। লোকটি সন্ত্রস্ত চিৎকারের সঙ্গে তার স্ত্রীর ওপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে, হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে যাচ্ছিল। এই দৃশ্যের ভেতরেই কারানের রাগ আরও প্রগাঢ় হলো। একটুপর কারান পাশের আরেকটি জানালায় কিছু একটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নিল। কারণ এক মধ্যবয়সী পুরুষ এক তরুণীকে উন্মুক্ত করে রেখেছিল।
মেয়েটি সেই পুরুষের হাতে অসভ্যভাবে নিপীড়িত হচ্ছিল। অথচ মেয়েটির মুখাবয়বে কোনো ক্ষোভ বা ভীতি ছিল না, অর্থাৎ মনে হচ্ছিল, এটা তার দৈনন্দিন যন্ত্রণার গভীর অভ্যস্ততা।

তার হাত-পায়ে দ*ড়ি দিয়ে বাধার দাগ, পুরো শরীরে দ*গ্ধ ও ক্ষ*তবিক্ষত চিহ্ন স্পষ্ট দৃশ্যমান। তার নিঃশেষ, কঙ্কালসার, শরীরের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা দেখে মনে হয় সে যেন জীবিত থেকেও মৃ*ত। মেয়েটির বয়স হয়ত ১৫ বা ১৬ এর বেশি হবে না। সম্ভবত, সে সেই ফুচকা বিক্রেতার মেয়ে। অন্যদিকে তার স্ত্রীর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছিল। লোকটি এমনভাবে তাকে প্রহার করেছে যে মহিলার শরীর সম্পূর্ণভাবে নিস্তেজ হয়ে মাটিতে ঝুঁকে পড়েছিল।
কিন্তু কষ্টের মাঝেও মহিলা চিৎকার করতে থাকেন, “আমার মাইটারে ছাইড়া দে। তোর উপর গজব পড়বো। ছাইড়া দে। আল্লাহহহ!”
এবার আর কারান দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। তার সমস্ত ধৈর্য ভেঙে গিয়ে ক্ষোভে গাঢ় হয়ে উঠলো। গায়ের কোটটি খুলে হাতে নিয়ে, এক ঝটকায় দরজাটি ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করতেই ধ*র্ষক পুরুষটি উঠে গেল।
কাপড় পরতে পরতে রেগেমেগে তেতে উঠে বলে উঠলো, “তুই কোনহানকার মা*দারেরপুত রে? বাইরা, হালা। এহন এই ছেমড়ি আমার। তোর চান্স এক ঘণ্টা পর।”

এটা শুনে কারানের চেতনায় ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠল। পাশের চেয়ারটি তুলে, সজোরে লোকটার মাথায় আঘাত করতেই চেয়ারের ভেতরের লোহার রডগুলো তার গ*লায়, মাথা*য়, কা*নে বিদ্ধ হয়ে গেল। এসব অঙ্গ থেকে র*ক্ত ঝড়ে পড়তে থাকে। লোকটি তীব্রভাবে চিৎকার করে উঠল। ফুচকা বিক্রেতার পক্ষে কিছুই বোঝা সম্ভব ছিল না, কারণ সে তো অন্ধ। তবুও সে ক্ষিপ্তভাবে তার হাতুড়ি দিয়ে আন্দাজে কারানের দিকে মারতে গেল। কিন্তু কারান এক দুর্ধর্ষ লাথি মেরে তার পাজরের হাড় ভেঙে দিল। সে বিশাল একটা চিৎকার দিয়ে নিচে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল।
এদিকে কারান ন*গ্ন মেয়েটির দিকে এক মুহূর্তের জন্যও নজর ফেলতে পারছিল না। এত ছোট্ট মেয়েটির ওপর এই অমানবিক অত্যাচারের দৃশ্য তার অন্তরকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলছিল। কষ্ট আর রাগের মিশ্রণে তার ভেতর আগুন জ্বলে উঠছিল। কারান কোনোভাবে নিজেকে সংবরণ করে, মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে, নিজের কোটটি তার শরীরে ছেড়ে দিল। মেয়েটি দ্রুত কোটটি গায়ে জড়িয়ে নিল।
এরপর কারান উল্টোদিকে মুখ করে তাদের দুজনের গলা চেপে ধরে কঠোর সুরে মহিলার উদ্দেশ্যে বললো, “একটা দড়ি দিন।”

মহিলার শরীরে এতটুকু শক্তি ছিল না যে, সে সামান্যতম নড়াচড়া করতে পারতো। তবে কারানের উপস্থিতির সাথে সাথে এক অদৃশ্য শক্তি তার মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকে। এত কষ্টের মাঝেও সে জোর করে উঠে গিয়ে দড়ি এনে দেয়। কারান দড়িটি শক্ত করে ধ*র্ষ*কের গলায় পেঁচাতে থাকে, আর লোকটি চিৎকার করে ওঠে। এরপর সেই দড়ি দিয়েই তাদের দুজনকে বেঁধে, একটানা টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিল।

অবশেষে তারা পৌঁছায় ‘ডার্কব্লাড ভিলা’তে। ঢুকেই তাদেরকে নিচে ছুড়ে ফেলে দিল। কিন্তু ধ*র্ষক পুরুষটির প্রতি কারানের রাগ অগ্নিসদৃশ হয়ে ওঠে। সে বারবার লোকটির পু*ষাঙ্গে লাথি মারতে থাকে। প্রতিটি আ*ঘাতে লোকটি এক ভীতিকর চিৎকারে কেঁপে ওঠে। আর সেই চিৎকারে দ্বীপের সমস্ত পশুপাখি আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। এরপর কারান ধীরে ধীরে পা ফেলে একটি বক্স থেকে রাবারগ্লাভস বের করে, একে একে তা হাতে পরতে শুরু করে।
পরে কোমরের বেল্টটি খুলে, হাতের মধ্যে পাকিয়ে পাকিয়ে সেই লোকটার দিকে এগিয়ে গিয়ে গলায় পেঁচিয়ে, কুকুরের মতো টেনে টেনে কারেন্টের সুইচের দিকে নিয়ে গেল। তার হাতের বাঁধন খুলে আঙুলগুলো সুইচের ভেতর প্রবেশ করিয়ে দিল। লোকটার শরীর বারেবারে ঝাঁ*কুনি দিয়ে উঠে। টেজার (কারেন্টের শক দেওয়া হয় যার মাধ্যমে) দিয়ে বারবার তার গলায় আ*ঘাত করে, আর লোকটি যন্ত্রণায় অশ্রুমিশ্রিত চোখে কেঁপে কেঁপে উঠল। তারপর কারান একটা হাতুড়ি নিয়ে এসে দাঁড়াল। সে চোখ বন্ধ করে স্মৃতির অতলে ডুব দিল। যখন সেই মেয়েটির চোখ থেকে অশ্রু পড়ছিল, কিন্তু মেয়েটির মুখে কোনো শব্দ উচ্চারণ করার শক্তি ছিল না।

চোখ খুলে ধীর পায়ে লোকটার দিকে এগিয়ে এসে, তার পুরু*ষা* বরাবর হাতুড়ি দিয়ে এক দৃষ্টিকটু আ*ঘাত হেনে দেয়। লোকটার তীব্র চিৎকার শুনে মনে হচ্ছিল, যেন তার গলা ছিঁ*ড়ে যাবে। অন্যদিকে ফুচকা বিক্রেতা চিৎকারের ধ্বনি শুনে অসহ্য আতঙ্কে কাঁপতে থাকে। সে বারবার নিজেকে মুক্ত করার প্রয়াসে তীব্রভাবে সংগ্রাম করতে থাকে।
এবার কারান ধ*র্ষ*ক লোকটির অন্ড*কো* বরাবর হা*তুড়ি দিয়ে এক প্রবল আ*ঘাত হানে। তারপর তীব্র কণ্ঠে চিৎকার করে বলে, “তুই যখন প্রতিবার সে*ক্স করছিলি, তখন ও ঠিক এতটাই যন্ত্রণায় কাতর হচ্ছিল, ফা*কিং অ্যা*সহোল।”

লোকটার মুখের দিকে ঠান্ডা মুখশ্রীতে তাকিয়ে কারান
পুনরায় বলে, “ওর চোখের পানি দেখতে পাসনি? কতটা যন্ত্রণা হচ্ছিল ওর, এমন এক অবস্থা ছিল যে, মনে হচ্ছিল ওর…ওর চোখ বেরিয়ে আসবে।”
মেয়েটার কথা মনে করে, কারানের চোখের কোনে স্বল্প সংবেদ্য অশ্রু জমা হয়, কিন্তু সে তা ঝরতে দেয় না। কারণ এমন মানুষরূপী জন্তু সে বহু দেখেছে।
এবার নিজেকে দৃঢ় করে লোকটার দিকে একনিষ্ঠ দৃষ্টিতে তাকালো। কারানের চোখের গহীনের গভীর তেজ দেখে, লোকটার অস্তিত্ব ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়। লোকটা কাঁদতে কাঁদতে কোনোরকমে অল্প আওয়াজে বলে উঠলো, “সা সা স্যার, ও স্যার। আ..মি ক… কসম কাটলাম, জী…জীবনেও আ…আর কোনো মাইয়া মাইনষের দিকে চো…চোখ তুইলা তাকাইতাম না। যা.. যা… যাইতে…আআআআআ…”

লোকটাকে বাকিটা বলার সুযোগ না দিয়েই কারান কুঠারটি হাতে তুলে নিয়ে লোকটির দুই পায়ের উরু থেকে নীচ পর্যন্ত বিশ টুকরো করে কে*টে ফেলছিল।
লোকটার প্রতিটি চিৎকার কারানের অন্তরকে প্রশান্তির তৃপ্তিতে ভরিয়ে তুলছিল। তারপর সে কুঠারের সাহায্যে লোকটির দুটি হাত কে*টে ফেলছিল। কারানের জ্যাকেটে র*ক্ত ছিটে ছড়িয়ে পড়েছিল। কাটার ধারালো শব্দে চারপাশ যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।
এরপর সে লোকটার পেটকে গভীরভাবে ক্ষত করে, মেরুদণ্ডের পাশ থেকে কি*ডনিটা নিষ্ঠুরভাবে বের করে নিয়ে এল। একের পর এক প্রবল চিৎকারে লোকটার কণ্ঠস্বর ফেটে যাচ্ছিল। পরে কারান শান্ত চেহারায় সেই কি*ডনিটা পু*ড়িয়ে রান্না করে লোকটির সন্নিকটে থাকা কুকুরদের সামনে ফেলে দিল। অদ্ভুত তৃপ্তি নিয়ে তারা সেটি ছোঁড়াছুঁড়ি করে খেতে লাগল। লোকটার প্যান্টের চেইন খুলে ছুরি দিয়ে পু*ষা*ঙ্গের চামড়া টেনে ধরে খসা*তে লাগলো। লোকটি বাঁচার জন্য ছ*টফট করতে থাকলো।
কারান এবার বুঝতে পারলো–লোকটির জীবনাবসান আর মাত্র কিছু মুহূর্তের ব্যাপার। তাই শান্ত চোখে স্পষ্ট আওয়াজ করল, “কাইজার, এ্যাবিস্কো।”

বলতেই সেই প্রাচীন পাইথন সাপ আর হিংস্র বাঘ কারানের সামনে আবির্ভূত হলো। কারান তখন লোকটির শরীরে তাজা র*ক্ত ঢেলে দিতে শুরু করল। সঙ্গে তার অ*ন্ডকো* বরাবর ক্যাডাভেরিন ঢেলে দিল। ক্যাডাভেরিন হলো তীব্র গন্ধযুক্ত রাসায়নিক যৌগ, যা সাধারণত পচা মৃতদেহ থেকে নির্গত হয়। এর দুর্গন্ধ শিকারি প্রাণী, যেমন বাঘকে আকর্ষণ করতে সক্ষম।

এবার কারানের নির্লিপ্ত ইশারায় বাঘ এবং সাপ একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সাপটি তার বিশাল দেহ দিয়ে লোকটির সম্পূর্ণ শরীর পেঁচিয়ে এমনভাবে চাপ তৈরি করল যে, তার হাড়গোড় ভেঙে যেতে লাগলো। আর বাঘটি তার অন্ড*কো* বরাবর কাম*ড়ে কা*মড়ে খেতে শুরু করল। লোকটির ভয়াবহ চিৎকারের ধ্বনি বাতাসে তীব্রভাবে আঘাত হানতে লাগলো।
কারান এই নির্মম দৃশ্যের দিকে দৃষ্টিপাত না করে, শান্ত পায়ে ফুচকাওয়ালার দিকে ফিরে বলে উঠল, “এটাই আবরার কারান চৌধুরীর দেওয়া রে*পিস্টদের শাস্তি।”

এদিকে ফুচকাওয়ালার শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি ক্রমশ সংকুচিত হতে শুরু করল। তার শরীরের সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে আসছিল। সামনে বাঘের লোকটাকে খাওয়ার কটমট শব্দ শুনে, ইতোমধ্যেই বমি ত্যাগ করলো ফুচকাওয়ালা। কিন্তু কারান চোখে কোনো ভাবান্তর না এনে, এক হাতে শেম্পেইনের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে, অন্য হাতে কাচির মাধ্যমে ফুচকাওয়ালার ডান হাতের আঙুল একে একে কেটে ফেলতে শুরু করল। কারণ এই আঙুলগুলি দিয়েই মিরার পা স্পর্শ করা হয়েছিল।

এবার হাতুড়ির সাহায্যে লোকটির বাম হাতের আঙুলগুলো একে একে থেতলে গুড়িয়ে ফেলতে শুরু করল। প্রতিটি আঘাতে আঙুল থেকে র*ক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছিল। আঙুল ভাঙার মটমট শব্দ প্রতিটি মুহূর্তে ঘরকে আরো নারকীয় রূপে রূপান্তরিত করছিল। আর তার গলার তীক্ষ্ণ চিৎকার পরিবেশকে আরো ভারী আবহ তৈরি করছিল। তারপর ক্ষণকাল লোকটিকে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিল। এদিকে কারান শান্তভাবে চেয়ারে বসে গভীর তৃপ্তিতে গ্লাসের মদে চুমুক দিল।
পরে উঠে নিজের বেল্ট দিয়ে লোকটির শরীরের উপরে উরাধুরা পেটাতে লাগলো। এরপর লোকটার দিকে না তাকিয়ে ডান হাতে ফোন স্ক্রল করতে করতে বাম হাতে হাতুড়ির সহিত তার দেহের বিভিন্ন জায়গায় আ*ঘাত করতে লাগলো। কারণ এভাবেই সে তার স্ত্রীকে বেদম পিটিয়েছিল।

একটুপর নিজের কানে হেডফোন পরে গান চালিয়ে দিল, যেন লোকটার চিৎকারের ধ্বনি তার কানে প্রবাহিত না হয়। এদিকে কারান গানটির তালে তালে মাথা দোলাতে দোলাতে লোকটিকে পেটাতে লাগলো। তার মধ্যে এক অদ্ভুত আনন্দ কাজ করছে। ক্ষণিক পর লোকটি মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে শুয়ে পড়লো। আর কারান তরতাজা মুড নিয়ে কয়েকটি ব্লাড ব্যাগ এনে উপস্থিত হলো।
একটি স্টেরাইল সুঁইয়ের মাধ্যমে, সে নিখুঁতভাবে ফুচকাওয়ালার রক্তনালীতে সুঁইটি প্রবেশ করিয়ে রক্ত টিউবের মাধ্যমে ব্যাগে জমা করতে শুরু করল। সাধারণত এক ব্যাগ রক্ত (৪৫০-৫০০ মি.লি.) সংগ্রহ করতে ৮-১০ মিনিট সময় লাগে। এভাবে সে ৪টি ব্যাগ র*ক্ত পূর্ণ করলো।
এরপর সে সুরের সাথে তাল মিলিয়ে নৃত্যগীতির মূর্ছনায় পা দুটি স্লাইড করতে করতে পিছনে যেতে থাকে, যা মুন ওয়াক নৃত্যের অসাধারণ প্রকাশ।

আনন্দের সাথে গানটি গাইতে গাইতে লাগলো,
“ও বেল্লা চ্যাও, বেল্লা চ্যাও, বেল্লা চ্যাও, চ্যাও, চ্যাও
উনা মত্তিনা মি সোন আলজাতো
এ ও ত্রোভাতো ল’ইনভাজোর।”
ক্ষণকাল পর হেডফোনটি সরিয়ে পাশের টেবিলে রাখলো। তারপর আড়মোড়া ভেঙে, মুখে কঠোরতার ছাপ এনে লোকটির দিকে নজর দিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে, “তোর সামনে তোর মেয়েকে ধ*র্ষ* করা হয়েছে, আর তুই সেটার মজা নিয়েছিস। শেইম অন ইউ, বি*চ।”
বলেই কুঠারটি হাতে নিয়ে, সে লোকটির পায়ের উরুতে প্রবলভাবে আঘা*ত করতে শুরু করলো। কুঠারের তীক্ষ্ণ ধারে মাংস কা*টার ভয়ংকর শব্দ আর লোকটির অসহায় চিৎকার একে অপরকে অতিক্রম করে পুরো ঘরকে সন্ত্রস্ত করে তুললো।

লোকটি ভাঙা কণ্ঠে স্বল্প আওয়াজে বললো, “ছা.. ছাইড়া.. দ.. দ্যান, স্যার। আমি ও.. ওই এলাকায়ই আর থা.. থাকুম না, আআআআআ…ওমা.. মাআআআআ….”
ওর দুই হাত পিছন থেকে ধরে মচকাতে থাকলো। তারপর ওর কোমরে আবার লাথি মেরে পাজরের বাকি হাড় ভা*ঙতে শুরু করলো। তার আর বাঁচার ইচ্ছা ছিল না। কারান হেসে বলে, “তোকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিচ্ছি।”
কুঠার দিয়ে এক কোপে অ*ন্ডকো* দুটো কেটে দ্বিখণ্ডিত করে ফেললো।
শেষমেশ পুরো শরীরে তাজা র*ক্ত ঢেলে দিতেই সেই গন্ধে কাইজার এসে লোকটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, তার মাংস গ্রাস করতে লাগলো।
এদিকে কারান অতি যত্নে এক ব্যাগ র*ক্ত বিকারে ঢেলে ওর আঙুল আর সেই চোখ রেখে দিল। সাথে তাজা লাল গোলাপ ও সেই বিষাক্ত ক্যামিকেলের মিশ্রণও। এরপর অন্য ব্যাগটা দিয়ে পা ধুয়ে, আগের মতো এক চমৎকার গোসল সেরে নিল।
পরে লোকটির নিঃশেষিত দেহটিকে শহরের নদীর কিনারে ফেলে দেওয়া হলো। ধ*র্ষ*ক লোকটার শরীর এমনভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছিল যে, তার আর ফেলার মতো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

পরদিন সকালে ফুচকা বিক্রেতার ঘরে গিয়ে কারান গভীর স্বরে বলল, “আমাকে ক্ষমা করবেন, আপনার স্বামী আর কোনোদিন ফিরে আসবে না।”
তারপর একটি মোটা টাকার খাম এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা দিয়ে নিজের আর ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আমি কাউকে অবসর সময় কাটানোর জন্য দান করি না। বাকি অর্থ দিয়ে কোনো ব্যবসার পুঁজি তৈরি করুন। সেলাই মেশিন কিনে সেলাইয়ের কাজ শুরু করবেন, অথবা একটি ছোট দোকান চালু করতে পারেন।”
মহিলাটি নির্বাক হয়ে কারানের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হলো না, কিন্তু চোখের পানি ঝরতে ঝরতে সমুদ্রসম কৃতজ্ঞতার প্রকাশ পেল।

কারান অন্য একটি খাম তুলে দিয়ে বলল, “এখানে ওর পাসপোর্ট আর ভিসা আছে। কাল ফাহমিদা ওকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেবে। ওর নাম এখন থেকে সাফা। ও আমেরিকা গিয়ে পড়াশোনা করবে। সেখানে কেউ আর ওকে ধর্ষি’তা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবে না। ওর জন্য অপেক্ষা করছে নতুন এক জীবন। আর আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন, আসছি।”
এই বলে ঘর থেকে বেরোনোর প্রস্তুতি নিতেই পিছন থেকে মেয়েটি কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে উঠল, “ভাইয়া, (থেমে) ধন্যবাদ।”
মেয়েটির চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। কারান সামান্য হাসল, তবে পিছন ফিরে তাকাল না। চুপচাপ দরজা পেরিয়ে বেরিয়ে গেল।
অন্যদিকে বহুদিন ধরে মামলার জট খুলতে না পারার কারণে, আমান এক নির্দোষ ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে খুনি সাজিয়ে দিল।

কারান বিল্লা আর হাসানের অবসান ঘটিয়ে বাড়ি ফিরেই দেখল মিরা বিছানায় মাথা এলিয়ে চোখ বুজে বসে আছে। কারান ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে মিরার একেবারে কাছে দাঁড়ায়।
তারপর কানের কাছে ঝুঁকে গভীর স্বরে ফিসফিস করে বলে, “সুইটহার্ট।”
আচমকা শব্দে হুট করেই মিরার চোখের পাতা খুলে যায়। কারানের হাস্যোজ্জ্বল মুখমণ্ডলের মুখোমুখি হতেই তার চেহারায় প্রশান্তির আলো খেলা করে। নিদ্রার আমন্ত্রণ সত্ত্বেও সে কারানের অপেক্ষায় জেগে ছিল।
কারান বিছানায় বসে পড়ে। তারপর মিরার কোলে মাথা রেখে শুয়ে, তার মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। মিরা আলতো করে তার চুলে হাত বোলাতে থাকে। মমতায় আচ্ছন্ন গলায় বলে, “কোথায় গিয়েছিলে?”

কিন্তু কারান কোনো জবাব না দিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে আপনমনে বলে, “মিরা, আমি চাই না আমার অন্ধকার রূপ তোমার সামনে উন্মোচিত হোক। কিন্তু আমি জানি, কোনো না কোনো দিন, সময়ের নিষ্ঠুর খেলায় তার মুখোমুখি হতে তুমি বাধ্য। সেদিন আমি কোথায় যাব, মিরা? কোথায় লুকাব আমার অপরাধবোধ? তোমার হৃদয়ের গভীরে যে স্থান আমি চিরকাল আমার ভেবেছি, সেখান থেকে কি আমায় সরিয়ে দেবে? শুধু একটুখানি জায়গা দিও, মিরা। তোমার উপস্থিতি আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। জানো, তোমার শরীরে সামান্য আঘাত লাগলেও আমার ভেতরটা ভেঙে পড়ে শূন্যতায় ডুবে যায়। তুমি কি কখনো বুঝতে পেরেছ, তোমাকে কতটা ভালোবাসি আমি?”
মিরা কারানের গাল আলতোভাবে ছুঁয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে, “কিছু বলছো না যে?”
কারান শুয়ে থাকা অবস্থান থেকে উঠে মিরার মুখমণ্ডলের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “একটা ইম্পরট্যান্ট কাজে।”

মিরা কপাল কুঁচকে আওড়াল, “এত রাতে কি এমন কাজ ছিল?”
কারান নিরুত্তরে মিরাকে আলতোভাবে আলিঙ্গন করে নিল। মিরাও আর কোনো উক্তি না করে তার বুকে আত্মসমর্পণ করে। কারান মনে মনে নিজেকে বলল,
“আমি যদি নৃশংসতার অগ্নিতে দগ্ধ এক নির্মম সত্তা হই, তুমি তবু শান্তির মৃদু স্রোত।
আমি যদি অন্ধকারের দুঃস্বপ্ন হই, তুমি তবু অনির্বাণ আলো।
আমি যদি বিকৃত এক অন্তরাধিকার হই, তুমি তবু তার বিপরীতে সুস্থির কবিতা।
But do you know? Allah has woven these contrasting souls together, so that through your pure presence, my savage existence may be touched by the true essence of peace.”
(অনুবাদ: কিন্তু তুমি কি জানো? আল্লাহ এই বিপরীত আত্মাগুলোকে একত্রিত করেছেন, যেন তোমার নিষ্কলঙ্ক উপস্থিতির মাধ্যমে, আমার বর্বর অস্তিত্ব সত্যিকারের শান্তির সারাংশ দ্বারা স্পর্শিত হতে পারে।”)

মিরা সকাল বেলা ফজরের নামাজ শেষে বিছানার পাশে শান্তভাবে এসে বসলো। কারান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মিরা কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে, ঈষৎ হেসে কারানের কপালে এক মিষ্টি চুমু দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“উঠুন, চৌধুরি সাহেব। নামাজ পড়ে নাহয় আবার ঘুমাবেন।”
কারান মৃদু চোখ মেলে, মিরাকে এক টানে নিজের কাছে টেনে নিয়ে তার শরীরের উষ্ণতায় জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমের অতলে হারিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মিরার বারংবার ডাকে বিরক্ত হয়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
মিরা হাসতে হাসতে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন তার দৃষ্টি পড়ে ফাতিমার দিকে, যিনি বাগানের দিকে যাচ্ছিলেন। মিরা কৌতূহলে ভরপুর হয়ে মনে মনে প্রশ্ন করল, “এত সকালে প্রতিদিন কোথায় যায়, ফুফিজান?”
কারান নামাজ শেষ করে এসে মিরার কোমর শক্ত করে আঁকড়ে ধরে, পিছন থেকে বলল, “কী দেখছো, জান?”
কারানের শব্দগুলি মিরার কর্ণকুহরে প্রবেশমাত্রই তার মনোযোগ অন্যত্র সরে যায়। সামান্য সৌম্য হাসি ফুটিয়ে সে বলল, “দেখো তো, পেছন দিকটা ঠিক আছে কিনা?”

অর্থাৎ কারানের স্পর্শের সূক্ষ্ম শিহরন উপলব্ধি করবে বলে এমন কথাটি উচ্চারণ করল।
কারান আলতো হেসে বলল, “উঁহুঁ, এভাবে বললে হবে না। পাহাড়ে যেমনভাবে বলেছিলে, তেমনভাবে বলো।”
এবার মিরা সম্মোহনী সুরে বলল, “Hubby, could you see if the zipper on the back of my blouse is fastened (আবদ্ধ)?
মিরার এমন কোমল আওয়াজ শুনে, কারানের ঠোঁটের কোনে তীক্ষ্ণ হাসি ফুটে উঠল।
কারান নেশালো গলায় মিরার কানের কাছে এসে গভীর স্বরে বলে, “হয়নি, আরও বেশি গভীরভাবে।”
মিরা গলায় মাদকিত সুর মিশিয়ে বলে, “Hey honey, could you please ensure that everything is in order behind?”
(অনুবাদ: “হেই হানি, তুমি কি দয়া করে নিশ্চিত করতে পারবে যে পেছনে সবকিছু ঠিকঠাক আছে?”)
মিরার এমন সম্মোহনী গলার সুরে কারানের ভিতরে শিহরন জাগে। কারান স্নিগ্ধ হাসি হেসে গম্ভীর গলায় বলে, “Oh gosh, sweetheart!”

এরপর মিরার কানের নীচের চুল সরিয়ে, চুম্বন আর কামড়ের এক অদ্ভুত মিশ্রণ দিতে থাকে। মিরাও তার ঠোঁটের প্রতিটি স্পর্শের অপেক্ষায় ছিল, তাই এক নিমেষে চোখ বন্ধ করে নেয়। মিরার গলায় তার দাঁতের গভীর কামড়ের চিহ্ন ফেললে, সে উত্তেজনার তরঙ্গে হারিয়ে যায়। মিরা ঘুরে কারানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কারানের শরীর থেকে চন্দন, ভ্যানিলা আর মিষ্টি গোলাপ মেশানো রোজা ওট লাক্স সুগন্ধির ঘ্রাণ মিরাকে আরো গভীর আবেশে ডুবিয়ে দেয়। কারান চুম্বন আর কামড়ের মিশ্রণে মিরার গলা ভরিয়ে তুললো। যদিও আঘাত এমনভাবে ছিল যে দাগ পড়বে না, তবুও এই অনুভূতিতে মিরার চোখের কোনে অশ্রুর কণা জমে উঠলো।
কারান মিরার কানে মধুর গলায় ফিসফিস করে বলে, “যদি কে.ছি হাউজে থাকতাম, আজকের এই মুহূর্তে, আমি তোমাকে কারানের ভালোবাসার বন্যায় সিক্ত করতাম। আমার প্রতিটি কোমল স্পর্শ, প্রতিটি মিষ্টি শব্দ তোমার হৃদয়ে মধুর ব্যথার সুর বেজে উঠত। যে যন্ত্রণা তোমার চোখের কোণে অশ্রু হয়ে জমা হয়েছে, এর পরিবর্তে গভীর আবেশে ভরে উঠতে।”

কারানের কথার শ্বাসের সাথে বের হওয়া পুদিনার ঘ্রাণ মিরাকে আরো গভীরভাবে আবিষ্ট করে তুলে।
আচমকা কারান মিরার মাথার চুলগুলো হাতের মুঠোয় ধরে, দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে, “কি ভাবছো, সুইটহার্ট?”
হঠাৎ করেই কারানের মুখাবয়ব এবং বাক্যের ভঙ্গি বদলে গেছে দেখে মিরা কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। তবে উত্তেজনার তাপে ডুবে, মিরা কারানের গলার বাঁ পাশের কোনো অংশে কামড় বসিয়ে দেয়। কারান চোখ বন্ধ করে নেশালো সুরে বলে, “আহ, মিরাহহ…”
এদিকে কারানের গলা বেয়ে রক্ত পড়তে থাকে।
মিরা মুখ তুলে, নেশান্বিত চেহারায় টিস্যু দিয়ে কারানের গলার রক্ত মুছতে মুছতে বলে, “সেবারের পানিশমেন্টটা দিয়ে দিলাম, কারান চৌধুরি। এখন সমান সমান।”

কারান বাঁকা হেসে, মিরার ঠোঁটে জমে থাকা রক্তের ফোটায় গভীর আবেগে চুম্বন করে রক্তের কণাগুলো সম্পূর্ণরূপে গিলতে থাকে। তারপর মিরাকে কোলে তুলে, পালঙ্কে শুইয়ে দিতে দিতে বলল, “তোমার শরীরের প্রতিটি কোণে মাদকতা ছড়ানো, মিরা। যা প্রতিটি মুহূর্তে আমাকে তোমার নেশায় ডুবে থাকতে বাধ্য করে।”
মিরা কারানের গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, এক টানে কারানকে নিজের কাছে টেনে এনে বলে, “তুমি কি ড্রাগ নাও?”
প্রশ্নটি অদ্ভুত হলেও, কারান সাবলীলভাবে উত্তর দেয়, “তার প্রয়োজন পড়বে না। আমার ড্রাগের নেশা, আমার সামনেই আছে।”
এই কথা বলেই মিরার ঠোঁট থেকে শুরু করে তার শরীরের উন্মুক্ত অংশগুলোতে, গভীর চুম্বন ও উত্তপ্ত স্পর্শের মাধ্যমে নিজের আবেগের রাজত্ব চালাতে থাকে।

রোমানা ফোনে কারো সাথে হাস্য-গম্ভীর কথোপকথনে নিবিষ্ট।
“শোনো রুহানি, মাকে বলো যেন আমার জন্য পিঠে পাঠিয়ে দেয়। আমি তো যাচ্ছি না।”
আরিয়ান তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বলল, “তোমাকে কি আমি যেতে নিষেধ করেছি? যাও না।”
রোমানা এবার চোখ-মুখ কুঁচকে বিরক্তির সুরে বলল, “রুহানি, রাতের দিকে তোমাকে কল করব।”
ফোন কেটে আরিয়ানের কাছে চলে এসে তার কান টেনে ধরে বলল, “হ্যাঁ, আমি গেলে যেন তুই তোর এক্স এর সাথে ইটিসপিটিস করতে পারিস। তাই না? যাবো না আমি।”
আরিয়ান মুখাবয়ব বাঁকিয়ে আপনমনে বলে, “এই মেয়ে সম্পূর্ণ পাগল হয়ে গেছে। বললাম তো এক্স নেই, কিন্তু সেই একই পুরোনো কথা আবার বলছে।”

এরপর শার্ট পরতে পরতে আরিয়ান ঠাট্টার সুরে বলে, “তোর মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে, একটু টাইট দিয়ে নিস।”
রোমানা বুঝতে পারে, তাকে একরকম পাগল ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাই সে উত্তেজিত হয়ে আরিয়ানের দিকে হাত তোলার চেষ্টা করে, কিন্তু তৎক্ষণাৎ আরিয়ান তার দুই হাত শক্ত করে মুঠোয় বেধে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। মুখে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে সে বলে, “এই রোমানা, আমি যদি তোর দেহটা কুচো কুচো করে কেটে নদীতে ভাসিয়েও দিই, কেউ কিন্তু খবরও পাবে না।”
রোমানা তাচ্ছিল্যের হেসে বলে, “আচ্ছাআআ…আর আমি নিশ্চয়ই শুধু বসে থাকব? আমার গায়ে একটা আঘাত দিয়ে দেখ, তোর হাত ভেঙে গুড়িয়ে ফেলব, পরে তোকে মেরে তোর রক্ত দিয়েই গোসল করব।”

এবার আরিয়ান শব্দ করে হেসে ওঠে, “That’s my woman,” বলে রোমানার গালদুটো একহাতে আবদ্ধ করে ঠোঁটটাকে পুটি মাছের ঠোঁটের মতো করে পুনরায় বলল, “এর জন্যেই তো তোমাকে এত ভালো লাগে।”
রোমানা অবাক হয়ে মনে মনে বলল, “শালা, পাগল হয়ে গেছে নাকি? নাকি মনে করেছে ওর সাথে মজা করছি?”
আরিয়ান রোমানার কোমর ধরে তাকে স্ব কোমরের কাছে টেনে এনে তার ঠোঁটে গভীর চুম্বন দিতে শুরু করে। অথচ রোমানা অনুভূতিহীনভাবে আরিয়ানের অন্ড*কোষে এক জোরালো লাথি মারল। মারার পরেই আরিয়ান ব্যথা সহকারে বলল, “আআআ! শালীর ঘরের শালী, আজ যদি তোর কোমর ভেঙে না ফেলি।”
রোমানা হাসতে হাসতে বলল, “ওটা এমনিতেও তোমার কোনো কাজে লাগবে না, বেবি। আমি তো সন্তান নিতে পারবো না, আর তোমাকেও কোনো চুন্নির গলায় ঝুলতে দিব না। কী করবে বেকার জিনিস নিয়ে? শরীরের অতিরিক্ত অর্গান।”

রোমানা ক্ষিপ্র হাসিতে গা ভাসিয়ে দিল। আরিয়ান মৃদু হাসি দিয়ে রোমানার কাছে এসে বলল, “আই লাভ ইউ, সাওদা রোমানা।”
রোমানা এবার হাসি থামিয়ে ক্ষণকাল পর হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে বলল, “এই দ্বিতীয়বার আপনি এই বাক্যটি উচ্চারণ করলেন, শরীর ঠিক আছে তো আপনার?”
আরিয়ান রোমানাকে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে বলল, “এটা আমার উত্তর নয় রোমানা, অরূপে আমার প্রিয়দর্শিনী।”
“আমার কিন্তু আরও একটি পরিচয় আছে।”
আরিয়ান রোমানার মুখের সামনে এসে একটুখানি ভ্রূ কুঁচকে বলল, “কি?”
“মিসেস আরিয়ান চৌধুরি।”
এটা শুনে আরিয়ান হেসে রোমানার গলায় মুখ ডুবাতে শুরু করল। রোমানা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “শোনো, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

আরিয়ান মুখ তুলে কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “গিফট নাকি? যদিও সেটা তো আমার টাকায়ই কেনা হবে।”
“তুই তো বেকার, শালা। তোর আবার টাকা কীসের?”
আবারও অপমান করল রোমানা, তবে আরিয়ান কিছু না বলে হাসি মুখে রোমানাকে শুধু দেখে যাচ্ছে।
রোমানা আবার বলল, “গিফট না, তার থেকেও বেশি কিছু। এদিকে এসো।”
এরপর রোমানা ইশারায় আরিয়ানকে বিছানায় শুতে বলল। আরিয়ান ধীরে ধীরে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তার হৃদয়ের গভীরে অনুভূতিতে ভরা মধুর সুর বেজে উঠল। সে ভাবল,
“আজ মনে হচ্ছে বউ আমার রোমান্টিক মুডে আছে।”
এদিকে রোমানা একটি দড়ি এনে আরিয়ানের দুই হাত খাটের প্রান্তে বেঁধে দিল। আরিয়ান নেশালো চেহারায় রোমানার দিকে তাকিয়ে রইলো। রোমানা ধীরে ধীরে আরিয়ানের শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করল।
আরিয়ান সম্মোহনী গলায় বলল, “ওই শালী, কি করতে চলেছিস তুই? আমি কিন্তু তোকে একদম খেয়ে ফেলবো।”

“ওয়েট, বেবি,” বলে রোমানা দ্রুত নিচে চলে যায়, তারপর ক্ষণিকের মধ্যে ফিরে এসে আরিয়ানের দিকে এগিয়ে আসে।
আরিয়ান উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে অস্থির গলায় বলল,
“তুই হা’রামজাদি, আমি কিন্তু তোকে খু’ন করবো। ওই রোমানা, হাত খোল। প্লিজ, ডার্লিং। না জান… এই বাঁচাও কেউ…”
রোমানা একটি চকচকে ছুরি হাতে আরিয়ানের বক্ষস্থলের কিছুটা নিচে বসে, রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে, “তুমি না বললে আমাকে ভালোবাসো, জান।”
আরিয়ানের বুকের উপরে ছুরির প্রান্ত দিয়ে রোমানা নামের এক একটি অক্ষর লিখতে থাকে। আরিয়ান চিৎকার করতে করতে বলে, “শুয়া’রেরবাচ্চা, কু’ত্তারবাচ্চা, মাদারবোর্ড! তোকে কিন্তু আআআআ…”
অথচ রোমানার হাসি পুরো কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে। নাম লেখা শেষে রোমানা বুকের রক্ত মুছে, ওষুধ লাগাতে থাকে। আরিয়ান একগাদা শ্বাস ফেলে বলে, “এই তোর ওয়েট কত রে?”

“বেশি না, পঁচিশ কি ত্রিশ কেজি।”
“পঁচিশ ত্রিশ কেজি? তুই তো ছোটখাটো একটা গন্ডার। এইটুকুনি মেয়ে, দাঁড়ালে আমার হাঁটুর নিচে পড়ে থাকে। কী সাহস তোর!”
ব্যথায় কুঁকড়ে থাকা আরিয়ানের বুকের উপর রোমানা এক মমতা পূর্ণ চুমু দিয়ে বলে, “আর কোনো কচুরলতি, আমার জামাইয়ের কাছে ঘেঁষতে পারবে না।”
দুজনেই একসাথে হাসতে থাকে।

এদিকে গ্রামে ৩২টি মৃতদেহ এবং দুটি কা’টা মাথা নিয়ে শোরগোল ওঠে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং মাথাগুলিকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়। দুই দিন ধরে গ্রামজুড়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হলেও, হঠাৎ করেই সব কিছু থেমে যায়।
কারান ঘটনাটির এমন পরিণতি দেখে হতবাক।
“হোয়াট দ্য ফা’ক! ভাবলাম পুলিশ এবার কিছু করবে, মাথা খাটাবে, কিন্তু কিছুই তো হলো না,” অবাক কণ্ঠে কারান বলল।

এরপর তালহার কক্ষে ঢোকার অনুমতি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করল। তালহা তখন তার ল্যাপটপের স্ক্রিনে মনোযোগ নিবদ্ধ করে কাজ করছে। কারান তার পাশে বিছানায় বসে পড়ল।
কারান বলল, “এত বড় একটা ঘটনা ঘটল অথচ পুরো গ্রাম এমন চুপচাপ, এ ব্যাপারে কিছু কি জানিস?”
তালহা শ্বাস টেনে বলল, “তোর মতো আমিও প্রথমে অবাক হতাম। কিন্তু শোন, এমন ধরনের ঘটনা এখানে প্রায়শই ঘটে। পুলিশ আসে, কিছু তদন্তের ভান করে, কিন্তু কোনো প্রমাণ না মিললে তারা চলে যায়।”
“স্ট্রেঞ্জ! তুই যেভাবে বললি, যেন মানুষের মৃত্যুটা এখানে স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তো কে করছে এসব? কেন করছে?”
“ভাই, শোন। আমি এখানে এসেই কিছুদিন মাথা খাটিয়েছি। তারপর জানলাম, এই ধরনের কাহিনি নাকি গত বিশ বছর ধরেই চলছে। মানে এগুলো নিয়ে চিন্তা করা শুধু সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।”
এসব শুনে কারান মনোযোগী হয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গেল। তালহা আবার গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “আর ভাই, নেক্সট মান্থে আমরা সিডনি ব্যাক যাচ্ছি। আমার চাকরি বাকরি সব ওখানে। সোফিয়াও জব ছেড়ে এসেছে। আর আমি চাই না, ওর ক্যারিয়ারটা ধ্বংস হোক। তাছাড়া বসে বসে তো আর ইনকাম করতে পারবো না। আর এখানে মা, তারান্নুম ওরা আছে, সমস্যা হবে না।”

কিন্তু কারানের কোনো প্রত্যুত্তর না পেয়ে, তালহা কারানের কাঁধে স্বল্প পরিমাণে ধাক্কা দিয়ে বলল, “ভাই।”
কারান সজাগ হয়ে জবাব দিল, “হুম।”
পরে উঠে দাঁড়িয়ে পুনরায় বলল, “তুই তাহলে কাজ কর।” দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
তারপর কারান নিজ কক্ষে ঢুকেই ফারহানকে কল করে বলে, “আমি তোকে একটা নাম আর কিছু ডিটেইলস পাঠিয়েছি। ওর সম্পর্কে সব কিছু জানতে হবে। তার সমস্ত তথ্য হ্যাক করে বের কর।”
ফারহান একটু হাসি লুকিয়ে বলল, “তুই কি আমার গভার্মেন্ট জবটা নিয়ে যেতে চাস, ব্রো?”,
“তোর জব আমি দিব। তাই এসব ঢং বাদ দে। যা বলছি, তাই কর।”
“তুই কি আবার আগের কাজে ফিরতে চাস?”

কিন্তু কারান কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দিল। কাজ ছাড়া বাড়তি কথায় তার স্বভাবতই আগ্রহ নেই।
একটু পর ইসহাকের কল আসল। কারান গভীর গলায় বলে, “বলো।”
ইসহাক চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করল, “দেশের অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে।”
কারান কপালে ভাঁজ ফেলে বিস্মিত কণ্ঠে বলল, “কেন? কারণ কী?”
“সেই পুরোনো গল্প। টিচার-স্টুডেন্ট উধাও হওয়ার ঘটনা। সেই কাহিনি এখনো থামেনি।”
কারান বিরক্ত ভঙ্গিতে কপাল ঘষতে ঘষতে বলল,

“আচ্ছা বুঝলাম, শোনো আমার কাজ আছে। আসল ব্যাপারটা বলো, কেন কল করেছ?”
ইসহাক খানিকক্ষণ থেমে বলল, “মূলত মিরাকে প্রয়োজন। ওর ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গেই এসব ঘটনা ঘটছে।”
কারানের চোখে বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠল। সে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু মিরা তো এখন প্রাক্তন ছাত্রী। ওর কাছে কী এমন তথ্য পাওয়া যাবে?”
“পাওয়া যাবে। তা এখন বল, তোরা কোথায় আছিস? কে.ছি. হাউজে তো নেই শুনলাম।”
কারান চুলের ফাঁকে আঙুল বোলাতে বোলাতে বলল, “না, সেখানে নেই। আমরা পুরোনো চৌধুরি বাড়িতে এসেছি।”
কথাটা ইসহাকের কর্ণগোচর হতেই মুখে বিস্ময় মিশ্রিত ক্ষোভের ঝিলিক দেখা গেল। তবুও নিজেকে সামলে সে কঠিন স্বরে বলল, “ওখানে গেছিস কেন? ভাই জানে? আর তুই জানিস না, ওই বাড়ির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চিরতরে শেষ হয়ে গেছে।”

কারান শান্ত গলায় উত্তর দিল, “না, জানে না। তবে জানাতে ইচ্ছে হলে জানিয়ে দিও। আর সম্পর্ক তোমাদের নেই, এটা ঠিক। কিন্তু আমার নেই, সেটা কে বলল? রাখছি,” বলে ফোন রেখে দিল।
কিন্তু কারানের মনে ক্রমশ সন্দেহ দানা বাঁধতে লাগল। কপালে ভাঁজ ফেলে নিজ মনেই সে বিড়বিড় করে বলল,
“উধাও হওয়ার বিষয়টা যেমন অদ্ভুত, তার চেয়েও বেশি রহস্যময় হলো—মিরার ক্লাসমেটরাই কেন উধাও হচ্ছে? কে করছে এসব? এর পেছনে উদ্দেশ্য কি?”
অন্যদিকে ফারহান তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তদন্ত শুরু করল। প্রথমেই সে জায়েদের সোশ্যাল মিডিয়া এবং নেটওয়ার্কের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করল। তারপর Nmap দিয়ে সার্ভার স্ক্যান করে দুর্বল পোর্ট খুঁজে বের করল এবং Metasploit ব্যবহার করে সিস্টেমে প্রবেশ করল।
ইব্রাহীমের ব্যাংক লেনদেন পরীক্ষা করে ফারহান লক্ষ্য করল, বিপুল পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
ফারহান বলল, “ওত্তরি! এত টাকা মেরে দিয়েছে শালায়?”
কিন্তু প্রাথমিকভাবে এটি অপরাধমূলক লেনদেন বলে মনে হলেও আরও গভীর অনুসন্ধানে ভিন্ন সত্য উঠে এল। ওই অর্থ দুবাইয়ের একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা হচ্ছে, যেখানে মানবতার সেবায় অর্থ ব্যয় করা হয়।
শেষমেশ একটি ভিডিও প্রমাণ হাতে আসায় ফারহান নিশ্চিত হয় যে ইব্রাহিম একজন উদার হৃদয়ের শেখ। তিনি তার দেশের উন্নয়ন এবং মানবকল্যাণে অবিচল নিষ্ঠায় কাজ করছেন।
ফারহান কপাল কুঁচকে বলে, “এত কাহিনি পুরাই পালটে গেল। কিন্তু কারান তাহলে কেন বলল যে এর মধ্যে সমস্যা আছে!”

বিকেলের মৃদু আলোয় সবাই যখন গল্পগুজবে মশগুল, মিরা তখন একা একা পুরো পুরোনো চৌধুরি বাড়ি ঘুরে দেখছিল। কেন যেন চৌধুরি বাড়ির মতোই এই বাড়িটিও তার মনে অদ্ভুত সন্দেহের জন্ম দিচ্ছিল। চিন্তাগ্রস্ত মিরা আপন মনে বলতে শুরু করল, “ফুফিজান প্রতিদিন কোথায় যান? মা-ই বা এখন কোথায়? দাদিজানের অতীত এতটা ভয়ংকর, ওনার জীবনের পেছনে কি আরও কোনো গোপন সত্য লুকিয়ে আছে, যা আমরা কেউ জানি না। আচ্ছা, দাদাজানের মৃত্যু কি স্বাভাবিক ছিল, নাকি তার পেছনেও কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে? নাকি… খু’ন…”
এরই মধ্যে আচমকা পেছন থেকে শব্দ ভেসে এলো।
“ভাবি।”
গভীর চিন্তায় নিমগ্ন মিরা মুহূর্তেই চমকে উঠে। দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখে তারান্নুম দাঁড়িয়ে আছে। প্রশান্তির শ্বাস ছেড়ে মিরা বলল, “ওহ, তু… তুমি?”

তারান্নুম মিষ্টি হেসে বলল, “তাইলে কারে ভাবছিলা? সারাদিন কি শুধু আমার ভাইরে নিয়াই ভাবো?”
তারান্নুমের কথায় মিরার মুখে ভ্রূকুটি ফুটে উঠল। ‘ভাবি’ ডাকের সঙ্গে কারানকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন—মিরার মনে খানিকটা অস্বস্তি এনে দিল। সে আপনমনে বলল, “এর আবার কি হলো?”
তারপর দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে সচকিত কণ্ঠে বলল, “না মানে, হঠাৎ ডাকলে তো।”
তারান্নুম হেসে উঠে বলল, “আহো, ঘুরবার যাই।”
“এখন না, অন্যদিন যাবো।”
“কোনো কথা শুনবার চাই না। আহো,” বলে তারান্নুম মিরার হাত ধরে টেনে নিতে শুরু করল।
মিরা বাধা দিয়ে বলল, “আমি এভাবে বাইরে যাব না, তরু। আর বোরকাও আনিনি।”
তারান্নুম হাসি চাপিয়ে বলল, “তুমি চিন্তা কইরো না। আমার ধারে বোরকা আছে। দুই’জনেই বোরকা পইরা বের হইবো, হাঁটতে ভাল্লাগবে। আহা, আহো না।”
তারান্নুমের উৎসাহে মিরা শেষমেশ বোরকা পরতে রাজি হলো। তবে বের হওয়ার আগে মনে হলো, কারানকে জানানো উচিত।

মিরা কক্ষে গিয়ে দেখল, কারান গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। হয়ত অফিসের কোনো জরুরি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। মিরা জানে, কাজে ব্যাঘাত কারান একদমই পছন্দ করে না। তবু জানানো ছাড়া উপায় নেই। তাই পেছন থেকে নরম স্বরে বলল, “কারান, আমি একটু বের হবো।”
কারান কাজ থামিয়ে ঘুরে তাকাতেই মিরাকে বোরকাতে দেখে মুগ্ধ দৃষ্টিতে বলল, “মা শা আল্লাহ! আপনার দিকে তাকিয়ে তো নজরই সরানো যাচ্ছে না।”
এরপর ভ্রূ কুঁচকে হেসে বলল, ” কিন্তু বলবেন তো, কোথায় যাচ্ছেন?”
মিরা হেসে উত্তর দিল, “এই তো, সামনেই। বেশি দূরে যাব না। তারান্নুমও সঙ্গে আছে।”
কারান কঠিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, “ফোন নিয়েছো তো?”
“হ্যাঁ, নিয়েছি।”
“ঠিকাছে, যাও।”

মিরা খুশি মনে তারান্নুমের সঙ্গে বেরিয়ে গেল। কিন্তু কারানের মনের গভীরে অজানা আশঙ্কা দানা বাঁধল। গ্রামের পরিবেশ সুবিধাজনক নয়, আর মিরা সবে এই পরিবেশে এসেছে। তারান্নুম সঙ্গে থাকলেও তাদের একা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
কারান একটু দূরত্ব রেখে তাদের পিছু নিল, তবে এমনভাবে যেন তাদের কথোপকথন বা স্বাচ্ছন্দ্যে কোনো বাধা না পড়ে। তবে কারান চৌধুরীর সময় এতটাই মূল্যবান যে নিছক স্ত্রীর পিছু নেওয়ার জন্য সময় ব্যয় করা, তার ব্যক্তিত্বে শোভা পায় না। তাই কৌশলে কানে ব্লুটুথ ইয়ারপিস লাগিয়ে ফারহানের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যেতে লাগল।
ফারহান উদ্বেগমিশ্রিত কণ্ঠে বলল, “কাহিনিটা আরও গভীরে ঢুকে পড়েছে, ব্রো। ইব্রাহিম বিন জায়েদ কোনো অবৈধ কাজে যুক্ত নয়।”
কারান ভ্রূ কুঁচকে বলল, “মৃত্যু যখন সামনে, তখনও কি কেউ মিথ্যে বলতে পারে? ওরা মিথ্যে বলেছে, এমনটা তো মনে হয় না।”

“এর পেছনে অন্য কোনো সত্য আছে, যা আমরা এখনো দেখিনি। তবে এখান থেকে বসে সবকিছু হ্যাক করাও সম্ভব হচ্ছে না। এটা আরও জটিল হয়ে উঠছে রে।”
কারান সামনে তাকিয়ে নিশ্বাস নিল। তার মনের ভেতর সন্দেহের মেঘ জমতে লাগল। কিছু একটা আছে, যা চোখের আড়ালে লুকিয়ে আছে।
কারান ভারী কণ্ঠে বলল, “দুবাই যেতে হবে।”
“হ্যাঁ, কিন্তু আমরা শুধু দুজন গেলে এত বড় গ্যাংকে শেষ করা সম্ভব হবে না।”
“আমরা দুজন কেন, আগের মতোই এমেকা ওকনকো যাবে।”
ফারহান হঠাৎ করেই হাসি দিয়ে বলল, “ওই নাইজেরিয়ান কাইল্লাটা? ওরে নিস না ভাই, আমি উরাধুরা গালি দিব।”
কারান গম্ভীরভাবে বলল, “শাট আপ ফারহান, কাজের কথা বল।”
“আচ্ছা, শুধু কি আমরা যাব? নাকি কোনো মেয়ে নিব? তাতে আমাদের কাজে সুবিধা হতো।”
কারান দাড়ির দিকে আঙুল চালিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বলল, “যদি ঢাকায় থাকতাম, তোকে গিয়ে পিটিয়ে আসতাম, শালা বি’চ।”

“আরে মামা, তুই ভুল ভাবছিস। এখন কি আর আমি আগের মতো আছি নাকি? এখন তো শুধু গোবরচারিনীকেই ভালোবাসি। আমি বলতে চাচ্ছি, ধর কোনো স্ট্রং মেয়ে নিয়ে গেলে আমাদের কাজে সুবিধা হবে।”
কারান কপাল কুঁচকে বলল, “তা ঠিক। তবে এমন মেয়ে পাবি কোথায়? আর আমার মনে হয় এতে রিস্ক আছে। আমি কোনো মেয়ের ক্ষতি হতে দিতে পারি না।”
ফারহান মুচকি হাসি দিয়ে বলল, “ভাই, আমার ভাবতেই অবাক লাগে, এক সময় এই কারান চৌধুরীই মেয়েদের হেইট করতো। হোয়াটএভার, মেয়েটার নাম আয়লা। আমার ফ্রেন্ড।”
কারান অবজ্ঞার হাসি দিয়ে বলল, “ফ্রেন্ড না এক্স? আর ওর ট্যালেন্ট কি?”
ফারহান গম্ভীর হয়ে আপনমনে বলল, “এর কাছে কিচ্ছু লুকানো যায় না। (গলা চড়িয়ে) ও ইন্টারন্যাশনাল থিফ।”
কারান ভ্রুকুঞ্চন করে বলল, “তোর মাথা ঠিক আছে? একটা চোরকে নিয়ে যাব? মানে আমাদের সব লুটে নিক, তাই?”

“আরে মাম্মা, তুমি যা ভাবছো তা না। ওর সাথে প্রেমটা তো চুরির মাধ্যমেই হয়েছে। তখন বুঝলাম ও কি জিনিস।”
“মেইন কাহিনিতে যা।”
ফারহান এবার গভীর শ্বাস নিয়ে শুধালো, “হ্যাঁ হ্যাঁ, শোন। ও কিন্তু ফাইটিং আর মিন ক্যারাটে জানে। তার উপর ওর চুরির টেকনিক কেউ ধরতে পারবে না। মুহূর্তেই শরীরের ড্রেস আপ পরিবর্তন করতে পারে। ওর কিলিং স্কিল হাই। এছাড়া ও খুবই দক্ষ লকপিকিংয়ে; কোনো দরজা বা সেফ খোলার জন্য ওকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় না। পিছু নিতে এবং শরীরের অবস্থান পরিবর্তন করতেও একদম পারদর্শী। পুরো এলাকায় ওর ইম্প্রেশন এতটাই চরম যে কেউ সন্দেহ করবে না, যদিও ও যেখানে যায়, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সহজেই বাইপাস করতে পারে। তাছাড়া ওর মেমরি অতি তীক্ষ্ণ, একবার দেখলেই লোকজনের চলাফেরা, কথাবার্তা এমনকি তাদের পছন্দ-অপছন্দও মনে রাখতে পারে। আরেকটি ব্যাপার, ওর ম্যানিপুলেশন স্কিল—ও খুব সহজে মানুষকে ভ্রামিত করে, তাদের বিশ্বাস অর্জন করে এবং তাদের মনের মধ্যে এমনভাবে বীজ বপন করে যে ওরা নিজেরাই ওর জন্য কাজ করতে শুরু করে।”

এতকিছু শুনে কারান অবাকের সুরে বলে, “ওহ ড্যাম! অ্যামেজিং! ইম্প্রেসিভ!”
অন্যদিকে তারান্নুম আর মিরা অরণ্যপথে হেঁটে চলেছে, সাথে তাদের মাতব্বরি কথাবার্তা।
তারান্নুম বলে, “ভাবি, ফয়সাইল্লার পোলার কথা কি কারান ভাই কিছু বলছে?”
“কে, ফারহান?”
“হ্যাঁ, ওই জা*উরা বেটা।”
মিরা কিঞ্চিৎ হেসে বলে, “হ্যাঁ, বলেছে। আচ্ছা, তোমার ওকে কেমন লাগে?”
“খারাপ লাগে না। স্মার্ট, তার উপর হ্যান্ডসাম। কিন্তু তোমার জামাইয়ের মতোন তো আর সুন্দর না।”
মিরা মুখ চেপে হাসতে হাসতে মনে মনে বলে, “মিস ইউ, কারান।”
তারান্নুম আবার বলে, “তবে.. জানো, ওই বেটার কথা মাথায় আইলেই আমার একটা গান মনে পইড়া যায়। বেটা তো আমার থেইক্কা দূরে, তাই।”
মিরা কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করে, “কি গান?”
এবার তারান্নুম গলা ছেড়ে গান ধরল,
“ভা’তার আমার কাতার চলে গেছে চাকরি করিতে,
একা বিছানায় ঘুম আসে না ছটফটাই রাইতে।”

তারান্নুমের ভাঙা গলার জোরে জোরে গান শুনে মিরা আর হাসি চেপে রাখতে পারে না। এদিকে এমন বাজে গানের শব্দে পাখিরাও চ্যা চ্যা করে উড়ে যেতে থাকে। কিন্তু তারান্নুম থামে না,
“কোল বালিশে মোড়ামুড়ি আর কত করুম,
আল্লাহ তুমি দাওনা আমার চক্ষে একটু ঘুম।”
তারান্নুমের অস্বাভাবিক গান শুনে কারানেরও এত গুরুত্বপূর্ণ কথায় ব্যাঘাত ঘটে। কারান চোখমুখ কুঁচকে বলে, “আজকে চৌধুরি বাড়ির মানইজ্জত সব শেষ হয়ে যাবে। দুই পাগল একসাথে হয়েছে।”
তাই কথা বলার জন্য আরেকটু পিছনে চলে গেল।
ওদিকে মিরার হাসি আর তারান্নুমের গান কোনোটাই থামার নাম নেই। কিন্তু এর মধ্যেই হঠাৎ মাটি থেকে উঠে আসে রক্তাক্ত, অর্ধপচা একটি হাত। হাতটা মিরার পা টেনে মাটির নিচে নিয়ে যায়। অকস্মাৎ এমন ভুতুড়ে দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে তারান্নুমের চোখ বড় হয়ে যায়৷ মুখাবয়বে ভয়ের ছায়া নিয়ে জোরে চিৎকার করে বললো, “ভাবিইইইই!”

সূর্যের রশ্মি ভবনের কোণে ঢলে পড়ছে। গাড়ির হর্ন, পথচারীদের তাড়াহুড়া, আর ফুটপাতের বিক্রেতাদের হাঁকডাক চলতে থাকে। এইসবের মধ্যে রিকশায় করে ইলিজা স্নেহার বাড়ির সামনে এসে থামে। স্নেহাও তড়িঘড়ি রিকশায় উঠে পড়ে। স্নেহা হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে বলে, “কেমন লাগছে, মাহি?”
ইলিজা হেসে বলে, “একদম ঝাক্কাস! তোর পাগলা সিঙ্গার দেখলেই সেন্স হারাবে।”
স্নেহা মুচকি হেসে প্রশ্ন করে, “তাহলে তো হবে না। সেন্স হারালে প্রোপোজাল কাকে দিব?”
এ কথায় ইলিজা হাসতে থাকে। স্নেহা আরও বলে, “আজকে যে গাড়ি রেখে রিকশায় এলি, কী ব্যাপার?”
“আরে, প্রতিদিন গাড়িতে আর ভালো লাগে না। কতদিন হলো রিকশায় চড়ি নাই বল।”
“হ্যাঁ রে, কিন্তু তোর জিজু জানলে তো রাগ করবে। আর তোর ফোন কোথায়?”
ইলিজা মাথায় হাত দিয়ে বলে, “এইরে, তাড়াহুড়োতে ফোন আনতে ভুলে গেছি। সব তোর দোষ। এত তাড়া দিলি যে..ধ্যাত! আর ভাইয়া জানবে কীভাবে?”

“চেতিস না তো। চল, বাদ দে। চলুন, মামা।”
অনেকক্ষণ পর রিকশাটি পার্কের পানে এসে থেমে গেল।
তারা দুজন রিকশা থেকে নেমেই শুভ্রকে খুঁজতে লাগলো, যদিও ইলিজার মনের ভেতর অন্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। ইলিজা আনমনে বলে, “শুভ্র ভাইয়া থাকলে নিশ্চয়ই কাব্য থাকবে। কেন জানি, ওনাকে এক নজর দেখার জন্য মনটা আনচান আনচান শুরু করেছে। কিন্তু কোথাও তো দেখা পাচ্ছি না।”
এবার গলা চড়িয়ে বলল, “সেনু, কই তোর মজনু?”
স্নেহা চিন্তিত মুখে বলল, “এখানেই থাকার কথা। কাল ফোনে বলেছিলাম, একবার দেখা করতে। সে তো ‘ওকে’ বললো।”

অন্যদিকে শুভ্র কক্ষে বসে গিটারের সুরে একটুকরো বিরহ বুনছে। আঙুলের ছোঁয়ায় সুরেরা তার মনের বেদনাকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে। ইলিজার এভাবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা শুভ্রের মনে শূন্যতা তৈরি করেছে। অথচ সে যে স্নেহার সাথে দেখা করার কথা বলেছিল, সেটা কেবলই একটু মনের প্রশান্তির জন্য; তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।
অনেকটা সময় পার হয়ে গেল, কিন্তু শুভ্র বা কাব্য কাউকেই দেখতে পেল না। দুজনের হাতে ফোনও নেই, সন্ধ্যাও অনেকটা গড়িয়ে এসেছে। এবার ইলিজা চিন্তিত হয়ে বলে, “শোন না, সেনু। আজকে আর খুঁজতে হবে না। ওনার সাথে কথা বলে অন্যদিন আসবো। হয়ত অসুস্থ।”
স্নেহা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে, “উনি কি আমাকে রিজেক্ট করবেন, দোস্ত?”
“আরে, রিজেক্ট কেন করবে বোকা! তোর মতো এত সুন্দরী বউ পেলে সে তো আনন্দে লাফাবে।” বলেই স্নেহার গাল টিপে দিল। স্নেহা লজ্জায় রক্তিম হয়ে হাসলো।
ইলিজা চিন্তিত কণ্ঠে পুনরায় বলল, “আচ্ছা, শোন। এবার বাসায় যাই, চল।”

“হ্যাঁ, চল।”
এরপর অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরও রিকশার দেখা মিললো না। ইলিজা ভয়ের সুরে বলে, “দোস্ত, আজকের পার্কটা এত নিস্তব্ধ কেন? কেমন যেন ভয় লাগছে।”
“আরে ধুর, চিন্তা করিস না। চল মামা, সামনে হেঁটে চলি। একটা না একটা রিকশা তো পাবোই।”
দুজনই দ্রুত পা বাড়াতে লাগলো। এদিকে ইলিজা স্নেহার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। ইলিজা ভয় মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
“মামা, আসতে আসতে কোথায় চলে এলাম রে? এখানে তো একটা প্রাণীও নেই। (রেগে) তোর কথা শোনাই ভুল ছিল। পার্কে দাঁড়িয়ে থাকলে এতক্ষণে একটা রিকশা তো পেয়েই যেতাম।”
“উফফ, ভয় দেখাস না তো। পার্কে দাঁড়ালাম তো, কই পেলাম?”
ইলিজা স্নেহার হাত ছেড়ে ভয়ার্ত গলায় বলে, “না পেলেও, ওখানে তো কয়েকজন মানুষ ছিল। কিন্তু এই জায়গাটা তো পুরো শুনশান, তার উপর পাশেই জঙ্গল। শোন না…” বলে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল, স্নেহা নেই।
ইলিজার চোখে অস্থিরতা, আর মন অজানা আতঙ্কে ভরে উঠল। সে উচ্চস্বরে ডাকতে থাকে, “সেনু! সেনু! কোথায় গেছিস?”

কিছুক্ষণ ধরে এদিক-ওদিক খুঁজে বেড়ানোর পর, কান্নাভেজা কণ্ঠে বলে, “দেখ সেনু, একদম মজা করিস না। কোথায় লুকিয়ে গেছিস, শয়তান? স্নেহা…দোস্ত, কই তুই?”
স্নেহাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে খুঁজেও না পেয়ে, রাস্তায় হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে কাঁদতে থাকে ইলিজা। কান্নার কারণে তার চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হতে লাগলো। হঠাৎই কিছুটা দূর থেকে এক ভারী কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, “হ্যালো, মিস।”

Tell me who I am part 30

ইলিজা চোখ তুলে তাকাতেই দেখে তিনজন অচেনা লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চেহারা অন্ধকারে লুকিয়ে, কেবল অবয়বগুলো দেখা যায়। তিনজনই হুডি পরিহিত। একজনের হাতে চা’পাতি, দ্বিতীয়জনের হাতে রাম দা, তৃতীয়জনের হাতে ছুরি। অস্ত্রগুলো অন্ধকারে ঝলকাচ্ছে।

Tell me who I am part 32